সর্বনাশীনি তুমি পর্ব-০৩

0
302

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:৩
#Mishmi_muntaha_moon

ক্লাস করছি গোমড়া মুখ করে। সকালে ক্লাসে ঢোকা মাত্রই ক্লাসমেটদের জিজ্ঞাসাবাদ। অবশ্য দোষ আমারই আমি ক্লাসের সবাইকে আমার বিয়ের কার্ড বিলীন করেছি এই নিজ দুইটা হাতে।কিন্তু বিয়ে টা যে এইভাবে ভেঙে যাবে কে জানতো।
মারজিয়ার ডাকে মুচকি হেসে ওদের সাথে মাঠের সবুজ ঘাসে বসে পড়লো উপমা। উপমাকে দেখে শুরু হলো সেহরিশের কথা।ক্লাসে এসে সব ঘটনা বলার পর থেকেই ওদের মুখ চলছে আর উপমার টাইটেন ধৈর্য।

‘ আহা কি একটা ভুল করলি।আমি তোর পরিবর্তে হলেতো বিয়েটা করেই নিতাম।আর সকাল বিকাল রাত শুধু চুম্মাইতাম।’

জুইয়ের বেশরম কথা সারাজীবনকার।শুনে চোখ মুখ কুচকে ফেললাম
‘ কি বেশরম কথাবার্তা।বেচারা উনি শুনলে তো নিশ্চিত অজ্ঞান হয়ে যেতো।`

‘বেচারা নাকি উনি?’

লাবিবার কথার টোন শুনে ওরা তিনজন সমস্বরে হাসতে লাগলো।শেষমেষ ওদের সাথে কথায় না পেরে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে গেলাম।


রাস্তায় যাওয়ার সময় আরেকদফা নজরে পড়লো সেহরিশকে।কারো সাথে হেন্ডশেক করছে।হাসি মুখে গাড়ির ভিতরে লোকটাকে বসিয়ে নিজেও বসবে।উপমার রিকশা টা আস্তে আস্তে সেহরিশদের পেরিয়ে যাবে তখনি চোখ তুলে তাকালো,তাকিয়েই রইলো শান্ত দৃষ্টিতে সাথে সাথেই উপমা চোখ ফিরিয়ে নিলো।রিকশা অনেকটা সামনে বাড়তেই উপমা রিকশা দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেখতেই দেখে এখনো তাকিয়ে আছে।ধরা পরে গিয়ে তারাতারি মাথা সোজা করলো।

ইশফাদের বাড়ি থেকে ওকে দেখে এসে বাড়ি ফিরে।ক্লান্ত দেহটা বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়লো।

__
রাতে উপমাদের পাশের বাড়ির রিয়া ছাদে যাবে বলে ডাক দিতেই ওর সাথে ছাদে গেলো।ঝড়োহাওয়া বইছে।
ছাদে গিয়ে রেলিং এ পা বসলাম পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো একটু হেরফের হলে নিচে পরে স্পট ডেড।উপমাদের থাকার বিল্ডিং টা ৭তলা অর্থাৎ অনেক উচু। উপমার বাতাসের ঝাপটায় চুল মুখে বারি খাচ্ছে বারংবার।
‘এই ওইটা সেহরিশ ভাইদের বাড়ি না।’

রিয়ার কথায় ঘাড় ঘড়িয়ে তাকায় উপমা।সেহরিশ,সাদাত আর সাথে একটা মেয়ে আর সেহরিশের বাবা একসাথে চেয়ার পেতে বসে আছে। সেহরিশদের ছাদে সুন্দর করে মরিচ বাতি দিয়ে ডেকোরেট করা।ওইগুলার আলোতে কিছুটা দেখা যাচ্ছে।মাঝে ২টা বিল্টিং এর পর সেহরিশদের বিল্ডিং। সেহরিশ কথার মাঝেই উপমাদের ছাদে তাকাতেই ভ্রু কুচকে যায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে উপমা তারাতারি করে রেলিং থেকে নেমে দাঁড়ায়।সেহরিশের পাশে বসে থাকা মেয়েটা ডাক দিতেই উপনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওই মেয়েটার দিকে দৃষ্টি ফেলে।

নিচে এসে দেখল উপমা ওর বাবা এসে পরেছে।উপমাকে দেখে একটু বকলো এমন ওয়েদার এ ছাদে কেনো যায়।আম্মুকে রান্নাঘরে যেতে দেখে উপমাও ওর আম্মুর পিছে যায়। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর আম্মু কাজ দেখলো।উপমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই মুচকি হেসে গলা ঝেড়ে বলল

‘ও আম্মু শুনো একটা কথা’

‘এমন ঢং না করে বল’

এমন বাকা কথা গিলে আগ্রহ নিয়ে বললো
‘ছাদে গিয়ে দেখলাম রোকেয়া আন্টির দুই ছেলে উনার বাবা আর একটা মেয়ে ছিলো। ‘

‘তো?’

‘মেয়েটা কে গো?’

উপমার কথায় ওর আম্মু ভ্রু কুচকে ফেললো।কথার জবাব তখনি না দিয়ে আবারও কাজ করতে লাগলো।কাজের মাঝেই বলল

‘আমি কি ওদের জাসুসি করি যে জানবো ওদের ফেমিলির কথাবার্তা।’

মন খারাপ করে যেতে নিবে তখনি ওর আম্মু ভাবুক হয়ে বলল
‘ওহ তোকে তো বলতেই ভুলে গেছি।রোকেয়া আপার স্বামী তো আরেকটা বিয়ে করেছে। তো ওই মহিলার ঘরে একটা মেয়েও আছে।হয়তো ওই মেয়েটা হবে।’

শুনে উপমা বেশ অবাকই হলো।এই বিষয় জানা ছিলো না ওর।

__
কলেজে যেতেই উপমা শুনতে পেলো আরেকটা কাহিনি। আজ নাকি রোকেয়া শ্বাশুড়ির মৃত্যুবার্ষিকী। সব দিকে যেনো দাওয়াত চলছে।সেহরিশ সকল গরীব অসহায় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, ধনী সকলকে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে।
কলেজেও এসেছে সকল ক্লাসে বিলীন করে স্যার দের সাথে বিনয়ী ভাবে কথা বলছে।

‘বাজ ভালোই তো দাওয়াত হয়ে গেলো আজ’

মারজিয়ার কথায় ভাবনার সুতো কাটে।আমি ওদের দিকে তাকিয়ে শুধু হাসলাম।জুই বলল
‘সেহরিশ নামটা কিন্তু দারুন।আর মানুষটা তো ড্রিমবয়।দেখ আজ আমার ড্রেসের সাথে মেচিং মেচিং পাঞ্জাবি। হাহা’

ওর কথায় বিরক্ত হয়ে বললাম
‘উফফ চুপ থাক তো জুই।উনার থেকে দূরে থাকতে পারলেই ভালো।’

‘তা তো সম্ভব হচ্ছে না’

কন্ঠটা শুনে পিছে ফিরতেই উপমা সেহরিশকে দেখে এক পা পিছিয়ে দাড়ালো।
‘হ্যালো ভাইয়া’

জুইয়ের কথায় গম্ভীর মুখে কিছুটা হাসি ফুটিয়ে জুই এর কথার জবাবে বলল
‘হ্যালো।’
বলে আবার উপমার দিকে তাকিয়ে বলে
‘আমি তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি। গেটের বাইরে ওয়েট করছি আসো।’

বলেই চলে গেলো। আমি এখনো থম মেরে আছি কি আজব কথাবার্তা বলে গেলো, উনি যাবে বাসায় যাক ওকে কেনো যেতে বলছে।উফফ
ওদের হাসির আওয়াজ শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো উপমা
‘যাও তোমার উনি ডাকছে।’

ওদের কথায় রেগে বলল উপমা
‘কি অসভ্য কথা বার্তা আমার উনি মানে কি।’

বলে কেটে পরলো ওইখান থেকে।সেহরিশ গাড়িতে হেলান দিয়ে কিছু ছেলের সাথে কথা বলছিলো। উপমা কে দেখে চলে গেলো ছেলে গুলো।সেহরিশ নিজে গাড়িতে বসে পাসের সিটের দরজা খুলে দিলে উপমা চুপ করে বসে পরলো।
পুরো রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলল না আর।

_
বাড়িতে যেতেই উপমার আম্মু সেহরিশ কে দেখে তো রীতিমতো অবাক।তারাতারি বসতে বলে চা বানিয়ে নিয়ে আসে।

‘আরেহ সেহরিশ বাবা হঠাৎ এলে যে। আহারে এই প্রথম আসলে কিছু দিতেও পারলাম না।’

আম্মুর কথা শুনে অবাক হয়ে দেখলাম।কতো দরদ।উপমার আম্মুর কথায় সেহরিশ বলল
‘এতো অস্থির হওয়ার প্রয়োজন নেই আন্টি।আজকে আমার দাদুর মৃত্যুবার্ষিকী তো তাই কিছু আয়োজন করা হয়েছিলো। আম্মু তো একটু অসুস্থ তাই আমি আসলাম।

‘কিহ তোমার আম্মু অসুস্থ। অসুস্থ হলো কিভাবে’

সেহরিশ ভ্রু চুলকে ধীর কন্ঠে বলল
‘ওই আরকি প্রেশার চাপ দেওয়ার কারনে’

কিছুক্ষন বসে সেহরিশ বিদায় নিয়ে যেতে নিবে তখন উপমা বলল সেহরিশের আম্মুকে দেখে আসবে।ওর আম্মুও মত দেয়ায় সেহরিশ আবারও উপমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

সেহরিশদের বাড়িতে গিয়ে বেশ কিছু অপরিচিত মুখ দেখে ঘাবড়ে যায়।উপমার অবস্থা দেখে সেহরিশ হাত ধরে রোকেয়ার রুমে নিয়ে যেতেই সেইদিনের মেয়েটাকে বসে থাকতে দেখে।উপমা রোকেয়া বেগমের কাছে পা বাড়াতে নিতেই হাতে টান পড়ায় থেমে যায় হাতে তাকাতেই সেহরিশ ছেড়ে দেয় হাত।উপমা মুখে হাসি টেনে গিয়ে রোকেয়ার পাশে বসে। মেয়েটাকে গম্ভীর মুখে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে সেহরিশের দিকে তাকায়।সেহরিশ শান্ত ভংগিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
কিছুক্ষন হতে না হতেই সেহরিশের বাবা সেহরিশকে ডাক দিতেই সেহরিশ গম্ভীর মুখে রুম থেকে বেরিয়ে পরে।উপমা বাহিরের থেকে চোখ সরিয়ে রোকেয়ার দিকে তাকাতেই উনার চিন্তিত মুখশ্রী নজরে পরে।ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে যায়।তার কিছুক্ষন পরেই সেহরিশের উচ্চ স্বরের কথার আওয়াজে উপমা কেপে উঠে।
কার সাথে এমন রাগারাগি করছে দেখার জন্য উপমা উঠে রুম থেকে বেরোতে নিতেই রোকেয়া হাত ধরে আটকে বসিয়ে চিন্তিত মুখেই বলে
‘বাহিরে যেও না মা।’

উনার কথায় আর গেলো না।উপমাকে নিয়ে সেহরিশের বাবা রেগে বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে গেলো,মুখে যেনো কালো মেঘ জমে গেলো তাৎক্ষনাৎ।আর সেহরিশ ওর জন্যই নিজের বাবার সাথে লড়ে পড়ছে তা দেখে খারাপও লাগলো।হঠাৎ সেহরিশ রুমে এসে উপমার হাত টেনে ধরতেই উপমা ঘবড়ে গিয়ে সেহরিশের দিকে তাকাতেই আঁতকে ওঠে। চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে।দাতে দাত খিচে উপমাকে রুমের থেকে নিয়ে যেতে লাগলো।
পিছন থেকে শুধু রোকেয়ার চিন্তিত স্বর শোনা গেলো
‘সেহরিশ শান্ত হ বাবা।’

কিন্তু রোকেয়ার কথা সেহরিশ কানে নিলে তো।বাহিরে গিয়ে গাড়ির সামনে হাত ছেড়ে দারিয়ে রাগ সংবরণ করার চেষ্টায় কপালে হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।
উপমা ঢোক গিলে একজায়গায় দাঁড়িয়ে আছি নড়ছে চড়ছে না।যদি রাগ ওর উপর দিয়ে আবার ছাড়ে।
কপাল থেকে হাত সরিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে উপমার গালে স্পর্শ করতেই কেপে উঠে।সেহরিশের অতি শান্ত চাহনিতে উপমার বুক কেপে উঠলো।

প্রায় ৫মিনিটের মত এভাবে তাকিয়ে থেকে উপমার বাড়ির রাস্তায় হাটতে লাগলো। উপমা কিছুক্ষন স্থব্দ হয়ে দাড়িয়ে থেকে ধীর পায়ে সেহরিশের পিছে পিছে হাটতে লাগে।বুক যেনো এখনো ট্রেনের গতিতে ছুটছে। গালে যেনো এখনো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ লেগে আছে।

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।)