সর্বনাশীনি তুমি পর্ব-০৭

0
222

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:৭
#Mishmi_muntaha_moon

পড়ালেখা সিরিয়াসভাবে শুরু করলো উপমা।পরীক্ষার তো আর বেশি সময় নেই।ঘুমে ঝুমছে আর পড়ছে।ঘরের সকলে গভীর ঘুমে।হঠাৎ ঘর কাপানো মোবাইলের রিং এ কেপে উঠে উপমা। তারাতারি সাইলেন্ট করে বুকে ফু দিয়ে ফোন তুলে কানে দেয়।

‘উপমা,,,`

সেহরিশের ধীর নরম কন্ঠে উপমার শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়।এখনো যেনো অনুভূতির স্রোত কমে নি।ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রে অনূভুতির স্রোত কি কখনো শেষ হয়।আবারও ডাক দিলে উপমা বই বন্ধ করে বলে

‘হুম বলুন ঘুমান নি এখনো?’

‘নাহ একটা কাজ ছিলো দেরি করে বাড়ি ফিরেছি।তুমি রাত জেগে পড়ছো কেনো?’

‘তাহলে কখন পরবো?’

‘ভোর বেলা উঠে আর সন্ধ্যার দিকে পড়বে।রাত জাগলে শরীর অসুস্থ হবে।’

সেহরিশের কথায় উপমা পড়ার টেবিলের চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে

‘আমার তো প্রতিদিনই দেরি হয় পড়তে বসি অথবা না বসি।’

‘কেনো?’

‘বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতাম তো তাই।’

বলে মুখ টিপে হাসলো উপমা।ওই পাশ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে উপমা মৃদু কন্ঠে ডেকে বলে

‘শুনছেন?’

‘তুমি কি ভেবেছো তোমার খবরা খবর আমার কাছে ছিলো না।তোমার সকল খবর আমার কাছে আছে আর ছিলো বুঝলে!’

উপমা কিছু বলল না।মৃদুস্বরে সুধালো

‘কিন্তু আমি কিছুই জানলাম না’

‘আমি কাল ঢাকার বাহিরে যাচ্ছি ১ দিনের জন্যই কাল বাদে পরশু চলে আসবো।’

‘ওহ আচ্ছা নিরাপদ ভাবে গাড়ি চালাবেন।’

__
অলস ভংগিতে লাইব্রেরি তে বসে আছে উপমা।এতো কঠিন সাব্জেক্ট গুলি দেখলেই মাথা ঘুরায়।
চোখ জ্বালাপোড়া করতেই বই বন্ধ করে উঠে একটা উপন্যাস খুজতে লাগলো।

‘ওহ তুমিই তো সেই রমনী। তোমাকে কাছ থেকে ভালোভাবে দেখতে চেয়েছিলাম আমি।’

হাতের উপন্যাস টা আবারও শেল্ফ এ ঢুকিয়ে পিছে তাকালো উপমা।কিন্তু না এই ছেলেটার আগা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোখ করার পরেও মনে হলো না আগে কখনো দেখেছে।

‘আপনাকে তো আমি চিনি বলে মনে হচ্ছে না।’

‘অবশ্যই তুমি আমাকে চিনবেনা এইটাই স্বাভাবিক। আমি হলাম সেহরিশের ফ্রেন্ড ইউ নো ক্লোস ফ্রেন্ড।’

কথার ধরন দেখে উপমা মনে মনে ভাবলো এই ছেলেটা কখনই সেহরিশের ফ্রেন্ড হতেই পারে না।তাই ইগনোর করে চলে গেলো।

__
একদিনে যেনো সেহরিশকে ছাড়া বোর হয়ে গেছে উপমা।না মন বসছে পড়ায় না অন্যকিছুতে।উপমা পড়া ছেড়ে উঠে রান্নাঘরে গেলো।এতোদিনে ঠিক জেনেছে সেহরিশের পছন্দ অপছন্দ।
ওর মার থেকে কিছুটা হেল্প করে নিজেই বিরিয়ানি রান্না করলো।রান্না শেষ হতেই আগে সবার আড়ালে একটা বক্সে সেহরিশের জন্য তুলে রাখলো।
উপমার বাবা দেখে তো বেজায় খুশি। তার মেয়ে যে কখনো খাবারে হাত দেয় না দিতে চায় না সে আজ নিজ হাতে বিরিয়ানি রান্না করেছে।

উপমা নিজেই প্লেটে বেরে তার বাবার জন্য নিয়ে গেলো।অনেক প্রশংসা করলো আর সাথে হাতে কিছু টাকা দিলো।উপমা খুশি হয়ে তারাতারি রুমে গিয়ে টাকাগুলি কলেজ ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখে দিলো।

_
সকাল হতেই কলেজ ব্যাগে বক্স নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।গিয়ে ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসে যেতেই বিস্মিত হলো।একটা ছেলের সাথে সেহরিশের ভয়ংকর মারপিট চলছে।সেহরিশ তো ছেলেটাকে ধুমসে ঘুষি দিতেই আছে।

‘কিরে ছেলেটা আমাদের কলেজের রাজনীতির দলে না।’

‘হুম ওই ফারুক জাহিদ সবই তো এই ফরহাদের ছেলেপেলে।কলেজে কি দাপট নিয়েই না চলে।’

যেখানে উপমা কাউকে চিনে না সেখানে ওর ফ্রেন্ড যেনো এ টু জেট সব জানে।মারজিয়া আর লাবিবার কথোপকথন শুনেও গুরুত্ব দিলো না উপমা।এখন তো তার শুধু সেহরিশের চিন্তা।সেহরিশ খাচ্ছে একটা তো দিচ্ছে দশটা।কিন্তু ওই একটা তেও তো ছেলেটা কম জোরে দিচ্ছে না।

‘ওই সেহরিশ ভাইকে কি পাগলা কুত্তায় কামড় দিসে।এভাবে মারপিট করছে কেনো হঠাৎ। ‘

জুইয়ের কথা শুনে রাগান্বিত হয়ে ওর দিকে তাকালো উপমা।চিন্তিত স্বরে বলল

‘উনি শুধু শুধু কাউকে এভাবে ধুয়ে দেবে না বুঝলি।ওই ছেলেটা কিছু করসে নিশ্চিত। ‘

বলে উপমা থামাতে গেলো।কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না।উপমা মাঝে গেলে যে দুই চারটা খাবে তা ঠিক বুঝতে পারলো।ফরহাদ ছেলেটার পিছে যে ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের উদ্দেশ্যে উপমা কিছুটা ধমকের সুরে বলল

‘দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন ধরেন এই অসভ্য ছেলেটাকে।’

বলে আবার সেহরিশের উদ্দেশ্যে বলল

‘সেহরিশ কি করছেন থামুন।প্লিজ ছাড়ুন শুনুন আমার কথা।’

সেহরিশ যেনো উপমার কথা শুনতে পেলো না।সেহরিশের এমন আচরণ দেখে উপমা হতাশ হয়ে বলল

‘শুনছেন?’

উপমার দিকে সেহরিশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফরহাদ ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে পিছের ছেলেগুলোর উপর ফালালো।সাথে সাথে ছেলেটা আবারও সেহরিশের দিকে তেড়ে আসতে নিলে সেহরিশ কিছু ছেলেকে ইশারা করে তারা গিয়ে ফরহাদকে ধরে।

‘তোকে তো পরে দেখে নিবো সেহরিশ!’

ফরহাদের কথা শুনে সেহরিশ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে

‘কলেজের নেতা হয়েই এতো দাপট যে আমার সাথে লড়তে আসিস।চাইল্ডিশ বয়।

বলে গায়ের পাঞ্জাবি টেনে ঠিক করতে করতে উপমার হাত ধরে বিপরীত পথে হাটতে লাগে।

__
ঠোঁটের কোনে রক্তে লাল হয়ে আছে সেহরিশের। উষ্কখুষ্ক চুলগুলো, ভ্রু কুচকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে ভীষণ কিউট লাগছে।
উপমার নিজের ঠোঁট কামড়ে হাতটা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে সেহরিশের চুলগুলো ছুয়ে দিলো।সেহরিশ মাথা তুলে উপমার দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তার চুলের ভাজে হাত দিয়ে ধরে টেনে কপালে চুমু খায়।উপমাও চুপটি মেরে বসে থেকে মৃদু কন্ঠে বলে

‘ মারপিট করছিলেন কেনো কতো চোট লাগলো।আগে থেকেই তো মাথা ফাটিয়ে রেখেছিলেন এখন আবার ঠোঁট ও ফাটালেন।’

বলে ওড়নার কোনা দিয়ে সেহরিশের ঠোঁটের রক্ত মুছার চেষ্টা করলো কিন্তু রক্ত তো ততক্ষণে অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছিলো।যতটুকু সম্ভব মুছে ওড়না ঠিক করে বসে।

‘ ওইদিন এই ফরহাদই আমাদের গাড়িটা এক্সিডেন্ট করিয়েছিলো তাই তার শিক্ষা দেওয়া উচিত ছিলো। আর সেইখানে আমি একা ছিলাম না যে দমে যাবো তোমার কিছু হলে ওকে জ্যান্ত রাখতাম না আমি এতোদিনে।’

কথাটা শুনে উপমা কিছুটা অন্যমনস্ক হলো।ছেলেটা এতো নিচে নামতে পারে।এই রাজনৈতিক শত্রুতার কারনে কারো জান নিতেও দ্বিধাবোধ করে না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলেজের ব্যাগ থেকে বক্স বের করে সেহরিশের সামনে নিয়ে হাসিমুখে বলে

‘ সারপ্রাইজ। আমি নিজে আপনার জন্য বিরিয়ানি রেধে নিয়ে এসেছি।’

উপমার কথায় সেহরিশ কিছুটা হেসে অবাক হয়ে বলে

‘বাহ তুমি রেধেছো নাকি!তাহলে রেধেছো যখন খাইয়েও দাও। ‘

উপমা সেহরিশের কথার আগেই হাত ধুয়ে লোকমা বানিয়ে মুখের সামনে ধরে।সেহরিশ ও বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেলো।

‘ এতো ভালো রান্না করো জানতাম না তো।’

সেহরিশের কথায় উপমা কিছুটা ভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসলো।

__
বাড়িতে উপমাকে পৌছে দেয় সেহরিশ।গাড়ি থেকে যেই নামতে নিমে তখন সেহরিশ হাত ধরে আবারও বসায়।পিছের সিট থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে ভিতর থেকে লাল কালোর জামদানী শাড়ি বের করে উপমার মাথায় পড়িয়ে দেয়।সেহরিশ কপালে কপাল ঠেকাতেই উপমা আবেশে চোখ বুজে নেয়।সেহরিশ উপমার গালে নিজের খোচাখোচা দাড়ি ঘষা দিয়ে কানে ফিসফিসিয়ে বলে

‘শাড়িতে বউ রূপে দেখতে চাই।নিজেকে এই শাড়িতে মুড়ে আমার সামনে এসো তোমাকে ভালোবাসায় মুড়িয়ে দেবো।’

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। ❤️❤️❤️)