সাজু ভাই পর্ব-০৬

0
1609

#সাজু ভাই (পর্ব:-০৬)

– ছি সাজু ভাই, আপনার মতো মানুষ এমন কাজ করতে পারে সেটা কোনদিন কল্পনা করিনি। মনের মধ্যে অজস্র নোংরামি নিয়ে কত ভালো ভালো গল্প লিখেন, অথচ আমার মতো নির্বোধ পাঠিকা সেটা জানতেই পারে না।

– ধুর, তোমার ধারণা ভুল কারণ তুমি আমাকে ঠিক যতটা খারাপ ভাবছো আমি ততটা খারাপ না রুহি। তবে পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে কিন্তু ভালো এবং খারাপ দুটোই আছে।

– কিন্তু আপনার মতো ভদ্রতার মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ানো ব্যক্তি খুব কম আছে সাজু ভাই। আমি যদি ভুল করেও বেঁচে যাই তাহলে আমি আপনার মুখোশ খুলবোই।

– তোমাকে আমি মারবো না রুহি, তোমার কোন ক্ষতি হবে না কারণ আমার বন্ধু সজীব তোমাকে পছন্দ করেছে। তাই বন্ধুর পছন্দের মেয়ে হিসেবে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই, তবে আজকে রাতে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে।

– সজীব ভাই? তিনি আমাকে কি কখনো দেখেছে নাকি? যার সঙ্গে আমার পরিচয় এই মাত্র সপ্তাহ খানিক আগে, যিনি এখনো আমাকে দেখেনি সে কীভাবে পছন্দ করে?

– জানি না, তবে আমাকে বলেছিল যে সে নাকি তোমাকে পছন্দ করেছে। তারপর আমি তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সে তারপরও যোগাযোগ করেছে।

– আপনাদের কাউকে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, সব গুলো এক একটা হারামি। আপনার ফ্রেন্ডদের মধ্যে সজীব শফিক আপনি সবাই শয়তান, আমি অভিশাপ দিচ্ছি।

– খবরদার রুহি, শফিক পৃথিবীতে নেই, তাকে নিয়ে কোন বাজে কথা বলবে না। যদি বলো তবে কিন্তু খুব খারাপ হবে, যেটা তুমি কল্পনা করতে পারবে না।

– কচু হবে, তিনটাকে প্রচুর গালি দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু আপনাদের কপাল ভালো যে আমি গালি দিতে পারি না। তবে এটা নিশ্চিত থাকুন আপনার বন্ধু শফিক কবরে শান্তিতে নেই, আপনার মতো মানুষের সঙ্গে যে বন্ধুত্ব করেছে। তার কবরের মধ্যে শান্তি কোনদিন হবে না, শয়তান।

সাজু ভাই তখন ডান হাত দিয়ে রুহির গালে এক চড় বসিয়ে দিল, রুহি অবাক হয়ে প্রচুর ব্যথা নিয়ে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।

– সাজু ভাই বললেন, খুব বেশি রকমের বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।

– রুহি চুপ করে বসে রইল, আসলে চড়ের আঘাত খুব জোরে লেগেছে।

– সাজু ভাই বললেন, তুমি আমার কাছে সেদিন শফিকের মৃত্যুর ঘটনা জানতে চাইছিলে মনে আছে তোমার?

– রুহি মাথা নেড়ে “হ্যাঁ” বললো।

– আচ্ছা এখন তোমাকে আমি শফিকের মৃত্যুর ঘটনা বলবো, মনোযোগ দিয়ে শোন।

সেদিন ছিল শুক্রবার।
বৃহস্পতিবার আসলেই আমরা রাতে সারারাত তাস খেলতাম, আমি শফিক সজীব আর রকি। চারজনে মিলে খেলতে বসতাম, আমি আর শফিক ছিলাম পার্টনার। শফিক একটা মেয়েকে খুব ভালবাসতো, রাতে ঘুমাতে গিয়ে ঘন্টা খানিক ধরে মোবাইলে কথা বলতো।

আমরা ঘুম থেকে উঠলাম বারোটার কিছুক্ষণ পর, মসজিদে জুম্মার আজান দিয়েছে। সবাই এক এক করে গোসল করছে, আমি রান্না ঘরে গিয়ে দেখি বিশাল পাঙ্গাশ মাছ কাটা হয়েছে। মাথাটা অনেক বড়, কিন্তু শুক্রবারে সাধারণত গরুর মাংস রান্না হয় তাহলে পাঙ্গাশ মাছ কেন?

খালা বললো ” রাতের জন্য নাকি গরুর মাংস রান্না করা হবে আর দুপুরে মাছ। বাজার করেছে শফিক, আর মাছের মাথা শফিকের প্লেটে যাবে। ”

নামাজ পড়ে দোয়া হচ্ছে, জিলাপির ব্যবস্থা আছে তাই শফিক বসে আছে। আমি মিলাদ না পড়ে মেসে গেলাম, রুমের মধ্যে ভাত খেতে বসবো ঠিক তখনই শফিকের প্লেটের মাছের দিকে চোখ পরে। আমি দরজা বন্ধ করে শফিকের প্লেট নিয়ে খেতে আরম্ভ করলাম, শফিক এসে দেখে তো অবাক। সজীব আর রকি দুজনেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম। শফিক খাবার না খেয়ে মন খারাপ করে শুয়ে পরলো।

সজীব বললো ” কিরে মাছের মাথার চিন্তায় কি খাওয়া বন্ধ নাকি রে? ”

শফিক কিছু বলে নাই, তখন আমরা বুঝতে পারি যে আলাদা কিছু হয়েছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানলাম যে ওর গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। মেয়ে নাকি কল করতে নিষেধ করেছে আর সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। যেহেতু সেই মেয়ে অনেক দুরে বাস করতো তাই চাইলেই তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া যায় না।

আসরের দিকে আমরা ভৈরব নদীর তীরে হাঁটতে গেলাম, শফিক যেতে রাজি নয় তবুও তাকে জোর করে নিয়ে গেলাম। চার বন্ধু সবসময় একসাথে থাকতাম তাই একজনকে মন খারাপ অবস্থায় রেখে স্বার্থপর হতে পারি নাই। যদি স্বার্থপর হতে পারতাম তাহলে হয়তো আজকে শফিক বেঁচে থাকতে পারতো। আমরা নিজেরই ওকে মেরে ফেলেছি, আমরাই দায়ী।

এতটুকু বলে সাজু ভাই থামলো আর রুহি তখন বললো ” মানে কি? ”

সাজু ভাই বললেন,
আকাশ মেঘলা ছিল, নদীতে পানি অনেক বেশি এবং উত্তাল। নদীর মাঝখানে অনেকগুলো ছোট ছোট তেলের জাহাজ ছিল, সেখানে আমার একটা পরিচিত লোক ছিল। তাকে কল দিলাম সে বললো একটা নৌকা নিয়ে মাঝখানে চলে যেতে হবে। আমরা তখন একটা নৌকা নিয়ে জাহাজের দিকে এগিয়ে গেলাম, শফিক যেতে রাজি হচ্ছিল না কারণ সে সাতার জানে না। রকি আর সজীব সেই সময় ওকে নিয়ে হাসতে লাগলো আর শফিক লজ্জা পেয়ে আমাদের সঙ্গে যেতে রাজি হলো। খুলনার খালিশপুরের চরেরহাটে হচ্ছে তিনটা নদীর মোহনা, ঠিক তার মুখেই জাহাজ নোঙর করা ছিল। জাহাজে গিয়ে আমরা প্রথমে চা বিস্কুট খেলাম তারপর সবাই একটু ঘুরলাম। হঠাৎ করে শফিকের একটা কল এলো, মোবাইল নিয়ে সে আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেল। কথা বলতে বলতে সে এদিক সেদিক হাঁটছে, আমরা তখন আমাদের মতো ব্যস্ত।

রকি বললো “নিশ্চয়ই ওর গার্লফ্রেন্ড কল দিয়েছে শালা নির্লজ্জ, কেন যে মেয়েটার পিছনে এভাবে পরে আছে। ”

এমন সময় সাজু ভাই বলে একটা চিৎকার শুনতে পেলাম, তাকিয়ে দেখি শফিক তার স্থানে নেই। জাহাজের একদম উপর একজন ছিল সে তখন চিৎকার দিয়ে বললো “আপনাদের সঙ্গের লোক নদীতে পরে গেছে। ”

একে তো উত্তাল ঢেউ, এদিকে জোয়ারের তীব্র স্রোত ভেসে যাচ্ছে। তখনই শফিক একবার কোন মতে হাপুসহুপুস করে ভেসে উঠলো, আমি সজীব রকি তিনজনেই লাফিয়ে পরলাম। কিন্তু সেই স্রোত এত বেশি ছিল যে স্রোতের সঙ্গে হারিয়ে গেল আমাদের চার বন্ধুর একজন। এমন ছোট্ট নদীর মধ্যে কেউ ডুবে মারা যাবে সেটা হয়তো মানুষ কল্পনা করতে পারবে না। কিন্তু মৃত্যু যদি উপস্থিত হয়ে যায় তাহলে শুধু নদী কেন? হাঁটু সমান পানি হলেও মানুষ মারা যাবে। কারণ মৃত্যুর যমদূতকে কেউ এড়াতে পারেননি এবং পারবে না।

আধা ঘণ্টা ধরে সাঁতরে তবুও যখন পেলাম না তখন আশা ছেড়ে দিলাম। ইতিমধ্যে ট্রলার খবর দিয়ে এনেছে জাহাজের লোকজনে তাই ট্রলার করে আমরা জাহাজে আসলাম। তিনজনে তিনটি স্থানে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম, যেহেতু কোনকিছু না ভেবেই লাফ দিছিলাম তাই সবার মোবাইল পকেটে ছিল। সজীব রকি দুজনেরটা পরে গেল নদীতে তবে আমারটা ছিল পকেটে।

আশেপাশের জেলেদের এনে জাল ফেলা হলো, সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক চেষ্টা চললো। সরকারি নৌ বাহিনীর লোকজন ছিল পাশেই, তারাও বোট নিয়ে খুঁজতে লাগলো। আমরা ট্রলার ভাড়া করে বহুদুর খুজতে গেলাম কিন্তু পাইনি।

– – – –

চোখের পানি মুছে সাজু ভাই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, রুহির দিকে তাকিয়ে বললো;-

– তোমার জন্য কিছু পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে, এই কদিন একই পোশাকে আছো। তুমি বের হবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো, তোমাকে ঢাকায় নেওয়া হবে।

– আমি আমার বাড়িতে যাবো সাজু ভাই।

– তোমার বান্ধবীদের খুনি না ধরা পর্যন্ত তোমাকে বন্দী থাকতে হবে।

– হাহাহা, খুনি নিজেই যদি খুনিদের ধরতে চায় তাহলে তো খুবই হাস্যকর। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করতে পারি সাজু ভাই?

– হ্যাঁ করো।

– শফিক ভাই যার সঙ্গে সম্পর্ক করতেন তার বাড়ি কি আমাদের টাঙ্গাইলে?

– হ্যাঁ, শফিকের বাবা তোমাদের এই উপজেলায় চাকরি করতো একসময় তখন শফিক এখানে এসেছিল এবং তখনই পরিচয় হয়েছে।

– আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছি।

– খুব ভালো হয়েছে, এবার আসি।

সেই রাতেই রুহিকে অজ্ঞান করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলো, আর ভোর হবার আগেই তারা রুহির গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো।

– – – – –

রুহি যেদিন রাতে কিডনাপ হয়েছিল তার পরদিন সকালে সম্পুর্ন গ্রামের মধ্যে হইচই বেঁধে গেছিল।
সাজু ভাই আর হাসান সাহেব তাদের বাড়িতে গিয়ে সবকিছু দেখে এসেছিল, দারোগা সাহেব তাদের সঙ্গে ছিল। চেয়ারম্যান সাহেব নিজে এবং তার মেয়ে পারুলও উপস্থিত ছিল। সকলের সামনে দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান খুবই দুঃখ ও লজ্জা প্রকাশ করেছিল। রুহির মাকে পাওয়া গেছিল রান্নাঘরের কাছে কিন্তু রুহিকে পাওয়া যায় নাই।

ভোরবেলা ঢাকা থেকে ফিরে দারোগা সাহেবের সঙ্গেই সাজু ভাই এবং হাসান সাহেব চেয়ারম্যান বাড়ি প্রবেশ করলো। চেয়ারম্যান সাহেবকে বলা হয়েছে যে সাজু ভাই ও হাসান সাহেব দারোগার বাড়িতে আছে তাই রাতে আসেনি।

দুজনের চোখে তখন ঘুম টলমল করছে। দারোগা সাহেব, চেয়ারম্যান, পারুল, সাজু ভাই ও হাসান সাহেব একসাথে চা-নাস্তা খেতে বসেছেন। আর খুনের বিষয় নিয়ে সবাই আফসোস প্রকাশ করে যাচ্ছেন।

– চেয়ারম্যান বললো, চারটা মেয়ে খুন হয়েছে আবার একটা মেয়ে নিখোঁজ। দারোগা সাহেব কিছু তো করতে পারছেন না আপনারা, আমাকে আজ এমপি কল দিয়ে গালাগাল করছে।

– দারোগা বললেন, দেখুন আপনার সামনেই কিন্তু আমি অনেক দৌড়াদৌড়ি করছি। রাতদিন কত কষ্ট করে ডিউটি করে যাচ্ছি, নাহলে এত সকাল বেলা এখানে আসতাম?

– কিন্তু সেই কথা অন্য কাউকে কীভাবে বিশ্বাস করাবো বলেন? ছাত্র যতই দিনরাত পড়াশোনা করুক পরীক্ষার খাতায় লিখতে না পারলে তো সে ফেইল।

এমন সময় বাড়ি কাপিয়ে কান্না করতে করতে রুহির বাবা প্রবেশ করলো। অসুস্থ স্ত্রী আর খুঁজে না পাওয়া মেয়ের শোকে বেচারা কতটা কষ্ট পাচ্ছে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই তাদের কারণ খুনি ধরা পরে না, সাজু ভাই তো গম্ভীর হয়ে বসে আছে।

সরাসরি চেয়ারম্যান সাহেবের পায়ের কাছে বসে পরে রুহির বাবা বললেন:-

– আমার মেয়ের কোন খবর পেলেন চেয়ারম্যান সাহেব? আজকে আমি আমার মেয়ে ছাড়া এখান থেকে যাবো না, সারাদিন পাগলের মতো খুঁজে খালি হাতে বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ স্ত্রীর সঙ্গে ব্যর্থতার জবাব দিতে কষ্ট হচ্ছে খুব।

– চেয়ারম্যান সাহেব বললো, একটু ধৈর্য ধরো তো জসিম উদ্দিন, চেষ্টা করছি আমরা। ( রুহির বাবার নাম মোঃ জসিম উদ্দিন তালুকদার)

– মেয়ে আমার নিখোঁজ হয়ে গেছে, তার বেদনায় যাতনায় আমার স্ত্রী মরতে বসেছে তবুও আপনি আমাকে ধৈর্য ধরতে বলছেন?

– এ ছাড়া আর কি বলবো? তুমি বরং তোমার স্ত্রী কে দেখাশোনা করো, আমরা তো তোমার মেয়ে খুঁজে বের করতে মরিয়া হয়ে গেছি।

– আমি আমার মেয়েকে না নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাবো না, আজকে আমার মেয়ে চাই।

আধা ঘণ্টা ধরে বোঝানোর পরে রুহির বাবা তার মেয়ের শোকে কান্না করতে করতে বেরিয়ে গেল। আর উপস্থিত সবাই যেন একটু থমথমে অবস্থায় বসে রইল।

– হঠাৎ করে চেয়ারম্যান সাহেব রাগান্বিত হয়ে গর্জে উঠে বললো, নিজের চোখে তো আপনারা দেখলেন বেচারা কতটা কষ্টে কান্না করছে। তবুও কি বলবেন প্লিজ যে কবে নাগাদ একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন? দরকার হলে বলেন তাহলে আমি ঢাকা থেকে নতুন করে গোয়েন্দা আসার ব্যবস্থা করবো।

– সাজু ভাই বললেন, আপনার যা ইচ্ছে করতে পারেন সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি যে আর কাউকে আনবেন না সেটা আমরা জানি।

– মানে কি? কেন আনবো না আমি? আমি কি সবসময় এভাবে মানুষের কথা শুনবো? আচ্ছা আপনারা তো ৩/৪ দিন ধরে ঘুরছেন, সত্যি সত্যি যদি গোয়েন্দা হয়ে থাকেন তাহলে এখনো কি কাউকে সন্দেহ করতে পারেননি?

– সাজু ভাই বললেন, হ্যাঁ পেরেছি।

– তাহলে তার উপর নজর রাখেন।

– রাখছি তো সবসময়।

– আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আর কতদিন? আচ্ছা বলেন তো তালিকায় কে কে আছে? নাকি কোন সমস্যা আছে আপনাদের?

– আমাদের বলতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু শুনতে আপনার ভালো লাগবে না।

– তবুও শুনি? সন্দেহের তালিকায় নিশ্চয়ই অনেকেই আছে?

– হ্যাঁ, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এভাবে।

– প্রথম সন্দেহ কাকে করছেন?

– আপনার মেয়ে পারুলকে।

পারুলের হাতে লেগে চায়ের কাপটা নিচে পরে গেল, চেয়ারম্যান সাহেব এবং দারোগা সাহেবের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। পারুল কিছু বলতে গিয়ে মুখ আটকে গেল তার।

– সাজু ভাই বললেন, দ্বিতীয় সন্দেহের তালিকায় আছেন চেয়ারম্যান সাহেব আপনি নিজেই। যদি আপনার মেয়ে পারুল খুনি না হয় তাহলে আপনি হচ্ছেন খুনি।

– চেয়ারম্যান সাহেব চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে উঠে বললেন, মানে কি এসবের?

– সাজু ভাই তখন পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেন, জ্বি চেয়ারম্যান সাহেব। আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন? রুহি এবং তার বান্ধবী সবাই যখন ক্লাস নাইনে পড়তো তখন আপনার ছেলে তাদের একজনকে বিরক্ত করেছিল? আর তখন সেই মেয়ে স্কুলের হেডমাস্টারের কাছে বিচার দিল। আপনি ছিলেন স্কুলের সভাপতি এবং এলাকার চেয়ারম্যান তাই বিচার করতে হয়েছে আপনাকে। বিরক্ত করার সাক্ষী হিসেবে রুহিসহ সকল বান্ধবীরা তখন সাক্ষী দিল এবং আপনি বিচার করে আপনার ছেলেকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিলেন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আপনার ছেলে ঢাকা গিয়ে মামার বাসায় উঠেছিল ঠিকই কিন্তু তিনদিন পরে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেল। আর সেই প্রতিশোধ নিতে হয়তো পারুল তার ভাইয়ের জন্য খুনগুলা করেছে নাহলে আপনি সন্তানের জন্য এগুলো করছেন।

– পারুল এবং চেয়ারম্যান ঠোঁট নাড়াতে লাগলো কিন্তু শব্দ হচ্ছে না।
.

চলবে…?
.

লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)