সাইকো বস পর্ব-১১

0
1949

#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১১

পিছনে তাকিয়ে দেখলাম রিমি আপু মুখখানা মলিন করে এই কথাটা বললো, আমার চোখ থেকে এমনি পানি পড়তে লাগলো। শুভ্র কি কিছু বলবে নাকি সে ও অপমান করবে।

আমার ভাবনা ছেদ করে শুভ্র বললো,

— মুখ সামলে কথা বলেন ভাবি, আমার বউকে আপনি এসব বলার কে। ভাবি, ভাবির মতো ই থাকবেন, অন্য কিছু বলার চেষ্টা করবেন না।

— শুভ্র আমার বোনকে আমায় বলতে দেও। তুমি মাঝখানে আসবে না।

—আগে আমার বউ তারপর আপনার বোন, আমার বউকে আপনি কেনো অপমান করবেন। যা বলার আমাকে বলুন।

আমি অবাক হয়ে দেখছি রিমি আপু ব্যবহার,আপু এমন ব্যবহার কেনো করতেছে। আমার আম্মু দিকে তাকিয়ে আছি, আমার চোখে ও পানি আজকে আমার জন্য আম্মু আপমান হলো। হঠাৎ আম্মু বলে উঠলো

— দেখ রিমি মা আমার মেয়ে কে আমি সত্যি ই মানুষ করতে পারি নাই। নয়তো কী এমন হতো বল। সত্যি যাদি সঠিক ভাবে মানুষ করতে পারতাম আজকে তুই আমাকে অপমান করার সুযোগ টা পাইতি না।

— তাহলে ফুপি নিয়ে যাও তোমার মেয়েকে। এভাবে লেলিয়ে দিয়ো না বড়লোক ছেলেদের পিছনে।

শুভ্রর মায়ের জ্বাজালো কন্ঠ বেজে উঠলো,

— শুভ্র তুই রুমে যা। আমি না বলা পর্যন্ত আসবি না নিচে।

—আমি অহনাকে এখানে একা রেখে যাবো না।

–যেতে বলেছি যা। নয়তো আমি চলে যাবো।

শুভ্র চলে গেলো। উনি আবার রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলা শুরু করলো।

চুপ করো রিমি অনেক্ষন যাবত দেখছি তোমার এসব কান্ড।

—তোমার বিয়ের অনেক আগে ই শুভ্র অহনাকে ভালোবাসে। আমার এক ছেলে, আমার ছেলে কাকে বিয়ে করবে না করবে তোমার কাছ থেকে জানতে হবে না। আমার ছেলের বউকে তুমি আর একটা ও বাজে কথা বলবে না।

—- হয়েছে বোন, আপনারা আমার মেয়ের জন্য অনেক করেছেন, আমি আমার মেয়েকে একমুহূর্তে জন্য ও এখানে রাখে চাইনা, নিয়ে যাবো আমি আমার মেয়েকে।

— আমার বউ কোথায় যাবে না যাবে ঐটা আমি ঠিক করবো, কোথাও যাবে অহনা।

–তুই আবার আসলি কেনো শুভ্র।

আর কিছু না বলে শুভ্রর মা আমার আম্মুকে নিয়ে রুমে চলে যায়।

শুভ্র ও আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায়, আমাকে বেডে বসিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে। কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো

—কিছু হবে না জানপাখি। আমার মায়ের উপর বিশ্বাস আছে দেখবা একটু পর ই শাশুড়ী মায়ের রাগ ভাঙ্গায়ি আমাদের কাছে নিয়ে আসবে।

কান্না বন্ধ করো আর কাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসো। যাও।

—আমি এখানে কাপড় পাবো কই, আমি আম্মু সাথে বাসায় চলে যাবো।

— আজকে ই শেষ যদি আর কখনো বলছো বাসায় চলে যাবো তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

— বলবো হাজার বার বলবো। কী করবেন আপনি।

এটা বলার সাথে সাথে আমার কাছে এসে ঠোঁট যুগল দখল করে নেয়।

কিছুক্ষন পর,

— তোমার শাস্তি যদি আবার ও বলো তাহলে এমন শাস্তি বার বার পাবে।

— শয়তান, হনুমান বজ্জাত একটা। সব সময় আমার সাথে এমন করবে।

—হুম করবো ই এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। দেখো আলমারিতে তোমার প্রয়োজনীয় সব কিছু আছে।

আমি কথা মতো গিয়ে আলমারি খুললাম, দেখে তো পুরা ই অবাক। অনেকগুলো শাড়ি সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি, কসমেটিক এক কথায় প্রয়োজনীয় সব কিছু।

— দেখো আলমারির বাম সাইডে একটি মেরুন কালারের শাড়ি আছে এটা পড়ো এখন। এই শাড়িটা আমার প্রথম উপার্জিত টাকায় কেনো, তোমার জন্য আর মায়ের জন্য কিনে ছিলাম।

একথাটা শোনে আরো বেশি ভালো লাগলো। আমি কিছু না বলে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি, আম্মু শুভ্র সাথে কথা বলছে। শুভ্রর মুখ খানা মলিন হয়ে আছে। কী হয়েছে।

—তুই এসেছিস, চল মা এখন আমরা বের হই।

শুভ্রকে আমি বলে দিয়েছি, সময় হক তখন আমি ই তোদের অনুষ্ঠানে করে ই বিয়ে দিবো।
এখন তোদের সম্পূর্ণ মিলামেশা বন্ধ।

এই বলে আম্মু আমার হাত ধরে নিয়ে আসলো, শুভ্র কিছু বলছে না শুধু এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রকে এভাবে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।

বাসায় চলে আসলাম, আম্মু আমার সাথে অদ্ভুত ব্যবহার করছে। বুঝলাম রিমি আপু কথায় এখনো রেগে আছে৷

—-অহনা আমি তোর মা ছিলাম। এতো বড় একটা কথা আমার কাছ থেকে কীভাবে লুকালি বল।

—আম্মু আসলে আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। তাই তোমাকে বলে নাই। আমাকে মাফ করে দেও আম্মু।

— হুম তা বুঝলাম। আর কখনো মা কোনো ব্যপার নিয়ে মায়ের সাথে মিথ্যে বলবি না। মাকে সব সময় বন্ধু ভেবে সব কিছু বলবি।মায়ের থেকে ভালো দুনিয়ে কেউ নাই রে মা। কোনো কাজ করার আগে মাকে বলি নিবি।
তুই জানিস না ছোট বেলা ই তোর বিয়ে ঠিক। তোর চাচতো ভাই রনির সাথে। এখন বল আমি কী উওর দেবো তাদের সামনে।

—আমি এই কথাটা শোনে শকট হলাম আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আর আমি জানি না। এখন কী হবে এই জন্য কী আম্মু আমাকে শুভ্র কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসলো।

আমি কিছু না বলে ই রুমে চলে আসলাম।

শুভ্র জন্য আমার বড্ড খারাপ লাগছে। বার বার মনে হচ্ছে শুভ্র কথা। কদিন আগে ও যাকে আমি সহ্য করতে পারি নাই আজকে তার জন্য ই এতো কষ্ট হচ্ছে। কী অদ্ভুত ব্যাপার।

রাতের বেলা,

বেড সাইডে বসে বসে শুভ্র কথা ভাবছি। রুমে আসার পর রুম থেকে আর একবার ও বের হইনি।

ভালো লাগছে না শুভ্রকে ছাড়া কয়েক বার কল দিলাম রিসিভ করলো না। কি হইছে আমি কিছু ই বুঝতে পারতেছি না।

ফোন এর শব্দ ধ্যান ভাঙ্গলো। শুভ্র মেসেজ করেছে।মেসেজে লিখা,, কী এতো ভাবছো বউ, একটু বারান্দায় আসো তো। আমি একমুহূর্ত ও দেরি না করে বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম। বারান্দায় যেতে ই হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়, সেই মাতাল করা পারফিউমের গন্ধ আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা যে শুভ্র।

—কীভাবে আসলেন আপনি এইখানে।

রুমে গিয়ে বেডে শুয়ে আমাকে টান দিয়ে উনার উপর ফেলে দিয়ে জরিয়ে ধরে বললো এইগুলো তোমার জানতে হবে না জানপাখি। শাড়িটা দেখছি এখনো খোলনি। ভালো হয়েছে আমার ইচ্ছে টা পূরন হলো। তোমাকে এখন আমি ইচ্ছে মতো দেখতে পারবো।

— এখান থেকো যান। যেকোনো সময় আম্মু চলে আসবে।

—যেতে তো আসনি। আসুক আমার বউ এর সাথে আমি আছি অন্য করো সাথে তো না।

— ছাড়ুন আমাকে দেখে আসি দরজা লক করা নাকি।

—এই অহনা দরজা খোল সারাদিন তো কিছু মুখে দেলিনা। খেতে আয়

হঠাৎ দরজায় আম্মু নক করতেছে, এখন আমি কী করবো।

চলবে