#সমাপ্তিতে_সূচনা
#পর্ব ৪
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি
রাব্বি সাহেবের খু/নের কোন সমাধান বের হলো না, সজলের হাতে অন্য একটি কেস চলে এলো। রাব্বি সাহেবের কেসটা নিয়ে বেশ কিছু মাস ঘুরছে সজল। কোথাও কোন ক্লুর দেখা মিললো না। মাঝে এই কেসটা চলে এলো।
ঘটনাস্থলে গিয়ে সজল মৃ/ত/দে/হ দেখে কিছুটা অবাক হলো। মৃত্যু আলাদা স্থানে হলেও, মৃত্যুর ধরন রাব্বির মতো। রাব্বির বুকে যেভাবে ছু/রি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিলো ঠিক সেভাবে রিপনকে(মৃত লোকটির) মারা হয়েছে। রাব্বি সাহেবের মৃত্যুর পরও একের পর এক আঘাত করা হয়েছিলো, রিপনের ক্ষেত্রেও তেমন ঘটেছে। আঘাতের চিহ্ন দেখে তাই মনে হচ্ছে।
রিপন অবিবাহিত। ফ্লাটে একাই থাকতো। তাই তার পরিবার সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। সজলের বারবার মনে হচ্ছে,“রাব্বির সাথে রিপনের কোন সংযোগ নেই তো?”
সন্দেহবসত সজল একজনকে রিপন এবং রাব্বির সংযোগ খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিলো।
রিপনের মৃ/ত/দে/হ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হলো। বিল্ডিং এর আশপাশটা বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করা হচ্ছে।
বিল্ডিং এর পাশে এক দোকানে সিসিটিভি ফুটেজ ছিলো। কিছু ক্লু পাওয়া যেতে পারে ভেবে সজল সেটা সংগ্রহ করলো।
____
এদিকে নীলির ডেলিভারির ডেট এগিয়ে আসছে। শান্ত এবং নীলির সম্পর্ক কয় মাসে আরো গভীর হয়েছে। তারা দু’জনে বেশ সুখী দম্পতি। মাঝে তাদের সংসার ন/ষ্ট করার চেষ্টা করেছিলো কোন এক আগন্তুক। তবে তাদের ভালোবাসার কাছে আগন্তুক ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে।
______
রিপনের মৃত্যুর দিন রিপনের সাথে এক মেয়ে ছিলো। দোকান থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সেটা স্পষ্ট। রিপন মেয়েটিকে নিয়ে তাদের বিল্ডিং এর দিকে যাচ্ছিলো।
রিপনের খু/নি হিসাবে আপাতত মেয়েটিকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
রাব্বি সাহেবের ঘটনার কোন সমাধান করতে না পেরে সজল বেশ ভেঙে পড়েছিলো। তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছিলো। তবে রিপনের ঘটনার পর মনে হচ্ছে তার হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। সজলের মন বারবার বলছে,“দু’জনের খু/নের সাথে কোন যোগসূত্র রয়েছে।”
*
গভীর রাত, সজল কাজ শেষে বাসায় এলো। কলিংবেলে একবার চাপ দিতে ফুলি দরজা খুলে দিলো। সজল ফুলিকে দরজা খুলতে দেখে অবাক হলো না। এটা বেশ কিছুদিন ধরে হয়ে আসছে। তার মা কয়েকদিন যাবত জেগে থাকতে পারছে না। সজল ফিরতে ফিরতে সে ঘুমিয়ে পড়ে। তাই আজকাল দরজা ফুলি খুলে দেয়।
ফুলি বললো,“স্যার আমনে হাত-মুখ ধুয়ে আসেন, আমি খাবার দেই।”
সজল বললো,“লাগবে না। তুমি ঘুমাতে যাও।”
“আপনার শরীর খারাপ হইছে? খাবার খাইবেন না কেন?”।
“না। আমার কিছু হয়নি। তোমাকে না বলেছি সব শুদ্ধতে বলতে। বেশ কয়েক মাস ধরে আছো তো এখানে, এখনো পুরোটা শিখতে পারলে না।”
“শিখছি তো স্যার। এহন বেশি ভুল হয় না।”
“একটুও ভুল দেখতে চাই না আমি।”
“আচ্ছা স্যার। আমনে তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে আসেন আমি খাবার দেই।”
“বললাম তো খাবো না।”
“না স্যার। আপনি খাবার না খেলে খালাম্মা আমারে সকালবেলা খুব বকবো।”
“আমি বলে দেবো, বকবে না।”
“না স্যার আমি শুনবো না কিছুতেই।”
সজল কোন কথা না বলে নিজের ঘরে চলে গেল। ফুলির সাথে কথা বাড়াতে চাচ্ছে না।শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছে।
সজল ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো, ফুলি তার খাবার ঘরে নিয়ে এসেছে। সজল তা দেখে বললো,“তুমি আমার কথা বুঝতে পারোনি?”
ফুলি বললো,“দেহেন স্যার, আমারে বইলা লাভ নাই। আমি খাবার দিয়া গেলাম, খেতে হলে খান, না খেতে মন চাইলে খাইয়েন না।”
ফুলি সজলের কোন শব্দ না পেয়ে সজলের দিকে তাকালো। সজল ফুলির চোখের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো। ফুলির ব্যপারটা ভালো লাগলো না। আস্তে করে বললো,“স্যার?”
সজল ফুলির কথায় কর্নপাত না করে আনমনে বললো,“পরী।”
“কী?”
সজল ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো। ফুলির উদ্দেশ্য বললো,“ তুমি কি জন্ম থেকে কালো?”
“মানে?”
“না কিছু না। তুমি যাও।”
“আচ্ছা।”
ফুলি চলে গেল। সজল খাবার না খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
অন্যদিকে, রায়ান বেশ কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন রাতে একই স্বপ্ন দেখছে। আগে দরজা খোলা রেখে ঘুমাতো, কিছুদিন হলো দরজা বন্ধ করা শুরু করলো। দরজা বন্ধ করেও শান্তি নেই, দরজার বাহির থেকে নুপুরের আওয়াজ, কাঁচ ভাঙার আওয়াজ, চিৎকার, কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়।
সকালে উঠে রায়ান বাড়ির অন্যদের অস্বাভাবিক কিছু দেখেছে কিনা জিজ্ঞেস করলে সবাই না বলে।
রায়ান ভয়ে সবাইকে বলতেও পারে না তার সাথে কি হচ্ছে। তবে আজকে রায়ান পুরো রাত জেগে কাটাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। দেখবে জেগে থাকলে কেউ আসে কিনা। রায়ান এখন অব্দি অস্বাভাবিক কিছু পেলো না। রাত অনেকটা হয়ে গেছে। এখনো কোন শব্দ না পেয়ে বেশ হতাশ হলো রায়ান। তবে কি সে ঘুমালে তার আগমন ঘটে?
*
সজল চোখ বন্ধ করে এক কিশোরীকে কল্পনা করে যাচ্ছে। যেটা সে সবসময় করে। তবে আজ পুরো মুখশ্রীর থেকে কিশোরীর চোখগুলোয় একটু বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
হঠাৎ চোখ খুলে ফেললো সজল। তার মানিব্যাগে থাকা সেই নুপুরজোড়া বের করে দেখতে লাগলো। নুপুরের দিকে তাকিয়ে বললো,“তোমার চোখগুলো খুব সুন্দর। তোমার পর আমার দৃষ্টিতে যার চোখ সুন্দর লেগেছে, সে হলো ফুলি। আজ ফুলি চোখে তোমাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি।
আচ্ছা ফুলি যদি সুন্দর হ’তো তবে কি সে তোমার মতোই দেখতে হ’তো?
আমি তো তোমাকে সেই কিশোরী বয়সে দেখেছিলাম, আচ্ছা এখন কি তোমার মুখশ্রীতে বিশেষ কোন পরিবর্তন এসেছে?”
সজল আপনমনে নুপুর জোড়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
★
নুপুরের দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে সজল কল্পনায় অতীতে চলে গেল।
অতীত,
সজল তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। বিকালবেলা বন্ধুদের সাথে খেলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো।
যে পথ দিয়ে যাচ্ছিলো সে পথে তাদের আমবাগান পড়ে। তখন জৈষ্ঠ্য-মাস চলে, আমের মৌসুম। বাগান ভরা আম ছিলো।
বাগানের পাশ দিয়ে আসতে আসতে হঠাৎ লক্ষ্য করলো বাগানের ভিতরে বাচ্চাদের কথার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
সজল কৌতূহল বসত বাগানের ভিতরে গেল। বাচ্চারা সজলকে এগিয়ে আসতে দেখে পালিয়ে গেল। ঠিক সেসময়ে এক মেয়ে বললো,“ব্যাগ ভরেছে বাবুরা?”
শব্দটি উপর থেকে আসছে মনে হলো। শান্ত উপরে তাকালো। গাছের উপর এক ‘পরী’ বসে ছিলো। যে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে আম পারছিলো।
মেয়েটি পুনরায় বললো,“কি হলো কথা বলছিস না কেন তোরা?”
সজল বললো,“সবাই পালিয়ে গেছে। নিচে তাকাও তবে দেখতে পাবে।”
মেয়েটি নিচে তাকিয়ে সজলকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। গাছের উপর থেকেই বলতে লাগলো,“ভুল হয়ে গেছে। আমি আর কখনো এ ভুল করবো না। না বলে অন্যের জিনিস নিবো না, আমাকে মাফ করে দিন। প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন।”
সজল নিচ থেকে মুচকি হেসে বললো,“তোমাকে তো আমি ধরে রাখেনি। তবে ছাড়বো কিভাবে?”
মেয়েটি চুপ করে গেল। সজল বললো,“নিচে নামো।”
“না। এরকম আর হবে না।”
“নিচে নামো বলছি।” কঠিন গলায়
মেয়েটি ভয় পেয়ে নিচে নেমে গেল। ভয়ে সজলের সামনে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সজল মেয়েটির পা থেকে মাথা অব্দি ভালোভাবে দেখলো৷ সাদা গায়ের গড়নে, ডাগর ডাগর দুটো আঁখি। আনমনে বললো,“সুন্দর। খুব সুন্দর।”
“কিছু বললেন?”
সজল বললো,“চুরি করছিলে কেন?”
“আর হবে না।”
“আর হবে না তো বুঝলাম, তবে এখন যখন হয়েছে তখন কি শাস্তি দিবো তোমাকে?”
“ক্ষমা মহৎ গুন। ক্ষমা করে দিন।”
“নাম কি?”
“কার?”
“তোমাকে নিশ্চয় আমার নাম জিজ্ঞেস করবো না?”
“জ্বী নুরজাহান।”
“আচ্ছা। পড়ো কিসে?”
“ষষ্ঠ শ্রেনী।”
“কোন স্কুল?”
“….বালিকা বিদ্যালয়।”
“এখন চুরির শাস্তিস্বরুপ কি নিতে চাও?”
“শাস্তি না দিলে হয় না?”
“না। একদমি হয় না। তবে শাস্তির পরিবর্তে অন্যকিছু করা যায়।”
“সেটাই করুন। তবুও শাস্তি না।”
“তাহলে তোমাকে আমার কথা মেনে চলতে হবে। আমি যা বলবো তাই করতে হবে।”
“আচ্ছা করবো।”
“তাহলে কাল বিকালে এখানে দেখা করো, কালকে বলবো তোমাকে শাস্তির পরিবর্তে কি দেওয়া যায়।”
“আচ্ছা। তবে আমি যাই।”
মেয়েটি যাই বলে হাঁটা শুরু করলো। সজল ধমকের শুরু বললো,“কোথায় যাচ্ছো?”
“কেন বাড়ি?”
“ আমি যেতে বলেছি?”
মেয়েটি দু’দিকে মাথা নাড়ালো। যার অর্থ না। মেয়েটি বেশ ভয় পেয়েছে, মুখশ্রী দেখে বোঝা যাচ্ছে। সজল হাসি চেপে রেখে বললো,“যাও। কাল দেখা করো।”
মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে ছুটে পালালো। সজল পিছনে বসে হাসছিলো।
সেই যে কিশোর বয়সে চোখ আটকে গেল, সেটাই পরবর্তীতে ভালোবাসায় বদলে গেল।
পরেরদিন মেয়েটির দেখা করার কথা থাকলেও মেয়েটি দেখা করেনি। সজল বেশ সময় তার জন্য অপেক্ষা করছিলো। শেষে বিরক্ত হয়ে খোঁজ নিলো। কিন্তু নুরজাহান নামে কারো দেখা মিললো না। এর অর্থ মেয়েটি মিথ্যে নাম পরিচয় দিয়েছি।
বেশ কিছুদিন পর, মেয়েটির দেখা মিললো। সেটা সজলদের স্কুলেই। মেয়েটি সব মিথ্যে বললেও শ্রেনী ঠিক বলছিলো।
মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে সজল বললো,“এই পরী আমাকে ধোঁকা দিলে কেন?”
মেয়েটি বললো,“পরী কে?”
“তুমি তো তোমার সঠিক নাম বলোনি তাই আমি তোমার একটা নাম রাখলাম। সে যাই হোক আজ তোমার বাড়িতে অভিযোগ পাঠাবো, তুমি আমাদের বাগানের আম চুরি করেছো।”
“এই না। দুঃখিত আপনাকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য। প্লীজ এটা করবেন না।”
“একটা শর্তে এটা করা থেকে আমি বিরত থাকতে পারি।”
“কি শর্ত?”
সজল নিজের এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,“বন্ধু হবে?”
মেয়েটি বললো,“তবে আমাকে সবসময় আপনাদের বাগান থেকে আম পেরে খাওয়াতে হবে। রাজি?”
“আচ্ছা রাজি।”
তারপর থেকে বন্ধুত্ব। সময় পেরিয়ে গেছে সজল, পরীর বন্ধুত্ব অটল রয়েছে।
সময়ের সাথে সাথে বন্ধুত্ব ভালোবাসায় বদলে গেছে। সজলের মন তো প্রথম দেখায় কেড়ে নিয়েছিলো পরী। সজলের মনে দোলা দেওয়া প্রেম সময়ের সাথে পরীর মনেও দোলা দিয়েছে।
তখন সজল কলেজে উঠেছে। প্রথম বাবা-মার কথা অমান্য করে নিজের হাত খরচের জন্য টিউশনি শুরু করে। প্রথম মাসের বেতন পেয়ে পরীর জন্য একজোড়া নুপুর কিনেছিলো।
সেদিন শনিবার ছিলো,
তাদের গ্রামে পোড়া বাড়ি নামে একটা বাড়ি ছিলো। যেখানে কেউ থাকে না। পরিবেশটা নির্জন হওয়ায় সেখানে সজল পরীর সাথে সবসময় দেখা করতো।
সেদিন সজল পরীকে ভালোবাসার কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিলো। হাতে একজোড়া নুপুর আর একটা গোলাপ ফুল নিয়ে সজল পোড়া বাড়িতে এগিয়ে আসছিলো।
সজল সেখানে আসতেই, পরী পোড়া বাড়ির ভিতর থেকে কোনরকম ছুটে এলো। গায়ে ওড়না নেই, বাহুর কাছ থেকে জামা কিছুটা ছেঁড়া ছিলো।
সজল পরীকে এমনরূপে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। সজল এগিয়ে এসে পরীকে ধরতে নিলে, পরী তার থেকে ছিটকে দূরে চলে যায়।
এরমধ্যে সেখানে পরীর বাবাসহ বেশ কিছুজন এসে উপস্থিত হয়। পরী দৌঁড়ে গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। পরীর বাবাও তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে৷ সজল পরীদের দিকে এগিয়ে গেলে, সজলকে অবাক করে দিয়ে পরী তার গালে থাপ্পড় মেরে দেয়।
সজল পরীকে ঐ অবস্থায় দেখে যতটা না হতভম্ব হয়েছিলো তার থেকে দ্বিগুণ হতভম্ব হলো পরীর কান্ডে।
পরী কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,“ভালোবাসা সুন্দর তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসা পাপ। আমি সেই পাপ করেছি। আজ সেই পাপের প্রকাশ করতে এসেছিলাম, বিনিময়ে কলঙ্ক পেলাম।”
সজল বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিলো। সেখানে থাকা লোকজন সজলকে ধরলো। পরীর বাবা তাকে জিজ্ঞেস করলো,“তোর এই অবস্থা কে করেছে মা?”
সজলকে আরো চমকে দিয়ে পরী সজলের দিকে আঙুল তোলে। সজল থমকে যায়। তার হাতে থাকা গোলাপ সেখানেই পড়ে যায়। নুপুরজোড়া আগে পকেটে রেখেছিলো, তাই সেগুলো পকেটে পড়ে রয়।
তারপর বিচার হয়। সেখানে পরীকে জিজ্ঞেস করা হয় তার সাথে সজল কি কি করেছে। পরীর উত্তর ছিলো,“আমার সাথে কিছু হয়নি। ওরা আমার সাথে কিছু করার আগে আমি বেঁচে গেছি।”
“কে সজল?”
পরী মাথা নাড়ায়। সজল নিরবে পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে। গ্রামের লোকজন সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু মেয়ে কলঙ্কিত হয়ে গেছে সেহেতু সজলের সাথে বিয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে। তবে এতে গ্রামের কয়েকজনের মত ছিলো না। সবচেয়ে বড় কথা পরীর মত ছিলো না।
পরী শুধু বললো,“আমার কোন বিচারের প্রয়োজন নেই। আপনারা যদি ভেবে থাকেন এই কলঙ্ক নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না, তবে ভুল ভাবছেন। আমি পারবো। তবে কলঙ্কের দাগ লাগানো মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবো না। তাই দয়া করে আপনারা আমার জন্য ভাবা বাদ দিন। তাকে যেতে দিন। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”
পরী কথাগুলো মাটির দিকে তাকিয়ে বলছিলো। আর সজল তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সাজলের বাবা-মা বারবার বলার চেষ্টা করছিলো, আমাদের ছেলে নির্দোষ। তবে সজল নিজ মুখে কিছু না বলায় তারা কিছু করতে পারেনি।
যেহেতু পরী সজলের কোন শাস্তি চাইনি তাই সজলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো। সজল অনেকটা ভেঙে পড়েছিলো।
সেই ঘটনার পর সজলের বাবা-মা তাকে নিয়ে শহরে চলে আসে।
বর্তমান,
সজল নুপুরগুলো মানিব্যাগে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আজ কেন জানি না বারবার তার চোখে পরীর দোষারোপ করার দৃশ্যটি ভেসে উঠেছে।
*
চলবে,