সম্পর্কের মায়াজাল ২ পর্ব-০৪

0
2011

#সম্পর্কের_মায়াজাল_২
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৪

এক ঘন্টা পর শুভ্রতার জ্ঞান ফিরলো…….

শুভ্রতার জ্ঞান ফিরতেই স্পন্দন সবার সামনেই শুভ্রতা-কে জড়িয়ে ধরে বলল…..

—” এত বোকা কেন তুই? সামান্য জিনিস নিয়ে কেউ এত চিন্তা করে? এত কেন ইমোশনাল তুই?”

শুভ্রতার মা ডাক দিলো……

—” স্পন্দন!”

স্পন্দনের হুস আসলো আর সাথে সাথে শুভ্রতা-কে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সাধনা আর ওর আম্মু শুভ্রতার পাশে গিয়ে বসলো।

শুভ্রতার এখনও খুব কান্না পাচ্ছে। কান্নার কারণে এখনও ও কথা বলতে পারছে না। স্পন্দন সাধনার দিকে তাকিয়ে বলল……

—” তোর ইমোশনাল বোনকে বল মরা কান্না যেন না করে। বলে দে এই স্পন্দন সব ঠিক করে দিয়েছে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।”

শুভ্রতা তখন বলল…..

—” জুতো মেরে গরু দান করতে এসেছে। সম্মান তো চলেই গিয়েছে এখন কি আর ফিরে আসবে?”

—” বলদের সই, আমি যা বলছি কানে যায় নাই? আমি বলছিনা সব ঠিক করে ফেলেছি তার মানে সব ঠিক ওকে।”

শুভ্রতা তখন তার মাকে বলল……

—” আম্মু এই বজ্জাত ছেলেটাকে বলে দেও আমি বলদের সই না। আমি তো নাম্বার ওয়ান বলদের মামাতো বোন।”

স্পন্দন শুভ্রতার কথা কানে না তুলে শুভ্রতার মাকে বলল……

—” মামুনি তুমি ওর জন্য খাবার নিয়ে আসে তো। নব্বই কেজি ওজনের বস্তা-কে দেখতে এখন পাঁচ কেজি বস্তার মতো লাগছে।”

শুভ্রতার মা স্পন্দনের পিঠে চাপড় মেরে বলল……

—” সব সময় ঝগড়া তাই না? দাঁড়া তোর মামুর কাছে বিচার দিয়ে তোকে কান মলা খাওয়াবো।”

—” মামুনি, এখন রাতের খাবার দিলেই হবে পরে না হয় মামুর কান মলা খাবো।”

সবাই একসাথে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো। আজ রাতে স্পন্দন তার মামার বাসায় অর্থাৎ শুভ্রতাদের বাসায় থাকবে।

রাত সাড়ে তিনটায় স্পন্দন শুভ্রতার রুমে ঢুকে। দরজা ভেতর থেকে নক না থাকায় স্পন্দনের ভালোই সুবিধা হলো। এত বড় খাটে দুই বোন দুইদিক ঘুরে শুয়ে আছে। ফোনের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস বাড়িয়ে খাটে থাকা দুই বোনের মুখ দেখে শুভ্রতা-কে কোলে তুলে নিলো। শুভ্রতা প্রথম ভেবেছিলো সাধনা হয়তো তাকে টাচ্ করেছে তাই ঘুমের ঘোরে বলল……

—” সাধু আজ দেখছি তোর ছোঁয়া আমাকে আকাশে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ তোর জন্য আমার আকাশে উড়া হলো। ধনিয়াপাতা বোনু।”

শুভ্রতার কথা শুনে খুব হাসি পাচ্ছে স্পন্দনের কিন্তু সে হাসছে না। হাসার শব্দ পেয়ে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় শুভ্রতার তখন তো স্পন্দনের বারোটা বাজিয়ে ফেলবে এই মেয়ে।

শুভ্রতার অস্বস্তি লাগায় সে চোখ মেলে তাকিয়ে স্পন্দনকে দেখে চিৎকার করতে যেতেই স্পন্দন তার এক হাত ছেড়ে শুভ্রতার মুখ চেপে ধরলো আর ফিসফিস করে বলল…….

—-” চিৎকার করবি না তোকে সারপ্রাইজ দেওয়া জন্য নিয়ে যাচ্ছি।”

—-” মমমমমম”

স্পন্দন শুভ্রতার মুখ ছেড়ে আবারো কোলে তুলে নিলো। শুভ্রতাও ফিসফিস করে বলল……

—” আজ তো কোনো বিশেষ দিন বা রাত না যে তুমি আমায় সারপ্রাইজ দিবে। আমার জন্মদিন তো সাত মাস পর।”

—” জন্মদিন বা বিশেষ দিন থাকলেই সারপ্রাইজ দিতে হয় নাকি? সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বিশেষ দিন বা রাত দরকার হয় না।”

শুভ্রতা স্পন্দনের কথায় সায় দিলো। স্পন্দন চুপি সারে শুভ্রতা-কে নিয়ে ছাদের দিকে হাঁটা শুরু করলো। শুভ্রতা স্পন্দনের গলা জড়িয়ে ধরে বলল……

—” তোমার কোলে উঠতে তো ভীষণ ভালো লাগছে। বাই দা ওয়ে নব্বই কেজি বস্তা-কে কোলে তুলে সামলাতে পারছো তো?”

স্পন্দন মৃদু হেসে বলল……

—-” একটা শুভ্রতা নয় হাজার শুভ্রতাও কোলে নিতে পারি তাও একসাথে।”

শুভ্রতা মুখ ভেংচে বলল……

—-” যত্তসব চাপা।”

ছাদে এসে স্পন্দন শুভ্রতা-কে এক কোণায় দাঁড় করালো। শুভ্রতা চারপাশ ভালো ভাবে দেখে রাগী গলায় বলল……..

—” কই কিছুই তো নাই ছাদে এ কেমন সারপ্রাইজ?”

—-” তুই সারপ্রাইজড হতে চাস?”

—” হতে না চাইলে তোমার মত হনুমানের সাথে এত রাতে ছাদে আসলাম কেন? নাচতে আসছে ছাদে?”

—-” ওকে তোর যেহেতু এতই সারপ্রাইজ পেতে ইচ্ছা করছে তাহলে তোর ইচ্ছা পূরণ করি কি বল?”

—” হুম আমি চোখ বন্ধ করছি তুমি সারপ্রাইজ দেও।”

শুভ্রতা চোখ বন্ধ করতেই স্পন্দন শুভ্রতা-কে কোলে তুলে ছাদের দেওয়ালে বসিয়ে দিয়ে বলল…

—-” চোখ খুল এখন?”

শুভ্রতা চোখ খুলেই জোরে চিৎকার করতে লাগলো। স্পন্দন হেসে বলল……

—” কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? ছেড়ে দেই নিচে?”

—-” এই না আমার সারপ্রাইজ লাগবে না আমি নিচে নামবো প্লিজ নামাও।”

—” সারপ্রাইজ লাগবে না?”

—” জীবনেও লাগবে না প্লিজ নামাও আমাকে।”

স্পন্দন শুভ্রতা-কে নামিয়ে উল্টো ঘুরে হাসতে লাগলো। শুভ্রতা রেগে গিয়ে বলল……

—-” এত রাতে মজা করার জন্য আমায় তুমি নিয়ে এসেছ? আচ্ছা পাজি তো তুমি।”

—-” আরেহ ঘুম আসছিল না তার জন্য তোকে পাটনার হিসেবে নিয়ে আসছি।”

—” যাও তো তুমি, জানো কত আশা নিয়ে আসছিলাম মনে হচ্ছিল গিফট টিফট কিছু দিবে।”

—” গিফট দিবো তোর বিয়েতে। এখন বল শরীর কেমন তোর?

—” হুম ভালোই। দেখলাম তো যেভাবে পরিস্থিতি সামলিয়ে মিথ্যা কথা বলেছো মানুষজন তো ট্রাস্ট করবেই। ”

স্পন্দন শুভ্রতার কথা শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল……

—” তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলি আজ কোনো বিশেষ দিন বা রাত না তাহলে কেন সারপ্রাইজ দিচ্ছি তাই না?”

—-” হুম মানুষ তো বিশেষ দিনেই গিফট দিয়ে থাকে। বিশেষ দিন বা রাত ছাড়া তো কেউ গিফট দেয় না।”

—-” আমরা মানুষরা খুব বোকার মত কাজ করি জানিস তুই? বিশেষ দিন বা রাতে সারপ্রাইজ দিয়ে নিজেকে অনেক চালাক ভাবী কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমরা খুব বোকা।”

শুভ্রতা ভ্রু জোড়া নাচিয়ে বলল……

—-” কিভাবে?”

—-” তোর যে সাত মাস পর বার্থডে তোর কি মনে থাকে না?”

—-” আমার জন্ম তারিখ কেন আমার মনে থাকবে না? সবারই তো মনে থাকে।”

—” তাহলে কেন সারপ্রাইজ নামক শব্দটি ওই ব্যক্তির সাথে যোগ করা হয়? যেহেতু মানুষটি জানে তার জন্মদিন তাকে তো গিফট দিবেই তাহলে এইখানে সারপ্রাইজ দেওয়া বা সারপ্রাইজড হওয়ার কোনো কারণ আছে? হ্যাঁ এইটা ঠিক না জানিয়ে ঘর সাজানো আলাদা ভাবে পুরনো আড্ডা দেওয়ায় স্মৃতি এইগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়াতে তার ভালো লাগতে পারে কিন্তু সে সারপ্রাইজ হয় না। সারপ্রাইজ হলো কোনো বিশেষ দিন বা রাত বাদে হটাৎ যেকোনো দিন তাকে গিফট দেওয়া, কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, বা এমন কিছু করা যাতে সে সারপ্রাইজ হয়।”

—” ওহ আচ্ছা। তাহলে আমিও এখন থেকে বিশেষ কারণ বাদেই এমনি এমনি সারপ্রাইজ দিবো সবাইকে।”

স্পন্দন ও শুভ্রতা কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে গেলো। সকালের নাস্তা সেরে স্পন্দন তার অফিসে আর সাধনা তার কলেজে চলে গেলো। শুভ্রতার পরীক্ষা তাই সে বাসায় পড়া লেখা করতে লাগলো।

_______________________________

সাধনা আজ কলেজে এসেই বড় ধরনের ক্রাশ খেয়ে ফেলল। ছেলেটি দেখতে যতটা না কিউট তার চেয়ে দ্বিগুণ কিউট ছেলেটার নাকটা। সাধনা ছেলেটির নাক দেখেই ছেলেটিকে পছন্দ করে ফেলল। সাধনার ফ্রেন্ড সন্ধ্যা সাধনার কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল……

—-” ক্রাশ খাওয়ার জন্য তুই অন্য কিছু খুঁজে বের করতে পারলি না শেষমেশ নাক দেখে ক্রাশ। বিশ্বাস করো ইতিহাসের পাতায় নতুন করে লেখা হবে নাক দেখে ক্রাশ খেয়ে অমুক কলেজের এক ছাত্রী পাগল হয়ে গেছে।”

সাধনা সন্ধার মাথায় আস্তে চড় মেরে বলল……

—” পাগল হয়ে যাবো কেন? আমি তো জাস্ট ক্রাশ খেয়েছি। জীবনে শুনেছি লাভ এট ফাস্ট সাইড কিন্তু আমার বেলায় হয়ে গেছে ক্রাশ এট ফাস্ট সাইড। ”

—” তাহলে তোর ওই কাজিন আই মীন স্পন্দন ভাইয়ার কি হবে?”

—” ঠিকই তো দুইটাই তো ক্রাশ তাহলে কোনটা রেখে কোনটার কথা বলবো?”

সন্ধ্যা নিজের মাথায় হাত রেখে বলল……

—-” দুইটার পিছনের ঘুরতে থাক যখন বুঝবি কাওকে ভালোবেসে ফেলেছিস তখন না হয় একটা ছেড়ে দিবি।”

—-” ওয়াও গ্রেট আইডিয়া।”

—” এখন চল লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়তে বসি।”

—” পড়তে বসবো ভালো কথা কিন্তু দ্বিতীয় ক্রাশের নাম কি?”

—-” ওর নাম মুগ্ধ। আমাদের থেকে তিন বছরের সিনিয়র।”

সাধনা সন্দেহ জনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল……

—-” কেমনে জানিস ওর ডিটেলস?”

—-” আমার বয়ফ্রেন্ড সমুদ্রর বেস্ট ফ্রেন্ড মুগ্ধ।”

—-” শালী প্রেম করস এক বছর ধরে আর আমাকে জানাস মাত্র এক সপ্তাহ আগে দেখিস বিয়ার পর তোর জামাই আর তুই মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘটকালি করবি বলে দিলাম।”

—” তোকে সব বলাই আমার ভুল হইছে। এখন চল গিয়ে কোথাও বসি।”

—” হুম।”

সন্ধ্যা ও সাধনা কিছুটা পথ যেতেই সমুদ্র আর মুগ্ধকে দেখতে পেলে। সাধনা তো লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না। মুগ্ধ বিষয়টা খেয়াল করে ইগনোর করলো সাধনাকে।

চলবে……..

বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।