শেষ থেকে শুরু পর্ব-০৫

0
250

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৫

ভোর রাতে বাজে একটা স্বপ্ন দেখে হৈমন্তীর ঘুম ভাঙলো। গতকাল অনুষ্ঠান শেষের আগেই রুমে এসে ঘুমিয়েছিল।আর বাইরে যাওয়া হয়নি। এতো লোকজন হৈচৈ ওর সহ‍্য হয়না মাথায় যন্ত্রণা করছে। অনিচ্ছা শর্তও কিছু কাজ ওকে করতে হচ্ছে।মায়ের মুখটা কতকাল দেখা হয়নি। গ্রামে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু সেখানে গেলেই তো আবার শুরু হবে হৈমন্তী অপয়া। হৈমন্তী আগে ঘটনাগুলোকে স্মরণ করার চেষ্টা করলো। মায়ের ইচ্ছেতে বিয়ে হয়েছিল। হৈমন্তী তুলনামূলকভাবে তখন ছোট ছিল তাই বড় ভাইয়া শর্ত দিয়েছি হৈমন্তী বড় হলে শশুর বাড়িতে ফিরবে কিন্তু নিয়তি সেদিনই তাকে মরতে হলো। বিয়ে করতেই তো লোকটা সেদিন এসেছি নয়তো বাড়িতে থাকতো। মরতে হতো না। হৈমন্তীর সেই পযর্ন্ত মনে আছে। তারপর যে ছোট ভাইয়ার কাছে কিভাবে পৌঁছালো মনে পড়ছে না। বড় ধরণের কোনো অসুস্থতার কথাও মনে আসছে না। ভাইয়াকে জিঞ্জাসা করেছিল সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। হৈমন্তী ভাবলো বড় ভাবির থেকে জেনে নেওয়া যাবে। জীবনের বড় একটা অধ‍্যায়কে ভূলে গিয়ে বসে আছে কি অদ্ভুত। নিজের উপরে বিরক্ত লাগলো। হৈমন্তী ফরজের নামাজ শেষ করে বাইরে বেরিয়ে আসলো। ডাইনিং রুমটা অচেনা লাগছে। অগোছালো হয়ে আছে। গতকাল হয়তো সবাই অনেক রাত পযর্ন্ত আড্ডা দিয়ে রুমে গেছে। আজ সকালে কেউ সহজে উঠছে না। হৈমন্তী রান্নাঘরে গিয়ে নিজের জন্য এক কাপ চা তৈরী করে সোফায় গিয়ে বসলো। চা শেষ করতে না করতে ওকে অবাক করে বড় ভাবি ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে সেখানে হাজির। হৈমন্তী অবাক হয়ে বলল,

> এতো তাড়াতাড়ি ঘুম কাটলো তোমার? আমি তো ভেবেছিলাম আজকে দুপুরে ছাড়া কাউকে পাওয়া যাবে না।

> আমার অভ‍্যাস আছে। বাচ্চা পালতে হলে ঘুমটুম নিয়ে ভাবলে চলে না।

> রনি খুব বিরক্ত করে তোমাকে তাইনা?

> আরে দূর মা হয়েছি এইটুকু তো করতেই হয়। হৈমি আমার সঙ্গে শপিং করতে যাবে? রনির জন্য কিছু কেনাকাটা করতে হবে।

হৈমন্তী কিছু ভেবে নিয়ে বলল,

> মন্দ না যাওয়া যায়। আমারও কিছু কেনার আছে। তোমাকে আমার বন্ধু অরিনের কথা বলেছিলাম মনে আছে?

> হুম।

> ওর বিয়ে পনেরো তারিখে। হয়তো দশ তারিখের মধ্যে ওর সঙ্গে থাকতে হবে। গতকাল কথা হয়েছে আমাকে যেতেই হবে। মেয়েটা পাগলামী করছে।

> বিয়ের বাড়ির হৈচৈ সহ‍্য করতে পারবে?

>কিছু করার নেই ভাবি। তাছাড়া ওর সঙ্গে থাকলে আমি খারাপ থাকি না।

চয়নিকা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। মেয়েটাকে নিয়ে সকলের চিন্তা। হুটকরে কবে না জানি সেই কালো অতীত ওর সামনে চলে আসে। মেয়েটা যদি মনের দিক থেকে শক্ত হতো তাহলে এতো ঝামেলা ছিল না। জীবনে সমস্যা আসবে তাই বলে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানোর কি আছে। হৈমন্তীর সেই রাতে বেরিয়ে না এসে প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিল। কিন্তু সে কি করলো পালিয়ে এলো। তার মনে হলো লোকজন শুনলে ওকে ছোট করবে অপমান করবে। তাছাড়া জোর করে অধিকার দাবি করে সংসার হয়না। ফরহাদ প্রথম থেকেই ওর প্রতি উদাসীন। চয়নিকা ভাবতে পারলো না। একবার মনে হলো হৈমন্তী ঠিক ছিল আবার মনে হলো ফরহাদকে এমনি ছেড়ে দাওয়া ঠিক হয়নি। যাইহোক মেয়েটা ওখানে থাকলে সারাজীবন কষ্ট পেতো সেই হিসেবে ভালো হয়েছে। আপাতত যেমন আছে থাক। কথাটা ভেবে ও রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। কাজের লোকজনকে আজ পাওয়া যাবে না। গতকালের থালাবাসন ঘরবাড়ি পরিস্কার করতে তারা ব‍্যস্ত। নিজেদের কাজগুলো নিজেরাই করে নিতে হবে। চয়নিকা সকলের জন্য নাস্তা তৈরী করে ফেলল। হৈমন্তী ভাবিকে সাহায্য করতে করতে সকাল আটটার বেশি বেজে গেলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুজনের শপিং করতে বেরিয়ে পড়লো। বাড়ির বাকি সদস্যরা কুম্ভকর্ণের মতো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। বারোটার আগে কেউ উঠবে না তাই কাউকে জানাতে পারলো না। চয়নিকা রনিকে সঙ্গে এনেছে। এর মধ্যে হৈমন্তীর সঙ্গে রনির মোটামুটি একটু ভাব জমেছে। ছেলেটা এখন আর ওকে ভয় পাচ্ছে না। ওরা শপিংমলের সামনে নেমে পড়লো। হৈমন্তী রনিকে নিজের কোলে তুলে নিলো। চয়নিকা কেনাকাটা করবে রনি থাকলে অসুবিধা হতে পারে তাই। হৈমন্তী এক মাস ঢাকায় ছিল তার কিছুই মনে নেই। ঢাকা শহর ওর কাছে সম্পূর্ণ অচেনা। চয়নিকা ওকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে হাটছে। সকাল টাইমে লোকজনের ভিড় তেমন নেই তবুও সাবধানতা অবলম্বন করছে। চয়নিকা ওদেরকে একটা দোকানে রেখে সামনে একটু এগিয়ে গেলো। হৈমন্তী রনিকে নিয়ে এটা সেটা দেখছে। ছেলেটাও বেশ খুশী। হৈমন্তীর বাচ্চাদের সঙ্গে তেমন মেলামেশা হয়নি। রনিকে ওর বেশ ভালোলাগছে। কিন্তু হৈমন্তীর এই খুশীটা বেশিক্ষণ টিকলো না। একটা শক্ত হাত পেছনে ওরে হাতের কব্জি টেনে ধরলো। হৈমন্তী ভয়ে চমকে উঠে পেছনে তাঁকিয়ে দেখলো অচেনা একটা লোক ওর হাত ধরে আছে। হৈমন্তী হাত ছাড়ানো চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। হৈমন্তীর মনে হলো এই লোকটা ওকে মারতে চাইছে। ও চোখ মুখ বন্ধ করে চিৎকার করতে চাইলো কিন্তু পারলো না তার আগেই লোকটা বললো,

> হৈমন্তীর আমি ফরহাদ। আমাকে চিনতে পারছো না? খুব ভূল করেছিলাম তোমাকে তাড়িয়ে দিয়ে। বিশ্বাস করো তোমাকে আমি অনেক খুজেঁছি কিন্তু পাইনি। এতোদিন পরে তোমাকে দেখছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার সঙ্গে চলো আমি তোমাকে আর কখনও কষ্ট দিবো না।

ফরহাদ একদমে কথাগুলো বলে থামলো। ওর কথা শুনে হৈমন্তী বুঝতে পারলো ও একটা পাগলের খপ্পরে পড়ছে। ভয়টা ওর আরও জেগে বসলো। তাই কোনো কিছু না ভেবে চিৎকার দিতে উঠলো। ওর চিৎকারে রনিও ভ‍্যা ভ‍্যা করে কান্না শুরু করলো। মোটামুটি দুজন মিলে দোকান উড়িয়ে দেবার মতো অবস্থা। চয়নিকা পাশের দোকানে ছিল ওদের দুজনের এমন চিৎকার দিতে শুনে দৌড়ে এসে দেখলো ফরহাদ এখনো হৈমন্তীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ও আর অপেক্ষা করলো না দৌড়ে গিয়ে হৈমন্তীকে ওর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। চয়নিকাকে দেখে হৈমন্তীর চিৎকার তো বন্ধ হলো কিন্তু ভয় কমলো না। ফরহাদ ছেলে মানুষ ওর সঙ্গে পারা দুজনের সম্ভবও না। ফরহাদ চয়নিকাকে দেখে যেনো আশার আলো পেলো। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,

>ভাবি আমি ওদেরকে ফিরিয়ে নিতে চাই। এই বাচ্চাটা আমার ছেলে তাই না?

ফরহাদের কথা শুনে চয়নিকা তাড়াতাড়ি হৈমন্তীকে ছেড়ে রনিকে কোলে তুলে নিলো। এভাবে একা আসা ঠিক হয়নি। কি করবে মাথায় ঢুকছে না। মেজাজ খারাপ হচ্ছে সঙ্গে ভয়। চয়নিকা নিজেকে শক্ত করে বলল,

> পাগল নাকি আপনি? আপনাকে আমরা চিনি না। দয়াকরে ছেড়ে দিয়ে বিদায় হোন। দেখুন খুব খারাপ হবে।

ফরহাদ বিস্মিত হয়ে বলল,

> কিসের খারাপ?আমার বউ বাচ্চা আমি ফিরিয়ে নিতে চাইছি। এতোদিন ভুল করেছিলাম মানছি। ক্ষমা চাইলে আল্লাহও ক্ষমা করে আর মানুষ হয়ে আপনারা পারবেন না।

হৈমন্তীর ধৈর্যের বাধ বেঙে গেলো। মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। ও হালকা চেচিয়ে বলল,

> রাখ তোর বউ বাচ্চা। এখুনি আমার হাত ছাড়। মেয়ে দেখলেই বউ মনে হয় তাইনা?

ফরহাদ হৈমন্তীর কথায় অবাক হলো। মেয়েটা ওকে চিনেও না চেনার ভান করছে কিন্তু কেনো? মেয়েটার তো খুশী হওয়া উচিৎ। ফরহাদ নিজের বাচ্চাকে মেনে নিতে চাইছে এটা ওর জন্য কম কিসের। ওদের চিৎকার চেচামেচিতে বেশ কিছু লোক জুটে গেলো। আবির সকালবেলায় এদিকে একটা কাজে এসেছি। মায়ের জন্য একটা জিনিস কিনতে শপিংমলে ঢুকতে হলো। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার চেচামেচি শুনে ভেতরে এসে দেখলো একটা ছেলে হৈমন্তীর হাত ধরে টানাটানি করছে। দৃশ্যটা ওর কাছে সবথেকে খারাপ আর জঘণ্য বলে মনে হলো। ও কোনো কিছু না শুনে না দেখে হাতের মুঠো শক্ত করে ফরহাদের মুখের উপরে কয়েকটা পরপর ঘুসি মেরে বসলো। ফরহাদ হঠাৎ আক্রমণে নিজেকে সামনে নিতে না পেরে হৈমন্তীকে ছেড়ে ছিটকে পড়ে গেলো। আবির ফুল ফর্মে রয়েছে। মেজাজ চরম খারাপ। চয়নিকা কে শুধু ইশারা করলো হৈমন্তীকে নিয়ে চলে যেতে। চয়নিকা সময় নষ্ট করলো না। হৈমন্তীকে নিয়ে সরে গেলো। আবির ফরহাদের কলার চেপে টানতে টানতে বেরিয়ে গেলো। ডান হাতে কাকে একটা ফোন করলো। চয়নিকা হৈমন্তীকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে বসে আছে। হৈমন্তী ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। রনী এখনো ফুপিয়ে যাচ্ছে। কি থেকে কি হলো এখনো সবাই ঘোরের মধ্যে আছে। চয়নিকা দ্রুত ওদেরকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো। হৈমন্তী রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করেছে। চয়নিকা রাজীব আর আরাফাতকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। দুজনই রাগে ফুলছে। এতো বছর পরে বউ বাচ্চা ফিরিয়ে নিতে এসেছে। রাজীব ইচ্ছে মতো গালিগালাজ করছে।

_____________________________
সিটি হাসপাতালে বেডে শুয়ে আছে ফরহাদ। হাত ভেঙেছে পা মচকে গেছে। ঠোঁট মুখে বেশ জখম। দুপুরে সেই অচেনা ছেলেটা ওকে আচ্ছা করে ধোলাই করে হাসপাতালে রেখে খেছে। পাশে ফরহাদের মা শায়লা বানু গুনগুন করে সুর তুলে কান্নাকাটি করছে। দূরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে লতা। সে এই মা ছেলের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হচ্ছে। ফরহাদ অচেতন আছে। ডাক্তার বলেছে কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান ফিরবে। শায়লা বানুর প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে। এই ছেলেটাই উনার শেষ সম্বল। বৃদ্ধ বয়সে ছেলেটা না থাকলে কোথায় যাবেন কি করবেন ভেবেই কান্না দ্বিগুণ হচ্ছে। লতা বিরক্ত হয়ে ছুটে এসে শাশুড়িকে বলল,

> মরা কান্না জুড়েছেন কেনো? মাথা ধরে যাচ্ছে। চুপচাপ থাকবেন নাকি চলে যাবো? আমি গেলে কিন্তু আর আসবো না। তখন ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের পেছনে পেছনে ঘুরে বেড়িয়েন ভালো লাগবে।

শায়লা বানু ঠোঁট চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো। লতা চলে গেলে সত্যিই ঝামেলা হবে। ওষুধপত্র কিনতে হলেও বারবার নিচে যেতে হবে। উনার হাটুতে ব‍্যথা হয়েছে যাওয়া আসা করলে বেশি হবে। এর মধ্যেই ডাক্তার এসে বলে গেলো ইনজেকশন ফুরিয়ে গেলো হাসপাতালের সামনের দোকান থেকে আনতে হবে। লতা গটগট করে চলে গেলো। মেয়েটা বাইরে যেতেই শায়লা বানু আবারও শুরু করলেন। যেনো সুযোগ খুজতেছিলেন।

কয়েক মিনিটের ব‍্যবধানে ফরহাদের জ্ঞান ফিরলো। মাথার উপরে ফ‍্যান ঘুরছে তবুও কেমন গরম লাগছে। নড়াচড়া করতে গেলো কিন্তু পারলো না। হাত পা ভীষণ ব‍্যাথা। ঠোঁট কেটে গিয়েছিল সেখানে ফুলে বালিশ হয়েছে। পাশে মাকে দেখে ফরহাদ যেনো নিমিষেই ব‍্যথা ভুলে গেলো। ফিসফিস করে বলল,

> আম্মা তুমি জানো ওকে পেয়েছি আমি?

শায়লা বানু এতক্ষণ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। হঠাৎ ছেলের কথা শুনে বুঝতে পারলেন না। ছেলের এমন অবস্থা কে করছে আসল ঘটনা শোনার জন্য এতক্ষণ উতলা ছিলেন। উনাকে চুপচাপ থাকতে দেখে ফরহাদ বলল,

> আম্মা হৈমন্তীকে দেখেছি। তুমি জানো ও দেখতে কতো সুন্দর হয়ে গেছে? আমাদের বাচ্চাটাও সুন্দর হয়েছে। একদম আমার মতো। আমি সুস্থ হয়ে তোমাকে নিয়ে ওকে আনতে যাবো।

শায়লা বানু ছেলের এমন কথায় চমকে উঠলেন। হৈমন্তীর সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা উনার নেই। উনি নিজেকে শান্ত রেখে বললেন,

> হৈমন্তীর সঙ্গে তোমার ডিভোর্স হয়ে গেছে ভুলে গেলে তুমি?

> হয়েছে তো কি হয়েছে? আমার বউ বাচ্চা আমি ইচ্ছে করলেই ফিরিয়ে নিতে পারি। তাছাড়া বাচ্চাসহ ওকে আবার কে বিয়ে করবে? আমি গেলেই দেখবা ওর মা খুশী হয়ে যাবে। আবার বিয়ে করবো। লতার সঙ্গে আমি থাকবোনা।

শায়লা বানুর মনের মধ্যেও আশার আলো ফুটে উঠলো কিন্তু ভরসা করতে পারলো না। হৈমন্তীর বাপ ভাইদের সামনে গেলে যদি ঝামেলা হয় তখন? উনি বুদ্ধি করতে লাগলেন কিভাবে হৈমন্তীকে আবারও ফিরিয়ে আনা যায়।

____________
রোহানের সামনে বসে আছে আবির। নির্জন পরিবেশ। রোহানের মেজাজ মোটামুটি শান্ত কিন্তু আবিরে রেগে আছে। ফোস ফোস করে নিশ্বাস নিচ্ছে। রাগ কন্ট্রোল করতে যথাযথ চেষ্টা করে চলেছে। কিছুক্ষণ আগে চয়নিকা রোহানকে বোন করে সবটা বলেছে। রোহান আর অপেক্ষা করেনি আবিরের অফিসে চলে এসেছে। শেষমেশ ছেলেটা খুনখারাপির সঙ্গে জড়িয়ে না যায় ভয় পাচ্ছে। রোহানকে এভাবে চুপচাপ দেখে আবির ভ্রু কুচকে বলল,

> কিছু বলার থাকলে বল নয়তো বিদায় নে। মেজাজ চরম খারাপ।

রোহান ভনিতা না করে শান্ত কন্ঠে বলল,

> ফরহাদ কোথায়? কি করেছিস ওর সঙ্গে?

> কিছুই করিনি শুধু কয়েকটা চড় থাপ্পড় দিয়েছি। তোর দুলাভাইয়ের জায়গাই থাকলে না আমি ওকে এতক্ষণে মর্গে পাঠাতাম। বেহুদ্দা লোকজন। এতোকিছু হয়ে গেছে তবুও কোনো হেলদোল নেই।

> আবির ওদের বোন ওরা বুঝবে তুই কেনো ঝামেলা করছিস। আন্টি জানলে কি হবে জানিস? হৈমন্তীর সম্পর্কে কিছুই তো জানিস না।

আবির এবার রেগে খেলো। ও টেবিল চাপড়ে বলল,

> এইটুকু একটা মেয়ের সম্পর্কে জানতে আহামরি কিছু করতে হয়নি আমার। তাছাড়া আজ পাঁচ বছর ধরে মেয়েটাকে দেখছি কখনও কোনো খারাপ কিছু দেখিনি। আমার বোনের সঙ্গে মেলামেশা করে। অরিন আগে কতটা বেপরোয়া ছিল জানিস তো?এই মেয়েটার সঙ্গে মিশে একদম শান্ত হয়ে গেছে।
রোহান ভ্রু কুচকে বলল,

> হৈমন্তী ওর কোন বন্ধুর বিয়ের জন্য দেশে ফিরেছে ওটা কি অরিন ছিল?

> তো কি মনে হয়? আমি বলেছিলাম অরিণকে হৈমন্তীকে বুঝিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে। তাছাড়া দুবছর আমি ওখানেই ছিলাম। সেসব কথা পরে বলবো এখন বল এই ফরহাদকে তোর বোনেরা সহ‍্য করে কিভাবে?

আবিরের কথায় রোহান উত্তর করতে পারলো না। কিছুই ভালো লাগছে না। আবির নিরবতা ভেঙে বলল,

> আচ্ছা আমার সঙ্গে হৈমন্তীর বিয়ে নিয়ে তোর কি অসুবিধা বলবি? আমি তো কোনো সমস্যা দেখছি না।

> মেয়েটা ডিভোর্সী আন্টি মানবে না। আঙ্কেল ঝামেলা করবে।

> আমার তো এখন আফসোস হচ্ছে আমিও কেনো ডিভোর্সী হলাম না। অপেক্ষা কর আম্মুকে বলছি আমার বিয়ে দিয়ে ডিভোর্সের ব‍্যবস্থা করতে তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই।

রোহান মাথায় হাত দিয়ে নড়েচড়ে বসলো। আবির চোখমুখ কঠিন করে বসে আছে। এই ছেলের কাছে কোনো বিষয় কঠিন না। সব সহজ। হৈমন্তীকে ওর বেশ পছন্দ কিন্তু আবিরের মতো এভাবে কখনও ভাবেনি। ডিভোর্সী মেয়েদের সমাজ ভালো চোখে দেখেনা সে দোষটা যারই থাকুক না কেনো। ভেবেছিল যদি মেয়েটার বিয়ে না হতো তাহলে নিজের জন্য দুলাভাইয়ের কাছে প্রস্তাব দিতো। কিন্তু আবির তো লাগাম ছাড়া মানুষ। নিজের কাছে যা ঠিক মনে হবে ওটাই ঠিক। কাউকে পরোয়া করে না। রোহান ভাবলো আপার সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।