শ্রাব‌ণের সে অপেক্ষা পর্ব-০৭

0
155

#শ্রাব‌ণের_সে_অপেক্ষা
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ০৭

৬!!
ঐশীর ব্যাং‌কের সাম‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছি। হা‌তে চার রক‌মের চ‌ল্লিশটা গোলাপ। ঐশীর প্রিয় ফুল গোলাপ। প্রিয় রঙ লাল, সাদা, হলুদ, কা‌লো। ঐশীর পছন্দ অপছন্দ সম্প‌র্কে বি‌য়ে ঠিক হওয়ার পর সেই বহু বছর পূ‌র্বেই জে‌নে নি‌য়ে‌ছিলাম। সেগু‌লো এখনও ম‌নে আছে ভেবে নি‌জেই অবাক হ‌চ্ছি। হয়‌তো ম‌নের কো‌ণের ঐশীর প্র‌তি ভা‌লোবাসাটা আমার অজা‌ন্তেই বেঁ‌চে ছিল ব‌লে। প‌রিবা‌রের প্র‌তি দা‌য়িত্ব পালন কর‌তে গি‌য়ে, তা‌দের প্র‌য়োজন মিটা‌তে গি‌য়ে, নি‌জের ম‌নের প্র‌য়োজন ব‌লেও যে কিছু আছে তা ভু‌লেই গি‌য়ে‌ছিলাম।

লাল, সাদা, হলুদ র‌ঙের গোলাপ পে‌লেও কা‌লো র‌ঙের গোলাপ পাই‌নি, তাই গোলা‌পি র‌ঙের গোলাপ নিলাম। প্র‌তিটা দশটা ক‌রে মোট চ‌ল্লিশটা। গতকাল রা‌তে গুগল ফুগ‌লে সার্চ ক‌রে অনেক‌কিছু প‌ড়ে‌ছি; কীভা‌বে মে‌য়ে‌দের পটা‌তে হয়? তারম‌ধ্যে একটা ছিল মে‌য়ে‌দের প্রথম উপহার হিসা‌বে ফুল দেওয়া সব‌চেয়ে বেটার। আর ফুলগু‌লো অবশ্যই মে‌য়েটার পছ‌ন্দের ফুল হ‌তে হ‌বে। তো ঐশীর পছ‌ন্দের ফুল আর রঙ মি‌লিয়ে উপহার কিনলাম। ফু‌লের সা‌থে এক বক্স বেশ দা‌মি ডার্ক চক‌লেটও কি‌নে‌ছি, কিন্তু চক‌লেট দিব কি না বুঝ‌তে পার‌ছি না! অনেক ভে‌বে ঠিক করলাম চক‌লেট বক্সও দি‌য়েই দি। যা আছে কপা‌লে।

ফুল আর চক‌লেট নি‌য়ে অনেক্ষণ ব্যাং‌কের সাম‌নে দাঁড়িয়ে থাক‌তে দে‌খে বোধ হয় বাং‌কের সি‌কিউ‌রিটি গা‌র্ডের স‌ন্দেহ হ‌লো। তি‌নি আমার কা‌ছে এসে জি‌জ্ঞেস করলেন,
‘আপনা‌কে দেখ‌ছি অনেক্ষণ যাবত এখা‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছেন? কেন?’
‘ব্যাংকের ভিত‌রে দরকার ছিল।’
‘‌তো যান।’
‘না মা‌নে ব্যাং‌কের একজন কর্মচারী‌র কা‌ছে যে‌তে চা‌চ্ছিলাম।’
‘নাম কি?’
‘ঐশী।’
‘ঐশী না‌মে দুজন আছেন।’
‘ম‌রিয়ম আক্তার ঐশী।’
‘দেখুন ভাই, আমি এখা‌নের সামান্য দা‌রোয়ান। এত‌কিছু তো বলতে পারব না। ত‌বে ভিত‌রে যান, সাম‌নে পিয়ন বা কাউ‌কে না কাউ‌কে পা‌বেন। আশাক‌রি জি‌জ্ঞেস কর‌লে কাজ হ‌য়ে যা‌বে।’
‘ধন্যবাদ।’

ফুলগু‌লো নি‌য়ে ব্যাং‌কের ভিত‌রে যে‌তে কেমন যেন অস্ব‌স্তি লাগছিল। লো‌কে কী না কি ভা‌বে! তারপরও চ‌লে গেলাম। বে‌শি খুঁজ‌তে হ‌লো না। ছোট্ট একটা ডে‌ক্সে ঐশী বসে একজন লো‌কে সাথে কথা বল‌ছিল। আমি ওর সাম‌নে গি‌য়ে কা‌শি দিলাম। আমার দি‌কে তা‌কি‌য়ে যে ভূত দেখার ম‌তো চমকা‌লো তা‌তে কো‌নো স‌ন্দেহ নেই! তারউপর হা‌তে একগাদা ফুল। চকমা‌নো স্বাভা‌বিক। আমি মুচ‌কি হে‌সে টে‌বিলে ফুল আর চক‌লেট রে‌খে চ‌ুপ ক‌রে চ‌লে আসলাম। একটা টু শব্দও করলাম না। ঐশী যে চূড়ান্ত অবাক তা‌তে কো‌নো স‌ন্দেহ নেই। চক‌লেট ব‌ক্সের ম‌ধ্যে একটা চিরকুট লি‌খে দি‌য়ে দি‌য়ে‌ছিলাম,
“না কত পার‌সেন্ট কমল আর হ্যাঁ কত পার‌সেন্ট বাড়ল? মে‌সেজ করে ব‌লে দিও। এটা আমার ফোন নাম্বার।”
‌দে‌খি কতক্ষণ লা‌গে মে‌সেজ আস‌তে? আমার ম‌নে হয় না রা‌তের পূ‌র্বে চিরকু‌টের উত্তর পা‌বো।?

ব্যাংক থে‌কে বের হ‌য়ে ভাবলাম এখন কোথায় যাব? গত তিন‌দিন যাবত বা‌ড়ি যা‌চ্ছি ন‌া। বাড়ির কারও সা‌থে যোগা‌যোগও কর‌ছি না। মা, বোনেরা, ছোটো ভাই অনেকবার কল করলেও তা রি‌সিভ ক‌রি‌নি। অবশ্য ‌সে‌দিন রা‌তেই ছো‌টোমা‌মা‌কে কল ক‌রে ব‌লে দি‌য়ে‌ছিলাম, আমি ভা‌লো আছি। আমা‌কে খোঁজার বাহানায় অযথা যেন থানা পু‌লিশ না ক‌রেন। মন ভা‌লো হ‌লে বা‌ড়ি ফিরব। তা‌দের যা‌ প্রয়োজন তা দূর থে‌কেই পূরণ করব।

ব্যাংক থে‌কে সোজা একটা রেঁস্তরায় গেলাম। সকা‌লে নাস্তাও ক‌রি‌নি আজ। আজ এ হো‌টে‌লে নাস্তায় অনেক‌কিছুই ছিল। আমি সাদা ভাত, ক‌য়েকরকম ভর্তা আর ডাল নিলাম। ভর্তাগু‌লো খে‌তে বেশ ভা‌লো। ত‌বে সকা‌লের নাস্তায় খু‌দে ভাতের সা‌থে ভর্তা বেশ লা‌গে। গরম গরম খু‌দে ভাতে এক চামচ ঘি, সা‌থে ক‌য়েকটা শুক‌নো ম‌রিচ ভাজা, সা‌থে ক‌য়েক রক‌মের ভর্তা। আহা অমৃত! খে‌য়ে দে‌য়ে অফিসে কল করলাম। অফি‌সের সব কাজ ক‌দিন যাবত ফো‌নেই কর‌ছি। য‌দিও নি‌জে থাক‌লে বেশ ভালো হ‌তো। তব‌ুও বিকা‌লে অবশ্য একবার যে‌তে হ‌বে। অফি‌সে না, ত‌বে আমার গ্রাহক সবুজ খান সা‌হে‌বের সা‌থে দেখা কর‌তে। তার একশ ট্রাক বালু আর প‌াঁচশ বস্তা সি‌মেন্ট লাগ‌বে। এত ব‌ড়ো অর্ডার অন্য লো‌কের উপর ছাড়া যা‌বে না। নিজে গি‌য়ে ডে‌লিভা‌রি দি‌তে হ‌বে। সবুজ খান আমার বন্ধু মানুষ। তার কা‌জে ভুল হ‌লে সম্পর্ক নষ্ট হ‌বে, লস যা হ‌বে তা তো বলাই বাহুল্য।

৭!!
‌ছো‌টো টং দোকা‌নে ব‌সে চা খে‌তে খে‌তে
ছো‌টো মামার‌ ছো‌টো ছে‌লে মাসুদকে কল করলাম। মাসুদ মে‌সেজ ক‌রে ব‌লেছিল, “জরু‌রি কথা আছে। ওকে যেন কল ক‌রি।” আমি চা’‌য়ে চুমু‌ক দি‌য়ে কল ক‌রলাম। মাসুদ রি‌সিভ ক‌রে বলল,
‘ভাইয়া, তু‌মি কোথায়?’
‘‌কেন?’
‘এ‌দি‌কে তো তুলকালাম হ‌য়ে যা‌চ্ছে।’
‘‌কেন?’
‘‌তোমার মা, ছো‌টো বোন, ভাই মি‌লে তো লঙ্কা কান্ড শুরু কর‌ছে। বাবা সা‌থে অনেক ঝগড়া হ‌য়ে‌ছে। বাবা তোমা‌কে সা‌পোর্ট কর‌তে গি‌য়ে ফুপুর সাথে তা‌র অনেক ঝগড়া হ‌য়ে‌ছে? তারা এখন ঐশী আপু‌দের বা‌ড়ি যে‌তে চা‌চ্ছেন।’
‘কী? কী হ‌য়ে‌ছে খু‌লে বল তো?’

‘তু‌মি তো তিনদিন যাবত বা‌ড়ি ফির‌ছো না। তো গতকাল রা‌তে ফু‌পি বাবা‌কে তো‌মা‌দের বা‌ড়ি ডাক‌লেন। আমিও বাবার সাথে গেলাম।’
‘তারপর?’
‘ফু‌পি বাবাকে তোমার কথা জি‌জ্ঞেস কর‌লেন? জি‌জ্ঞেস কর‌লেন কেন এভা‌বে সবার সা‌থে যোগা‌যোগ বন্ধ করে‌ছো? কেন বা‌ড়ি যা‌চ্ছো না?’
‘তারপর মামা কী বল‌লেন?’
‘বাবা তোমার সা‌থে হওয়া কথাগুলো সব বল‌লেন। তারপর বল‌লেন, এতবছর যাবত ছে‌লেটার সা‌থে যে অন্যায় ক‌রে‌ছিস তা এখন ও বুঝ‌তে পার‌ছে। ভীষণ কষ্ট পে‌য়ে‌ছে। তা-ই নি‌জে‌কে সামলা‌তে হয়‌তো একটু একা থাক‌ছে। আমরা সবাই মি‌লে ওর সা‌থে স‌ত্যি খুব অন্যায় ক‌রে‌ছি।’
‘তো মামার কথা শু‌নে মা কী বললেন?’
মাসুদ বেশ ইতস্ততা ক‌রে বলল,
‘ওসব শোনা জরু‌রি ভাইয়া?’
‘বল শু‌নি? স‌বে তো মানুষ চিন‌তে শুরু করলাম। এখন আরও ভা‌লো ক‌রে চি‌নি। মানুষ চেনার জন্য সবার সব কথা শোনা জরু‌রি। বিস্ত‌রিত সব বল।’
‘ফু‌পি বেশ রাগী ক‌ণ্ঠেই ব‌লেছি‌লেন,
ফু‌পি: ওর সা‌থে কী অন্যায় ক‌রে‌ছি আমরা? ওর ভাই-বোন, মা‌য়ের প্র‌তি দা‌য়িত্ব পালন করা ওর কর্তব্য তা কর‌বে না?’
বাবা: কর্তব্য কেবল ওর একার ছিল? সন্তান তো তোর আরও তিনটা ছিল।
ফু‌পি: তারা ছো‌টো ছিল।
বাবা: তারপর তো ব‌ড়ো হ‌য়ে‌ছে, প্র‌তি‌ষ্ঠিত হ‌য়ে‌ছে, বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে। তারপরও ব‌া বড়ো ভাই’র প্র‌তি কো‌নো কর্তব্য পালন ক‌রে‌ছিল? সায়নের য‌দি ভাই-বোন, মা‌য়ের প্র‌তি দা‌য়িত্ব- কর্তব্য থা‌কে, ত‌বে ওদের এবং তোর কী সায়‌নের প্র‌তি কো‌নো দা‌য়িত্ব নেই?
ফু‌পি: ওর প্র‌তি কোন দা‌য়িত্বটা পালন ক‌রি‌নি?
বাবা: ঠিক বয়সে বি‌য়ে দিয়ে‌ছিস? ওর ভা‌লো লাগা, মন্দ লাগা জান‌তে চে‌য়ে‌ছিস? ওর রোগ-শোক, ইচ্ছা-অ‌নিচ্ছা জান‌তে চে‌য়ে‌ছিস? এতগু‌লো বছর কেবল রোব‌টের ম‌তো তো‌দের জন্য খে‌টেই গে‌ছে। বিনিম‌য়ে কী পে‌য়েছে? তোরা কী দি‌য়ে‌ছিস?’
ফু‌পি: কেন ওর জন্য আমরা মে‌য়ে দেখ‌ছি ন‌া?
বাবা: এত বছর কেন দে‌খিস‌নি? স‌ঠিক বয়সে কেন বি‌য়ে করাসনি? ওর বয়সী ছে‌লেদের ছে‌লে মে‌য়েও বি‌য়ের উপযুক্ত হ‌য়ে গে‌ছে।
ফুুপি: তখন বি‌য়ে করা‌লে ও নি‌জের প‌রিবা‌রের প্র‌তি দা‌য়িত্ব পালন করত? তখন তো বা‌কি ছে‌লেদের ম‌তো বউ নি‌য়ে মে‌তে থাকত। বউ এর আঁচল তলায় থাকত। বউ যা বলত তা করত।

বাবা তা‌চ্ছিল্য হে‌সে বলে‌ছি‌লেন,
বাবা: শোভা, তুই গ‌র্ভে ধারণ ক‌রেও নি‌জের ছে‌লে‌কে চিন‌তে পার‌লি না? নি‌জের দেওয়া শিক্ষার উপর তোর কো‌নো ভরসা ছিল না? ছে‌লেটার জীবনে যা ক্ষ‌তি করার তা তো কর‌ছিসই, ঐশীর কিংবা ওর প‌রিবা‌রেরও তো‌দের জন্য কম ক্ষ‌তি হয়‌নি। এখন সায়ন ঐশী‌ মে‌য়ে‌টাকে পছন্দ ক‌রে বি‌য়ে কর‌তে চাই‌ছে তার জন্য কত বাহানা, ঝা‌মেলা কর‌ছিস তোরা মা মে‌য়ে মি‌লে? কেন কী খারা‌পি ঐশীর ম‌ধ্যে?’
তখন সা‌মিয়া আপু ব‌লে‌ছি‌লেন,
‘ঐ বু‌ড়িকে কেন বউ ক‌রে আনব? আমর‌া ভাইয়ার জন্য ভা‌লো মে‌য়ে দেখ‌ছি।’
বাবা: সায়‌নের জন্য দেখা‌দে‌খি করার ম‌তো বয়স আছে?
ফু‌পি: কেন নেই? ছে‌লেদের আবার বয়স কি‌সের?

বাবা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে ব‌লে‌ছি‌লেন,
বাব‌া: ঐশী তো সায়‌নের চে‌য়ে অনেক ছো‌টো?
ফু‌পি: তো? ছে‌া‌টো বড়ো বা বয়‌সের কো‌নো ব্যাপার না, ভাইয়া।
বাবা: তাহ‌লে?
ফু‌পি: ঐশীর বাবা‌কে অনেকবার ফি‌রি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি, অপমান ক‌রে‌ছি, এখন নি‌জে‌রা সে‌ধে বি‌য়ের প্রস্তাব পাঠা‌লে তা‌দের কা‌ছে আমা‌দের মাথা হেট হ‌য়ে যা‌বে।
ব‌াবা: এই সামান্য কার‌ণে তুই সায়‌নের পছ‌ন্দের মূল্য দি‌চ্ছিস না?
ফুুপি: পছন্দই তো ব‌ড়ো কথা, ভাইয়া। ও মে‌য়েটা‌কে পছন্দ ক‌রে, ভা‌লোবাসে প্রচণ্ড। বি‌য়ের পর ও ঐ মে‌য়ের কথায় উঠ‌বে বস‌বে। আমা‌দের কথা তখন ভাব‌বে না, শুন‌বে না। তাছ‌াড়া মে‌য়েটা অনেক শি‌ক্ষিত। নি‌জের ভা‌লো সরকা‌রি চাক‌রি করে। ও নিশ্চয়ই শ্বশুর বা‌ড়ির লোক‌দের সেবা কর‌বে না। সায়‌নের জন্য এমন মে‌য়ে আন‌তে হ‌বে যে মে‌য়ে আমা‌দের কথা শুন‌বে। যা বল‌বো তা-ই কর‌বে। আমা‌দের সেবা কর‌বে।’

বাবা: তো‌র কথা শু‌নে আমি হতভম্ব, ‌শোভা। একটা ছে‌লে এত বছর যাবত নি‌জের কথা না ভে‌বে কেবল তো‌দের কথা ভে‌বে গেল, এখন য‌দি সে নি‌জের কথা ভা‌বে, বউ এর কথা শো‌নে তা‌তে দোষ কোথায়? তো‌দের জন্য আর কী করা বা‌কি আছে? আর তুই ঘরের বউ চা‌চ্ছিস না‌কি দাসি চ‌াচ্ছিস? কা‌জে‌র লোকতো দু‌টো আছেই তোর ঘ‌রে। তারপর নতুন ক‌রে কা‌জের লোক দি‌য়ে কী কর‌বি?
ফুপি: আমি এত বা‌জে কথা শুন‌তে চাই না। সায়ন‌কে সেখা‌নেই বি‌য়ে কর‌তে হ‌বে যেখা‌নে আমরা চাইব।
বাবা: ও তোদের হা‌তের‌ পুতুল না। তাছাড়া ও ঐশী‌কেই ভা‌লোবা‌সে আর ওকেই বি‌য়ে কর‌বে।
ফু‌পি: অসম্ভব! যে মে‌য়ে বি‌য়ের আগেই আমার ছেলেকে আমা‌দের থে‌কে দূ‌রে কর‌ছে, সে বি‌য়ের পর তো আমার ছে‌লে‌কে একদম বশ ক‌রে ফেল‌বে। ঐ হারামজা‌দিই তো এসব শুরু করছে না? আমি কালই ওদের বা‌ড়ি যাব। তারপর ওর বা‌পের সা‌থে কথা বলব। মে‌য়ে নি‌য়ে ঠেক‌লে রাস্তার কাউ‌কে ধ‌রে বি‌য়ে কেন দি‌চ্ছে না? আমার ছে‌লের পিছ‌নে লে‌লি‌য়ে দি‌ছে কেন? মে‌য়ে নি‌য়ে ব্যবসা শুরু কর‌ছে?

মা আর মামার কথপকথন শু‌নে আমি হতভম্বের চে‌য়ে ব‌ড়ো কো‌নো শব্দ থাক‌লে সেটা হ‌য়ে‌ছি। তা‌দের কথা শু‌নে মাসুদ‌কে জি‌জ্ঞেস করলাম,
‘মা সত্যি এসব কথা ব‌লে‌ছেন?’
‘হ্যাঁ ভাইয়া। এ জন্যই তোমা‌কে বল‌তে চাই‌নি। ত‌বে এসব কথা আস‌লেই তোমার জানা দরকার। তোমার জন্য দরকার তু‌মি নি‌জের জীবন কোন সেল‌ফিস লোক‌দের জন্য বরবাদ কর‌ছো! আমি নি‌জেও ফু‌পির কথার ধরণ শু‌নে বি‌স্মিত। এটা আমার ফু‌পি না‌কি অন্য কেউ তা ঠিক চিন‌তে পার‌ছিলাম না!’

মাসু‌দের কথাগুলো শোনার পর আমার কেমন ‌যেন গলা আট‌কে আস‌ছে। হুট ক‌রে যেন প্রেশারটা ফল করছে। মাসুদ আবার বলল,
‘আজ বিকা‌লে না‌কি ফু‌পি আর সা‌মিয়া আপু ঐশী আপু‌দের বা‌ড়ি যাবেন। তারা সেখা‌নে গি‌য়ে কী কর‌বেন আল্লাহ মাবূত জা‌নেন।’
‘আচ্ছা আমি দেখ‌ছি।’

আ‌মার শরীর হঠাৎ প্রচণ্ড খারাপ লাগ‌তে শুরু করল। প্রেসার লো হওয়ার রোগ আমার আগে থে‌কেই ছিল। তার জন্য ওষুধও খাই। গত তিন চার‌দিন যাবত খাওয়া হ‌চ্ছে না। তাছাড়া এখন তো সা‌থে ওষুধও নেই। মা‌কে কল করলাম। মা কল রি‌সিভ করে কোথায় আছি? কেমন আছি? জি‌জ্ঞেস কর‌লেও আমি তার উত্তর না দি‌য়ে বললাম,
‘মা, তু‌মি য‌দি আজ ঐশী‌দের বা‌ড়ি যাও কিংবা ওকে বা ওর প‌রিবার‌কে কো‌নো রকম বা‌জে কথা ব‌লো তাহ‌লে আমি আর কো‌নো দিন তোমা‌দের কা‌ছে ফিরব না। তোমার কা‌ছে ফেরা তো দূর আমি পৃ‌থিবী থে‌কেই বিদায় নিব। আল্লাহর কসম কে‌টে বল‌ছি।’

মা‌কে কথাগু‌লো ব‌লে মাসুদ‌কে কল ক‌রে বললাম,
‘মাসুদ আমার শরীর প্রচণ্ড খারাপ লাগ‌ছে। আমা‌র কাছে আয় দ্রুত। আমি অগ্রণী ব্যাংক থে‌কে কিছুটা দূ‌রে একটা টং দোকা‌নে আছি। কাউ‌কে কিছু জানা‌তে হ‌বে না।’
তারপর কিছু যেন বল‌তে পারলাম না। চো‌খের সাম‌নে সব যেন ঝাপসা থে‌কে ক্রমশ অন্ধক‌ার হ‌য়ে ‌গেল।

চল‌বে…