সম্পর্কের মায়াজাল ২ পর্ব-০১

0
2964

#সম্পর্কের_মায়াজাল_২
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব১

মেরুন কালার লেহেঙ্গা গাঁয়ে দিয়ে বিয়ে বাড়ির স্টেজে উপস্থিত হলো শুভ্রতা। শুভ্রতা-কে স্টেজে উঠতে দেখে কয়েকজন ছেলে শিস বাজা-লো। বিয়ে ভর্তি মানুষের সামনে নাচতে শুরু করলো শুভ্রতা। হটাৎ মিউজিক অফ হয়ে যাওয়ায় শুভ্রতা নাচ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়লো। আশে পাশে সবাই জিজ্ঞাসা করছে কেন মিউজিক বন্ধ করা হলো। সবাইকে চমকে দিয়ে ঝড়ের গতিতে কেউ একজন স্টেজে উঠে শুভ্রতার গালে চড় বসিয়ে দিলো। শুভ্রতা ভয়ে ভয়ে সামনে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার সামনে স্বয়ং স্পন্দন দাঁড়িয়ে আছে। স্পন্দনের চোখের সাদা অংশ রাগে লাল হয়ে আছে। এত মানুষের ভিড়ে গালে থাপ্পড় পড়াতে শুভ্রতা লজ্জায় চোখ খুলতে পারছে না। স্পন্দন তখন চেঁচিয়ে উঠে বলল…….

—” তোকে কতবার বলেছি এইসব ড্রেস পরে বিয়ে বাড়িতে আসবি না, যদি না আমি তোর সাথে আসি। তুই আমার কথার অবাধ্য করে এসেছিস আবার নাচতেও শুরু করে দিয়েছিস।”

শুভ্রতা এখনও চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। বিয়ে বাড়ির সবাই তো এখন নাটক দেখতে ব্যাস্ত। মানুষের একটা বদ অভ্যাস কোথাও কিছু দেখলে আশে পাশে যারা আছে তাদের তো ডেকে আনবেই আবার বাসায় ফোন করেও আসতে বলবে। স্পন্দন সবার দিকে একবার তাকিয়ে শুভ্রতার হাত ধরে টেনে স্টেজ থেকে নামিয়ে বাড়ির গেইটের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

রাস্তায় এসে শুভ্রতা বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। স্পন্দন শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল……

—” আমাকে না জানিয়ে কেন এসেছিস? আমি তো তোকে বারণ করে ছিলাম বিয়েতে না আসার জন্য।”

কান্নার জন্য শুভ্রতা কথা বলতে পারছে না। স্পন্দন এইবার ধমক দিয়ে বলল……

—” আরেকটা চকোলেট কানের নিচে দিবো না-কি ভালোই ভালো উত্তর দিবি?”

—” মিষ্টি ফোন দিয়ে জোর করছিল আসার জন্য। হাজার হোক বান্ধবীর বিয়ে তো না আসলে লোকে কি বলবে।”

—” এসেছিস ভালো কথা আমাকে জানালি না কেন?”

শুভ্রতা এইবার নাক টেনে ছোট ব্যাগ থেকে টিসু বের করে নাক পরিষ্কার করে বলল…….

—” বললে কি আমায় আসতে দিতে তুমি? তুমি তো বলেই দিয়েছো, বিয়ে বাড়িতে যেতে হবে না যদি খুব বেশি ইচ্ছা হয় তাহলে বোরকা পরে যেতে। বিয়ে বাড়িতে বোরকা পরে আসলে কি আর মজা করতে পারবো?”

স্পন্দন এইবার আরেকটি চড় বসা-লো শুভ্রতার গালে। শুভ্রতা দুই গালে হাত দিয়ে বলল……

—” এখন আবার কি করলাম যে তুমি আবার থাপ্পড় মারলে? স্পন্দন ভাইয়া!”

—-” বাসায় চল পরে বলবো। এমনিতেই আজ মানুষ ফ্রী-তে সিনেমা দেখেছে আর দেখানো ঠিক হবে না।”

শুভ্রতা-কে ধমক দিয়ে বাইকে উঠিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো স্পন্দন। এই একটা মানুষ যাকে শুভ্রতা বাঘের মতো ভয় পায়। স্পন্দন সম্পর্কে শুভ্রতার ফুফাতো ভাই হয়। শুভ্রতা কি করবে কোথায় যাবে সব এই স্পন্দন ঠিক করে দিবে। শুভ্রতার দু চোখের বিষ হলো স্পন্দন যাকে সে এক মিনিটের জন্যও দেখতে পারে না পুরাই অসহ্য লাগে তার কাছে কিন্তু বাধ্য হয়ে মেনে নেয়।

__________________________

সাধনা একা একা রুমে বসে আছে। চিন্তায় কপাল ভাঁজ করে হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর এমন একটি ভাব করছে যেন খুব চিন্তা করছে সে। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে দ্রুত পা চালিয়ে দরজা খুলল। দরজার বাহিরে শুভ্রতা ও স্পন্দনকে দেখে দরজার সামনে থেকে সরে গেলো। স্পন্দন বাসার ভিতরে প্রবেশ করে সাধনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল…….

—-” আমাকে না জানিয়ে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য তোর বড় বোনের গালে দুইটা থাপ্পড় পড়েছে এখন বল তোর গালে কয়টা দিবো?”

সাধনা ভয়ে দুই গালে হাত দিয়ে বলল…..

—” আপু হেল্প মী, একটু আগেই মুখে ফেসিয়াল করেছি স্পন্দন ভাইয়ার থাপ্পড় মানেই পাঁচ আঙ্গুল গালে সুন্দর ভাবে বসে পড়া।”

শুভ্রতা সাধনার সামনে বাহির থেকে সাহস এনে বলল…..

—” ও কি করেছে?”

স্পন্দন সাধনার দিকে তাকিয়ে বলল……

—-” তোর বোনকে জিজ্ঞাসা করেছি শুভ্রতা কোথায়? তখন ও আমায় মিথ্যা বলে। বলে আপু আছে এইখানেই। আমি যখন তোকে ফোন দিতে বললাম তখন তোর কণ্ঠ নকল করে আমার সাথে কথা বলে। তোর বোন ভুলে গেছে এই স্পন্দনের আড়ালে আবডালে যতই কিছু করুক সব বিফলে যাবে। এই স্পন্দন ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না এইটা কি ওর জানা ছিল না?”

শুভ্রতা সাধনার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো বেচারি ভয়ে কান্না মাখা মুখ করে রেখেছে।

শুভ্রতা বলল……

—” আমার জন্যই তো ও মিথ্যা বলেছে তাহলে দোষও আমার। ওর শাস্তি আমায় দিতে পারো।”

—” ওকে আজ আর কাওকে শাস্তি দিবো না। ইম্পর্টেন্ট মিটিং রেখে চলে আসছি। তোরা দুই বোন আমাকে ফকির না বানিয়ে ছাড়বি না দেখছি।”

স্পন্দন শুভ্রতা-দের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। সাধনা দ্রুত পা চালিয়ে দরজা বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল……

—-” যাক বাবা বেচেঁ গেছি। স্পন্দন ভাইয়াকে দেখলে কেন যেন আমার হার্ট বিট খুব দ্রুত গতিতে চলাচল করে।”

শুভ্রতা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আর বলছে…….

—” আমার এই জীবনে যদি আমি কাউকে ঘৃনা করি সে হলো এই স্পন্দন ভাইয়া। জীবনে কি এমন পাপ করেছি যার জন্য এই ফাজিল,অসভ্য লোকটা আমার কাজিন হয়েছে কে জানে? আমার তো ভাবলেই গা শিউরে উঠে এই ভেবে যে, এই লোকটার সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে। এই লোকটা আমার অতি আদরের ফুফু-জানের এক মাত্র ছেলে। আমার ধারণা ফুফু এই স্পন্দন নামক ঝামেলাটাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছে এই জন্যই আমাদের সাথে এই ব্যাবহার করে।”

সাধনা শুভ্রতার পিছন পিছন যাচ্ছে আর বলছে……

—” স্পন্দন ভাইয়ার আড়ালে এত কথা বলিস সামনে আসলে তো ভয়ে কাঁপতে থাকিস তখন কই থাকে তোর এই বাঘিনী রূপ?”

শুভ্রতা বাঁকা চোখে সাধনার দিকে তাকালো। রাগী গলায় বলল…….

—” ঘরের শত্রু যখন বিভীষণ তখন অন্যজনকে বকে আর কি লাভ।”

—” আপু তুই যতই রাগ করিস আমার কিন্তু স্পন্দন ভাইয়ার রাগ, কথা, হাঁটা, থাপ্পড় সব কিছুই ভালো লাগে। তুই তো জানিস ভাইয়া আমার সব থেকে বড় ক্রাশ। আমি তো ভাইয়াকে খুব খুব পছন্দ করি।”

—” ভুলেও ওই ছেলের দিকে ভালোবাসার নজরে তাকাবি না। যদি তোর আর স্পন্দন ভাইয়ার বিয়ে-টিয়ে হয় তাহলে বুঝবি তোর জীবন শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে। ওই ছেলের বউ কোনোদিন টিকবে না। না জানি কপালে কয়টা বিয়ে আছে স্পন্দন নামক ঝামেলাটার? আমাদের ভাবী যারা হবে ভাবছি তাদের নিয়ে একটা মহিলা সংস্থা বানাবো কম হলেও তো হাজার জন হবে।”

সাধনা মুখ ভেংচিয়ে ফোন ঘাটতে থাকে। শুভ্রতা জামা চেঞ্জ করে লং টপস ও প্লাজো পরে চুল খোঁপা করে সোফায় পা তুলে কানে ইয়ার ফোন গুঁজে দিয়ে গান শুনতে লাগলো।

___________________________

স্পন্দন অফিসে আসা মাত্রই তার মেজাজ এক হাজার ডিগ্রি হয়ে গেলো। অফিসের কর্মচারীরা কেউ ঠিক মত কাজ করছে না আড্ডায় কাজের জায়গাটাকে মাছ বাজার বানিয়ে রেখেছে। স্পন্দন এসেই সবার দিকে না তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো…….

—” মনে হচ্ছে নতুন কোনো চাকরি পেয়ে গেছেন সবাই তো কবে থেকে জয়েন করছেন?”

অফিসের কর্মচারীরা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। স্পন্দন মাথাটা শান্ত রেখে বলল……

—” আমার কাছে সময়ের খুব দাম। সময় মতো কাজ না দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। আপনারা কাজের সময় কাজ করবেন আড্ডার সময় আড্ডা দিবেন কিন্তু কাজের সময় আড্ডা দেওয়া আমার বরাবরের জন্যই অপছন্দ।”

স্পন্দন ভিতরে চলে গেলো। এসেই ফোন দিলো শুভ্রতা-কে…….

—” কি করছিস?”

শুভ্রতার এমনিতেই মাথা গরম তার উপর এখন ধমক দিয়ে বলছে তাই সেও বলল…….

—” বিমান চালিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদায় হচ্ছি যেন তোমার মত ঝামেলা আমার সামনে না আসতে পারে।”

—” বাহ মুখের বলি তো ভালোই ফুটছে। এখন বাসায় আসলে তোকে খুন করে মাটি চাপা করে দিবো বলে দিলাম।”

—” ওইটা ছাড়া আর কি পারো? শুনো আব্বু আম্মুকে তাড়াতাড়ি বাসায় পাঠিয়ে দিও। ”

—” মামা মামী রাতে আসবে আর তোরা দুই বোন সাবধানে থাকিস। বায়।”

স্পন্দন ফোন কেটে দিলো। শুভ্রতা আবারো গান শুনতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।

রাত আটটার দিকে হটাৎ করেই সাধনা………..

চলবে………..