শ্রাবন মেঘের বর্ষন পর্ব-০২

0
440

#শ্রাবন_মেঘের_বর্ষন🍁
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম
#পর্ব:০২

“ভরা ভার্সিটির সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!এর একটাই কারন তিহান ভাইয়াকে আবার প্রপোজ করেছি আমি’!!তবে এইবারের কাহিনিতে আমার কোনো দোষ ছিল না’!!কিন্তু এই বিষয়টা তিহান ভাইয়াকে কে বোঝাবে যে আমি ওই চিঠি দেই নি ওনাকে’!!

“কিছুক্ষণ আগে….

“খুশি মনে ভার্সিটিতে ঢুকছিলাম আমি’!!এমন সময় তিহান ভাইয়ার বন্ধু সিফাত ভাইয়া এসে বললো আমায়ঃ

——“তোমায় তিহান ডাকছে’!!সিফাত ভাইয়ার কথা শুনে আমি তো চরম অবাক তিহান ভাইয়া ডাকছে আমায় কিন্তু কেন?

“এসব ভাবতে ভাবতে আমি হাঁটতে লাগলাম তিহান ভাইয়ার যেদিকে আছে সেদিকে’!!ভার্সিটির শহীদ মিনারের সিঁড়ি উপর গোল হয়ে বসে ছিল তিহান ভাইয়াসহ তার সব বন্ধুরা’!!সবাইকে একসাথে দেখে অবাক হলাম আমি’!!সাথে কিছুটা ঘাবড়েও গেলাম’!!আমি সবার সামনে এসে দাঁড়াতেই সিফাত ভাইয়া বলে উঠল তিহান ভাইয়াকেঃ

——–“তিহান নিয়ে এসেছি ড্রামা কুইনকে….

“চিঠি হাতে মাথা নিচু করে বসে ছিল তিহান’!!সিফাতের কথা শুনেই মাথা তুলে তাকালো সে আমার দিকে’!!

“তিহান ভাইয়ার চাহনী দেখেই ঘাবড়ে গেলাম আমি’!!কারন চোখ দেখেই বুঝে গেছি উনি প্রচন্ড বেগে রেগে আছে আমার উপর’!!কিন্তু কেন…?

“তিহান ভাইয়া কিছু বলবে এর আগেই তিহান ভাইয়ার পাশে বসে থাকা রিয়া আপু বলে উঠলঃ

——-“তোমার সাহস তো কম না জুনিয়র হয়ে সিনিয়রদের প্রেমপএ দেও…

“সক্কাল সক্কাল এমন আহামরি কথা শুনে আমি যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছি’!!ফট করেই বলে উঠলাম আমিঃ

——–“যদি সিনিয়র ভাইয়ারা জুনিয়র দের প্রেমপএ দিতে পারে তাহলে জুনিয়রা কেন পারবে না সিনিয়রদের দিতে….

——-“একই তো ভুল করেছো তারওপর আবার বড় বড় কথা বলছো লজ্জা করে না….(রিয়া)

——-“আসলে কি বলবো আপু আপনার কথাটায় ভুল আছে,আর সেটা হলো আমি কোনো প্রেমপএ দেই নি…

——-“বাহ্ বাহ্ কত বড় মিথ্যা কথা নিমিষেই বলে দিলে তুমি…(রিয়া)

——–“আমি মিথ্যে বলি না…

——–“ওরে আমার সত্যি বাদী যুধিষ্ঠিরে…(রিয়া)

“বলেই তাচ্ছিল্যে হাসতে লাগলো সবাই’!!আর আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিরব দর্শকের মতো দেখতে লাগলাম সবটা’!!কোনো কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার……

“অন্যদিকে তিহান ভাইয়া সেও চুপচাপ বসে রইল’!!

“হর্ঠাৎই তিহান রেগে বলে উঠলঃ

——-“থামবি তোরা…

“ব্যস সাথে সাথে সবাই চুপ!তিহান ভাইয়ার কাজ দেখে রিয়া আপু বলে উঠলঃ

——–“তুই কিছু বলছিস না কেন এই ড্রামা কুইনকে….

“তিহান একবার নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আর একবার চিঠিটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ

——–“অবশ্যই বলবো এমনি এমনি ছেড়ে দিবো নাকি….

“বলেই এগিয়ে আসতে লাগলেন উনি আমার দিকে’!!ওনার কথা আর কাজ দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে গেছি আমি’!!কিন্তু আমি যতদূর জানি আমি কোনো চিঠি মিঠি লেখি নি তাহলে ভয় পাবো কেন?এসব ভেবে একবুক সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!তিহান ভাইয়া আমার সামনে এসে আমার মুখের উপর চিঠিটা ছুঁড়ে মেরে আস্তে বললোঃ

——–“এতদিন বাড়িতে জ্বালিয়ে হচ্ছিল না যে ভার্সিটিতেও জ্বালাতে শুরু করেছিস তুই….

——–“বিশ্বাস করুন ভাইয়া আমি কিছু করি নি….

——–“সত্যি তুই যদি কিছু করিস নি তাহলে চিঠির নিচে তোর নাম কেন?

“তিহান ভাইয়ার কথা শুনে চিঠিটার দিকে তাকালাম আমি’!!পুরো চিঠি জুড়ে শুধু লেখা তিহান আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ,
আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ,এমন করে পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে আর শেষে ইতি তোমার নাফিয়া….

“এমন আহামরি লাভ লেটার দেখে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম আমার’!!এখন কি করি এসব ভাবতে ছিলাম আমি’!!আমার ভাবনার মাঝে তিহান ভাইয়া বলে উঠলঃ

——–“কি হলো এখন কথা বলছিস না কেন চিঠির নিচে তোর নাম কেন?

———“বিশ্বাস করুন ভাইয়া আমি কি…

“আর কিছু বলার আগেই পিছন থেকে রিয়া আপু বলে উঠলঃ

——–“এত কথা বলার কি আছে তিহান, ভুল যখন করেছে শাস্তি তো তখন পেতেই হবে…

“রিয়া আপুর কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললাম আমি’!!কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম আমি তিহান ভাইয়াকেঃ

——–“বিশ্বাস করুন ভাইয়া এ কাজ আমার নয়…

“কিন্তু কে শুনে কার কথা’!!তিহান রেগেমেগে বলে উঠলঃ

——–“একই তো ভুল করেছিস তার ওপর মিথ্যে বলছিস কান ধর…

——–“বিশ্বাস করুন আমি করি নি…

——–“তুই কান ধরবি নাকি এই চিঠি পিন্সিপালের কাছে চলে যাবে…

——–“আমি সত্যি বলছি ভাইয়া….

“আমি এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনবো এর মধ্যে কান না ধরলে বলেই গুনতে শুরু করল তিহান ভাইয়াঃ

——–“এক দুই…

“আর কিছু বলার আগে আমার হাত অটোমেটিক কানে চলে গেল’!!কারন কোনোভাবে চিঠিটা পিন্সিপালের কাছে চলে গেলে আমি শেষ….

||

“বর্তমানে চুপচাপ মাথা নিচু করে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!আর আমার থেকে কিছুটা দূরত্বেই সবাই হাসাহাসি করছে ইচ্ছে তো করছে সবগুলোর মাথা একসাথে ফাটিয়ে দেই’!!

——-“কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না সেটা হলো আমার নাম করে চিঠিটা দিল কে?রাএী তো হবেই না কারন ও হলে আমায় কাল বলতো,তাহলে কাজটা করলো কে?

“বেশকিছুক্ষন পর….

——–“মিস ড্রামা কুইন ড্রামা করা শেষ হলে তুমি যেতে পারো….

“আচমকা তিহান ভাইয়ার মুখে এমন কথা শুনে রাগে গা পিওি জ্বলে যাচ্ছে আমার’!!একই তো নিজেরাই এইভাবে দাঁড় করিয়ে রেখেছে তারওপর আবার বলছে আমি নাকি ড্রামা করছি’!!কোনো কিছু না বলেই মুখ ফুলিয়ে চলে আসলাম আমি’!!

.
.

“এদিকে তিহান কিছুক্ষন নাফিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো’!!তারপর আবার আড্ডা দিতে শুরু করলো তার বন্ধুদের সাথে….

____________________________

“ভার্সিটির করিডর দিয়ে হন হন করে নিজের ক্লাসের দিকে যাচ্ছি আমি’!!আজকে কি রাএীর বাচ্চারা আসে নি নাকি,,এমন সময় দৌড়ে পিছন থেকে আসতে লাগলো রাএী আর মিতু’!!নাফিয়া,রাএী আর মিতু তিনজনই বেষ্টফ্রেন্ড’!!মিতু আর রাএীকে দৌড়াতে দেখে আমি দাঁড়িয়ে পরলাম’!!মিতু হতভম্ব হয়ে আমার সামনে এসে বললোঃ

———“কেমন দিলাম দোস্ত তিহান ভাইয়া নিশ্চয়ই এতক্ষণে তোকে একসেপ্ট করে নিয়েছে তাই না…..

“মিতুর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললামঃ

——–“মানে….

——–“মানে আবার কি দেখ আমার কিন্তু শুঁকনো থ্যাংকুতে হবে না,বড় রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াতে হবে….

———“রেস্টুরেন্টে নিয়ে পড়ে খাওয়াচ্ছি তোকে, আগে বল কি করেছিস তুই….

———“কি করেছি মানে আমিই তো সব করলাম,রাএী তো শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিল….

———“তার মানে তিহান ভাইয়াকে ওই চিঠি তুই দিয়েছিস…..

——–“তাইলে আবার কে?(রহস্যময়ী হাসি দিয়ে)

——–“তার মানে তোদের জন্য এতক্ষণ আমি কান ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম…

“মুহূর্তেই মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল রাএী আর মিতুর’!!মিতু তো এখন পালাতে পারলেই বাঁচে…

——–“দোস্ত আম্মু ফোন করে বলছিল তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে কে জানো আসবে বাসায় আমি গেলাম…(মিতু)

——–“বাসায় তো যাবি ছুনা আগে তো আমার সাথে কথা বল মাইয়া শয়তান তোর জন্য, শুধু মাএ তোদের জন্য কান ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি আজকে তোগো একদিন কি আমার একদিন…

“বলেই দৌড়াতে লাগলাম আমি!আমাকে দৌড়াতে দেখে মিতু চেঁচিয়ে বলে উঠল রাএীকেঃ

——–“আব্বে শালী ভাগ না হলে আজকে নাফিয়া আমাদের খেয়েই ফেলবে….

——-“ঠিক কইছো(রাএী)

“বর্তমানে রাএী আর মিতু একসাথে দৌড়াচ্ছে আর আমি ওদের পিছন পিছন’!!রাগে পুরো আগুন হয়ে আছি আমি’!!

——–“একবার দুটোকে ধরতে পারি তারপর দেখাবো না বলে প্রেমপএ দিলে কি হয়….

“পুরো ভার্সিটি কাঁপিয়ে দৌড়াচ্ছি আমরা তিনজন’!!এক পর্যায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ওঁরা এসে থামলো ভার্সিটির ছাঁদের উপর…..

!!

“জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে উঠল রাএী আর মিতু’!!

——-“দোস্ত আর দৌড়াতে পারবো না সরি ভুল হয়ে গেছে আর জীবনে কোনোদিন তোরে না জিগাইয়া কিছু করমু না…

——–”আজকে যা করছো তার জন্য কি হবে কান ধর….

——–“কি….

———“আমি যা করছি তোরাও তাই করবি….

——–“কিন্তু দোস্ত…

——-“আমি এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনবো তার মধ্যে কান না ধরলে এক্ষুনি তিহান ভাইয়াকে গিয়ে বলবো যা করার সব তোরা করছো আমি কিছু করি নি…

——–“প্লিজ দোস্ত এমন করিস না ভাইয়া তো আমায় মেরেই ফেলবে(রাএী)

——–“তাহলে তাড়াতাড়ি কান ধর…

———“ধরতেই হবে বোইন…

——–“হুম… ১ ২ ৩…….

——–“ধরছি তো…

“তারপর আর কি দুজন ছাঁদের উপর কান ধরে দাঁড়িয়ে রইলো’!!আর আমি কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম….

।।

“অন্যদিকে ছাঁদের দরজার বাহিরে একজন এমন দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে শেষ’!!মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসলো তারঃ

——–“অবুঝ মায়াবিনী”….🌸

__________________________________________

______________________

“বাড়িতে…..

“১ ঘন্টা লম্বা সাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!নিজেকে নিজেই আয়নায় দেখে ফিদা হয়ে যাচ্ছি’!!অথচ ওই তিহান শয়তান ডায় আমার দিকে ফিরেও তাকায় না’!!এই জন্যই বলে ভালোবাসা প্রকাশ করতে নেই সস্তা হয়ে যায়’!!নিজের গালে হাত দিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

——-“তুই কি দেখতে খারাপ নাফিয়া,কত ছেলেরাই তো তোর জন্য পাগল,অথচ তুই যার জন্য পাগল সে তোকে পাত্তা দিচ্ছে না’!!আসলে দুনিয়াটাই বড় অদ্ভুত’!!আমায় যে চায় তাকে আমি চাই না, আর আমি যাকে চাই সে আমায় চায় না’!!আচ্ছা তিহান ভাইয়া কি আধও কোনোদিন ভালোবাসবে আমায় কে জানে এসব ভাবতে ভাবতেই বিছানায় ঘা এলিয়ে দিলাম আমি’!!সাথে সাথে চোখ জোড়ায় নেমে আসলো ঘুম…

——–“সারাদিন যা দৌড়াদৌড়ি করছি তারপর তো…..

“আর কিছু ভাবতে পারলো না নাফিয়া তার আগেই সে ঘুম……
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ’!!আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️