শেষের পঙক্তি পর্ব-৪+৫

0
498

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪
তূর নীরার কাছে থেকে জানতে চাইলো,
–ছেলেটা কে? সে তোকে ভালোবাসে তো? নাকি আমার মতো একতরফা?

নীরা লাজুক হেসে বলে,
–সে নিজে আমাকে সরাসরি বিয়ের প্রেপোজাল দিয়েছেন। এখন আমি যদি হ্যাঁ বলি তাহলে উনি তার বাবা-মাকে নিয়ে আসবেন। কিন্তু আমার কেনো জানি খুব ভয় হচ্ছে! দুই-তিন দিন দেখেই বিয়ে প্রেপোজাল! আমার আগে কি তার জীবনে কাউকে ভালো লাগে নি? সবকিছু মিলিয়ে আমি দ্বিধান্বিত। তাকে যে আমারও ভালো লেগেছে কিন্তু আমি যে তোর মতো যন্ত্রণা পেতে চাই না।

তূর হাসলো তারপর নিকষকালো অম্বরের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে উদাস কন্ঠে বললো,
–ভালোবাসাতে কোনো, কিন্তু, কেনো এসব থাকে না। যদি সে তোমার হয় তবে আজন্ম সে তোমার অপেক্ষাতে থাকবে অথবা তোমার উপস্থিতিতে বিলীন হবে তার অস্তিত্ব! এজন্যই বলে,
“কারো প্রথম ভালোবাসা হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার তবে শেষ ভালোবাসা হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।”
হতে পারে তার জীবনের প্রথমে কেউ ছিল আবার নাও থাকতে পারে। সে তো তোকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন বাকিটা আল্লাহ্ ভালো জানেন।

নীরা তূরের কাঁধে মাথা রেখে মুচকি হাসে। তার বোনটা যে খুব সুন্দর করে মানুষকে বোঝাতে পারে তা তার জানা কিন্তু কেনো যে তার বোনটা নিজের ক্ষেত্রে অবুঝ! হয়তো নিজের ক্ষেত্রে অবুঝ বলেই সবাইকে বোঝাতে পারে।

________
পরেরদিন,,
সকাল সকাল মিহাল নাস্তার টেবিলে তানজিনাকে দেখে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলল। মিহালের মা তানজিনাকে অনেক খাতির-যত্ন করছেন। মিহাল আবার নিজের রুমে ফিরে যেতে নিলে মিহালের মা মিহালকে ডাক দেন।

–মিহাল কোথায় যাচ্ছো? আসো নাস্তা করে নেও তারপর তানজিনাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসো। তোমার তো এখনও অফিসে জয়েনিং আরো তিন দিন পর। (ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে মাস্টার্স না করলেও ইজিলি জব পাওয়া যায়। আমার এক আত্নীয় আছে)

মিহাল তপ্ত শ্বাস ফেলে চেয়ার টেনে বসে কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের খাওয়া শুরু করে। খাওয়া শেষ করে মিহাল নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। পেছোন থেকে মিহালের মা অনেকবার ডাকে কিন্তু মিহাল নির্বিকার। প্রায় এক ঘন্টা পর মিহাল নিজের রুম থেকে বের হয়। সোফার রুমে গিয়ে তানজিনাকে উদ্দেশ্য করে রুক্ষ স্বরে বলে,

–তোমার যদি আমার সাথে যেতে ইচ্ছে হয় তাহলে চলো নয়তো বারবার আমার মায়ের কান ভাঙিয়ো না। তোমার হাতে ৩০ সেকেন্ড আছে জবাব দেও। নয়তো প্লিজ লিভ মি এলোন।

তানজিনা অপমান বোধ করলো। মিহালের এই উগ্র এটিটিউট তার খুব বিরক্ত লাগে। কতো ছেলেরা তার পেছোনে ঘুরে! আর এই মিহাল তাকে পাত্তাই দেয় না। তানজিনা ভাবে যে সে ৩০ সেকেন্ডের ভিতর বলবে না যাবে কী না? তানজিনা পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। তানজিনার ধারণা, মিহাল তাকে নিতে বাধ্য হবে। শত হোক মিহালের মা তো তানজিনার পক্ষে!

মিহাল নিজের হাতের ঘরির সেকেন্ডের কাটাতে ৩০ সেকেন্ড হওয়ার সাথে সাথে বিনাবাক্যে প্রস্থান করে। একদম দরজা খুলে বাসার বাহিরে চলে গিয়েছে। এদিকে তানজিনা হতভম্ব। সে তো ভেবেছিল, মিহাল তার জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য! কিন্তু না। মিহালের মা মিহালকে অনেকবার ডাকার পরেও মিহাল থামে নি।

মিহাল উবারে উঠে ভাবতে থাকে,
“এই তানজিনাকে জীবন থেকে বের করার আগ পর্যন্ত কাউকে আমি দ্বিধাতে রাখতে পারবো না। যদি আমার জন্য অপেক্ষারত সে আরো কিছু সময় নিজের ধৈর্য ধরে রাখতে পারে তবে নিশ্চয়ই তাকে আমি রাণীর মতো রাখবো।”

মিহাল এখন তাইজুল, রিজভীর সাথে শপিংমলে এসে মিট করবে। কিছু শপিং করবে। আজ রাত ১০ টার বাসে করে তারা সবাই সিলেট যাবে। সবাই বলতে তূররাও। কালকে বিকেলে ফেরার আগে ওদের সবার এই পরিকল্পনা হয়েছিল। ফ্রেন্ডস ট্যুর মানেই আড্ডা। সবাই এখন দুই-একদিন ফ্রি আছে তাই এর মধ্যে একটু ঘুরাঘুরি করলে ভালো সময় কাটবে। তারপর জবে ঢুকে গেলে বা মাস্টার্সের ক্লাস পুরোদমে শুরু হলে সবাই একসাথে সময় মিলাতে পারবে না।

মিহালরা শপিংমলে এসে নিজেদের প্রয়োজন মতো শপিং করে বের হবার সময় লেডিস কর্ণারের দুইটা শাড়ির দিকে মিহালের নজর যায়। শাড়ি দুটো অসম্ভব সুন্দর। সিম্পলের ভিতর কিন্তু চোখ ধাঁধানো। মিহাল প্রোমোদ হাসে। তার তো মায়ের জন্য ও বোনের জন্য ব্যাতিত কারো জন্য শাড়ি কেনার নেই। আর এই দুইটা শাড়ি তার মা কিংবা বোনের জন্য পছন্দ হচ্ছে না চোখে। এগুলো তো মানাবে তার প্রেয়সীর রূপে। কিন্তু প্রেয়সী এখনো অনিশ্চয়তায়। সে নিজেই তো দুঃখ দিয়েছে বড্ড। সরল ও লাজুকলতাকে জটিল ও তিক্ত বিষাদের সাথে পরিচয় করিয়েছে নিজেই। তার কিছু করার ছিল না। যদি এই বিষাদের ছায়া নিজ থেকে বিদেয় নেয় সেটার প্রতিক্ষা মাত্র।
মিহাল গাড়ো লাল ও গাড়ো নীল রঙের মসলিন সিল্ক শাড়ি দুটি কিনে নেয়। রিজভী ও তাইজুল মিহালের কর্মাকান্ডে মুচকি হাসে। তারা দুজনেই জানে এই শাড়ি দুটির মালকিন কে হবে! কার অঙ্গে শোভা পাবে এই শাড়ি দুটো!
মিহাল শাড়ি দুটো কিনে ব্যাগ নিয়ে রিজভী ও তাইজুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–জানি না অভিমানিনী হবে কিনা আমার! তবে তার উপহার তাকে আমি দিবো। হোক সেটা অচেনা আগুন্তক হয়ে।

তাইজুল মিহালের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–তানজিনার গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে ইরাকে বলেছি। ইনায়া, তানজিনা ও ইরা তো একই সাথে পড়ে। ইনায়া তানজিনার কোনো খবর দিবে না এটা জানি। তাই ইরাকে বলেছি। ইরা এটুকু বলেছে, তানজিনার সাথে নাকি ওদের নতুন আসা এক টিচারের ভাব হয়েছে। ভাবের কারণ, তানজিনা ওই টিচারের জিটিএ (গ্র্যাজুয়েট টিচার এসিস্টেন্ট)। ওই টিচার নাকি বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে এসেছে সাথে মাত্র আড়াই বছরে পিএইচডি করেছে। অনেক ব্রিলিয়ান্ট। আরেকটা সিনিয়র মানে মাস্টার্সের লাস্ট সেমিস্টারে পড়ে একজন তানজিনাকে চার বছর ধরে পছন্দ করে। তানজিনার সাথে তার ভালোই সম্পর্ক মানে হেল্প-টেল্প লাগলে নেয় আরকি। তানজিনা কিন্তু জানে ওই ছেলে ওকে পছন্দ করে তাও ছেলের সাথে চলাফেরা সে বেশি করে। কোনো কিছু লাগলে সেই ছেলেকেই আগে বলে। ছেলেটাও মনে হয় ধরে নিয়েছে, তানজিনা তাকে পছন্দ করে! কিন্তু তানজিনা নাকি ইনায়া ও ইরার সাথে ওই ছেলেটার বোকামি নিয়ে হাসাহাসি করে। বেচারা ছেলেটা!

রিজভী তাইজুলকে বলে,
–কারো ফিলিংস জেনে বুঝে কেনো তার সাথে ক্লোজ হয় যখন সে নিজে সেই মানুষটার প্রতি ইন্টারেস্টেড না! এরকম ছেলে বা মেয়ে কাউকেই আমার পছন্দ না। এই একটা মেয়ের জন্য কতোজন একসাথে কস্ট পাচ্ছে।

মিহাল ভাবলেশহীন ভাবে ওদের কথোপকথন শুনছে। তাইজুল এবার কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিমায় হড়বড়িয়ে বলে,

–ওহ হ্যাঁ! তানজিনার এক ব্যাচমেটও নাকি তানজিনাকে পছন্দ করে। তানজিনাকে ওই ছেলেটা প্রায়ই তানজিনাসহ ওদেরকে ট্রিট দেয়। তানজিনাকে মাঝে মাঝে কিছু গিফট করে। তানজিনা কিন্তু এটা জানে যে ওই ছেলেও তাকে পছন্দ করে।

মিহাল এবার তাইজুলের মাথায় চা’টা মেরে বলে,
–এগুলো তো কমন। কেন কলেজে দেখিস নি? বিউটি কুইন তানজিনার জন্য অজ্ঞাত নামে কতো চিঠি ও গিফট আসতো। আমাদের কলেজ তো অনার্স পর্যায়েও আছে। তানজিনা কি করতো তখন? সেগুলো নিয়ে সে শোঅফ করতো আবার হাসি-তামাশা করতো আবার চিঠি গুলো ক্লাস টাইমের আগে পুরো ক্লাসের সামনে জোরে জোরে পড়তো। আমার এসব বিরক্তই লাগতো। একজনের অনুভূতি তোমার ভালো নাই লাগতে পারে কিন্তু তাই বলে সেটাকে পাবলিকলি হিউমিলিটেড করতে পারো না। ইন্টারের পর যখন তানজিনার সাথে বিয়ের কথা জেনেছি তখন আমি ভাঙচুর পর্যন্ত করেছি বাসায়। আমার বাবা কিন্তু তানজিনার প্রতি ওরকম কেয়ারিং না। উনি নিউট্রাল কিন্তু মায়ের তানজিনাকে নিয়ে বাড়াবাড়িতে বাবা ও আপু দুজনেই বিরক্ত। আমি মাকে ভাঙচুর শেষে বলেছিলাম, “যেদিন তানজিনার আসল রূপ জানতে পারবে সেদিন নিজের ভিতরে আফসোসের শেষ থাকবে না তোমার।”

রিজভী দেখছে মিহালের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। শান্ত ও গম্ভীর স্বভাবের মানুষ যদি রাগ বাহ্যিকভাবে প্রকাশ করে তবে সেটা ভয়ংকর হয়। খুব ভয়ংকর।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
মিহালকে রিজভী কাঁধে ঝাঁকি দিয়ে বলে,
–দোস্ত, চল এবার। রেস্টুরেন্টে যাবো খুব খিদে পেয়েছে। সামনেই একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। চল সেটাতে যাই।

মিহাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজি হয়ে যায়। তারপর ওরা সেই রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয় কিন্তু পথিমধ্যে একটা কফিশপের বাহিরে মিহাল কাউকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। মিহাল দেখে অতি পরিচিত হাস্যজ্জল রমণী কোন এক অচেনা পুরুষের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন ওরা দুইজনে কফিশপ থেকে বের হয়েছে মাত্র। তবে কি ওরা দুইজন কফিশপে দেখা করতে এসেছিল? কিছুক্ষণ আগের রাগের স্ফুলিঙ্গ এখন আরো ধপধপ করে উঠলো। মিহাল রাগে হনহনিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকে গেলো। রেস্টুরেন্টের দরজাটা একটু জোরে খোলার কারণে তাইজুল ও রিজভী দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে। অতঃপর ডান পাশে চোখ যেতে দেখে তূর ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। রেস্টুরেন্টের পাশেই কফিশপ না। একটা দুইটা দোকান ব্যাবধান। মিহাল তখন তূরকেই দেখেছিল কারো সাথে হেসে কথা বলতে। মিহাল তূরকে পরিচিত বন্ধুদের ছাড়া কারো সাথে দেখলে সহ্য করতে পারে না। আর যেই ছেলেটার সাথে তূর কথা বলছিল সেই ছেলেটার হাতে এপ্রোন ও স্টেথোস্কোপ ছিল।

তূর রিজভী ও তাইজুলের কাছে এসে হাসি মুখে বলে,
–কি ব্যাপার? তোমারা এখানে?

মিহাল ওদিকে রেস্টুরেন্টের ভিতরে রাস্তার সাইডে বসেছে। হাফ থাই গ্লাস দেয়াতে বাহিরের দৃশ্য দেখা যায়। তূরকে সে রিজভী ও তাইজুলের সাথে কথা বলতে দেখছে কিন্তু শুনতে পাচ্ছে না। তূরের ঠোঁট এলিয়ে লাস্যময়ী হাসি যেন মনমুগ্ধকর। হাসিতে যার চোখ হাসে সাথে ঠোঁটের কোনে টোল পরে। না হোক সে গৌরবর্ণের অধিকারী! খানিকটা শ্যামলতা হলে ক্ষতি কি! তার উজ্জ্বল গায়ের রং সূর্যের আলোয় যেন ঝলমল করে। লতানো চুলগুলো উড়ে মুখের উপর পরার পর সেটা সরানোও একটা মুগ্ধতার শিল্প যেনো।

তূরের করা প্রশ্নে তাইজুল জবাব দেয়,
–শপিং করলাম। ট্যুরে যাবো তো দেখলাম ভালো কোনো স্নিকার্স ও ড্রেস নেই।

তূর মুখ বাঁকিয়ে বলে,
–আসলেই তোমাদের স্নিকার্স নেই! অবশ্য স্নিকার্স প্রেমিদের যতোই থাকুক তাও ওদের নাকি নেই!

রিজভী হেসে বলে,
–এটা তুমি ঠিকই বলেছো। আমি আবার স্নিকার্স নেই নি। তিনটার মতো তো বাসায় পরেই আছে। ওগুলোই ব্যাবহার করবো। তা তুমি এখানে?

তূর হেসে জবাব দেয়,
–একজনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।

রিজভী বলে,
–ওহ আচ্ছা। আসো একসাথে লাঞ্চ করি। ১২ টা তো বাজে।

তূর ভদ্রতা রেখে বলে,
–আসলে বাসায় গোছগাছ করতে হবে। কালকেই তো দেশে আসলাম আবার আজকে রাতে ট্যুরে যাবো। একটু প্রিপারেশন নিতে হবে। আর একটা লং জার্নির পর আরেকটা লং জার্নি। শরীর ধকল নিতে পারবে কিনা কে জানে! তোমাদের জবের জয়েনিং এর জন্যই আজকে যেতে হচ্ছে। নাহলে কিছুদিন পর যেতাম। তাহলে আসি। টাটা।

রিজভী ও তাইজুল বুঝে তারপর তূরকে বিদায় দিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকে। মিহালের সাথে এসে বসার পর ওরা দেখে মিহাল কাঁটাচামচ ঘুরাচ্ছে। ওয়েটার এসে অর্ডার নিয়ে গেলো। এখনও যেহেতু পুরোপুরি লাঞ্চ টাইম হয়নি তাই ওরা বেকড পাস্তা অর্ডার করলো। একটা থেকেই তিনজন খাবে। পাস্তার কোয়ান্টিটিও বেশি। অর্ডার আসার আগ পর্যন্ত মিহাল কাঁটাচামচ হাত থেকে সরালো না। রিজভী ব্যাপারটা না বুঝে জিজ্ঞাসা করে,

–তখন ওভাবে চলে এলি কেনো? জানিস তূরের সাথে দেখা হয়েছিল।

মিহাল কাঁটাচামচ দেখতে দেখতে বললো,
–ওহ!

রিজভীর কাছে আজব লাগলো। তারপরেও দুঃখ করে বললো,
–বেচারির জন্য টাফ হবে অনেক জার্নিটা। একটা জার্নির ধকল না কাটতেই আরেকটা জার্নি।

মিহাল হুট করে ভাবলেশহীন ভাবে বলে ফেলে,
–তাহলে সে না যাক! এতো কস্ট করে যাওয়ার দরকার কি? গুরুত্বপূর্ণ কারো সাথে দেখা করার সময় তো তার ক্লান্তি থাকে না। তাই না!

রিজভী ও তাইজুল দুইজনেই বে*কুবের মতো নিজেদের দেখছে। মিহাল কি মিন করছে তা ঠিকভাবে তাদের বোধগম্য হচ্ছে না। তাইজুল জিজ্ঞাসা করে,

–কি বলতেছিস তুই? তোর কথার মানে বুঝতেছি না আমরা।

মিহাল এবার কাঁটাচামচটা টেবিলের উপর সজোরে রেখে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বুকের উপর দুইহাত আড়াআড়িভাবে রেখে ভাবলেশহীনভাবে বলে,

–ওই ছেলেটা কিন্তু গুড লুকিং এন্ড স্মার্ট ছিল। ওর পছন্দ খুব পারফেক্ট!

এবারও দুই বে*কুবের মাথার উপর দিয়ে গেলো। দুজনের ঠোঁটে সেন্টি মার্কা হাসি। মিহাল সেসব তোয়াক্কা না করে আবার বলে,

–এইজন্যই কালকে তার ব্যাবহার কেমন চেঞ্জড লাগছিল। আমার উপস্থিতি তাকে বিরক্ত করছিল। যেন আমি তার কাছে ম্যাটার করি না। হাউ ফানি না! নতুন কেউ তার জীবনে এসে গেছে। তারউপর সেই নতুন কেউ স্মার্ট এন্ড প্রফেশনটাও স্মার্ট। তূরের পছন্দের প্রফেশন বলে কথা।

রিজভী অবাক হয়ে তাইজুলের দিকে একবার তাকায়। তাইজুলও একই ভাবে তাকায়। তারপর রিজভী বোকার মতো প্রশ্ন করে,

–তূরের কথা বলছিস? তূর কাকে ভালোবাসে? কার সাথে রিলেশনে আছে?

মিহাল বিরক্তই হলো। সে বললো,
–যাকে সে ভালোবাসে!

রিজভী ও তাইজুল বে’ক্কল বনে গেলো। বেকড পাস্তা এসে গেছে। ওরা তিনজনেই একটু একটু করে খাচ্ছে। এরপর দুপুরের লাঞ্চ করে ওরা যার যার বাড়িতে রওনা হলো।

_________

বাড়ি ফিরে তূর বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। টায়ার্ড লাগছে তার। ভাবছে দুপুরের খাবার খেয়ে দুপুর ৩ টা থেকে ৫.৩০ টা পর্যন্ত ঘুমাবে। মাগরিবের সময় তো ৬.১০ এ। এখন বাজে দুপুর ২টা। নীরা তাড়াহুড়ো করে তূরের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় তারপর তূরের পাশে এসে বসে। তূর নীরার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। দরজা তাড়াহুড়ো করে লাগাতে যাওয়ার দরুন কিছুটা শব্দের সৃষ্টি হয়েছে। নীরা মনের মধ্যে উত্তেজনা নিয়ে তূরকে জিজ্ঞাসা করে,

–ডাক্তার ইফতিকে তোর কেমন মনে হলো? ইজ হি রাইট ফর মি?

তূর শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলে,
–হুম খারাপ না। কথার ধরন ও ব্যবহার খুবই ভালো, প্রশংসনীয়। অহংকার লক্ষ্যনীয় ছিল না। প্রথমে তার চেম্বারে গিয়েছি তারপর চেম্বারে গিয়ে তাকে তোর পরিচয় দিয়ে বলেছি যদি একটু কফিশপে আসে। সে হাতে থাকা কয়েকটা রোগী দেখে আমার সাথে গেলো। তারপর তোর কথা ও কখনো আর কাউকে ভালো লেগেছিল কিনা তা জিজ্ঞাসা করেছি। আরও টুকটাক পরিচয় ও স্টাডি নিয়ে কথা হলো। সে সবকিছুর সুন্দর করে জবাব দিয়েছে। আমার তার কথা বলার ধরনে মিথ্যা মনে হয় নি।

নীরা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–তার কি কখনো আগে কারো সাথে রিলেশন ছিল?

তূর আফসোস করে বলে,
–ছিল!

নীরার চোখ-মুখ কেমন যেনো হয়ে গেলো। তূর আবারো বলে,
–কিন্তু সেই মেয়েটা আর এই ইহজগতে নেই। ১০ বছর আগে কানাডাতে কার এক্সিডেন্টে মেয়েটা মা*রা যায়। তখন ডাক্তার ইফতি ১৯ বছরের আর মেয়েটা ১৬ বছরের ছিল। মেয়েটা ছিল ডাক্তার ইফতির ফুফির মেয়ে। ডাক্তার ইফতির যখন দুই বছর তখন তার বাবা-মা, ফুফিরা কানাডা চলে গিয়েছিলেন। তার বাবার কানাডাতে বিজনেস ব্রাঞ্চ আছে আর তার ফুফারও তাতে ৫০% শেয়ার। ডাক্তার ইফতির অতীতের ভালোবাসার মানুষটার নাম ছিল নীরা! হ্যাঁ। ওই মেয়েটার নামও তোর নামের সাথে মিল ছিল।

নীরা অবাক হয়। ওই মেয়েটার মৃত্যুর খবরে দুঃখ পেলেও কিছু একটা ভেবে নীরার হৃদয় ব্যাথিত হলো। নীরা কম্পমান স্বরে বললো,

–নামের মিলের কারণে কি সে আমার বিয়ে করতে চায়?

তূর অবাক হলো না নীরার প্রশ্নে। এরকম প্রশ্নই তূর আশা করছিল।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন ও কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।