ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব-১০+১১

0
390

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_দশ
[#মান_অভিমান]

” সে একটা বনফুল, যার না আছে পরিচয়!
না আছে গোত্র, না আছে কোন কদর!”

–” কদর নেই বলেই পরিচয় হয়েই উঠেনি। মান নেই, গন্ধ নেই, পথে পথে ফুটে বেড়ায় বাগানে ফুটলে তার কদর হতো।”

স্নিগ্ধার সুন্দর গালটা লাল রক্তিম আভায় ধারণ করেছে,
টকটকে গোলাপি হয়েগেছে। শ্রাবণের হুটকরে চটে যাওয়াটা তার কাছে কেমন বিরক্তিকর লাগছে।
শ্রাবণ তো কখনো তার গায়ে হাত দেয়নি। আজ কেন বলা নেই কয়া নেই হুট করে চড় দিয়ে বসল এমন?
ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে বসে লাল হওয়া গাল জোড়ায় হাত বুলিয়ে সে ভাবতে লাগল সে।

অপরদিকে শ্রাবণ রুমের দরজা বন্ধ করেই বারান্দায় চলেগেল। অসম্ভব রাগ উঠেছে তার মেয়েটার উপর দাদা, তার চলার প্রতিটা পদে খুতঁ খুজে, কিভাবে চলতে হবে তা নিয়ে যত ধরনের কথা শুনাবে আর স্নিগ্ধাকে নিয়ে মাথায় তুলে নাচবে। স্নিগ্ধা যে তলে তলে অন‍্য একটা ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে সেটা দেখবে না।
শ্রাবণ ফুসফুস করতে করতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল। বিছানায় শুয়ে পরতেই ফোন বেজে উঠল তার।

ফোনের স্ক্রিনে মহিমার নাম,

কল ব‍্যাক করার পর অপর পাশ থেকে মহিমা বলে উঠল-

—” কিরে বউ কে নিয়ে আসার জন‍্য তাড়াতাড়ি করে চলে গেলি একবার ও আমাদের সঙ্গে দেখা করলি না?”

—” খেয়াল ছিল না, রাখ ভালো লাগছে না পরে কথা বলবো!”

— কেন রে, মন খারাপ নাকি? এই তো যাওয়ার সময় দেখলাম দিব্বি হাসছিলি। এখন আবার কি করলি?”

—” আর বলিস না, স্নিগ্ধা কি করেছে জানিস? স্নিগ্ধা আজ ও আমাকে ফেলে আগে, আগে চলে এসেছে বাসায়। মেজাজ গরম হয় কি না বল? আমি এতবার করে বললাম আমি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করিস। আমরা একসঙ্গে বাসায় যাবো। আমি ওকে আগে ও বলেছি, ওকে এই কথাটা হয়তো আজ বলিনি। আজ ওকে আমি কলেজে দিয়ে আসিনি। নিয়ে আসতে তো পারি, ও কি করল? আমাকে ফেলে ও চলে এলো একা,একা। বাসায় এসেই আজ ইচ্ছে মত চড় মেরেছি। কেন মেরেছি কথাটা বলতেই পারেনি।আমার হাত দুটো ও বেশ জ্বলছে জানিস। খুব জোরে চড় মেরেছি, আমার সামনে দাড়িয়ে কেদেছে। ওকে মেরে রাগ লাগলে ও এখন মনে হচ্ছে ওকে এভাবে মারা উচিৎ হয়নি।

কেউ ওর গায়ে একটা টোকা ও সহজে দিত না। আর আমি কিনা দু দুটো চড় মেরেছি।

—” মারলি কেন? মেরে এখন দরদ দেখানো হচ্ছে! মেরেছি, খুব জোরে মেরেছি, কারন না বলে কাহিনী না বলে ঠাস, ঠাস করে চড় বসালি গাধা একটা! এখন যা স‍্যরি বলে আয়।”

—” এখন?”

—” হ‍্যা, এখন,”

—“না আরেকটু পর যাবো।”

—” আচ্ছা তোর বউ, তুই জানিস কিভাবে রাগ ভাঙ্গাবি তার,রাখছি।”

শ্রাবণ মহিমার ফোন রেখেই দেখল স্বর্ণার ফোন। এই মেয়েটা যেন তার পিছু ছাড়বেই না। বিরক্তি নিয়ে ফোনটাকে বিছানায় আছড়ে ফেলল। উঠে গিয়ে দাড়ালো স্নিগ্ধার রুমের সামনে, দু একবার নক করার পর ও স্নিগ্ধা দরজা খুলল না। গলার স্বর উচু করে ডাকবে তার আগেই স্নিগ্ধা ঠাস করে দরজা খুলে
ঠান্ডা গলায় বলল –

–” কি চাই?”

–” তোর সাথে আমার কথা ছিল ওই সম..

—” আমার কোন কথা শুনার ইচ্ছে নেই, অন্তত আপনার থেকে তো একদমই না!”

–” স্নিগ্ধা শোন, তুই আমাকে না জানিয়ে একা একা বাসায় আসলি কেন? আমি তোকে বলিনি আমার জন‍্য অপেক্ষা করতে?”

—” আমার জন‍্য আপনার গাড়ি নিয়ে দাড়াতে হবে না,
আমি কলেজের বাস দিয়ে আসা যাওয়া করতে পারবো!”

–” গাড়ি থাকতে কলেজ বাস কেন?আমাদের গাড়ি থাকার পরও তুই বাস দিয়ে যাবি?”

–” বাসে চড়া মানুষগুলো কি খারাপ? বাসে যারা চড়ে তারাও মানুষ নিজস্ব প্রাইভেট কার যার আছে সে ও মানুষ!”

–” আমার কথা সেটা না, আমরা থাকতে তুই একা একা চলবি কেন? আমরা তোর কেউ না?”

–” কেউ না তোমরা আমার, আমার কাউকে লাগবে না।
আমি আমার পথ গড়ে নিয়ে তোমাদের পথ থেকে চলে যাবো। আর তোমার সঙ্গে যে ঝুলানো একটা ট‍্যাবু বা ট‍্যাগ যাইয়া বলো এই বিয়ে নামের সম্পর্কটাকে ও শেষ করবো।”

–” তাই নাকি? এত সাহস তোর?”
স্নিগ্ধাকে রুমের ভিতর জোর করে ডুকিয়ে বলল –

–” কি ভাবিস প্রেমিকের সঙ্গে খুব সহজে প্রেম করে তার সঙ্গে পালিয়ে যাবি? যদি প্রেমের খবর টা বলে দেই নানা ভাইকে? মানি নানা শশুড়কে?”

–” জানিয়ে দিন,”

—” সত‍্যি সত‍্যি কিন্তু জানিয়ে দিব।”

–” দিন জানিয়ে, এই বিয়ে নিয়ে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।”
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে চলেগেল। আর স্নিগ্ধা রাগে দুঃখে দরজাটা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল।

” কখনো আমি এই সম্পর্কে থেকে শান্তি পাবো না।
থাকবো না, কাউকে লাখবে না আর!”
____________________________________

কোচিং থেকে একসঙ্গে বেড়িয়েছে পূরবী,স্নিগ্ধা, রামিসা।
রামিসা কোচিং য়ে একসঙ্গে পড়ে।
সন্ধ‍্যে হওয়াতে পূরবীর মা এসেছেন আজ মেয়েকে নিতে।
হঠাৎ স্নিগ্ধার চোখ যায় দূরে দাড়িয়ে থাকা শ্রাবণের দিকে, শ্রাবণের সঙ্গে দাড়িয়ে আছে তার বন্ধুরা। শ্রাবণ তাদের সঙ্গে গল্প করছিল। স্নিগ্ধা দেখেও পাত্তা দিল না,
সে সোজা হাটতে লাগল তার বান্ধবীদের সঙ্গে।
রামিসা পূরবীর মাকে আড়াল করে স্নিগ্ধার কানের কাছে এসে বলল –

–” এই স্নিগ্ধা শোন,”

—“হুম বল,”

–” পাশের ছেলেটার দিকে তাকা,”

–” কোন ছেলে?”

–” আরে ঐ যে গ্রে কালারের টি-শার্ট, দোস্ত কি সুন্দর ছেলেটা লম্বা!”

–” এই ভর সন্ধ‍্যায় আমি রাস্তায় উষ্ঠা খাই, আর তুই ব‍‍েডি পোলার দিকে তাকাস?” পাশ থেকে রামিসার কানে কানে বলল পূরবী। বলেই মায়ের পাশে আবার ভদ্রভাবে দাড়িয়ে পরল।

—” তোর চোখে পাওয়ার কম তোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার,
তুই কি বুঝবি ক্রাশ খাওয়ার মজা!”

—” ক্রাশ খাওয়া মনে হয় খুব হালাল! বেদ্দব মাইয়া অন‍্যের বররের দিকে নজর দেস ক‍্যান?
আম্মু রামিসা,,

রামিসা পূরবীর মুখ চেপে ধরে বলল-

–” আন্টি ওর কথা শুনবেন না! ও শুধু প‍্যাচ লাগায়।”
স্নিগ্ধা ওদের দুজনের কান্ড দেখলে ও কিছু বলল না। গ্রে কালারের টি-শার্ট শ্রাবণের ছিল, শ্রাবণ এখানে এসে প্রায় সময় আড্ডা দিয়ে যায়। আর এই আড্ডার ছলে স্নিগ্ধাকে এসে দেখে যায় সে।
সেদিনের সেই চড়ের ঘটনার পর থেকে স্নিগ্ধা শ্রাবণের সঙ্গে কথা বলাটা বন্ধ করে দিয়েছে। একমাস পেরিয়ে গেলেও স্নিগ্ধা শ্রাবণের সঙ্গে ভালো করে কোন কথা বলেনি। উল্টো শ্রাবণ কথা বলতে এলে এরিয়ে গিয়েছে সব সময়। কারন হিসেবে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়েছে।
সবাইকে বলে দিয়েছে সে যতদিন ইন্টার পরিক্ষা দিচ্ছে না ততদিন কারোর সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করতে পারবে না।

শ্রাবণ ও বুঝতে পেরেছে স্নিগ্ধা তাকে এরিয়ে যেতে চায়।
কিন্তু আজকাল যে আর তার এভাবে কথা না বলাটা ভালো লাগেনা।স্নিগ্ধার এরিয়ে যাওয়া, স্নিগ্ধার কথা না বলাটা তার ভালো লাগে না কেন বুঝে না স্নিগ্ধা?
একটা ভুল কি ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?
শ্রাবণ স্নিগ্ধাদের ফোলো করতে করতে আসছে। স্নিগ্ধা সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে বাড়িতে ডুকার পরই শ্রাবণ তার পিছন পিছন চলে আসে। দুজনের মধ‍্যে দুজনেই জানে তাদের মনে কি চলছে।

নিষিদ্ধ কিছু চাওয়া গুলো যেন বেড়ে গিয়েছে শ্রাবণের।
ষোলো বছরের যে চঞ্চল মেয়েটিকে একসময় তার বিরক্তিকর লাগত। আজ মনেহয় এই মেয়েটিকে কেন সে আগে ভালো করে দেখল না? মেয়েটি যখন কোচিং সেন্টার থেকে বেরিয়ে ফুচকার দোকানে বান্ধবীদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলে। মেয়েটির সেই মুহূর্তের হাসির উজ্জলতা, আর সারল‍্যতা যেন মুগ্ধ করে তাকে।
মেয়েটি যখন ঘন কালো চুলগুলোকে বিনুনী করে কলেজ ড্রেসে বান্ধবীদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে তখন মেয়েটার মধ‍্যে উচ্চমাধ‍্য‍মিকে পড়া কোন মেয়ে নয় বরং মনে হবে সদ‍্য কৈশোরে পা দেওয়া কোন মেয়ে।
কিন্তু এই মেয়েটাই বাড়িতে এলে একদম বদলে যায়।

চলবে।

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_এগারো
[#প্রেম_পর্ব]

নিষিদ্ধ কিছু চাওয়া গুলো যেন বেড়ে গিয়েছে শ্রাবণের।
ষোলো বছরের যে চঞ্চল মেয়েটিকে একসময় তার বিরক্তিকর লাগত। আজ মনেহয় এই মেয়েটিকে কেন সে আগে ভালো করে দেখল না? মেয়েটি যখন কোচিং সেন্টার থেকে বেরিয়ে ফুচকার দোকানে বান্ধবীদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলে। মেয়েটির সেই মুহূর্তের হাসির উজ্জলতা, আর সারল‍্যতা যেন মুগ্ধ করে তাকে।
মেয়েটি যখন ঘন কালো চুলগুলোকে বিনুনী করে কলেজ ড্রেসে বান্ধবীদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে তখন মেয়েটার মধ‍্যে উচ্চমাধ‍্য‍মিকে পড়া কোন মেয়ে নয় বরং মনে হবে সদ‍্য কৈশোরে পা দেওয়া কোন মেয়ে। কিন্তু এই মেয়েটাই বাড়িতে এলে একদম বদলে যায়।তার মাঝে আর খুজেঁ পাওয়া যায় না সেই চঞ্চলতা।কেমন যেন গুমোট স্বভাবের হয়ে গিয়েছে সে। চট্টগ্রামের সেই চঞ্চল স্নিগ্ধা আর সে নয়। মনে হবে এ অন‍্যকোন স্নিগ্ধা।
________________________________

ছুটির দিন খাবারের টেবিল ঘুছিয়ে পুষ্পিতা সবাইকে ডেকে আনছেন। কর্ম ব‍্যস্ততায় সবাই পুরো সপ্তাহে একই টেবিলে খাওয়ার সময় পায় না। ছুটির দিনটাই একটা দিন যেদিন পুরো খাবার টেবিল জমে উঠে। খাবার টেবিলে বসেছে সবাই, সাজ্জাদ সাহেব নিজে উঠে রান্নাঘর থেকে খাবারের বাটিগুলো টেবিলে সাজিয়ে দিচ্ছেন। সঙ্গে অনেক কথা বলছেন তারমধ‍্যে অফিস, পরিবার নিয়েই বেশি পুষ্পিতা ও তার কাজের কথা বলছে। শুধু বলছে না স্নিগ্ধা, স্নিগ্ধা কথাগুলোর একটি ও শুনছে না শ্রাবণের মনে হলো কারন সাজ্জাদ সাহেব যে কথাগুলো বলছেন সবগুলোই হাসানোর জন‍্য বলছেন। শ্রাবণ ও মাঝে মাঝে পেট চেপে হাসছেন।
সাজ্জাদ সাহেব বলতে লাগলেন

—” শুন, আমাদের অফিসের একজন পুরাতন চৌকিদার ছিল যে ঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে পারতো না।”

–” তো আমাদের কোম্পানিতে বিভিন্ন পদের লোক থাকে চার্জ হ‍্যান্ড, স্টোর ম‍্যান, ডেলিভারি ম‍্য‍ান, লিফটম‍্যান, সুপারভাইজার, আরও অনেকে আর অন‍্যান‍্য পোশাক শ্রমিক তো আলাদা।তো চৌকিদার মানি রমিজ সাহেব সব সময় সবার পদবীকে বিকৃত করে বলত, যেমন সুপার ভাইজারকে ডাকত -” শুয়োর ভাইজার!” চার্জহ‍্যান্ডকে -” চারজন!”
এই দুজনের পদবীগুলো সে সবচেয়ে বেশি বিকৃত করেছে।তো আমি আবার বলে দিয়েছি আমাকে এমন ভাবে না ডাকতে আমাকে ছোট স‍্যার ডাকলে চলবে।
বলা যায় না তখন আবার সিও স‍্যারর জায়গা চিকা বা অন‍্যকিছু ডাকে কিনা।”সাজ্জাদ সাহেবের কথায় পুষ্পিতা,শ্রাবণ হেসে ফেলেছে।কিন্তু স্নিগ্ধা ও হাসলো তবে এ নিয়ে কোন আলোচনা করল না। তার খাওয়া শেষ হলে সে টেবিল ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। শ্রাবণ ও খেয়ে উঠে চলেগেল তার রুমে।

সাজ্জাদ সাহেবের ফোনে কল এলো। ফোন ধরেই কথা বলতে লাগলেন –

–” হ‍্যা বাবা সব ঠিক, নাতি-নাতনির কথা বলছো?
তারাও খুব ভালো আছে। ”

—” আমি আর তোর মা কিছুদিনের জন‍্য ঢাকায় আসছি।”

–” কবে আসবে?”

—” তোর মা একটু অসুস্থ হয়ে পরেছে, ডাক্তার দেখাতে হবে। তাই ভাবলাম ঢাকায় আসি, ভালো কোন ডাক্তার দেখিয়ে চলে যাবো। ব‍্যাবসা কেমন চলছে?শ্রাবণকে নিয়ে যাস মাঝে মাঝে ক্লাস না থাকলে কাজ বুঝে আসবে।”

—” চিন্তা করো না, আজকাল কার ছেলেরা সব বুঝে যায়। পড়াশুনা শেষ করে কাজে ডুকক।এখন ডুকে পরলে কাজে মজা পাবে না।আর তাছাড়া এই সময়টা একটু আড্ডা দিবেই।

–” তুই আর ওকে মাথায় তুলিস না।”

কয়েকদিন পরের কথা,,,

বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে স্নিগ্ধা, খুব রাগ লাগছে তার কিছুক্ষণ আগেই নানাভাই আর নানু এসেছে। দুজন শ্রাবণের রুমে আছে এখন। স্নিগ্ধার রুমে শ্রাবণ,সে এখন বিছানায় বসে বসে মোবাইল টিপছে আর স্নিগ্ধার দিকে উকি দিচ্ছে। স্নিগ্ধা সবই বুঝতে পারছে শ্রাবণের মতলব।স্নিগ্ধা সেই দুঃখে বেলকনি থেকে রুমে আসেনি।
ভিতর থেকে শ্রাবণ ডেকে উঠল-

—” কেউ কি রুমে আসবে? বেলকনি থেকে মশা গুলো যে ঘরের ভিতর প্রবেশ করছে সে খেয়াল কি কারো আছে? মশাগুলো সব আমার রক্ত চুষে চুষে খাচ্ছে।
শ্রাবণ খানিকটা মশা তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাতে তালি দিয়ে উঠল। না স্নিগ্ধা তারপর পর ও ফিরে তাকালো না।
শ্রাবণ বেলকনিতে তাকিয়ে দেখল স্নিগ্ধা খোলা চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে আছে। খয়েরী রঙ্গের ফতুয়ার সাথে মিলিয়ে জিন্সের প‍্যান্ট পরেছে স্নিগ্ধা। শ্রাবণ বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো তারপর বেলকনিতে এসে দাড়িয়ে পরল।

স্নিগ্ধার হাতে তখন লিলিফুল, সে শ্রাবণের রাগ গুলো ফুলের উপর মিটিয়েছে। ফুল গুলোকে ছিড়ে নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছে। শ্রাবণ আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখল স্নিগ্ধার হাতের মুঠোয় ফুলগুলো এখনো। শ্রাবণ নিচে বসে ফুলের পাপড়ি গুলোকে তুলে নিল। কিভাবে ফুলের পাপড়িগুলো ছিড়ে ফেলল।এত কোমল, এত সুন্দর ঘ্রাণ যেই ফুলের সেই ফুল কিভাবে এই মেয়েটি ছিড়ল? মেয়েটির কি কোন মায়া নেই?

শ্রাবণ স্নিগ্ধার ঘাড়ে কাপা কাপা হাত নিয়ে রাখল।
হঠাৎ করে কারো শীতল স্পর্শ ঘাড়ে পেতেই স্নিগ্ধার ভিতরটা কেমন অজানা আতংকে কেপে উঠেছে। পিছনে দাড়ানো ব‍্যক্তিটির উদ্দেশ্যে পিছন ঘুরেই দেখল শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে। শ্রাবণ এখনো তার কাধে হাত দিয়ে রেখেছে। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে কাধে রাখা শ্রাবণের হাতটার দিকে তাকালো। শ্রাবণ স্নিগ্ধার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে ফেলল।
স্নিগ্ধার আতংকিত মুখটা কেমন রাগি মুখ ধারণ করেছে।স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।শ্রাবণ তার সামনে মুঠো করে ধরে রাখা সেই ফুলগুলো তুলে ধরল।

—” তুই তো বড্ড নিষ্ঠুর কালি!”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাতে রাখা ফুলগুলোকে দেখে নিল। সেগুলোকে শ্রাবণের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে বলল-

—” আমার গায়ে হাত দিয়েছেন কোন সাহসে?”

—” তুই আমার বউ! বউয়ের গায়ে হাত দিতে সাহস লাগে?”

–” অবশ‍্যই লাগে, যে সম্পর্কটা আমি মানি না, সেই আমিই কি করে আমার গায়ে আপনার ছোয়া মেনে নিতে পারি?”

—” কিন্তু আমি মানি,”

–” আপনি মানলে ও আমি মানি না।”

—” তোর মেনে নেওয়া না নেওয়া কোন কিছুতেই আমার যায় আসেনা!”

–” আপনি কিন্তু বেশি করছেন শ্রাবণ ভাই!”
শ্রাবণ হুটকরে স্নিগ্ধাকে টেনে কাছে নিয়ে এলো, টেনে আনতে আনতে একদম রুমে নিয়ে এলো, তারপর বুকে জড়িয়ে নিল, অশান্ত বুকটা কেমন ঠান্ডা হয়েগেল তার।
এরই নাম কি ভালোবাসা? এ কি মায়া? এই অল্প কিছুদিনের মায়ায় এতটা গভীরভাবে কারো মায়ায় জড়ানো যায়?

শ্রাবণ স্নিগ্ধার মুখখানা বুক থেকে তুলল, স্নিগ্ধা চোখগুলো বন্ধ, শ্রাবণের হুট করে এমন আক্রমণ সে নিতে পারছেনা।স্নিগ্ধা ভয়ে ভয়ে চোখ জোড়া খুলতেই দেখল শ্রাবণ তার দুচোখ দিয়ে স্নিগ্ধাকে প্রাণ ভরে দেখছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধার কপালের কাছের চুলগুলোকে সরিয়ে কপালে একটা চুমু বসিয়ে দিল। ঘোর লেগে গিয়েছে শ্রাবণের, এই মুহূর্তটা তার কাছে অন‍্যরকম লাগছে। আরেকটু নিচু হয়ে স্নিগ্ধার ঠোটে স্পর্শ দিল। স্নিগ্ধার চোখ থেকে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পরল। শ্রাবণ আরও প্রগাড় ভাবে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধার মাঝে ডুবে গিয়েছে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পরই শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিল সাথে। স্নিগ্ধা তখন ও পাথরের মত একই জায়গায় দাড়িয়ে আছে।

ঘোর যে তার লেগেছে, ভিষণ লেগেছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে ছেড়ে স্বাভাবিক হয়ে বিছানায় বসে রয়েছে। কিন্তু এই দিকে স্নিগ্ধা যেন একদম স্তব্ধ হয়েগেছে। শ্রাবণ কি করল এটা তার সাথে? এমন একটা মুহুর্তে এমন কিছু করে বেড়াবে স্নিগ্ধা ভাবতেই পারেনি। শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ‍্য করে বলল –

–” দাড়িয়ে থাকবি ওখানে না শুতে আসবি?”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে না ফিরে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলেগেল। শ্রাবণ স্নিগ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। কেমন লজ্জায় পরেছে মেয়েটা।
স্নিগ্ধা রুম থেকে বেরিয়ে যেন আরও বিড়াম্বনায় পরেছে।
নানু মামির সঙ্গে কথা বলছিল স্নিগ্ধাকে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে তিনি চেয়ে আছেন। কাছে ডেকে বললেন

—” রাত তো কম হলো না, ঘুমাও নি কেন? ঘুরছো কেন?”

–” এমনই ঘুম আসছিল না,”

–” যাও! রুমে যাও!”
স্নিগ্ধা নানুর কথায় মন খারাপ করে রুমে চলেগেল। গিয়ে দেখল শ্রাবণ শুয়ে আছে। শ্রাবণের শুয়ে থাকার ভঙ্গি তার ভালো লাগল না। আবার কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরতেই স্নিগ্ধার ভয় লাগল। আজ তো নানাভাই আর নানু আছে ওনারা তো কখনোই আলাদা থাকতে দিবে না।স্নিগ্ধা দরজাটা বন্ধ করে আস্তে করে। তারপর লাইট টা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরল। শ্রাবণের পাশ থেকে কিছুটা দূরে। শ্রাবণ আরেকটু কাছে আসলে স্নিগ্ধা বলল-

–” কি শুরু করেছেন এগুলো?”

–” কি করছি?”

–” কাছাকাছি আসছেন কেন?”

–” তাহলে কি করবো?”

–” দূরে থাকুন,”

–” পারবো না,”

স্নিগ্ধা বিছানা থেকে উঠতে চাইলে শ্রাবণ হাত ধরে বলল -“শুয়ে পর আমি কিছু করবো না!”

চলবে।