শ্রাবন মেঘের বর্ষন পর্ব-১৬

0
347

#শ্রাবন_মেঘের_বর্ষন🍁
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম
#পর্ব:১৬

—–“আজকে আমি খুব খুশি ভাইয়া…

“কফি হাতে তিহানের পাশে বসে কথাটা বলে উঠল রাত্রি’!!আর রাত্রির কথা শুনে তিহান অবাক হয়ে বললোঃ

—–“কেন কি হইছে…

—–“কি হইছে মানে বিয়া করমু ভাইয়া…

—–“কি…😳

—–“থুরি বিয়া খামু ভাইয়া…

—–“ওহ এই ব্যাপার তা কার বিয়া খাবি তুই….

—–“কার আবার ভাইয়া তোমার আর নাফিয়ার…

—–😳😳😳

—–“ওভাবে তাকাচ্ছো কেন?

”হাসলো তিহান’!!তিহানের হাসির মাঝখানে রাত্রি আবার বলে উঠলঃ

—–“সেদিনের জন্য সরি ভাইয়া…

“রাত্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হেঁসে বললো তিহানঃ

—–it’s okk….

“তারপর দুই ভাইবোন মিলে এটা ওটা নিয়ে গল্প শুরু করে দেয়’!!

!!

“পরেরদিন ভার্সিটির একটা ক্লাস করেই বেরিয়ে যায় নাফিয়া’!!কারন তিহান তাকে যেতে বলেছে’!!ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাফিয়া’!!কারন তিহান তাকে এখানেই দাঁড়াতে বলে ছিল’!!এমন সময় মাথায় হেলমেট পরে বাইক চালাতে চালাতে নাফিয়ার সামনে এসে থামলো তিহান’!!নাফিয়া তিহানকে দেখে মুচকি হেঁসে বললোঃ

—–“কি বলবে তুমি আমায়….

“তিহান তার মাথার হেলমেটটা খুলে বলে উঠলঃ

—–“কিছু বলবো না তো…

“তিহানের কথা শুনে নাফিয়া অবাক হয়ে বললোঃ

—–“কিছু বলবে না যখন তাহলে ক্লাস মিস দিয়ে এখানে ডাকলে কেন?

—–“আগে বাইকে উঠ তারপর বলছি…

—–“কি..

—–“তুই কি কানা নাকি….

—–“না মানে…

—–“বেশি মানে মানে না করে তাড়াতাড়ি উঠে পড় বাইকে…

“নাফিয়াও আর কথা না বাড়িয়ে উঠে পরলো বাইকে’!!আজকে নাফিয়া একটা সাদা রঙের জর্জেট থ্রি-পিচ পড়েছে’!!সাথে চুলগুলো উঁচু করে বাঁধা,চোখে কাজল,ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক আর হাল্কা মেকাপ,আর তিহান ওয়াইট রঙের টিশার্ট, আর ব্লাক জিন্স!’দুজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে’!!নাফিয়া বাইকে উঠে বলে উঠলঃ

—–“আমরা কোথায় যাচ্ছি….

—–“গেলেই দেখতে পাবি…

“এতটুকু বলে গাড়ি স্ট্যার্ট দেয় তিহান’!!এদিকে নাফিয়া পরেছে বিপদে তিহানকে ধরবে কি ধরবে না বুঝতে পারছে না সে’!!নাফিয়ার অসস্থিতা দেখে তিহান বলে উঠলঃ

—–“এত না ভেবে ধরে বস আমায়…

“ব্যস অনুমতি পেয়ে গেছে নাফিয়া, মুচকি হেঁসে তিহানের কাঁধ ধরে বসলো সে’!!তিহানও আর বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে চলতে শুরু করল….

.
.
.

“একের পর এক গাছপালায় ঘেরা রাস্তা টপকে এগিয়ে যাচ্ছে তিহান’!!আর পিছনে নাফিয়া অপলক ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে আশেপাশের পরিবেশ দেখছে তার খুব ভালো লাগছে’!!আর তার সেই ভালো লাগাটাই ফুটে উঠছে তার মুখে’!!তিহান নাফিয়ার মুখ বাইকের সামনে থাকা আয়নায় দেখে মুচকি হাসছে’!!সে তো এটাই চাইছে নাফিয়া অল টাইম খুশি থাকুক…

“মুক্ত আকাশের নিচ দিয়ে বাইকে করে চলছে তাঁরা’!!মাঠ,ঘাট, ছোট বড় অসংখ্য খাল-বিল দিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে তাঁরা…

“এভাবেই অনেকক্ষণ যাওয়ার পর হর্ঠাৎই তিহান বাইক থামিয়ে দেয়’!!তারপর নাফিয়াকে বললো সেঃ

—–“বাকিটা পথ হেঁটে যাবো আমরা….

“মাথা নাড়ায় নাফিয়া’!!তারপর তিহান নাফিয়ার হাত ধরেই হাঁটতে থাকে…

___________________

“শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাত্রি আর মিতু’!!কারন মিতু কিছু ড্রেস কিনবে’!!হর্ঠাৎই রাত্রি বলে উঠলঃ

—–“ভিতরে ঢুকবি না নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি….

—–“আরে দাঁড়া না দেখি তো আগে..

——“আরে এখান থেকে কিছু দেখা যায় নাকি…

——“তা অবশ্য ঠিক বলছিস চল…

“তারপর মিতু রাত্রির হাত ধরে চললো শপিং মলের ভিতর’!!একের পর এক ড্রেস দেখছে মিতু,কোনটা রেখে কোনটা কিনবে বুঝতে পারছে না সে’!!কারন প্রায় সব ড্রেসই তার ভালো লাগছে’!!মিতুর কান্ড দেখে রাত্রি বলে উঠলঃ

—–“বোইন তুই কিছু কিনবি নাকি খালি দেখেই যাবি…

—–“কোনটা কিনি বলতো সবগুলোই তো ভালো লাগছে…

—–“আগে একটা ট্রাই করে আয়….

—–“এটা ঠিক বলেছিস কোনটা ট্রাই করি বলতো..

——“ওই লালটা দেখতে পারিস…

“তারপর রাত্রির কথা-মতোই লাল রঙের গাইন নিয়ে রাত্রি চলে চেইঞ্জিং রুমে….!!আর রাত্রি অপেক্ষা করতে লাগলো কখন রাত্রি আসবে’!!হর্ঠাৎ রাত্রির একটা ঘড়ির দোকানের দিকে চোখ গেল’!!রাত্রি এগিয়ে গেল সেদিকে’!!একটা সুন্দর সাদা পাথরের হাতের ঘড়ি পছন্দ হলো রাত্রির’!!রাত্রি দোকানদারকে ঘড়িটাকে দেখি বললোঃ

—–“ওটার দাম কত…

—–“সরি ম্যাম ওটা বিক্রি করা হয়ে গেছে…

—–“ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না ওই কোয়ালিটির আরেকটা ঘড়ি দেখান…

—–“সরি ম্যাম ওটার একটাই ছিল….

“মনখারাপ হয়ে যায় রাত্রির অসম্ভব ভালো লেগে গিয়েছিল তার ঘড়িটা’!!রাত্রি কিছুটা মন খারাপ নিয়ে বললোঃ

—–“আচ্ছা একদম সেইম ঘড়িটা কি আর পাওয়া যাবে না….

“দোকানদার কিছু বলার আগেই পিছন থেকে একটা ছেলে বলে উঠলঃ

—–“আপনার কি ঘড়িটা খুব বেশি পছন্দ হয়ে গেছে…

“রাত্রি দোকানদার বলেছে ভেবে আনমনেই বলে উঠলঃ

—–“হুম খুব,

—–“ওহ…

—–“হুম কিন্তু কি করার ঘড়িটা তো অন্য কেউ কিনে নিয়েছে…

—–“হুম জানি কিন্তু আপনি চাইলে নিতে পারেন…

“কথাটা শুনেই রাত্রি উওেজিত কন্ঠে পিছন ঘুরে বলে উঠলঃ

—–“সত্যি….

—–“হুম…

“রাত্রি পিছন ঘুরে একটা ছেলেকে দেখে চমকে উঠলো’!!আমতাআমতা করে বলে উঠল সে

—–“আপনি কে…

—–“আমি, আসলে ওই ঘড়িটা আমি কিনেছিলাম আমার বোনের জন্য….

—–“ওহ…

—–“হুম কিন্তু আপনার যখন এত পছন্দ হয়েছে তাহলে আপনি ওটা নিতে পারেন…

—–“কিন্তু….

—–“ইট’স ওকে….

“তারপর দোকানদারের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—–“ওটা ওনার নামে বিল প্রে করুন….

—–“ঠিক আছে স্যার…

“তারপর রাত্রির দিকে তাকিয়ে ছেলেটি বললোঃ

—–“এবার খুশি তো আপনি…

“হাল্কা হাসলো রাত্রি তারপর বললো সেঃ

—–“থ্যাংক ইউ…

—–“ম্যানশন নট…

“এমন সময় ডাক দিল মিতু রাত্রিকে’!!রাত্রিও আর কথা না বারিয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়েই বাই বলে চলে যায়’!!আর ছেলেটি রাত্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো…..

||

“একটা ছোট্ট বাঁশের তৈরি ছাউনি দিয়ে ঘেরা ছোট্ট কুঁড়েঘর বসে আছে নাফিয়া!’ আর তিহান নাফিয়ার কোলে মাথা দিয়ে নিশ্চিতে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে’!!আনমনেই নাফিয়া তিহানের মাথায় বিলে কাটছে’!!এই মুহূর্তে তিহান নাফিয়া দুজনেই খুব সুন্দর মুহূর্ত কাটাচ্ছে’!!মেঘলাছন্ন আকাশ,সাথে কুঁড়েঘরের জানলা ভেদ করে আসা ঠান্ডা বাতাস,সব মিলিয়ে ফুড়ফুড়ে একটা মোমেন্ট’!!হর্ঠাৎই নাফিয়ার সেই মাস্ক পরিধিত ছেলেটার কথা মনে পরলো’!!সেদিন একটু বেশি বাজে ব্যবহার করে ফেলেছিল সে’!!নেক্সট দেখা হলে সরি বলে দিবে নাফিয়া’!!

—–“আচ্ছা আমি যদি তিহান ভাইয়াকে বলি ছেলেটার সাথে কথা বলিয়ে দিতে তাহলেই তো হয়ে যাবে..(মনে মনে)

“এসব ভেবে হর্ঠাৎই বলে উঠল নাফিয়াঃ

—–“একটা কথা বলবো ভাইয়া…

—–“না…(চোখ বন্ধ করেই)

“তিহানের কথা শুনে নাফিয়া অবাক হয়ে বললোঃ

—–“কেন?

—–“আজ থেকে তুই আমায় ভাইয়া ডাকলে তোর কোনো কথাই শুনবো না আমি…

“তিহানের কথা শুনে নাফিয়া অবাক হয়ে বললোঃ

—–“ওহ এই ব্যাপার আচ্ছা ঠিক আছে আজ থেকে আর তোমায় ভাইয়া ডাকবো না….

—–“হুম এখন বল কি বলবি…

—–“তোমাদের ক্লাসে কি কোনো মাস্ক পরিধিত ছেলে আছে…

“নাফিয়ার কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলো তিহান’!!শোয়া থেকে উঠে বসলো সে’!! তারপর বললো তিহানঃ

—–“কি,কে…

—–“না মানে ছেলেটা ভার্সিটিতে সবসময় মাস্ক আর কালো চশমা পরে যায় তোমাদের ক্লাসেই পড়ে,…

—–“ওহ হুম আছে তো কি হয়েছে…

—–“না মানে ছেলেটার সাথে একটু কথা বলিয়ে দিবে আমায়…

—–“কেন…

—–“না মানে সরি বলতাম….

—–“কেন কি করছোস তুই….

“তারপর ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সেদিনের হয়ে যাওয়া সব ঘটনা বললো তিহানকে’!!নাফিয়ার কথা শুনে তিহান বলে উঠলঃ

—–“তোকে আমারও কিছু বলার আছে….

—–“হুম বলো না….

“তিহান কিছু বলবে এরই মধ্যে মেঘের গর্জন দিয়ে মুসল ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল’!!নাফিয়া তো বৃষ্টি দেখেই চলে যায় বাহিরে’!!বৃষ্টি বরাবরই ভালো লাগে তার’!!নাফিয়া গিয়ে দাঁড়িয়ে পরল কুঁড়েঘরের দরজার সামনে’!!হাত বারিয়ে দিল সে বাহিরের দিকে’!!বৃষ্টির ফোঁটা এসে পরতে লাগলো নাফিয়ার হাতে’!!ভালো লাগছে তার’!!এমন সময় পিছন থেকে নাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে ওর হাতের নিচ দিয়ে ওর হাত ধরলো তিহান’!!ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে হাল্কা কেঁপে উঠল নাফিয়া’!!পরক্ষণেই মুচকি হাসল সে’!!হর্ঠাৎই তিহান নাফিয়ার কানের কাছে তার মুখ নিয়ে বললোঃ

—–আজ “শ্রাবন মেঘের বর্ষন” দিনে তোমার কানে কানে বলছি মায়াবিনী তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি,প্লিজ কখনো ভুল বুঝে দূরে সরে যেও না আমার,না হলে সত্যি পাগল হয়ে যাবো আমি,তোমায় যে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি “মায়াবিনী”…..

“তিহানের কথা শুনে নাফিয়ার শরীর শিহরিত হয়ে যায়’!!এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে তার ভিতর’!!হুট করেই নাফিয়া তিহানের দিকে ঘুরে একটু উঁচু হয়ে ওর কানে কানে বললোঃ

—–“আমিও তো তোমায় অনেক ভালোবাসি কেন ছেড়ে যাবো তোমায়,তুমি কখনো অভিমান করে দূরে সেরে যেও না,শাস্তি দিও মেনে নিবো কিন্তু প্লিজ কখনো ছেড়ে থাকার কঠিন সিদ্ধান্ত নিও না,তোমায় এওতো এওতো ভালোবাসি আমি…

“বলেই নাফিয়া খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তিহানকে’!!তিহানও মুচকি হেঁসে জড়িয়ে ধরল নাফিয়াকে’!!এক অজানা ভয় এসে গ্রাস করলো তাকে’!!নাফিয়া ভুল বুঝবে না তো তাকে…..

“বাহিরে মুসল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে,সাথে মেঘের গর্জন!’সব মিলিয়ে এক অসাধারণ মোমেন্ট……

__________________________________________

______________________

“মাঝখানে কাটলো দু’দিন!নাফিয়া ইদানীং ওই মাস্ক পরিধিত ছেলেটার কথা ভাবছে খুব’!!তার সাথে তিহানকেও বার বার বলছে সে ছেলেটার সাথে একবার কথা বলিয়ে দিতে’!!কারন নাফিয়া ভিতরে ভিতরে এক আনিজি ফিল হচ্ছে’!!সরি বলতে না পারলে ভালো লাগবে না তার’!!এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল তার’!!নাম্বারটা দেখেই তার মনে পরে গেল এটা তো সেই মাস্ক পরিধিত ছেলেটার নাম্বার’!!এই মুহূর্তে নাফিয়ার নিজেকে বোকা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না’!!ছেলেটার নাম্বারই ছিল তার কাছে’!!একবার নাম্বারটার কথা মাথায় আসলো না তার’!!নাফিয়া নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে ফোনটা তুলে বলে উঠলঃ

—–“হ্যালো…

“অপরপাশের ব্যক্তি উওেজিত কন্ঠে বলে উঠলঃ

—–“আমরা কি সেদিনের সেই জায়গাটায় মিট করতে পারি….

“ছেলেটি যে হুট করেই এমন কিছু বলবে এটা একদমই অজানা ছিল নাফিয়ার’!!বেশি কিছু না ভেবেই বলে উঠল নাফিয়াঃ

—–“ঠিক আছে আমারও কিছু বলার আছে আপনাকে….

—–“ঠিক আছে কাল দেখা হচ্ছে…

—–“হুম…

“এতটুকু বলতেই ফোনটা কেটে দেয় মাস্ক পরিধিত সেই ছেলেটি’!!এদিকে নাফিয়া কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বললোঃ

—–“আমার সাথে ওনার কি কথা থাকতে পারে….

“পরেরদিন……
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………..