সেই মেয়েটার উপাখ্যান ১৭+১৮

0
140

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ১৭
কথা কে কাজে পরিণত করতে প্রতাপ সান্যাল কোনোদিনও দেরি করেন না, ছেলের বউ তাঁর অগোচরে বাপের বাড়ি থেকে ভাই পো কে নিয়ে এসে নিজের কাছে রাখতে চাইছে এটা বোঝার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতেও তিনি একটুও দেরি করলেন না। তাঁর আসার খবর নিয়ে নবীন পরের দিন রাতের মধ্যেই সরলার কাছে পৌঁছে গেলো, বুদ্ধিমতি সরলার হটাৎ করে শ্বশুর শাশুড়ির আগমনের কারণ বুঝতে একটুও দেরি হলো না, সেও এরকম কিছু ঘটনার জন্যে মনে মনেই প্রস্তুত ছিলো। নবীনের সামনে যদিও সে মুখে অন্য কথা বললো, শ্বশুর মশাইয়ের আসার খবরে যে সে কতটা খুশি হয়েছে বার বার সে কথা নবীনের সামনে বলতে লাগলো।

পরের দিন সকালে প্রতাপ সান্যাল নবীনের কাছ থেকে সে খবর পেলেন, বৌমা তাঁর যাওয়ার খবরে বিরক্ত হয়নি সে কথা শুনে মনে মনে সন্তুষ্ট হলেন। রাতে বাড়ি ফিরে কর্তা গিন্নীতে শলা পরামর্শ হলো, সরযূ কথায় কথায় জানালেন তার বৌদি একলা এ বাড়িতে থাকতে চান না, তিনি নিজের বাড়ি তে ফিরে যেতে চান, সে খবর শুনে সান্যাল মশাই ক্ষুব্ধ হলেন,

তোমাকে দিয়ে যদি কোনো কাজ হয়! কতবার বলেছি তোমাকে, বৌদি কে বাড়িতে ফিরে যেতে দেবে না? একবার গেলে সে আর আসবে ভেবেছো? সে এখানে না থাকলে রতনের খবর পাবে তুমি?

সরযূ চিন্তায় পড়লেন,

কিন্তু বৌদি যে কিছুতেই থাকতে চাইছে না! কি করে তাঁকে আটকে রাখবো?

দরকার হলে রতন কে এখানে এসে থাকতে বলো! আমরা ফিরলে না হয় সে চলে যাবে, সুকান্ত কে আমি বুঝিয়ে বলবো সেকথা! কিন্তু তার মা কে কিছুতেই যেতে দেওয়া যাবে না!

পরের দিন সকালে সান্যাল মশাই রতন কে ডেকে পাঠালেন, তাকে তাঁরা না ফেরা পর্যন্ত এখানে থেকে যাবার অনুরোধ জানালেন, রতন এক কথায় রাজি হলো, এ বাড়িতে ঢোকার সুবর্ন সুযোগ সে কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চাইলো না। কিন্তু তার মায়ের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পড়লো, এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া যে কোনো ভাবেই সম্ভব নয় সেটা সে মনে মনে বুঝতে পারছিলো। কিন্তু আপাতত সে ছেলের স্বার্থে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করলো, পাছে তার বাড়ি যাওয়ার জেদাজেদি তে ছেলের কোনো ক্ষতি হয় তাই সে ননদের বাড়িতে থেকে যাওয়ার কথায় আর কোনো আপত্তি করলো না।

নির্দিষ্ট দিনে প্রতাপ বাবু সস্ত্রীক গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হলেন, সরলা এবং অদ্বিতীয়া তাঁদের স্বাগত জানতে উপস্থিত থাকলেও রতিকান্ত তার নিজের ঘরেই বসে রইলো। দিন দুয়েক কেটে যাওয়ার পরেও যখন শুধু একসঙ্গে খেতে বসা ছাড়া রতিকান্তের তরফ থেকে বাবা মায়ের সঙ্গে কোনো রকম গল্প গুজব করার লক্ষন দেখা গেলো না, তখন সরযূ ধৈর্য্য হারালেন, সকালে রান্না ঘরে সরলার কাজ কম্মে ব্যস্ত থাকার সুযোগে তিনি ছেলের ঘরে উপস্থিত হলেন।

কেমন আছিস বাবা? শরীর টা বড্ড শুকনো লাগছে যে! বৌমা ঠিক মতো যত্নআত্তি করে না নাকি?

রতিকান্ত বিরক্ত মুখে খাটে উঠে বসলো, মায়ের দিকে তাকিয়ে খানিকটা রূঢ় গলায় বললো,

কেনো? যত্ন করবে না কেনো? শরীর আবার শুকনো দেখলে কোথায়?

সরযূ থতমত খেলেন,

না, কেমন যেনো শুকনো শুকনো লাগছে! কলকাতায় থাকতে কতো বেড়াতে বেরোতিস! এখানে কোনো বন্ধু হয় নি বাবা? সারাদিন এই ঘরেই বসে থাকিস?

রতিকান্ত মাথা নাড়লো,

নাহ! ঘরে বসে থাকবো কেনো? ছাদে যাই, বাগানে হাঁটি!

সরযূ নিচু গলায় বললেন,

পুরুষ মানুষ! বউয়ের আঁচল ধরা হয়ে ঘরে বসে থাকা কি ভালো দেখায় বাবা? একটু জমি জমাগুলো দেখলেও তো পারিস!

রতিকান্ত কিছু উত্তর দিতেই যাচ্ছিলো তার আগেই সরলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো, ছাদ থেকে তুলে আনা কাপড় জামা আলনার ওপরে গুছিয়ে রাখতে রাখতে শাশুড়ির উদ্দেশ্যে বললো,

মরণকালে হরির নাম! সারাজীবন ছেলে মাতাল হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বেলেল্লাপনা করে জীবন কাটালো, তখন কাজ কম্ম শেখানোর কথা মনে হয়নি কখনো? এখন তিন কাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে, এখন সে সম্পত্তি দেখবে! নাকি শুধু বউয়ের কাছ ছাড়া করার চেষ্টা!

সরযূ ক্ষেপে গেলেন,

কাছ ছাড়া করার চেষ্টা মানে? পুরুষ মানুষ বউয়ের কথায় ওঠে বসে, সে আবার ভালো নাকি! ছি ছি বলতেও লজ্জা!

সরলা এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচু গলায় বললো,

লজ্জার কি আছে মা! এই যে সারাক্ষন বংশ, রক্ত করেন, এতো তারই দোষ! বাপের রক্ত গায়ে আছে না! একদম তাঁর মতোই হয়েছে, বাবা যেমন আপনার কথায় ওঠেন বসেন,একদম সেইরকম।

সরযূ বিস্ফারিত নেত্রে খানিকক্ষন তাকিয়ে থেকে দ্রুত পায়ে নিজের ঘরের দিকে রওনা হলেন, তিনি যখন থমথমে মুখে ঘরে ঢুকলেন তখন প্রতাপ বাবু খবরের কাগজে মনোনিবেশ করে ছিলেন। সরযূ স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর হাতের কাগজ কেড়ে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, রাগের গলায় বললেন,

এক্ষুনি আমি এর হেস্তনেস্ত চাই! এতো বড়ো কথা! সে নিজের সঙ্গে আমার তুলনা করে!

সান্যাল মশাই স্ত্রী কে শান্ত করলেন, তার পরে সমস্ত অভিযোগ খুঁটিয়ে শোনার পরে গম্ভীর মুখে মাথা নাড়লেন,

সে বিচার আমি এক্ষুনি করতে পারি গিন্নী! কিন্তু তাতে কি কিছু তোমার লাভ হবে? হয়তো সাময়িক গায়ের জ্বালা মিটবে, কিন্তু এতো সাহসের পেছনের কারণ টা অজানাই থেকে যাবে! সেটা জানা অনেক বেশি জরুরি, এটা মাথায় রেখো! এতো কথার পরেও, মা কে অপমানিত হতে দেখেও তোমার ছেলে কেনো তার প্রতিবাদ করলো না সেটা জানা অনেক বেশি দরকার! নজর রাখো তাদের ওপর,আর সময় সুযোগ মতো ছেলের কাছ থেকে আসল কারণ জানার চেষ্টা করো!

সরযূ চোখের জল মুছলেন,

আমার সে রতি আর নাই গো! ছেলে আমার বদলে গেছে একদম!!

অদ্বিতীয়া ছোটো থেকেই সরযূর দু চোখের বিষ ছিলো, তাই ঠাকুমাকে সে বরাবরই এড়িয়ে চলতো, কিন্তু দাদুর সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব খারাপ ছিলো না, দাদুর ঘরে সে মাঝে মধ্যেই ঢুকে কথাবার্তা বলতো। কিন্তু গত বারের ঘটনার পর থেকে সে একটু গুটিয়ে ছিলো, এখানে আসা ইস্তক দাদু কেও সে এড়িয়েই চলছিলো, আজ সকালে প্রতাপ বাবু তাকে ডেকে পাঠালেন, দাদুর ডাকে একটু ভয়ে ভয়েই ঘরে ঢুকলো অদ্বিতীয়া। তাকে ঘরে ঢুকতে দেখে প্রতাপ বাবু কাগজ সরিয়ে রেখে মৃদু হাসলেন,

পরীক্ষা কেমন হয়েছে? খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করো কিন্তু, ভালো রেজাল্ট না হলে ভালো ছেলে পাওয়া মুশকিল! সান্যাল বাড়ির মেয়ে তো আর যেকোনো ঘরে যেতে পারে না!

অদ্বিতীয়া শুকনো মুখে তাকালো, ভালো পাত্র পাওয়ার জন্যে তাকে ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে! সে তো কবে থেকেই তার কাকার মতো বড়ো উকিল হবার স্বপ্ন দেখছে! সে স্বপ্ন কি তাহলে তার অধরাই থেকে যাবে! তাকে মুখ শুকনো করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সান্যাল মশাই ভ্রু কুঁচকে তাকালেন,

কি হলো? পরীক্ষা ভালো হয়নি নাকি!

না, না, দাদুভাই হয়েছে!

তাড়াতাড়ি ঘাড় নাড়লো অদ্বিতীয়া, দাদুর ঘর থেকে একটু মলিন মুখে বেরিয়ে যখন সে ছাদে আসছিলো তখন সরযূ তাকে ছাদের সিঁড়ি তে ধরলেন, একটু ফিসফিস করে প্রায় তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,

একটু এদিকে আয় তো দিদিভাই, কটা কথা বলি!

অদ্বিতীয়া অবাক হলো, এতো মিষ্টি মুখে ঠাকুমা কে সে কখনো কথা বলতে শোনে নি, সে ধীরে ধীরে ছাদের আলসেয় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ঠাকুমার মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। সরযূ গলা নামিয়ে খুব আস্তে আস্তে বললেন,

সারাদিন কি করিস তুই এখানে? ছোটো মা কথা টথা বলে?

অদ্বিতীয়া ঘাড় নাড়লো, সত্যিই সরলা খুব বেশি কথা তার সঙ্গে কখনোই বলে না, সে নিজের কাজেই ব্যস্ত থাকে, কিন্তু সরযূর সে উত্তর খুব বেশি পছন্দ হলো না, তিনি একটু ক্ষুব্ধ গলায় বললেন,

তাই! নাকি মায়ে ঝিয়ে কি গল্প হয় তা আমার জানা নিষেধ! শুনলুম তোর মায়ের ভাই পো নাকি এসেছিলো?

অদ্বিতীয়া একটু চমকে তাকালো, ঠাকুমা সুমনের কথা জেনে ফেলেছে কিনা বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে তড়িঘড়ি জবাব দিলো,

হ্যাঁ, এসেছিলো ঠাম্মা, একদিন মাত্র ছিলো, তারপরেই চলে গেছে!

সরযূ ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, বিদ্রুপের সুরে বললেন,

ওহ! মা তো সব বেশ শিখিয়ে পড়িয়েই রেখেছে দেখছি! ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি তো কলা খাই নি!! কদিন ছিলো তা কি আমি একবারও জিগিয়েছি নাকি! তা ভালো! তবে সৎ মা সৎ ই হয়, নিজের হয় না কখনো! আমরা তোর নিজের বংশ, রক্ত এটুকু মনে রাখিস সব সময়! মায়ের কথায় তাল দিয়ে চললে একদিন পস্তাবি, এটা মনে রাখিস! বাপের অবস্থা দেখেছিস তো? মায়ের কথায় উঠছে আর বসছে! সময় থাকতে দূরে সরে যা, নাহলে ওই বাবার মতো অবস্থা তোরও হবে একদিন! তখন কেঁদে কুল পাবি নে!

অদ্বিতীয়া কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

ঠাম্মা! বিশ্বাস করো ছোটো মা কিচ্ছু শেখায় নি! ওই ভাই পো একদিন ছিলো ওটা আমি নিজে নিজেই বলেছি! আর সৎ মা নয়, ছোটো মা খুব ভালো!

সরযূ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাতনির দিকে তাকালেন,

বাহ! এই তো! ছোটো মা খুব ভালো, তাই না! তা সে ভালো কাজ কি কি করলো শুনি! নাকি তোরও তোর বাপের মতোই হলো, মায়ের সব কিছুই ভালো লাগছে!

অদ্বিতীয়া থতমত খেয়ে চুপ করে গেলো, ছোটো মা তার জন্যে ঠিক কি ভালো কাজ করেছে সে ব্যাপারে ঠাকুমা কে জানানোর ক্ষমতা তার ছিলো না। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে সরযূ বিদ্রুপের গলায় বললেন,

মনে করতে পারলি না নাকি! হ্যাঁ রে, তুইও আজকাল বাপের মতো বশ হয়েছিস দেখছি! তা এখানে এসে আলাদা করে ছোটো মা কিছু করে খাওয়ায় নাকি?

না, না ছোটো মার সময় কোথায়! শুধু রাতে একবাটি করে দুধ খাই!

নাতনির উত্তরে সরযূ চমকে তাকালেন, ফিসফিস করে নাতনির মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,

খবরদার ওই দুধ খাবি না! ওটাতে ওষুধ মেশানো থাকে! তোর বাপও খায় নিশ্চয়ই?

অদ্বিতীয়া বিস্ময় নিয়ে মাথা নাড়লো,

হ্যাঁ খায় তো!

স্ত্রী কে তখনকার মতো বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করলেও প্রতাপ সান্যাল নিজে ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে লাগলেন, ছেলের বউ তাঁকে স্ত্রৈণ আখ্যা দিয়েছে এই কথা শোনার পর নিজেকে সামলে রাখা তাঁর পক্ষেও সম্ভব ছিলো না। রাতে খেতে বসে তিনি ছেলে কে উদ্দেশ্য করে বৌমা কে শুনিয়ে বললেন,

নবীনের মুখে শুনলাম বৌমার ভাই পো এসেছিলো? সে করে কি?

রতিকান্ত ঘাড় নাড়লো, সে যে এ সম্পর্কে কিছু জানে না, সেটা বলার আগেই সরলা পাশ থেকে মুখ খুললো, বিনীত গলায় বললো,

ওই কলেজে পড়ে বাবা! গরমের ছুটি পড়লো তো, তাই বললাম একটু দুদিনের জন্যে ঘুরে যা!

প্রতাপ সান্যাল মাথা নাড়লেন,

বেশ বেশ! আমি ভাবছিলাম তুমি জমি জমা দেখতে এনেছো বুঝি! তোমার দাদাদের অবস্থা তো সেরকম ভালো নয়, সেরকম যদি মনে হয় তাহলে তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও, সেরেস্তার কাজে ঢুকিয়ে দেবো না হয়! এখানে এনে জমি জমার কাজে ঢুকিও না, এসব জমি আমি কিছুদিন পরেই বেচে দেবো!

সরলা মাথা নাড়লো, মৃদু গলায় ঘোমটা সামনের দিকে টানতে টানতে বললো,

না, বাবা! আপনাকে না জানিয়ে কখনো ভাই পো কে ডেকে আনতে পারি! জমি আপনার, এরকম কিছু করার আগে আপনাকে তো জিজ্ঞেস করবোই! ও এমনই এসেছিলো, রাত টুকু ছিলো শুধু! তাও আমি নবীন বাবু কে দিয়ে আপনার কাছে খবর পাঠিয়েছি তো!

সান্যাল মশাই খুশি হলেন, তাড়াতাড়ি হাত তুলে বললেন,

আরে! না! না! এ তো তোমারও বাড়ি! ভাই পো তো আসবেই! আসলে এসব জমি জমা আমি নবীন কে দিয়ে দেবো বলেছি তো, সে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছে!

সরলা মাথা নাড়লো,

সে দিয়ে দিন না বাবা! ওসব ঝামেলা যতো কমে ততই ভালো! তবে বাড়িটা রেখে দিলে বেশ হতো! ছোড়দা কেও বলছিলাম, মাঝে মাঝে এসে থাকতাম আমরা!

প্রতাপ সান্যাল মাথা নাড়লেন, একটু গম্ভীর গলায় বললেন,

মাঝে মাঝে কেনো! এখন এখানেই কিছুদিন থাকো! বাড়ি এতো তাড়াতাড়ি বিক্রির ব্যাপারে কিছু ভাবছি না!

সরযূ এবং সরলা দুজনেই মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো, একজন বউয়ের ফিরে আসার ভয়ে, অন্যজন আবার কলকাতায় ফিরে যাওয়ার ভয়ে ভীত ছিলো।

আপাতত সে প্রস্তাব মুলতুবি থাকলো, দিন দুয়েক পরে নাতনি কে বউয়ের কাছ থেকে দূরে থাকার আরও বেশি করে পরামর্শ দিয়ে, আপাতত বউ যাতে না কলকাতায় ফেরে তার ব্যবস্থা করে, ভাই পো আসার পথ বন্ধ করে দিয়ে সরযূ স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় ফিরে গেলেন। তিনি ফিরে যাওয়ার দিন দুয়েকের মধ্যেই কিশোরী অদ্বিতীয়া তার ছোটো মা কে ঠাকুমার শিখিয়ে যাওয়া সমস্ত কথা এক এক করে বলে ফেললো। বিস্ময়ের গলায় সরলা কে প্রশ্ন করলো,

ছোটো মা! সত্যি তুমি বশ করতে জানো?

সরলা হেসে ফেললো,

ওসব তোমার ঠাকুমা বলতে পারেন, তাই বলে তুমি পড়াশোনা জানা মেয়ে এসব কথা বিশ্বাস করবে কেনো? তাই যদি হতো, তাহলে তো পৃথিবীতে যে যা খুশি তাই করতো! আসলে বশ বলে কিছু হয় না, আমরা যাকে ভালো বাসি তার কথা শুনে চলতে আমাদের ভালো লাগে! তার কথা অমান্য করতে ইচ্ছে হয় না! তুমি যদি ভালোবেসে রাস্তার কুকুর টাকেও প্রতিদিন আদর করো, খেতে দাও, সে তোমাকে দেখে ছুটে আসবে! আমরা সবাই আসলে ভালোবাসার বশ!
ক্রমশ

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ১৮
মাস তিনেক বাড়িতে কাটিয়ে যথেষ্ট ভালো ফল করে ইলেভেনের ক্লাস শুরু হওয়ায় হোস্টেলে ফিরে গেলো অদ্বিতীয়া। তার পরীক্ষার ফলে প্রতাপ সান্যাল খুশি হলেন, খুশি হলেন সুকান্তও, ভাই ঝির খারাপ ফলের দায় না হলে রমা এবং তাঁর ওপরেই বর্তানোর সম্ভাবনা ছিলো। জীবন আবার আগের ছন্দে ফেরত গেলো, সুকান্তর শনিবারে আসা যাওয়া, পড়াশোনার প্রবল চাপ অদ্বিতীয়া কে নতুন করে অন্য কথা মনে করার সুযোগ দিলো না।

এতটাই চাপ ছিলো যে প্রায় বছর খানেক সে একদিনের জন্যে বাড়িও গেলোনা, এমনকি গরমের ছুটি, পুজোর ছুটিতেও সে রমার কাছে থেকে গেলো। নাতনির রেজাল্টে প্রতাপ বাবু খুশি ছিলেন, প্রতিনিয়ত লাভ ক্ষতির হিসেব কষা প্রতাপ সান্যাল রমার কাছে থাকলে পড়াশোনায় তাঁর নাতনির লাভ হবার সম্ভাবনাই বেশি এটা বোঝার পরে এবারের থাকায় আর কোনো আপত্তি জানালেন না।

সময় এগিয়ে চলেছিলো, নবীনের কাছে ধীরে ধীরে নিজের জমি জমা প্রায় সবটাই বিক্রি করে শুধু বাড়িটুকু ছেলে বৌমার জিম্মায় রেখে প্রতাপ সান্যাল নিশ্চিন্তে কলকাতায় ওকালতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। গিন্নীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছেলে বউকে কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও তাঁর ছিলো না। আপাতত তাকে কলকাতায় ফিরে যেতে হবেনা এটা বুঝে সরলাও নিশ্চিন্ত ছিলো। সরযূ স্বামীর এই পন্থায় খুশি ছিলেন। জমি জমা কিছু না থাকায় বউয়ের ভাই, ভাইপো দের আসা যাওয়া নিয়েও তাঁর কোনো রকম উৎসাহ ছিলো না। কলকাতার বাড়িতে তিনি নিশ্চিন্তে তাঁর গিন্নীর অধিকার বজায় রেখে চলতে পারছিলেন। মাঝে মাঝে দু চার দিনের জন্যে প্রতাপ সান্যালের নির্দেশে রতিকান্ত এবং সরলা কলকাতায় এসে থেকে যেতো, ওইটুকু সময়ের জন্যে দু তরফ থেকেই শান্তিপূর্ন সহাবস্থান বজায় থাকতো, সরলা শাশুড়ির সংসারে মাথা ঘামানোর খুব বেশি চেষ্টাই করতো না।

অদ্বিতীয়ার যখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা প্রায় এসে পড়েছে এমন সময় একদিন একটা ঘটনা ঘটলো। সরলা সকাল থেকেই গ্রামের বাড়িতে তার রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলো এমন সময় কমলা সেখানে হাঁপাতে হাঁপাতে উপস্থিত হলো, চাপা গলায় বললো,

পিয়া থাকতে যে ছেলেটা এয়েছিলো না গো দিদি, সে আবার এয়েছে!

সুমন! সরলা চমকে উঠলো, তড়িঘড়ি ভেজা হাত আঁচলে মুছতে মুছতে দরজার বাইরে বেরিয়ে এলো। সুমন কুণ্ঠিত মুখে দাঁড়িয়ে ছিলো সরলা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো,

কাকিমা! আপনাকে একটা খবর দিতে এসেছিলাম, আমি কলকাতার একটা বড়ো ক্লাবে চান্স পেয়েছি! আপনি বলেছিলেন, আমি যদি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারি তাহলে যেনো সোজা আপনার কাছে আসি!

সরলা কয়েক মুহূর্ত থতমত খেলো, তার বলা কথা যে সুমন এতটাই বিশ্বাস করেছে এবং মনে রেখে তার কাছে চলে আসতে পারে কখনো, সেটা সে এক মুহূর্তের জন্যেও ভাবেনি। খানিকক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে সে সুমন কে ভেতরে ডাকলো, সোফার দিকে হাত দেখিয়ে ইঙ্গিতে বসতে বললো। সুমন যে কি করে, সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না, সেই মুহূর্তে বলা কথাগুলো শুধু সেই সময়ের জন্যেই ছিলো। সরলার ধারণা ছিলো অল্পবয়সী দুটি ছেলে মেয়ের ভালোলাগা সাময়িক, তার সুদুর প্রসারী ফলাফল নিয়ে সে ভাবে নি। ঘটনা যে এতোদূর গড়াতে পারে, কথা দেওয়ার সময় তার একবারের জন্যেও মনে হয়নি। এখন সে খানিকটা বাধ্য হয়েই সুমন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে উৎসাহী হলো,

তুমি কি করো? কলকাতার ক্লাবে কিসের জন্যে সুযোগ পেয়েছো?

ফুটবল খেলি কাকিমা, খেলার জন্যেই সুযোগ পেয়েছি! এখান থেকেই আমার চাকরি হবে!

সরলা একটু চুপ করে থাকলো, তারপর বললো,

তুমি যে আমার কাছে এসেছো, বাবা মা জানে সেটা?

সুমন ঘাড় নাড়লো,

নাহ! জানিয়ে লাভ কি আগে থেকে? যদি আপনি রাজি হন তাহলে বাড়িতে কথা বলবো। তবে আমার মায়ের অদ্বিতীয়া কে পছন্দ, ওকে আমাদের বাড়িতে সবাই চেনে, একবার আমাদের বাড়িতেও এসেছে ও!

পিয়া সবে টুয়েলভে পড়ছে! এখন তো ওর পড়াশোনা শেষ হতে অনেক দেরি আছে! ততদিন তো এ বিষয়ে আমি কিছু এগোতে পারবো না সুমন, তাছাড়া পিয়া এখনও তোমায় পছন্দ করে কিনা সেটা জানাও তো জরুরি, তাই না? আর যতদূর শুনেছি তোমার তো দাদা আছে, তারও তো বিয়ে হয়নি এখনও।

সরলার কথায় সুমন মাথা নাড়লো,

হ্যাঁ, আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে, আপনি জিজ্ঞেস করে নেবেন না হয় ওকে! আর এখনই বিয়ের কথা বলিনি তো! দাদার বিয়ের আগে তো সত্যিই আমার বিয়ের কথা উঠছেই না, শুধু আপনি বলেছিলেন তাই এসেছি!

সরলা একটু চিন্তায় পড়লো, পিয়া কি সত্যিই ছেলেটাকে ভালোবাসে! নাহলে ও এতো নিশ্চিত হয়ে বলছে কি করে! খানিকক্ষন চিন্তা করে সুমনের দিকে তাকালো সরলা,

ঠিক আছে! আমি পিয়ার সঙ্গে সময় সুযোগ মতো কথা বলবো! কিন্তু তার দেরি আছে! আপাতত ওর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হবার আগে এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা করা সম্ভব নয়! ওরও যদি তোমাকে ভালো লাগে, তখন আমি ওর দাদুর সঙ্গে কথা বলবো, কিন্তু আপাতত তুমি ওর সঙ্গে দেখা করবে না! আমাকে কিন্তু তুমি কথা দিয়েছো!

সুমন সোজাসুজি তাকালো,

মনে আছে আমার! আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম! আমি কথার খেলাপ করিনা!

সুমন চলে গেলো। সরলা সারাদিন চিন্তিত মুখে বাড়ির কাজকর্ম সারতে লাগলো, সে নিজে এক কথার মানুষ! সুমন কে দিয়ে ফেলা কথাকে যে সুমন এতটাই গুরুত্ব দেবে এটা তার একবারের জন্যেও মনে হয়নি। কিন্তু তার দেওয়া কথার খেলাপ করা তার জন্যে যথেষ্টই মুশকিলের কাজ ছিলো, এ ব্যাপারে কিভাবে এগোনো যায় ভাবতে ভাবতে তার রোজকার কাজকর্মে ভুল হতে লাগলো। সারাদিনের কাজের শেষে সে যখন রাতে ওপরে উঠে এলো তখন রতিকান্ত ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো, তাকে দেখে একটু চিন্তার গলায় বললো,

ওই ছেলেটা সকালে আবার এসেছিলো দেখলাম! এবার তো পিয়া নেই! তাহলে? কিসের জন্যে এসেছিলো ও?

সরলা অন্যমনস্ক গলায় জবাব দিলো,

একটা বড়ো ভুল করে ফেলেছি গো! বুঝতে পারিনি তখন! আমি আসলে ওকে কথা দিয়ে ফেলেছিলাম যে ও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে পিয়ার সঙ্গে ওর বিয়ের কথা নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলবো! আমি ভাবিনি ও সত্যিই সেটা কে মনে রেখে এতদিন পরে আবার ফিরে আসবে!

তা সে এমন কি যোগ্যতা প্রমাণ করলো যে এক্ষুনি তোমাকে তোমার কথা রাখার চেষ্টা করতে হবে! করে কি সে?

ফুটবল খেলে! কোন ক্লাবে নাকি সুযোগ পেয়েছে! ওখানেই নাকি চাকরি হবে খুব শিগগিরই! বাবার সঙ্গে কথা বলে দেখবো একবার?

রতিকান্তের প্রশ্নের উত্তরে অসহায় গলায় বললো সরলা, রতিকান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকালো,

পাগল হয়েছো তুমি! ওই ছেলেও মরবে, আর তুমিও মরবে! কেউ বাঁচবে না! মায়ার কথা ভুলে গেছো? কতোবার বলেছি তোমাকে, পিয়ার কোনো ব্যাপারে তুমি মাথা ঘামাবে না!

ঘামাই না তো কখনো! সেই ছোটো থেকেই তো দূরেই থেকেছি! মায়াদি মরার পরে তো আরো বেশি করে বুঝেছিলাম, ওর প্রতি যত্ন নেওয়া মানেই ওকেই বিপদে ফেলে দেওয়া, সেই সঙ্গে নিজের বিপদও ডেকে আনা! ওকে বাঁচানোর জন্যেই তো হোস্টেলে পাঠিয়েছিলাম! কিন্তু এখন সময় কিছুটা হলেও বদলেছে, বাবার বয়স বেড়েছে! আমার মনে হয় পিয়া কে এখন উনি ভালোই বাসেন! ওর আর কোনো ক্ষতি করবেন না এই বয়সে এসে!

রতিকান্ত বিদ্রুপের হাসি হাসলো,

তখন তুমি কি বুঝেছিলে, মায়া তোমায় কি বুঝিয়েছিল সেসব আমি জানি না! তবে এটা জানি রতন দা যা বলেছে সেটা একবর্ন মিথ্যে নয়! রতন দা নিজেও প্রাণ সংশয়ে আছে। সেই জন্যে তুমি যখন কলকাতা ছাড়তে চেয়েছিলে আমি আপত্তি করিনি, এককথায় এখানে চলে এসেছি। কিন্তু পিয়ার ব্যাপারে একটা কথাই বলবো, ওকে বাবার ইচ্ছের কাছে ছেড়ে দাও! তাতে ও ভালো থাকবে! ওর বেশি কাছে যাবার চেষ্টা কোরো না, তাতে তুমিই বিপদে পড়বে, আর ছেলেটার খুন হয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়! আমার বাবা কে আমি খুব ভালো করে চিনি, তাঁর বয়স বাড়তে পারে, কিন্তু মানসিকতা বদলায় নি!

তাই বলে নিজের নাতনির ক্ষতি করে দেবেন! তাহলে তো ছোড়দারও ক্ষতি হতে পারে! উনি তো পিয়া কে খুব ভালোবাসেন!

চিন্তার গলায় বললো সরলা, রতিকান্ত হাসলো,

নাহ! পিয়া সে সময় পেরিয়ে এসেছে! ওর ক্ষতি করার হলে অনেক আগেই করে ফেলতেন বাবা, এখন আর কিছু করবেন না! আর সুকান্ত তো নিজের রক্ত! তার যে কোনো জিনিসে সাত খুন মাপ! আমিও আজ পর্যন্ত যা করেছি তাতে তো কখনো বাধা দেন নি বাবা! সেগুলো চাপা দেওয়ার জন্যে কখনো আমার ক্ষতি করেন নি, সব সময় অন্য পন্থা নিয়েছেন! তবে তুমি বা ওই ছেলেটা! দুজনের কেউই কিন্তু বাঁচবে না! এটা স্পষ্ট করে বলে দিলাম! বাঁচতে চাও তো পিয়ার ব্যাপারে নাক গলিও না, তবে এটুকু বলতে পারি, পিয়ার কিছু খারাপ বিয়ে বাবা দেবেন না! সেটা তাঁর বংশ মর্যাদার জন্যেই খারাপ হবে! সে বিষয়ে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো! পিয়ার জন্যে সাধ্যমতো ভালো পাত্রই খুঁজে আনবেন তিনি।

সরলা আর কোনো উত্তর দিলো না, তার মনের মধ্যে অজানা আশঙ্কা ঘুরে বেড়াতে লাগলো। যখন সে এই বাড়িতে পা দিয়েছিলো প্রথম, মায়া তাকে অনেক গল্প শুনিয়েছিল। জন্মের আগে পিয়ার মা কে আশার দেওয়া ওষুধ খাওয়াতে চেষ্টা করার ঘটনাও তার অজানা ছিলো না। জন্মের পরও মায়া তাকে কিভাবে আগলে রাখতো তা সে নিজের চোখেই দেখেছিলো। মায়ার মৃত্যু প্রথমে তার অস্বাভাবিক লাগে নি, পরে আশার সঙ্গে তার শাশুড়ির কথোপকথন থেকে তার কাছে সবটাই স্পষ্ট হয়েছিলো, সেই থেকেই আশার জড়িবুটি কে তার বড়ো ভয়। আশা কে বাড়ি ছাড়া করতে পেরে সে অনেকটাই শান্তি পেয়েছিলো, তার পরেও তার শাশুড়ির প্রতি খুব বেশি আস্থা ছিলো না। এখানে আসার সুযোগ পেয়ে তাই সে একটুও দেরি করেনি! এখন নতুন করে পিয়ার ব্যাপারে জড়িয়ে পড়তে চেয়ে কি সে নিজেরই ক্ষতি করে ফেলছে! চিন্তিত হচ্ছিলো সরলা।

এই ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে সুমন বোনের সঙ্গে দেখা করতে হোস্টেলে এলো, নিজের দেওয়া কথা অনুযায়ী সে একবারের জন্যেও অদ্বিতীয়ার মুখোমুখি হলো না। কিন্তু কিশোরী অদ্বিতীয়া তার না ভুলতে পারা জীবনের প্রথম ভালোবাসা কে প্রতিবারের মতোই এবারও হোস্টেলের জানলা দিয়ে যতক্ষন দেখা যায় তাকিয়ে থাকলো। সুমন সে খবর প্রতিবারের মতোই বোনের কাছ থেকে পেলো, সে চলে যাওয়ার পরে যে সোমার কাছ থেকে তার সব খবর নেয় অদ্বিতীয়া, বোনের কল্যাণে তা সুমনের অজানা ছিলো না। সেই জানা থেকেই অতোটা জোরের সঙ্গে অদ্বিতীয়া তাকে এখনও ভালোবাসে এই কথা সে সরলার সামনে বলতে পেরেছিলো। যাবার আগে সে বোনকে বলে গেলো,

আমার ক্লাবে চান্স পাওয়ার কথাটা ওকে বলে দিস! আর বলিস আমি ওর মায়ের সঙ্গে দেখা করেছি, কাকিমা আমাকে বলেছেন ওর পরীক্ষার পরে এই নিয়ে কথা বলবেন!

দাদা চলে যাওয়ার পরে সোমা দৌড়ে হোস্টেলে ফেরত এলো, অদ্বিতীয়া কে জড়িয়ে ধরে বললো,

ছোড়দা বড়ো ক্লাবে চান্স পেয়ে গেছে জানিস! এবার চাকরিও পেয়ে যাবে! তোর মায়ের সঙ্গেও কথা বলে এসেছে ! কাকিমা পরীক্ষার পরে তোর সঙ্গে কথা বলবেন! আমার দারুন আনন্দ হচ্ছে রে! ইস! তুই আমার বৌদি হলে যা মজা হবে না!

অদ্বিতীয়া চমকে উঠলো! সুমন সত্যি এতোদূর এগিয়ে গেছে! ও এখনও ওকে ভালোবাসে! গত দেড় বছরে এতবার এখানে আসা সত্বেও একবারও ওর সঙ্গে কথা বলেনি বলে ওর মনে হয়েছিলো সুমন ওকে আর ভালোবাসে না! নতুন করে সব কিছু ফিরে পাওয়ার আশায় অদ্বিতীয়ার বুকের ভেতরে একটা অন্য রকম ভালোলাগা তৈরি হতে লাগলো। খুব সুমনের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে ইচ্ছে করছে! নিজেকে সামলে নিলো অদ্বিতীয়া, আগে ওকে রেজাল্ট ভালো করতে হবে! তবেই দাদুভাই খুশি হবেন, তবেই ছোটো মা দাদুভাই এর সঙ্গে সুমনের ব্যাপারে কথা বলতে পারবে! নিজের মন কে শক্ত করে আরো বেশি করে নিজেকে পড়াশোনায় ডুবিয়ে দিলো অদ্বিতীয়া, ছোটো মা কে দাদুভাই এর সঙ্গে কথা বলার জন্যে ওর যোগ্যতা প্রমাণ হওয়াটাও জরুরি!
ক্রমশ