সাঁঝেরবেলায় তুমি আমি পর্ব-১৫

0
464

#তাসনিম_তামান্না
#সাঁঝেরবেলায়_তুমি_আমি
#পর্ব_১৫

🍁🍁🍁

তিনদিন আগে আরমান আর প্রমি বাসায় আসছে। প্রমি আশার সাথে আগের মতো ফ্রী হয়ে কথা বলেছে কিন্তু মনে মনে ঠিকই ভয়ে ভয়ে ছিলো যদি বিয়ের ব্যাপারে জেনে যায়। কিন্তু আরমান কাউকে বিয়ের বিষয় কিছু বলেনি এমনকি পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারেও কিছু বলে নি দেখে প্রমি স্বতিতে আছে। প্রথম দিন কলেজে না গেলেও পরের দু’দিন ঠিকই কলেজে গিয়েছে ওরা। আরমান প্রমিকে হুটহাট জিড়িয়ে ধরে, চুম্মু খাই এগুলাতে প্রমি কিছু বলতেও পারে না লজ্জায় মিয়িয়ে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ভয়ে সিটিয়ে থাকে। যদি ব্যাপারটা কেউ জানতে পারে তাহলে খুব খারাপ দিকে যাবে। আজ শুক্রবার আরমান আজ দেরিতে ঘুম থেকে উঠেছে। কাল সারারাত আরমান মুভি দেখে পার করেছে তার দরুন এখন দুপুর ১ টার সময় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। এসে দেখে আশা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে মন খারাপ করে।

-কি হইছে আম্মু? এভাবে বসে আছো যে, মন খারাপ নাকি? (আরমান)

আশা গভীর চিন্তা ডুবে ছিলো আরমানের কথা শুনে চমকে উঠে বলল

-হ্যাঁ? আ আরে না! তা তোর এখন ঘুম ভাঙ্গলো? (আশা)

-হ্যাঁ কাল সারারাত মুভি দেখেছি তো আর তুমি আজ আমাকে ঘুম থেকে জাগাও ও নি তাই এখন ঘুম ভাঙ্গলো (আরমান)

আশা ‘ও’ বলে মলিন হেসে বলল

-আচ্ছা তুই বস আমি খেতে দিচ্ছি (আশা)

আরমান বেশ অবাক হলো আশার ব্যবহারে। অন্য দিন রাত জেগে মুভ দেখলে আশা বকতে বকতে ঘুম ভাঙ্গাতো আর আজ তার উল্টো একটু বকলোও না। এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রমিকে খুঁজতে লাগলো প্রমিকে দেখতে না পেয়ে ভাবলো নিজের রুমে হয়তো তাই আর মাথা ঘামালো না ওদিকে। আশা খাবার নিয়ে আসতেই আরমান বলল

-আম্মু সত্যি করে বলো তো কি হইছে তোমার? মুখটা শুকনা লাগছে (আরমান)

-আরে দূর আমার আবার কি হবে? আমি ঠিক-ই আছি বেশি কথা না বলে খেয়ে নে সকালে খাস নি (আশা)

-আব্বুর সাথে ঝগড়া করছো? (আরমান)

-কেন? আমাকে কি তোর ঝগড়ুটে মনে হয়? আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ কাম নাই তোর বাপের সাথে ঝগড়া করবো সারাদিন! (আশা)

-আরে আম্মু তুমি চটছো কেনো? আমি তো জাস্ট এমন-ই শুনলাম (আরমান)

আশা আরমানের কথা শুনলো না বকতে বকতে চলে গেলো। আরমান ছোট শ্বাস নিয়ে খেতে শুরু করলো।
.
.
রাত ৮টায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষ করে বাসায় আসলো আরমান এবারও আশার মন খারাপ দেখে আরমান আশার পাশে বসে বলল

-আম্মু তুমি কি বলবে তোমার কি হইছে? সেই সকাল থেকে দেখছি মন খারাপ করে বসে আছো! তোমাকে এমন ভাবে মন খারাপ করতে দেখলে ভালো লাগে না! (আরমান)

আশা অশ্রু সিক্ত নয়নে আরমানের দিকে তাকালো। আরমান আশার মুখ ধরে নরম হয়ে বলল

-কি হইছে বলল আমাকে? (আরমান)

আশা ভাঙ্গা গলায় বলল

-আমার মেয়েটা চলে গেছে ওকে ছাড়া কিছু ভালো লাগছে না সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ও থাকলে এতক্ষণ সারাবাড়ি মাতিয়ে রাখতো… আর এখন ওকে ছাড়া….(আশা)

বলে কেঁদে দিলো আশা! আরমান বুঝতে না পেরে বলল

-মানে কার কথা বলছ আম্মু (আরমান)

আশা নিজেকে সামলিয়ে বলল

-প্রমি (আশা)

আরমান অবাক হয়ে বলল

-মানে কি আম্মু ও আবার কোথায় যাবে (আরমান)

আশা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল

-আজ সকালে তোর আব্বু ওখানে কাজ ছিলো আর প্রমিও কয়দিন যবত ও বাড়িতে যাবার কথা বলছিলো তাই আজ সকালে ওরা গিয়েছে তোর আব্বু বাসায় আসছে ফোন দিয়ে বলল। মেয়েটা ওখানে কি করে থাকবে আল্লাহয় জানে (আশা)

আশার কথা শুনে যেনো আরমানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। আরমান শুকনো ঢোক গিলে বলল

-এসব কি বলছ আম্মু? তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তুমি তো জানো ঔ মহিলা কতটা ডেঞ্জারাস তাও তোমরা কি ভাবে প্রমিকে ও বাড়ি পাঠাতে পারলে (আরমান)

-তা কি করতাম চাচির খবর ও আমরা কেউ-ই জানতাম না আর কার কাছ থেকে-ই বা খবর নিবো কোনো উপায় ও নেই তাই প্রমি অনেক দিন ধরে ওখানে যেতে চাইছিলো বার বার আমি বলছিলাম পিকনিক থেকে এসে যাস তাই পাঠিয়ে দিলাম (আশা)

আরমান আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে আরমান মাথার চুল টানতে লাগলো আরমান আর বলল

-আমাকে না বলে চলে গেলে? একবার কি আমার কথা মনে পড়লো না? ভেবে ছিলাম হয়ত একটু একটু করে তোমার মনে জায়গা করে নিবো তুমিও আমাকে ভালোবাসবে কিন্তু তুমি আমার থেকে দূরে চলে গেলে এভাবে? আমি কি তাহলে ব্যার্থ? তুমি আমার অনুভূতি গুলো একটিবারের জন্যও বোঝার চেষ্টা করলে না? ভালোবাসি সেটাও বুঝলে না শুধু বুঝলে এক্সিডেন্টলি বিয়ে যে বিয়ে তোমার কাছে কোনো দাম না কিন্তু আমার কাছে এটার দাম আছে সেটাও বুঝলে না (আরমান)

কথাগুলা বলে চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো চিবুক বেয়ে।

★★★

প্রমি আসার পর প্রথমে টুম্পা আর আজাদ প্রমিকে দেখে চোখ মুখ কুচকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু আসাদ যাওয়ার সময় টুম্পা আর আজাদকে কিছু একটা বলে চলে যাওয়ার পর থেকে কেমন ভিতু মুখ কালো করে তাকাছে আর প্রমির সাথে কোনো খারাপ ব্যাবহার ও করে নি। বলতে গেলে তেমন কিছুই বলে নি। ওদের এমন ব্যাবহারের কারণ বুঝলো না প্রমি।

প্রমি শুয়ে আছে আর চাঁদনি বেগম বসে প্রমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

-আচ্ছা নানুমনি আমাকে কি তোমার একটু মনে পড়ে নি? আমাকে ভুলে গেছিলে তুমি? (প্রমি)

-দূর পাগল ছেমড়ি তোরে কি কহনো ভুইলা যাইতে পারি আমি! তুই তো আমার এক মাত্র নাতিন! তোরে আমার মেলা মনে পড়ছে রে পাগল (চাঁদনি)

-আমারও তোমাকে অনেক মনে পড়ছে যানো! শুধু মনে পড়ছিলো তুমি ঠিক মতো ঔষধ খাইছো তো তুমি তো খেতে ভুলে যাও ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছো তো আরও কত কি! (প্রমি)

-হুম ঠিক মতো খাইয়া ছিলাম তুই যে অভাস কইরা দিয়া ছিলি (চাঁদনি)

-আচ্ছা শুয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে। রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে কাল গল্প করবো (প্রমি)

-আইচ্ছা (চাঁদনি)

প্রমি চাদনি বেগমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কিছুক্ষনের মধ্যে চাঁদনি বেগম ঘুমিয়ে গেলো। প্রমি চোখ বন্ধ করে এপাশ ওপাশ করেও ঘুমাতে পাড়লো না। বিরক্ত হয়ে উঠে গিয়ে জালানা খুলে দিতেই বাতাস এসে প্রমির চোখে মুখে বারি খেলো। প্রমি চোখমুখ কুচকে পিটপিট করে চোখ খুলে আকাশে থালার মতো চাঁদের দিকে তাকালো।

-কি হচ্ছে আমার ঘুমাতে পারছি না কেনো? আপনি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছেন না আরমান আপনি খুব খারাপ আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন কেনো বলেন তো? চোখ বন্ধ করলে কেনো আপনার মুখটা কেনো বার বার ভেসে উঠছে? আমাকে একটু শান্তি দিবেন না! (প্রমি)
প্রমি চট করে সেদিনের কথা মনে পড়লো। সেদিন প্রমি চলে আসার সময় মিলি বলেছিল

-আরমান কিন্তু তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। তুমি অনেক লাকি যে এমন একটা ভালোবাসার মানুষ পেয়েছ। যে কিনা নিজের কথা না ভেবে তোমাকে বাঁচাতে পাহাড় থেকে লাফ দিলো। এ ভালোবাসা হাড়িও না আগলে রেখ। আসি অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাদের আর তোমাদের মাঝে আসবো না (মিলি)

সেদিন মিলির কথা শুনে প্রমি থমকে গেছিলো। এখনো এ কথাটা কানে বাজে প্রমির।

-সত্যি কি আপনি আমাকে ভালোবাসেন? তাহলে বলেন না কেনো?….. ওফ্ফ প্রমি এসব কি বলছিস তুই? কোথায় ওনি আর কোথায় তুই! আর এমনিতেই মামনি আর মামার আরমানকে নিয়ে কত আশা, কত স্বপ্ন এসব নিয়ে আর ভাববো না! আর আপনাকে নিয়ে ভাববো না বুঝলেন? আর আপনিও আর আমার মনে মধ্যে আসে না। জানেন না কারের মনের মধ্যে আসতে গেলে আগে পারমিশন নিতে হয়। আর আপনি তো আমার কাছ থেকে কোন পারমিশন নেন নি এটা কিন্তু অপরাধ! যাকে বলে ঘোর অপরাধ! (প্রমি)
.
.
সকালে খেয়ে টুম্পার হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছিলো প্রমি। টুম্পা বারণ করছে কয়েক বার কিন্তু প্রমি শোনে নি। টুম্পা বোতল আর টাকা দিয়ে বলল

-প্রমি যা তো তেল আনতো তোর মামাকে কাল বলছিলাম আনতে আনে নি। এই সব আমার ভালো লাগে না বাজার টাও ঠিক মতো করে না….(টুম্পা)

টুম্পার বকবকের মাঝে প্রমি বিনা বাক্যে বোতল আর টাকা নিয়ে হাটা দিলো। যাবার সময় অনেক চেনা-পরিচিতর সাথে কুশল বিনিময় করলো প্রমি।

আসার সময় ইটের মাঝ রাস্তায় একজন বয়স্ক মহিলাকে বসে থাকতে দেখ প্রমি এগিয়ে গিয়ে বলল

-একি আপনি এভাবে মাঝ রাস্তায় বসে আছেন কেনো? (প্রমি)

মহিলাটা মাথা তুলতেই। প্রমি থমকে গেলো? কাকে দেখছে ও? তাও এতো দিন পর? কি হাল ওনার?

#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। রি-চেক করি নাই ]