#শৈবলিনী—১৮
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★আজ ভার্সিটিতে নূরের আগমন হতেই, তার মাঝে এক অন্যরকম চাঞ্চল্যতা দেখতে পেল শিখা আর গিয়াস। শিখা কৌতুহলী হয়ে বলল,
–আরে বাহ্, আজতো আমাদের নূর রাণী সত্যি সত্যিই নূরের মতো চমকাচ্ছে। ঘটনা কী তাহলে ঘটেই গেল?
গিয়াস কৌতুহলের ধাপ আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়ে চোখ দুটো তিড়িং বিরিং করে বলল,
–আরে তাইতো এমন পেপসুডেন্টের এডের মতো দাঁত চমকাইতাছস ক্যান? মনে হইতাছে সাতদিন পর আজ বাথরুম ক্লিয়ার হইছে, এমন খুশি হইতাছে তোর।
শিখা চোখ পাকড়িয়ে বলল,
–এমনি এমনিতো তোরে গ্যাস কইনা। কথার নামে মুখ দিয়ে শুধু আবর্জনা বের করা ছাড়া আর কিছু করতে পারিসনা তুই। তোর ম্যান হোলের ঢাকনা আপাতত বন্ধ রাখ। এই নূর তুই বলনা কিছু হয়েছে?
নূর হাসিমুখে বলল,
–হ্যাঁরে সত্যিই কিছু হয়েছে।
নূরের বাক্য পূর্ণ হওয়ার আগেই গিয়াস আশ্চর্যান্বিত ভাবে বলল,
–কস কী মামা, হয়ে গেল? কখন হইলো? কেমনে হইলো? এতো ফাস্ট কেমনে হইলো? আমার জানামতে অন্তত নয় মাসতো লাগে। অবশ্য কেসটা যখন তোর তখন কোনোকিছুই অসম্ভব না।তোর ভয়ে বাচ্চা নয় মাসের জায়গায় মুভির মতো দুই গোলাপ একসাথে হওয়ার পরের সীনেই বাচ্চা হইয়া গেছে। যাওগ্গা, মামা হইয়া গেলাম এইডাই বড় কথা। তা ভাগ্নি হইছে না ভাগিনা?
নূর আর শিখা দুজনেই চুলোয় রাখা গরম তাওয়ার মতো দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো গিয়াসের পানে। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে বেকুব মার্কা হাসি দিয়ে বলল,
–হে হে, মজা করলাম। তুই কনা কী কবি। আমি এইযে মুখের ওপর আঙুল দিলাম।আর শপথ নিলাম, স্বয়ং অ্যাঞ্জেলিনা জলি এসে আমারে আই লাভ ইউ গিয়াস জানু কইয়া চুম্মা দিতে চাইলেও এই মুখ খুলবে না। ইয়ে মেরা বাচান হে, মেরে বাচন হি হে শাসন।
নূর বলল,
–আসলে একটা ভালো নিউজ আছে। তোরাতো জানিসই আমার একটা কার বানানোর স্বপ্ন আছে। যা স্বল্পমূল্যে সবার হাতের নাগালে পেতে পারে। তো আমার সেই স্বপ্নের অনেক বড়ো একটা প্রগ্রেস হয়েছে। কয়েকদিন হলো আমি রিসার্চ করে অনেক গুলো আইডিয়া পেয়েছি। আর সেগুলো নিয়ে কয়েকজন বিজ্ঞদের সাথে আলাপও করেছি। এবং তারা আমার আইডিয়াকে অ্যাপ্রিশিয়েটও করেছে। বলেছে আমি এই আইডিয়া মতো কাজ করতে পারি। তো এখন শুধু আমার প্রয়োজনীয় পার্টসগুলো কিনতে হবে।
শিখা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
–ওয়াও ইয়ার, এটাতো সত্যিই খুশির সংবাদ। আই আম সো হ্যাপি ফর ইউ। আমি দোয়া করি তুই যেন তোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারিস। কারণ তুই সফলতা ডিজার্ভ করিস।
গিয়াস আবেগে আপ্লূত হয়ে কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে বলল,
–ইয়ার নূর,তুইই একমাত্র সত্যি করের বন্ধু। খালি তুইই আমার মতো এই গরীব দুঃখীদের কষ্ট বুঝলি। এখন আমিও গাড়ি কিনে গার্লফ্রেন্ড পটাতে পারবো৷ স্টাইল মেরে ঘুরতে পারবো। গাড়িকে ডান্সিং কার বানাতে পারবো। এতে করে আমাদের মতো ফইন্নিদের হোটেলের খরচাও বেঁচে যাবে। এইসব কিছু হবে তোর মহৎ অবদানের কারণে। ইয়াং জেনারেশনের প্রগতিশীল উন্নতির জন্য তোকে নোবেল পুরষ্কার দেওয়ার দাবিতে অমরণ অনশন করবো আমরা। আমাদের মতো ছেলেদের কাছ থেকে ভরপুর দোয়া পাবি তুই।
নূর বলল,
–কিন্তু এতো সহজ নারে। এখনও অনেক পথ বাকি আছে। এসব সরঞ্জাম কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আর আমার অবস্থা তো জানিসই তোরা।
শিখা আশ্বাসিত করে বলল,
–আরে ফিকার নট ইয়ার সব হয়ে যাবে।এতসব দায়দায়িত্ব আর ঝামেলার মাঝেও যে তুই নিজের স্বপ্নের জন্য এতদূর এগুতে পেরেছিস, বাকিটাও পেরে যাবি ইনশাল্লাহ।এখন খুশি মনে চল ক্লাসে যাই।
তিনজন ক্লাসের দিকে যেতে নিলেই হঠাৎ শিখা খেয়াল করলো ওদের থেকে কিছুটা দূরে বটগাছের নিচ থেকে জিদান ইশারা দিয়ে ডাকছে শিখাকে। গিয়াসও সেটা লক্ষ্য করে দুষ্টু হেঁসে বলল,
–কী ব্যাপার রে শিখাইয়া, এই জদু মিঞা তোরে উড়ো চিঠি দিতাছে ক্যান? পিরিতের আঠা লাগলো নি?
–চুপ কর, তোরা যা আমি আসছি।
–হ হ যাও, জদু মিঞার কদু হইতে।
নূর আর গিয়াস ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেল। আর শিখা এগিয়ে গেল জিদানের কাছে। জিদানের সামনে এসে এক ভ্রু উঁচু করে সন্দেহের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–কী ব্যাপার হ্যাঁ? আজকাল অনেক ডাকাডাকি হচ্ছে। ফিদা টিদা হয়ে যাওয়ার কাহিনি নাকি?
জিদান একটু লাজুক ভঙ্গিতে আমতা আমতা করে বলল,
–জি মানে, আসলে ওই বলতে চাইছিলাম যে আমার সাথে কী এককাপ কফি খাবেন আপনি? আসলে সেদিন আমাকে হেল্প করিছিলেন তার ধন্যবাদ হিসেবে একটু কফি খাওয়াতে চাচ্ছি আর কি। আপনি যদি কিছু মনে না করেন।
শিখা কতক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলো জিদানকে। তারপর দায়সারা ভাব দেখিয়ে বলল,
–হুমম, ঠিক আছে এতো করে যখন ইনসিস্ট করছেন তাহলে যাবো। ক্লাসের পর ক্যাফেতে চলে আসবেন।
–জি জি অবশ্যই। থ্যাংক ইউ সো মাচ।
–ইটস ওকে।
শিখা উল্টো ঘুরে হাঁটা ধরলো। কিছুদূর এগুতেই ফিক করে হেসে দিলো সে। লোকটা খারাপ না। এই বাজারে যা পাওয়া যায় তা হাত ছাড়া করা ঠিক না। পরে দেখা মোটা ভুড়িওয়ালা আঙ্কেলের সাথে বিয়ে হলো। তারচেয়ে তো এই জদুরামও ভালো আছে।
__
ল্যাপটপের স্ক্রিনে নিজের মুভির সিক্যুয়াল নিয়ে পর্যালোচনা করছে আদিত্য নূর। কাজের মাঝেই আদিত্য খেয়াল করলো নূরের চেহারায় আজ অন্যরকম এক শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। যেন কোনো কিছুর খুশি তার চেহারায় প্রতীয়মান হচ্ছে। আদিত্যর খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে নূরের খুশির হেতুটা। কৌতুহল দমিয়ে না রাখতে পেরে আদিত্য বলেই বসলো।
–নূর,কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
নূর কাজে মনোযোগ রেখেই বলল,
–হুম বলুন।
–তুমি কী কোনো কারণে আজ অনেক খুশি? আমাকে কী বলা যাবে খুশির কারণ টা?
চকিত নজরে তাকালো নূর।লোকটা সবসময় কীভাবে বুঝে যায়? অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকা আদিত্যর ওই নজর দেখে কেন যেন না বলতে ইচ্ছে হলোনা নূরের। এই খুশিটা তার সাথেও শেয়ার করার ইচ্ছে হলো। ইন্ডাইরেক্টলি আমার এই কাজের পেছনে কিছুটা হলেও তার অবদান আছে। তাই শেয়ারতো করাই যায়। এই ভেবে নূর বলল,
–হ্যাঁ খুশির কারণ তো একটা আছেই।
তারপর নূর আদিত্যকে তার স্বপ্নের কথাটা বললো এবং তার প্রগতির ব্যাপার টাও জানালো। নূরের এই স্বপ্নের কথা শুনে আরও একবার মুগ্ধ হলো আদিত্য। মেয়েটা সত্যিই অতুলনীয়। ওর মতো চিন্তাধারা পোষণ করা সচরাচর সবার পক্ষে সম্ভম না। এইজন্যই তো সে শৈবলিনী। আমার শৈবলিনী। আদিত্য অমায়িক হেঁসে বলল,
–ওয়াও দ্যাটস আ গ্রেট নিউজ। তাহলে এই উপলক্ষে একটা ট্রিটতো দিতেই হবে।এবং আজই দিতে হবে। মানা করতে পারবেনা।
–আরে এই সামান্য বিষয়ে ট্রিট দেওয়ার কী আছে? এমন করে বলছেন যেন আমি গাড়ি তৈরি করে ফেলেছি।
–সেটাও করে ফেলবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এখনতো ট্রিট দিতেই হবে। কিপ্টামি করলে চলবে না। আই ওয়ান্ট ট্রিট।
–আমি আপনাকে কী ট্রিট দিতে পারবো? আমার কী আপনার মতো লোককে ট্রিট দেওয়ার সামর্থ্য আছে।
নূরের কথা শুনে আদিত্যর মুখটা কালো হয়ে গেল। কেমন অভিমান হলো নূরের ওপর। এভাবে কথাটা না বললেও পারতো নূর। আদিত্য মুখ কালো করে আস্তে করে বলল,
–সরি, আসলে আমারই ভুল হয়েছে। একটু বেশিই অনধিকার চর্চা করে ফেলেছি বোধহয়। সরি এগেইন।
আদিত্যর কালো মুখটা দেখে নূরের কেমন অপরাধবোধ হলো। এভাবে বলাটা হয়তো ঠিক হয়নি। লোকটা যে তার স্টার্ডাম বা টাকার শো অফ বা বড়াই করেনা এতটুকু তো নূর এইকয়দিনে একটু হলেও বুঝতে পেরেছে।তাই এভাবে বলায় হয়তো সে মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। নূর কিছু একটা ভেবে বলল,
–ট্রিট দিতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে।
আদিত্য অভিমানী সুরে বলল,
–থাক দরকার নেই। আমিতো আবার তোমার রেঞ্জের বাইরে কিনা। তাই এতো কষ্ট করার দরকার নেই।
–নতুন বউয়ের মতো ঢং করছেন কেন? কী ভেবেছেন আমি সোয়ামীর মতো আপনারে পিতলা পিরিত দিয়া রাগ ভাঙাবো? ট্রিট দিতে চাচ্ছি।ভালোই ভালোই নিতে চাইলে নেন, না নিলে মুড়ি খান।
সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে আদিত্য দ্রুত ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করে বলে উঠল,
–ওকে ওকে, তুমি যখন এতো করে ইনসিস্ট করছ তাই আর মানা করি কী করে। তা শর্তের কথা কী যেন বলছিলে?
–হ্যাঁ শর্ত হলো, আমি ট্রিট দিবো। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী এককাপ চায়ের ট্রিট দিতে পারি আপনাকে। তবে সেটা আমার মতো করে হবে। আপনাকে আমার মতো একজন সাধারণ ব্যক্তির মতো যেতে হবে। ভুলে যেতে হবে আপনি কোনো ফেমাস ব্যক্তি। মনে করেন রাস্তায় চলতে থাকা হাজার মানুষের একজন আপনি। শর্ত মঞ্জুর হলে বলুন।
মনে মনে হাসলো আদিত্য। এমন একটা সময় তো সে সর্বদাই চায়। যখন নূর আর আদিত্য কেবলই নূর আর আদিত্য থাকবে। তাদের মাঝে কোনো ভেদাভেদের দেয়াল থাকবেনা। নূর সবার মতো তাকেও নিজের সাথের মানুষ মনে করে মন খুলে কথা বলবে। আজ সেই সুযোগটা হাতছাড়া করার প্রশ্নই আসেনা। তাই বলে উঠল,
–ঠিক আছে রাজি আমি। তুমি এক কাজ করো ভার্সিটির গেটের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করো আমি দুই মিনিট পরেই আসছি।
–হুম, ঠিক আছে। তবে হ্যাঁ গাড়ি ছাড়া আসবেন। আজকে আপনি আমজনতার মতো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে জাবেন।
–ওকে, আই লাভ টুবি।
নূর বেড়িয়ে গিয়ে আদিত্যর অপেক্ষা করতে লাগলো। নূর যেতেই আদিত্য কিছু একটা ভেবে জিদানকে ডাকলো। জিদান ভেতরে আসতেই আদিত্য ফটাফট নিজের শার্ট খুলতে লাগলো।আদিত্যর এহেন কাজে জিদান বেচারা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আর তার মাত্রা আরও বেড়ে গেল আদিত্যর কথায়।
–জিদান তোমার শার্ট খোলো।
জিদান চোখ দুটো চড়কগাছ করে দুই হাত ক্রস করে বুকের ওপর চেপে ধরে ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,
–কী বলছেন এসব স্যার? দেখুন মানলাম আমি আপনার পিএ,আপনার এসিস্ট্যান্ট, আপনার সেবক। তাই বলে আমি ওই ধরনের ছেলে না স্যার। দরকার হলে আপনার চরণে জানটা বিলিয়ে দিবো। কিন্তু আপনার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারবোনা স্যার। প্লিজ স্যার আমার এতবড় সর্বনাশ করবেন না। আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা। কে বিয়ে করবে আমাকে স্যার।
আদিত্য রাগে দপদপ করে জ্বলে উঠে বলল,
–জাস্ট শাট আপ ইউ ইডিয়ট।একটা কথা বলোতো সত্যি করে। তুমি জন্ম থেকেই আহাম্মক, নাকি স্টুপিডিটির কোনো স্পেশাল কোর্স করেছ? মাথায় খালি যতসব উদ্ভট ভাবনাই ঘোরে তোমার? আমি এখন আমার মুড খারাপ করতে চাচ্ছি না। নাহলে তোমার আজ একটা ফাইনাল ব্যবস্থা করেই ফেলতাম। আমার শুধু তোমার শার্ট টা চাই দ্যাটস ইট। দিতে পারবে?
–ওওও এই কথা? হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই স্যার। কিন্তু আমার শার্ট দিয়ে আপনি কী করবেন স্যার।
–দ্যাটস নন অফ ইউর বিজনেস। যা বলছি তাই করো। তুমি আমার শার্ট পড়ে থাকো আপাতত।
জিদান আর কথা বা বাড়িয়ে শার্ট খুলে দিয়ে দিলো। আদিত্য জিদানের শার্ট টা পড়ে নিলো। পায়ের দামি জুতাটা পাল্টে একজোড়া সিম্পল জুতা পড়ে নিলো। হাতের দামী ঘরিটাও খুলে রাখলো। মাথায় ক্যাপ পড়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বেড়িয়ে গেল সে। গেটের বাইরে নূরের কাছে এসে বলল,
–আম রেডি নাও। যাওয়া যাক?
নূর একবার পর্যবেক্ষণ করে নিলো আদিত্যকে। লোকটাকে সত্যি সত্যিই এখন সাধারণ ব্যক্তিই মনে হচ্ছে। নূর মাথা নেড়ে সামনের রাস্তায় দাঁড়ান একটা রিকশা ডেকে নিলো। রিক্সা আসলে প্রথমে নূর উঠল তারপর আদিত্যকে বসার জায়গা করে দিলো। আদিত্যও উঠে বসলো। রিক্সার অল্প জায়গায় বসে না চাইতেও দুজনের শরীর লেগে যাচ্ছে। রোদ না থাকায় হুটার তুললো না নূর। নাহলে আরও জায়গা কমে যাবে আর বাতাসও কম লাগে। এমনিতেও কেমন যেন ভ্যাপসা গরম পড়েছে। আকাশও ঘোলাটে হয়ে আছে। হয়তো বৃষ্টি আসতে পারে।রিক্সায় বসার অভ্যাস নেই আদিত্যের। কেমন যেন বারবার পিছলে যাচ্ছে ও। সাপোর্টের জন্য রিক্সার হুটার শক্ত করে ধরলো আদিত্য। নূরের সামনে পড়ে গেলে ইজ্জতের বেগুন চপ হয়ে যাবে। রিক্সা চলতে আরম্ভ হতেই মৃদু বাতাস লাগছে শরীরে। কিছুক্ষণ চলার পর আদিত্য একটু ধাতস্থ হলো। এখন ভালো লাগছে ওর।নূরের পাশে খোলা আকাশের নীচে রিক্সার যাত্রা উপভোগ করছে আদিত্য। নজর ঘুরেফিরে যাচ্ছে নূরের পানে। বাতাসে নূরের চুলের কিছু অংশ উড়ে এসে বিছিয়ে পড়লো আদিত্যর মুখমন্ডলে। স্নিগ্ধ শান্তির ছোঁয়ায় পুলকিত হলো মন। আবেশে চোখ বুজে নূরের চুলের মনমাতানো ঘ্রাণে মাতালো নিজেকে। এই মুহূর্তে এই রিক্সাটাকে দুনিয়ার সবচেয়ে বেস্ট যানবাহন মনে হচ্ছে আদিত্যের। সত্যি সত্যিই এই পথ শেষ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। অনন্ত কাল দুজন এই রিক্সাতে কাটিয়ে দিলে মন্দ হবেনা। কিন্তু বেচারা রিকসাওয়াল কী অনন্ত কাল চালাতে পারবে? না পারলে নাই। আমার নূরের রিক্সা ওয়ালা আমি নিজেই হবো। নূরকে রিক্সায় চড়িয়ে ঘুরাবো সারা দেশ। তারপর গান গাইবো ♬ চলে আমার রিক্সা হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া,ঢাকা শহর দেখমু আজ দুইজনে ঘুইরা ঘুইরা।
আদিত্যর এই রিক্সাকাব্যের ইতি ঘটলো নূরের কথায়। চোখ মেলে তাকালো আদিত্য। রিক্সা থেমে গেছে।আদিত্যকে নামতে বলে রিক্সার ভাড়া মেটালো নূর। আদিত্য আর বাঁধা দিলো না।জানে নূরের মেজাজ বিগড়ে যাবে। যা এই মুহুর্তে আদিত্য মোটেও চাইছে না। আদিত্য ততক্ষণে আশপাশটা নজর বোলালো। জায়গাটা একটু কোলাহল মুক্ত বলা চলে। সামনের দিকটা খোলামেলা আর গাছগাছালিতে ঘেরা। পাশেই বিলের মতো এক জলাশয়ও আছে। যার দরুন শীতল বাতাস এসে শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবেশ টা সুন্দর। এই কৃত্রিম শহরে কিছুটা হলেও প্রকৃতির ছোঁয়া আছে এখানে। নূর ভাড়া মিটিয়ে আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
–চলুন।
নূর আদিত্যকে রাস্তার পাশে টিনের একটা টং চায়ের দোকানে নিয়ে গেল। দোকানের সামনে থাকা বেঞ্চে বসলো। আদিত্যও বসলো নূরের পাশে। নূর দোকানের ভেতর বসে থাকা বয়স্ক লোকটার উদ্দেশ্যে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে উঠল,
–কেমন আছেন মামা? সব ঠিকঠাক তো?
বৃদ্ধ লোকটা হাসিমুখে বলল,
–আরে নূর মা যে,অনেক দিন পর আইলা।এতদিন পর বুঝি এই বুড়োর কথা মনে পড়লো!
–আরে মামা আপনাকে আর আপনার চা-কে কীভাবে ভুলতে পারি আমি। আর কে বলল আপনি বুড়ো। চাইলে এখনো কলেজ জয়েন করে নতুন করে প্রেম করতে পারবেন।
লোকটা দাঁত বের করে হাসলো। আদিত্য একটু অবাকই হলো। এই মেয়ে রসিকতাও জানে? শুধু আমার সাথেই রিনা খান সেজে থাকে। কবে যে আমার সাথেও একটু রসিক হবে কে জানে। নূর বলল,
–মামা আপনার হাতের দুটো স্পেশাল চা দিন।
–অহনি দিতাছি। তা উনি কেডা? জামাই বাবাজি নাকি?
অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো নূর।প্রতিত্তোরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিত্য আমোদিত কন্ঠে বলে উঠল,
–বাহ্ মামা আপনার নজরের তেজ আছে বলতে হবে। একেবারে ফট করে ধরে ফেললেন।এতো সুন্দর একটা কথা বলার জন্য আপনার মুখে ফুল চন্দন বর্ষিত করতে মন চাইছে। তা মামা আমাদের জুটিটা কেমন মানিয়েছে একটু বলুন না?
বৃদ্ধ লোকটি আমোদিত হয়ে বলল,
–এক্কেরে শাবানা আলঙ্গীর জুটি লাগতাছে।
–ওয়াও, কী দিলেন মামা। দিল খুশ হো গায়া।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু জোড়া উপর নিচ করে বলল,
–দেখলে তো, মানুষও আমাদের জুটি পছন্দ করে।
নূর চোখ গরম করে তাকালো আদিত্যের পানে। তারপর দোকানদারের উদ্দেশ্যে বলল,
–এমন কিছুই না মামা, উনি মজা করছে। আসলে আমরা সাধারণ বন্ধু শুধু।
–ও আইচ্ছা।
স্মিথ হাসলো আদিত্য। যাক তবুও বন্ধুতো বলেছে। এটাই বা কম কিসে। চা এলো কিছুক্ষণ পর। যদিও চা খাওয়ার তেমন অভ্যস নেই আদিত্যের। কফি বেশি পছন্দ তার। তবে নূরের সাথে এভাবে বসে খেতে করল্লার জুসও অমৃত লাগবে। সেখানে চা কী জিনিস। চায়ের স্বাদ নিতেই পাশ থেকে নূর জানতে চাইলো,
–কেমন লাগছে মামার চা?
আদিত্য জবাব দিলো,
–অতুলনীয়।
নূর চায়ের চুমুক নিতে নিতে বলল,
–ছোটবেলায় বাবা আমাদের রোজ বিকালে এখানে নিয়ে আসতো ঘুরাতে। খেলাধুলা করতাম আর এই মামার স্পেশাল চা খেতাম। তখন থেকেই এই জায়গাটা খুব ভালো লাগে আমার।
আদিত্য মনোযোগ সহকারে শুনছে নূরের কথা।ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠছে মুগ্ধময় হাসির ঝলক।ছোট্ট করে হলেও এই প্রথম নূর ওর নিজের জীবনের কিছু ভালো লাগা শেয়ার করছে আদিত্যের সাথে। সুখময় অনুভূতি হচ্ছে আদিত্যের মনের কোনে। এই দিনটাকে আমাদের প্রথম ডেট বলা যায়। আমাদের চা ডেট। মনে মনে ভেবে হাসলো আদিত্য।এরইমাঝে ঘোলাটে আকাশ টা ধীরে ধীরে কৃষ্ণকায় আধারে ছেয়ে গেল। আর দেখতে দেখতেই গগন চিঁড়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আনাগোনা শুরু হলো। সময়ের সাথে তা বেড়ে ঝুম বৃষ্টিতে রুপান্তরিত হলো। দোকানের টিনের ছাউনির নিচে বসে ছিলো ওরা। বৃষ্টির হালকা ঝাপসা লাগছে ওদের গায়ে। নূরের সাথে এইমুহুর্তে এই বৃষ্টি যেন পরিবেশ টা আরও মনোমুগ্ধকর করে তুললো। যাকে বলে চেরি অন দ্য কেক।টিনের ওপর ঝমঝম সুরে বৃষ্টির নৃত্য চলছে। প্রকৃতি আর প্রিয়তমার আনন্দ নিতে নিতে চা পান করতে লাগলো আদিত্য। সামনের মাঠে একদল কিশোর এসে ফুটবল খেলা আরম্ভ করলো। বৃষ্টির মাঝে ফুটবল খেলার আনন্দ নিচ্ছে তারা। এটার মজাই আলাদা।একসময় স্কুল জীবনে আদিত্যও অনেক খেলেছে। আদিত্য সেটা নূরকে বলাট জন্য পাশে ফিরতেই দেখলো নূর নেই। ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকালো আদিত্য। তখুনি দেখতে পেল নূরের আরেক রুপ।হ্যান্ডব্যাগটা রেখে নূর ধীরে ধীরে উঠে বৃষ্টির ভেতর এগিয়ে যাচ্ছে। আদিত্য পেছন থেকে ডাকলো নূরকে। কিন্তু সেটা নূরের কর্ণগুহায় পৌঁছাল কিনা বোঝা গেলনা। নূর নিজের মতো চলেই যাচ্ছে। যেতে যেতে একসময় সে ফুটবল খেলা কিশোরদের মাঝে গিয়ে দাঁড়াল। আদিত্য স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করছে নূর কী করতে চাইছে। নূর কিশোরগুলোর সামনে গিয়ে গলার ওড়নাটা বুকের ওপর দিয়ে কোমরে শক্ত করে পেঁচিয়ে বেঁধে নিলো। তারপর ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বলল,
–লেটস প্লে কিডস।
বলেই এক কিশোরের পায়ের কাছ থেকে ফুটবল টা পা দিয়ে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো নূর। অতঃপর শুরু হলো ফুটবল খেলা। এতগুলো কিশোর মিলেও একা নূরের সাথে পেরে উঠছে না। ওর কাছ থেকে বল নিতেই পারছেনা। বৃষ্টির মাঝে প্রফুল্লচিত্তে ফুটবল খেলছে নূর। এই দৃশ্য দেখে আদিত্য কীভাবে বসে থাকবে। প্রথমে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে দেখলো। তারপর ঝুঁকে পায়ের কাছ থেকে প্যান্ট একটু ভাজ করে নিলো। এরপর উঠে এগিয়ে গেল ওদের মাঝে। আদিত্যকে দেখে থেমে গেল নূর। আদিত্য বলে উঠলো।
–বাচ্চাদের সাথে কী খেলছ নূর? সাহস থাকলে আমাকে হারিয়ে দেখাও।
নূর তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
–হেরে যাবেন আপনি, শুধু শুধু বাচ্চাদের সামনে নাক কাটাতে চাচ্ছেন কেন। আপনি হয়তো জানেন না। আমি ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন।
–লেটস সী মিস চ্যাম্পিয়ন। কে হারে আর কে যেতে।
–অ্যাজ ইউর উইশ।
কিশোর গুলো আদিত্য আর নূরের মাঝে দুই দলে বিভক্ত হয়ে গেল। শুরু হলো বৃষ্টির মাঝে ফুটবলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। নূরের বল নিয়ে যাওয়ার স্কিল সত্যিই দারুণ। তবে আদিত্যও কম যায়না। একসময় বল নিতে আদিত্য নূর সামনাসামনি হয়ে গেল। আদিত্যর পায়ের নিচ থেকে বল নেওয়ার কৌশল করছে নূর। আদিত্যও না দেওয়ার পুরোদমে চেষ্টা চালাচ্ছে। দুজনেরই পায়ের খেলা চলছে এদিক ওদিক। ডানে-বামে হেলদোল করছে দুজন।খেলার মাঝে হঠাৎ নূরের ভেজা চুল এসে আছড়ে পড়লো আদিত্যর মুখমন্ডলে। থমকে গেল আদিত্য। থেমে গেল তার পায়ের চলন। সুযোগ পেয়ে নূর বল নিয়ে গেল। এবং সোজা গোল করে দিলো। নূরের দলের ছেলেগুলো জিতের খুশিতে হৈচৈ করে উঠলো। চোখ মেলে তাকালো আদিত্য । দেখতে পেল নূরের হাস্যজ্বল মুখখানা। জিতে গিয়ে ছেলেদের হাতের সাথে দুই হাতে হাইফাই দিচ্ছে সে। এদিকে পরাজিত হয়েও পরমসুখের আভাস হচ্ছে আদিত্যের। হেরেতো সে কবেই গেছে। হৃদহরণীর বৃষ্টি ভেজা, প্রাণচঞ্চল ওই মুখখানা আদিত্যর হৃদকুঞ্জেও ভারী বর্ষণে প্লাবিত করছে। শিশির ভেজা সদ্য ফোঁটা পুষ্পের ন্যায় স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে সে। প্রকৃতির অন্য এক রুপ সে। যে রুপে বারংবার পরাহত হচ্ছে আদিত্যর সর্বস্ব। আঁখি যুগলে নেশা ছড়িয়ে পড়ছে। যে তীব্র নেশায় হারিয়ে যাচ্ছে আদিত্য। নেশালো চোখে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ধীরে ধীরে কদম বাড়াল তার মনমোহিনীর দিকে। পারিপার্শ্বিক অবস্থানের কোনো খেয়াল আপাতত তার নেই। নূরের কাছে এসে নূরের হাতের বাহু ধরে ঝটকা মেরে নিজের নিকট আনলো সে।হঠাৎ আদিত্যর এহেন আচরণে কিছুটা চমকে উঠলো নূর। আচমকা ঘুরে উঠতে গিয়ে নূরের ভেজা চুলগুলো ঝটকা মেরে নূরের মুখের ওপর পড়লো। আদিত্য নেশালো চোখে তাকিয়ে হাতের দুই আঙুল দিয়ে নূরের মুখের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিলো। অজান্তেই মৃদু কম্পন ঘটলো নূরের মাঝে। আদিত্যের চোখের পানে তাকাতেই যেন থমকে গেল নূর। আজ এই নজরে এতো তীব্রতা কেন?এতো নেশা কেন? বৃষ্টির ফোঁটার আঘাতেও ওই নজর একবিন্দুও নড়ছে না। ধারালো ওই দৃষ্টির অদৃশ্য ছুরি যেন নূরকে বিদ্ধ করে দিচ্ছে। তাইতো বুকের বাম পাশে কেমন পীড়া অনুভব হচ্ছে তার। এ কেমন যাতনা? নাহ্ আর তাকাতে পারছেনা নূর। নাহলে নির্ঘাত ওই নজরের দাবানলে জ্বলে যাবে সে। নূর নিজেকে ছাড়িয়ে দ্রুত ওখান থেকে চলে যেতে চাইলো। তবে বাঁধা পেল তাতে। আদিত্য পেছন থেকে হাত ধরে আঁটকে দিয়ে কন্ঠে মাদ,কতা এনে বলল,
–দুনিয়াতে কোন জিনিস হেরে গিয়েও মানুষ সুখী হয় জানো? সেটা হলো “মন”। একবার তুমিও হেরে গিয়ে দেখনা! সুখের ঠিকানাটা নাহয় আমিই দেখিয়ে দেবো।
আবারও কম্পিত হলো নূরের হৃদগৃহে। এতো শক্ত মনোবলকারী নূর আজকাল এই লোকটার সামনে কেমন দূর্বল হয়ে পড়ে কেন? হঠাৎ করেই ওর শব্দকোষ গুলো এলোমেলো হয়ে যায় কেন? তবে কী সে সত্যিই হেরে যাচ্ছে?
চলবে……
#শৈবলিনী—১৯
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★ভেজা শরীরে হাঁচির বর্ষণ করতে করতে বাসায় ফিরলো আদিত্য। এরইমাঝে সর্দিতে নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে তার। ছেলের এই হাল দেখে একপ্রকার আৎকে উঠলেন রেহনুমা। দ্রুত ছেলের কাছে গিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
–আদি, কী হয়েছে তোর? এতো ভিজে গেছিস কীভাবে? সর্দি লাগলো কেমন করে?
–কিছু না মা,ওই একটু বৃষ্টিতে ফুটবল খেলেছি তো আজকে। তাই এমন হয়েছে।
–আদি তুই পাগল হয়ে গেছিস? তুই জানিস না বৃষ্টির পানি তোর সয়না? তাও বৃষ্টিতে ভিজতে গেছিস কেন? ইশশ, কী অবস্থা হয়েছে। আয় বোস এখানে আমি মাথা মুছে দিচ্ছি।তুই কী দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছিস? এসব কী ছেলেমানুষী? এই ছবি, যা জলদি গরম পানি করে নিয়ে আয়।
ছেলের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন রেহনুমা। আর ছেলেকে মমতাময়ী বকাঝকা করতে লাগলেন। আদিত্য হাসছে মনে মনে।তোমাকে কী করে বলি মা,পাগল তো তোমার ছেলে হয়েই গেছে। এখন আর নিজের হুঁশ কই তার। বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হওয়ার বিনিময়ে নূরের সাথে যে মুহুর্ত পেয়েছি তারজন্য তো সে এরথেকে বেশি অসুস্থ হতেও রাজি। তার আবহের গভীর সমুদ্রে নিজেকে অনন্তকাল ভাসাতে রাজি।
পাশেই সোফায় বসেছিল আহানা। স্ট্র লাগিয়ে সে কোল্ড ড্রিংকস খাচ্ছে। আদিত্যর দিকে কেমন সন্দেহের নজরে তাকাচ্ছে সে। আদিত্য যে কারসাথে বৃষ্টিবিলাস করে এসেছে তা ভালোই বুঝতে পারছে সে। আহানা কোল্ড ড্রিংকসের স্ট্র ঘোরাতে ঘোরাতে প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বলল,
–বৃষ্টিতে ফুটবল খেলে আসলে নাকি পাশা খেলে আসলে ভাইয়া? তা জয়ী কে হলো শুনি? তুমি নাকি অপরপক্ষ? তোমার হাল দেখে তো মনে হচ্ছে তুমিই গো হারা হেরেছ।
আহানার বিশেষ বিবৃতি শুনে কেশে উঠলো আদিত্য। আহানার দিকে চোখ পাকড়িয়ে বলল,
–চুপ কর বদমাইশ। আজকাল একটু বেশিই পেকে গেছিস তুই।
আহানা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
–হুঁহ্, সত্যি কথা বললেই, চাচা নাও থেকে নামো। আজ শুধু সবার ছোট বলে অন্যায় ভাবে আমার কন্ঠ দমানো হচ্ছে। তবে এই কন্ঠ দমে যাবে না। এই কন্ঠ হবে কালের কন্ঠ। চাইলে পরশুর কন্ঠও হতে পারো।
ভাইবোন মজা করলেও রেহনুমা যেন কোনোকিছুর আভাস পাচ্ছে। সে কী কোনোকিছু থেকে অজ্ঞাত থাকছে? তাঁকে জানতেই হবে। তাঁর ছেলের জীবনে কী চলছে জানতে হবে তাঁকে। অযাচিত কিছু হওয়ার আগেই জানতে হবে তাঁকে। ছেলের জীবনে অনাঙ্ক্ষিত কিছু হতে দেবেন না তিনি। রেহনুমার ভাবনার সুতা কাটলো আদিত্যর কথায়।
–মা, আদ্র কই? বাসায় ওকে দেখাই যায় না।
–বন্ধুদের সাথে কোনো পার্টিতে নাকি গেছে। ফিরতে রাত হবে।
–ছেলেটা সবসময় শুধু পার্টি আড্ডা নিয়েই থাকে। বাসায় তো কখনো ওকে পাওয়াই যায়না। মানলাম ইয়াং জেনারেশনে এসব করে। তাই বলে অতিরিক্ত কেনোকিছু ভালোনা মা।
–আরে এক্সাম শেষ তাই একটু আড্ডা দিচ্ছে। কিছুদিন পর সব কমে যাবে। তুই এসব ছাড়। যা রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নে।
–ঠিক আছে মা।
__
গোসল করে ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে হঠাৎ নূরের নজর পড়লো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। প্রতিবিম্বের স্থানে প্রতীয়মান হলো আদিত্যের সঙ্গে বৃষ্টি ভেজা সেই মুহুর্ত। আদিত্যর ধারালো নজর এখনো কেমন চুম্বকের মতো টানতে চাইছে তাকে।সম্মোহিত করার প্রচন্ড রকম ষড়যন্ত্রে নেমেছে সে। বিমোহের বর্শি বিধিয়ে শিকার করতে চাইছে নূরের।হাত বাড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে নূরকে তার প্রেমতরীতে।কিন্তু কি আশ্চর্য! এমন ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়েও কেন প্রতিবাদী হচ্ছে না নূর? কেন শক্ত হস্তে রুখে দাঁড়াতে পারছেনা? তবে কী সে স্বহস্তে নিজেকে এই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে দিতে চাইছে? হেরে যাচ্ছে সে? ঝটকা মেরে মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে চোখ বুজে নিলো নূর। নাহ, কখনো না। হারতে পারবেনা সে। কিছুতেই না। মন হারানোর অধিকার তার নেই। অধিকার নেই ওই পুরুষের মায়াজালের বর্শিতে বিঁধে যাওয়ার। তার হাত ধরে ওই প্রেমতরীতে উঠে ভাসার অধিকার নেই। কিছুতেই না। নূরের নদীতে কোনো প্রেমতরীর জায়গা নেই। এই শান্ত নদীতে কোনো অশান্ত ঢেউয়ের আন্দোলন হবে না। এই নদী কোনো সাগরে মিশবে না। কখনো না।
মিছরির ডাকে চৈতন্যে ফিরলো নূরের। মিছরি বলল,
–আপু,চাচা এসেছে। ডাকছে তোমাকে।
ভ্রু কুঁচকে আসলো নূরের। চাচা হঠাৎ এইসময়! উনি কখনো অপ্রয়োজনে এমুখো হন না। তবে আজ আবার কী প্রয়োজনে এলেন! নূর তোয়ালেটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে, ভেজা চুলগুলো হাত খোপা করে বাইরে বেড়িয়ে এলো। ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসে থাকা চাচার উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময়ের পর্ব শেষ করলো। সৌজন্যমূলক কথাবার্তা শেষে চাচা বলে উঠলেন।
–আসলে একটা জরুরী বিষয়ে কথা বলতে এসেছি তোমাদের সাথে।
–জি বলুন না চাচা।
–তোমরা সবাইতো জানোই তোমাদের বাবা যে গ্যারেজ দিয়েছে ওটা আমার জায়গায় দিয়েছে।
–হ্যাঁ চাচা জানি। আর তার বদলে বাবা আপনাকে অন্য জায়গা থেকে নিজের জায়গা আপনাকে দিয়েছে। মানে জমি বদল দিয়ে নিয়েছে। কারণ ওই জায়গাটা গ্যারেজের জন্য উত্তম ছিলো।
–হ্যাঁ, কিন্তু সেটা মুখে মুখে। কোনো ধরনের কাগজি কাজ বা রেজিষ্ট্রেশন করা হয়নি।
নূরের কেমন ভয় লাগতে শুরু করলো। সে শঙ্কিত হয়ে বলল,
–হঠাৎ এসব কেন বলছেন চাচা? হয়েছে কী?
–দেখ কিছু মনে করোনা। আসলে আমার ব্যবসায় বিরাট লস হয়ে গেছে। অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছি আমি। যারজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন এখন আমার। তাই আমি গ্যারেজের ওই জমিনটা বিক্রি করতে চাই।
আসমান ভেঙে পড়লো নূরের ওপর। পুরো পরিবার আৎকে উঠল। নূর আশঙ্কাগ্রস্থ হয়ে বলল,
–কী বলছেন এসব চাচা? আপনি ভালো করেই জানেন এই গ্যারেজই আমাদের সব। বাবার রেখে যাওয়া স্বপ্ন। যা বাঁচিয়ে রাখার আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।এটার উপরেই আমার পরিবার চলে। আপনার টাকার দরকার হলে আপনি বাবার দেওয়াটা জমিটা বিক্রি করেন।
–চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওই জমির দাম কম। আর কাস্টমারও তেমন আসেনা। তাই আমাকে এটাই বিক্রি করতে হবে। তাছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই।
–আপনি এটা করতে পারেন না চাচা। বাবা বিশ্বাস করে শুধু মুখে মুখে জমি বদল করেছিল। কারণ বাবার বিশ্বাস ছিলো তার ভাই কখনো বেইমানি করবেনা। তাইতো তিনি রেজিষ্ট্রেশন করেনি। তার বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিচ্ছেন আপনি? বাবা নেই আমাদের মাঝে। আছে শুধু তার রেখে যাওয়া এই গ্যারেজ টা।বাবার রেখে যাওয়া এই শেষ অবলম্বন টা এভাবে কেড়ে নিয়েন না চাচা। এটার উপরেই আমার পরিবার নির্ভরশীল। এটা না থাকলে আমাদের কী হবে একবারও ভেবে দেখেছেন? প্লিজ চাচা এমনটা করবেন না।
–দেখ আমারও তো বাঁচতে হবে। আমার পরিবারের কথাও ভাবতে হবে। দেনদাররা বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছে। টাকা না দিলে তারা বাড়ি দখল করে নিবে। তাই আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই। এই জমিন আমাকে বিক্রি করতেই হবে।
লতিকা বেগম হাত জোর করে মিনতি করলো তবুও নূরের চাচা তার সিদ্ধান্তে অনড় রইলো। এবার ইভান ক্ষেপে গিয়ে বলল,
–অনেক হয়েছে চাচা। এতক্ষণ সম্মান দেখাচ্ছিলাম বলে যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন। তবে আর না। সাহস থাকলে গ্যারেজে হাত লাগিয়ে দেখান। ওই জমিতো বিক্রির কথা ভুলে যান। জমি দখল করতে আসলে ফলাফল খুব খারাপ হবে। বাবা নেই বলে আমাদের দূর্বল ভাবার ভুল করবেন না চাচা।
নূরের চাচাও এবার গর্জে উঠে বললেন,
–ঠিক আছে তাহলে। বিবাদে যেতে চাচ্ছিলাম না। আপন লোক বলে ভালো করে বলছিলাম।তবে না মানলে আমিও পুলিশের সাহায্য নিবো। জমি আমার। আমার জমি আমাকে বিক্রি করতে কেউ ঠেকাতে পারবেনা। কালই আমি সরকারি নোটিশ লাগিয়ে দিবো। দেখি কীভাবে ঠেকাও।
বলেই ধুপধাপ করে বেড়িয়ে গেল নূরের চাচা। ধপ করে বসে পড়লো নূর। মাথা কাজ করছে না ওর। এই গ্যারেজ না থাকলে কীভাবে চলবে ও? কীভাবে ওর পরিবারের খরচ চালাবে? বাবার স্মৃতিটা ধরে রাখতে পারবেনা ও? ভাবতেই মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে যাচ্ছে । জীবন আবার কোন নতুন পরিক্ষা নিচ্ছে ওর। এবার কী করবে ও? লতিকা বেগম মুখে আঁচল চেপে কাঁদতে লাগলেন। হঠাৎ করেই পুরো পরিবারের ওপর যেন শোকের ছায়া নেমে পড়লো। মেঘের কালো ছায়া আরও গাঢ় হলো নূরের জীবনে। নূরের চাচা সত্যি করে তার জমিন দখলে নিতে পুলিশ নিয়ে এলো। হাজার চেষ্টা করে, আকুতি মিনতি করেও রক্ষা করতে পারলোনা নূরের গ্যারেজ।নূরের চোখের সামনেই ওর বাবার শেষ স্মৃতি আর নিজের পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস, গ্যারেজের শাটার বন্ধ করে সিল মেরে দিয়ে গেল পুলিশ। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো লতিকা বেগম। অমালিয়া আর মিছরিও কাঁদছে। নূর নিজেকে শক্ত করে মা বোনদের শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার যে ভেঙে পড়লে চলবেনা। সবাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো নূর। সবার সামনে শক্ত থাকলেও এখন আর পারলোনা। রুমে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠল নূর । অপরাধী চোখে তাকিয়ে বলল,
–সরি বাবা, তোমার মেয়ে পারলোনা। পারলোনা তোমার শেষ স্মৃতিটাকে বাঁচাতে। মাফ করে দাও আমাকে। তোমার মেয়ে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে গেল বাবা।
__
–কি বলিস নূর,তোর চাচা এমন বেঈমানী করেছে? কত্তোবড় মীরজাফর ওই লোক। নিজের ভাইয়ের পরিবারের সাথে কীভাবে করতে পারলেন উনি এমন কাজ! ছিহহ্
নূরের কাছ থেকে ঘটনা শুনে শিখা ঘৃণিত সুরে বলে উঠল কথাগুলো। ভার্সিটিতে আসতেই নূরের মলিন ফ্যাকাসে মুখ দেখেই শিখা আর গিয়াস বুঝতে পারলো নূরের কিছু হয়েছে। নূরকে জিজ্ঞেস করলে তখন নূর সব খুলে বললো। গিয়াসও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলল,
–ইয়ার নূর, তুই আমাদের কেন বললি না? হয়তো কোনো হেল্প করতে পারতাম আমরা তোর। ওই ব্যাটা চাচাকে তো আলু ভাজা করতে মন চাচ্ছে।
নূর ভারাক্রান্ত গলায় বলল,
–আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে বাবার হাতের শেষ স্মৃতিটা রক্ষা করতে পারলাম না একারণে। উপার্জনের জন্য নাহয় কোনোকিছু করে নিবো আমি। কিন্তু বাবার হাতের রেখে যাওয়া জিনিস টা তো আর ফিরে পাবোনা।
শিখা বলল,
–চিন্তা করিসনা ইয়ার, কিছু একটা উপায় বের হবে। জমিতো এখনো বিক্রি হয়নি। বিক্রি হওয়ার আগেই কোনো উপায় আমরা নিশ্চয় বের করে নিবো।
–কী উপায় বের করবো? এখানে শুধু দুটো উপায়ই আছে। হয় চাচা দয়া করে জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলুক। নাহয় জমিটা আমরাই কিনে নেই। যার কোনোটাই অসম্ভব। না চাচা তার মত পাল্টাবে, আর না আমাদের সামর্থ্য আছে ওই জমি কিনে নেওয়ার। তাই গ্যারেজ বাঁচানো আমাদের হাতে নেই।
–আশা হারাস না নূর। দেখবি কোনো না কোনো উপায় নিশ্চয় বের হবে। আল্লাহ কোনো না কোনো পথ ঠিকই দেখাবেন। তা এই মনমানসিকতা নিয়ে আজকের দিন ক্যাম্পাসে না আসলেই পারতিস। বাসায় একটু রেস্ট করতি।
–নারে আজ ইম্পর্ট্যান্ট লেকচার আছে। আর তাছাড়া বসে থাকলে কী আর আমার চলবে। এখনতো আমাকে আরও বেশি ছুটতে হবে। নতুন উপার্জনের উৎস খুঁজতে হবে। ওই মিঃ নায়কের কাজও তো করতে হবে। তার কাছে ঋণ আছি আমি। তাই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসতে তো হবেই।
ক্লাস শেষে নূর যথারীতি আদিত্যর ভ্যানিটিতে এলো কাজের জন্য। আদিত্যর কাছে যে সে ঋণগ্রস্ত। তাইতো ঋণ পরিশোধের জন্য তাকে আসতেই হবে। তবে ভ্যানিটিতে আসতেই নূরের মুখপানে দৃষ্টি মেলতেই বুকের ভেতর কেমন ধুক করে উঠল আদিত্যর। নূরকে এমন মলিন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কেন? চোখ দুটোও কেমন ফুলে আছে।মেয়েটা কী কেঁদেছে? কী হয়েছে নূরের? জানতে চাইলো আদিত্য,
–নূর, কী হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
নূর আদিত্যর দিকে না তাকিয়েই বলল,
–কিছু হয়নি, কাজ কী করতে হবে তাই বলুন।
–নূর তাকাও আমার দিকে। বলো কী হয়েছে? কিছুতো একটা অবশ্যই হয়েছে।
নূর এবার তাকালো আদিত্যের দিকে। কঠোর গলায় বলল,
–কেন? কেন বলবো আপনাকে? কে হন আপনি আমার? কী অধিকার আছে আপনার? এখানে কী আমার পার্সোনাল লাইফ ডিসকাশন করার জন্য বসেছি আমরা? আপনার হয়তো ফালতু সময় থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই। কাজ থাকলে বলুন, নাহলে চললাম আমি।
বলেই চলে যেতে উদ্যোত হলো নূর। নূরের হঠাৎ এমন বিহেভিয়ারে আদিত্য একটু বিস্মিত হলো। নূরের যে কিছু হয়েছে তা ভালো করেই বুঝতে পারছে আদিত্য। আর সেই কিছুটা যে মোটেও ভালো কিছু হয়নি তাও বুঝতে পারছে আদিত্য। আর এটা বুঝতে পেরেই আদিত্য আরও উত্তেজিত হয়ে উঠল। নূরের হাত টেনে ধরে নিজের কাছে এনে চোয়াল শক্ত করে বলল,
–সবসময় এমন করো কেন তুমি হ্যাঁ? খুব ভালো লাগে আমাকে অশান্তিতে রেখে।আমাকে ছটফট করতে দেখে আনন্দ পাও তুমি? কেন একটু আপন ভাবতে পারোনা আমাকে? একটুও কী ভরসা করা যায়না আমার ওপর? এতটাই কী অযোগ্য আমি? কেন নিজের সমস্যার কথা আমাকে বলতে চাওনা তুমি? প্লিজ বলোনা কী হয়েছে তোমার?
আদিত্যর এই আকুল অস্থিরতা নূরকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। তবুও নূর তাতে দূর্বল হবেনা । নূর ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত গতিতে বেড়িয়ে গেল। এতে আরও ক্ষিপ্র হয়ে গেল আদিত্য।রাগে লাথি মেরে সামনে থাকা চেয়ারটাতে। নিজের রাগ ঝাড়তে লাগলো অচেতন পদার্থ গুলোর ওপর। কাচের ফুলদানিটা সজোরে ফ্লোরে আছাড় মেরে চিল্লিয়ে বলল,
–আআআ…হোয়াই নূর, হোয়াই ড্যাম ইট!!!
কিছুক্ষণ তান্ডব চালিয়ে ধপ করে বসলো আদিত্য। নিজের রাগটাকে একটু শান্ত করে নিলো সে। কিন্তু মনের অশান্তি কীভাবে শান্ত করবে? ওর নূরের কী হলো হঠাৎ করে তা না জানা পর্যন্ত কিছুতেই শান্ত হতে পারবেনা সে । এইতো কালই কী সুন্দর প্রাণচঞ্চল ছিলো মেয়েটা। তবে আজ কী হলো তার? কীভাবে জানবে সে? নূরতো চলে গেল। কিন্তু পেছনে রেখে গেল আদিত্যর মাঝে এক সাগর অশান্তির ঢেউ। নূরের বিষন্ন মুখটা বারবার বিঁধছে তার বুকে। ওর কী হয়েছে তা না জানা পর্যন্ত কিছুতেই শান্ত হতে পারছেনা সে। হঠাৎ শিখার কথা মনে পড়লো আদিত্যর। শিখা নিশ্চয় বলতে পারবে নূরের কী হয়েছে। আদিত্য ফোন করে শিখাকে ওর ভ্যানিটিতে। কিছুক্ষণ পরই এলো শিখা। আদিত্য জানতে চাইলো নূরের কী হয়েছে। শিখা বলল,
–সরি ভাইয়া, এবার আপনাকে আমি কিছু বলতে পারবোনা। আমি নূরকে প্রমিজ করেছি এই ব্যাপারে আপনাকে যেন কোনোকিছু না বলি আমি। তাই সরি।
নূর বুঝতে পেরেছিলো আদিত্য ওকে দেখলেই বুঝে যাবে কিছু হয়েছে। আর জানতে চাইবে কী হয়েছে। কিন্তু নূর চাইনা আদিত্যকে এসব ব্যাপারে জানাতে। আদিত্য হেল্প করতে চাইবে, আর সেটাই চায়না নূর। তার আত্মসম্মান এর অনুমতি দিবেনা কখনো। তাই শিখাকেও ভালোভাবে শাসিয়ে দিয়েছে আর প্রমিজও নিয়েছে আদিত্যকে যেন এই ব্যাপারে কিছু না বলে। তাই শিখা আর কিছু বলতে পারলোনা আদিত্য হতাশ হয়ে বলল,
–আচ্ছা ঠিক আছে ব্যাপার না। তুমি যাও। আমি নাহয় অন্য উপায় খুঁজে নিবো।
শিখা যেতেই আদিত্য ওর গ্যাং এর লোককে ফোন করে বলল,
–শোনো তোমাকে একটা মেয়ের ডিটেইলস দিচ্ছি। খোঁজ লাগাও ওর জীবনে বর্তমানে কী ঘটছে। এভরি স্মল ডিটেইলস চাই আমার। এবং দ্রুত গতিতে বের করবে।
ফোন রেখে দিলো আদিত্য। উপেক্ষার খেলা যতো ইচ্ছে খেলো নূর। আমিও দেখবো কতটা পোড়ানোর ক্ষমতা আছে তোমার। মাঝখান থেকে তোমার দহনে এই হৃদয় পুড়ে নাহয় আরেকটু খাটি হোক।
চলবে…….