সাইকো বস পর্ব-০৫

0
1814

#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ৫

যেই না আমি গেলাম উনার বেডের কাছে, উনি আমার হাত ধরে টান দিয়ে উনার উপরে ফেলে দিলো, নিধি তো ভয়ে দিলো দৌড়, এখন আমি কী করবো।

বজ্জাত মাইয়া টা আমাকে না নিয়ে ই চলে গেলো,

—- এই ছাড়ুন আমাকে , এতো শক্ত করে ধরে আছেন কেনো।

—আমার উপর এসে পড়লে কেনো, আমার উপর একটা জিনিস পড়লো এখন এটা আমি শক্ত করে ধরবো না নরম করে ধরবো এটা একান্ত ই আমার ব্যপার। এতে তোমার জিরাফ এর গলার মতো লম্বা নাকটা না গলালে ই ভালো হয়।

—- কীহ্ আমার নাক জিরাফ এর গলার মতো। আর কী মিথ্যে কথা আমি আপনার উপর পড়েছি নাকি আপনি আমাকে আপনার উপর ফেলে দিছেন। ছাড়ুন নয়তো চিৎকার করবো।

— বাংলা ছবির ডায়লগ দিয়ে লাভ না। চিৎকার করলে তোমার ই মানসম্মান যাবে। এটা আমার ঘর আমি শুয়ে আছি তুমি আসলে কেনো।এমন মোটা একটা হাতি আমার উপর ফেলে দেওয়ার জন্য বয়ে ই গেছে।

—- কীহ্ এই আমি মোটা হাতি হনুমান বাদর একটা।

—সে আমাকে যাই বলো, তুমি কাছে আসলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না জানেমান।

এটা বলে ই আমকে নিচে ফেলে দিয়ে উনি আমার উপর শুয়ে পড়লেন। নেশা ভরা চোখ নিয়ে আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে। আমি কী করবো এখন খিচে চোখ বন্ধ করে আছি।

—- এই এই কী করছেন এ সব আপনারা। দরজা খুলে কেউ এসব করে নাকি।

চোখ খুলে দেখলাম নিধি এসব বলছে। নিধিকে দেখে উনি সরে গেলেন, আমি উঠে দিলাম দৌড়। নিধি ও আমার পিছনে আসছে। যা ই হক বাঁচা গেলো।

—- এই তোমরা এগুলো কী করছিলে আপু, ছিঃ আমার লজ্জা করছে।

—- ওরে আমার লজ্জাবতী লতা। আমাকে একা রেখে দৌড় দিছিলি কেন। তুই না আসলে আমার এমন একটা
পরিস্থিতিতে পড়তে হবো।

— আমি ভাবছিলাম শুভ্র ভাইয়া তোকে পানিশমেন্ট দিচ্ছে। কিন্তু এমন পানিশমেন্ট দেখার জন্য মোটে ও প্রস্তুত ছিলাম নারে আপু।

—- এই তুই চুপ করবি। রেডিও একটা।

এ কী আমার সারাদিন আজকে ভালো যাবে যেহেতু তোমাদের মতো মিষ্টি বিয়ানদের মুখ দেখলাম।

মাঝখান দিয়ে আসছে আরেক সাইকো ইভান।

— আচ্ছা আমাকে নিয়ে বুঝি তোমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল।

— আপনি কোন নায়ক যে আপনাকে নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে।

— অহনা আপু তুমি উনার সাথে এইভাবে কথা বলছো কেনো।

— কেনরে নিধি ইভান এর জন্য তোর দেখছি অনেক জ্বলে, বিয়ে করে নে না।

এই বলে চলে আসলাম । নিধি আর ইভান বোকার মতো ঐখানে ই দাড়িয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পর,

এই বাড়িতে প্রাচীন কালের মতো, সব নিয়ম ই পালন করে। এখন ও একটা নিয়ম পালন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিয়মটা হচ্ছে বিয়ের পরের দিন বর বউকে পুকুরে গোসল করানো হয়। তারপর বর ও বউ এর ভাইবোনরা রং খেলে। শুভ্রদের বাসা শহরে হলে ও এই নিয়মটা পালন করা হবে।

রিমি আপুকে আর দুলাভাইকে গোসল করিয়ে ভেতরে নিয়ে গেছে এখন সবাই রং খেলতেছে। আমি শুভ্র হনুমানটাকে খুজতেছি। সকালের বিচার টা করার জন্য। ভাবতে ভাবতে পেয়ে গেলাম পুকুরে পাড়ে দাড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। আমি চুপচাপ গিয়ে যেই না ধাক্কা দিলাম অমনি আমাকে নিয়ে পানিতে পড়লো।

আল্লাহ গো নিজের ফাঁদে নিজে ই পড়লাম। আমি সাঁতার জানি না এখন কী হবে। শুভ্রর গলায় ধরে আছি ভয় হচ্ছে আমার।

—- আমাকে এইভাবে ধরে আছো কেনো মিস অহনা। ছাড়ো আমাকে কী ভেবেছিলে আমিকে ফেলে দিয়ে নিজে মজা নিবে এখন বুঝো কেমন লাগে। এই ছাড়ো বলছি মেয়ে মানুষের স্পর্শ আমার ভালো লাগে না।

—- প্লিজ যাবেন না আমাকে ছেড়ে। আমি সাঁতার জানি না।একবার এখান থেকে উঠতে দে বজ্জাত হনুমান টা দেখেনিবো পরে।

নিধি উপরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসতেছে।

— না ভেটকি দিয়ে, এই বজ্জাত মাইয়া আমাকে তোল এইখান থেকে।

—- তুমি তো ইচ্ছে করে ই শুভ্র ভাইয়াকে নিয়ে পড়ছো, এখন শুভ্র ভাইয়ার গলায় ঝুলে থাকো।

—-দেখো না শালিকা তোমার বোন আমাকে কতো ভালোবাসে না চাওয়া শর্তে ও জরিয়ে ধরে আছে।

—- থাক ভাইয়া, আমাকে এগুলো দেখিয়েন না আমি সিংগেল।

আমাকে এখান থেকে উঠান প্লিজ এই বলে কান্না করে দিলাম। আমার কান্না দেখে উনি উঠালো। আমি জানি কান্না করলে উনি আমাকে উঠাবেন। আমার কান্না শুভ্রর দুর্বললতা।

আমাকে পাড়ে তোললেন উনি ও উঠলেন।এক হাত দিয়ে আমার পেটে সাইড করছে অন্য হাত দিয়ে আলতো করে আমার ঠোঁট স্পর্শ করছে।আমার দিকে নেশা ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি এই ভাব দেখে উনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। দিলাম উনার ফিলিংসের বারোটা বাজিয়ে

ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম, আজকে আমরা রিমি আপুদের বাসা মানে আমার মামার বাসায় চলে যাবো।

এইখানে আমি শুভ্র উপর প্রতিশোধ নিতে পারিনি। রোমান্টিক ভাব দেখিয়ে শুভ্রকে মামার বাসায় নিতে হবে। নিজের বাড়িতে সবাই ই রাজা। দেখবো ঐখানে যাওয়া পর কী করে।

যাই শুভ্র কাছে। গিয়ে পটিয়ে আসি আমাদের বাসায় যাওয়ার জন্য।

শুভর রুমে গিয়ে দেখলাম শুভ একটা ফাইন নিয়ে বসে কাজ করছে।

—কী করতেছেন। আমি হেল্প করবো নাকি।

— সূর্য আজকে কোন দিক দিয়ে উঠলো। তুমি নিজে থেকে এসে জিজ্ঞসা করলে।

— আমি কী জিজ্ঞেসা করতে পারি না। এমন করেন কেনো। আমার মানুষ এর জন্য যে যথেষ্ট পরিমান মায়া আছে। আপনার মতো নাকি।

—- হুম মায়া, এতো কিছু করি তোমার জন্য তাও একবার ফিরে তাকাও না। জানো অহনা তুমি যখন আমার আশেপাশে আসো তখন আমার বার বার ইচ্ছে করে তোমাকে ছুয়ে দিতে। অহনা বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এক বার শুধু একবার একটু
সুযোগ দেও আমাকে।

—-আচ্ছা ভেবে দেখবো। চলুন আমাদের সাথে আজকে ঐ বাসায় যাবেন।

—- তুমি বললে আমি সব জায়গায় যেতে পারি।অবশ্য ই যাবো।

কিছুক্ষণ পর,

মামাদের বসা থেকে অনেকে ই আসলো, সাথী আম্মু ও এসেছে।

— কী রে মা কেমন লাগলো রিমির শ্বশুর বাড়ি। উনারা কেমন মানুষ। রিমিকে আদর করে তো।

—- হে মা অনেক ভালো। আপুকে ও খুব আদর করে। ভালোমানুষ অনেক।

—- তোর জন্য ও যদি আমি এমন ভালো একটা পরিবার পাইতাম, তাহলে শান্তি তে মরতে পারতাম। এই বলে কান্না করে দিলো।

এর মধ্যে শুভ্রর আম্মু এসে আমার আম্মু সাথে কথা জুড়ে দিলো, আমি আর এখানে থেকে কী করবো চলে আসলাম।

যাওয়ার সময়,

আমি আর নিধি পাশাপাশি সিটে বসে বসে গল্প করছি। সবাই বিদায় নিচ্ছে রিমি আপুর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের থেকে। গাড়ি স্টার্ট দেবে এমন সময় নিধি আমার পাশ থেকে উঠে সামনে ড্রাইভার এর সাথে চলে গেলো। ভাবছিলা এই কারটাতে আমি নিধি, রিমি আপু ও দুলাভাই যাবো কিন্তু এখন হচ্ছে উল্টো টা। আমার পাশে এসে বসলো হনুমান শুভ্রটা।

— এই আপনি আমার সাথে বসলেন কেনো।

উনি আমার দিকে এগিয়ে মুখের কাছে এসে বলেন, তোমাকে বলতে হবে। উনি এতেটা কাছে চলে এসেছে আমার অন্য রকম ফিলিংস আসছে। আমি ভয় পাচ্ছি, আমার এমন হচ্ছে কেনো,এমন তো আগের কখনো হয়নি শুধু উনি কাছে আসলে ই আমি ঠিক থাকতে পারি না। ধাক্কা দিয়ে দিলাম সরিয়ে এখন ভাবি বাসায় গেলে কোন থ্যারাপি টা প্রথম দেওয়া যায়।

এই তুই আমাকে তোর কাছ থেকে সরিয়ে দিলি কেনো, তুই জানিস না তোর প্রতি শুধু আমার ই অধিকার আছে, কিছু বলছি না বলে কী বার বেড়ে গেছে এই বলে এক হাতে আমার মুখ চেপে ধরলো অন্য হতে আমাকে উনার সাথে মিশিয়ে নিলো।

চলবে