সর্বনাশীনি তুমি পর্ব-০৮

0
223

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:০৮
#Mishmi_muntaha_moon

লুকোচুরি প্রেম করার ইচ্ছে ছিলো খুব আগে থেকেই উপমার।এখন যেনো সেই ইচ্ছাটাই পূরন হচ্ছে।লিমন ভাইয়ের জন্যও আগের মতো আর ক্ষোভ কাজ করে না।উনার সাথে বিয়ে হলে তো আর আজকের মধুময় দিন গুলো পাওয়া যেতো না।

আম্মু আব্বুর ঝগড়া শুনে ভাবনা ছেড়ে বেরিয়ে বাহিরে গিয়ে বুঝতে পারলো ঝগড়ার কারণ আবারও সেই বড় চাচা আর লিমন কে নিয়েই।উপমার সকল ফুপ্পি,ছোট চাচা এসেছে বড় চাচাদের বাড়ি আর উপমাদের ও দাওয়াত দিয়েছে।এখন তার বাবার কথা
‘একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিলো লিমন।ওকে আমিও মাফ করিনি কিন্তু এইজন্য আমি আমার ভাই বোন দের সাথে বিচ্ছেদ ঘটাতে তো পারবো না।এটা হয় না।’

উপমার বাবার কথায় তার মা কিছু বলতে নিবে তার আগেই উপমা গিয়ে ওর মার উদ্দেশ্যে বলল

‘ঠিকই বলছে আব্বু।লিমন ভাই যাই করেছে আমার সাথে যা-ই হয়েছে তা আমিও ভুলে গেছি।আর লিমন ভাইয়ের মনে আমার জন্য কিছুই ছিলো না এমতাবস্থায় বিয়েটা ভেঙে গউএছে আমাদের দুজনের জন্যই ভালো।থাক সেই কথা নিয়ে না থাকি।’

বলে চলে গেলো।উপনার মাও কিছুটা রাগলো উওমার কথায়।কিন্তু পরবর্তী তে ভাবলো উপমা যা বলেছে স্পব ঠিকই। ওই ঘটনা ভুলে গেলেই সবার উত্তম।
উপমা রুমে গিয়েবিছানায় বসলো।এখন যেহেতু সেহরিশ তার জীবনে এসেছে আগের আওব ভুলে যাওয়াই উপমার উত্তম মনে হয়।কিছুক্ষন সাত পাঁচ ভেবে সেহরিশ কে কল দিলো কিছুক্ষন রিং হতেই কল কেউ রিসিভ করে।

‘হ্যালো।’

‘হ্যালো কে?’

অন্যকারো কন্ঠ শুনে উপমা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। গলা ঝেড়ে বিনয়ী সুরে বলল

‘ আপনি কে যার মোবাইল উনি কোথায়?’

‘উনি কাজে ব্যস্ত আছে আপনি যেই হোন পরে কল করুন।’

‘উনাকে গিয়ে বলুন উপ,,,’

কল কাটার আওয়াজে মুখ তেতে উঠলো।ছেলেটার বংশ উদ্ধার করে মোবাইল রাখলো বিছানায়।ওর বাবা বলেছে বিকেলে যাবে বড় চাচাদের বাড়ি আমিও কোনো রিয়েকশন দেই নি।থাক সব ভুলে যাওয়াটাই ভালো।আর যতই হোক লিমন ভাইয়ের সাথে আগের মতো হওয়া যাবে না তো একটু দূরত্ব বজায় রাখলেই হবে।

বিকেল হতেই অলস ভঙ্গিতে রেডি হতে লাগলো উপমা।লাল রঙের থ্রি পিস পড়লো।ওড়না গায়ে জড়িয়ে চুল শক্তভাবে খোপা করে কাঠি বেধে নিলো।অনেক গরম পরেছে।চুলের একমাত্র উপায় এখন খোপা।
রেডি হয়ে উপমাভ বের হতে দেখে তার আম্মু গোমড়া মুখে সোফায় বসে ব্যাগ থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাহির করে রাখছে।ধীর পায়ে গিয়ে উপমা তার মায়ের সাথে বসে।উপমার মা তার কাজে অটল উপমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।উপমা তার মায়ের কাধে দুই হাত ভাজ করে হাল্কাভাবে মাথাটা রেখে বলল

‘ যা হয়েছে ভুলে যাও।আমিও মনে রাখি নি, জীবনে যা হয় ভালোর জন্যই হয়।তুমি গোমড়া মুখ করে বসে আছো কেনো?’

উপনার কিথা শুনে শান্ত চোখে তাকিয়ে ব্যাগ টা টেবিলে রেখে বলল

‘ জানি যা হয় ভালোর জন্যই হয়।কিন্তু বড় ভাইয়ের আচরন গুলিও ভুলতে পারছি না।উনি তো ঠিক ছেলে বউমা কে নিয়ে এখন বেশ সব ভুলে গিয়েছে।’

‘তাহলে আমাদেরও তপ সব ভুলে যাওয়া উচিত।আর উনি উনার ছেলেবউ নিয়ে ভালো আছে তাতেই ভালো কি বলো।’

উপনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো তার মা।মেয়েটা অনেক বুঝদার হয়েছে ভেবে একটা প্রশান্তিময় শ্বাস নিলো।উপমার বাবা আসতেই তারা চলল

__
উপমাকে দেখে তার ফুফাতো বোনদেরর মাঝে হুল্লোড় লাগলো।সবাই ভেবেছিলো তাদের মামা মামি আসলেও উপমা আসবে না।উপমাও হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলল।লিমনের বাবা অর্থাৎ উপমার ছোট চাচা উপমাকে দেখে হাসিমুখে বরন করলো।লিমনের কথা তুললো না একবারও। উপমাও স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলল।

উপমার বাবারা তিন ভাই দুই বোন।উপমার বড় ফুপ্পির দুই মেয়ে আর ছোট ফুপ্পি একমেয়ে এক মেয়ে এক ছেলে,ছেলেটা ছোট।
তিন বোন মিলে উপমাকে টেনে একটা রুমে নিয়ে গেলো।রুমে যাওয়ার আগে লিমনের বউ রিমু কে দেখলো সকলের সাথে হাসি মুখে কথা বলছে।
রুমে বসে বোনদের সাথে আড্ডা দেয়ার মাঝেই রিমু এলো।ভালোই মিষ্টি মেয়েটা মিশুক ভীষণ। উপমাকে চিনতে পেরে ওর সাথেও হেসে হেসে কথা বলতে লাগলো।উপমা প্রথম দিকে কিছুটা হেসে ইগনোর করছিলো কিন্তু দেখা যাচ্ছে সবাই কে রেলহে উপমার সাথেই বেশি কথা বলছে মিশতে চাইছে।কথার মাঝে এও বলল উপমাকে নাকি তার ভীষণ পছন্দ।উপমা নাভাবতে চাওয়ার সত্ত্বেও ভাবলো ‘জামাই তো পছন্দই করলো আর বউ এর আমাকে ভীষণ পছন্দ’
ভেবে নিজেই নিজেকে লাঞ্ছনা দিলো।পরবর্তীতে সব মাথা থেকে ঝেড়ে রিমুর সাথে খোলা মনে কথা বলতে লাগলো।

__
রাত হতেই সবাই চললো ছাদে।জেতে না চাওয়া সত্ত্বেও উপমাকে নিয়ে গেলো।লিমনদের ছাদ থেকে সেহরিশদের ছাদ স্পষ্ট দেখা যায়।ছাদে বসলো সকলে পাটি বিছিয়ে। লিমন চিপস আর কোক আনতে রিমু সকলের হাতে দিলো একটা একটা করে।
উপমা অলস ভংগিতে সেহরিশের ছাদে তাকাতেই হাসিমুখে সেহরিশকে নজরে আসতেই উপমার মুখে হাসি ফুটলো।
সকলে মিলে ট্রুথ ডেয়ার খেলবে বলে ডিসাইড করলো।উপমা না করলো কিন্তু কে শুনে কার কথা।
খেলা শুরু করতে নিতেই লিমনেরচোখ গেলো সেহরিশের দিকে। হাসিমুখে বলল

‘আরে সেহরিশ ভাই যে।’

সেহরিশ হেসে চুল গুলো নাড়িয়ে বলল

‘রিফ্রেশনেস হতে এলাম।’

‘আসুন আমাদের সাথে জয়েন করুন না।মজা হবে। ‘

লিমনের এক কথায় সেহরিশ রাজি হয়ে গেলো। উপমা হতবাক হয়ে বসে আছে।ভাবছে সেহরিশের কি দরকার ছিলো এইখনে আসার। আর লিমন তো আরেক একেবারে জয়েন হতেই বলে দিলো।

খেলা বেশ জমে গেছে।উপমার বোনরা সব সেহরিশের সাথে হাসি ঠাট্টা করছে।উপমা অনেকটা চুপ মেরে রইলো। সেহরিশ আড়চোখে উপমাকে দেখে কিন্তু কিছু বলে না।
খেলার মাঝে কাচের বোতল সেহরিশের দিকে পড়তে সকলে চেচিয়ে উঠে।সেহরিশের মুখোমুখি উপমা থাকায় রিমু উপমাকে বলল জিজ্ঞেস করতে ট্রুথ ডেয়ার।
উপমা চুপ থেকে গম্ভীর মুখে বলল

‘ট্রুথ অর ডেয়ার’

সেহরিশ উপমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল

‘উম,,,ট্রুথ ‘

উপমা কিছুটা নড়েচড়ে বসলো।কি জিজ্ঞেস করবে কি জিজ্ঞেস করবে ভেবেচিন্তে চোখ ছোট ছোট করে বলল

‘দুইটা করি?’

সকলে চেচিয়ে উঠলো। আর বলল না।সেহরিশ ওদের থামিয়ে বলল

‘করো।’

সেহরিশের কথায় উপমার তিন বোন আর রিমু চুপ করে গেলো।

‘ ফার্স্ট লাভ আর কোনো একটা গোপন কথা।’

সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো উপমা আর সেহরিশের দিকে।সেহরিশ লিমনের উদ্দেশ্যে বলল

‘ট্রুথ টা তো শুধু উপমা জানলেই হবে তাই না।’

লিমন পড়লো মহাবিপদে।তবুও সেহরিশ যেহেতু বড় কিছুটা লিমনে তাই হেসে বলল

‘হুম’

সেহরিশ সকলের দৃষ্টির আড়ালে উপমাকে মেসেজ দিলো।মেসেজের টোন শুনে উপমা ভ্রু কুচকে মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেজ ওপেন করতে ভ্রু কুচকে চায়।গম্ভীরতা ছেয়ে যায় পুরো মুখে।

চলবে,,,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয় নি ভুল হলে দেখে নিবেন প্লিজ)