সি আইডি অফিসারের ভালোবাসা Part-12

0
1146

গল্প: সি আইডি অফিসারের ভালোবাসা
#Raihan
Part-12

.
কথাটা বলে বলতেই চাদনী আমাকে জড়িয়ে ধরে।
_সত্যি আমি তোমাকে ছাড়া বাচবোনা শাকিল!
আমাকে কখনো দূরে সরিয়ে দিওনা।
তোমাকে ছাড়া যে আমি অসহায়।{চাদনী}
_তাই! আমিও যে তোমাকে ছাড়া বড় অসহায়।
তোমাকে ছেড়ে তো আমিও বাচতে পারবোনা{আমি}
_যদি কখনো আমি তোমার কাছ থেকে হারিয়ে যাই….{চাদনী}
_কি যে বলোনা!
দুনিয়ার এমন কোনো শক্তি নেই যে ACP শাকিল রায়হানের কাছ থেকে তার ভালোবাসার মানুষটিকে লোকিয়ে রাখবে।
_I LOVE YOU…..{চাদনী}
_I LOVE YOU TOO……{আমি}
_শাকিল আমি আইসক্রিম খাবো..!{চাদনী}
_তাই! তোমি এখানে দাড়াও আমি নিয়ে আসছি।
চাদনীকে সেখানে বসিয়ে রেখে আমি আইচক্রিমের জন্য গেলাম
কিন্তু আইচক্রিম নিয়ে এসে দেখি চাদনী সেই জায়গাতে নেই।
চাদনীকে আমি সারা পার্কসহ খুজতে লাগলাম কিন্তু কিছুতেই খুজে পাচ্ছি না।
ওর নাম্বারে ফোন দিলাম নাম্বারটাও বন্ধ বলছে।
ঠিক তখনি
রেজার ফোন আসে।
_হ্যালো শাকিল….!! {রেজা}
_কি রে রেজা কোথায় তোই?
কাল থেকে তর কোনো খুজ নেই?
ফোনটাও বন্ধ রাখছছ কেন! {আমি}
_সরি রে! আসলে আমার একটা জরুরি কাজ ছিলো।
তাই তদেরকে বলে যেতে পারি নি।{রেজা}
_আচ্ছা ঠিক আছে।
মাসুদ সবুজ ওরা এখন সি.আই.ডি ব্যুরোতে গেছে।
পারলে তুইও ওদের সাথে ঐখানে যা।{আমি}
_কেন তুই যাবি না…?{রেজা}
_না রে আমার একটু প্রবলেম আছে।
আমি যেতে পারবোনা।
_কেন কি প্রবলেম…?
_চাদনীকে নিয়ে একটু পার্কে ঘুরতে আসছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ করে চাদনীকে খুজে পাচ্ছি না।
_তাহলে চাদনীকে ফোন দে!
দেখ কোথাই বলে।
_ফোন দিয়েছিলাম রে!
কিন্তু বন্ধ বলছে।
_কি বলিস..?
তাহলে চাদনীর আবার কিছু হলো না তো…?
_জানিনা রে!
কিন্তু হঠাৎ আমাকে আইসক্রিম আনতে বলে চাদনী কোথায় চলে গেলো?
_কি রে শাকিল আমি কি তাহলে তর কাছে আসবো…?{রেজা}
_না তর আসার দরকার নেই।
তোই মাসুদ,সবুজের সাথে যা।{আমি}
_আচ্ছা! আর ভালো করে খুজিস।
আর কোনো প্রকার হেল্প লাগলে আমাকে বলিস।
_হুম আচ্ছা ঠাক আছে।
রেজার সাথে কথা বলে ফোনটা কেটে দিলাম।
আর চাদনীকে চাতক পাখির মত সারাটা পার্ক খুজতে লাগলাম।
কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছি না।
ঠিক তখনি হঠাৎ করে একটা unknow নাম্বার থেকে ফোন আসে।
ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে….
_হ্যালো শাকিল আমি চাদনী বলছি!!
হঠাৎ চাদনীর কথা শোনে যেন আমার দেহে প্রাণ ফিরে আসলো।
_চাদনী,তুমি..?
আমাকে আইসক্রিম আনতে বলে কোথায় হারিয়ে গেলে আমি তো তোমাকে খুজে খুজে পাগল হয়ে যাচ্ছি!!
_আমি রাফিকে ফলো করে এক জায়গাতে চলে আসছি।
আর শোনে শাকিল! আমরা সবাই এমন কি কলেজের সবাই জানে যে ভার্সিটির মেয়েগুলোকে ধর্ষণ করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আসলে সেই মেয়েদেরকে হত্যা করা হয় নি।..{চাদনী}
_মানে…?
কি বলছো তোমি?
সেই মেয়েদেরকে হত্যা করা হয় নি?{আমি}
_ না, মেয়েগুলোকে কিডনাপ করা হয়েছে।..{চাদনী}
হঠাৎ চাদনীর মুখে কিডন্যাপের কথা শোনে আমি অবাক হয়ে যায়।
তার মানে মেয়েগুলোকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।
কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব…?
_এগুলো তোমি কি বলছো চাদনী?
মেয়েগুলোকে কিডন্যাপ করা হয়েছে?
কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?
আমরা তো প্রতিদিন ভার্সিটির ক্যাম্পাসের বটগাছটায় হত্যা করে ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়েগুলোর লাশ দেখতে পেতাম।
কিন্তু নিজের চোখের দেখা জিনিসটাকে অবিশ্বাস করি কিভাবে…?{আমি}
_সেটা দেখা আমাদের ভূল ছিলো।
কারণ লাশগুলো ভার্সিটির মেয়েদের ছিলো না।
সেগুলো ছিলো মর্গে থেকে আনা বেওয়ারিশ মেয়েদের লাশ।
আর আমি এখান থেকে শুধু এই টুকুই জানতে পারলাম।
আর এই কেইসের ব্যপারে আরো কিছু জানতে পারবে যদি তোমি আমার ডাইরিটা দেখতে পারো।
এ ব্যপারে আমি সব কিছু আমার পার্সোনাল ডাইরিতে লিখে রেখেছি।
আর সেখানে কিডন্যাপ হওয়া মেয়েদের ছবিও আছে।
আর আমার ডাইরিটা লেডিস হোষ্টেলের ৪২ নাম্বার রুমে আছে।
আর আমি যেকোনো সময় ধরা পড়ে যেতে পারি।
যা করার তোমাকে তাড়াতাড়ি করতে হবে।
_কিন্তু চাদনী! এখন তোমি কোথাই?{আমি}
_আমি এখন….
এই টুকু বলতেই হঠাৎ ফোনটা কেটে যায়।
সাথে সাথেই আমি ফোন ব্রেক করি।
কিন্তু রিং হচ্ছে ঠিকই তুলছে না।
আমি ভেবেছি হয়ত চাদনী তাড়াহুড়ায় ফোনটা কেটে দিয়েছে।
তাই আমি সেখানে আর একটুও অপেক্ষা না করে সোজা লেডিস হোষ্টেলে চাদনীর রুমে চলে আসি।
আর সেখানে গিয়ে মেয়েগুলোর ছবি আর চাদনীর ডাইরিটা নিয়ে সোজা চলে যায় ব্যুরোতে।
ব্যুরোতে এসেই আমি ভার্সিটির প্রিন্সিপালকে ফোন দেই ভার্সিটিতে হত্যায় স্বীকার হওয়া মেয়েদের ছবি আনতে
চাদনীর ডাইরিতে রাখা ছবিগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখার জন্য।
একটু পরেই ভার্সির পিয়নকেসহ প্রিন্সপাল চলে আসে মেয়েদের ছবি নিয়ে।
আর চাদনীর ডাইরিতে রাখা ছবি গুলোর সাথে প্রিন্সপালের আনা ছবিগুলো দেখে তো আমি পুরাই অবাক।
_আরে এ তো দেখছি মিলে গেছে।
_মানে, কি বলছিস শাকিল!
আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।{সবুজ}
_কি রে কি মিলে গেছে…?{মাসুদ}
_ভার্সিটিতে খুন হওয়া মেয়েগুলোর ছবি।
আর এখন আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি মেয়েগুলোকে খুন করা হয় নি।
ওদেরকে কিডনাপ করা হয়েছে।{আমি}
আমার মুখে কথাটা শোনে প্রিন্সপালসহ সবাই অবাক হয়ে যায়।
_মানে?
কি বলছেন স্যার?
তার মানে ওদেরকে হত্যা করা হয় নি?{প্রিন্সিপাল}
_হুম! ওদেরকে হত্যা করা হই নি!
ওদের সবাইকে পাচার করার জন্য কিডনাপ করা হয়েছে।{আমি}
_আরে এটা কিভাবে সম্ভব…?
আমরা তো খুন হয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়েগুলোর লাশ নিজ চোখে দেখতে পেলাম।
তাহলে ওরা খুন না হয়ে কিডনাপ হলো কিভাবে…?{মাসুদ}
_হুম আমারও প্রথমে ঠিক এই প্রশ্নটাই ছিলো।
আর চাদনীর রুমে রেখে যাওয়া এই ডাইরিটা থেকে আমি এ সম্পর্কে সব খোজ জানতে পারি।{আমি}
_তার মানে চাদনি এক কেইসের ব্যপারে আগে থেকেই তথ্য সংগ্রহ করে ডাইরিতে লিখে রেখেছিলো…?{সবুজ}
_না। চাদনী সম্পূর্ণ তথ্য জোগাড় করতে পারে নি।
এখন চাদনীর জোগাড় করা অসম্পূর্ণ তথ্য আমাদেরকে জোগাড় করতে হবে।{আমি}
_কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব…?{সবুজ}
_very simple.
তরা আমার সাথে একটু মর্গে চল।
দেখি সেখানেচাদনীর তথ্যতে সত্যতা যাচাই করতে পারি কি না।
_আরে এখন আবার মর্গে যেতে হবে কেনো…?{মাসুদ}
_সেটা গেলেই বুঝতে পারবি।
যদি চাদনীর দেওয়া তথ্য ঠিক হয় তাহলে সেখানেই আমাদের পুরো কেইসটা সমাধান হবে।{আমি}
_ওকে তাহলে চল।{মাসুদ}
এরপর আমরা সবাই ব্যুরো থেকে সোজা মর্গে চলে আসলাম।
আর মর্গে এসে মর্গে হেডকে ডাক দিলাম।
_আপনি এই মর্গে কত দিন যাবত কর্মরত আছেন?{আমি}
_ তা তো প্রায় দশ বছর হবে।
কিন্তু আপনারা কে…?{লোকটা}
_আমরা সি.আই.ডি থেকে এসেছি।{সবুজ}
_ওহ স্যার আপনারা।
জ্বি বলুন আপনাদেরকে কি সাহায্য করতে পারি।{লোকটা}
_তেমন কিছু না।
আপনি শুধু আমাদেরকে ভাসিটিতে খুন হওয়া মেয়েদের লাশগুলো দেখান।{আমি}
_আচ্ছা চলেন স্যার।
তারপর আমরা সোজা লাশ রাখা ঘরে চলে আসলাম।
আর একটু পরেই বাক্সগুলো খুলে লোকটা লাশগুলো দেখাতে লাগলো।
লাশগুলো দেখে তো আমি অবাক হয়ে গেলাম।
_আরে লাশগুলোকে ময়না তদন্ত করা হয় নি কেন…?{আমি}
_কি বলেন স্যার আপনিই তো লাশগুলোকে পোসমর্টাম করতে নিষেধ করছেন।
আর সেজন্যই তো লাশগুলোর পোসমর্টাম করা হয় নি।{লোকটা}
_মানে?
কি বলছেন এসব?
আমি আবার কখন আপনাদেরকে নিষেধ করলাম?{আমি}
_আরে স্যার আপনিই তো ফোন করে বললেন এ কেইসের ব্যপারে পুরোপুরি ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত কোনো লাশের বাক্স যেন না খুলা হয়।
আমি আবার কখন লাশগুলোকে পোসমর্টাম করতে নিষেধ করলাম?
আমি তো কখনো এইখানে ফোন ই করে নি।
এসব মনে মনে ভাবছি আর লাশগুলোকে দেখতেছি।
হঠাৎ করে একটা লাশের গলার কাছে চোখ পড়তেই আমি চমকে যায়।
_আরে মাসুদ দেখতো লাশের গলাতে কিসের যেন একটা দাগ দেখা যাচ্ছে না।
_হুম সেটাইতো দেখতে পাচ্ছি।
কিন্তু এটা তো দড়ির দাগ মনে হচ্ছে।{মাসুদ}
_আরে নাহ।
ভালো করে খেয়াল করে দেখ।
মাসুদকে কথাটা বলে আমি একটা লাশের গলাতে হাত দিতেই আমার হাতের সাথে কাগজের মত কিছু একটা অনুভব করি।
আর সাথে সাথেই হেচকা একটা টান দিয়ে উপরের দিকে তোলতেই আমরা যেটা দেখলাম সেটা দেখার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
_আরে শাকিল এটা আবার কে?
এটা তো ভার্সিটির খুন হওয়া মেয়েটার লাশ না।
এটা তো দেখছি অন্য লাশ।
কিন্তু এতক্ষণ তো দেখলাম সেই ভার্সিটির মেয়েটার মত দেখতেই ছিলো।
কিন্তু চামড়ার মত কাগজটা মুখ থেকে টান দিয়ে সরাতেই মেয়েটার চেহারাটা পরিবর্তন হয়ে গেলো কিভাবে..?{সবুজ}
_হুম ঠিক ই তো।
তার মানে কি চাদনীর ডাইরিতে লেখে রাখা তথ্যগুলো সব সত্য?
কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?
তার মানে সি.আই.ডি র নাম বলে এই মর্গে থেকেই খুনিরা লাশ নিয়ে প্লাষ্টিক সার্জারি করে হুবহু ভার্সিটির সেই মেয়েদের মত বানিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে প্রতিদিন একটা করে মেয়ে কিডনাপ করে নিতো?
আম লোকজনকে বুঝাতো যে মেয়েগুলোকে খুন করা হয়েছে?
খুব সাংজ্ঞাতিক তো।!!
_মানে, কি বলছিস তুই শাকিল?{মাসুদ}
_আমি ঠিক ই বলছি।
মেয়েগুলোকে খুন করা হয় নি।
ওদেরকে কিডনাপ করা হয়েছে।
আর ওদের সাথে রাফিও জড়িত।
রাফিকে ধরতে পারলেই একমাত্র মেয়েগুলোকে পাওয়া যাবে।।
_কিন্তু রাফিকে আমরা ধরবো কিভাবে?
ও তো পালিয়েছে।{সবুজ}
_যেভাবেই হোক রাফিকে আইনের কাছে ধরা দিতেই হবে।
আইনের হাত থেকে পালিয়ে কোনো অপরাধি ই বাচতে পারে নি।
রাফিও পারবেনা।
এই শাকিল রায়হান কখনো কোনো কেইসে হার মানে নি।
জীবনের সবোচ্চ ঝুকি নিয়ে প্রতিটি কেইস আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।
ইনশাআল্লাহ, আল্লাহর রহমতে প্রতিটিতে সফল ও হয়েছি।
আর এই কেইসেও আমাকে সফল হতেই হবে ইনশাআল্লাহ।{আমি}
_সত্যিই রে শাকিল!
তর মত যদি আমাদের দেশের প্রত্যেকটি পুলিশ অফিসার নিজের জীবনটাকে আপন না করে নিজের দায়িত্বটাকে আপন করে নিয়ে নিজ দায়িত্বে সবসময় অবিচল থাকতো তাহলে অবশ্যয় আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের উপর জনগণের আস্থা পুরোপুরিই থাকতো।
পুলিশ এমন কি সব বাহিনীর চাকরিটা হলো পবিত্র একটা চাকরি।
কিন্তু সেই পবিত্র চাকরিটাকে অপবিত্র করে কিছু অবাধ্য পুলিশ অফিসাররা।
তারা নিজেদের জীবন জীবিটাকেই আপন করে নিয়ে জনগণের সেবার কথা ভুলে গিয়ে জনগণের উপরেই নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
একবারও তারা এটা ভাবে না জনগণের জন্য আজ সে এই মর্যাদার চাকরিতে উন্নীত হতে পেরেছে।
এমন কি জনগণের জান-মাল সব কিছু রক্ষার দায়িত্ব ওদের।{সবুজ}
_এটা যারা করে তাদের ভিতরে শিক্ষার সম্পূর্ণ অপব্যবহার হয়েছে।
কথায় আছে না শিক্ষা সৎ জনকে করে বিনয়ী,আর দূর্জনকে করে অহংকারী।
সব পুলিশ অফিসাররাই নিজের স্বার্থটাকেই আপন করে দেখে না।
এমনও পুলিশ অফিসার আছে যারা নিজের দায়িত্ব ছেড়ে কখনোই পিছপা হয় না।
আর একমাত্র তাদের মত পুলিশ অফিসারদের জন্য আজও পুলিশ বাহিনী জনগণের সম্পূর্ণ আস্থার প্রতীক হয়ে আছে।
স্যালুট সমস্ত পুলিশ বাহিনীকে।।।।।।
আমরা লাশগুলোকে আরও কিছুক্ষণ ভালো করে দেখে মর্গে থেকে চলে আসলাম।
আর সেখান থেকে চলে গেলাম সোজা ব্যুরোতে।
আর সেখানে পৌছানোর সাথে সাথেই আমার ফোনে unknow নাম্বার থেকে একটা ফোন আসে।
ফোনটা ধরতেই…..
_হ্যালো কে বলছেন…!?{আমি}
_ACP আমি তর জম বলছি।
রাফি! চিনতে পারছিস আমাকে….?{রাফি}
_হাহাহা কি যে বলিস তকে আবার চিনবো না..?
তকেই তো খুজে বেড়াচ্ছি।
সে দিন তো পালিয়ে গেলি।
কিন্তু এবার ধরতে পারলে ডাইরেক্ট ফাসিঁর দড়িতে ঝুলাবো…{আমি}
_তাই নাকি ACP..?
আমাকে তোমি ফাসির দড়িতে ঝুলাবা?
হাহাহা তোমি আমাকে ফাসির দড়িতে ঝুলানোর স্বপ্ন দেখো আর আমি তোমার প্রেমিকাকে নিয়ে মাস্তি করতে থাকি।{রাফি}
_মানে?
কি বলছিস তোই…{আমি}
_আরে চ্যাতো ক্যান ACP শাকিল রায়হান?
তোমার প্রেমিকা! মানে সি.আই.ডি অফিসার চাদনী এখন আমার কাছে আছে।
বেশি তেড়াবেড়া করবা তো সেই ভার্সিটির কিডন্যাপ করা মেয়েদের সাথে তোমার জান পাখিটাকেও পাচার করে দিমো।
জানোই তো পাচার কারীদের কোনো দয়া মায়া নাই।{রাফি}
_দেখ রাফি! তোই কাজগুলো কিন্তু ভালো করছিস না!
তকে এর শাস্তি পেতেই হবে।
আইনের কাছ থেকে তোই কখনো পালাতে পারবি না।{আমি}
_আরে রাখ তর আইন!
আমাকে আইন শিখাতে আসিস না।
তর থেকে আমি আইন কম জানি না।
আমাকে এই কাজে তর আইনের কিছু লোকেই সাহায্য করতেছে।
আর তোই আমাকে আইনের ভয় দেখাস হাহাহা…?{রাফি}

কথাটা বলেই রাফি ফোন কেটে দেয়।
আর আমি সাথে সাথেই ফোন ব্রেক করি।
কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে।
_মাসুদ,সবুজ কোথায় তরা?{আমি}
_কি হয়েছে স্যার সবুজ,আর মাসুদ স্যার তো কিছুক্ষণ আগেই বাইরে গেলো।{একজন অফিসার}
_মানে কি বলছো তোমি?
ওরা এখন আবার কোথায় গেলো?
_সেটা তো বলতে পারবোনা স্যার।
তবে আমাকে বলে গেলো রেজা স্যার নাকি ওদেরকে ফোন দিছিলো।
আর সেখানেই নাকি গেলো।
_মানে?
রেজা আমাকে বাদ দিয়ে শুধু সবুজ,আর মাসুদকে ফোন দিলো?
এটা কিভাবে সম্ভব?
আমরা তো চারজন সেই ছোটবেলা থেকেই এক সাথে আছি।
কোনো জায়গাতে যদি জানা শুনা বিপদের সম্মুখিন হতে হয় তাহলে আমরা চারজন এক সাথেই যায়।
কোনো একটা খাবার জিনিস কিনলে আমরা চারজনে সমান ভাগ করে খাই।
কোনো একটা পরণের পোশাক কিনলেও আমরা চারজনে একই ডিজাইনের পোশাক পরি।
এক কথাই আমরা চার জন কখনো কাউখে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না।
ট্রেনিংয়ের সময় কয়েক দিন আমি অসুস্থ্য থাকায় ট্রেনিংয়ে যেতে পারি নাই।
আর এতে আমার না যেতে পারাতে যেই রেজা নাকি কান্না করে নিজেও অসুস্থ্যের অভিনয় করে ট্রেনিংয়ে না গিয়ে আমার সেবা যত্ন করতো।
আর আজকে সেই রেজা ই আমাকে রেখে শুধু মাসুদ আর সবুজকে ফোন দিলো?
আমাকে একটুও জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না কোথায় যায় ওরা…?
আবার মনে মনে বলছি
_আরে দূর কি ভাবছি এসব?
হয়ত রেজা কোনো একটা জরুরি প্রোজনে ওদেরকে ডেকেছে তাই হয়ত আমাকে জানাই নি।
আর আমি তো ওদের বন্ধু হলেও পোষ্টে তো সিনিয়র তাই হয়ত শুধু ওদের দুজনকেই ডেকেছে।
এসব বলে নিজের মন কে মিথ্যে সান্তণা দিচ্ছি।
কিন্তু একটা বিষয় কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না।
রেজার হয়তো একটু মেন্টালিটি প্রবলেম আছে যার জন্য আমাকে কিছু জানাই নি।
কিন্তু সবুজ আর মাসুদ তো যাওয়ার আগে একটু আমাকে জানিয়ে যেতে পারতো যে কোথায় যাচ্ছে।।
এসব মনে মনে ভাবছি ঠিক তখনি আমার নাম্বারে একটা ফোন আসে।
_হ্যালো! কে বলছেন….?(আমি}
_রাফি!
_ওহ তোই?
আবার ফোন দিয়েছিস কেন…?{আমি}
_একটা সুখবর দেওয়ার জন্য{রাফি}
_মানে?
কিসের সুখবর….?{আমি}
_সেটা একটু পরেই বুঝতে পারবি{রাফি}
_মানে?
কি বলছিস ক্লিয়ার করে বল!
না হলে কিন্তু{আমি}
_না হলে কিন্তু কি রে ACP….?
কি করবি আমাকে হুম…?
এখনও কি তর মাথা ঠান্ডা হয় নাই….?
তর আদরের বন্ধুগুলার সাথে কথা বলবি…?
_ঐ রাফি কি বলবি ক্লিয়ার করে বল{আমি}
_ক্লিয়ার করেই বলছি।
তর প্রেমিকা চাদনীর সাথে তর তিন জানে জিগার বন্ধু মাসুদ,সবুজকেও বন্দী করে রাখছি।
ওরা এখন আমার সামনেই।
_তোই কাজটা কিন্তু ভালো করতাছিস না রাফি!
তকে একবার ভাগে পাইলে কি ভাবে যে মারবো আমি নিজেও জানি না।{আমি}
_ধরতে পারলে পরে তো মারবি তাই না…?
অলরেডি সেক্সের ইনজেকশন তর দুই বন্ধুকে মদের সাথে মিশিয়ে জোর করে খাইয়ে দিয়েছি।
একটু পরে যখন কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকবেনা তখন তর তিন বন্ধু আর তর প্রেমিকাকে এক রুমে ছেড়ে দিবো।
আর এইসব কাজকর্ম নেটে ভাইরাল করে দিয়ে তদের সি.আই.ডি ডিপার্ডমেন্টের নাম পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে দেবো। হাহাহা{রাফি}
কথাটা বলে বিচ্ছিরি একটা হাসি দিয়ে ফোন কেটে দেয় রাফি।
ফোনটা কেটে দেওয়ার পর পাল্টা ফোন দেই।
রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ তোলছে না।
ঠিক তখনি রেজা ভিউরোতে আস।
_কি রে শাকিল তকে এত উত্তেজিত মনে হচ্ছে কেন?
কি হয়েছে তর?
_তেমন চিছু না।
মাসুদ আর সবুজকে রাফি আটকে রেখেছে।।
_আরে কি বলছিস তোই?
ওরা রাফির কাছে গেলো কখন?
আর রাফি ই বা ওদেরকে ধরলো কিভাবে?
_সেটাই তো বুঝতে পারতেছি না।
তবে আমাদের ডিপার্টমেন্টের কেউ ই ওদেরকে সহযোগিতা করছে।
_মা মানে কি বলছিস তোই?
আমাদের ডিপার্টমেন্টের ই কেউ ওদেরকে সহযোগিতা করছে?
কিন্তু সেটা কে হতে পারে?
_সেটাই তো ভাবছি।
কিন্তু যেই হোক না কেন,ওদেরকে একদিন ঠিক ই শাস্তি পেতে হবে।।
রেজা তোই একটা কাজ কর।
মোবাইল কোম্পানীতে খোজ নিয়ে দেখতো কোথা থেকে ফোনটা করা হয়েছে।।
আর আমি মর্গে থেকে আসছি।
_এখন তোই আবার মর্গে যাবি কেন?
একটু আগেই তো সেখান থেকে আসলি।
_এমনিতেই একটু জরুরি কাজ আছে।
তোই নাম্বারটার খোজ নে।
আমি আসতেছি।
কথাটা বলেই ভিউরো থেকে বের হয়ে সোজা মর্গে চলে আসলাম।
আর মর্গে থাকা লাশগুলোকে ভালো করে দেখে সোজা বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে ভাবছি
এটা কি হলো আমার জীবনে?
ভাগ্য কি আমার এটাই লিখা ছিলো?
সেদিন তো রাফিকে ধরে ফেলছিলাম।
কিন্তু ও পালিয়ে গেলো কিভাবে?
সেদিন যদি রাফি পালাতে না পারতো তাহলে তো আর আমার দুই বন্ধুকে আর ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে যেতে হতো না।
আবার রেজা,সবুজ,মাসুদ তো বললো রাফিকে ওরা ঠিক মত ই বেধে রেখেছে।
তাহলে ও পালালো কিভাবে?
আবার রাফি তো বললো আমাদের ডিপার্টমেন্টের ই কেউ নাকি ওদেরকে সাহায্য করছে।
কিন্তু সেটা কে হতে পারে?
আবার মুহূত্বেই মনে পড়ে গেলো চাদনীকে দেওয়া সেই কথাটা
যে দুনিয়ার কোনো শক্তিই তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।
তোমাকে আমি ভালোবাসবো জন্মজন্মান্তরে।
এসব কথা ভাবছি আর দু চোখ দিয়ে অঝরে বৃষ্টির মত পানি ঝরছে।
যে ACP শাকিল রায়হান সবসময় আইনের প্রতি আস্থা রেখে প্রত্যেকটা কাজে সফলতা নিয়ে আসছে।
আজকে হঠাৎ করেই সে নিজের অজান্তেই যেন আইনের উপর থেকে আস্তা হারিয়ে ফেলছে।
কিন্তু আবার মনে মনে ভাবছি আইনের উদ্ধে তো কারো হাত নেই।
আইনের হাতের কাছে জগতের সবকিছুই তুচ্ছ।
তাহলে আইনের উপর থেকে আস্থা হারাবো কেন?
অবশ্যয় সফল হবো।
চাদনীকে বাচাতে আর পাচারের জন্য বন্দী মেয়েদের বাচানোর জন্য আমাকে যে জীবন দিয়ে হলেও সফল হতেই হবে।
এসব কথা মনে মনে ভাবছি আর চোখে পানি মুচছি।
হঠাৎ করেই আমার মেসেন্জারে একটা মেসেজ আসে।
মেসেজটা সিন করতেই আমার পায়ের নীচ থেকে যেন মাটি সড়ে যাচ্ছে।
মেসেজে ২মিনিটের একটা ভিডিও দেওয়া আছে।
আর সেই ভিডিও তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে মাসুদ আর সবুজকে রাফি সেক্সের পিল খাইয়ে দিয়ে চাদনীকে ওদের সামনে রেখে দিয়েছে।
মাঝখানে একটা মাত্র সুতার জাল দেওয়া।
যেকোনো সময় ছিড়ে ফেলে মাসুদ আর সবুজ চাদনীর উপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে।
চাদনী বারবার মাসুদ আর সবুজকে ফিরানোর চেষ্টা করছে আর চিৎকার করে যাচ্ছে।
কিন্তু মাসুদ আর সবুজকে রাফি এমন সেক্সের পিল ই খাইয়েছে যে ওদের হিতাহিদ জ্ঞান সামান্য পরিমাণ আছে কিনা সন্দেহ।
সবুজ আর রেজা হিংস্র বাঘের মত জালটা ছিড়ে চাদনীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
আর চাদনী পিছিয়ে গেয়ে জোরে জোরে চিৎকার করছে।
এ দৃশ্যটা দেখার সাথে সাথেই আমার পুরো শরীরটা একবারে স্তব্ধ হয়ে আছে।
নড়ার শক্তিটুকুও যেন পাচ্ছি না।
সাথে সাথেই আবার সেই আইডি থেকে একটা মেসেজ আসে।
আর সেটাতে রাফি বলেছে
_কিরে ACP নিজে ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?
অপেক্ষা কর আরো দেখতে পারবি।
একটুপর ওদের সামনে থেকে পুরো জালটাই সড়িয়ে দিবো।
আর তখন দেখতে পারবি।
মেসেজটা পড়ে রিপ্লে দেওয়ার সাথে সাথেই দেখি আইডিটা ব্লক দিয়ে দিয়েছে।
আবার তাড়াহুড়া করে অন্য আইডি দিয়ে আইডিটা সার্চ করে দেখি যে আইডিটা ফেইসবুক থেকে গায়েব হয়ে গেছে।
একটু পরেই রেজার ফোন আসে।
_কিরে রেজা নাম্বারটার খবর পেলি?
_হ্যা।
নাম্বারটা রাঙামাটির একটা PCO র নাম্বার।
আর সেখান থেকেই ফোন করা হয়েছিলো।
_তাই নাকি?
তাহলে শালারা সব রাঙা মাটিতেই আছে।
যেভাবেই হোক সবুজ,মাসুদ,চাদনী আর কলেজের কীডনাপ হওয়া বাকি মেয়েদেরকে বাচাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদেরকে রাঙামাটি যেতে হবে।
তোই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে{আমি}
_কি বলছিস তুই?
আমি যেতে পারবো না{রেজা}
হঠাৎ রেজার মুখ থেকে যেতে পারবো না কথা শোনে আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়।
রেজা আমার কথার উপর কথা বললো তবুও ডিউটি অবস্থায়?
আর বলছে আমার সাথে নাকি ও যেতে পারবে না।
আমি তো আমার কানকেই বিশ্বাস করতে পারছি না।
_কি রে এগুলো কি বলছিস?
যাবি না মানে?
আমাদের বন্দধুদের আর কীডনাপ হওয়া মেয়েদের বাচাতে যে আমাদের সেখানে যেতেই হবে।
_আমি সেখানে গিয়ে মরতে পারবো না।
আমরা দুজন ওদের শক্তিশালী দলের সাথে পেরে ওঠতে পারবো না সেটা আমি জানি।
আর নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আমি সেখানে যাই কেমন করে তুইয়ি বল?
_ছিঃ রেজা ছিঃ এই তুই য়ি কি আমার বন্ধু?
তর মত একটা স্বার্থপরকে বন্ধু ভাবতেও আমার লজ্জা লাগছে।
কথাটা বলে ফোনের দিকে তাকাতেই দেখি একটা ভিডিও এসেছে।
ভিডিওটা সিন করার সাথে সাথেই যেন চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসছে।
ভিডিওতে দেখি যে সবুজ আর মাসুদ চাদনির কাপড় ধরে……..

to be continue………