সাহেব বিবি গোলাম পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
4035

#সাহেব_বিবি_গোলাম
#নুশরাত_জেরিন
#পর্ব:১৮_এবং_শেষ

,
,
সকালের মিষ্টি রোদ জানালা ভেদ করে ঘরে ঢুকছে।চোখে রোদের আলো পরতেই আমি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম।
পাশে তাকিয়ে শুভর খোজ করে দেখি সে নেই।
হয়তো ওয়াশরুমে আছে।
কাবার্ড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাড়াতেই দেখি শুভ সেখানেও নেই।
তাহলে গেলোটা কোথায়?তাও আবার এতো সকাল সকাল?
শাওয়ার সেড়ে সুতির একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ধীরপায়ে সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে বুঝলাম ড্রয়িং রুমের সোফায় কেউ বসে আছে।
পাশে হাসি হাসি মুখ করে দাড়িয়ে আছে আপা আর শুভ।
আমাকে দেখেই শুভর হাসি মুখটা আরও বিস্তৃত হলো।
আপা তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এলেন।
আমাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,

—তাড়াতাড়ি এদিকে আয় পিহু,কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।

আমি আপার পিছুপিছু সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই থমকে গেলাম।সোফায় আমার মা বসে আছেন।মুখচোখ কি শুকনো তার!এ কটা দিনেই শরীর পুরো ভেঙে পরেছে।
অত্যাচারের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
মাকে দেখেই আমি তার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলাম।হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলাম।
আমার কান্না শুনে মা মাথায় হাত বুলালেন।তার চোখও ভরে এসেছে।
বললেন,

—পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেনো?আমি তো চলে এসেছি।

তার কথা শুনেও আমার কান্না থামলো না উল্টো বেড়ে গেলো।নাক টেনে টেনে বললাম,

—এতো শুঁকিয়ে গেছো কেনো মা?নিজের যত্ন নেওনা?

মা মৃদু হাসলেন।তিনি কিছু বলার আগেই শুভ মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—আপনি তো শুঁকিয়ে গেছেন আন্টি, কিন্তু আপনার মেয়েকে দেখেন?
কুমড়োর আকার ধারন করেছে না?

আমি চোখ পাকালাম।আপা শুভকে মৃদু ধমক দিলেন।

—আহ শুভ কি হচ্ছে টা কি?এমন ইমোশনাল সময়েও তুই ফাইজলামি করছিস?

শুভ হাসতে হাসতে মাথা চুলকালো।
বললো,

—আমি আবার কি করলাম,সত্যি কথাই তো বললাম!

আমি মাকে জড়িয়ে ধরেই বললাম,

—তুমি এ বাড়ি চিনে কিভাবে এলে মা?

—শুভ নিয়ে এলো।

—শুভ?

আপা বলে উঠলেন,

—হ্যাঁ শুভই নিয়ে এলো।তাছাড়া তোর মা তো আমাদের ও মা নাকি?তাকে ওমন নরকে আমরা কি করে ফেলে রাখি বলতো?তাই ভাবলাম এখন থেকে আমরা একসাথে থাকবো।

মা প্রতিবাদ করে উঠলো,

—না না তা কি করে হয়।মেয়ের শশুড়বাড়ি আমি এভাবে থাকি কিকরে?

আপা তবুও নাছোড়বান্দার মতো মাকে বোঝাতে লাগলেন।
অবশেষে মা রাজি হলো।
আমার কি যে আনন্দ হচ্ছিল! শুভর দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা সূচক হাসি দিতেই সে চোখ টিপে দিলো।
আমি হকচকিয়ে উঠলাম।
ছেলেটা এতো পরিমানে দুষ্টু কেনো কে জানে?তবে জিবনটা দুষ্টুমিতে পরিপূর্ণ হলে মন্দ হয় না।
বাস্তবতার শিকলে মোড়ানো বেদনাভর এ জিবনে শুভর মতো একটা মানুষ পেলে হেসে খেলে জিবনটা কাটানোই যায়।

,

সমাপ্ত।

(ভুল ক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)