শেষ থেকে শুরু পর্ব-০৬

0
238

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৬

থমথমে মুখ নিয়ে আরবিরের অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছে রোহান। কেনো জানি আবিরের আচরণ ওর কাছে বিরক্তিকর লাগছে। ও হৈমন্তীর ওর জন্য কিছুতেই উপযুক্ত না। মেয়েটার অতীত অত্যন্ত খারাপ। আবিরের সঙ্গে জড়িয়ে দুপক্ষের কেউ ভালো থাকতে পারবে না। নতুন করে আবারও অশান্তি হবে। তাছাড়া আবিরের বাবা মা বেশ দাম্ভিক টাইপের মানুষ। অভিজাতদের কাতারে যারা এক নাম্বারে পড়ে। এমন লোকদের ডিভোর্সী বউমা ভাবলেই রোহানের গা ঘেমে একাকার অবস্থা। ওকে আবির বলির প‍ঠা বানাবে শেষমেশ। রোহান এই কয়েকদিন আবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে না বলে পরিকল্পনা করে ফেলল। অন‍্যদিকে আবির টেবিলের উপরে পা তুলে চেয়ার হেলান দিয়ে বসে আছে। আজকের মধ্যে মায়ের সঙ্গে হৈমন্তীর ব‍্যপারে আলোচনা করতে হবে। টেবিলের উপরে ফোনটা বেজে চলেছে সেদিকে ওর নজর নেই। ফরহাদকে হাসপাতালে ভর্তি করে এসেছিল খবর জানানোর জন্য ওয়াডবয় ফোন করেছে। আবির ভনিতা ছাড়া ফোন রিসিভ করে বলল,

> সব ঠিক আছে?

> ঠিকঠাক আছে কিন্তু এরা বড্ড বেশি ঝগড়া ঝামেলা করে। তাই বড় ডাক্তার ওদেরকে বেড থেকে নামিয়ে দিয়েছে আশেপাশে রোগীদের অসুবিধা হচ্ছে। কথাটা বলতেই ফোন করলাম। এখন কি করবো?

> বিছানা করে বারান্দায় রেখে দাওয়া। ওদের অভ‍্যাস খারাপ। সুখে থাকলে ভূতে কিলাই। যাইহোক খেয়াল রেখো।

আবির আরও কয়েকটা কথা বলে ফোন রেখে দিল। বিরক্ত লাগছে ফরহাদের উপরে। লোকটার গতিবিধি লক্ষ রাখতে হবে। খুন করার হলে এতক্ষণে খুন করে ফেলতো। খুন খারাপি করে নিজের সম্মান নষ্ট না করে ব‍্যাটার অবস্থা নাজেহাল করে ফেলবে। কথাগুলো ভেবে ঠোঁটের কোনে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠলো। হৈমন্তীর ফোন নাম্বার গতকাল অরিনের ফোন থেকে কৌশলে নেওয়া হয়েছিল এখনো পযর্ন্ত ফোন করা হয়নি। আবিরের ইচ্ছে করলো হৈমন্তীকে ফোন করতে তাই ঝটপট নাম্বার বের করে ডায়েল করে বসলো। মনের মধ্যে ভয় ভয় করছে। তৃতীয়বারের মাথায় ফোন রিসিভ হলো। আবির কিছু বলার আগেই ব‍্যস্ত ভঙ্গিতে হৈমন্তী সালাম দিয়ে বলল,

> কে বলছেন?

> আবির এহসান সকালবেলায় দেখা হলো কিন্তু কথা হলো না আমি সেই।

হৈমন্তী কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিয়ে উত্তর দিলো,
>
ধন্যবাদ সাহায্য করার জন্য। কিছু বলবেন?

আবির কি বলবে খুঁজে পেলো না তবুও মিনমিনে কন্ঠে বলল,

> বলতে তো অনেক কিছুই চাই কিন্তু এই মূহুর্তে
বলতে পারছিনা। কেমন জানি গুলিয়ে ফেলছি।

> এক মিনিট আপনি কি আমাকে পটানোর চেষ্টা করছেন? যদি তেমন ভেবে থাকেন তাহলে কিন্তু ভূল করছেন। সাহায্য করেছেন আমি কৃতজ্ঞ এর বেশিকিছু না। রাখতে পারেন।

হৈমন্তী আবিরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে খট করে নিজেই কেটে দিলো। আবিরের উপর দিয়ে মনে হলো টনেডো বয়ে গেলো। মনে হলো এই সাংঘাতিক মেয়েকে নিয়ন্ত্রণ করতে ওর জীবন শেষ। ভালো কথায় কাজ না হলে আবির এহসান কতকি করতে পারে মেয়েটার হয়তো আইডিয়া নেই কথাটা ভেবে হাসি পেলো আবিরের।

_____________________
মির্জা বাড়ির ছেলেগুলো ডাইনিং রুমে বৈঠক বসিয়েছে। কথা হচ্ছে ছেলেমেয়ে শহরে কিন্তু তাদের মা বাবা গ্রামে পড়ে আছে। তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা ভেবে রাজীব প্রতি সপ্তাহে গিয়ে দেখা করে আসে। কিন্তু বাবা মায়ের বয়স হয়েছে একদিন দেখা করে আসলেই তো আর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এই বয়সে ছেলেমেয়েদের আছে থাকার কথা। আরাফাত মায়ের সঙ্গে নিয়ম করে সকাল সন্ধ্যায় কথা বলে বুঝিয়েছে এখানে চলে আসার জন্য কিন্তু দুজনের কেউ রাজি হচ্ছে না। গ্রামের চেয়ে শান্তি নাকি কোথাও নেই। শেষমেষ হৈমন্তীর কথা বলায় রাজি হয়েছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে হৈমন্তীকে নিয়ে। মিনারা বেগম এখানে ফিরেই হৈমন্তীর পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে যাবেন। উনি চাই হৈমন্তী যেখানে ছিল সেখানে ফিরে গিয়ে সংসার করুক। রাজীবকে বহুবার বুঝিয়েছে মেয়েদের একটু মানিয়ে নিতে হয়। ফরহাদ বিয়ে করেছে তাতে কি ওর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে হৈমন্তীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। রাজীব মায়ের সঙ্গে উচ্চ শব্দে কথা বলে না। মানুষটা অনেক কষ্টে এতগুলো ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছে। তাছাড়া গ্রামে শুধু জমি থাকলেই তাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হয়ে যায়না। বাবা মায়ের তৎপরতা লাগে। ওদের চাচাদেরও ওদের মতো জমিজমা আছে কিন্তু তাদের ছেলেমেয়েরা ওদের মতো প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি। না পেরেছে ভালো লেখাপড়া শিখতে। সেই হিসেবে সব কৃতিত্ব ওদের বাবা মায়ের। বিশেষ করে মায়ের। উনি চেয়েছিলেন বলেই এই সুদিন দেখছে তার সন্তানরা। মায়ের উপরে রাগারাগি করতে কষ্ট হয় রাজীবের। উভয় সংকটে পড়তে হয়েছে। একদিকে মা অন‍্যদিকে আদরের বোনের ভালো থাকা। মা যদি একবার জানে ফরহাদ হৈমন্তীকে ফিরিয়ে নিতে পাগলামী করছে অমনি শুরু করবেন ড্রামা। আগের মতো নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিবে। ভাইয়েরা মিলে পরামর্শ করছে। চয়নিকা মাঝেমধ্যে মুখ ঘুরিয়ে দিচ্ছে। চয়নিকা এই জন‍্যই শাশুড়িকে পছন্দ করে না। দুজনের এক সঙ্গে বসলে মিনারা বেগমেরের লাগাম ছাড়া কথাবার্তা শুনে চয়নিকা অতিষ্ঠ হয়ে যায়। প্রতিবাদ করে বসে। চয়নিকা ঢাকার মেয়ে। যথেষ্ট শিক্ষিত এবং রুচিশীল। তবুও গ্রামে গিয়ে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিবাদ করার অভ‍্যাস ছাড়তে পারেনি এটাই অপছন্দ করেন মিনারা বেগম। সব দোষ এসে পড়েছে ঢাকা শহরের উপরে। এই জ‍ন‍্যই এতোবছর গ্রামে থাকা। নিরবতা কাটিয়ে আরাফাত বলল,

> আমি আম্মার কাছে কাছে থাকবো। হৈমন্তীকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিব না। ভাবি তুমি হৈমন্তীর সঙ্গে থাকবা। কোনো অবস্থায় মেয়েটার উপরে চাপ দেওয়া চলবে না। দুমাস পরে ওকে নিয়ে ফিরে যাবো। এখানে থাকলে বিপদ অনিবার্য।

মাসুদ রাগে ফুলছে। ও দাঁতে দাঁত লাগিয়ে বলল,

> ফরহাদের বাচ্চারে ঘুঁসের কেসে ফাঁসিয়ে কাজের কাজ কিছু হয়নি। মার্ডারে ফাঁসিয়ে দিলে এতদিন জন্মের মতো আমার বোনের নাম ভুলে যেতো। এবার যদি বাড়াবাড়ি করে আমি কিন্তু তাই করবো। ভাইয়া তোমার প্লানে কাজ করেনি। তখনই বলেছিলাম। তুমি বললে চাকরি না থাকলে পথে পথে ঘুরবে দগ্ধ হবে। হাতে না মেরে ভাতে মারতে। লাভ কি হলো বলবে?

রাজীব শান্ত কন্ঠে বলল,

> মাথা ঠান্ডা কর। ফরহাদের মতো সামান্য ছেলেকে তোরা ভয় পাচ্ছিস অবাক লাগছে। কি ক্ষমতা আছে ওর যে আমার বোনের আশেপাশে ঘেঁষবে?

> ভাইয়া ওর ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ নেই কিন্তু হৈমন্তীর জন্য ভয় করছে। আবারও যদি সেসব মনে পড়ে তখন কি হবে?

আরাফাত দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। হৈমন্তীকে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার এক মাসের মাথায় মেয়েটা সুইসাইড করতে গিয়েছিল সেসব বাড়ির কাউকে বলতে পারেনি। কিন্তু আজকে তা চাপা রাখতে পারলো না। ফিসফিস করে বলল,

> সেবারের মতো সুইসাইড করে বসলে? নানা আমি ওকে এই মাসের মধ্যেই ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

উপস্থিত সকলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রাজীব ভ্রু কুচকে বলল,

> সুইসাইড মানে কি আরাফাত? বোনের খেয়াল রাখতে পারলে না তখন তো খুব বলেছিলে খেয়াল রাখবো?

> ভাইয়া তখন ও আমাকেও তেমন চিনতো না। প্রায় সময় চুপচাপ থাকতো। হঠাৎ হঠাৎ চেচামেচি করতো। আমি একটা কাজে বাইরে গিয়েছিলাম ফিরে দেখি ফ‍্যানের সঙ্গে…

আরাফাত আর বলতে পারলো না। বাকীটা সকলে বুঝে নিয়েছে। দুভাই ওর উপরে প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছে। এতবড় ঘটনা ওদের থেকে গোপন করেছে। আরাফাতকে বাঁচানোর জন্য চয়নিকা বলল,

> মেয়েটা তখন ভারসাম্যহীণ ছিল। আরাফাত নজরে না রাখলেও এরকম হতোই। যা হয়ে গেছে এখন বললে লাভ হবে না। পুরাতন কথাবার্তা ফেলে নতুন কিছু ভাবতে হবে। আমার শ্রদ্ধেয় শাশুড়ি আম্মা ইতিমধ্যেই গাড়িতে উঠে গেছেন।

হৈমন্তী ঘরে ছিল বাইরে শোরগোল শুনে বেরিয়ে আসলো। ওকে দেখে বাধ্য হয়ে আলোচনার সমাপ্তি ঘটানো হলো। হৈমন্তী ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> আজকে বিশেষ কিছু হচ্ছে বাড়িতে? সকাল সকাল বসে গেছো আড্ডা দিতে। বড় ভাইয়া চলো ঘুরে আসি বাড়িতে বসে থাকতে বিরক্ত লাগছে।

রাজীব বোনের কথায় খুশী হয়ে বলল,

> কোথায় যেতে ইচ্ছে করছে নাম বল। বিকেলের মধ্যেই ঘুরতে যাবো। শুনেছিস আম্মা আসছে?

হৈমন্তীর চোখমুখ ঝিলিক দিয়ে উঠলো।মায়ের মুখটা কতকাল দেখা হয়নি। না ঘুরাঘুরি করে সময় নষ্ট করা যাবে না। যতটুকু সময় সব মায়ের কাছাকাছি থাকতে হবে। হৈমন্তী কথাগুলো ভেবে বলল,

> ভাইয়া কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। আম্মা আসছেন আমি রান্না করবো।

হৈমন্তী ঝড়ের গতিতে রান্নাঘরে চলে গেলো। মায়ের পছন্দের খাবার গুলো নিজ হাতে রান্না করবে। বাবার সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়েছে কিন্তু মায়ের সঙ্গে হয়না। যখনই মায়ের কথা বলতো খলিল মির্জা এটা ওটা বলে কাটিয়ে দিতেন। শেষমেষ বুঝে গেলো মা হয়তো ওর সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না। কিন্তু কারণটা বেশ রহস্যময় লেগেছিল। হৈমন্তী মায়ের থেকে সব শুনবে। কতকত অভিযোগ আছে সব বলবে।
__________________
এলোমেলো পায়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরে ফিরলো আবির। মাথায় যন্ত্রণা করছে। বাড়িতে ঢুকে রুম পযর্ন্ত যেতে ইচ্ছে করলো না। ডাইনিং রুমের সোফায় ওর মা ফারজানা হকের পাশে ধপাস করে বসে পড়লো। ছেলেকে ক্লান্ত দেখে উনি কাজের মেয়েকে শরবত আনতে বললেন। আবির মায়ের পায়ের উপরে মাথা রেখে শুয়ে বলল,

> মাথায় যন্ত্রণা করছে একটু হাত বুলিয়ে দাও।

ফারজানা বেগম ছেলের মাথায় হাত রেখে কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলেন,

> কোনো সমস্যা হয়েছে বাবা?

> একটু সমস্যা মা আম্মু,বলো একগাদা সমস্যা হয়েছে। তোমার ছেলেকে এই প্রথমবার কোনো মেয়ে রিজেক্ট করেছে ভাবতে পারছো কতটা সিরিয়াস সমস্যা?

ফারজানা বেগম সত্যিই অবাক হলেন। তার জানা মতে আবিরকে অপছন্দ করে এমন মেয়ে একটাও নেই। যে মেয়ে উনার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাকে তো একবার দেখতে হচ্ছে। উনি বললেন,

> মেয়েটার সাহস আছে বলতে হয়। আমার সোনার টুকরো ছেলেকে অপছন্দ করে আমি এখুনি গিয়ে ওর বাবা মার সঙ্গে কথা বলবো। ছেলেটা আমার কষ্ট পাচ্ছে।

আবির ফারজানা হকের কথার উত্তর না দিয়ে বলল,

> আম্মা ডিভোর্সী মেয়েদের বিয়ে করতে হলে কি নিজেকেও ডিভোর্সী হতে হয়? এই লজিক কে আবিস্কার করেছে তুমি জানো? জানলে বলো ওই লোকটাকে আমি বুড়িগঙ্গা নদীতে চুবিয়ে মারবো।

ফারজানা বেগম এবার মোটামুটি বুঝলেন। উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

> চারপাশে এতো এতো ভালো মেয়ে থাকতে তুমি ডিভোর্সী মেয়ের দিকে নজর দিলে কেনো একটু বলবে?

আবির ছন্নছাড়া ভাবে উত্তর করলো,

> চারপাশে এতো এতো মেয়ের মধ্যে সবাই যে ভালো সে তোমাকে কে বলেছে। মেয়েটা ডিভোর্সী আমার মতো একটা সুদর্শন যুবকের প্রস্তাব পেলে লুফে নেওয়ার বদলে ফিরিয়ে দিচ্ছে ভেবে দেখো একবার। আচ্ছা মেয়েটার অতীতে যায় থাকুক আমার সঙ্গে থাকাকালীন সময়ে কিছু না হলেই তো হলো। ওকে পেলে আমি সত্যিই ভালো থাকবো আম্মু।. তুমি কি চাও আমি সারাজীবন কষ্টে থাকি?ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমার থেকে তোমাদের সমাজ বড় হয়ে গেলো?

ফারজানা হক ছেলেকে দুহাতে আগলে নিলেন। ছেলেটা মোটেও ভুল বলছে না। আগে নিজের ভালো তারপর সমাজ। খাবার না থাকলে কেউ খাদ্য দিয়ে সাহায্য করবে না। তাছাড়া সমাজের সবাই খারাপ হয়না। গুটিকয়েক নিচু মানুষের কথা ভেবে ছেলের সুখকে উনি ছিনিয়ে নিবেন না। উনি ভিলেন শাশুড়ি হয়ে ছেলে বউমাকে আলাদা করবেন না। কথাগুলো ভেবে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললেন,

> মেয়ের নাম ধাম না জানলে প্রস্তাব পাঠাবো কিভাবে শুনি? নাম ঠিকানা বলো তোমার আব্বু ফিরলে সকালে দুজনের বের হবো। আমার ছেলের ভালোবাসা বলে কথা। বাচ্চা কাচ্চা আছে নাকি?

আবির মলিন হাসলো। ওর জানা ছিল এই মানুষটা কখনও ওর জন্য কঠোর হতে পারবে না। সেই ভরসাস্থল থেকেই কথাগুলো বলেছে। আব্বু নাহু নাহু করবে কিন্তু ওর মা ঠিক রাজি করিয়ে ফেলবে। কথাগুলো ভেবে ও চট চরে উঠে বসলো। তারপর মায়ের হাত ধরে বলল,

> অরিণের বন্ধু হৈমন্তী । তুমি চিনো না ওকে?

ফারজানা হক বিস্মিত হলেন হৈমন্তীর কথা শুনে। উনি হৈমন্তীর সঙ্গে বহুবার কথা বলেছেন কিন্তু মেয়েটার সম্পর্কে তেমন জানেন না। মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী এবং সদালাপি। এমন মেয়েকে ছেলের বউ করতে না চাওয়ার কোনো কারণ দেখলেন না। তাছাড়া সমস্যা মানুষের জীবনে আসতেই পারে ওসব ধরে বসে থাকলে জীবন চলে না। অরিণের বিয়েতে মেয়েটা আসতে চেয়েছে। আবির সংক্ষেপে হৈমন্তীর অতীতের কিছু কথা মায়ের কাছে বলে ফলল। বাচ্চার কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করছিল না তবুও বলতে হলো। সবশুনে ফারজানা বেগমের মতো হলো মেয়েটাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। উনি ফিসফিস করে বললেন,

> বাচ্চার কথাটা তোমার আব্বুকে এখন বলার দরকার নেই। ঝামেলা করবে। যদি একান্তই সামনে না আসে তাহলে কখনও বলতেও হবে না। কিছু কথা গোপন রাখলে আহামরি খারাপ কিছু হবে না। তুমি চিন্তা করো না। আগামীকাল ওর বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলবো। এখন রুমে যাও।

আবির যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মায়ের উপরে পুরোপুরি ভরসা আছে। এই বিয়েটা উনি যেকোনো উপায়ে দিয়েই ছাড়বেন। ছেলের ভালো থাকা নিয়ে কথা।

***
আমেনা বেগম সন্ধ্যায় ছেলের বাড়িতে পা রাখলেন। পরণে কালো রঙের বোরখা। খলিল মির্জা স্ত্রীর পেছনে পেছনে হাটছেন। ঢাকা শহরে এরকম বাড়ি উনারা আশা করেননি। দোতলা বাড়ির সামনে এতগুলো ফল ফুলের গাছ সত্যিই বিরল বলে মনে হলো। বেশ শান্তি শান্তি লাগছে। খলিল মির্জা গদগদ কন্ঠে বললেন,

> ছেলেটার পছন্দ আছে। আমার বউমাটাও বেজায় ভালো। গাছপালাগুলোর কতো যত্ন করে বলো?

আমেনা বেগম স্বামীর কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। উনি ঝাঝালো কন্ঠে বললেন,

> বাইরে দেখে এতোটা আশা করো না। আগে ভেতরে গিয়ে দেখি কেমন তারা গুছিয়ে সংসার করছে।

মির্জ সাহেব দমে গেলেন। স্ত্রীকে খুশী করার চেষ্টা অর্থহীন। উনি কথা না বলে চুপচাপ ভেতরে গেলেন। ছেলেমেয়েরা মাকে পেয়ে ভীষন খুশী। হৈমন্তী মাকে পেয়ে কেঁদে কেঁটে একাকার অবস্থা। আমেনা বেগম ছোট মেয়েকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। কবরে যাবার আগে মেয়েটাকে স্বামী সংসারী দেখে যেতে পারলেন না। কষ্ট হচ্ছে। রাগ হচ্ছে ছেলেদের উপরে। ছেলেগুলা যদি উনার কথাগুলো শুনে হৈমন্তী স্বামীর সঙ্গে সেদিন ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতো তাহলে আর আজকে এই দিনটা দেখতে হতো না। উপযুক্ত মেয়েকে ঘরে রেখে বাবা মা শান্তি পায়না ছেলেরা তা বুঝে না। তাছাড়া মেয়েটার একটা সংসার হওয়াটা জরুরি। কতকাল ভাইয়ের বাড়িতে পড়ে থাকবে। একটা হিল্লা হওয়া চাই।

আমেনা বেগম চাইছেন হৈমন্তী নিজের সংসারে ফিরে গিয়ে নতুনভাবে শুরু করুক। ওদিকে আবির হৈমন্তীকে বিয়ের জন্য রেডি হচ্ছে। রোহান কি করবে বুঝতে পারছে না। সে ভীতু মানুষ, লোকজনের সমালোচনাকে ভয় পাই। ফরহাদও রেডি হচ্ছে হৈমন্তীকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনার। প্রশ্ন: হৈমন্তীর এই মূহুর্তে কাকে বেঁছে নেওয়া উচিৎ?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।