সে আমার মায়াবতী পর্ব-০৪

0
524

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_৪
–আজকের দিনটা যে তিনটি রমনির মনে ভালোবাসার রঙ বয়ে আনবে এমন একটা ইংগিত দিচ্ছে।! সত্যি কি এমন হবে নাকি ভাগ্য বদলাতে চলেছে,আমাদের ভাগ্য কখন কোথায় নিয়ে যায় আমরা কেউই জানি না,আচ্ছা আমার ভাগ্যে কি ভালোবাসা আসবে না,??

— কাল থেকে মায়া আর তুবা ফোন করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে, মেচিং পড়তে হবে, একিরকম সাজতে হবে, উফফ পাগল করে দিচ্ছে মেয়ে দুটো, ওরা তো জানে আমি শাড়ি সামলাতে পাড়ি না তাও আমাকে থ্রেড এর উপর রেখেছে ”
আমাকে আপু সুন্দর করে নিল শাড়ি পরিয়ে হালকা কাজল আর লিপস্টিক দিয়ে দিয়েছে,চুল নরমাল রেখেছে কারন আমার চুল অনেক বড়, জন্মদিনে আপুর গিফট করা ঝুমকা পড়িয়েছে, এই একটা মাত্র মানুষ যে আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা, পছন্দ, অপছন্দের খবর রাখে তাই তো দু দিন পর পর এটা সেটা এনে দেয়, ঘুরতে নিয়ে যায়, আমার ভাবনায় ছেদ ঘটে আপুর কথায়

— মাশাল্লাহ কি সুন্দর লাগছে তোকে, আমি তো চোখ সরাতে পারছি না, দেখিস কেউ আবার না তুলে নিয়ে যায় ( হেসে দিয়ে)
— কি যে বলো আপু, কিন্তু আমি তো শাড়ি সামলাতেই পাড়ি না ভয় হচ্ছে যদি পড়ে যাই বা শাড়ি খুলে যায় ( ঠোট উল্টে বললাম)
— আরে পাগলি তোর দুই বেস্টি আছে না দেখবি তোকে সামলে রাখবে,
এবার কিন্তু দেরি হলে ওরা বকবে যা তুই “”
— আচ্ছা আপু ”
— সাবধানে যাবি কিন্তু
–আচ্ছা
বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে চলে এলাম
— তুববববাা
—গন্ডার টা এভাবে চিৎকার করছে কেন, উফ একটু সাজতেও পারি না, লাজ লজ্জা কিছু নেই ছি কাল বাবা মায়ের সামনে কিভাবে জরিয়ে ধরে বিয়ের কথা বলল, ফুপি টা এত ভালো তার ছেলেটা এমন খাটাস কেন, আসার পর থেকে জালিয়ে মারছে,এটাকে বিয়ে করলে তো আমার জিবন তেজপাতা, না না আমি পালিয়ে যাবো এই খারুস যতই সুন্দর হোক একে বিয়ে করা যাবে না, নাহলে না জানি এমন টর্চার করে আমার নাম ভুলিয়ে দিবে””
— কিরে ছেলেটা কখন থেকে ডাকছে তোর হয় নি?
— হ্যা এই ছেলে নিয়েই থাকো আমাকে কেউ ভালোবাসে না”
— যাবি তুই নাকি আমি
— থাক মাম্মি কস্ট করে কিছুই আনতে হবে না যাচ্ছি আমি
এদিকে তুহিন বিরক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে তুবার ওপর, কখন থেকে বসে আছে আসার নামই নেই, নেহাত ভালোবাসে নইলে দিত মাথায় তুলে আছার, ভাবনার মাঝেই দেখল এক নিল পরি তার সামনে হাজির কি মিস্টি লাগছে, সব রাগ জিদ গলে পানি হয়ে গিয়েছে
— এমন হা করে তাকিয়ে আছেন কেন হ্যা
— এক পরি কে দেখছি,
— সত্যি আমাকে সুন্দর লাগছে?
— না পেত্নি লাগছে এবার চলেন ম্যাম আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে,,
— হ্যা চলুন আপনি নিজেই তো লেট করলেন
— কি আমি,
— না আপনার বউ!
— মাথা চুলকে তুহিন ভাইয়া বলেন
–ঠিকই বলেছিস, তোকে তার ছ্যরা ভেবেছিলাম না দেখি বুদ্ধি আছে ( এক চোখ টিপ দিয়ে)
— যাবেন নাকি রিকশা দিয়ে চলে যাবো,
— তুহিন ভাইয়া কিছু না বলেই গাড়িতে বসে পড়ে
— কি হলো রাগ করলো না কেন? যাই হো আমারই লাভ হ্যা, ( মুখ ভেংচি দিয়ে)
— তুবা গাড়িতে বসার সাথে সাথে তুহিন ভাইয়া হুট করেই তুবার গালে কিস করে বসে,
— বাকিটা বিয়ের পরে করবো জান
— অসভ্য, ইতর , আমি বাড়ির সবাইকে বলবো,
— আচ্ছা নাম যেহুত হবে তাহলে আরও কিছু করি কি বলিস,?
— বলছিযে ভা ভাইয়া আমার লেট হচ্ছে,
— লাইনে এসেছিস, কিন্তু ছেলেদের থেকে দূরে থাকবি, আমি নিতে আসবো, মনে থাকে যেন!
— মনে থাকবে গাড়ি কি চালাবেন,
— যাচ্ছি জান
— অসহ্য একটা
— এটাকেই তোমার সামলাতে হবে সুন্দরি,
বলেই গান ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে
অন্যদিকে—-
–মাম্মা আমাকে কেমন লাগছে?
— আমার প্রিন্সেস কে সবসময় ভালো লাগে,
— হ্যা পেত্নি তো
— ছোট ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু,
— আচ্ছা মেডাম আপনার দেরি হচ্ছে যান আপনি আর আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে”
— সত্যি?
— তিন সত্যি মহারানি, ভাইয়া চলে গিয়েছে, তোকে পৌছে দিবো চল,
— চলো চলো দেরি হচ্ছে, দেখো আমার বান্ধুবিদের দেখে আবার ক্রাস খেয়ো না,
— হা হা এই সায়ান এর মনে শুধু তার স্নিগ্ধ রানির বসবাস, যতই সুন্দরি থাকুক না কেন ( মনে মনে)
— ভাইয়া চলো, উই আর লেট,
— মা বায়, পাগলিটাকে দিয়ে আসি
— চলুন মহারানি
— হ্যা মন্ত্রি সাহেব
— ওদের কান্ড দেখে বাড়ির সবাই হাসছে
–এদিকে দাঁড়িয়ে আছি, আমাকে তারা দিয়ে নিজেদের নাম নেই,
—হটাৎ করে দুই দিক থেকে আমাকে কেউ জরিয়ে ধরে, আমি বুঝতে পেরেছি এইগুলো আমার পাগলি বেস্টিরা ছাড়া আর কেউ না,,
— কি রে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি, তোদের খবর নাই,
— ঈশু মাসাল্লাহ তোকে কি সুন্দর লাগছে রে ,,
— হ্যা কারো নজর না লাগুক গো 🤭
— আরে বাহ নিজেদের যে আমার থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে, তার বেলায় কি, আর আমাদের জিজু কোথায়?
— 😒😒
— দেখো তুবা আমরা বিয়ের দাওয়াত চাই চাই,
— ঠিকই তো সবার বান্ধুবির বিয়ে হবে আমার বান্ধুবির কি বিয়ে হবে না,
— হ্যা এতই যদি বিয়ের শখ তাহলে নিজেই করে না, ওই ইতর টাকে বিয়ে এমনিতেও আমার পথ ক্লিয়ার হবে
— না জান বিয়ে আমি তোমাকেই করবো,সে তুমি যাই করো না কেন ( বাকা হেসে)
— এখন কি জেগে জেগেও আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি, দূর কেন যে সারাদিন এই ছেলেটাকে দেখি
— জিজুউউ( চিল্লিয়ে)
আমি আর মায়া চিৎকার করে বললাম, কারন ভাবনা কুমারি ভেবেই চলছিলো
—এ এটা সত্যি 😯,
— ইয়েস জান, বাই দা ওয়ে আমাকে এত মিস করো বুঝি
— এ এই আপনি না চলে গিয়েছেন, তাহলে কেন কিভাবে এলেন?
— হটাৎ তুবার হাত টেনে নিয়ে বেলি আর গোলাপের মালা মুড়িয়ে দিল, আর তুবা এটা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে খুশিতে এক হাত জরিয়ে বললো
— থ্যাংক ইউউউ
— লাভ ইউ মাই লাভ
— লাভ ই 😐
— আচ্ছা বায় জান
— এদিকে আমি আর মায়া গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি,
— আপনাদের প্রেম কি বাকি আছে, না তাহলে আমরা ভিতরে যেতাম আরকি
— এহহ আমি প্রেম টেম করছিলাম না,
— তা দেখিছি এবার চলুন মহারানি রা, স্পেশাল গেস্ট চলে আসবে
— হ্যা চল চল
আমরা ভার্সিটি ঢুকে পুরাই অবাক বেলুন,ফুল, রঙিন কাপড় দিয়ে কি সুন্দর করে সাজানো, চেনাই যাচ্ছে না,আমরা ঘুরে ঘুরে সব দেখছিলাম তখন শুনি স্পেশাল গেস্ট চলে এসেছে
— ভাইয়া চলে আসছে চলো চলো
— এক মিনিট তোমার ভাই মানে?
— কালকে তো বড় ভাইয়ার জন্য বলতেই পারলাম না, আজকে নিজেই দেখো
— চলো বলেই আমার আর তুবার হাত ধরে হাটার সময় একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলো মায়া,
— এই ফাজিল মেয়ে চখে দেখো না,
— স্যরি আপু আমি আসলে খেয়াল
— হ্যা তা থাকবে কিভাবে শুনেছো তো দ্যা গ্রেট আয়ান আরাভ চৌধুরী এসেছে,তাই সামলাতে পারো নি
— মায়া কিছু বলার আগে আমি জবাব দিলাম
— এক্সকিউজ মি আপু, আমার মনে হয় আপনি আমাদের সিনিয়র, তাই ভুল হয়েছে স্যরি বলেছি,তাই বলে আপনি যা নয় তাই বলতে পারেন না,
— এই মেয়ে তুমি কোথাকার কে হ্যা, আমাকে ভদ্রতা শিখাও,তোমাকে তো আমি দেখে নিবো
— এর মধ্যে তুবা বলল
— আপু এই দিনের মধ্যে যদি না দেখেন তাহলে তো আপনার চোখে সমস্যা, বলছি কি ভালো ডা. দেখান 😉
—এগুলো শুনে সিনিয়র আপু রাগে গজ গজ করতে করতে চলে গেলো,
— আমরা হেসে লুটুপুটি খাচ্চি, এর মাঝেই একটা বাচ্চা মেয়ে একটা আমাকে একটা কাগজ দিয়ে দৌরে চলে গেলো, আমি ভাবছি আমাকে কেন দিবে, আর কি আছে এই কাগজে?! এর মাঝেই মাইকে শুনলাম সেই আয়ান আরাভ চৌধুরী স্টেজ এ চলে ও গিয়েছে, আর আমরা ঝগড়ার তালে এখনো এখানে,!! তুবা আর মায়া নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতে করতে সামনে এগিয়ে গেলে আমি কৌতুহল দমাতে না পেরে কাগজ টা খুলে পড়তেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো
— হায় আল্লাহ ছি..,,””

চলবে।