সেই মেয়েটার উপাখ্যান পর্ব-১৫+১৬

0
145

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ১৫
মাধ্যমিকের পরে হোস্টেল ছেড়ে ছাত্রীরা চলে যেতে শুরু করলো, গোটা দোতলা ক্রমশ ফাঁকা হচ্ছিলো দিন দুয়েক ধরেই, অদ্বিতীয়া এবং সোমা ও তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখছিলো। অদ্বিতীয়ার শুধু মাত্রই বড়দির বাড়ি তে যাওয়ার ছিলো কিন্তু সোমার বাবা আরেকটু বেলার দিকে নিতে আসবেন, সোমা তাই দ্রুত তৈরি হচ্ছিলো। বেশ কিছুদিন পরে তরুণের সঙ্গে প্রায় মাস তিনেক কাটানোর সুযোগ পেয়ে সে পুলকিত ছিলো।

একটু মন খারাপ নিয়েই বসেছিলো অদ্বিতীয়া এমন সময় সুপার খবর দিলেন সুকান্ত তাকে নিতে এসেছে।

তোমাকে আমার সঙ্গে বাড়ি যেতে হবে পিয়া, দাদুর তোমার এখানে থাকায় আপত্তি আছে!!

অদ্বিতীয়া চমকে উঠলো, কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

ছোট কা প্লিজ! আমি ওখানে সারাদিন একা একা কি করবো! এখানে বাচ্চাগুলোর সঙ্গে সময় কেটে যাবে, তাছাড়া আমি ইলেভেনের পড়াশুনাও কিছুদিন পর থেকে শুরু করতে পারতাম বড়দির কাছে থাকলে!!

সে তোমার যদি কলকাতায় থাকতে না ইচ্ছে করে, না থাকতে পারো! তোমাকে আমি দাদা, বৌদির কাছে দিয়ে আসবো, কিন্তু এখানে থাকার জন্যে আর জেদ কোরো না!

একটু কড়া গলায় বললেন সুকান্ত, ভাই ঝি রমার কাছে থেকে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, মায়ের মুখে এই অপবাদ শোনার পর থেকেই তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। পাছে অদ্বিতীয়ার কোনো ভুলের দায় শেষ পর্যন্ত রমার ঘাড়েই পড়ে, তাই উনি আর কোনো ঝুঁকি নিলেন না। শেষ পর্যন্ত আরো দু একবার চেষ্টা করার পরে অদ্বিতীয়া হতাশ হয়ে মাল পত্র নিয়ে আসার জন্যে দোতলার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সোমার বাবাও এসে গিয়েছিলেন, দুই বন্ধুর বিদায় সম্ভাষণে র পরে সোমা আর অদ্বিতীয়া তাদের ঠিকানা বিনিময় করলো এবং আগামী তিন মাস দুজনেই নিয়মিত চিঠিতে যোগাযোগ রাখার অঙ্গীকার করলো।

রমা খুব অবাক হলেন, বার বার করে না থাকার কারণ জিজ্ঞেস করা সত্বেও সুকান্ত শুধু মাত্র বাবা চান না, এটুকু ছাড়া আর মুখ খুললেন না। রমার সম্পর্কে তাঁর বাবা, মায়ের ধারণা রমার সঙ্গে আলোচনা করতে তাঁর রুচিতে বাধছিল। রমা অবশ্য বহু বছর ধরেই প্রতাপ সান্যাল কে চিনতেন, তাই সুকান্ত মুখে কিছু না বললেও তিনি সবটাই অনুমান করলেন, খানিকটা কষ্টের গলায় অদ্বিতীয়ার আড়ালে সুকান্ত কে বললেন,

শুধু আমার বাড়িতে থাকবে বলেই তোমার বাবা চান না, তাই তো? আমারই বোঝা উচিত ছিলো, অদ্বিতীয়া যখন জেদ করছিলো তখন আমার ওকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হয় নি।

সুকান্ত আলোচনা অন্য দিকে নিয়ে যেতে চাইলেন, প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়ে বললেন,

কলকাতার একটু বাইরের দিকে একটা বাগান বাড়ির খোঁজ দিয়েছে আমার এক মক্কেল, বাড়িটা সারিয়ে নিলে বেশ সুন্দর হবে। দোতলা বাড়ি, সামনে বেশ খানিকটা বাগান আছে, এই বাড়িটার কতটা কি করা সম্ভব সেটা তো বুঝতে পারছি না, তাই এটা কিনে রাখবো বলে ভেবেছি।

বেশ তো! ভালো লাগলে কিনে ফেলো! কিন্তু তার সঙ্গে এই বাড়ির থাকা না থাকার কি সম্পর্ক!

খানিকটা ক্ষোভের গলায় বললেন রমা, সুকান্ত হাসলেন,

এই বয়সে আমি কি শখে বাড়ি কিনবো রমা! বাড়িটা গুছিয়ে নিয়ে বাচ্ছা গুলোকে ওখানে নিয়ে চলে যেতে হবে আস্তে আস্তে! তোমার চাকরি শেষ হয়ে গেলে ওদের নিয়ে এখানে থাকার আর দরকার নেই। ভাই কে বাড়ি ছেড়ে দাও, মিছিমিছি অশান্তি বাড়িয়ে লাভ কি! আমারও বয়স বাড়ছে, আর এতোদূর ছোটাছুটি করা সম্ভব হবে না কিছুদিন পর থেকে।

রমা চুপ করে থাকলেন, সুকান্ত সারা জীবন তার জন্যেই বিয়ে করেন নি সেটা তিনি জানেন, তাই তাঁর বাবার ওপরে ক্ষোভ সুকান্তর ওপরে প্রকাশ করে ফেলার জন্যে মনে মনেই লজ্জিত হলেন। সামনের সপ্তাহে ভাই ঝি এখানে না থাকলেও তিনি যে আসবেন সেটা জানিয়ে সুকান্ত অদ্বিতীয়া কে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

নবীন যখন রতিকান্তের বাড়ির দরজায় এসে ডাক দিলো তখন সরলা রান্না ঘরে ছিলো,

বৌদি! আছেন নাকি!

সরলা মাথায় ঘোমটা তুলতে তুলতে বেরিয়ে এলো, নবীন কে একটা পিঁড়ি এগিয়ে দিয়ে বললো,

নবীন বাবু! কি খবর! বসুন!

নবীন তাকে প্রতাপ সান্যাল এর পাঠানো খবর শোনালো, অদ্বিতীয়া আসার কথা শুনেই সরলার মুখ গম্ভীর হলো,

কি আর বলি ঠাকুর পো, আমারই কপাল! দুটো দিন যে শান্তি তে থাকবো সে জো নেই কো! এখন আবার সতীনের মেয়ের দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকো! তিন তিনটে মাস! দিন তো কম নয়! যাকগে এসব কথা আপনাকে বলে ফেললাম! মনের দুঃখের কথা আর কাকেই বা বলি! একটাই অনুরোধ, শ্বশুর মশাইয়ের কানে যেনো না পৌঁছয়! মেয়ের দায়িত্ব নিতে চাইনি শুনলে বিরক্ত হবেন! আমারও তো বয়স হচ্ছে, এখন আর এসব ভালো লাগে বলুন!

নবীন তাড়াতাড়ি মাথা নাড়লো,

একি বললেন বৌদি! সান্যাল মশাই কে কম দিন ধরে চিনি! এসব কথা ওনার কানে গেলে যে অনর্থ ঘটবে সেকি জানি না! আপনি নিশ্চিত থাকুন আমার মুখ দিয়ে একটি কথাও বেরোবে না!

কমলা দি, চা বসাও একটু নবীন বাবুর জন্যে!!

কমলার রেখে যাওয়া চা খেয়ে নবীন চলে যাওয়ার পরে সরলা উঠে দাঁড়ালো, কমলা কে ডেকে নিয়ে দোতলার পাশাপাশি ঘর দুটো কে পরিষ্কার করার জন্যে উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

কাকা, ভাইঝি যখন গ্রামের বাড়িতে পা দিলো তখন সূর্য অস্ত গেছে। সুকান্ত বেশ কয়েকবার এলেও অদ্বিতীয়া এখানে প্রথম বার এলো, নিস্তব্ধ গ্রামের আলো, আঁধারি পরিবেশে ঢুকেই তার মন খারাপ হতে লাগলো। এইখানে তাকে এখনো তিন মাস কাটাতে হবে! সরলা ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো, নবীনের দেওয়া খবর তার কছে যথা সময়েই পৌঁছে ছিলো, গাড়ির আওয়াজে সে নিচে এসে দাঁড়ালো।

কমলা দি! মালপত্র দোতলায় নিয়ে যাও একদম!!

কমলা অদ্বিতীয়ার হাত থেকে মালপত্র নিয়ে দোতলার দিকে রওনা দিলো, অদ্বিতীয়া একটু অস্বস্তিতে পড়লো, নিজের জিনিসপত্র নিজেই বহন করতে অভ্যস্ত ছিলো সে। সরলা দেওরের দিকে তাকালো, সুকান্ত ততোক্ষনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাড়ি ঘর অবাক চোখে দেখছিলেন, তাঁকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে সরলা হাসলো,

বাড়িটা কি চেনা লাগছে না ছোড়দা? বড্ড অবাক হয়ে গেছেন দেখছি!

সুকান্ত হেসে ফেললেন,

সত্যি বৌদি! আপনার হাতে পড়ে বাড়ির চেহারাই বদলে গেছে! কলকাতায় যা হৈ চৈ!! শেষ বয়সে এখানেই থেকে গেলে মন্দ হয়না।

সরলা উচ্ছসিত হলো,

আমিও সেরকমই ভেবেছি ছোড়দা!! কলকাতায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না আর!! আমি গ্রামের মেয়ে আমার এই পরিবেশই ভালো লাগে!! নবীন বাবু কে বিক্রি কি না করলেই নয়!!

সে আপনি থাকতে চাইলে বিক্রি করা হবে না!! অসুবিধা তো কিছু নেই!! বাবা কে জানিয়ে দেবো আমি,

বলতে বলতে সুকান্ত ঢুকে এলেন, পেছনে পেছনে অদ্বিতীয়া। সরলা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,

কি চেহারা করেছো!! খাওয়া দাওয়া করো না নাকি!!

অদ্বিতীয়া হাসলো, তার চোখের দৃষ্টি রতিকান্ত কে খুঁজছিলো। বাবা তাকে কখনো ভালো না বাসলেও বাবা এই শব্দটার প্রতি যে অমোঘ টান তা অস্বীকার করা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তার চোখের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সরলা মৃদু হাসলো,

বাবা কে খুঁজছো!! কিন্তু তার তো এখন রাত দুপুর!! কাল সকালে দেখা কোরো না হয়!

রাতে খেতে বসে এই প্রথম জীবনে অবাক হলো অদ্বিতীয়া, তার থালার পাশে বড়ো জামবাটি ভর্তি দুধ রাখা আছে!! সেটা আদৌ তার কিনা কমলা কে জিজ্ঞেস করার সঙ্গে সঙ্গেই সরলা এগিয়ে এলো,

আমি দিতে বলেছি!! যা চেহারা করেছো!! ওখানে কি ছাই পাঁশ খেয়ে থাকো কে জানে!! এই মাস তিনেকে শরীর টা একটু শুধরে নাও!

কথাগুলো বলেই দ্রুত পায়ে চলে গেলো সরলা, তার দাঁড়ানোর সময় ছিলো না, থাকলে দেখতে পেতো প্রথম বার স্নেহের স্পর্শ পাওয়া মেয়েটির পক্ষে আবেগ লুকিয়ে রাখা মুশকিল ছিলো, গাল বেয়ে নেমে আসা চোখের জল লোকাতে গিয়ে মুখ নিচু করে ফেললো অদ্বিতীয়া।

পরের দিন সকালে সুকান্ত চলে গেলেন, তাঁর দাদার সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলার আদৌ কোনো ইচ্ছা ছিলো না, কাকা চলে যাওয়ার পরে অদ্বিতীয়া ছাদে ঘুরে, বেড়িয়ে, খেয়ে ঘুমিয়ে নিজের মতো করেই সময় কাটাতে থাকলো। সরলা তার নিজের কাজে ব্যাস্ত, রতিকান্তের মেয়ের সঙ্গে গল্প করার মতো কোনো সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই ছিলো না, তাই সময় কাটানো ক্রমশই অদ্বিতীয়ার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠছিলো।

প্রতাপ সান্যাল তাদের দৈনন্দিন জীবনের সব খুঁটি নাটি খবর নবীনের কাছ থেকে পেতে থাকলেন, সরযূর কাছেও স্বামীর মারফৎ সে খবর পুঙ্খানুপুঙ্খ পৌঁছাতে লাগলো। মেয়ের আসার খবরে সরলা যে যথেষ্টই বিরক্ত এ খবর নবীনের মাধ্যমে পেয়ে স্বামী, স্ত্রী দুজনেই পুলকিত হলেন, সান্যাল মশাই গিন্নী কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

দেখলে গিন্নী, তোমাকে আগেই বলেছিলুম সে মেয়ের আসার খবরে একটুকুও খুশি হবে না। আজ কাল আর কে যেচে পড়ে পরের মেয়ের দায়িত্ব নিতে চায়! কোন উপায় নেই, তাই বাধ্য হচ্ছে!! আবার নবীন কে বলেছে যে সে যেনো আমায় কিছু না বলে!!

সরযূ খুশি হলেন,

খুব ভালো হয়েছে, তোমার বুদ্ধি খান কি কম বাপু!! খুব একা একা স্বামী কে নিয়ে থাকা!! এবার তিন মাসে তার হাঁড়ির হাল হবে দেখো!!

এই ভাবেই অদ্বিতীয়ার গ্রামে প্রায় দিন পনেরো কেটে গেলো, একঘেয়ে জীবন কাটাতে কাটাতে বিরক্ত হয়ে পড়ে অদ্বিতীয়া মাঝে মাঝেই একা একা এদিক ওদিক বেরিয়ে পড়তো। এমন সময়ে একদিন একটু বেলার দিকে বাড়ির পেছনের বাগানে হাঁটছিলো অদ্বিতীয়া, একটু অন্য মনস্ক হয়েই সে যখন একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছিলো, পেছন থেকে খুব পরিচিত গলার ডাক ভেসে এলো,

অদ্বিতীয়া!!

অদ্বিতীয়া চমকে তাকালো, পেছনে কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে সুমন। ভয়ে তার মুখ পাংশু হয়ে গেলো, এ গ্রামে তাদের সবাই চেনে, এখানে তার সাথে কোনো অপরিচিত ছেলে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, এই খবর তার বাড়িতে পৌঁছে যেতে একটুও দেরি হবে না। অদ্বিতীয়ার শুকিয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে সুমন হেসে ফেললো,

কি হলো! ওরকম ভুত দেখার মতো করে তাকিয়ে আছো কেনো?

অদ্বিতীয়ার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোচ্ছিল না, তাকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিলো সুমন,

কিভাবে তোমার ঠিকানা পেলাম ভাবছো নিশ্চয়ই? বোনের খাতা থেকে, আসার আগে তো তুমিই দিয়েছিলে।

এতক্ষনে অদ্বিতীয়ার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো,

কেনো এলে এখানে! আমি তোমাকে বারণ করেছিলাম, বলেছিলাম আর কখনো এসো না!! প্লিজ, চলে যাও, এক্ষুনি কেউ দেখে ফেলবে! দাদুভাই সব জেনে যাবেন!

সুমন তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাত নাড়লো,

আরে, ধুস! তোমার দাদু কি জমিদার নাকি!! সারা গ্রামটা কি ওনার? আমি কি তোমাদের বাড়িতে ঢুকেছি? রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলে ওনার অনুমতি নিতে হবে?

অদ্বিতীয়ার পক্ষে সুমন কে বোঝানো সম্ভব ছিলো না যে তার দাদু আসলে কি! সে খানিকটা হতাশ গলায় বললো,

জমিদার নয় আমার দাদু, কিন্তু এখানে আমাদের একটা আলাদা সম্মান আছে! যদি কেউ জানতে পারে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলছি, তাহলে সেটা নষ্ট হবে!! দাদুভাই শুনলে দুঃখ পাবেন!! প্লিজ, যাও!!

সুমন মুচকি হাসলো,

ঠিক আছে, চলে যাচ্ছি!! কিন্তু তাহলে কবে দেখা হবে এরপর বলো? কবে তুমি হোস্টেলে ফিরে যাবে?

অদ্বিতীয়ার পক্ষে এরপরে নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না, কোনো ছেলে শুধু তার জন্যে এতোদূর চলে এসেছে এটা একজন কিশোরী হিসেবে তার জন্যে অন্য রকম ভালো লাগা ছিলো। সে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো এমন সময় নবীন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। খেলোয়াড়সুলভ পেটানো চেহারার শহুরে বেশবাসের সুমন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো, সুমন কে অদ্বিতীয়ার সঙ্গে কথা বলতে দেখেই সে কৌতুহলী হলো,

এটা কে গো মামনি? বন্ধু নাকি?

সুমন ভ্রু কুঁচকে নবীনের দিকে ঘুরে তাকালো, তাদের ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় নবীনের উপস্থিতি যে সে ভালো ভাবে নিচ্ছে না সেটা তার মুখের ভঙ্গিতে ফুটে উঠলো। কিন্তু অদ্বিতীয়ার মুখ নিমেষে শুকিয়ে গেলো, যে ভয় সে এতক্ষন পাচ্ছিলো, শেষ পর্যন্ত তাই হলো! নবীনের মাধ্যমে দাদুর কাছে যে খবর খুব শীঘ্রই পৌঁছে যাবে এটা বুঝে ভয়ে তার হাত পা কাঁপতে লাগলো। সে কি উত্তর দেবে ঠিক করার আগেই পেছন থেকে সরলার গলা ভেসে এলো,

ও আমার বড়ো ভাই পো নবীন বাবু, কাল রাতেই এসেছে!!
ক্রমশ

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ১৬
ছাদে কাপড় মেলতে মেলতে অনেকক্ষন ধরেই অদ্বিতীয়া আর সুমন কে লক্ষ্য করছিলো সরলা, এতক্ষনে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে দেখে সে দ্রুত পায়ে নেমে এসে বাগানে দাঁড়ালো। নবীন যথেষ্টই ঘোড়েল, সরলার সুমন কে ভাই পো সম্বোধনে সে একটু সংশয়ের দৃষ্টিতে তাকালো, তারপর বললো,

ও তা ভালো! আসলে আগে দেখিনি তো তাই! কাল কটার ট্রেনে এলো?

সরলা মৃদু হাসলো,

ওই বিকেলের ট্রেনে! যখন ঢুকলো তখন তো সন্ধ্যে পেরিয়ে গেছে, তাই দেখেন নি আর কি!

নবীন সুমনের আপাদমস্তক জরিপ করে মাথা নাড়লো,

বেশ বেশ! কদিন পিসির বাড়ি থাকা হবে তো?

সুমন কিছু বলার আগেই সরলা হাসলো,

সেই কথাই তো হচ্ছে নবীন বাবু! আজই সে যেতে চায়! কতো করে বললুম এতোদূর থেকে এলি, গায়ের ব্যাথা টুকুও তো মরবে না! তা কে শোনে কার কথা, সে নাকি আজই ফেরত যাবে!!

নবীন আর কিছু বলার আগেই সরলা সুমন আর অদ্বিতীয়ার দিকে চলে আসার ইশারা করে হাঁটতে থাকলো, দু এক পা গিয়েই থমকে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে নবীনের দিকে তাকালো সরলা,

নবীন বাবু! একটা অনুরোধ করবো, আমার ভাই পোর আসার খবরটা একটু শ্বশুরমশাই কে দেখা হলে জানিয়ে দেবেন!!

নবীন ঘাড় নাড়লো,

হ্যাঁ, হ্যাঁ বৌদি নিশ্চয়ই জানিয়ে দেবো।

অদ্বিতীয়ার মুখ শুকিয়েই ছিলো, দাদুর কাছে খবর না গেলেও, ছোটো মার কাছে খবর যাওয়ার পরিণতি ঠিক কি হতে পারে, এটা ভাবতে ভাবতে সে যখন বাগানের ভেতর দিয়ে বাড়ির দিকে এগোচ্ছিল তখন সে দোতলার জানলায় রতিকান্ত কে দেখতে পেলো, বাবা সোজা তাদের দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে তার মুখ আরো শুকিয়ে গেলো!

সরলা কোনো কথা না বলে সোজা বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো, তার পেছন পেছন সুমন আর অদ্বিতীয়া। ঘরে ঢুকে সামনের সোফার দিকে ইশারা করে সুমনের দিকে তাকালো সরলা, গম্ভীর গলায় বললো,

বসো!

সুমন কোনো কথা না বলে সোফায় বসে পড়লো, ইতিমধ্যেই কমলা সেখানে এসে দাঁড়িয়েছিলো, তাকে দেখেই সরলা ইশারা করলো,

এ কে কিছু খেতে দাও! আর হলে বলবে আমাকে, আমি গিয়ে নিয়ে আসবো! আমরা এখানে এখন কিছু দরকারি কথা আলোচনা করবো, তুমি নিজের কাজ করো, এখানে না ডাকলে এসো না!

কমলা তাড়াতাড়ি রওনা হলো, সুমন কিছু বলতেই যাচ্ছিলো তার আগেই সরলা হাত তুললো,

তোমার সঙ্গে পরে কথা বলছি!! আগে আমি পিয়ার সঙ্গে কথা বলবো!!

সরলার গম্ভীর গলা অদ্বিতীয়া কে ভেতরে ভেতরে শঙ্কিত করে তুলছিলো, সে আর একটুও দেরি করলো না, গত বেশ কিছুদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা সে তড়িঘড়ি সরলা কে বলতে লাগলো। সরলার এসবের কিছুই জানা ছিলো না, সে বিস্মিত হলো, অবাক গলায় সুমনের দিকে তাকিয়ে বললো,

সব কিছু জানার পরেও তুমি এখানে এসেছো! তুমি জানো এতে ওর কতো বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে!

সুমন সরাসরি তাকালো,

আমি ওকে বিপদে ফেলতে চাই নি! আমি বুঝিনি এখানেও এমন কেও থাকতে পারে যে ওর দাদু কে খবর দিয়ে দেবে! আমার মনে হয়েছিলো এটা কলকাতা নয়, তাই এখানে দেখা করলে ওর অসুবিধা হবে না।

এটা গ্রাম, এখানে আরো বেশি করে সবাই সবাই কে চেনে! তাছাড়া দাদু না জানলেও আমরা জানতে পারি এটা তোমার মনে হয়নি একবারও!

সরলার প্রশ্নে সুমন মাথা নাড়লো,

আমি ভেবেছিলাম বাইরে থেকে কথা বলেই চলে যাবো!!

তুমি ওকে ভালোবাসো? বিয়ে করতে চাও?

সরলার প্রশ্নে অদ্বিতীয়া আর সুমন দুজনেই চমকে তাকালো, সুমন তড়িঘড়ি মাথা নাড়লো,

হ্যাঁ।

বেশ! খুব ভালো কথা! কিন্তু তোমরা দুজনেই তো এখন পড়াশোনা করছো, এখন তো এসবের অনেক দেরি আছে। যদি পড়াশোনা শেষ করে ওর যোগ্য হয়ে আসতে পারো কখনো তখন নিশ্চয়ই এই বিষয়ে আলোচনা করবো।

সুমন হাসলো,

কিন্তু অদ্বিতীয়া বলেছে, আমি কখনোই ওর দাদুর চোখে যোগ্য হয়ে উঠতে পারবো না! কারণ আমি বনেদী বাড়ির ছেলে নই!

সরলা সোজাসুজি সুমনের চোখের দিকে তাকালো,

ওর দাদু পুরনো দিনের মানুষ, তাই এসব পুরনো ধ্যান ধারণা কে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে ভালোবাসেন! কিন্তু আমি এগুলোতে বিশ্বাস রাখিনা, আমি মনে করি তোমার যোগ্যতাই তোমার পরিচয়। তুমি যদি সত্যিই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারো, তাহলে শুধু মাত্র বনেদী না হওয়ার জন্যে কিছু আটকাবে না। আমি তোমাকে কথা দিলাম, আমি নিজে শ্বশুর মশাইয়ের সঙ্গে কথা বলবো। কিন্তু তোমাকেও আমাকে একটা কথা দিতে হবে, ও যতো দিন না পড়াশোনা শেষ করছে, আর যতদিন না তুমি ওর যোগ্য হচ্ছো,ততদিন তুমি ওর সামনে এসে ওকে বিব্রত করবে না। তুমি জানোনা তুমি ওকে কতো টা বিপদে ফেলছিলে! ওর দাদু যদি জানতে পারেন তুমি যাতায়াত বন্ধ করনি, তাহলে আজই উনি ওকে হোস্টেল ছাড়িয়ে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাবেন, পড়াশোনা বন্ধ করে দিতেও পারেন। ও যদি একবার কলকাতায় ফিরে যায়, তখন তুমি হাজার চেষ্টা করেও কিন্তু ওর সঙ্গে আর কোনোদিনও দেখা করতে পারবে না। সেটা কি ভালো হবে বলো? এবার তুমি যদি সত্যিই ওকে ভালোবাসো, তাহলে নিশ্চয়ই ওর ক্ষতি চাইবে না!

সুমন চুপ করে থাকলো, তারপর নিচু গলায় বললো,

ঠিক আছে, আমি ওকে আর কোনো বিপদে ফেলবো না! কিন্তু আমি যদি সত্যি ওর যোগ্য হতে পারি, তখন আমি আসবো তো?

সরলা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো,

হ্যাঁ, অবশ্যই আসবে! সোজা আমার কাছেই আসবে! আমি তোমাকে কথা দিয়েছি, আমি সেটা মনে রাখবো! আর চাইবো তুমিও মনে রেখো। এখন তোমরা দুজনেই ছোটো, এখন যাকে ভালো লাগে, পরে তাকে ভালো না লাগতেও পারে! যদি বয়স বাড়ার পরেও তোমাদের দুজনের দুজনকে ভালো লাগে, তখন নিশ্চয়ই আমরা এটা নিয়ে এগোবো।

কমলা ইতিমধ্যে রান্নাঘর থেকে ডাক দিয়েছিল, সরলার ইশারায় অদ্বিতীয়া লুচি তরকারির থালা নিয়ে এসে সুমনের হাতে দিলো। সুমন খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে অদ্বিতীয়া সরলার কাছে দাঁড়ালো, ভীত গলায় বললো,

ছোটো মা! বাবা দোতলার জানলায় দাঁড়িয়ে ছিলো, আমি বাগান থেকে দেখেছি!!

সরলা মাথা নাড়লো,

জানি! বাবা কিছু বলবে না কাউকে! তুমি এসব নিয়ে ভেবো না! মন দিয়ে পড়াশোনা করো, সুমন কে মন থেকে বার করে দাও! তোমার এখনও অনেক লড়াই বাকি আছে!

অদ্বিতীয়া চমকে তাকালো,

কিসের লড়াই ছোটো মা? তোমার মনে হয় দাদুভাই এসব মেনে নেবেন?

সরলা কথা ঘোরালো,

নাহ! আমি সুমন কে নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু ভাবছি না! ও আগে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করুক! আমি তোমার কথা ভাবছি! তোমাকে অনেক বড়ো হতে হবে! নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে! কোনোদিনও ভেবো না যে তোমার দাদুর অনেক কিছু আছে বলেই তোমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আর দরকার নেই! কেউ তোমাকে কিছু করে দেবে না! অন্য কোনো কিছু মাথায় এখন ঢুকিও না, শুধু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো।

দুপুরের খাওয়ার পর্ব মিটে যাওয়ার পরে সরলা যখন নিজের ঘরে এলো তখন রতিকান্ত জানলার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো, সরলা কে ঘরে ঢুকতে দেখে বললো,

নবীন কে যতো টা সহজ তুমি ভাবো ততোটা সহজ সে নয়! তোমার কথা সে বিশ্বাস করলো বলে তোমার মনে হয়?

সরলা হাসলো,

বিশ্বাস করে নি আমিও জানি, কিন্তু বিশ্বাস না করেও তার কোনো উপায় নেই যে! যাতে বাবা কে গিয়ে কোনো রকম খবর দেওয়ার চেষ্টা না করতে পারে, সেই জন্যেই তো আগেই খবর দেওয়ার জন্যে বলে দিলাম।

বাবা যদি তোমার বাপের বাড়িতে খোঁজ খবর করে?

করবেন না, আমি জানি! যদি নবীন কে খবর না দিতে বলতাম তাহলে ওনার সন্দেহ হতো, কিন্তু এক্ষেত্রে উনি বরং বেশি চিন্তিত হবেন ভাই পোর আসা নিয়ে, সত্যি সে এসেছিলো কিনা সেটা নিয়ে নয়। তবে পিয়া তোমাকে নিয়ে চিন্তিত, তোমাকে সে জানলায় দেখেছে!

রতিকান্ত মুখ বিকৃত করলো,

রক্তের দোষ! সে দোষ যাবে কোথায়!

সরলার মুখ গম্ভীর হলো,

তাই! তোমার পিতৃ পুরুষরা সব ধোয়া তুলসি পাতা বলছো! তোমার বাবা, ভাই পর্যন্ত চিনি, তাদের তো কারোর পান দোষ নেই জানি! তোমার এই দোষটি তাহলে কোন পুরুষের আমদানি?

রতিকান্ত উত্তর দিলো না, মুখ বিকৃত করে সামনে থেকে সরে গেলো। সরলাও আর কথা বাড়ালো না, সে বরাবরের কম কথার মানুষ, কথার থেকে কাজে করে দেখাতেই ভালোবাসে সব সময়। নবীন বেশি দেরি করলো না, সরলার বলা না বলায় তার কিছু আসতো,যেতো না, সে এমনই যথাসময়ে কোর্টে দেখা করে সরলার ভাই পো আসার খবর প্রতাপ সান্যালের কানে তুলে দিলো। তার উদ্দেশ্য একটাই সস্তায় জমি, বাড়ি সান্যাল মশাইয়ের কাছে কিনে নেওয়া, তার জন্যে সে সব খবরই প্রতাপ বাবুর কাছে পৌঁছে দিতে দ্বিধা করতো না।

সরলার ধারণা কে সত্যি করেই প্রতাপ সান্যাল ভাই পো আসার খবরে কুপিত হলেন,

ভাই পো এসেছে! বাহ! খুব ভালো! হটাৎ তোমাকে দিয়ে খবর পাঠালো আমায়?

নবীন এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো,

খবর কি আর দিতো কাকাবাবু, সে আমি তাকে বাগানে দেখে ফেলেছি তাই! বড়দাও তো দেখলাম ঘরেই ছিলো, আমরা যখন কথা বলছিলাম, উপর থেকে দেখছিলো। কাকাবাবু, বৌদি তো ওখানেই থেকে যাবেন বলে সবাই কে বলে বেড়াচ্ছেন! বলছেন, এই বাড়ি উনি বিক্রি করবেন না!

প্রতাপ সান্যাল ধুরন্ধর মানুষ, নবীনের কাছ থেকে তিনি নিয়মিত ছেলের বউয়ের খবরাখবর নিয়ে থাকেন, কিন্তু বাড়ির বউয়ের সম্বন্ধে কোনো বিরূপ ধারণা তিনি নবীনের সামনে প্রকাশ করেন না। এক্ষেত্রেও সব শুনে তিনি মাথা নাড়লেন,

থাকবো বললেই তো থাকা যায় না নবীন, অনেক কিছু ভাবার বিষয় আছে! বংশধর নেই আমার, এখন আর চারদিকে ছড়িয়ে না রেখে গুটিয়ে নিতে হবে সব! বৌমা ওসব জমি জমার কি বোঝেন! ওনার ভালো লেগেছে তাই থাকতে চেয়েছেন! থাকুক কিছুদিন, তারপর আস্তে আস্তে তোমাকেই দিয়ে দেবো সব!

নবীন খুশি হলো, সে চলে যাওয়ার পরে প্রতাপ সান্যাল বাড়ি ফিরেই গিন্নী কে তলব করলেন, স্বামীর তলবে সরযূ তড়িঘড়ি ওপরে উঠে এলেন। তাঁকে দেখেই সান্যাল মশাই রাগের গলায় বললেন,

বাড়িতে একেবারে জাঁকিয়ে বসেছে সে! বাপের বাড়ি থেকে আবার ভাই পো কে ডেকে নিয়ে এসেছে!

সরযূ অবাক হলেন,

সেকি! এবার ওই ভাই পো সান্যাল বাড়ির মালিক হবে নাকি! তোমাকে কে খবর দিলো? নবীন নাকি?

প্রতাপ বাবু ঘাড় হেলালেন,

হ্যাঁ! সে নাকি খবর দিতে বলেছে আমাকে! তবে নবীনের কথায় মনে হলো যে সে নেহাত ওই ভাই পো কে বাড়ির বাগানে বেড়াতে দেখে ফেলেছে তাই তোমার বউ আমাকে খবর দিতে বলেছে! না হলে এ খবর চাপাই থাকতো! ওরকম ভাই পো কতো আসতো যেতো, তুমি জানতেও পারতে না!

সরযূ কপাল চাপড়ে হা হুতাশ করতে লাগলেন,

হে ভগবান! ছেলেটাকেও পর করে দিলে গো! সে ওই বাড়িতে বসে থাকে, খায় দায়, কে এলো গেলো সে খবরটুকুও রাখে না! বউয়ের আঁচল ধরা হয়ে গেলো একদম, বাপ মার কথা তার মনেও পড়ে না গো!

প্রতাপ বাবু বিরক্ত হলেন,

আহ! তোমার ওই এক কথা! আঁচল ধরা আবার কি! ওসব কিছু হয় না! আসল কারণ টা কি সেটা খুঁজে বের করো দেখি! তা আসল কাজ যদি কিছু তোমায় দিয়ে হয়!

সরযূ রাগের গলায় উত্তর দিলেন,

তা সে রাস্তাও তো তুমিই বন্ধ করেছো! ওখানে সে কি করছে তার খবর আমি কলকাতায় বসে কি করে রাখবো! কতো করে বললুম, যেতে দিও না তাকে ছেলের পেছন পেছন! তা শুনলে তুমি!

সান্যাল মশাই স্ত্রী কে সান্ত্বনা দিলেন,

কেনো শুনিনি বোঝো তুমি কিছু! বাড়ি, জমি তো দখলে এসেছে! এবার সেগুলো বিক্রি করে দিলেই হয়, এক এক করে! তারপর আর কদিন! বাড়ির গিন্নী তো এখন তুমি আবার, তাকে নিয়ে এসে হেঁসেলে আটকে রাখবে, আর কোনো ব্যাপারে ঢুকতে দেবে না। প্রথম থেকেই কড়া শাসনে রাখবে!

সরযূ চুপ করে গেলেন, স্বামী যতই কড়া শাসনে বেঁধে সরলা কে হেঁসেলে আটকে রাখার বুদ্ধি তাঁকে দিন না কেনো, সে পরামর্শ কাজে পরিণত করা যে যথেষ্টই কঠিন তা তিনি মনে মনেই জানেন। এখানে সে ফিরে এলেই যে তাঁর কর্তৃত্ব ক্ষুন্ন হবার সম্ভাবনা সেটা বুঝে তিনি বউয়ের নতুন করে ফিরে আসার কথায় খুব বেশি খুশি হতে পারলেন না। একটু চুপ করে থেকে বললেন,

ভাই পো যাতে আর না আসে সেই ব্যবস্থাই করো, তাকে আর এখানে টেনে আনতে হবে না!

এই তো তুমি বলছিলে, আমি তাকে কেনো যেতে দিলাম! এখন আবার ফিরে আসায় আপত্তি কেনো!

অবাক গলায় বললেন প্রতাপ সান্যাল, সরযূ মাথা নাড়লেন,

গেছে যখন যাক! ও নতুন করে আর অশান্তি ভালো লাগে না। তাকে হেঁসেলে আটকে রাখা আমার কম্ম না! তার যা মুখ! পারলে হাতে মাথা কাটে! নিজের বাড়িতেই কেমন যেনো অতিথি মনে হয় নিজেকে, বামুনটাও কথা শোনে না একদম! এ আমি বেশ আছি! সুখের চেয়ে আমার শান্তি ভালো!

সান্যাল মশাই একটু ভাবলেন,

ঠিক আছে! থাক তবে আর কিছুদিন! যখন তুমি আর পারবে না, তখন না হয় সব বিক্রিবাটা করে তাদের এখানে নিয়ে আসবো! শেষ বয়সে সেবা করবে তোমার এসে! এখন একটা কাজ করি বরং চলো, দুজনে ঘুরে আসি ওখান থেকে কদিন!! কি করছে সে দেখে আসি একটু, আর ওসব ভাই, ভাই পো দের আসাটাও বন্ধ করে আসি।
ক্রমশ