সুদর্শন শঙ্খচিল পর্ব-৩৬+৩৭

0
366

‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[৩৬]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

চাঁদ নিষ্প্রাণ কন্ঠে বলল, “পাপীর শাস্তি! আর প্রিয়মের মুক্তি।” প্রত্যয় চাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,”প্রিয়মকে ছাড়া থাকতে পারবে? কষ্ট হবেনা?”

কথাটা শুনে চাঁদ প্রত্যয়ের পা ধরে হাউমাউ করে কাদঁতে লাগল। প্রত্যয় দ্রুত চাঁদকে উঠিয়ে বসিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,” সবার জীবন কাহিনী এক নয় চাঁদ? সুখ দুঃখের সুতোয় বাঁধা আমাদের এই জীবন। একটা মানুষ আঘাত পেলে সময়ের পরিবর্তনে নিজেকে সামলে নিতে পারে। কিন্তু মানুষটা যখন সব আঘাত গুলো একসঙ্গে পায়। তখন তার উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকেনা। আমার ভাইটাও তার ব্যাক্তিক্রম নয়। ওকেও ওর ক্ষতটা সারানোর একটু সময় দাও!”

চাঁদ হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে চোখ মুছে বলল, ” আমাদের সঙ্গে হওয়া অপরাধের শাস্তি চাই ভাইয়া। প্লিজ! প্লিজ আপনি কিছু করুন। নাহলে ইচ্ছের মতো আরো বাচ্চাদের এতিম হতে সময় লাগবেনা।” এর মধ্যে ইচ্ছের কথা শুনে প্রত্যয় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। চাঁদ ঢোক গিলে নিচু স্বরে বলল,”মাহিম আমার ভাইয়ার ঘনিষ্ট বন্ধু। ওরা দু’জনেই কয়েক বছরে ধরে এসব কাজে লিপ্ত।”

কথাটা শুনে প্রত্যয় আর প্রত্যুত্তর করল না। চাঁদ ওর ভাইয়া রাশেদ এবং মাহিমের কুকর্মের কথা বলতে লাগল। সবটা শুনে প্রত্যয় শান্ত কন্ঠে বলল,”একথা আর কাউকে জানিও না চাঁদ। সময় হলে আমি সবাইকে জানাব।” চাঁদ হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে উঠে চলে গেল।

প্রত্যয় রনিতকে ফোন করে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করল। প্রত্যয়ের আলোচ্য বিষয় ছিল ইচ্ছেকে নিয়ে। রনিত প্রত্যয়ের পুরো কথা শুনে অবাক এবং দ্বিমত জানাল। এই নিয়ে দু’জনের বেশ কিছুক্ষণ কথা চলল। একপর্যায়ে প্রত্যয়ের যুক্তিতে হার মেনে রনিতকে সম্মতি দিতে হলো। আর প্রত্যয় কল কেটে ট্রাক ড্রাইভারদেরকে দু’টো বাসার ঠিকানা দিল। একটাতে, ইচ্ছেদের সব ইলেকট্রনিক জিনিস আর আরেকটাতে সব আসবাবপত্র। ইলেকট্রনিক জিনিস বিনা ব্যবহারে নষ্ট হয়ে যায়। অযথা জিনিস গুলো নষ্ট না করে রনিতরাই ব্যবহার করুক। এটা ভেবে ইলেকট্রনিক জিনিসগুলো প্রত্যয় রনিতদের বাসায় পাঠাল। আর ইচ্ছের আম্মু শখের আসবাবপত্র সব প্রত্যয়দের আগের ফ্ল্যাটে তোলা হলো। সেগুলো সহজে নষ্ট হবেনা। এগুলোর রাখার পেছনে একটা কারণ আছে। যাতে ইচ্ছে বড় হয়ে অভিযোগ করতে না পারে, ওর আম্মুর জিনিস কেন অন্যদের দিল? কেন প্রত্যয় আমানত হিসেবে রাখল না? আর ইচ্ছের আম্মু জিনিসে শুধু ইচ্ছের অধিকার। তাই প্রত্যয়ের এই ব্যবস্থা। যাতে ইচ্ছে বুঝতে শিখে ওর আম্মু জিনিস গুলো ছুঁয়ে দেখতে পারে।

প্রত্যয় নিচে গিয়ে রেডি হয়ে সরাসরি ব্যাংকে গেল। ইচ্ছের আব্বু আম্মুর টাকা, গয়না, এবং জমির দলিল ব্যাংকের লকারে রাখল। এবং ইচ্ছের আঠারো বছরের আগে ইচ্ছে ছাড়া অন্যকেউ এসব তুলতে পারবেনা। প্রত্যয় সেই ব্যবস্থাও করল। তারপর ব্যাংকের কাজ সেরে সে হসপিটালে চলে গেল। সন্ধ্যার পর, প্রিয়ম ইচ্ছেকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে এসেছে। পুরো পার্কে আরো অনেক মানুষ আছে। হরেক রকম লাইটের ঝলকানিতে পার্কটা দারুণ লাগছে দেখতে। ইচ্ছে কোল্ড ড্রিংকস খেতে খেতে প্রিয়মকে বলল,”প্রিউুম প্রত্তুয়কে এতটু ফুন কলো।” প্রিয়ম সময়টা দেখে বলল,”ভাইয়া তো এখন হসপিটালে এখন মনে হয় ব্যস্ত আছে।” ইচ্ছে ভ্রু দু’টো কুঁচকে চোখ বড় বড় করে বলল,”ফুন দিতে বলেচি।”

প্রিয়ম ভয় পাওয়ার ভাণ করে মুখ কাচুমাচু করে বলল,”দ দি দিচ্ছি তো!” প্রিয়মের মুখ দেখে ইচ্ছে খিলখিল করে হাসতে লাগল। প্রত্যয় এই সময় প্রিয়মের কল পেয়ে ব্যস্তাতার সুরে বলল,”প্রিয়ম একটু পরে ফোন দিচ্ছি।” ইচ্ছে তখন ওর বুকে নিজে থাবা দিতে দিতে বলল,”আমি! আমি! আমি লাজকন্যা ইচ্ছে।” ইচ্ছের কথা শুনে প্রত্যয় মৃদু হেসে বলল,”রাজকন্যা আমি এখন একটা দুষ্টুকে সূচ দিচ্ছি। একটুপরে তোমার সঙ্গে কথা বলি!” সূচের কথা শুনে ইচ্ছে বলল,”আচ্চা শুনো তুমি একটা সূচ আনবা। আমি প্রিউুমকে সূচ দিব। প্রিউুম আমাল একটা কথাও শুনে না।” প্রত্যয় হেসে ‘আচ্ছা’ বলে কল কাটল। প্রিয়ম কথাটা শুনে ইচ্ছেকে দৌড়ানি দিল। আর ইচ্ছে খিলখিল করে হেসে ঘাসের উপর দৌড়াতে লগাল।

পরেরদিন সকালে রনিতকে বাসার সামনে মাল ভর্তি ট্রাক এসে থেমেছে। দিশার তো খুশির অন্ত নেই। সে দৌড়াদৌড়ি করে জিনিস গুলো আস্তে ধীরে নামাতে বলছে। কোথায় কোনটা রাখবে জায়গা ঠিক করে দিচ্ছে। দিশার দিকে তাকিয়ে রনিতের আম্মু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। পলকের জিনিস গুলোও দিশা নিয়েছে। এখন ইচ্ছের আম্মুর এতোগুলো জিনিসও সে পেল। মাঝখান থেকে সব ওর। কালকে বিকালে প্রত্যয় রনিতকে এসব বিষয়ে কথা বলেছিল। রনিত ওর বাসায় একথা জানানোর পর দিশা সারারাত ঘুমাতে পারেনি। কখন ট্রাক আসবে সে সেই অপেক্ষাতেই ছিল।কয়েকজন মিলে একে একে সব জিনিস নামাল।

দিশা জিনিসগুলো চেক করে হঠাৎ চেঁতে গেল। ইলেকট্রনিক জিনিস ছাড়া কিছু না দেখে রেগে ওর শাশুড়িকে বলল,” ওই ডাক্তার খুব চালাক দেখলেন আম্মা। দামী দামী জিনিসগুলো নিজে নিয়ে। আমাদের কি সব হাজিবাজি দিয়েছে।”

রনিতের আম্মু ইশারায় দিশাকে থামতে বলছেন। কিন্তু দিশা থামছেনা সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। রনিত তখন ভিডিও কলে ওর আম্মুর সঙ্গে কথা বলছিল। সে সবটাই শুনে ফোনটা দিশাকে দিতে বলল। দিশা কিছু বলার আগে রনিত বলল,” লোভটা কমাও! আজ মরলে কাল দু’দিন। বাপের জন্মে এসব জিনিস চোখে দেখেছ? যে এখন বড় বড় লেকচার দিচ্ছ! ওই ডাক্তারের নখের যোগ্যও তুমি নও! তাহলে কোন বিবেকে উনার দিকে আঙুল তুলছ?” দিশা রেগে বলল, “আমরা কি দান চেয়েছি? কে বলেছে উনাকে মহান হতে?” রনিত তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “মহান হতেও মন লাগে। তোমার তো তাও নেই।” দিশা ফোনটা ওর শাশুড়ির হাতে দিয়ে চলে গেল। আর রনিত রেগে সঙ্গে সঙ্গে কল কাটল। রনিতের আজ মনে হচ্ছে, দিশা অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। নাহলে অবুজ বাচ্চাটার কথা না ভেবে জিনিসপত্রের কথা ভাবে!

দুইদিন আগে তুরাগ তিন্নিকে নিয়ে সাজেক ঘুরতে গেছে। ইলার সঙ্গে দেখার হওয়ার পর ওর মনটা বিগড়ে গিয়েছিল। ওর শুদ্ধ বাতাস আর একাকী পরিবেশের প্রয়োজন ছিল। ছেলের সিধান্তে তুরাগের আব্বু আম্মু সম্মতি দিয়েছে। কারণ ছেলে মেয়ের খুশিতে উনারা খুশি। যদিও তুরাগ তুয়াকে যেতে বলেছিল। তুয়ার পরীক্ষা, প্রত্যয়ের হসপিটাল আবার ইচ্ছেকে নিয়ে ওর ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। তাই তুয়া তিন্নিকে নিয়ে ঘুরে আসতে বলেছে।

বিকালে, প্রত্যয় ওটি থেকে বের হয়ে ওর চেম্বারে যাচ্ছিল। তখন সায়ন ওকে ফোন দিয়ে জানাল মাহিম এখন লকাপে।
সে একটা গ্রামে গা ঢাকা দিয়ে ছিল। মাহিমকে ধরে সায়ন নাকি ইচ্ছেমতো মেরেছে। মাহিমের বউও লকাপে আর ওদের বাচ্চাটা পুলিশ কাস্টাডিতে। প্রত্যয় সায়নকে রাশেদের কথা জানাল। সায়ন ওর মন্ত্রী মামার সাহায্যে ইতালিতে রাশেদের খোঁজে ফোর্স পাঠাল। সাথে গুপ্তচরও পাঠাল। এরা এক একটা নর্দমার কীটের থেকেও জঘন্য। এরা বাইরে থাকা মানে কারো প্রাণনাশ। প্রত্যয়ের কথা, পাওয়ার এবং প্রমানের ভিত্তিতে সায়ন শক্ত হতে কেসটা ধরল।

গুটি গুটি পায়ে সময় দিন এগিয়ে যাচ্ছে। চাঁদ তুয়ার চারটে পরীক্ষা হয়ে গেছে। দু’জনের মোটামুটি ভালোই পরীক্ষা দিচ্ছে। ইচ্ছে এই কয়েকদিনে দুই একবার ওর আব্বু আম্মুর জন্য কেঁদেছে। ইচ্ছে খুব কাঁদলে ওর আব্বু আম্মুর কবর দেখিয়ে আনা হয়। ইচ্ছে এখন জানে ওর আব্বু আম্মু অসুস্থ। তাই উনারা আল্লাহর কাছে গেছে। আল্লাহ ওর আব্বু আম্মুকে খুব ভালবাসে। ছোট্র অবুজ বাচ্চাটা তাই বিশ্বাস করেছে। সে প্রত্যয় প্রিয়মের জন্য গিয়ে আব্বু আম্মুর কবরে দোয়া করে আসে। কবরে পাতা বা ময়লে পড়লে পরিষ্কার করে। আর বাসায় ফিরার আগে দুই কবরে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে,”ধুমাও আব্বু! ধুমাও আম্মু! আল্লাহ তুমাদের অনেক ভালুপাশে। তুমলা মুন খালাপ কলবা না। আমি আদল করছি তুমলা ধুমাও!” প্রত্যয় প্রিয়ম ইচ্ছেকে নিয়ে গেলেই কবর জিয়ারত করে আসে। এখন যতদিন যাচ্ছে, ইচ্ছে প্রত্যয়দের আপন করে নিচ্ছে। ইচ্ছে এখন ওর মনমতো প্রত্যয় প্রিয়মের কাছে ঘুমায়। ওর জন্য সব রুম উন্মুক্ত করা।

প্রিয়ম কয়েকমাস আগে গানের সঙ্গে মডেলিং শো এর অফার পেয়েছে। প্রথমে সে না বললেও পরে প্রত্যয়ের কথাতে রাজি হয়েছে। আজকে প্রিয়মের মডেলিং শো এর ডেট। তাই সকালে রেডি হয়ে সে সেখানে যাচ্ছিল। ইচ্ছে জেদ ধরায় ইচ্ছেকেও প্রিয়ম সঙ্গে নিল। আর প্রত্যয় গেল হসপিটালে। সে দুপুরে আসবেনা এটাও জানাল। চাঁদ তুয়া প্রত্যয়ের আম্মুর সঙ্গে টুকটাক কাজ করছে। আবার একটু করে পড়ছে। প্রত্যয়ের আম্মু নিষেধ করলেও শুনছেনা। দুপুরের ইচ্ছে প্রিয়ম ফিরল না। বরং ফোন করে জানাল ফিরতে রাত হবে। তাই প্রত্যয়ের আব্বু আম্মুসহ সবাই খেয়ে যে যার রুমে চলে গেল। সন্ধ্যার পরে ইচ্ছেরা ফিরল।সারাদিন দুষ্টুমি করে রাতে খেয়ে ইচ্ছে প্রিয়মের বুকে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে। প্রিয়মও আলতো করে ইচ্ছের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বাসায় সবার প্রাণ এখন ছোট্র ইচ্ছে। ওর খিলখিল করা হাসি, দুষ্টুমি, অভিমান, দিয়ে বাসাটাকে মাতিয়ে রাখে।

রাতে প্রত্যয়ের আব্বু আম্মু উনারা বেলকণিতে বসে আছেন। স্বামীকে চিন্তিত দেখে প্রত্যয়ের আম্মু উনার পাশে বসে বললেন,” কিছু হয়েছে তোমার? দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছে।” প্রত্যয়ের আব্বু চিন্তিত হয়ে বললেন, “আমার দুই ছেলে ইচ্ছেকে খুব ভালবাসে। তাই বলে ওদের রুমে রোজ ইচ্ছেকে রাখাটা ঠিক হবেনা। ছেলেরা বিয়ে করেছে! তাদের প্রাইভেসি দরকার আর ইচ্ছেও বড় হচ্ছে। চাঁদ তুয়া আজ কিছু না বলছেনা। কাল বলবেনা এর গ্যারান্টি কি? চাঁদ প্রিয়মের সম্পর্ক কেমন আমরা সবাই জানি। এখন ওদের সঙ্গে ইচ্ছে থাকা মানে,, আমি কি বলতে চাচ্ছি তুমি বুঝতে পারছ? শুধু ইচ্ছে নয় আমাদের সবার কথা ভাবা উচিত।”

প্রত্যয়ের আম্মু স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এতটুকু বাচ্চা বোডিংয়ে থাকতে পারবে? আর তোমার ছেলেরা কি রাজি হবে?” প্রত্যয় আব্বু কিছুক্ষণ থম মেরে বললেন, “সবার জন্য যেটা ভালো হবে আমি তাই করব। আর আমার কথা শুনতে ছেলেরা বাধ্য।”

তখন রাত একটা বাইশ। চাঁদ তখন টেবিলে বসে একমণে পড়ছিল। প্রিয়ম ইচ্ছেকে ওর আব্বুর রুমে রেখে চাঁদকে উঠিয়ে স্বজোরে বিছানায় ধাক্কা দিল। আচানক এমন করাতে চাঁদ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। প্রিয়মের এমন ব্যবহারের কারণ চাঁদের অজানা। চাঁদ কিছু বলার আগে প্রিয়ম ওর শার্ট খুলে মেঝেতে ছুঁড়ে বলল,” আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার খুব শখ তোর, তাই না? আমার ছোঁয়া শরীরের মাখার বড্ড ইচ্ছে তোর? ওকে আজকেই আমি তোর শখ পূরণ করব। ”

‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[৩৭]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

পরেরদিন সকালে চাঁদ গোসল সেরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ওর মাথায় ভেজা টাওয়াল পেঁচানো। চাঁদ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর প্রতিচ্ছবির দিকে। ওর গলায়, কাঁধে, গালে, কিছু দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চাঁদ ঘাড় ঘুরিয়ে একবার প্রিয়মের দিকে তাকাল। প্রিয়ম উপুড় হয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ওকে দেখলে কেউ বলবেনা সে এতো টা জেদী।
কালকে রাতে প্রিয়ম জেদের বশে চাঁদকে কাছে টানলেও হিংস্রতা দেখাতে পারেনি। বরং আলতো স্পর্শে চাঁদকে আপন করে নিয়েছে। কালকের কথা ভেবে চাঁদ লাজুক হেসে বেলকণিতে গেল। ওর ভেজা চুলের টাওয়াল খুলে বেলকলির রশিতে মেলে দিল। হঠাৎ চাঁদের চোখ আঁটকে গেল প্রত্যয়ের বেলকণিতে।

তুয়াও বেলকণিতে দাঁড়িয়ে ওর ভেজা চুল মুছছিল। ওদের দু’জন দু’জনের দিকে চোখ পড়াতে দু’জনেই লজ্জা পেয়ে দৌড়ে রুমে ঢুকে গেল। চাঁদ দৌড়ে এসে প্রিয়মের পাশে বসল। তারপর প্রিয়মকে এক আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা মেরে বলল,”এই শুনুন না! আমি না খুব লজ্জা পাচ্ছি।” প্রিয়ম বিরক্ত হয়ে একবার তাকিয়ে পাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে গেল। চাঁদ তো বসে থাকার পাত্রী নয়। সে পুনরায় প্রিয়মকে খুঁচিয়ে বলল,”উফ! শুনুন না আমাকে দেখেন না।” প্রিয়ম এবার রেগে দাঁতে দাঁত চেপে ধমকে বলল,” আর একটা টু শব্দ করলে থাপ্পড়ে তোমার সব দাঁত ফেলে দিব। যাও গিয়ে পড়তে বসো।” চাঁদ মুখ ভেংচি দিয়ে গিয়ে পড়তে বসল।

এদিকে তুয়া লজ্জা পেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে প্রত্যয়কে ডাকছে। প্রত্যয় আর একটু আর একটু করে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। কালকে রাত দু’টোর সময় সে বাসায় ফিরেছে। আর ঘুমিয়েছে ফজরের আজানের একটু আগে। তুয়া এবার বিরক্ত হয়ে কোমরে দুই হাত রেখে বলল,”এই তুমি কি উঠবা? আমি কিন্তু মারাত্মক রেগে যাচ্ছি।” প্রত্যয় আবারও ‘আর একটু সোনা বউ প্লিজ’ বলে চোখ বন্ধ করে নিল। তুয়া রেগে আঙ্গুল তুলে বলল,” আর একটু! আর একটু করে কার্যসিদ্ধি করা তোমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তোমাকে আমি হারে হারে চিনি, এখন মানে এখনই উঠবা তুমি।” কথাটা শুনে প্রত্যয় চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে হাসল। সে এতোক্ষণ ইচ্ছে করে তুয়াকে রাগাচ্ছিল। প্রত্যয় উঠে বসে বাঁকা হেসে বলল,”বরকে কাছে থেকে মৃদু স্বরে ডাকতে হয়। তুমি দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?” তুয়া বই হাতে নিতে নিতে বলল,”
“দূরে দাঁড়িয়ে ডাকলে কি হয়?”
“পাপ হয়।”
“তা এটা কোন বইয়ের উক্তি শুনি।”
-“এটা জালের বইয়ের জাল উক্তি।”

প্রত্যয়ের কথা শুনে তুয়া হাসল। তারপর বই নিয়ে প্রত্যয়ের বুকে হেলান দিয়ে বসে পড়তে লাগাল। আজকে ওর পরীক্ষা আছে। প্রত্যয় বই নিয়ে কয়েকটা অধ্যয়ের পড়া ভালো করে দেখে নিতে বলল। সকালে যথাসময়ে সবাই নাস্তা সেরে নিল। হাস্যকর ব্যাপার, চাঁদ তুয়া দু’জন দু’জনের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু মাত্র সকালের ঘটনার জন্য।

কালকে প্রিয়মের মডেলিং শো দেখতে গিয়ে ইচ্ছেও একটা অফার পেয়েছে। ওই শো এর মালিক ইচ্ছেকে দেখে অফারটা দিয়েছেন। উনি ইচ্ছের মতো গলুমলু কিউট একটা বাচ্চাকে খুঁজছিল। বাচ্চাদের ড্রেস নিয়ে বিজ্ঞাপন এবং ম্যাগাজিনে দেওয়ার জন্য। কালকে উনি ইচ্ছেকে বিভিন্ন ড্রেসে ট্রায়ালও দিয়েছিলেন। ইচ্ছে তো নতুন নতুন ড্রেস পরে খুশিতে হেলেদুলে হাঁটছিল। এই ব্যাপারটা ওর কাছে বেশ লেগেছে। ইচ্ছের খুশি দেখে প্রিয়ম প্রত্যয়কে বলে অফারে রাজি হয়েছে। তবে প্রিয়ম এটাও বলেছে, ইচ্ছে প্রিয়ম ছাড়া কারো সঙ্গে শো করবে না। উনারাও তাও রাজি হয়েছেন।
এই বয়সে পাকাপোক্ত স্থান গড়তে পারলে তো মন্দ হয় না।
আর এই অফারটাও তুচ্ছ করার মতো নয়। ইচ্ছের বাবা মা নেই। কিন্তু ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যত আছে। আর সেটা প্রত্যয় আর প্রিয়ম গড়ে দিবে। আজ ইচ্ছের শো আছে। প্রিয়ম আর ইচ্ছে রেডি হয়ে সবার থেকে দোয়া নিল। প্রত্যয় ইচ্ছের কপালে আদর দিয়ে বলল,”সাবধানে যেও রাজকন্যা। আর দোয়া রইল, তোমার ভবিষ্যত উজ্জ্বল হোক!”

ইচ্ছে প্রত্যয়ের এতো কঠিন কথা বুঝতে পারল না। তাই সে প্রত্যয়ের গলা জড়িত ধরে বলল, “প্রত্তুয় আমাল জন্য কানাচুর, দই, চককেট, আইকক্রিম, আল ডোলেমণ কেক আনবা।” প্রত্যয় হেসে বলেছে,”জ্বি অবশ্যই! সন্ধ্যায় সব পেয়ে যাবেন।” ইচ্ছে,’ইয়াহু’ বলে খুশিতে প্রত্যয়ের গালে আদর দিল। চাঁদ তখন দাঁত বের করে হেসে বলল, “ভাইয়া আমার জন্য ছানার মিষ্টি আনবেন, প্লিজ!” তুয়াও এবার একই সুরে বলল,”উহুম!উহুম! অনেকদিন রসমালাই খাওয়া হয়নি। কেউ আনলে আমি কিন্তু না করব না।”

প্রত্যয়ের এবার ওর আম্মুর দিকে তাকাল। ওর আম্মু হেসে বললেন,”আমার জন্য একটা মিষ্টি পান আনলেই হবে আব্বু।” প্রত্যয় হেসে, ‘আচ্ছা ‘ বলে চাঁদ তুয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। ওদের দু’জনকে নামিয়ে দিয়ে সে হসপিটালে যাবে। আর ইচ্ছে আর প্রিয়ম বাইকে চলল ওদের গন্তব্যে।

ইলার ওর রুমে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। ওর ডাক্তার বফ ওর সঙ্গে ব্রেকআপ করে থাইল্যান্ড চলে গেছে। এতটুকুতে ওর কিছু যায় আসত না৷ যদি না সেই ডক্টর ওর ভিডিও বানিয়ে তার বন্ধুর কাছে সেন্ড করত। ফলস্বরূপ, ডক্টরের বন্ধু রিক ওকে ব্রেকমেইল করে ওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে বলছে। ইলা এখন না পারছে কাউকে বলতে! আর না পারছে সহ্য করতে। রিক পরশুদিন উলাকে ওর ফ্ল্যাটে যেতে বলেছিল ৷ না গেলে নোংরা ভাষায় থ্রেট দিয়েছিল। কালকে ইলা সেখানে গিয়ে গণধর্ষণের স্বীকার হয়েছে। গণধর্ষণ করে রিক এবং তার
বন্ধুরা। ইলার অবস্থা করুণ হওয়াতে হসপিটালে চিকিৎসা নিয়ে সে আজ বাসায় ফিরেছে। সুস্থ হয়ে ওকে আবার রিকের কাছে যেতে হবে। রিক কিছুক্ষণ আগে ফোন করে একথা জানিয়েছে। এজন্য ইলা বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে। এই মূহুর্তে ওর তুরাগের কথা খুব মনে পড়ছে। তুরাগ ওকে বাঁচাতে পারবে ভেবে ইলা তুরাগকে কল দিল। কিন্তু নাম্বার বন্ধ পেল। ইলা আর পথ না পেয়ে অশ্রু ঝরাতে লাগল। ওর ভুলের মাশুল এখন ওকেই দিতে হচ্ছে। অন্যায়ের শাস্তি ঠিকই পাওয়া যায়। শুধু দুইদিন আগে আর পরে। ইলা সঙ্গেও তার ব্যাতিক্রম হলো না।

ইতালিতে পুলিশ ফোর্স ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় রাশেদকে খুঁজছে। রাশেদের বেশ কয়েকটা চক্র আছে। এটাও গোপন তথ্যে জানা গেছে। সায়ন সতর্কতার সাথে রাশেদের খোঁজ চালাচ্ছে। আর মাহিমের এখন অবস্থা করুণ। ওকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রথম মুখ না খুললেও মারের চোটে সব বলতে বাধ্য হয়েছে। মাহিমের বলা তথ্য অনুযায়ী রাশেদের দু’টো চক্র ধরা পড়েছে। সাথে গুপ্তচররা প্রতিনিয়ত সায়নকে ইতালির সব খবরাখবর জানাচ্ছে।

চাঁদ পরীক্ষার হলে বসে কলম কামড়াচ্ছে। সে একটা বাদে সব প্রশ্নের উত্তর লিখেছে। প্রশ্নটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে ওর চোখ গেল বটগাছের ডালে। একটা বুলবুলি পাখি আরেকটা পাখির মুখে খাবার দিচ্ছে। এটা দেখে তাৎক্ষণিক চাঁদের প্রিয়মের কথা মনে পড়ল। আর কালকে প্রিয়মের ব্যবহারে জন্য চাঁদও দায়ী ছিল। গতরাতে, প্রত্যয়ের আম্মু ইচ্ছেকে নিতে এসেছিলেন। প্রিয়ম ওর উনাকে না বলেছিল। প্রত্যয়ের আম্মু জোর করাতে চাঁদ বলেছিল,”আম্মু যখন চাচ্ছে দিয়ে দেন। আপনার কাছে তো সারাদিনই থাকে।” প্রত্যয়ের আম্মু প্রিয়মের সঙ্গে না পেরে ততোক্ষণে চলে গেছেন। একটুপরে, তুয়া ওদের রুমে নক করে ইচ্ছেকে চাচ্ছিল। প্রিয়ম তুয়াকেও না করল। তুয়া তখন চাঁদকে বিরবির করে বলল,”প্রত্যয় রাতে ফিরে ইচ্ছের কথা জিজ্ঞাসা করে। আর ইচ্ছে প্রায় এই রুমেই থাকে। সেই সাথে তোমাদের প্রাইভেসি বলে একটা কথা আছে। তাই বলছি, চাঁদ ইচ্ছেকে আমার কাছে এনে দাও।”

চাঁদ কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “আমাদের প্রাইভেসির আর প্রয়োজন হবেনা।” তুয়া তখন প্রিয়মের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল। এমন চাহনি যেন প্রিয়মকে ভৎস করে দিবে। এদিকে চাঁদের কথা শুনে প্রিয়ম রেগে গেছে। চার দেওয়ালে কথা সে কেন অন্যদের জনাবে? আর এসব বলারই বা কি দরকার? মূলত একারণে প্রিয়ম খুব রেগে গিয়েছিল। চাঁদ যাতে আর আঙ্গুল তুলতে না পারে।
এজন্য প্রিয়ম ইচ্ছেকৃত ভাবে সম্পর্কের আরেক ধাপ এগিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে চাঁদের পরীক্ষার শেষ ঘন্টা টা বেজে গেল। চাঁদের মনটা আজ বেশ ফুরফুরে। সে প্রিয়মের কথা ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে। চাঁদের বাকি প্রশ্নটার উত্তর আর করা হলো না।

সে খাতা জমা দিয়ে মনে মনে বলল,” সব প্রশ্নের উত্তর করে কি হবে? একদিন তো পড়াশোনা ছেড়েই দিব।” তারপর চাঁদ স্কুল থেকে বেরিয়ে তুয়ার কলেজের সামনে এসে দাঁড়াল। দু’জনে একসঙ্গে বাসায় ফিরবে তাই।

প্রত্যয়ের আব্বু একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার। উনি একজন আর্কিটেকচারকে বাসায় এনেছেন। উনারা একটা রুম সাজানোর জন্য আলোচনায় বসলেন। বিশেষ করে বাচ্চারা যাতে সহজে আকৃষ্ট হয়। সেভাবে রুমটা সাজাবেন ভাবলেন।
মূলত এই রুমটা ইচ্ছের জন্য। উনি ইচ্ছেকে বোডিংয়ে নয়। বাসাতে রাখবেন এবং আলাদা রুমে থাকার অভ্যাস করাবেন। রুম দেখে ইচ্ছে যাতে সহজে থাকতে রাজি হয়। তাই উনার এই পরিকল্পনা। যাতে সংসারের সবদিক ঠিক থাকে। উনার কথামতো কয়েকজন মিলে রুম সাজানোর কাজে লেগে গেল।

ওইদিকে, ইচ্ছে পাঁচটা ড্রেস পড়ে আর শো করবেনা জেদ ধরেছে। কিন্তু প্রিয়ম বার বার ওকে করতে বলেছ৷ তাই ইচ্ছে রেগে প্রিয়মে ওর চুল খামছে, কিল, ঘুষি দিয়ে একাকার অবস্থা করেছে। পরে চানাচুর এনে ইচ্ছেকে শান্ত করিয়ে বাকি শো টুকু শেষ করা হয়েছে।

সারাদিন যে যার ব্যস্তটা কাটিয়ে সন্ধ্যায় সবাই বাসায় ফিরেছে। প্রত্যয় সবার আবদারে জিনিস গুলো এনেছে। সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছে। কিন্তু সমস্যা বাঁধল দই নিয়ে। প্রিয়মেরও দই খুব পছন্দ। এজন্য প্রত্যয় বড় বড় দুইটা দইয়ের নাড় এনেছে। কিন্তু ইচ্ছে প্রিয়মকে দিবেনা। প্রিয়মও ছাড়ার পাত্র নয়। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।

একপর্যায়ে ইচ্ছে রেগে প্রিয়মের দিকে আঙ্গুল তুলে বলল,”প্রিউুম তুমি মেলা লোভু মানুস। আল তুমি একটা খালাপ প্যালা।”

ইচ্ছের কথা শুনে সবাই শব্দ করে হেসে দিল। আর প্রিয়ম মুখ ভেংচি দিয়ে দই খেতে লাগল। ইচ্ছের রুমের কাজ এখনও বাকি আছে। তাই রাতে খেয়ে প্রত্যয়ের আব্বু গল্পের লোভে ইচ্ছেকে উনাদের রুমে নিয়ে গেলেন। আর প্রিয়ম রুমে গিয়ে চাঁদকে একটা মেডিসিন খেতে বলল। চাঁদ খাবেনা বলতেই
প্রিয়ম চাঁদের গাল চেপে মুখে মেডিসিন পুরে দিল। তারপর মুখে পানি দিয়ে নাক চিপে ধরল। চাঁদ উপায় না পেয়ে মেডিসিন গিলে নিল। প্রিয়ম তখন বাঁকা হেসে বেডে শুয়ে বলল,”আমাকে কাছে ত্যাড়ামি করলে মেরে ভূত ছুটিয়ে দিব, ফাজিল একটা।” চাঁদ শুয়ে প্রিয়মকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলল,”কালকে তোমার আদর মেখে আমি পরিপূর্ণ হয়েছি। জানো? আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।” প্রিয়ম প্রত্যুত্তর করল না। বরং চাঁদকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে নিল। তখন চাঁদের মুখে হাসি ফুটল।

তুয়া প্রত্যয়ের পায়ের পাতার উপর দাঁড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আছে। ওর আবদার এখন পুরো রুমজুড়ে এভাবে হাঁটাতে হবে। প্রত্যয় বিনাবাক্যে তুয়ার আবদার মেনে নিল। দু’জনে কথা বলছে আর হাঁটছে। প্রত্যয়ের কল আসায় প্রত্যয় ফোনে কথা বলছে। আর তুয়া সমানে প্রত্যয়কে কাতুকুতু দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যয় ইশারায় নিষেধ করলেও তুয়া শুনছেনা। প্রত্যয় কল কেটে তুয়াকে শক্ত করে জড়িত ধরে আদুরি কন্ঠে বলল,”বকতে পারব না জেনে খুব দুষ্টুমি বেশি করেন, তাই না?”

তুয়া আহ্লাদী কন্ঠে প্রত্যয়ের নাক টেনে বলল,”কেন? বকতে পারেন না কেন শুনি?”

প্রত্যয় হেসে তুয়ার নাক টেনে বলল,”কারণ বউ হলো আদরের পায়রা। বউকে বকতে নেই! শুধু আদর দিয়ে স্বযত্নে বুকে আগলে রাখতে হয়, বুঝলেন?”

তুয়া হেসে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে প্রত্যয়ের বুকের মুখ লুকাল। ওদের খুনশুটির মধ্যে ওরা একে অপরের কাছে টানছিল। ঠিক তখন ওদের দরজায় কেউ নক করল। প্রত্যয় ঘাড় ঘুরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাল। এখন বাজে বারোটা একুশ। আর এই সময় তো কারো আসার কথা না।

প্রত্যয় উঠে দাঁড়াতেই ইচ্ছে ছোট ছোট হাতে থাবা দিয়ে ডেকে উঠল ,”প্রত্তুয়! প্রত্তুয়! আমি ডাকচি দলজা খুলো! আমার তোমাল কাচে ধুমাবো।”

চলবে।