সুখের সন্ধানে পর্ব-২৩+২৪

0
255

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_২৩

মেহরাব এখন অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছে এই পরিবেশে। দেখতে দেখতে প্রায় বছর পেরিয়ে গেছে এ বাড়িতে আসার। সেলিম আর আমার শাশুড়ি কখনো কিছু বললেও তেমন গায়ে মাখে না আর। বাবার কাছে মাঝে মাঝে যায়। তবে থাকে না কখনো। দূরে থাকতে থাকতে বাবা ছেলের মাঝে এখন বেশ তফাৎ । পারুলের একটা ছেলে হয়েছে। তাকে নিয়ে আদিখ্যেতার শেষ নেই স্বামী স্ত্রী দুজনেরই। মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই। কার সংসার , কার থাকার কথা অথচ কে থাকছে। পারুল তার আগের সংসারের ছেলে সাদমান আর ছোটো ছেলে রাদমানকে নিয়ে টুম্পার সাজানো সংসারে রাজত্ব করছে। এখন আসাদও ব্যবসায় বাণিজ্য নিয়ে কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। এই সুখের দিনগুলিতে আমার বোনটা নেই। এই দিন দেখার জন্য কত সাধনা করেছে টুম্পা। অথচ আজ সবকিছুর পেছনে ওর অবদান থাকা স্বত্তেও কোথায় টুম্পা আর কোথায়ই বা টুম্পার আদরের দুই সন্তান মিথিলা আর মেহরাব! বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। পৃথিবীটা আসলেই মায়া। দু’দিনের মেহমান হয়ে কত মায়া , কত মোহে জড়িয়ে কত শত অন্যায় করছি প্রতিনিয়ত। হায়রে সাধের জীবন ! হায়রে বাহাদুরি!

আমাদের সিলেটের ব্যবসায়ে থেকে হঠাৎ একের পর ধ্বসের খবর আসছে। ওখানে কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করা হয়েছে। বিশাল বড় সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। এই অফিসের কিছু দায়িত্ব আমার শ্বশুর বেঁচে থাকতেই আমাকে দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি নিয়মিত অফিসে না গেলেও অনলাইনে সব খোঁজখবর ঠিকই রাখছি। জরুরী মিটিংগুলিও অনলাইনে সেরে ফেলি। গতবছরের আগ পর্যন্ত অবশ্য আমি প্রচুর একটিভ ছিলাম এখানে। কীভাবে কীভাবে যেন আগের থেকে একটু ঢিলেমি দিয়ে কিছুটা দূরে সরে এসেছি। আসল কথা হলো ম্যানেজমেন্ট। সেলিমও আর আগের মতো একটিভভাবে কাজ করছে না। মানুষ দিয়ে কী আর সব পার্ফেক্টভাবে সম্ভব? ব্যবসায়ের একের পর এক এমন লসের খবর শুনে সেলিমের মতো আমারও মাথায় হাত! বিশাল বড় লোনের বোঝা মাথায় এই ব্যবসায়ের জন্য। কয়েক’শ কোটি টাকার ব্যবসায়। কিন্তু এভাবে যদি চলতে থাকে অন্য ব্যবসায়ের উপরও প্রভাব পড়বে খুব অল্প দিনেই। সেলিম অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো সে আপাতত নিজেই সিলেটে যেয়ে ব্যবসায় হ্যান্ডেল করবে। সব সমস্যার একটা যথাযথ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকাটাই এই মুহূর্তে তার খুবই প্রয়োজন। ঢাকায় হেড অফিসে সেলিমের দায়িত্ব পড়ল প্রিয়র ঘাড়ে। এতদিন বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করে বেশ হাত পাকিয়েছে। প্রিয় এখন পড়াশুনা শেষ করে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। আর ব্রাঞ্চ অফিসে আছে সেলিমের ছোটো ভাই সজল। সিলেটের অফিসের ফিন্যান্সিয়াল সাইডের ডিটেইলস আমার নখদর্পণে। এত বছর এই সাইডটা আমি সামলেছি। প্রতিদিনের আয় ব্যয় সব আমাকেই দেখতে হয়েছে টানা আট বছর। আব্বা মারা যাবার পর দায়িত্ব থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন যে অবস্থা দেখছি তাতে দূরে থাকাটা সম্ভব নয়। এই সব ব্যবসায় আমার শ্বশুরের অনেক স্বপ্নের , অনেক সাধনার। এগুলি এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে চোখের সামনে আমি কেন যেন ভাবতেই পারছি না। জানিনা আদৌ কিছু করতে পারব কি না! তবে আমার সীমিত জ্ঞানটুকু কাজে লাগাতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে । কেন যেন মনে হচ্ছে আমি যদি কিছুই না করি তবে হয়ত আমার শ্বশুরের আত্মা কষ্ট পাবে। সেলিমের যথেষ্ঠ জ্ঞান আছে , বুদ্ধি আছে । কিন্তু তার সমস্যা সে প্রচণ্ড অস্থির! বিপদের সময় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সবসময় আমার শ্বশুর তার মাথার উপর গাইড ছিলেন বিধায় কখনও এমন পরিস্থতি তাকে ফেস করতে হয়নি।

সিদ্ধান্ত নিলাম আমিও সেলিমের সাথে সিলেট যাব। আম্মাকেই প্রথমে এ কথা জানালাম । আম্মাও এ নিয়ে ভীষণ অস্থির। আম্মা জানেন আমি যখন সেলিমের থেকে আলাদা হয়ে এ বাড়িতে ছিলাম তখন আমার শ্বশুরের সাথে সিলেটের ব্যবসায় বাণিজ্যের অনেক খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি বেশ কিছু দায়িত্বও পালন করেছি খুব ভালোভাবে। তাই সবকিছু চিন্তা করে তিনি অনুমতি দিলেন সিলেটে যাবার। আমাকে আশ্বস্ত করলেন ঢাকার বাসার সবকিছু সে দেখে রাখতে পারবে। তাছাড়া আমার শাশুড়ি এখন বেশ ভরসা করেন মিথিলার উপর। মিথিলা পড়াশুনার পাশাপাশি ঘর গৃহস্থালিতেও খুব দক্ষ হয়েছে দিনদিন। মিথিলা সবশুনে মন খারাপ করলেও সবদিক ভেবে আমাকে নিশ্চিন্তে সিলেটে যাবার জন্য বলল।
সেলিমের কাছে সিলেটে যাবার কথা বললে প্রথমে রাজী না হলেও পরে যখন বুঝিয়ে বললাম তখন সে রাজী হলো। সেলিম শুরু থেকেই ব্যবস্থাপকীয় কাজবাজ সামলালেও ফিন্যান্সিয়াল সাইডের ডিটেইলস আমিই দেখতাম । আব্বার পাশে বসে সবকিছু দেখতে দেখতে সবকিছু এখন মোটামুটি আমার নখদর্পণে। সেলিমও এ কথা ভালো করেই জানে। তাই হয়ত এই মুহূর্তে তার একজন সহকারী হিসেবে আমাকে ভাবতে সে আর অগ্রাহ্য করল না।

আগামীকালই আমরা রওয়ানা হচ্ছি। মিথিলা , মেহরাব , প্রিয়কে ডেকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলাম। যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলাম। আম্মা আমাদের বারবার আশ্বস্ত করলেন ঢাকার সবকিছু সে ঠিকঠাক দেখে রাখবেন । ওদের নিয়ে চিন্তা করতে মানা করলেন। তাছাড়া সিলেট তো বেশি দুরত্বের পথ না। তাই কিছুটা চিন্তামুক্ত হলাম । সিলেট যাবার জন্য প্রয়োজনীয় গোছগাছ সেরে নিলাম খুব তাড়াতাড়ি করে। মিথিলাও আমাকে সাহায্য করছিল। ভীষণ মন খারাপ মেয়েটার। হওয়াই স্বাভাবিক। এই প্রথম এ বাড়িতে আমাকে ছাড়া থাকছে। ওকে আমার শাশুড়ি আর মেহরাবের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে কিছুটা নির্ভার হলেও ওকে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম। মেয়েটা একা সব দিক সামলে নিজের পড়াশোনা করায় মনোযোগ দিতে পারবে তো! আমার গাড়ি আর ড্রাইভারকে রেখে গেলাম মিথিলা আর মেহরাবের ডিউটি করার জন্য।
মোটামুটি সব গোছগাছ শেষ করে প্রিয়র রুমে গেলাম। দরজা একটু খোলাই ছিল। প্রিয় রকিং চেয়ারে বসে খুব আয়েশ করে কারো সাথে কথা বলছিল। আমি বুঝতে পারলাম বিন্দু নামের ওই মেয়ের সাথেই কথা বলছে। এই এক বছর ধরে ছেলেটাকে বলছি ওর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিতে কিন্তু কেন যে দিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। তবে সম্পর্ক যে বেশ গড়িয়েছে সে আমি বেশ টের পাচ্ছি। আমি একটা কাশি দিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালাম ।

– আম্মু, তুমি? ঘুমাওনি এখনো?

– তুমিও তো ঘুমাওনি। সকালে অফিস আছে তো! এত রাত জাগলে অফিসে যেয়ে খারাপ লাগবে তো!

– – এই তো এখনি ঘুমাবো। একটু দেরি হয়ে গেল। কিছু বলবে আম্মু। বসো না , প্লিজ!

– তেমন কিছু বলব না। তোমাকে দেখতে এলাম এই তো! আর তোমাকে আরেকটা দায়িত্ব দিব, বাবা। আমি কবে ফিরি কী জানি! বাবা, আমি খুব চিন্তা হচ্ছে মিথিলার জন্য। মেয়েটা খুবই সোজাসরল তা তো তুমি জানোই। এই কঠিন দুনিয়ায় চলতে গেলে এতটা সহজসরল হলে কী চলে? কিন্তু ও মনে হয় না কোনোদিন বদলাবে! আমি সবার সামনে এই দায়িত্বটা তোমাকে দেই নি। কে আবার কীভাবে নেয় তাই। বাবা, আমার অবর্তমানে মিথিলার সব দায়িত্ব আমি তোমাকে দিয়ে যেতে চাই। ওর ভার্সিটির খোঁজখবর আমি ক’দিন বাদে বাদেই নিতাম । এখন কে নিবে বলো! একটু ওর পড়াশুনার খোঁজখবর যদি নিতে পারতে সপ্তাহে একবার! আর ওর পরীক্ষার প্রস্তুতির দিকেও একটু খেয়াল রেখ। তাছাড়া মেয়েদের আরো কত রকমের সমস্যা রয়েছে। তুমি একটু ওর সুবিধা অসুবিধা সম্মন্ধে খেয়াল রাখবে, বাবা।

– ঠিক আছে , আম্মু। কথা দিলাম। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো একদম।

– চিন্তা কমিয়ে দিলে , বাবা।

মিথিলা আজকাল ঘর গৃহস্থালি নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। বাসার সব চাকর বাকর এখন ওর ইশারায় চলে। কোন বেলায় কী রান্না হবে ওকেই ঠিকঠাক করতে হয়। অবশ্য সব ক্ষেত্রে সে তার দাদীর পরামর্শ নিয়েই করে। প্রিয়র দাদি আগের মতো খুব বেশি উপর নিচ করতে পারে না। খাবার ওয়াক্ত ছাড়া সে নিচে নামে না একদমই। মিথিলা মেহরাবের দিকেও খুব খেয়াল করছে। ওর পড়াশোনা নিয়ে খুব ভাবে সে। দাদীর কখন কী লাগবে , কী খাবে সব ব্যাপার নিয়ে মাথা খাটায় সে।
ইদানিং প্রিয় বেশ রাত করে বাসায় ফেরে। প্রিয় না ফেরা পর্যন্ত সে জেগে থাকে। প্রিয় বেশ আগে থেকেই নিয়ম করে ক্লাবে যায়। হালকা পাতলা ড্রিংক করে এটাও সবাই জানে। তবে অবশ্যই লিমিটের ভেতরে থাকে সে। কখনো মাতলামি করেছে বলে মিথিলার মনে পড়ে না। ইদানিং প্রিয়র দেরি করে বাসায় ফেরাটা মিথিলার ঠিক ভালো ঠেকছে না। একবার ভেবেছে ব্যাপারটা সে তার রূম্পা মাকে জানাবে কিন্তু জানাল না। রূম্পা মা ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছে আজকাল। আবার নতুন টেনশান দিতে মন চাইল না তার।

আজ প্রিয় রাত দুইটার সময় বাসায় ফিরে দেখে সবাই ঘুমিয়ে গেছে। বাসা একদম চুপচাপ। কিছুটা চিন্তামুক্ত হলো। আজ প্রয়োজনের চেয়ে কিছুটা বেশিই ড্রিংক করে ফেলেছে সে। সাথে ড্রাইভার না থাকলে বাসায় আসতে বেশ বেগ পেতে হতো তাকে। তবে আসতে আসতে এখন নেশা কেটেছে অনেকটকাই। তবে শরীর থেকে দুর্ঘ্রাণ ভুরভুর করে বেরুচ্ছে।
সিড়ি দিয়ে উঠতে যাবে তখন মিথিলার ডাকে প্রিয় চোর ধরা পড়ার মতো করে ঘুরে দাঁড়াল ।

– কিরে ঘুমাস নি?

– না , ভাইয়া! তুমি আজ এত দেরি করলে যে?

– এই তো একটু দেরি হয়ে গেল!

– খাবে না। ফ্রেশ হয়ে এস । আমি খাবার দিতে বলছি।

– নারে খেয়ে এসেছি। আজও খাবো না।

– ওহ!

মিথিলা চলে যাচ্ছিল তখন কী মনে করে প্রিয় বলল, কিরে তুই খাসনি? কেমন মুখ শুকনা মনে হচ্ছে।

– না , মানে!

– না মানে কী? খাসনি তাই তো! কিন্তু খাসনি কেন রে, গাধা?
– তুমি খাওয়ার পর খাই আমি।

– কেনো? আমার পেটের সাথে তোর পেট কী বাঁধা? যাহ, খেয়ে নে!

– না ,ভাইয়া। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আজ আর খাব না বলে মিথিলা রুমের দিকে রওয়ানা হলো।

– প্রিয় এসে পথ আটকাল। বললেই হলো? আমি তো প্রায়দিনই খেয়ে আসি আর তুই এভাবে প্রতিদিনই না খেয়ে থাকিস? ডিসগস্টিং! চল খাবি!

– কিছুটা ইতস্তত করে মিথিলা আস্তে করে বলল, আমার কথা বাদ দাও। ভাইয়া , তুমি এসব কেন খাও? রূম্পা মা জানলে কতটা কষ্ট পাবে তুমি জানো?

– তুই কিছু বলেছিস নাকি কিছু আম্মুকে?

– না এখনো বলিনি। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আমি কতক্ষণ মুখ বন্ধ রাখতে পারব জানি না। তুমি তো সবই জানো। নিজেই কেন নিজের এমন ক্ষতি করছ?

– আরেহ! এই তো অল্পসল্প খাই। বেশি না একদমই। দেখেছিস আমি কতটা হুশে আছি। আমাকে কী মাতাল মনে হয়? একদমই না!

– কিন্তু একটু একটু করতে করতে তো তুমি ধীরেধীরে আরো বেশি ড্রিংক করছ। এই একমাসে অনেক বদলেছ তুমি! কী এমন হলো যে তুমি এমন হয়ে গেলে?

– আরেহ, কিছুই হয়নি। চল খাবি।

– খাওয়ার ইচ্ছা নেই। তুমি শুয়ে পড়ো।

– সত্যিই খাবি না?

– না , বলছি তো! তোমার শরীর থেকে যেভাবে গন্ধ আসছে তাতে আমি কিছু মুখে দিলে বমি চলে আসবে! সরি , কিছু মনে করো না , ভাইয়া।

মিথিলা হনহন করে রুমের দিকে চলে গেল। ক’দিন ধরেই প্রিয়কে এ কথা জিজ্ঞেস করবে করবে করে সাহস পাচ্ছিল না। আজ অনেক সাহস করে সে জিজ্ঞেস করেই ফেলল। নিজের সাহস দেখে নিজেই অবাক মিথিলা। প্রিয় আবার কী থেকে কী বলে! ভীষণ ভয় পায় মিথিলা তাকে। তাই আর কিছু শোনার আগেই পালিয়ে বাঁচল তখনকার মতো।

প্রিয় রুমে এসে আর ফ্রেশ হওয়ার ধার ধারল না। ওইভাবেই ঘুমিয়ে গেল সে। মিথিলা কী মনে করে এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে প্রিয়র রুমে আসে। প্রিয়কে ওই অবস্থায় দেখে খুব মায়া লাগল। সে একবার চাইল প্রিয়কে ঠিকঠাক করে শুইয়ে দিবে। কিন্তু খুব ভয় পেয়ে গেল। প্রিয় যদি টের পায়। তার গায়ে হাত দিয়েছে ভেবে যদি আবার রেগে যায়! তাই আর কিছু না বলেই দরজা টেনে দিয়ে এসে নিজের রুমে চলে গেল । কেন যেন তার মনে হলো টুম্পা মাকে সবকিছু জানানো দরকার । না হলে প্রিয়র যদি সত্যিই কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?

চলবে…

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_২৪
আমি প্রতিনিয়ত ফোন করে সব খোঁজখবর নিচ্ছি বাসার। মিথিলার সাথে আর আম্মার সাথে কথা বলেই রাতে ঘুমাতে যাওয়া আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মেহরাব আর আর প্রিয়র সাথে প্রতিদিন হয়ত কথা হয় না তবে ওদের খোঁজখবর নিয়ম করেই নেওয়া হয়। এখানে এসেছি এই দিন বিশেক হয়েছে। এর মধ্যে রাতে ঘুমাতে যাওয়া ছাড়া আমাদের বিশ্রামের সুযোগ নেই। প্রচুর ঘাপলা সব সেক্টরে। আমি আর সেলিম সবদিক সামলাতে সামলাতে হিমশিম খাবার মতো অবস্থা! সেলস ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার মাহাতাব সাহেবের মাঝে ঘাপলার অভাব নেই। উনার নামই প্রথমে আমরা সন্দেহের খাতায় লিখেছি। সেলিম অন্যান্য দিক নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমি মাহাতাবকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম । তবে খানিকটা অবাক হলাম মাহাতাবের এত এত সমস্যা ধরা পড়ার পরেও সেলিম কেন যেন নির্লিপ্তভাব দেখাচ্ছে ওর ব্যাপারে। কোনো একশানে যেতে চাচ্ছে না। আমার কাছে ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগছে না। ওকেই প্রথমে আমার নজরদারীতে নিলাম। ওর পেছনে গোয়েন্দা লাগালাম ওর সব হালচিত্র জানার জন্য। মাত্র দুই দিনের মাঝেই ওর জন্ম থেকে এখন অবধি যত নাড়ি নক্ষত্র আছে সব পেয়ে গেলাম । মাহাতাবের দুইটা ছেলে আছে। সিলেট শহরেই নিজের বেশ বড় সড় আলিশান একটা সাত তলা বাড়ি আছে। বউ বাচ্চা সেখানে থাকলেও সে থাকে ফ্যাক্টরীর পাশে এপার্টমেন্ট ভাড়া করে। উনি ছুটির দিনে যায় পরিবারের কাছে। যতদূর জানলাম খুব ভালো কোনো পরিবার থেকে উঠে আসে নি। খুব অভাবী সংসারের ছেলে। অথচ অর্থ সম্পদের যে হিসেব নিকাশ পেলাম তাতে মনে হলো কোনো আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছে। নইলে এই বেতনে এত কিছু করা কখনই সম্ভব নাহ! অনেক বছর ধরে এই কোম্পানীতে আছে সে। বলা যায় শুরুর দিক থেকে এই কোম্পানীর সাথে আছে। তবে তখন কমিশনে কাজ করত। কিন্তু এখন পুরো সেলস ডিপার্টমেন্ট তার ইশারায় চলে। বিদ্যাবুদ্ধি অবশ্য ভালোই আছে। উনার বাসার এড্রেস যোগাড় করলাম । সেলিম অন্য ঝামেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমি আর এসব কিছু জানালাম না। তাছাড়া এটা এখন মুখ্য সমস্যাও না। উনি পুকুর চুরি যে হরদম করছে এটা আমি নিশ্চিত । বছরের শেষের দিক না হলেও কোম্পানীতে এখন নতুন করে পুনঃঅডিটিং চলছে। ঢাকা থেকে টিম এসেছে। একদম নতুন টিম। তাই ঘাপলা হবার কোনো আশাঙ্কাই নেই। এর আগের অডিট টিম পয়সা খেয়ে উলটাপালটা রিপোর্ট করেছে হেড অফিসে। তাই এবার প্রিয় নিজে টিম পাঠিয়েছে। এই টিমে ওর বন্ধু সাজিদও আছে। তাই আমি নিশ্চিত অডিটিং নিয়ে। সাজিদ খুব ভালো ছেলে। ও আর প্রিয় একসাথে এইচ এস সি পর্যন্ত পড়েছে। একজন সিএ হিসেবে অল্প বয়সেই ছেলেটা বেশ সুনাম কুড়িয়েছে । খুব ব্রিলিয়্যান্ট স্টুডেন্ট ছিল ছাত্রজীবনে। সাজিদদের কোম্পানী থেকেই অডিট করছে। সেলিম সেইদিকটাই সামলাচ্ছে। আমিও বেশকিছু রিপোর্ট রেডি করে দিয়েছি যেগুলি আমার আয়ত্তে ছিল। আপাতত এই সাইডে কাজ না থাকায় আমি মাহাতাবের পেছনে মনোযোগ দিলাম । লোকটার চেহারার মাঝেই কেমন একটা বাটপার বাটপার ভাব। কথা বলার সময় সোয়াসেড় তেল দিয়ে ভিজিয়ে দেয় এমন ভাব। কিন্তু ভেতরে ভেতরে দুষ্টুবুদ্ধির অভাব নেই। সেলিমের কাছে কতবার এ নিয়ে নালিশ গেছে তাও এটাকে এখানে বহাল তবিয়তে রেখেছে। বুঝতে পারছি না আসলে রহস্য কী? তার উপর সিলেট শহরের উপর সম্প্রতি সাততলা বাড়ি করা , একটা আবাসিক হোটেলের কাজ চলছে সিলেট শহরেই। এসব চাট্টিখানি কথা না একেবারেই। আর খুচরা খুচরো সম্পদের তো অভাব নেই।

সব চিন্তার মাঝে নতুন চিন্তা যোগ হয়েছে আবার। ইদানিং মিথিলার সাথে যখন কথা হয় প্রিয়র কথা জিজ্ঞেস করলে কেমন যেন একটু এড়িয়ে যায়। মিথিলা মিথ্যে কথা বলতে পারে না এটা আমি ভালো করেই জানি। প্রিয় খুব গোছানো ধরনের মানুষ ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু ছেলেটা আমার কিছুদিন ধরে কেমন যেন অগোছালো হয়ে গিয়েছে এটা আমি নিজেও খেয়াল করছি। মিথিলা ভালো করে কিছু বলছেও না। তবে আমার সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝলাম প্রিয় নাকি আজকাল খুব রাত করে বাসায় ফিরে। আমি প্রিয় কে জিজ্ঞেস করলে সে বলেছে অফিসের কাজের চাপে এত দেরি হয়। তার বাবার কাজের চাপ তার উপরে পড়েছে দেরি হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু মিথিলার সাথে কথা বলে কেন যেন মনে হয় কিছু একটা ঘাপলা তো আছেই। ও হয়তো আমাকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে কথাটা বলছে না।

বারবার শুধু আমাকে এখানের কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি ঢাকায় ফেরার তাগাদা দিচ্ছে। আমিও মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম এই মাহাতাবের কেসটা কিছুটা সল্ভ করেই দু-এক দিনের জন্য হলেও আমি ঢাকাতে যাব। বাচ্চাদেরকে রেখে এতদিন দূরে থাকা হয় না বহুদিন ধরে। তাই ওদেরকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে।
পরের দিন আমাদের এই অফিসের আরেকটা মেয়ে নাম জেসমিন ওকে নিয়ে আমি সিলেট শহরে অবস্থিত মাহাতাবের বাসাতে পৌঁছালাম। মাত্রই হয়তো কয়েক বছর হয়েছে বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে একদম চকচকে দেখতে।
ভাগ্যটা দেখলাম বেশ সুপ্রসন্ন। দরজায় চকচক করে একটা টু লেট এর সাইনবোর্ড ঝুলছে। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, সাততলার একটা ফ্লোর ভাড়া হবে। আমি ভাড়া নেওয়ার জন্য কথা বলতে চাইলাম মালিকের সাথে। আমি বারবার উপরে সরাসরি মালিকের সাথে কথা বলার জন্য যেতে চাইলেও দারোয়ান রাজি হলো না।
পরে কি আর করা ওই নাম্বারে আমি ফোন দিলাম। এক মহিলা ফোন ধরল ।বেশ সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর।
আমি বাসা ভাড়া নেয়ার সব শর্তে রাজি হয়ে গেলাম। এবং আজকেই বাসা ভাড়া অ্যাডভান্স করে যাব এটা বলে উনার সাথে দেখা করার চাইলাম। উনিও রাজি হয়ে গেলেন। দারোয়ানকে ফোনে হয়তো বলে দিয়েছে তাই এবার আর আটকালো না। আমরা সরাসরি তিন তলাতে মালিকের বাসায় চলে এলাম। ড্রইং রুমে বসে আছি মিনিট পাঁচেক হলো । উনি এখনো আসেননি তবে ওনার মেইড এসে আমাদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করল। তিনতলা চারতলা মিলিয়ে ডুপ্লেক্স করা। ভেতরে বেশ দামি দামি আসবাবপত্রে সাজানো। বাসাটা খুব সুন্দর।

আমি ধ্যানমগ্ন হয়ে চারপাশটায় দেখছি হঠাৎ আমার সামনে এসে সালাম দিয়ে যে মহিলা দাঁড়াল তাকে দেখে আমি যেন ভুত দেখার মত চমকে উঠলাম। একটুও বদলায়নি সেই আগের মতই আছে। নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার অতীতে এভাবে আমার সামনে এসে কখনো ধরা দিবে এটা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি। আমি তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালাম। আমার সাথে থাকা জেসমিন মেয়েটাও আমাকে দাঁড়াতে দেখে উঠে দাঁড়াল।

– আপনি? কী সৌভাগ্য আমার! দাঁড়িয়ে কেন বসুন না।

– আমারও তো একই প্রশ্ন তুমি? তুমি এখানে কি করে?

– না মানে এটাতো আমারই বাড়ি। আপনিই কি আমাকে বাসা ভাড়ার বিষয়ে ফোন দিয়েছিলেন?

– জি। আমিই। আমাকে চিনে যখন ফেলেছ তখন আর অভিনয় করার দরকার নেই সরাসরিই বলি। এসেছিলাম এক কেইস সলভ করতে এখন দেখছি সমস্যা জটিল। মাহাতাব তবে তোমার স্বামী?
– জি!
– ফাইন। এখানে একের ভেতরে দুই দেখছি। আসলে এসেছিলাম মাহতাবের বিষয়ে ইনভেস্টিগেশান করতে। বলতে পারো আমি কেন এ কাজ করছি? কারণ আমি চাইনি কোনো নিরপরাধ শাস্তি পাক। মাহাতাবকে নিয়ে আমাদের টিম যে ইনভেস্টিগেশান করেছে সেখানে আমার কাছে কিছুটা ঘাপলা মনে হওয়ায় নিজেই একটু তদন্তে নেমে পড়েছি। যদিও ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই তোমার হাজবেন্ডের জেল জরিমানা নিশ্চিত। এত বড় চোরকে এমন শাস্তি দিয়ে একটা নজির সৃষ্টি করতে চাই যাতে আর কেউ এমন কাজ না করে!
– কী এমন করেছেন, উনি?
– আচ্ছা, সেসব বলছি। আগে বলো মাহাতাব যে তোমার স্বামী এ কথা কি সেলিম জানে?
– না মানে!
– একদম সত্য বলবে! কারণ এই মুহূর্তে তোমার স্বামীর বাঁচা মরা আমার হাতে। সেলিম প্রচণ্ড ক্ষেপেছে ওর উপর। এমন সব ধারা লাগানোর পায়তারা চলছে যে আট দশ বছরের জেল নিশ্চিত । আর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হবে এটাই জেনে রাখো।
আমি ইচ্ছে করেই হেলেনকে ভয় দেখাবার জন্য বানিয়ে বানিয়ে বেশি কথা বললাম। আসলে ঘটছে উলটো। সেলিম এই মাহতাব নামের কীটের এত এত দোষ দেখার পরেও মুখ বুজে বসে আছে। কোনো একশানে যাচ্ছে না। এখন আমি বোধ হয় ক্লিয়ার হচ্ছি সবকিছু। হেলেনের মুখ থেকেই জানতে চাই বাকী কাহিনী।

– না, উনি এটা করতে পারেন না। উনি কথা দিয়েছিলেন! কিছুটা ঘাবড়ে যেয়ে বলল, হেলেন।

এর মাঝে ওর বাচ্চা দুইটিও স্কুল থেকে ফিরেছে। হেলেন তার বাচ্চাদের দেখে কিছুটা সতর্ক হলো। হাসি হাসি মুখে আমার সাথে বাচ্চাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিলো। বড় ছেলে আসিফ ক্লাস টুতে পড়ে আর ছোট ছেলে নাসিফ কেজিতে। আমি বড় ছেলে টার দিক থেকে নিজের চোখ সরাতে পারছি না। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। অবিশ্বাসের ছুরি আমার কলিজা কে কেটে কুচি কুচি করে ফেলল যেন। মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিলাম। এই অবিশ্বাস আর এই কষ্ট এত আমার জন্য নতুন না । তাহলে এতো কষ্ট পাচ্ছি কেন আমি? নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আমি বারবার আসিফের চেহারার দিকে তাকাচ্ছি! আসিফের চেহারার মাঝে স্পষ্ট সেলিমের চেহারার ছাপ! যারা সেলিমকে চেনেন তারা আসিফকে একটু নিখুঁতভাবে দেখলেই বুঝতে পারবে ব্যাপারটা।
আসিফের দিকে এমন করে তাকিয়ে থাকাটা হেলেনের দৃষ্টি এড়ালো না। সে তড়িঘড়ি করে বাচ্চাদুটিকে মেইডকে দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিলো।

-হ্যাঁ আমরা জেনো কোথায় ছিলাম? ও তোমার স্বামীর ব্যাপারে কথা বলছিলাম! আমি তোমাকে সংক্ষেপে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়েছি! মাহাতাব কে হয়তো আজকের মধ্যেই অ্যারেস্ট করা হবে। ওর নামে প্রচুর কমপ্লেইন আছে। কিছু কিছু কমপ্লেইন তো এমন আছে যে মানুষ খুন করার অপরাধে’ সমান। আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে যে একটা মানুষ আসলেই কি এত খারাপ হতে পারে। এ জন্যই মূলত আমি আরেকটু ভালোভাবে জানার জন্য এখানে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে যেভাবে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে যাবে সেটা আমি কল্পনাতেও ভাবি নি।
যাইহোক আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে আমি আর কোন কিছু ইনভেস্টিগেশন করে সময় নষ্ট করতে চাই না।

কথাগুলো বলেই আমি আমার সাথের মেয়েটা জেসমিনকে বললাম ,চলো আমাদের উঠতে হবে! আমার তদন্ত করা শেষ! জাহান্নামের কীটদের জাহান্নামে স্থান দেওয়া উচিত! শুধুশুধু সময় নষ্ট করার মানে নেই।

আমি উঠে যাব তখন হেলেন এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বাধা দিল।

– প্লিজ ম্যাডাম !সবকিছু না জেনে এভাবে আপনি চলে যাবেন না। মাহাতাব এমন কোনো অপরাধ করেনি যে তার জন্য তাকে এত বড় শাস্তি দিতে যাচ্ছেন আপনারা। ওর ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা আছে । ওদের দিকে তাকিয়ে দয়া করুন। আর সেলিম সাহেব এটা করতে পারেন না।
– কেন পারেন না? তোমার স্বামীকে বিশ্বাস করে এত বড় একটা দায়িত্বে বসিয়েছে। তোমার স্বামী কোম্পানির ফর্মুলা চুরি করে আমাদের রাইভ্যাল গ্রুপের কাছে বিক্রি করছে। এ বছর কোটি কোটি টাকা লস করছে। অথচ নিজে জিরো থেকে হিরো হয়েছে । সিলেট শহরের সম্পদের পাহাড় করেছে। আমি তার গ্রামের খোঁজ নিয়েছি সেখানেও সে প্রচুর সম্পদ করেছে।

– আপনাকে যে তথ্য দিয়েছে সে ভুল তথ্য দিয়েছে। মাহাতাবের গ্রামে কিছুই নেই। সে যদি কিছু করে থাকে সিলেট শহরে এই বাড়িটা আরো একটা হোটেলে কাজ চলছে এ ছাড়া আমাদের আর কানাকড়িও নেই।

– ওকে ফাইন ! তোমার কথাই ধরে নিলাম। ধরে নিলাম এই দুটো সম্পত্তি ছাড়া তোমাদের আর কোনো সম্পত্তি নেই। কিন্তু সিলেট শহরের মতো জায়গায় এমন একটা পজিশনে এত বড় একটা বাড়ি করা চাট্টিখানি কথা না! কত টাকা বেতন পায় তোমার স্বামী?

– হেলেন নিশ্চুপ।

– এখনো সময় আছে । আমার কাছে যদি তুমি মুখ খোলো তাহলে হয়তো তোমার স্বামী এ যাত্রায় বেঁচে যেতেও পারে । হয়তো চাকরি হারাবে তবে জেলখানার ভাত না খেয়ে তোমার রান্না ভাত খাওয়ার সৌভাগ্য হতে পারে।

আমি আমার সাথে থাকা মেয়েটাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বললাম। যে করেই হোক হেলেনের পেট থেকে কথা বের করতেই হবে।

আজ মিথিলার দুপুরের দিকে ক্লাস। ওর জন্য যে গাড়িটা রেখে যাওয়া হয়েছে সেই গাড়িটাতে হঠাৎ করে কি যেন সমস্যা হয়েছে তাই গ্যারেজে পাঠানো হয়েছে। মেহরাবের স্কুল কাছে হওয়ায় খুব বেশি অসুবিধা হয় না। মিথিলা নিজে রিকশায় করে গিয়ে ওকে স্কুলে দিয়ে এসেছে।

প্রিয় আজ অফিসে একটু দেরি করে বের হবে। গতকাল রাত তিনটার দিকে সে বাসায় ফিরেছে তাই সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছে। মিথিলার দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে মিথিলা তড়িঘড়ি করে কিছু খেয়ে নিলো।
মিথিলা রেডি হয়ে ড্রইং রুমে এসে দেখে প্রিয় সে সময় অফিসের জন্য বের হচ্ছে। সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেয়ে প্রিয় কে বলল,
– ভাইয়া আমাকে একটু নামিয়ে দেবে? তুমি তো ওইদিক দিয়েই যাচ্ছ?
– ও তোর গাড়ি তো আবার গ্যারেজে। আমি তো আজকে ওদিকে যাচ্ছি না। উল্টো দিকে যেতে হবে ,আচ্ছা ঠিক আছে তুই যখন বলেছিস আমি তোকে নামিয়ে দিচ্ছি আম্মুকে কথা দিয়েছি বলে কথা। চল, চ,ল, চল ! আমার আবার দেরি হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই আজ দেরি করে ফেলেছি।

প্রিয় ড্রাইভ করছে । মিথিলা তার পাশের সিটে বসা। প্রিয় মাঝে মাঝে দু একটা কথা বললেও মিথিলা আড়চোখে লুকিং গ্লাসে প্রিয়র দিকে আনমনে
তাকিয়েই আছে।

চলবে..