ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব-৮+৯

0
403

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_আট[ গত পর্বে একটা ভুল করেছিলাম ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি কে অর্ধেক লিখে দিলাম ঢাকা ইউনিভার্সিটি! যার সংক্ষিপ্ত রুপ ডুয়েট! এই ধরনের গুরত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে লেখার মধ‍্যে এই ধরনের ভুল করা অনেকটাই বোকামি এবং হাস‍্যকর ও বটে যাইহোক ক্ষমা করে দিবেন সবাই! ]

পরপর দুবার বলল -” হ‍্যালো, “হ‍্যালো!
বিরক্ত হয়ে বলল -” কথা বলছেন না কেন? নারী কন্ঠ শুনলে ভালোই লাগে না? বিরক্ত করার একটা লিমিটেশন আছে! ফোন ধরে রেখে কোন কথা বলছেন না কেন?” আপনার কোন কাজ না থাকলে ও আমার কাজ থাকতে পারে!”অপর পাশ থেকে কিছুই শুনা গেল না। শুধু শুনতে পাওয়া গেল নিশ্বাস আর কিছু নেড়েচেড়ে উঠার শব্দ।

তারপ ফিক করে হেসে উঠল মোবাইলের অপরপান্ত থেকে একটি মেয়ে কন্ঠ!

স্নিগ্ধা চমকে উঠলো, এবার তার মেজাজ চরা হয়েগেল।
সেই মেয়েটিকে ধমকে উঠলো –

–” তুই? পূরবী এটা কেমন মজা? এভাবে কেউ ফোন দিয়ে বিরক্ত করে? তোর পাশে আর কে আছে রে?”

–” ধরে ফেললি? বাবাহ কি ধমকই না দিলিরে তুই! এই তোকে কেউ এভাবে জ্বালায় নাকি সবসময়?”

–” না, তুই জ্বালিয়েছিস, আর কেউ জ্বালায় না!
বাই দা ওয় তোর সাথে আর কোন বাদড় আছে রে?”
স্নিগ্ধার কথা শুনে পূরবী পাশে থাকা তার কাজিনরা খিলখিল করে হাসছে।

–” এই তো আবার হাসছে, বলবি তুই, কে তোর পাশে?”

–“আমার ফুফাতো বোনেরা এসেছে, দুটোই জমজ আর পাজি, আমি তোকে ফোন করবো একজন আমার মুখ চেপে ধরেছে তো অন‍্যজন মোবাইল নিয়ে রেখেছে।
কি পরিমাণ বিচ্ছু ভাবছিস?”

–” ওহ! আন্টি কোথায় রে?”

–” আম্মু কাজ করছে,” বাসায় অনেক মেহমান!

–” ওহ,”

–” তোর বাসায় কেউ নেই? ”

–” না, মামি তো সন্ধ‍্যা ছয়টা নাগাধ বাসায় ফিরে আজ কি হয়েছে কে জানে, মনে হয় কাজ পরেগেছে তাই আসতে দেরী হচ্ছে হয়তো!”

–” আচ্ছা রাখি, নাম্বার টা ঠিক আছে কিনা দেখার জন‍্য চেক করলাম!”

–” আমাকে ভরকে দিয়ে চেক করছোস, তোর নাম্বার যদি আমি টাকায় আর বিলবোর্ডে না টাঙ্গিয়ে দি দেখিস তুই!”

–” এই না, না, এমন করিস না প্লিজ! আমাকে আব্বু মোবাইল ধরতে দেয় না! এইভাবে ডিস্টার্ব করলে মোবাইল দূরে থাক ঘর থেকে বের হতে দিবে না!”

–” না দেওয়ারই কথা, তুই দেখতে কম সুন্দর!”

–” তোরে থাপ্রামু অসভ‍্য মাইয়া, তুই কি কম সুন্দর?

–” আমি নাকি কালো, বুঝেছো জান!”
শ্রাবণের কাছে আলাদা করে চাবি ছিল বাসার লকের ।
সে বাসায় এসেছে ঠিকই কিন্তু স্নিগ্ধার সঙ্গে দেখা করেনি। স্নিগ্ধার রুম থেকে কথার শব্দ পেয়ে রুমের সামনে এসেই তার টনক নড়ল। কি বলছে এই বিচ্ছু?
এর ও প্রেমিক আছে? শ্রাবণ আরেকটু এগিয়ে এলো দরজার পাশে।
স্নিগ্ধা উঠে দাড়ালো হাটতে হাটতে বলল-

–” সত‍্যি, সবাই আমাকে এই কথাটাই বলে? বিশ্বাস হয়না?
অপর পাশ থেকে পূরবী বলল—“কি যে বলিস না তুই কালো হলে অন‍্যরা কি?”
স্নিগ্ধা হাটতে হাটতে থেমেগেল। দরজার নিচে ছায়া দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট বুঝাচ্ছে কেউ দাড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে দরজার পাশে চুপি চুপি দাড়ালো ইশশ, দরজাটার যদি লুকিং গ্লাস থাকতো তাহলে দেখতে পারতো শ্রাবণ আছে না অন‍্য কেউ? স্নিগ্ধা একটা কাজ করল এই সময়টা মামি আসে, মামা আসেনা, স্নিগ্ধা পূরবীর কল কেটে দিয়েছে।মামির মোবাইলে কল দিল। না ছায়া তবুও সরেনি তারপর বুঝলো এ নিঘার্ত শ্রাবণ স্নিগ্ধা এবার একটা কাজ করল।

জোরে জোরে শ্রাবণকে শুনিয়ে বলল-

–” জান, সোনা, এই তো সবুর করো আসছি আমি তোমার কাছে। কটাদিন নানাভাইয়ের কথা রক্ষা করি তারপর তোমার কাছে চলে আসবো।”
শ্রাবণের রাগ উঠলো, এইটুকুনি মেয়ে তার নাকি প্রেমিক আছে! আবার তাকে জান, সোনা বলছে। শ্রাবণ দরজায় কড়া নাড়ার আগেই কলিংবেল বেজে উঠলো।
সে দরজা খুলার জন‍্য সামনে এগিয়ে গেল। আর স্নিগ্ধা দরজা খুলে দেখল শ্রাবণ দরজা খুলে দিয়েছে।
স্নিগ্ধার মুখে হাসি ফুটে উঠলো মনে মনে বলল –

–” তুই প্রেম করতে পারিস, আমার বুঝি প্রেমিক থাকতো না! আমার পিছনে এখনো লাইন ধরে আছে। হুহ, আমি ও কম কিসে! নিজেকে বাহ!বাহ! দিতে স্নিগ্ধা এগিয়ে এলো সামনে কিন্তু হঠাৎই তার হাসি মুখটা কেমন মলিন রুপ ধারণ করল। ছোটমামিকে দুজন মহিলা ধরে আছে। পিছনে মামা দাড়িয়ে আছে চুলগুলো এলোমেলো। মামির দিকে তাকিয়ে দেখল মামিও কেমন নেতিয়ে আছে। স্নিগ্ধা দৌড়ে সামনে গেলো বলল-

–” কি হয়েছে মামির? মামা মামিকে এভাবে সবাই ধরে রেখেছে কেন? মামির হঠাৎ কি হলো?”

–” কি হয়েছে কিছুই জানিনা মামনি, হঠাৎ করে ফোন আসলো তোমার মামির নাকি প্রেশার বেড়েছে। ঘুরে পরে গিয়েছে, আমি যেয়ে ডাক্তারের কাছে নিলাম সেখানে বলল প্রেশারের জন‍্যই নাকি এমন হয়েছে , ঠিক হয়ে যাবে। তুমি চিন্তা করো না!”

–” সাজ্জাদ ভাই পুষ্প আপাকে ঘরে নিয়ে যাই চলেন আপা খুব দূর্বল মনে হয়।” সবাই মিলে ধরাধরি করে পুষ্পিতাকে নিয়ে তাদের শোবার ঘরে বিছানায় শুইয়ে দিল। পুষ্পিতা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে স্নিগ্ধা তার পাশে বসে বলল-

–” মামি এত কাজ করে সংসারে সময় দিতে গিয়ে নিজের কি হাল করছো তুমি?” কবে বুঝবে নিজের ভালোটা?” পুষ্পিতা চোখ মেলল না। স্নিগ্ধা আর কথা বলল না মামি এমন কেন? মানুষের খোটার ভয়ে জান লাগিয়ে দিচ্ছে যেন কেউ তাকে বাঞ্জা বলে খোটা না দেয়। কেউ যেন না বলতে পারে তুই অলক্ষী! তোর কোন গুন নেই! এই ভয়েই তো মামি সারাদিন কাজ শেষে বাসায় এসে ঘরদোর আগলে রাখে। কেউ বুঝে না মামির ব‍্যাথাটা! স্নিগ্ধা মামির চোখদুটো আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মনেমনে বলে মামি তুমি ভালো হয়ে যাও মামি! আমার যে আর মা বলে বুকে আগলে রাখার মত কেউ নেই!

মামা আর শ্রাবণ মিলে যারা এসেছিল সবাইকে পাঠিয়ে দেয় বাইরে। মামা বাড়ির সবাইকে ফোন করে জানাচ্ছে কি দূর্ঘটনাই না হতে যাচ্ছিল সিড়ি থেকে পরেযেত যদি সেই মূহুর্ত অফিসের কলিগরা তার পাশে না থাকতো।
” পুষ্পিতা একদম নিজের খেয়াল রাখতে জানেনা! পুষ্পিতা শুধু অফিস করে আর বাসায় ফিরে একা একা কাজ করে কাজের লোক রাখলে নাকি তার ভালো লাগেনা। এখন তো স্নিগ্ধা আছে সে ও মাঝে মাঝে কাজ করে। স্নিগ্ধার উপর রেগে আছে মামা তার উপর শ্রাবণ তো আছেই। সন্ধ‍্যার ঘটনার পর মনে হলো একবার ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিবে গালে। কিন্তু না এখন আর সিনক্রিয়েট করা যাবে না। চাচি অসুস্থ এই সময় তো আর স্নিগ্ধাকে ধরতে ও পারবে না!
চুপ করে দাত খিচেঁ সে স্নিগ্ধার সামনে চাচুর সঙ্গে দাড়িয়ে ছিল। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকায়নি সে এখন তার মামিকে নিয়ে ব‍্যাস্ত। মনে প্রাণে চাইছে মামি সুস্থ হোক!

কিছুক্ষণ পরই পুষ্পিতা চোখ খুলল, দূর্বল চোখ জোড়া আশেপাশে বুলিয়ে স্নিগ্ধাকে দেখল তার পাশেই বসে আছে। মেয়েটার মুখ দেখে বুঝল খুব ভয় পেয়েছে।
পুষ্পিতা স্নিগ্ধাকে অভয় দেওয়ার জন‍্য অনেক কষ্টে বলল-

–” আমি ঠিক আছি তো,” সেই কখন থেকে তোর মামা বকল, তুই ও বকবি আমাকে?”
ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় পুষ্পিতার কথাগুলো বলতে যে খুব কষ্ট হয়েছে স্নিগ্ধা বুঝল। স্নিগ্ধা উঠেগেল মামাকে ডেকে আনতেই মামা পাশে এসে বললেন-

–” কিসের অভাব আমাদের? কিসের অভাব? সন্তান নেই বলে টাকা যোগাড় করছো যেন সবাই টাকার লোভে শেষ বয়সে তসামত করবে তার জন‍্য?”
পুষ্পিতার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরল।
চোখের পানিগুলো টলটলে হয়ে গড়িয়ে পরল গাল বেয়ে।

–” আমি কখনো বলেছি আমার টাকা লাগবে?
বলেছি তুমি অকর্ম? বলেছি তুমি কাজের নও?
বলেছি নিজের টাকায় সব করো আমার টাকা ধরবে না? আমি তো তেমন কিছু চাইনি! আমি চেয়েছি সুখ আমাদের সুখ! সুখের জন‍্য সবদিক লাগে না পুষ্প!
মানুষের কথা শুনতে গিয়ে তুমি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো!
আমার কথা ও তুমি ভাবলে না! এই মেয়েটাকে দেখো, মা হারা মেয়েটা তোমার জন‍্য চিন্তায় পরে গিয়েছে। তারদিকে চেয়ে দেখেছো? ”

চলবে।

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_নয়
[#মান_অভিমান]

–” আমি কখনো বলেছি আমার টাকা লাগবে?
বলেছি তুমি অকর্ম? বলেছি তুমি কাজের নও?
বলেছি নিজের টাকায় সব করো আমার টাকা ধরবে না? আমি তো তেমন কিছু চাইনি! আমি চেয়েছি সুখ আমাদের সুখ! সুখের জন‍্য সবদিক লাগে না পুষ্প!
মানুষের কথা শুনতে গিয়ে তুমি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো!
আমার কথা ও তুমি ভাবলে না! এই মেয়েটাকে দেখো, মা হারা মেয়েটা তোমার জন‍্য চিন্তায় পরে গিয়েছে। তারদিকে চেয়ে দেখেছো? “তুমি সবার কথা নিয়ে ভাবো,সবাই তোমার দূর্বলতাটাকে কাজে লাগাবে ভেবে তুমি বারবার ভেবে নিয়েছো।কেন বারবার এসব ভাবো? আমার পরিবার কি এ নিয়ে কিছু বলেছে? তুমি নিজের মত চলছো, নিজের মত সংসার গুছিয়ে রেখেছো। প্রত‍্যেকটা নারীই তার সংসার আগলে রাখতে চায়,চাইবেই। তাই বলে নিজের শরীর কে দূর্বল করে? তোমার সন্তান নেই বলে তুমি আফসোস করছো? দেখো আমার ঘর ভর্তি আমার সন্তান!
আমার রক্ত! স্নিগ্ধাকে কাছে টেনে এনে বললেন-

–” এ আমার মা! এর শরীরে আমার বোনের রক্ত বইছে
আমার রক্ত! ”
শ্রাবণকে কাছে টেনে এনে বললনে –

—” ও আমার রক্ত! আমার ভাইয়ের ছেলে! তাতে কি?
আমার রক্ত ওর মধ‍্যে বইছে! রক্ত আর বংশ প্রদীপের চিন্তা করছো? সন্তান জন্ম দিয়েও অনেকে সন্তান লালন করতে জানেনা!
সন্তান জন্ম দিলেই পিতা আর মাতা হওয়া যায় না!
আমার কোন ইচ্ছে নেই, সন্তান নিয়ে, আমার সহধর্মীনি আছে!

পুষ্পিতা তার চোখের পানিগুলোকে মুছে বললেন –

–” সাজ্জাদ আর বলো না, আমার ভুল হয়েগেছে।
আমি আর কখনো এমন করবো না। সব সময় শরীরের খেয়াল রাখবো। কখনোই তোমার অবাধ‍্য হবো না।
তবুও তুমি আমাকে এভাবে কথা শুনিও না। আমার নিজেকে খুব অসহায় লাগে তুমি যখন আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেও, আমার খুব ভয় করে, আমি পারিনা এগুলো সহ‍্য করতে।সাজ্জাদ সাহেব এ নিয়ে আর কথা বাড়ালেন না।পুষ্পিতার রুম থেকে স্নিগ্ধা রান্নাঘরের দিকে চলেগেল।সেখানে গিয়ে পুষ্পিতার জন‍্য তেতুল পানি গুলিয়ে নিয়ে আসল। প্রেশার বেড়েগেলে নানুর জন‍্য তেতুল পানি, লেবু পানি, কখনো আচার নিয়ে খাইয়ে দিত। আজ ও তার ব‍্যাতিক্রম করেনি সে।

দৌড়ে চলে এলো পুষ্পিতার কাছে শরবতটা নিয়ে। খাইয়ে দিল পুষ্পিতাকে বসিয়ে দিয়ে। পুরো রাত চিন্তায় ঘুমাতে পারেনি কেউ। একদিকে সাজ্জাদ আছে স্ত্রীর চিন্তায় মগ্ন। আর শ্রাবণ আছে স্নিগ্ধা আর ছোট চাচির চিন্তায়।

__________________________________

সকালে স্নিগ্ধা কলেজ ড্রেস পরে রেডি হয়েছে। কলেজে যেতে না চাইলে ও মামি জোর করে পাঠিয়েছে তাকে কলেজে যাওয়ার জন‍্য । বাধ‍্য হয়ে তৈরি হতে হলোই তাকে। ব‍্যাগ নিয়ে নিচে নামতেই দেখে মামা গাড়িতে উঠছে। শ্রাবণ তার গাড়িতে উঠে পরল, মামা বললেন –

—” শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে ড্রপ করে দিয়ে আয়!”

–” আমি পারবো না, তোমার ভাগনি কে তুমি ড্রপ করে দিয়ে আসো।”
সাজ্জাদ সাহেব বললেন

—” হাদারাম কোথাকার তোর বউকে তুই গাড়িতে করে ড্রপ করে দিয়ে আসবি আমি কেন যাবো?”

–” তোমার ভাগনির আমাদের কাউকে লাগবে না, সে নিজেই পারে, তাকে দেখার মত অনেক লোক আছে।”
স্নিগ্ধা তাদের কথার মাঝে উঠে বলল –

–” মামা আমার পা আছে, আমি জোড় বস্ত নই কারো ঘাড়ে পরে থাকবো। আমি নিজেই কলেজে যেতে পারবো। কারোর জন‍্য অপেক্ষা করার আমার ইচ্ছে নেই।”

সাজ্জাদ সাহেব হঠাৎ শ্রাবণকে শাসিয়ে বলে উঠলেন –

–” শ্রাবইন‍্যে, তরাতরি করি তুই যদি স্নিগ্ধারে লই কলেজ ন যাস আই কিন্তু আব্বার কাছোত লাগাই দিওম!”
স্নিগ্ধা অন‍্য সময়ে মামার মুখে ভুলভাল চট্টগ্রামের ভাষা শুনে হেসে দিত কিন্তু আজ আর তার মুখে হাসি আসছে না, খুব বিরক্ত লাগছে তার। শ্রাবণ সাজ্জাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল – ছোট চাচা আজকাল যেন দাদুর বলা কথাটা বেশিই প্রয়োগ করা শিখে গেছে একেবারে যেখানেই যাবে এই কথাটা তাকে বলবেই।

শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলল-

–” আয়, গাড়িতে বস, ”
স্নিগ্ধা তাদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে পরল আর যাওয়ার আগে বলল –

–” আমি কারোর দয়ায় বাচার অধিকারী নই, নিজেই চলতে পারি। কারোর দান, দয়ায় আমি বাচতে চাই না।
অতএব, আমাকে যেন কেউ দয়া দেখাতে না আসে।
স্নিগ্ধা একা চলতে পারবে কারো তুচ্ছতাচ্ছিল্য সে সহ‍্য করতে পারবে না।”

সাজ্জাদ সাহেব যেন -“গোলক ধাধায় পরেগেছেন এদের দুজনকে কিভাবে এক করবেন দুজনই দুই মেরুর!”

স্নিগ্ধা বাসে করে চলে গিয়েছে কলেজের বাসে। কলেজের বাসে প্রথমে উঠাতে না চাইলে ও স্নিগ্ধা বলে দিল এরপর থেকে সে কলেজের বাসেই উঠবে। কারন কলেজের বাসের জন‍্য কলেজের বেতন শীটে বাস ভাড়ায় ছাত্রীদের নাম থাকে সেখানে স্নিগ্ধার নাম নেই।
স্নিগ্ধা সারাদিন ক্লাস করার পর ছুটির সময় পূরবীকে দেখল। পূরবী বলেছিল একসঙ্গে আসতে কিন্তু স্নিগ্ধার বাস ভাড়ার কথা শুনে আর দুজন এক হতে পারল না।

আগের স্কুলে স্নিগ্ধার অনেক বান্ধবী ছিল এই কলেজে স্নিগ্ধার বান্ধবী মহলে শুধু পূরবী, মৃধুলা, স্বচ্ছ এই তিনজন। আর কারোর সঙ্গেই তার তেমন জমেনি।

শ্রাবণ ইউনিভার্সিটি থেকে গাড়ি নিয়ে কলেজ গেইটের সামনে দাড়িয়েছিল অনেকক্ষণ আজও স্নিগ্ধা তার জন‍্য অপেক্ষা করেনি। রাগে শ্রাবণের পুরো শরীর থরথর করে কেপে উঠলো আর বারবার মনে পরল কালকে স্নিগ্ধার বলা কথাগুলো। গাড়ির স্পিড কিছুটা বাড়িয়ে বাসায় এসে ডুকেই দেখল স্নিগ্ধা রান্নঘর থেকে খাবার এনে ডাইনিং রুমে টেবিলের উপর রাখছে। শ্রাবণ আশেপাশে কোথাও না দেখে স্নিগ্ধার হাত থেকে বাটি টা সরিয়ে
হুট করে গালে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল।
হুট করে শ্রাবণ স্নিগ্ধার গালে এভাবে চড় বসিয়ে দিবে স্নিগ্ধা ভাবেনি। স্নিগ্ধা শ্রাবণের মুখের দিকে চেয়ে আছে।

শ্রাবণ স্নিগ্ধার আরেকটি গালে আরও জোরে একটা চড় মেরে দিল। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে ছলছল চোখে চেয়ে আছে। যে গালে, যে শরীরে কখনো কেউ একটা আচড় অবধি দেয়নি সেই গালে শ্রাবণ আজ পরপর দুটো চড় দিল। স্নিগ্ধা তার দু গালে হাত দিয়ে শ্রাবণের দিকে ছলছল চোখে চেয়ে আছে। আর শ্রাবণ লাল চোখ জোড়া দিয়ে যেন তাকে গিলে খাচ্ছে।

স্নিগ্ধার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। শ্রাবণ এই সেই শ্রাবণ যাকে স্নিগ্ধা ছোটবেলায় খেলার ছলে দুষ্টুমি করে শ্রাবণের পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিত। শ্রাবণ কখনোই স্নিগ্ধার গায়ে এভাবে আঘাত করতো না। উল্টো স্নিগ্ধা তাকে মেরে, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো সেই শ্রাবণ আজ এমন করলো। রাগে দুঃখে স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে রাগি চোখে চেয়ে পাশে থাকা কাচে গ্লাসটাকে একটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলল। আর দৌড়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। পুষ্পিতা রুমেই ছিল হঠাৎ কিছু ভাঙ্গার শব্দে দৌড়ে এসে দেখলেন ভাঙ্গা গ্লাস নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর শ্রাবণ সেখানে দাড়িয়ে আছে।
তিনি শ্রাবণকে ডেকে উঠলেন –

–” শ্রাবণ তুই কখন এলি? আর স্নিগ্ধা না খেতে এসেছিল ও কোথায়?”

–” আমি জানিনা,”

–” ও গ্লাস টা পরল কিভাবে?”

–” আমার হাত থেকে পরেগেছে,”

–” ও, দেখি সর কি যে করিস না তোরা, কাচ গুলো পায়ে ডুকবে সর আমি সরিয়ে ফেলি।”

–” তুমি যাও আমি সরাচ্ছি, তুমি অসুস্থ!”
শ্রাবণ পুষ্পিতাকে সরিয়ে, কাচের টুকরো গুলোকে তুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলেদিল।

সারা সন্ধ‍্যায় স্নিগ্ধা রুমের দরজা খুলেনি। আজ সারাদিন তার মুখে একটু ও খাবার উঠেনি। সকালে শ্রাবণের বলা কথা আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য। বিকেলে এসে গালে এভাবে হুট করে চড় বসিয়ে দেওয়ার পর প্রশ্নই উঠে না তার খাবার খাওয়ার। খাবে না, খাবে না সে খাবার। চলুক এভাবে যতদিন যায়। শ্রাবণের চড় তাকে মনে করিয়ে দিল –

” সে একটা বনফুল, যার না আছে পরিচয়!
না আছে গোত্র, না আছে কোন কদর!”

–” কদর নেই বলেই পরিচয় হয়েই উঠেনি। মান নেই, গন্ধ নেই, পথে পথে ফুটে বেড়ায় বাগানে ফুটলে তার কদর হতো।”

চলবে।