শ্রাবন মেঘের বর্ষন পর্ব-১৫

#শ্রাবন_মেঘের_বর্ষন🍁
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম
#পর্ব:১৫

—–“আমার হাতের বাঁধনটা কে খুলবে?”

“তিহানকে জড়িয়ে ধরেই কথাটা বলে উঠল নাফিয়া’!!তিহান কিছুটা ভরকে গিয়ে বললোঃ

—–“আমিই খুলে দিবো…

“তারপর তিহান নাফিয়ার হাতের বাঁধন খুলে দিলো’!!বাঁধন খুলতেই নাফিয়া বলে উঠলঃ

—–“তার মানে এতদিন শুধু শুধুই কষ্ট পেয়ে গেলাম…

—–“তুই যে বোকা তার জন্য….

“তিহানের কথা শুনে নাফিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বললোঃ

—–“কি আমি বোকা…

——“বোকা নয় তো কি,শুধু শুধু নিজেও কষ্ট পেয়েছিস আর আমায়ও কষ্ট দিসোছ তুই….

—–“সেটা ঠিক সরি জামাই….

“নাফিয়ার কথা শুনে হাসলো তিহান’!!তারপর শীতল কন্ঠে বলে উঠল সেঃ

—–“একটা কথা মাথায় রাখবে সবসময় যে…

“অনেক সময় আমরা চোখের সামনে যেটা দেখি সেটা সত্যি হয় না!’আগে সত্যি মিথ্যের যাচাই করবে তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিবে বুঝতে পেরেছো….(নাফিয়ার গাল টেনে)

“তিহানের কাজে আর কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললোঃ

—–“হুম বুঝতে পেরেছি….

—–“হুম এখন তাহলে যাওয়া যাক!’

——“হুম…

“তারপর তিহানের আর নাফিয়া একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো’!!আজকে তাঁরা খুব খুশি’!!অনেকদিনের ভালোবাসা সত্যি হলো আজ….

“হর্ঠাৎই তিহান বলে উঠলঃ

—–“এখন তাহলে বলো কালকের ছেলেটা কে ছিলো….

“তিহানের কথা শুনে নাফিয়া হাল্কা হেঁসে বললোঃ

—–“ওহ রিক আমার কাজিন, বলতে গেলে আমরা সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু….

—–“ওহ তাই এতো হেঁসে হেঁসে কথা বলে ছিলে…

—–“তুমি জানো না রিক কতটা হাসি খুশি ছেলে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো, দেখো ভালো লাগবে,আমার ছেলের ফ্রেন্ডের ভিতর রিকই একমাএ যার সাথে আমি খুব ক্লোজ,আর ও আমার সাথে খুব ক্লোজ, ওহ খুব ভালো আমার অনেক খেয়াল রাখে,কাল তো আমার জন্য এসেছিল, ওই তোমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার পর সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকতাম রুমে তাই মা ওকে ফোন করে আসতে বলেছিল….

—–“ওহ…

—–“হুম….

“এই মুহুর্তে রিককে নিয়ে ভাবতে চায় না তিহান’!!তাই হাল্কা হেঁসে রিককে মাথাটা থেকে ঝেরে ফেলে দিলো সে’!!কারন আর যাই হোক নাফিয়া যে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে সে বিষয়ে তিহানের কোনো সন্দেহ নেই’!!তিহান মুচকি হেঁসে নাফিয়া হাতে আলতো করে চুমু কাটে’!!

“তিহানের কাজে নাফিয়া অবাক হয়ে বললোঃ

—–“এটা কি ছিল…

—–“কিছুই না….

“তারপর নাফিয়া তিহান হেঁসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেই হাঁটতে শুরু করল’!!একটা পুরনো বাড়ির ভিতরে নিয়ে এসেছিল তিহান নাফিয়াকে’!!জায়গাটা পুরোই গাছপালায় ভরা’!!নাফিয়া আর তিহান তারপর গাড়ি করে চলে গেল…..

||

“ভার্সিটির মাঠের সেই গাছের নিচে মনমরা হয়ে বসে আছে মিতু আর রাত্রি’!!এর দুটো কারন এক নাফিয়া আজ ভার্সিটি আসে নি আর দুই নাফিয়ার জন্য তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে’!!তাঁরা জানে তিহানের জন্য নাফিয়া এতটা চুপচাপ হয়ে গেছে’!!গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে রাত্রি আর মিতু’!!এমন সময় দৌড়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো নাফিয়া’!!ওদের দুজনের মাঝখানে বসে উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল সেঃ

—–“ওই তোরা দুজন মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন স্বামী মরছে নাকি তোদের…

“নাফিয়ার এমন কথা শুনে রাত্রি, মিতু দুজনেই হকচকিয়ে উঠে বললোঃ

—–“হর্ঠাৎ এত উওেজিত কেন তুই, কি হয়েছে….

—–“কি হয় নি সেটা বল…

“নাফিয়ার কথা শুনে রাত্রি মিতু রীতিমতো অবাক হয়ে বললোঃ

—–“মানে…

—–“মানে উড়ে দোস্তরা আজ আমি খুব খুশি…

“বলেই রাত্রি মিতুর গলা জড়িয়ে ধরল নাফিয়া’!!রাত্রি মিতু নাফিয়ার কথার আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলঃ

—–“তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি…(রাত্রি)

—–“আমারও তাই মনে হচ্ছে তিহান ভাইয়ার শোকে মনে হয় পাগল হয়ে গেছে নাফিয়া…(মিতু)

—–“আমি সত্যি পাগল হয়ে গেছি এত খুশি লাগতে আছে যে কি বলবো তোদের….

—–“তা খুশির কারনটা কি..(রাত্রি)

—–“হুম সব বলবো তোদের….

“তারপর নাফিয়া তার সাথে হয়ে যাওয়া সব ঘটনা বললো’!!সব শুনে তো ওরা কি রিয়েকশন দিবে ভুলে গেছে শুধু হা হয়ে তাকিয়ে রইল নাফিয়ার মুখের দিকে’!!হর্ঠাৎ মিতু দাঁড়িয়ে বলে উঠলঃ

—–“তুই তো তাইলে সত্যি পাগল,ওহ মাই গড এমন কিছু একটা হতে পারে এটা তো একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল আমার….

—–“তার মানে শেষে কিনা এই সাতচুন্নিটাই আমার ভাবি হবে ওহ নো…(রাত্রি)

“রাত্রির কথা শুনে নাফিয়া হাল্কা গম্ভীর আওয়াজে বলে উঠলঃ

—–“কি বললি তুই….

“রাত্রি হাল্কা হেঁসে নাফিয়ার গাল টেনে বললোঃ

—–“ওরে মাই ভাবিজি আমি তো ভাবতেই পারছি না,আমার তো ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে…

“রাত্রির কথা শুনে মুচকি হাসে নাফিয়া’!!ওদের কথার মাঝখানে মিতু বলে উঠলঃ

—–“কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে…

“মিতুর মুখে এমন কথা শুনে রাত্রি নাফিয়া অবাক হয়ে বললোঃ

—–“কেন…

—–“না নাফিয়ার যখন তিহান ভাইয়ার সাথে বিয়ে হবে তখন তিহান ভাইয়ার লাইফটা পুরো তেজপাতা হয়ে যাবে,আমার তিহান ভাইয়ার জন্য হেব্বি কষ্ট লাগতে আছে রে….

“মিতুর মুখে এমন আহামরি কথা শুনে রাত্রি হেঁসে দিল’!!আর নাফিয়া মিতুর দিকে তেড়ে এসে বললোঃ

—–“কি বললি তুই আমি তিহান ভাইয়ার লাইফটাকে তেজপাতা বানিয়ে দিবো তোরে তো আমি…..

—–“এই রে পাগলী খেপছে রাত্রি আমায় বাঁচা….

“এই বলে তুমুল বেগে দিল দৌড় মিতু’ আর নাফিয়া মিতুর পিছন পিছন’!!

—–“দাঁড়া কইতাছি আজ তোর একদিন কি আমার একদিন….

—–“আরে বোইন খেপলি কেন আমি তো মজা করে বলছিলাম…

—–“আমিও মজা করেই তোর পিছনে দৌড়াতে আছি,দাঁড়া কইতাছি…

—–“আমি এহন বাসায় যামু, কাল ছাড়া তোর সাথে মিট করতে আছি না…..

—–“তুই বাসায় গেলে তোরে তোর বাসায় গিয়া মারমু….

—–“বোইন মারিস না আমি এহনো বিয়া করি নাই…

—–“তোর বিয়ার গুষ্টি কিলাই দাঁড়া তুই…

“মিতু দৌড়ে একদম গেট পর্যন্ত চলে এসেছে’!!হর্ঠাৎই পিছন ঘুরে নাফিয়াকে ভেংচি কেটে বললো সেঃ

—–“নাফিয়া হেরো ধরতে পা…

“আর কিছু বলার আগেই সামনের থাকা এক ব্যক্তির সাথে তুমুল বেগে ধাক্কা খায় মিতু’!!সামনের ব্যক্তিটিও আচমকা এমন কিছু হওয়ার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিল না’!!তাই তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় সে নিচে আর মিতু তার উপরে…

“আচমকা এমন কিছু একটা হবে এটা একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল মিতুর’!!ভয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠল সেঃ

—-“ওহ মা গো আমার কোমড় গেল রে…

—–“তোমার কোমড় নয় আমার কোমড়…

“নিচের ব্যক্তির মুখের কন্ঠটা চেনা চেনা লাগতেই মিতু তাকালো ছেলেটির দিকে’!!রিককে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে বলে উঠল সেঃ

—–“আপনি….

—–“হুম আমি,তুমি তো আমার কোমড়টাই ভেঙে দিলে মনে হয়….

—–“ওহ সরি সরি আসলে আমি দেখতে পাই নি আপনাকে…

—–“তা দেখবে কেন চোখ তো সামনে ছিল তোমার…(ধমক দিয়ে)

—–“আরে সরি বললাম তো রেগে যাচ্ছেন কেন?

—–“আগে উঠো আমার উপর থেকে তারপর বলছি…

“রিকের কথা শুনে তাড়াতাড়ি ওর উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো মিতু’!!মিতু উঠতেই রিকও উঠে দাঁড়ালো তারপর জামাকাপড় ঝারতে ঝারতে বললো সেঃ

—–“ভার্সিটির ভিতর বসে কাবারি খেলছিলে নাকি যে ব্যাংঙ এর মতো লাফ দিয়ে এসে পরলে আমার গায়ের উপর…

—–“আরে কাবাবি খেলতে যাবো কেন ওই নাফিয়া দৌড়াচ্ছিল…

“ততক্ষণে নাফিয়া আর রাত্রি এসে হাজির ওদের সামনে’!!নাফিয়া হাসতে হাসতে বলে উঠলঃ

—–“একদম বেশ হয়েছে আমাকে হেরো বলা না…

“মাথা চুলকায় মিতু’!!রিক কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলঃ

—–“কি হয়েছে রে নাফিয়া….

—–“সব বলবো তোকে আমায় নিতে এসেছিস তো…

—–“হুম…

মাথা নাড়িয়ে বলে রিক’!!আর রিকের কথা শুনে নাফিয়া হাল্কা হেঁসে বললোঃ

—–“তাহলে চল যেতে যেতে সব বলবো তোকে…

“রিকও আর কথা বারালো না’!!মুচকি হেঁসে বললো সেঃ

—–“ঠিক আছে চল….

“তারপর নাফিয়া, রাত্রি মিতু কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল রিকের সাথে’!!রিক যাওয়ার আগে একবার মিতুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,যেটা মিতু দেখে নি….

______________________

“বিকেল_৫ঃ০০টা…..

“ছাঁদের এক কিনারায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে নাফিয়া’!!আর ওর পাশে বসে আছে রিক অতি আগ্রহ নিয়ে! কারন এখন নাফিয়া তাকে সব কথা বলবে’!!রিক ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলে উঠলঃ

—–“এখন তো বল অনেক এক্সাইটিং এ আছি কিন্তু….

—–“এত হতাশ হচ্ছিস কেন?

—–“হতাশ হবো না কাল থেকে আমি অপেক্ষা আছি তোর কি হয়েছে তা জানার জন্য,ওয়ান সেকেন্ড আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোর আশিকের কি খবর বলতো….

“রিকের কথা শুনে নাফিয়া অবাক হয়ে বলে উঠলঃ

—–“কি…

—–“আরে কি যেন নাম বলেছিলি তুই হ্যাঁ মনে পরছে তিহান ব্রো,কেমন আছে সে তোর ভালোবাসা একসেপ্ট করেছে নাকি,ওহ এইবার বুঝছি নিশ্চয়ই তিহান ব্রো একসেপ্ট করে নি তাই ঠুস হয়ে পড়ে আছিস…

“রিকের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বলে উঠল নাফিয়াঃ

—–“তোর তিহানের কথা মনে আছে…

—–“আরে তুই কিছু বললে আমি ভুলে কি করে যাবো,আর এক্সাইটিং এ না রেখে তাড়াতাড়ি বলে ফেল বোইন…

“রিকের কথা শুনে নাফিয়া ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সব বলতে শুরু করল রিককে’!!সাদা ধবধবে মেঘলা আকাশের নিচে বসে আছে তারা,ঠান্ডা শীতল মেশানো বাতাস বইছে,সাথে সূর্য্যি মামাও আর আলো রশ্মি ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে ব্যস্ত….

“নাফিয়ার সব কথা শুনে রিক হা হয়ে বললোঃ

—–“ওরে এ তো দেখি পুরো সিনেমার কাহিনী…

“হাসলো নাফিয়া’!!তারপর আরো কিছুক্ষন দুজন মিলে গল্প করে চলে গেলো নিচে…….

__________________________________________

______________________

– “Hai Dil ye mera mujha har dam ye pusta Q hay muja Tujsa itni bawbafa…

– “Q tari hasrat hay, har korhis sa barker muja Q nam terahi rahati juba…

– “sathi tara ban jauo Q hay a junu
har asu tara pijauu or dadu sukur….

– “har din tujko chahu tari rahat taku…
apni bahoma tujko main Salaamat rakhu…

.
.
.

“রাতের জোৎসা ভরা আলোর সন্ধ্যায়…
হাতে গিটার নিয়ে বেলকনিতে বসে আনমনেই গানটা গাইছে তিহান’!!আজকে সে খুব খুশি,তাই তো খুশি মনে গান গাইছে সে’!!এমন সময় কফি হাতে বলে উঠল রাত্রিঃ

—–“ভাইয়া….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে……….