সর্বনাশীনি তুমি পর্ব-০৯

0
216

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:০৯
#Mishmi_muntaha_moon

সেহরিশ সবাইকে আগেই বিদায় দিয়ে চলে গেলো।কিছুটা রাত হতেই উপমার সব বোনরাও গেলো উপমা রয়ে গেলো ছাদে।লিমন জিজ্ঞেস করেছিলো নিচে যাওয়ার কথা কিন্তু উপমা বলল একটু পর যাবে।তারপর লিমন আর কিছু বলে নি।

রাতের অন্ধকার নিমজ্জিত প্রকৃতি। কিন্তু শহুরে আলো কম হয় নি।কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যেতে পা বারাবে তখনি কারো আগমন। হাত টেনে উপমাকে বুকে মিশালো।
উপমার স্বাভাবিক ভংগিমার পরিবর্তন ঘটলো না।কানে কারো স্পর্শে কেপে উঠলো তার পরেই আবার কামড়ের ব্যাথায় লাফিয়ে সেহরিশ থেকে ১হাত দূরে গিয়ে দাড়ালো।
অবাক হয়ে তাকিয়ে সেহরিশকে বলল
‘কি করছেন?আমার কানে কামড় দিলেন কেনো বিড়ালদের মতো?’

‘কেনো বিড়াল তোমাকে কামড় দিয়েছিলো নাকি কোনো এককালে?’

সেহরিশের থেকে উপমা মুখ ফিরিয়ে নিলো।সেহরিশ রেলিঙে হেলান দিয়ে দারাতেই উপমা ধীর কন্ঠে বলল

‘আপনি জানতেন লিমন ভাই আমাকে বিয়ে করতে চাইছে না উনি অন্য কাউকে ভালোবাসে?’

উপমার কথা শুনে সেহরিশ উপমাকে নিজের দিকে ফিরালো।সামনের চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে বলল

‘আমি গায়ে হলুদের রাতে জেনেছি।লিমন নিজে এসেই বলেছিলো আমায়।তার পরের দিন আমি গুরুজন হিসেবে তাদের বিয়ের সাক্ষী হয়েছিলাম।’

সেহরিশের শান্ত ভঙ্গিতে বলা কথা শুনে উপমা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।স্বাভাবিক হয়ে বলল

‘আজকের গেম টা না হলে কি বলতেন আমায়?’

‘তা জানি না।হয় তো বলতাম পরে।এখন বলো তোমার
খারাপ লাগছে কি নিয়ে আমার না বলা নিয়ে নাকি আমি তাদের সাক্ষী দিয়েছি বলে?’

উপমা চুপ করে গেলো। শুধু শুধু রিয়েক্ট করছে অনুভব করলো।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো বিনাবাক্যে।সেহরিশ উপমা হাত ধরে বুকে টেনে মাথায় হাত বুলালো।উপমাও ঘাপটি মেরে রইলো চুপচাপ।

‘সত্যি বলতে আম্মু যখন বললো তোমার বাবা তোমার বিয়ে ঠিক করেছে তার ভাইয়ের ছেলের কাছে আমি স্বাভাবিক ছিলাম না।একবার চেয়েছিলাম তুলে আনবো কিন্তু আম্মুর কথায় কিছু করলাম না তার উপর তুমিও রাজি ছিলে। ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু লিমনের কথা শুনে যেনো একটু আলোর সন্ধান পেলাম।সব নিজেই ব্যবস্থা করে দিলাম লিমনের ভালোবাসার পূর্নতা করিয়ে দিলাম।’

সেহরিশের কথা শুনে উপমা হাসলো মাথা উচিয়ে সেহরিশের দিকে তাকিয়ে বলল

‘লিমনের ভালোবাসার পূর্নতা করিয়ে দিলেন নাকি নিজের রাস্তা ক্লিয়ার করলেন?’

উপমার কথায় সেহরিশ হেসে উপমাকে আবারও জড়িয়ে ধরলো।

‘আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন ছিলো তার জবাব?’

সেহরিশ উপমাকে ছেড়ে রেলিঙের দিকে ঘুড়িয়ে দাড় করিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে

‘ পার্মানেন্ট লাভই আমার জন্য ফার্স্ট লাভ আর সেইটা একমাত্র আমার উপমা।’

সেহরিশের কথায় উপমা হাসলো। তার পর পরই কিছু ভেবে আবারও বলল।

‘ না মানে কোনো গার্লফ্রেন্ড ফার্স্ট ক্রাশ?’

‘কলেজ লাইফে ছিলো একটা গার্লফ্রেন্ড জাস্ট ২মাস চলেছিলো সেই রিলেশন। দ্যান ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছিলো।সে আমার আচরণে সেটিসফাইড ছিলো না।’

__

সকাল হতেই উপমার আব্বু বাড়িতে ফিরে যাবে বলল।উপমার সকল বোন আর বড় চাচা অনেক বারন করার পরেও শুনলেন না। উপমা কিছুটা অবাক নিয়েই রেডি হয়ে সবার সাথে কথাবার্তা বলে নিলো।হাসিমুখেই তার বড় চাচার বাড়ি থেকে বিদায় নিলো।

বাড়িতে পৌছে উপমা নিজের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখলো।ঘর থেকে বিকেলে বেরিয়ে কিছু খেয়ে আবারও রুমে এসে বসতেই উপমার বাবা এলো তার রুমে।উপমা মুচকি হেসে দাড়ালো।কিন্তু জাফর সাহেবকে হাসতে না দেখে শান্ত মুখে আবারও বিছানায় বসলো।জাফর সাহেব উপমার সামনে চেয়ার টেনে বসলো।

‘দিন কাল কেমন চলছে?’

জাফর সাহেবের কথায় উপমা খোলামনে হাসলো।হেসে বলল

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আব্বু।’

__
পরেরদিন বিকেল দিকে ইশফার আগমন উপমাদের বাড়ি।ইশফা বাড়িতেই এসেই সোজা উপমার রুমে ঢুকে।উপমাকে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ার টেবিলে বসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকতে দেখে এসে খাটে বসে।

‘ সারপ্রাইজ উপম।’

ইশফার চিৎকার শুনে উপমা গাল থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে বসে।সামনে খোলা বই বন্ধ করতেই ইশফা হেসে বলে

‘আরেহ এই বই বন্ধ করলেই কি আর খোলা রাখলেই কি এতো কঠিন পড়া শয়তান পড়বে না।’

ইশফার কথায় উপমা কিছু না বলে চেয়ার ঘুরিয়ে ইশফার দিকে ফিরে বসলো।শান্ত ভংগিতে বলল

‘তুই এখানে কেনো?’

‘উপম তোর চোখ এমন লাগছে কেনো।লালচে আর হাল্কা ফুলেও আছে।কেদেছিস নাকি?’

ইশফার কথায় উপমা ভ্রু কুচকে জানালার থাইগ্লাস দিয়ে নিজের চেয়ারা পরোখ করে দুই দিয়ে হাল্কাভাবে চাপ দিয়ে মুছে ইশফার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটটাকে হাল্কা প্রসারিত করে বলল

‘কই না তো আর হতেও পারে কারণ পরতে পরতে ঘুম পাচ্ছিলো তো তাই। ‘

ইশফা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষন খাটের উপর রাখা ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করে বলল

‘কিছু নোটস করতে এসেছিলাম তোর থেকে।আর ভাবলাম আজকে এক সাথেই কিছু টাইম স্পেন্ডও করা যাক।’

‘ভালো করেছিস।’

‘কি ইশফা পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার?’

উপমার বাবার কথার আওয়াজে ইশফা আর উপমা উনার দিকে তাকায়।ইশফা বিনয়ী হেসে বলল

‘জ্বী আংকেল আলহামদুলিল্লাহ। ‘

‘তাহলে তো ভালো।একসাথে পড়াশোনা করো ভালো রেজাল্ট করতে হবে।উপমা ভালো করে পড়বে ঠিক আছে।আমি বাহরে যাচ্ছি তোমার আম্মু পাশের ফ্ল্যাটে আছে।’

‘জ্বী আব্বু।’

উপমা বাবা চলে যেতেই উপমা সব তুলে রাখা নোটস বের করে ইশফাকে দেয়।ইশফা উপমার কাছ থেকে নোটস গুলো নিয়ে বলে

‘তোর বাবা তো হেব্বি সিরিয়াস তোর পরীক্ষা নিয়ে দেখছি।’

ইশফার কথায় উপমা কিছু বলল না শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

__
পরীক্ষার আগে কলেজ অফ। বন্ধ থাকার সত্ত্বেও উপমা ব্যাগ নিয়ে বেরুলো।ঘেমে নেয়ে একাকার। ছোট চুল গুলো ঘামে লেপ্টে আছে কপালের সাথে।ব্যাগ কাধে আরেকটু চেপে নিয়ে রেস্টুরেন্টের গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকে।
আশেপাশে তাকাতেই সেহরিশকে নজরে পরে ডানদিকের জানালার পাশের এক টেবিলে বসা ঘামে পুরো ভিজে আছে শার্ট, চুলগুলোও কপালে লেপ্টে আছে।হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে শুকাচ্ছে। হয়তো মাত্র এসেছে।
ধীর পায়ে উপমা সেহরিশের বিপরীত চেয়ারে বসে। উপমাকে দেখে সেহরিশ হাসি মুখে নিজের চেয়ার টা উপমার কিছুটা কাছে এনে বসে।

‘ লিমনদের বাড়ি থেকে কবে গিয়েছিলে?’

সেহরিশের কথায় উপমা অন্যমনস্ক হয়ে বলল

‘গত পরশু।’

‘ওহ।

চুপ থেকে সেহরিশ আবার বলে

‘এমন অন্যমনস্ক হয়ে আছো কেনো।’

‘নাহ কিছুনা এমনিতেই অসুস্থ লাগছিলো একটু।’

‘মিথ্যা কথা বলছ কেনো কি হয়েছে বলো।আমার দিকে তাকাও দেখি।’

বলে সেহরিশ পকেট থেকে রুমাল নিয়ে উপমার সামনের চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে কপাল মুছে দেয়।
পা দিয়ে উপমার চেয়ারটা সেহরিশ নিজের আরও কাছে এনে কপালে ঠোঁট ছোয়ায়।উপমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়।উপমাও কিছুক্ষন সেহরিশের অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দুইহাত দিয়ে সেহরিশের বুকে রেখে কিছুটা দূরে সরায় সেহরিশ কে। মাথা নিচু করে বলে।

‘ আমার এইসব থেকে ব্রেক চাই সেহরিশ।আপনি বুঝতে পারছেন তো আমার কথা?’

চলবে,,,,