সাত পাকে বাঁধা পর্ব-০৬

0
2385

#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_০৬
#অধির_রায়

নির্বণ কারের দ্বার খোলতেই নিঝুম কার থেকে বেরিয়ে এসে বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।

— জিজু একা একাই চলে যাচ্ছেন৷ আমাকে নিয়ে নিয়ে যাবেন না৷

— আমি তোমার জিজু হয় কিভাবে? আমার জানা মতে তুমি নিয়তির দিদি হও৷

— তোকে সেটা মনে করিয়ে দিতে হবে না৷ গাড়িতে উঠে বস৷ আমিও যাব তোদের সাথে?

— কেন?

— আমার ছোট বোনটার কোথায় বিয়ে হয়েছে সেটা আমার জানতে হবে না৷

— নিঝুম সেটা তোমার না জানলেও চলবে৷ এটা মনে রাখবে নিয়তি তোমার মতো ভুল মানুষের হাতে পড়েনি৷

— সে জন্য বাসর,, আর কিছু বলল না৷ যায় হোক আমি তোদের সাথে যাব মানে যাব। জিজু,, ও জিজু আহ্লাদের সাথে বলে৷

নিয়তি ভাবতে থাকে। আমাকেই কিছু করতে হবে।দিদি যেভাবে যেতে চায়ছে। নিশ্চয় কোন দুশ্চিন্তা মাথায় কাজ করছে। নিয়তি আর কথা চেপে রাখতে পারল না। নিয়তি বলেই উঠল,

–কাল রাতে বলছিলে তুমি নির্বণের ক্লাসম্যাট হও৷ কিন্তু এখন আমাদের মাঝে একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাই তুমি নির্বণকে আগের মতো করে দেখবে না৷ আমার কথাটা বুঝতে পারছ? (নিয়তি)

— ছোট ছোটদের মতো থাকবি৷ (নিঝুম)

নির্বণ তাদের দুই বোনের তর্ক দেখে একটা মজা নিচ্ছিল৷ শেষে তাদের ঝগড়া কোথায় পৌঁছে তা দেখার জন্য৷ কিন্তু বার বার নিঝুম নিয়তির গায়ে হাত তুলার চেষ্টা করতেছে। নিঝুম এবার আর থেমে থাকতে পারল না৷

— নিঝুম তুমি কি চাও? (নির্বণ পিছন থেকে বলে উঠে)

— আমি নিয়তির সাথে যাব৷ ছোট বোনটাকে একা যেতে দিতে পারি না৷ বড় বোন হিসেবে আমার একটা কর্তব্য আছে৷

— ওঁকে যেতে পার সমস্যা নেই। কিন্তু..

— কিন্তু কি? (নিঝুম)

— আজ আমরা হানিমুনে যাব৷ কিন্তু তোমার জন্য কোন টিকেট কাটা হয়নি৷ আর আমরা সোজা এয়ারপোর্টে যাচ্ছি। সেখানে তোমাকে নিশ্চয় কেউ এলাউ করবে না৷ সেজন্য তুমি আমাদের সাথে যেতে পারবে না৷

নিয়তি চোখ বন্ধ করে গাড়িতে হেলান দিয়ে মনে মনে নির্বণ কি বলছে? হানিমুনে যাবে! আমি কিছুতেই তার সাথে এখন হানিমুনে যাব না৷ সালা বাসর রাতে আমাকে টর্চার করে এখন আসছে হানিমুন করতে৷ দিদির কাছ থেকে তোকে মুক্ত করে নিয়ে যায়। দেখাব এই নিয়তি কি জিনিস? তোর মাথার চুল ছিঁড়ে টাক ওয়ালা বানিয়ে ফেলব৷

— কি হানিমুন? অবাক হয়ে উঁচু স্বরে বলে উঠে!

— হ্যাঁ হানিমুন। তোমার কোন সমস্যা থাকার কথা না৷ বরং তোমার খুশি হওয়ার কথা তুমি মাসি হতে পারবে তারাতাড়ি। যদি নিয়তি রাজি থাকে৷

নিয়তি গাড়ি থেকে হেলান ছেড়ে দিয়ে নির্বণের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। সালা তোকে এখনও মেনে নেয়নি তোর সন্তান। সালা রৌদ্রময় দিনগুলোতেও বৃষ্টির আশা করিস।

নির্বণ নিয়তির ভয়ানক রাগি ভাব দেখে মুচকি হেঁসে

— নিঝুম আমাদের পথ ছেড়ে দাও? তোমার মতো গায়ে পড়া লোক দেখা যায় না৷ যেসব লোক গায়ে পড়ে তাদের কি বলে জানো? স্টকার৷ আমি তোমাকে এই স্টপিক নাম না দেওয়ার আগে চলে যাও৷

— তুই ভালো করে জানিস আমি যা বলে থাকি তাই করি৷ তোদের সাথে যাব মানে যাব৷

— দিদি কথা না বলে থাকতে পারলাম না৷ তুমি আমার স্বামীর সাথে এই ভাবে তুই তুকারি করে কথা বলতে পার না৷ তার স্ট্যাটাস আছে৷ যখন তিনি বলেছেন আজ তোমাকে নিয়ে যেতে পারবে না৷ মানে পারবে না৷ এভাবে জোর করার মানে কি আছে?(নিয়তি)

— যখন বড়রা কথা বলে তাদের মাঝে কথা বলতে মানা করেছি৷ আর আমি নির্বণকে কি নামে ডাকব তোর দেখার বিষয় না।

— নিয়তি তুমি গাড়িতে বস? এই রকম বাজে মেয়ের সাথে কথা বলে আমরা আমাদের সময় ওয়েস্ট করতে চায় না৷

— তোর সাহস কম নয়৷ তুই আমাকে বাজে মেয়ে বলছিস।

নিঝুম রেগে নির্বণের গায়ে হাত তুলতে যায়৷ কিন্তু নির্বণের গায়ে হাত তুলার আগেই নির্বণ নিঝুমের হাত ধরে ফেলে। নিঝুমের হাত ধরে নিঝুমকে এক প্রকার ছুঁড়ে ফেলে দেয় মাটিতে৷ নিঝুম নির্বণের কাছ থেকে ছুঁড়ে ফেলা আঘাতে দুই তিন হাত দূরে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে পড়ে যায়।

— নিয়তি গাড়িতে বস? আমাদের নিঝুমের নাটক দেখার সময় নেই৷

— কিন্তু দিদি,,

— চোখ পাকিয়ে গাড়িতে উঠতে বলছি মানে উঠ৷ তোমার দিদি মাই ফুট।

নিয়তি গাড়িতে উঠে বসে। মনে মনে খুশিতে ঠেলায় লাড্ডু রয়ে যাচ্ছে। নির্বণ তার দিদিকে এভয়েড করেছে। দিদি নামে কাটা নির্বণকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।

নিয়তি গাড়িতে উঠে বসতেই নির্বণ গাড়ি ছেড়ে দেয়৷ অন্যদিকে নিঝুম মাটিতে পড়ে আছে সে দিকে তাদের কোন খেয়াল নেই৷ নিঝুম কষ্ট করে দাঁড়ায়৷ নিঝুমের হাত ছিলে ফোটায় ফোটায় রক্ত জমাট বেধে আছে।

নিঝুম দাঁড়িয়ে রাগের মাথায় গ্যারেজের পিলারে দুই তিনটা লাথি মারে৷ কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,,

— তোরা খুব বড় ভুল করলি। ভেবেছিলাম তোদের সাথে তেমন খারাপ কিছু করব না৷ নিয়তিকে এভার পুরোপুরি ভাবে দুনিয়া থেকে সরাতে হবে। নিয়তির জন্য তুই আজ আমাকে ইনসাল্ট করলি। যদি নিয়তিই না থাকে তাহলে কেমন হয়৷ শয়তানি একটা হাসি দিয়ে নিঝুন বাড়ির ভিতরে চলে যায়।



— ধীরে ধীরে গাড়ি চালান৷ এভাবে গাড়ি চালাতে এক্সিডেন হতে পারে। কিসের জন্য এত ক্ষেপে আছেন?

— তোমার দিদির জন্য? অগ্নি দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকায়৷

— এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই৷ দিদি এমন কি করেছে? দিদি শুধু আমাদের সাথে এই বাড়িতে আসতে চেয়েছে৷ বোন হিসেবে আসতে পারেই৷ বোনের বাড়িতে বোন আসবে না তাহলে কে আসবে৷

সালা তুই আমাকে কাঁচা খেলোয়াড় ভাবিস৷ বুঝে নে এবার কি উত্তর দিবি৷ আমি সব জানি তবুও না জানার ভান করে আছি৷ তুই ভাবছিস আমি দিদির বিষয়ে কিছু জানি না৷

— নিয়তি নিঝুম তোমার ভালো দিদি হয়ে আসলে আমার কোন আপত্তি থাকত না৷ কিন্তু নিঝুম মোটেও ভালো মেয়ে নয়৷ তোমরা নিঝুমকে যতটুকু চিন তার থেকে দ্বিগুণ আমি নিঝুমকে চিনি৷

— আপনি বলবেন আর আমি বিশ্বাস করে নিব৷ দিদি আমার৷ দিদির সাথে সেই ছোট বেলা থেকে উঠা বসা। দিদিকে আমি চিনব না আপনি চিনবেন ! আপনার সাথে দিদির পরিচয় কিছুদিনের৷

— এখানে কথা না বলাই শ্রেয়। পাগল মেয়ে কিছুই বুঝতে চাচ্ছে না৷ বরং আমি কথা বলা বন্ধ করে দেয়। সে সারাদিন বক বক করে যান। তাতে আমার কোন যায় আসে না৷ আমি চুপ থাকলে তার বাজে কথার উত্তর দিতে হবে না৷ (মনে মনে)

— কি হলো আপনার? কিছু বলছি আপনাকে শুনতে পাচ্ছেন?

নির্বণ নিয়তির কথা কর্ণপাত না করে গাড়ির ভিতরে এফ এম রিডিও চালু করে৷ রেডিও কাবির সিং এর ভালো ভালো গান দিয়েছে৷ রেডিও সাউন্ড বাড়িয়ে দেয় যেন নিয়তির কথা নির্বণের কর্ণধারে না পৌঁছাতে পারে৷

নিয়তি রেগে রেগে ক্ষেপে ভুম হয়ে যাচ্ছে আর নিজের হাতের নক বুলিয়ে যাচ্ছে।

তুই কি ভেবেছিলি তোকে এত সহজে ছেড়ে দিব। আগে বাড়িতে ফিরে যায়৷ তোকে কিভাবে শাস্তি দেয়৷ দেখা যায়। নিয়তিও ফোনে ব্লুটুথ চালু করে অন্য গান শুনতে শুনতে বাড়িতে পৌঁছে যায়।

বাড়িতে পৌঁছে নিয়তি ওয়াশরুমে চলে যায়। ঘন্টাময় শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল কিভাবে সংগ্রাম করবে তার দিদি নিঝুমের সাথে৷ নিঝুম তাদের কিছুতেই ছেড়ে দিবে না৷ নিঝুম বাড়িতে মার কোন ক্ষতি করে দিবে না৷ বাড়িতে মার তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু সে আমাদের জন্য কি আঘাত আনতে যাচ্ছে। কিভাবে মোকাবেলা করব?

প্রাকৃতিক ঝড় আসার আগে পূর্বাভাস দিয়ে আসে৷ কিন্তু এই ঝড় প্রাকৃতিক ঝড় না৷ কোন পূর্বাভাস দিয়ে আসবে না৷ হুট করে আমাদের জীবনে এসে আমাদের লাইফ ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যাবে। ভাবতেই গায়ে শিরশির হাওয়া বয়তে লাগে।

নিঝুম রুমে বসে ফ্রী ফাইয়ার খেলছে৷ কিন্তু নিয়তি ঘন্টাময় ধরে শাওয়ার নিয়ে যাচ্ছে। ঝর্ণা জল বয়ে যাচ্ছে। নিয়তির কিছু হলো না তো? ফ্রী ফাইয়ার খেলা বন্ধ করে নির্বণ দরজায় নক করে,,

— নিয়তি তুমি ঠিক আছো তো? শাওয়ার নিতে অনেক সময় নিচ্ছ কেন? শরীর খারাপ করবে তোমার৷

নির্বণের ডাকে নিয়তি দুনিয়ায় ফিরে আসে৷ নিয়তি নিজের গায়ে দিকে তাকিয়ে দেখে সমস্ত গা সাদাটে দেখাচ্ছে। তার থেকে বড় কথা হাত পায়ে আঙ্গুল বুড়ো লোকদের মতো কুঁচকে রয়েছে৷ তার মানে নিয়তি অনেক ক্ষণ থেকে ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে আছে৷

— কি হলো নিয়তি? কোন কথা বলছো না কেন? কোন সমস্যা হয়েছে কি? এখন কথা না বললে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করা থেকে কেউ আটকাতে পারবে না৷

— আমি ঠিক আছি।আসলে খেয়াল ছিল না৷ জার্নি করে আসছি সেজন্য মাথাটা একটু গরম তাই জলের নিচে দাঁড়িয়ে মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছিলাম৷

— অনেকক্ষণ থেকে শাওয়ার নিচ্ছি। বেশিক্ষণ শাওয়ার নিলে শরীর খারাপ করবে৷ তারাতাড়ি শাওয়ার শেষ কর?

— ওঁকে,,, আর আমার কিছু হবে না৷ এমন শাওয়ার মাঝে মাঝে নিয়ে থাকি৷

–ভুলে গেলে চলবে না এখন তুমি বিবাহিত। তোমার কিছু হয়ে যাওয়া মানে আমার কিছু হয়ে যাওয়া৷

— ও আচ্ছা। এসব নীতি কথা কোথায় ছিল বাসর রাতে৷ সরি আমি ভুলে গিয়েছিলাম তখন এসব নীতি কথা আপনার ওই বড় জানালা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।

— একি কথা কতবার বলতে হয় তোমার৷ সেজন্য আমি তোমাকে কাছে বার বার ক্ষমা চাচ্ছি। আমি আমার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি৷

— আমিও সেদিন আপনার কাছে আকুল আবেদন করেছিলাম৷ কিন্তু আপনি আমার কোন কথা বিশ্বাস করেননি৷ নির্মম সে রাতের কথা আমার চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠে,,

নিয়তি সেই কথা বলতেই চোখে জল এসে পড়ে। চোখের জল মুছে বাহিরে চলে যায়।

কি এমন দোষ ছিল আমার? কেউ বলতে পারবে! বিয়ের দিন যদি কোন স্বামী জানতে পারে তার বউ চাহিদা মেটানোর জন্য অন্য ছেলের সাথে মেলামেশা করে। তখন কার মাথা ঠিক থাকে। কেউ কিভাবে হুট করেই কারো অতীত মেনে নিতে পারে যদিও সেটা মিথ্যা।

নির্বণ কোন কিছুই বুঝতে পারছে না কিভাবে নিয়তির কাছে ক্ষমা চায়বে। নির্বণের কোন উপায় জানা নেই৷ নিয়তির সাথে কোন কথা বলতে নিলেই নিয়তি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই রাতের কথা টেনে আনে৷ প্লিজ কেউ একটা উপায় বলে দাও৷



নিয়তি নিচে চলে আসে৷ নিচে নির্বণের মা টিভি অন করে খবর দেখছে আর মটরশুঁটির খোসা ছাড়াচ্ছে।

–মা আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

— হ্যাঁ করতে পার?

— মা এসব ফলের নাম কি?

— এসবের নাম মটরশুঁটি।

–। মটরশুঁটি দিয়ে কি কি রান্না করা যায়।

— মটরশুঁটি দিয়ে সবই রান্না করা যায়।মাছ, মাংস,শুটকি,বাজিতে৷ মটরশুঁটি সব জায়গায় কাজে লাগানো যায়।

— ও আচ্ছা৷

— তুমি মটরশুঁটির গুলো খোসা ছাড়াও আমি রান্না ঘর থেকে আসছি৷ দেখি অরিন কি করছে৷

— ওঁকে মা৷

নিয়তির শ্বাশুড়ি মা রান্না রুমে যাওয়ার পর নিয়তি খুব মনোযোগ দিয়প মটরশুঁটি বেছে যাচ্ছে। মটরশুঁটির দিকে অনেক। মনোযোগ দিয়ে রেখেছে৷ চারিপাশে কি হচ্ছে তার জানা নেই৷

হুট করেই কেউ নিয়তির মুখে রুমাল চেপে ধরে কোথায় নিয়ে যায়৷ যা নিয়তি বুঝতে পারে না৷

চলবে♠