শ্যামারণ্য পর্ব-০৯

0
312

#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ০৯
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন

হাসপাতালের করিডোরের একটি বেঞ্চে বসে আছে শ্যামা। বাবার অপারেশন আজ রাতেই করা হবে। বাবার অবস্থা সময়ের সাথে সাথে অবনতি ঘটে চলেছে,তাই ডাক্তাররা আজই অপারেশন সেরে ফেলতে চান।

মা আর হেনাকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।
মা তো যেতেই চাইছিলেন না,কিন্তু মা আর হেনার উপর এই দুদিন ধরে অনেক ধকল গিয়েছে। ভালো করে দুদন্ড বসে বিশ্রাম নেয়নি তারা। তাই আজ আবার তাদের রাত জাগাটা ঠিক মনে হয়নি তার।
তাই কোনোমতে সে আছে বলে বুঝ দিয়ে এবং অপারেশন শেষে ফোন করে জানানোর প্রতিজ্ঞা করে তাদের বাড়ি যেতে রাজি করিয়েছে।

রাত এখন প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার পর দেড় ঘন্টা হয়ে গেছে। ভেতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে কোনো খবর পাচ্ছেনা। মাঝে একবার এক নার্স বের হয়েছিলো,সে জিজ্ঞেস করলেও নার্সটি কিছু বলেনি,ব্যস্ততা দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

হাসপাতালের করিডরে সম্পুর্ন একা সে এই মুহুর্তে। অন্যান্য রোগীরা ঘুমিয়ে গেছেন,স্বজনরা ভিজিটিং আওয়ার শেষ হওয়ায় যে যার গন্তব্যে চলে গেছেন।

এভাবে একা একা বাবার অপারেশন শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে অনেক নার্ভাস লাগছে শ্যামার। এতো অস্থির লাগবে জানলে হয়তো মা আর হেনাকে চলে যেতে বলতোনা তখন।
তার অনেক ভয় হচ্ছে। ডাক্তার স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন যে এই অপারেশনে রিস্ক অনেক বেশি। অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার চান্স ফিফটি-ফিফটি। তার মানে অপারেশন সাকসেসফুল না হলে বাবাকে হয়তো আর ফিরে পাবেনা সে।
মা আর হেনাকে এসবের কিছুই বলেনি সে। এসব জানলে মা আবার চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

মনের অস্থির ভাবটা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে যেনো বেড়েই চলেছে। হাত পা প্রচুর কাঁপছে,গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। তবু উঠে পানি খেতে যাওয়ার সাহস হচ্ছেনা তার। সে যাওয়ার পর যদি ডাক্তার বেড়িয়ে আসে সেটা ভেবে।

এক সময় ঘড়িতে কাটায় কাটায় বারোটা বাজে। আর তার সাথে সাথে বিকট শব্দ তুলে শ্যামার ফোন বেজে উঠে।
নিস্তব্ধ নির্জন করিডোরে ফোনের আওয়াজটি যেনো আরো বেশি জোড়ালো শোনায়। নার্ভাসনেসের মধ্যে হঠাৎ এভাবে ফোনের আওয়াজ শুনে চমকে উঠে শ্যামা। কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করে স্ক্রিনের দিকে তাকায়।
আর সেখানে জ্বলজ্বল করছে একটি অপরিচিত কিন্তু তার অনেক পরিচিত একটি নাম্বার। যে নাম্বারে এর আগে শুধু একবার কথা হয়েছে তার, কিন্তু নাম্বারটি তার মস্তিষ্কে এমনভাবে গেথে গেছে যে সে কখনো ভুলবেনা। এই নাম্বারটিতে কল দিয়ে মানুষটির কন্ঠ শোনার ইচ্ছে তার মনে এখানে আসার পর অন্তত একশোবার এসেছে। কিন্তু সে শক্ত হাতে লাগাম টেনে রেখেছে সেই সুপ্ত বাসনার উপর প্রতিবার, সে এখনো মানতে পারছেনা যে একদিনের পরিচয়ে এক অজ্ঞাত পুরুষকে সে মন দিয়ে বসেছে।

কিন্তু সেই নাম্বারটির মানুষটি নিজে থেকেই তাকে কল দিয়েছে দেখে তার মন প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়। সে ধুরু ধুরু বুকে ফোনটি রিসিভ করে কানে লাগিয়ে চুপ করে থাকে,কি বলবে বুঝতে পারছেনা সে।
অপর প্রান্তের লোকটিও চুপ করে আছে,তার নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে থেকে থেকে। এভাবে কতটা সময় পার হয়েছে জানেনা শ্যামা,তবে তার প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে অপর প্রান্ত থেকে আওয়াজ আসে,

“হ্যালো শ্যামা……”

এই দুটি শব্দ ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে,তবে এই দুটি শব্দই যথেষ্ট ছিলো শ্যামার বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করার জন্য।
এই লোক যতবার তার নাম ধরে ডাকে,ততোবারই মনে হয় তার জীবনের কলুষিত সবকিছু মুছে গেছে। তার মনে অপার শক্তির সঞ্চার হয় যেনো।
এ কেমন মায়া,কোন মায়ার বাধনে আটকে যাচ্ছে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছেনা।

শ্যামা ছোট্ট করে জবাব দেয়,”হুমম”

“কি হুমম,কিছু বলছোনা যে?চুপ করে থেকোনা।”

“আমি কি বলবো?ফোন তো আপনি করেছেন,তাহলে আপনার বলা উচিত কেনো ফোন করেছেন এতো রাতে।”

“কেনো ফোন করেছি মানে? আমার মনে হয়েছে তুমি আমাকে অনেক মিস করছো,কিন্তু নতুন বউ তুমি তাই নিজ থেকে কল দিতে লজ্জা পাচ্ছো। তাইতো তোমার কাজ সহজ করার জন্য নিজ থেকেই কল দিলাম। ভাগ্যগুণে কতো ভালো স্বামী পেয়েছো ভেবে দেখেছো একবার?”

শ্যামা বে’হায়া লোকটির নি’র্লজ্জ কথাবার্তা গুলো শুনে তব্দা খেয়ে যায়,তড়িঘড়ি করে জবাব দেয় সে,
“প্রথমত নিজেকে আমার স্বামী আর আমাকে বউ ডাকা বন্ধ করুন। আমাদের কোনো বিয়ে হয়নি।”

“একশোবার বলবো,আমি যাকে ইচ্ছা আমার বউ ডাকবো তাতে তোমার কি?আর আমাকে যখন স্বামী মানোই না তাহলে এই পরপুরুষকে মিস করছিলে কেনো?”

শ্যামা এই লোকের বে’হায়াপনা দেখে প্রতিনিয়ত অবাক হচ্ছে,
“আমি কখন আপনাকে মিস করলাম?!আপনার কি মাথা খারাপ?”

“তাহলে আমাকে তুমি মিস করোনি বলতে চাইছো?”

“হ্যাঁ অবশ্যই বলতে চাইছি। আমি কেনো আপনাকে মিস করতে যাবো?আশ্চর্য!”

“আচ্ছা তুমি যখন আমাকে মিস করোনি,তাহলে আমি ভুল বুঝে তোমাকে ফোন করে ফেলেছি। ঠিক আছে ফোন কে’টে দিচ্ছি তাহলে, রাখছি কেমন?”

“নাহহ!!”
সাথে সাথে খানিকটা চিল্লিয়ে উঠে শ্যামা, তার কয়েক সেকেন্ড লাগে বোধগম্য হতে যে সে কি করেছে,আর তা বুঝতে পারার সাথে সাথে লজ্জায় গাল দুটি গরম হয়ে যায় শ্যামার।

অপর প্রান্ত থেকে লোকটির গা জ্বা’লা’নো হাসিটা শুনতে পায় সে। লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে।

এদিকে লোকটি হাসতে হাসতে কোনোমতে দম নিয়ে বলে,
“ছিঃ শ্যামা! এমন মধ্যরাতে একজন পরপুরুষের সাথে ফোনে কথা বলতে চাইছো তুমি,যাকে কিনা তুমি মিস ও করোনা। তোমাকে আমি ভালো মেয়ে মনে করেছিলাম।”
এই বলে আবার হাসতে থাকে সে।

শ্যামার এবার বেশ অভিমান হয়,লোকটি ইচ্ছে করেই তাকে ফাঁদে ফেলে সবসময়। খানিকটা অভিমানের সুরে বলে উঠে শ্যামা,” আপনি এমন কেনো বলুনতো?”

অপর পাশের মানুষটি মৃদু কন্ঠে জবাব দেয়,”কেমন যে আমি শ্যামা?”

“আপনি ইচ্ছে করে আমাকে কথার ফাঁদে ফেলেন।”

“তুমি আমার ফাঁদে এই জন্যেই পড়ো কারণ তুমি তোমার আসল অনুভূতিগুলো আমার থেকে লুকানোর চেষ্টা করো।”

শ্যামা এবার চুপ করে থাকে,কোনো জবাব দেয় না।

“আমার প্রতি তোমার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে এতো কিসের ভয় শ্যামাবতী?”

শ্যামার চোখের কোনে আবার অশ্রু জমতে শুরু করে,আজকাল এতো ঘনঘন কান্না চলে আসে কেনো তার,সে বুঝতে পারেনা। কন্ঠ যতটা সম্ভব নিজেকে সংযত করে জবাব দেয়,
“ভয় হয় আমার,প্রচন্ড ভয়। পুরুষ মানুষ সৌন্দর্যের পুজারী।
একবার এক মানুষকে ভালোবেসে তার প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করার কারণে ভরা মজলিসে অপমানিত হতে হয়েছে আমাকে। কারণ আমি নাকি বামন হয়ে চাঁদে হাত দিতে চেয়েছিলাম।
আপনিও তো সেই চাঁদের থেকে কম নন। আমি আপনাকে দেখিনি,কিন্তু আপনার কন্ঠ শুনে প্রতিবার মুগ্ধ হয়েছি। আপনার চেহারা যেমনি হোক,আপনার প্রতি অনায়াসে মুগ্ধ হওয়া যায়। আপনি আমাকে একদিনের পরিচয়ে এতটা সম্মান দিয়েছেন,এতোটা করেছেন আমার জন্য,এমনটা কোনো মানুষ আমার জন্য করবে আমি কল্পনাও করিনি কোনোদিন। এমন সম্মান প্রদানকারী পুরুষ প্রতিটি নারীর স্বপ্নপুরুষ হয়। উপরওয়ালা আপনাকে ধন-সম্পদের দিক দিয়েও পূর্ণতা দিয়েছেন। কোনো কমতি নেই আপনার মধ্যে।
তাহলে কি করে আপনাকে ভালোবাসার সাহস করি আমাকে বলতে পারেন?
আমার রূপ নেই,কোনো বিশেষ গুণ নেই,আমার বাবার কাড়ি কাড়ি টাকাও নেই….তাহলে আপনার সাথে আমার কিভাবে যায়?কিভাবে আমার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করার সাহস করি। চুক্তির বিয়ে পর্যন্ত ঠিক ছিলো,কিন্তু আপনি এভাবে আমার হৃদয় দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন আমি জানতাম না।
আপনি যদি আমায় মায়ায় জড়িয়ে হারিয়ে যান একদিন?এই ভয়ের কারণে আমি আমার অনুভূতিগুলোতে লাগাম টেনে রেখেছি”
বলতে বলতেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে শ্যামা। মনের সব সংশয়গুলো আর মনে বয়ে বেড়াতে পারছেনা সে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।

শ্যামা এক নাগাড়ে এতোগুলো কথা বলে নীরবে চোখের পানি ফেলতে থাকে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকেও কোনো সাড়া আসেনা। এভাবে কিছুক্ষণ নীরবতার পর ফোনের অপর পাশের মানুষটি নীরবতা ভঙ্গ করে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করে,
“তোমার বাবার অপারেশন হওয়ার কথা না আজকে?অপারেশন শেষ হয়েছে?”

শ্যামা এমন উত্তর শুনে অনেক হতাশ হয়। লোকটি নিজেই তাকে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে বলেছে। আর সে যখন ইমোশনাল হয়ে নিজের মনের সব অনুভূতি তুলে ধরেছে,তখন উনি কিছু না বলেই এভাবে অন্য বিষয়বস্তুতে চলে গেলেন যেনো কিছুই হয়নি?এতটা পা’ষাণ কেনো হঠাৎ তার প্রতি?সে কি একটু মিথ্যে সান্তনা পাওয়ার যোগ্যতা টাও রাখেনা? নাকি ইনিও বাকিসব পুরুষের কাতারেই পড়ে,সে ই চিনতে দেরি করেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই মন বিষিয়ে উঠে তার।

অবশ্য সে এসবের কিছুই বললো না,সেও বাস্তবতায় মনোযোগ দেয় এবার। ফোনে কথা বলতে বলতে সে ভুলেই গিয়েছিলো যে সে অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছে। বাবার অপারেশন এখনো চলমান। সে তার কান্না সংযত করে উত্তর দেয়,
“বাবার অপারেশন এখনো চলছে। দুই ঘন্টার বেশি সময় হয়ে গেছে,এখনো কোনো খবর আসছেনা ভেতর থেকে”

“ভয় লাগছে তোমার?”

“হুমম অনেক ভয় হচ্ছে,ডাক্তার বলেছে অপারেশনে রিস্ক আছে। বাবা নাও বাঁচতে পারেন।”

“ভয় পেয়োনা শ্যামা। উনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।”

“হুম তাই যেনো হয়”

এরপর আবার বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা। অপর প্রান্তের মানুষটি কিছু বলার জন্য ইতস্তত করতে থাকে,শেষ মেষ করেই ফেলে সে প্রশ্নটি,

“শ্যামা….তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?”

এই লোকের কথার বিষয়বস্তু পরিবর্তনের স্পিড দেখে রিতীমত অবাক হচ্ছে শ্যামা,এখন আবার কি প্রশ্ন করবেন উনি। সে দৃঢ় কন্ঠে জবাব দেয়,
“হুম অবশ্যই করতে পারেন”

“বলছিলাম কি…..” লোকটি ইতস্তত করতেই থাকে। শ্যামা ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করতে থাকে তিনি কি বলে শোনার জন্য। তবে অবশেষে যা শুনলো তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা সে।

“বলছিলাম কি শ্যামা, যদি এমন হয় এই পৃথিবীতে একমাত্র আমিই তোমাকে সুন্দর ভাবি,তোমাকে তুমি যেমন সে রূপেই শ্রেষ্ঠ মনে করি,তোমাকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখি আর বাকি দুনিয়ায় সবাই তোমাকে অসুন্দর ভাবে, স্বার্থপর ব্যবহার করে,ঘৃ’ণা করে। একমাত্র আমিই শুধু তোমাকে ভালোবাসা দিই,তোমার সব আবদার পূরণ করি,তোমাকে তোমার কল্পনার স্বপ্নপুরুষের মতো সম্মান দিই,তোমার রূপের প্রশংসা করি। তোমার জন্য কি তা যথেষ্ট হবে? শুধুমাত্র আমার ভালোবাসা কি যথেষ্ট হবে তোমার জন্য?আমার আর বাকি দুনিয়ার মধ্যে তুমি কাকে বেছে নিবে?
তুমি কি আমাকে বেছে নিবে নাকি দুনিয়ার বাকি সবাইকে?”

কথাগুলো শুনতে শুনতে সে একটি ঘোরের মধ্যে চলে যায়। নির্বাক হয়ে যায় সে,শুধু বুকের বা পাশটায় যেনো হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে কেউ এমন এক অন্যরকম অনুভূতি এবং একরাশ ভালোলাগায় ছেয়ে যায় তার মনপ্রাণ।
এই সময়ই অপারেশন থিয়েটারের দড়জা খুলে ডাক্তার বেরিয়ে আসে। ডাক্তারকে দেখে শ্যামা বিচলিত হয়ে বলে উঠে,
“শুনুন না,ডাক্তার বেরিয়ে এসেছেন অপারেশন থিয়েটার থেকে। আমি আপনাকে পরে ফোন করি?”

অপর প্রান্ত থেকে জবাব আসে,”ফোন করার দরকার নেই শ্যামা। আমার প্রস্তাবের জবাব যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে,তুমি যদি আমাকে বেছে নিয়ে থাকো,
তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আমার কাছে চলে এসো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।”
ফোনের লাইন কে’টে যায় তারপর,শ্যামা সেখানেই থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।
সে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে যখন ডাক্তার তাকে ডাক দেয়।

(চলবে)