শৈবলিনী পর্ব-৪৫+৪৬

0
588

#শৈবলিনী—৪৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★রাতভর নূর দরজার সাথেই হেলান দিয়ে বসে থাকলো। ক্লান্ত হয়ে একসময় ওখানেই ঘুমিয়ে পড়লো সে। সকালে আদিত্য দরজা খুলে দিতেই নূর হেলে গিয়ে নিচে পড়ে গেল। ঘুম ভেঙে ধড়ফড়িয়ে উঠলো সে। আদিত্যকে দেখে দ্রুত উঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিত্য বেড়িয়ে গেল। নূর আদিত্যকে ডাকতে ডাকতে তার পেছন পেছন গেল। আদিত্য নূরের ডাকে সারা না দিয়ে নিজের মতো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে বাইরে বেড়িয়ে গেল। নূরও আদিত্যকে ডাকতে ডাকতে নিচে এসে মেইন ডোর পর্যন্ত এসে থেমে গেল। কারণ ততক্ষণে আদিত্য চলে গেছে। আদিত্যর এই উপেক্ষা ধারালো ছু,রির মতো নূরকে এফোড় ওফোড় করে দিচ্ছে। কান্নারা তীব্র বেগে উপচে পড়ছে। নূর ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেল লিভিং রুমের সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নূর নিজের কান্না আঁটকে দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেল। পরিবারের সবাই বুঝতে পারলো এদের দুজনের মাঝে বড়ো কোনো সমস্যা হয়েছে। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মাঝের কথা এভাবে জিজ্ঞেসও করা যায়না। তাছাড়া এমনিতেও নূর একঘেয়ে স্বভাবের। যত কষ্টই হোক কাউকে কিছু বলতে চায়না। বড়ো বোনের এমন হতাশাগ্রস্ত অবস্থা দেখে নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাচ্ছে অমালিয়া। আজ ওর অবাধ্য স্বভাবের কারণেই দুই বোনের জীবনেই দূর্দশা নেমে এলো। আমার সাথে যা হয় হোক। আল্লাহ যেন আমার বোনটাকে এবার একটু সুখী করে। জীবনে কম কষ্ট করেনি। এবার অন্তত একটু সুখের দাবীদার সে।

নূর রুমে এসে আবার কাঁদতে লাগলো। এখন যে এই কান্নায় ওর নিত্যসঙ্গী। কাঁদতে কাঁদতে চোখের সব পানি ফুরিয়ে গেলেও ওর অপরাধ মার্জনা হবেনা। ও কাজই এমন করেছে। সুখকে দূরে ঠেলে নিজেই দুঃখকে আপন করে নিয়েছে।এখন কান্না ছাড়া আর কি-বা পাবে ও। নূরের কান্নার মাঝেই ওর ফোন বেজে উঠল। শিখা ফোন করেছে। নূর ফোন রিসিভ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
–শিখা, মিঃ নায়ক মাফ করেনি আমাকে। সে আমাকে ঘৃণা করে। কথা বলছেনা, আমার দিকে একবার তাকাচ্ছেও না। এখন আমি কী করবো শিখা? আমিযে ওকে হারিয়ে ফেললাম।

শিখা ওপাশ থেকে ধমকের সুরে বলল,
–এই তুই আগে চুপ করতো। কি টিভি সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো কেঁদে যাচ্ছিস। তুই কবে থেকে এমন ফ্যাসফ্যাস করে কথায় কথায় কাঁদতে শুরু করা মেয়েদের মতো হয়ে গেলি! দেখ ভাইয়া অনেক কষ্ট পেয়েছে। সেটা সারতে তো একটু সময় লাগবেই। যেখানে তুই তাকে প্রায় একটা বছর কষ্টে রেখেছিস। সেখানে তুই মাত্র একদিনেই সব জয় করতে চাচ্ছিস! একটা কথা মনে রাখিস, যার ভালোবাসা যতো মারাত্মক, তার রাগও ততই মারাত্মক। তাই এতো সহজে সব ঠিক হবে না। তোকে মেহনত করতে হবে। একবার না হলে, হার না মেনে বারবার চেষ্টা করতে হবে। দেখবি একসময় ঠিকই ভাইয়া তার রাগ ভুলতে বাধ্য হবে। কতক্ষণই তোকে অবজ্ঞা করে থাকতে পারবে।

–সত্যিই বলছিস! উনার রাগ ভাঙবে তো?

–আরে হ্যাঁ অবশ্যই ভাঙবে। তুই শুধু চেষ্টা করে যা। আর এমন টিভি সিরিয়াল টাইপ দুঃখিনী ভাব ছেড়ে একটু রোমান্টিক হ। ভাইয়ার সামনে নিজেকে আবেদনময়ী ভঙ্গিতে পেশ কর।তারপর দেখবি ভাইয়া না গলে থাকতেই পারবেনা। এক কাজ কর,আজকে ভাইয়ার জন্য একটা রোমান্টিক সারপ্রাইজ প্ল্যান কর।

নূর একটু লজ্জা পেল। লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
–কিন্তু কীভাবে করবো? আমিতো এসব সারপ্রাইজ টারপ্রাইজ কখনো করিনি। কীভাবে কি করবো?

–উফফ,এখন এটাও আমাকে বলে দিতে হবে? জিদান ঠিকই বলে, তুই আসলেই একটা কুমিরের সরদারনী। রোমান্টিক কীভাবে হতে হয় তাই এখনো জানিস না! আচ্ছা ঠিক আছে শোন, আমি সব বুঝিয়ে দিচ্ছি তোকে।
শিখা নূরকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলো কীভাবে কী করতে হবে। কথা শেষে নূর নিজের চোখের পানি মুছে মনে মনে বলল,”শিখা ঠিকই বলেছে। এভাবে বসে বসে কাঁদলে কাজ হবে না। আমাকে চেষ্টা করতে হবে। একবার হেরে গেলে বারবার করতে হবে। যেখানে জখমের মাত্রা এতো গভীর সেখানে সারতেও তো সময় লাগবেই। আঘাত জখন আমি দিয়েছি তা সারানোর দায়িত্বও আমার। আজ মিঃ নায়ককে আমার সব অনুভূতি উজাড় করে দিবো। আজকে তাকে তার সেই কাঙ্খিত বাক্যটি বলবো যা শোনার জন্য সে এতদিন অপেক্ষা করেছে। একবার আসুন মিঃ নায়ক। আজকে আপনার রাগ আমি ভাঙিয়েই ছাড়বো।
___

আহানা ফোনে কিছু ফানি ভিডিও দেখে একা একাই হাসছিল। ভাইয়া ভাবির মাঝে সমস্যা চলছে। ভাবির মন খারাপ, তাই আর তাকে আজ বিরক্ত করেনি আহানা৷ সময় কাটানোর জন্য তাই মোবাইলেই এসব দেখছিলো। হঠাৎ দরজা প্রায় ভেঙে ফেলার মতো ধাক্কা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে তার ঘরে ঢুকলো আবির। তার মুখমণ্ডল কেমন র,ক্তি,ম লাল হয়ে আছে। চেহারা বিধ্বস্ত লাগছে।আচমকা আবিরকে দেখে আহানা ভড়কে উঠে বলল,
–এসব কী অভদ্রতা আবির ভাই? একজন মেয়ে মানুষের ঘরে ঢোকার আগে যে নক করতে হয় এতটুকু ম্যানারিজম নেই আপনার?অবশ্য আমিও কাকে কী বলছি! যার জীবন টাই পুরো ম্যানারলেস, সে আবার ভদ্রতা কীভাবে জানবে!

আবির তেড়ে গিয়ে আহানার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে নিজের মুখোমুখি এনে চোয়াল শক্ত করে বলল,
–ম্যানারস শেখাচ্ছিস তুই আমাকে,হ্যাঁ ম্যানারস? তা তুই তো ভদ্রতার ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর তাইনা? তাহলে এই কী তোর ভদ্রতার নমুনা?
আবির ওর ফোন বের করে স্ক্রিনে থাকা আহানার ছবি দেখালো। যেখানে সে একটা ছেলের সাথে ক্লোজ হয়ে ছবি উঠেছে। আহানা ছবিটার দিকে তাকালো। ছেলেটা ওর বান্ধবীর ভাই। আহানাকেও নিজের বোনের মতোই স্নেহ করে। কাল বান্ধবীদের সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে উনার সাথে দেখা হয়। উনিই সবাইকে খাওয়ান৷আড্ডা দেওয়ার পর সবার সাথে ছবি তুলেন। আহানাও তার সাথে ছবি ওঠে। আর পরে সেটা ফেসবুকে আপলোড করে। আবির সেই ছবিটার কথাই বলছে। আবির আবার রাগী কন্ঠে বলল,
–কীরে বল, এটাই তোর ভদ্রতা? ছেলেদের সাথে বাইরে বাইরে আড্ডা দেওয়া? কে এই ছেলে? এটাই কী তোর সেই সো কল্ড বয়ফ্রেন্ড?

আহানা মিথ্যে করে বলে উঠলো,
–হ্যাঁ এটাই আমার বয়ফ্রেন্ড? সুন্দর না? দেখুন কত সুন্দর মানিয়েছে আমাদের। আমাকে না অনেক ভালোবাসে।

আবিরের ক্রোধ এবার সপ্তমে। সে ক্ষিপ্ত স্বরে বলল,
–টু হেল উইথ ইয়োর ভালোবাসা? কীসের ভালোবাসা? তোর মাথায় এসব ফালতু জিনিস কে ঢুকিয়েছে? ভালোবাসা টালোবাসা সব ফালতু জিনিস। খবরদার আজকের পর এসব ফালতু জিনিসে নিজেকে ইনভলভ করবিনা।

–কেন? কেন করবোনা? আমার জীবন, আমার ইচ্ছে। আমার যা মন চায় তাই করবো। আপনি বলার কে?

আবির চোখ বন্ধ করে নিজেকে একটু শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,
–দেখ আহানা ভালোবাসা অনেক খারাপ জিনিস। এসবে পড়তে নেই। তুই এসব মাথা থেকে বের করে দে। আর ওই ছেলের সাথেও যেন আর কখনে না দেখি তোকে।

আহানা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
–আপনি বললেন আর আমি যেন শুনলাম। আমার মন যা চায় আমি তাই করবো। আমার ভালোবাসতে মন চাইছে, আমি বাসবে। আপনার কথা কেন মানতে যাবো আমি?

আবির আবার ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। সে আবারও আহানার বাহু চেপে ধরে বলল,
–কি ভালোবাসা ভালোবাসা লাগিয়ে রেখেছিস? কেন দরকার তোর ওসব ভালোবাসার? তুই তো আমাকে ঘৃণা করিস তাইনা? তো এই অনুভূতিতেই থাক। আমাদের কত সুন্দর একটা ঘৃণার সম্পর্ক। তা রেখে তোর ওসব ফালতু
ভালোবাসার কেন দরকার পড়লো।

আহানা দৃঢ় কন্ঠে বলল,
–হ্যাঁ দরকার আমার ভালোবাসার। আমি ঘৃণার সম্পর্ক চাইনা। আমি ভালোবাসার সম্পর্ক চাই।

আবির অতিরিক্ত রাগের বশবর্তী হয়ে বলে উঠলো,
–কেন? কী এতো দরকার পড়লো তোর ভালোবাসার? শারীরিক প্রয়োজন মেটাতে?

তীব্র ঘৃণায় সারা শরীর টগবগিয়ে উঠলো আহানার। আজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা। ঠাসস করে আবিরের গালে চড় লাগিয়ে দিলো আহানা। চড় মেরে ঘৃণিত কন্ঠে বলল,
–ছিহহ্, আজ আপনাকে ঘৃণা করতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।

আবির দুই হাতে আহানার মুখটা আগলে ধরে বলল,
–হ্যাঁ তো করনা ঘৃণা। যতো খুশি কর। সারাজীবন ঘৃণা কর। ওসব ভালোবাসা টালোবাসা বাদ দিয়ে আমাকে শুধু ঘৃণা কর। মন প্রাণ উজাড় করে ঘৃণা কর। আমাদের এই ঘৃণার সম্পর্কটাই বেস্ট।

আহানা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তিক্ত সুরে বলল,
–ইউ আর আ সিক। মেন্টালী ডিস্টার্ব আপনি। আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন। যান গিয়ে ডাক্তার দেখান। আপনার মতো পাগলের সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধে। আর রইলো আপনাকে ঘৃণা করার কথা। সেটাতো এমনিতেও করবো। আপনাকে আমি সারাজীবন ঘৃণা করে যাবো। আর এই ঘৃণা বাড়বে বৈ কমবে না।

আবির স্মিথ হেঁসে বলল,
–প্রমিজ!

–প্রমিজ।

–ব্যাস তাহলে তো হয়েই গেল। তুই যাকে খুশি ভালোবাস আর যাই কর। শুধু আমাকে ঘৃণা করলেই হলো। এটাতে কোনো কমতি যেন হয়না।
বলেই বেড়িয়ে গেল আবির। আহানার কান্না আর তার চোখে পড়লোনা।
__

নিজেকে আজ নারীতে রুপান্তর করার চেষ্টা করেছে নূর। শাশুড়ীর একটা শাড়ী পড়েছে সে। রেহনুমাই পড়িয়ে দিয়েছে। ছেলের জন্য নূরের এফার্ট দেখে তিনিও খুশি। এখন এদের সব ঠিক ঠাক হয়ে যেন যায় সেই দোয়া করছেন তিনি। নূর ছাঁদের ওপর আদিত্যর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে। ছাঁদ টা সুন্দর করে সাজিয়েছে সে। এখন শুধু অপেক্ষা আদিত্যর আসার। আজকে সে আদিত্যর মান ভাঙিয়েই ছাড়বে। তাকে বলবে সকল মনের না বলা কথা। বলবে সে কতটা ভালোবাসে আদিত্যকে। আদিত্য বিনা যে সে এখন শুধুই নিঃশ্ব মরুভূমি। সবই বলবে আদিত্যকে। আদিত্যর সকল অভিযোগ আজ দূর করে দেবে সে। ভালোবাসা সঁপে দিবে তার চরণে। আজ মুখ ফিরিয়ে নিতে দিবেনা। বাহুডোরে বেঁধে রাখবে তাকে। ভালোবাসায় মুড়িয়ে নিবে ওর প্রিয়তমকে। এসব ভেবে ভেবেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে নূর। ঠোঁটে ভাসছে অনাগত খুশির ঝিলিক। প্রতিক্ষা কেবল সেই পুরুষের আগমনের। যার জন্য আজ মনের দুয়ার খুলে অধীর আগ্রহে তাকে সাদর আমন্ত্রণ জানানোর অপেক্ষায় বসে আছে। নাজানি সেই পুরুষ কখন আসবে।

প্রতিক্ষার ক্ষণ দীর্ঘ হচ্ছে। রাত প্রায় বারোটা। আদিত্যর আসার নাম নেই।দশটার দিকে একবার জিদানের কাছ থেকে জানতে পেরেছিল আদিত্য এখনে শুট করছে। তাই কতো দেরিতে আসবে ঠিক নেই। কিন্তু নূরও হার মানবেনা। যতো রাতই হোক সে অপেক্ষা করবে। কিন্তু নূরের এই অপেক্ষা ধীরে ধীরে শুধু বাড়লো বৈ কমলো না। রাত একটাও একসময় পার হয়ে গেল তবুও আদিত্যর খবর নেই। নূরের হাসিমাখা মুখটা ধীরে ধীরে চুপসে যাচ্ছে। আশা রাখতে চেয়েও আবারও নিরাশা হানা দিচ্ছে। চোখের পাতা পাঁচ মন ওজন সমান ভারী হয়ে যাচ্ছে। ছাঁদের ফ্লোরে বসে বসেই ঝিমিয়ে পড়ে যাচ্ছে বারবার। কতবার উঠে চোখে পানি মেরে আসছে। তবুও কাজ হচ্ছে না। একসময় চোখে আর পানি দিতে হলোনা। নোনাজলে এমনি এমনিই দুচোখ ভরে গেল। তবুও আশা ছাড়ছেনা নূর। আদিত্য আসবে। সে অপেক্ষা করবে। যতো রাতই হোকনা কেন। মনের এই দৃঢ়তা সময়ের সাথে দূর্বল হয়ে পড়লো। ঘুমের প্রখরতার কাছে হেরে গেল নূর। ছাঁদের দেয়ালে হেলান দিয়ে একসময় চোখ দুটো বুজতে বাধ্য হলো সে। চোখের পাতা নামতেই জমে থাকা নোনাজল গাল বেয়ে গড়ে পড়লো।

রাত দুটোর পর ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত আর বিষন্ন মনে,নেশায় মাতাল হয়ে ঢুলতে ঢুলতে বাসায় এলো আদিত্য। গেস্ট রুমে ঢুকে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো সে। হঠাৎ হাতের কাছে কিছু বাঝলো ওর। আদিত্য হাতড়িয়ে সামনে এনে দেখলো একটা চিরকুট। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে চিরকুট খুলে দেখলো সেখানে লেখা আছে,
“জানি অনেক কষ্ট দিয়েছি আপনাকে। অনেক আঘাত করেছি। ক্ষমা চাইবোনা। শুধু আপনার একটু সময় চাই। প্লিজ শুধু দুই মিনিটের জন্য ছাঁদে আসুন। এরপর আর কিছু চাইবোনা আপনার কাছে। আপনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে আপনার দোষী। শুধু একবার আসুন”

আদিত্য ঠোঁট বাকিয়ে তাচ্ছিল্যকর হাসলো। চিরকুট টায় আঙুল বুলিয়ে মাতাল সুরে বলল,
♬ তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়
♬ দুঃখের দোহনে, করুন রোদনে
♬ তিলে তিলে তার ক্ষয়, তিলে তিলে তার ক্ষয়…
গানের লাইনগুলো বলতে বলতে চোখ মুখ কঠিন বিষাক্ত করে চিরকুট টা হাতের মাঝে দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।

সকালের কিরণ চোখে পড়তেই কপাল কুঁচকে চোখ মেলে তাকালো নূর। মাথা আর চোখের পাতা দুটোই ভীষণ ভারী, ব্যাথা হয়ে আছে। হেলান দিয়ে থাকায় ঘাড়টাও ভীষণ ব্যাথা করছে। পুরোপুরি চৈতন্য পেতেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো সে। রাতভর এখানেই ছিলাম? তবে আদিত্য আসেনি? নাকি বাসায়ই ফেরেনি সে? নূর দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলো। নিচে এসে নিজের রুমে আদিত্যকে পেলনা। গেস্ট রুমেও চেক করতে গেল। সেখানেও নেই আদিত্য। নূর ভাবলো হয়তো আদিত্য রাতে ফেরেইনি। নূর হতাশ হয়ে চলে যেতে নিলেই মেঝেতে পড়ে থাকা ওর চিরকুট টা দেখতে পেল। নূর চিরকুট হাতে নিয়ে দেখলো এটা ওরই সেই চিরকুট। তারমানে আদিত্য এসেছিল রাতে। আর ওর চিরকুটও পেয়েছিল। তবুও সে আসেনি ওর ডাকে। ধপ করে বসে পড়লো নূর। আর পারলোনা নিজের কান্না থামাতে। আরও একবার অপারগ হয়ে গেল সে। আদিত্য কী কখনই আর ওকে মেনে নিবে না? এতটাই ঘৃণা করে ফেলেছে আমাকে?

কিছুক্ষণ পর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে চোখের পানি মুছে মনে মনে বলল,”আমাকে হার মানলে চলবেনা। আঘাত যখন এতো গভীর দিয়েছি তা সারাতেও আমাকেই হবে। বারবার চেষ্টা করতে হবে। আদিত্যর উপেক্ষা সইতে হবে।আমার দেওয়া আঘাতের সামনে এসব কিছুই না। আমার এতো উপেক্ষার পরও যখন আদিত্য হার না মেনে আমার মন জয় করতে পেরেছে তখন আমি পারবোনা কেন! হ্যাঁ আমাকেও পারতেই হবে। আদিত্য কতক্ষণ আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে। একসময় মন গলবেই তার। নূর ভাবলো আদিত্য বাসায় ঠিকমতো থাকছেনা। পালিয়ে বেড়াচ্ছে ওর কাছ থেকে। তাই আজ নাহয় নূর নিজেই ওর কাছে যাবে। শুটিংয়ের ওখানে গিয়ে সারপ্রাইজ দিবে আদিত্যকে। তখন আর কোথাও পালাতে পারবেনা। যেই ভাবা সেই কাজ। নূর উঠে রুমে এসে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলো।শাড়ি বদলে একটা লং গোল ড্রেস পড়লো। তারপর রেডি হয়ে নিচে এসে আদিত্যর জন্য কিছু খাবার প্যাক করলো। এতো সকাল সকাল যে আদিত্য না খেয়েই বেড়িয়ে গেছে সেটা বুঝতে বাকি নেই তার। তাই ব্রেকফাস্ট টিফিন বক্সে ভরে নিয়ে রওয়ানা হলো সে। জিদানের কাছ থেকে ফোনে শুটিং স্পটের জায়গার নাম জেনে নিলো। আজ নাকি এফডিসিতেই শুটিং করছে সে। নূর সেখানেই এসে পৌঁছাল। আদিত্য শুটিংয়ে ব্যস্ত। তাই জিদান নূরকে আদিত্যর ভ্যানিটিতে অপেক্ষা করতে বলল। নূর ভ্যানিটিতে ঢুকে অপেক্ষা করতে লাগলো আদিত্যর। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে এখানে কাটানো পুরান স্মৃতিগুলো মনে করে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো নূরের। এই ভ্যানিটিতেই প্রেম কাহিনির শুরু হয়েছিল। কতো খুনসুটির চিহ্ন আছে এখানে। আজ আবারও এখানে আদিত্যর সাথে নতুন এক খুনসুটির চিহ্ন আঁকবে সে। ওকে এখানে দেখে আদিত্য আর উপেক্ষা করতে পারবেনা। আজ তার মান ভাঙবেই। এমনটাই আশা করছে নূর।

ঘন্টাখানিক অপেক্ষার পর আদিত্য ভ্যানিটিতে ঢুকলো। হঠাৎ নূরকে দেখে কিছুক্ষণ থমকে গেল সে। নূরও আদিত্যকে দেখে সুন্দর করে হাসিমুখে বলল,
–আপনি এসেছেন, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম আমি। নিশ্চয় খেয়ে আসেন নি সকালে। আমি ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসেছি। আসুন খেয়ে নিন।
বলেই নূর টিফিন বক্স খুলে খাবার বের করতে নিলো। ঠিক তখনই আদিত্য হুংকার দিয়ে জিদানের নাম ধরে ডাকলো। যে হুংকারে নূরও কেঁপে উঠে চমকে তাকালো আদিত্যর দিকে। ডাক শুনে দৌড়ে এলো জিদান৷ হন্তদন্ত হয়ে বলল,
–জি স্যার, কি হয়েছে?

আদিত্য জিদানের উদ্দেশ্যে চোয়াল শক্ত করে বলল,
–তোমাকে কতবার বলেছি আমার বিনা অনুমতিতে ভ্যানিটিতে কাউকে ঢুকতে দিবে না! বলো বলেছি কিনা? তাহলে আমার বিনা অনুমতিতে ভ্যানিটিতে লোকজন ঢুকতে দিয়েছ কেন? এটাকে কী পাবলিক গার্ডেন বানিয়ে দিয়েছ? আন্সার মি ড্যাম ইট!

জিদান হঠাৎ তার স্যারের এমন বিহেভিয়ারের কারণ বুঝতে অক্ষম হচ্ছে। জিদান থতমত স্বরে বলল,
–কিন্তু স্যার উনিতো ম্যাম..

–হোয়াট ম্যাম? তুমি কি আমার চাকুরী করো নাকি অন্য কারোর? মনে হচ্ছে চাকরি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় এসেছে তোমার। কাজে মন নেই এমন লোকের দরকার নেই আমার।

জিদান ভীতিগ্রস্ত কন্ঠে বলল,
–না না , কি বলছেন স্যার। প্লিজ আমাকে চাকরি থেকে বাদ দেবেন না।

–সেটা কথা অমান্য করার আগে ভাবা দরকার ছিল।

আদিত্যর এই বিষে ভরা কথার ছু,রি নূরের হৃদপিণ্ড ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। আজ সে আদিত্যর কাছে বাইরের লোক হয়ে গেল! শুধুমাত্র ওর আসার জন্য জিদানকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে! এতটা ঘৃণিত হয়ে গেলাম আমি! হয়তো এটাই ডিজার্ভ করি আমি। নূর অনেক কষ্টে নিজেকে ধরে রেখে গলার কান্নাগুলো ঢোক গিলে নিয়ে ধরা গলায় বলল,
–ভুল আমার, আমার জন্য কাউকে চাকরি থেকে বাদ দেবেন না প্লিজ। আমি চলে যাচ্ছি এখুনি। তবুও জিদানকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েন না।

বলেই চলে যেতে লাগলো নূর।দরজার কাছে আসতেই তখনই হঠাৎ দরজা দিয়ে এক সুন্দরী মেয়ে প্রবেশ করলো। সিনেমার নায়িকা হয়তো। সে ঢুকে নূরকে দেখে বলল,
–আমি কি ভুল সময়ে চলে এলাম আদিত্য? না মানে আমি একটু সীনগুলো শেষবার তোমার সাথে রিহার্সেল করার জন্য এসেছিলাম। তুমি ব্যাস্ত থাকলে তাহলে আমি পরে আসছি।

আদিত্য বলে উঠলো,
–আরে না না, আমি একদম ব্যাস্ত নেই।এখানে ইম্পর্ট্যান্ট কিছুই চলছে না। তুমি এসো।
আদিত্য জিদানের উদ্দেশ্যে বলল,
–জিদান,আমি এখন কোনো ডিস্টার্বেন্স চাইনা। বুঝতে পেরেছ?

জিদান অপরাধী চোখে একবার নূরের দিকে তাকালো। নূর খুব বুঝতে পারছে ডিস্টার্বেন্স বলতে আদিত্য ওকেই বুঝাচ্ছে। আজ নূরের চাইতে অন্য মেয়ে আদিত্যর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল! ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে নূর। নূর এক মুহুর্তও না দাড়িয়ে দ্রুত বেড়িয়ে গেল।

চলবে…..

#শৈবলিনী—৪৬
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★নূরকে দুঃখী মনে বাড়ি ফিরতে দেখে রেহনুমা এগিয়ে যায় তার কাছে। নূরের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? আদিত্যর রাগ ভেঙেছে কিনা? নূর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা। অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। রেহনুমার ভীষণ মায়া হলো মেয়েটার জন্য। সে নূরকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো। নূরকে ধরে এনে সোফায় বসিয়ে স্নেহময় কন্ঠে বললেন,
–শান্ত হও মা,এতো ভেঙে পড়লে চলবে! ছেলেটা হয়তো এবার একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে। তাছাড়া যেই তোমার কারণে আদি আমার, তার মায়ের এমনকি পুরো দুনিয়ার বিরুদ্ধে যেতে পারে। সেই আদি আজ এভাবে তোমাকে উপেক্ষা করছে তাহলে নিশ্চয় তার মনোভাব অনেক দুর্ধর্ষ হয়ে আছে। তবে চিন্তা কোরোনা, বেশি সময় তোমাকে উপেক্ষা করতে পারবেনা। তোমাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দেখবে একসময় ও ঠিকই রাগ ভুলতে বাধ্য হবে।

ওদের কথার মধ্যেই আহানাও সেখানে এসে উপস্থিত হলো। নূরকে কাঁদতে তারও খুব খারাপ লাগছে। ভাই ভাবির মাঝে সব ঠিক হয়ে যাওয়ার জন্য কিছু ভাবতে হবে। নূর কান্নারত কন্ঠে বলল,
–কিন্তু কী করবো আমি? উনিতো আমার মুখই দেখতে পারছে না। না কোনো কথা বলছে আমার সাথে। এতো চেষ্টা করেও অসফল হচ্ছি আমি। আর কী করবো আমি।

আহানা কিছু একটা ভেবে ফট করে বলল,
–আইডিয়া! আমি শুনেছি ছেলেদের মনের রাস্তা নাকি পেট দিয়ে যায়। তুমি এক কাজ করো। ভাইয়ার জন্য আজ ভাইয়ার পছন্দের সব খাবার রান্না করো। দেখবে ভাইয়া রাগ করে আর থাকতেই পারবে না।

নূর ইতস্ততভাবে বলল
–কিন্তু আমিতো রান্নাই করতে পারিনা। তাহলে কীভাবে করবো?

রেহনুমা মুচকি হেঁসে বললেন,
–পারোনা তো কি হয়েছে। আমি শিখিয়ে দেবো। আহানার বুদ্ধিটা খারাপ না। আজকের ডিনারে তুমি আদির সব পছন্দের খাবার রান্না করো। আমি তোমাকে দেখিয়ে দেবো।

নূর খুশি হয়ে হঠাৎ রেহনুমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–থ্যাংক ইউ মা।

নূরের মা ডাকে রেহনুমা আবেগে আপ্লূত হয়ে গেলেন। মেয়েটা এবার সত্যি সত্যিই সবাইকে আপন করে নিয়েছে। রেহনুমা নূরের মাথায় আদরের হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
–দূর পাগলি,মাকে কেউ ধন্যবাদ বলে! তুমিও তো আমার মেয়েই।

আহানা পাশ থেকে আফসোসের সুর টেনে।বলল,
–নেও ভাই,মায়ের ফেবারিটের লিস্ট আরও বৃহৎ হয়ে গেল। শুধু এই অভাগীরই কোনো গতি হলোনা। এই দুঃখী অবলা নারীর কি হবে?
আহানার মজা করা কথায় হেঁসে দিলো নূর।

রাতে নূর আদিত্যর জন্য ওর সব ফেবারিট খাবার গুলো রান্না করার কাজে লেগে পড়লো। রেহনুমা সব কিছু দেখিয়ে দিচ্ছে নূরকে। সেই সন্ধ্যা থেকে শুরু করেছে রান্না। রাত নয়টা বাজতে যাচ্ছে,এখনো চলছে রান্না। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা নূরের। তবুও ক্লান্ত হচ্ছে না নূর। আদিত্যকে আজ সে মানিয়েই ছাড়বে এই প্রত্যাশায় সকল মনের মাধুরি মিশিয়ে রান্না করছে সে। রান্নার শেষের দিকে এসে লুচি ভাজার জন্য তেলের কড়াই চুলায় দিলো নূর। রেহনুমা লুচি বানিয়ে দিয়েছে, শুধু ভাজার পালা। হঠাৎ রেহনুমার ফোন বাজতেই সে ফোন রিসিভ করতে চলে গেল। নূর ভাবলো সে লুচিগুলো ভেজে ফেলবে। নূরের জ্ঞান নেই লুচি কীভাবে তেলের ভেতর ছাড়তে হয়। তাই সে একটা লুচি নিয়ে ঠাস করে তেলের উপর ছেড়ে দিলো। সাথে সাথে টগবগে গরম তেল ছিটে এসে নূরের হাতের উপর পড়লো। ঝলছে উঠলো হাত।অসহনীয় ব্যাথায় হাত ঝাঁকাতে লাগলো সে। তবে চিৎকার দিলোনা। এমন ব্যাথা সহ্য করার পুরনো অভিজ্ঞতা আছে যে তার। ট্যাপের নিচে হাত নিয়ে পানি দিয়ে ধুতে লাগলো। ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি এলেও তা সাথে সাথে মুছে ফলল নূর। এখন তার এসব ছোট ছোট ব্যাথা মালুম করার সময় নেই। তাকে যে আদিত্যর মন জয় করার যুদ্ধ জয় করতে হবে। তাই নিজের ক্ষত লুকিয়ে আবারও কাজে লেগে পড়লো সে। এবারে ধীরে ধীরে লুচি দিয়ে ভাজতে লাগলো। হাতটা ধীরে ধীরে ভীষণ জ্বালাপোড়া শুরু করলো। কিন্তু নূর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না। সেটা নিয়েই রান্নার কাজ শেষ করলো। রান্না শেষে সব কিছু সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়ে রাখলো। এরপর নিজেও গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে পরিপাটি হয়ে নিলো। আদিত্য যেন আজ সব কিছুতেই মুগ্ধ হয় এমনটাই মনকামনা তার।

সবকিছু কমপ্লিট শেষে এবার শুধু আদিত্যর ফেরার অপেক্ষা। মনে মনে দোয়া করছে আজ যেন আদিত্য একটু জলদি আসে। আজ যেন সব ঠিক হয়ে যায়। নূর কড়া করে চা বানিয়ে কয়েকবার করে খেল। আজ ঘুম যেন তাকে পরাস্ত করতে না পারে সেটারই প্রচেষ্টা। আজ ঘুমানো চলবেনা কিছুতেই। বসে বসে আদিত্যর আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।

রাত বারোটার দিকে আদিত্য বাড়ি ফিরলো। ড্রয়িং রুমের সোফায়ই বসে ছিলো নূর।আদিত্যকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আদিত্য সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের মতো উপরে উঠে গেল। নূরও আদিত্যর পেছন পেছন গেল। আদিত্য সোজা গেস্ট রুমে যেতে নিয়ে দেখলো গেস্ট রুমে তালা মারা। যা দেখে ভ্রু কুঁচকে আসলো আদিত্যর। নূর আদিত্যর পেছনে গিয়ে বলল,
–কাল নাকি মায়ের কোন আত্মীয় আসবে। তাই মা গেস্ট রুম পরিস্কার করে তালা মেরে রেখেছে।

বিরক্তি ছেয়ে গেল আদিত্যর মুখ মন্ডলে। এসব যে এদের ইচ্ছগত পরিকল্পনা তা বুঝতে এক বিন্দুও সময় লাগলোনা তার। চোয়াল শক্ত করে নিজের রুমে ফিরে গেল আদিত্য। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের ঘড়ি খুলতে লাগলো। নূর মুখে হাসির রেখা ঝুলিয়ে আদিত্যর পিছনে গিয়ে বলল,
–আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। টেবিলে খাবার দেওয়া আছে। আজকে আপনার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছি আমি নিজের হাতে। ভয় নেই, মা আমাকে দেখিয়ে দিয়েছিল। তাই খারাপ হয়নি। বাকিরা খেয়েও বলেছে ভালো হয়েছে। তাই আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।

আদিত্য কোনো জবাব না দিয়ে কাবার্ড থেকে কাপড়চোপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে গেল। নূর তবুও আশা নিয়ে বসে রইলো। একটু পর আদিত্য ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা বিছানায় গিয়ে সটান হয়ে কপালের উপর হাত ভাজ করে শুয়ে পড়লো। নূর তা দেখে আদিত্যর কাছে গিয়ে বলল,
–কি হলো না খেয়ে শুয়ে পড়লেন কেন? দেখুন, রাগ যতো খুশি আমার উপর দেখান। কিন্তু খাবারের সাথে কি রাগ। প্লিজ উঠে খেয়ে নিন না? আচ্ছা ঠিক আছে, আপনাকে নিচে যেতে হবে না। আমি আপনার খাবার এখানেই নিয়ে আসছি।
বলেই নূর দ্রুত নিচে গিয়ে ট্রে-তে করে আদিত্যর জন্য খাবার নিয়ে এলো। ট্রে-টা ক্যাবিনেটের উপর রেখে আবারও আদিত্যকে ডেকে বলল,
–প্লিজ উঠুন না, খেয়ে নিন। আচ্ছা,আমাকে মাফ না করলেন। কিন্তু প্লিজ খাবার খেয়ে নিন। এভাবে না খেয়ে থাকবেন না।
আদিত্যর কোনো হেলদোল নেই। নূরের গলা আবারও জড়িয়ে এলো। সে মিনতির সুরে বলল,
–প্লিজ উঠুন না। আচ্ছা আমার হাতের রান্না খাবেন নাতো! ঠিক আছে খেতে হবে না। অন্তত গ্লাসের দুধটুকু খেয়ে নিন। এটা মা আপনাকে দিতে বলেছিল।

নূর দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে আদিত্যকে বারবার ডাকতে লাগলো। আর উঠে খেতে বলল।এক পর্যায়ে আদিত্যর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। সে অগ্নি চোখে তাকিয়ে ঠাসস করে উঠে পড়লো। উঠে দাঁড়িয়ে নূরের হাত থেকে দুধভর্তি গ্লাসটা নিয়ে সজোরে ছুঁড়ে মারলো মেঝেতে। তীব্র ঝংকার পূর্ণ আওয়াজ তুলে কয়েক টুকরো হয়ে ভেঙে গেল সেটা৷ গ্লাসের দুধ মেঝেময় ছড়িয়ে পড়লো। গ্লাস ভাঙা শেষে আদিত্য নূরের হাত শক্ত করে ধরে পিঠের দিকে মুচড়ে ধরলো। আদিত্য নূরের পুরে যাওয়া হাতটাই সজোরে চেপে ধরেছে। ব্যাথায় দম বন্ধ হয়ে আসলো নূরের। তবুও ব্যাথার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ কোনো আর্তনাদ করলোনা নূর৷ আদিত্যর দেওয়া আঘাত যে নিতেই হবে তার। তাই মুখ বুঁজে সব সহ্য করতে লাগলো। আদিত্য হাত চেপে ধরে নূরকে নিজের মুখোমুখি এনে ক্রুদ্ধ,অগ্নিশর্মা দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত দৃঢ় করে বলতে
লাগলো।
–কেন করছ এসব তুমি হ্যাঁ? কী প্রমাণ করতে চাইছ তুমি? কী নাটক লাগিয়ে রেখেছ এসব? যা করার তাতো করেই দিয়েছ। এখন এসব নাটক কীসের জন্য? কেন আমার একটুখানি শান্তিও তোমার সহ্য হয়না? কী চাও তুমি? আমার জান নিয়েই তবেই শান্ত হবে? ঠিক আছে তাহলে এক কাজ করো। গলা টিপে মেরে ফেল আমাকে। আমারও শান্তি, তোমারতো আরও ডাবল শান্তি। নাহয় এই খাবারে বি,ষ মিশিয়ে আনো। এখুনি খেয়ে তোমাকে চিরজীবনের মনে শান্তি দিয়ে যাই৷ তোমাকে তো কোনো খুশি দিতে পারলাম না। নাহয় একটা খুশি অন্তত দিয়ে যাই তোমাকে। তো যাও, স্টোররুমে র্র্যাট পয়জন আছে। নিয়ে এসে খাবারে মিশিয়ে দাও। তারপর মজা করে খাবো। আফটার অল তোমার এতো মেহনত বিফলে কীভাবে যেতে দেই।

হাতের পোড়া জায়গায় যে ফোস্কা পড়েছিলো আদিত্যর এতো জোরে চেপে ধরায় তা গলে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে নূরের হাত থেকে। তবে শারীরিক এই কষ্ট আদিত্যর এই বিষাক্ত কথাগুলোর সামনে কিছুই না। ভেতর টা ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছে নূরের। এতো কঠিন কথা কীভাবে বলছে সে? নূরযে ম,রে যাচ্ছে। কথার ধারালো আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার হৃদয়। শারীরিক আর মানসিক দুই ব্যাথা মিলে নূরের জান বের করে দিচ্ছে। নূরকে চুপ থাকতে দেখে আদিত্য আবারও রাগী গলায় বলল,
–কি হলো? এটাও পারলে না। তো যাও এখান থেকে। তোমার এই মুখ দেখলেও এখন আমার নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে নিচু ব্যক্তি মনে হয়। যাও এখান থেকে।
বলেই নূরকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা ঠাসস আঁটকে দিলো। নূর শরীর, মনের দুই ব্যাথাই আর সইতে না পেরে দৌড়ে রান্না ঘরে এসে মুখে হাত চেপে চাপা কান্না করতে লাগলো। ভালোবাসার মানুষের কড়া কথা বুঝি এতটা যন্ত্রণা দেয়। নূর আজ বুঝতে পারলো সে যখন আদিত্যকে কথা শুনাতো তখন সেও বুঝি এভাবেই কষ্ট পেয়েছে। আদিত্য একদম ঠিক করছে। এটারই যোগ্য আমি। মানুষ নিজ নিজ কর্মের ফলই ভোগ করে। আমিও আমার কর্মের ফলই ভোগ করছি। নূরের হাতটা কাঁপছে অসহনীয় ব্যাথায়। জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে হাতটা। মনে হচ্ছে হাতটা শরীর থেকে আলাদা করে দিতে পারলে রক্ষা পেত। কাঁপা কাঁপা হাতটা ট্যাপের পানির নিচে রাখলো। সাথে সাথেই জ্বলে উঠে শরীরের সব লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল নূরের। চোজ বুঁজে জ্বলন সয়ে গেল সে। হাত ধোঁয়া শেষে বাইরে গিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে রইলো।রুমে যাওয়ার উপায় নেই তাই এখানেই বসে রইলো। ধীরে ধীরে হাতের একটু জ্বলন কমে এলো। ক্লান্ত শরীরে আর থাকতে না পেরে সোফায়ই শরীর টা এলিয়ে দিলো নূর।

নূরকে বের করে দিয়ে দরজার সাথেই এতক্ষণ হেলান দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে ছিলো আদিত্য। নিজেকে খানিকটা শান্ত করে উঠে দাঁড়াল সে। ওয়াশরুমে, গিয়ে চোখে মুখে পানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেসিনে হাত দিতেই হঠাৎ আঙুলের সাথে র,ক্ত দেখে কিছুটা চমকে গেল সে। হাত ধুয়ে হাতটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ভালো করে খেয়াল তারতো কোথাও কা,টা ছিঁড়া নেই। তাহলে র,ক্ত কোথাথেকে আসলো? হঠাৎ মন পড়লো তখন নূরের হাত চেপে ধরেছিলো। তাহলে কি…আৎকে উঠল আদিত্য। বুক ধড়ফড় করে কেঁপে উঠল তার। এক ছুটে সে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে এলো। ড্রয়িং রুমে এসে সোফার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল নূর সোফাতে কাত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। নূরের হাতের দিকে তাকাতেই হৃদপিণ্ডে তীব্র বেগে আঘাত হানলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল আদিত্য। নূরের সামনে গিয়ে নিচে হাঁটু গেড়ে বসলো সে। আস্তে করে নূরের হাতটা দুই হাতের মাঝে তুলে ধরলো। নূরের হাতের এই বেহাল দশা দেখে চোখ ভরে উঠলো নোনাজলে। হাত দুটো থরথর করে কাঁপছে তার।সইতে না পেরে চোখ দুটো বুঁজে নিলো সে। সাথে সাথে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। যাকে দুনিয়ার সব খুশি এনে দিতে চেয়েছিল আদিত্য, যার সামান্য ক্ষতও আদিত্যর মঞ্জুর না। তাকে আজ নিজের হাতেই আঘাত করলো সে। এই অপরাধের দায়ে কি নিজেকে মেরে ফেলা যায়না? হয়তো যায়না। কারণ মৃ,ত্যুটা যে আমাদের হাতে নেই। থাকলে হয়তো অনেক আগেই নিজেকে এই বেঁচে থাকার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে দিতো। আদিত্য সোফার পাশের কেবিনেটের ড্রয়ার থেকে অয়েন্টমেন্ট বের আস্তে আস্তে নূরের ক্ষততে লাগিয়ে দিলো। ফু দিয়ে দিয়ে অয়েন্টমেন্ট টা লাগানো শেষে সেটা কতক্ষণ ওভাবেই ধরে রাখলো। তারপর হাতের মাঝে আলতো করে চুমু খেয়ে হাতটা আবার স্বযত্নে রেখে উঠে চলে আসতে নিলো। হঠাৎ পেছন থেকে নূর ওর হাত টেনে ধরলো। থমকে দাঁড়াল আদিত্য। তবে পেছনে ফিরে তাকালো না। নূর কান্না জড়ানো গলায় বলে উঠলো,
–এতই যখন ভালোবাসেন তাহলে কেন উপেক্ষা করছেন? কেন দূরে ঠেলে দিচ্ছেন আমাকে? মানছিতো ভুল করে ফেলেছি। মাফ করে দিন না প্লিজ। প্লিজ এভাবে আর মুখ ফিরিয়ে নিয়েন না। একবার শুধু মাফ করে দিন। আই প্রমিজ আর কখনো আপনার কোনো কথার অবাধ্য হবোনা। যা বলবেন তাই করবো। প্লিজ একবার শুধু কাছে টেনে নিন আমাকে।

আদিত্য নূরের দিকে না তাকিয়েই বেদনার্ত কন্ঠে বলল,
–সেটা আর সম্ভব না নূর। তুমি এবার শুধু আমাকে না, তুমি আমার ভালোবাসা টাকেই মেরে ফেলেছ। চাইলেও আর সবকিছু ঠিক হবে না। তবে তুমি চিন্তা কোরোনা। খুব জলদিই তোমাকে এই জবরদস্তির বন্ধন থেকেও মুক্ত করে দিবো।

বলেই হাত ছাড়িয়ে চলে গেল আদিত্য। স্তব্ধ পাথরের মতো হয়ে বসে রইলো নূর। উনি এভাবে কেন বললেন? বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেবেন মানে কি? তাহলে কী সত্যি করেই সব শেষ দেবেন উনি?
___

পরদিন এক প্রডিউসারের সাথে মিটিং-এর জন্য একটা রেস্টুরেন্টে এসেছিল আদিত্য। নতুন ছবির অফার করছিলেন উনি। তবে আদিত্য মানা করে দিয়েছে। পেন্ডিং কাজ শেষ হলে সে এসব আর করবেনা। এসব তার আর ভালো লাগে না। মিটিং শেষে হঠাৎ ইভানের সাথে দেখা হয়ে গেল আদিত্যর। ইভান ওর কিছু ফ্রেন্ডসদের সাথে এসেছিল। আদিত্যকে দেখে সে হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে তার টেবিলের সামনে বসে কুশলাদি বিনিময় করলো। আদিত্যও মুচকি হেঁসে জবাব দিলো। একপর্যায়ে ইভান জিজ্ঞেস করলো।
–আপু কেমন আছে ভাইয়া?

নূরের কথা জিজ্ঞেস করতেই আদিত্যর মুখে আঁধার নেমে এলো। এখন ইভানকে কীভাবে বলবে কেমন আছে তার বোন। তবুও জোরপূর্বক মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলল,
–তুমি বাসায় এসেই দেখে যাও বোনদের।

আদিত্যর মুখভঙ্গি কিছুটা আঁচ করতে পারলো ইভান। সে চিন্তিত সুরে বলল,
–সব ঠিক আছে তো ভাইয়া?

আদিত্য আবারও যেন বলার কিছু খুঁজে পেলনা। শুধু জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো। ইভান কিছু একটা বুঝতে পেরে বলল,
–ভাইয়া আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই। জানি আমার আপুটা অনেক কঠোর। তবে তার মনটা কিন্তু আকাশের চেয়েও উদার। হ্যাঁ অনেক সময় হয়তো রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলে। তবে তা মন থেকে বলে না। আসলে আপু প্রথমে এমন ছিলোনা। আগে সেও আর দু চারটা মেয়ের মতোই ছিলো। হাসিখুশি আর প্রাণচঞ্চল। তবে বাবার হঠাৎ বাবার মৃ,ত্যু সবকিছু বদলে দেয়। সংসারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে দুনিয়ার কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয় আপুকে। সংসারের দায়ভার বহন করার জন্য তাকে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। কখনো সমাজের দেওয়া কুরুচিপূর্ণ কথা, তো কখনো মানুষরূপী হা,য়ে,না,দের কাছ থেকে নিজেকে সুরক্ষা রাখার লড়াই করতে হয়। পরিবারের সাথে সাথে নিজের জন্যেও প্রতি পদেপদে লড়তে হয়। সত্যি কারের বন্ধু আর শত্রুর মাঝে সঠিক মানুষ চেনার জন্যেও তাকে অনেক বার ধোঁকা খেতে হয়। আর একারণেই আপু কারোর উপর সহজে বিশ্বাস করতে ভয় পেত। একা এই কঠিন দুনিয়ায় সম্মুখীন হতে হতে একসময় আপু এমন কঠোর হয়ে যায়। বাইরে থেকে শক্ত এক পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ফেলে নিজেকে। তবে আমার আপুর মতো সুন্দর মনের মানুষ এই পৃথিবীতে আর কয়টা হবে আমার জানা নেই। তাই আপনার কাছে একটা অনুরোধ ভাইয়া প্লিজ, আপু যদি কখনো না বুঝে রাগের বশে আপনাকে কিছু বলে ফেলে সেটা মনে ধরে রাখবেন না। আর আপুকে একটু বোঝার চেষ্টা করবেন।

আদিত্য মনে মনে বলল, “আমি জানি ইভান। নূরকে আমার চেয়ে বেশি আর কে চিনবে। তবে এবার ওকে পরিক্ষা দিতে হবে। এবার আমি না। ওর আমাকে জয় করতে হবে। আমার ভালোবাসার পরিক্ষা আমি অনেক দিয়েছি। এবার ওর পালা।”
___

এরই মাঝে আরও এক সপ্তাহ কেটে গেছে। আদিত্য এখনো নূরকে মাফ করেনি। তবে নূর এখনো হার মানে নি। সে এখনো চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। যা সে নিজের শেষ নিঃশ্বাস অবদি চালিয়ে যাবে। রোজই নতুন নতুন প্রচেষ্টা চালায় সে। একদিন না একদিন আদিত্যের মন সে জয় করবেই।তবে ভয়ও হয় নূরের। যদি আদিত্য সেদিনের কথামতো সত্যি সত্যিই ওকে তার জীবন থেকে একেবারে সরিয়ে দেয় তাহলে? সেকি পারবে আদিত্যকে ছাড়া থাকতে? এসব ভাবনায় অশান্ত হয়ে যায় নূরের মন। আদিত্যর এই উপেক্ষা যে আর সইতে পারছেনা সে।

শুয়ে শুয়ে এসবই ভাবছিলো নূর। রাত এগারোটা বাজে। রোজকার মতো আদিত্যর আসার কোনো নাম নেই। নূর দূর্বলচিত্তে উঠে আজ আরও একবার আদিত্যর জন্য কিছু করতে চাইলো। কাবার্ড খুলে কিছু পরিধান করার জন্য খুজতে লাগলো সে। হঠাৎ আদিত্যর একটা শার্ট দেখতে পেল নূর। মনে পড়লো এটা সেই শার্টটাই যেটা পড়ে আদিত্য সেদিন নূরকে নিয়ে ভিজেছিল। কতো সুন্দর মুহূর্ত ছিলো সেসব। নূর মুচকি হেঁসে শার্ট টান দিলো দেখার জন্য। তখনই হঠাৎ কাপড়ের ভাজ থেকে একটা এনভেলপ পড়ে গেল। নূর ভ্রু কুঁচকে এনভেলপ টা তুলে ভেতর থেকে কিছু একটা বের করলো। যা দেখে হৃদপিণ্ড থমকে গেল নূরের। এটা তো নিউইয়র্কের টিকেট। তবে কী আদিত্য আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? চিরকালের জন্য দূরে চলে যাবে আমার থেকে? শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে ধপ করে নিচে বসে পড়লো সে। সত্যি করেই সব শেষ হয়ে গেল ওর।

চলবে……