সে আমার মায়াবতী পর্ব-০৫

0
493

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_৫
আমি এতটা ভাবনা আর হাসিতে মত্ত ছিলাম যে আমার শাড়ি সরে গিয়ে পেট দেখা যাচ্ছিল,ছি””” নিজের উপরেই এখন রাগ লাগছে, আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই ভাগ্যিস কেউ দেখে নি, নইলে কি হবে ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে,তবে যে ব্যাটা লিখলো এত বাজে ভাবে বলার কি আছে হ্যা সুন্দর করেও তো লিখা যেত, তখন চিরকুট এ লিখা ছিলো!

— এতই যদি পেট দেখানোর শখ তাহলে আচলটা ফেলে রাখলেই পারেন😡

—- এসব ভাবনার মাঝেই তুবা ডাক দিলো, তারপর আমরা স্টেজে গিয়ে বসতেই চোখ আমার ছানাবড়া, উনি এখানে কি করছে,এক মিনিট তার মানে কি ইনিই সেই দ্যা মোস্ট
আইকন আয়ান আরাভ চৌধুরী,
— কি গো খেলে তো চমক, আমার বড় ভাইয়া কে দেখে,
— হ্যা তো ইশু বলছি যে জানিস তো উনি কে আর একটা কথা কেন আমাদের ভার্সিটি তে রেগিং করে না জানিস কারন তার বোন সয়ং আমাদের সাথে থাকে বেবি
—- আরে না আমি আমার বড় ভাইয়ার নাম ভাংগিয়ে কখনোই চলি না,আমার ভাইয়া সেটা শিখিয়েছে,আর তোমরা জানো প্রিন্সিপাল ছাড়া কেউই জানি না আমি কে, বা কার বোন🙂
— সে যাই হোক আমি কিন্তু কিছুই করি নি হ্যা,ও ওই দিনের সব ভুলে গিয়েছি
— তুবা আর মায়া একসাথে বলে ওঠলো
— ওওও তাই বুঝি
—হ্যা এবার কি আপনারা বসবেন নাকি সং এর মতো দুই টা দাঁড়িয়ে থাকবেন,
— হ্যা চলো চলো বসি
— আমি এই নিয়ে চার বার আমার সিট চেঞ্জ করেছি, যেখানেই যাচ্ছি আয়ান আরাভ, মেয়েদের মুখে গুন গুন শুনে শুনে আমি বিরক্ত উফফ, আল্লাহ রেহাই দাও,
— আমি এই মেয়েটার দিকে তাকাবোনা তাই চোখে গ্লাসেস দিয়ে রাখলাম আর এই মেয়েকেই কেন চোখে পরছে, ওয়াই ম্যান ড্যাম ইট,
— এ্য দিনের বেলায় ও চোখে দেখে না ঢং ( বলেই মুখ ভেংচি দিলাম)
— সো স্টুডেন্ট আমাদের নবিন বরন উৎসবের মূল গেস্ট দ্যা ফেমাস আইকন এন্ড দ্যা পলিশিয়ান আয়ান আরাভ চোধুরি, ওনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য আসছে আমাদের স্টুডেন্ট নিহা,তমা, মায়া,ইশা
— সব মেয়েরা খুশি হলেও আমি মোটেও খুশি হই নি,বাঘের খাচায় যেতে হবে , আমাকে কেন ডাকলো উফফ, এর মধ্যেই মেয়েদের ফিসফাস শুনলাম,
— ইশ কি কিউট রে, আমার না মনে হয় তুলে নিয়ে বিয়ে করি( প্রথম মেয়ে)
— কিউট কি রে বেস্ট ব্যচেলার আইকন স্টাইল কিং , ইস খোদা জানে এই হিরোর বউ কোন পরি হবে, ( দ্বিতীয় মেয়ে)
— তুলে নিয়ে বিয়ে করার শখ তাই না, ওইদিন শুনিস নি ৩ টা মাডার করেছে লাইভ এ, সবাই দেখেছে,বইন চোখ দেখে সব পালিয়েছে, ( আরেক জন)
— এমনিতে পারসোনালিটি, কিউটের ডিব্বা ইশ আমার তো ইচ্ছা করছে চুম্মাই
—ছি ছি কি বেশরম মেয়ে রে বাবা, এই লোকের মধ্যে এমন কি আছে আমি তো দেখতেই পাই না, কানি গুলো কোথাকার
— এবার মঞ্চে আসছে ঈশা ইসলাম,
—কি করবো ডেকেছে না গিয়েও তো পারছি না, ভাবতে ভাবতে গেলাম চোখের দিকে গভির চাহনি নিক্ষেপ করলাম, তার চাহনি তে কি ছিলো জানি না আমি কেপে উঠলাম , কাপা কাপা হাতে ফুল দিয়ে বললাম,
— অ অভিনন্দন স্য স্যার
“”তাড়াতাড়ি করে মালাটা পরিয়ে দিয়ে সরে এলাম, কারন এই লোকটার সামনে গেলেই আমার বুক ধরফর করে বলেই নিচে নেমে গেলাম,তখন হটাৎ মনে হলো কেউ এক ধ্যনে তাকিয়ে আছে,আমি জানি না কেন ওই লোকটার দিকেই আগে তাকালাম তাকিয়ে দেখি উনি স্যার এর সাথে কথা বলতেই ব্যাস্ত, তাহলে আমার কেন মনে হলো গভির ভাবে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে? এসব ভাবতে ভাবতেই চেয়ার এ গিয়ে বসলাম, তখন স্যার বলে উঠলেন

“”তোমাদের মধ্যে কিন্তু এমন একজন আছে যে,আয়ান আরাভ চৌধুরীর স্পেশাল অনেক, বলতে গেলে ওনার অনেক কাছের
“”সবার মধ্যে শোরগোল পরে গেলো কে সে, ছেলে নাকি মেয়ে , আর সে এখন কোথায়
“” এর মাঝেই দেখলাম মাইক নিয়ে কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে লোকটা,
“” স্টুডেন্ট তোমরা অনেক শার্প , আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ কিন্তু তোমাদের মাঝেই আছে,বাট বাট সে শুধু আমার জন্যই স্পেশাল কারন সেও তোমাদের মতো একজন স্টুডেন্ট, আর বড় কথা হলো সে আমার কাছের মানুষ বলে যে তাকে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিবে এমন না, আমি চাই তোমরা যেভাবে চলবে যা ফেবার পাবে সেও সব পাবে ,
এদিকে আমি ভাবছি একদম ঠিক আছে শুধু ক্রাশ ক্রাশ আরো খাও ক্রাশ, নিশ্চই বেটার বউ এর কথা বলছে, তবে যেমন খারাপ ভেবেছিলাম লোকটা তেমন না গম্ভির হলেও অহংকারি না,এর মাঝেই শুনলাম মেয়েরা কানা কানি করছে, রেগে মেগে বোম, আমি এসব দেখে মুখ টিপে হাসছি
“” তো সেই মানুষ টা হলো আমার জান, আমার প্রান, আমাদের দুই ভাইয়ের প্রিন্সেস সে হলো মায়া চৌধুরি, আমার চোখের মনি,
“” এদিকে সবাই মায়ার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে, কারন একটু আগেই অভিন্দন জানাতে গিয়ে এই নামটা রিপিট হয়েছে তাই কারোই চিনতে অসবিধা হয় নি,
— ওয়েট এভরিওয়ান,আমি কথাটা এই কারনেই বললাম কারন এই ভার্সিটির ছাত্র ছিলাম আর ভিপি যেহুত তাই এইখানের সব খবর কিন্তু আমার কানে যায় সো কোন রেগিং এর নামে মেয়েদের সাথে অস্যভ্যতা আমি টলারেট করবো না, আই ওয়ানা স্পেয়ার আর!!
“” ওনার ঠান্ডা থ্রেট শুনে আমি নিজেই ঢোক গিলে নিলাম,কারন যারা এই কাজ গুলো করতো তারা অলরেডি কেটে পরেছে, যাক এখন আর এই রেগিং এ পরতে হবে না, এর মাঝেই দেখলাম মায়ার চেয়ার ফাকা এমা মেয়েটা গেলো কোথায়, সামনে তাকিয়ে দেখি কি সুন্দর ভাইয়ের হাত ধরে আছে, কি সুন্দর লাগছে ওদের ভাই বোনের জুটি, ইশ আমার ও যদি এমন একটা ভাই থাকতো যে আমাকে আগলে রাখতো, কি যে ভাবছি আরে আমার সামিয়া আপুই বা কম কিসে
—এই এই আপনার কাজ নেই অফিসে গিয়েও জালাচ্ছেন (তুবা)
— ওপাস থেকে কি বললো শুনলাম না, কিন্তু তুবার মুখে মুচকি হাসি জানান দিচ্ছে সে কতটা খুশি,
— আমি মুচকি হাসলাম ওদের কান্ড দেখে আসলে তুহিন ভাইয়া ফোন করে তুবাকে লজ্জা দিচ্ছে আর ও ঝগড়া করছে,চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলাম মায়া স্টেজ থেকে নামার সময় হুট করেই শাড়ির আচল জরিয়ে পরে যাওয়ার সময় কেউ দুই হাতে আগলে নিয়েছে, আর মায়া চোখ বন্ধ করেই সেই মানুষটাকে খামছে ধরে আছে, ভাগ্যিস সিড়ি গুলো সাইডে ছিলো নাহলে এখনে পরলে মেয়েটা অনেক লজ্জা পেত, এত গুলো মানুষ এর সামনে লজ্জা পাওওয়া মোটেও একটু কথা না! “”
আমি তাড়াতাড়ি ওঠে মায়ার কাছে গেলাম, কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই শুনতে পেলাম
— তুই কি সারাদিন লাফালাফির মধ্যেই থাকিস,আর শাড়ি যখন সামলাতে পারিস না তাহলে কেন পরেছিস, ওয়াই কথা বলছিস না কেন তুই ( হালকা চেচিয়ে)
— আমি অবাক হয়ে গিয়েছি কে উনি আর ওকেই বা এভাবে ধমকাচ্ছে কেন, আমি কিছু বলবো তার আগেই মায়া চোখ খুলে হা হয়ে বলে আবির ভাই 😮,
— হ্যা আমি তুই কি ঠিক হবি না কোন দিন মায়া,! কেন তুই এত বাচ্চামি করিস
— আমি আপনার সাথে কোন কথা বলতে চাই না, ছাড়ুন আমায়, ছাড়ুন বলছি
— এত তাড়া বাহ আগে তো আমার পিছন পিছন সারাদিন জামাই জামাই করতি এখন কি হলো
— জিবনটাই যে আগের মতো নেই, ” আগের মানুষটা আমাকে কেয়ার, আদর, শাষন করতো কিন্তু এই মানুষটা ভিন্ন, সে নেই আগের মতো ( হতাশার সুরে বির বির করে)
— মায়া নিজেকে ছাড়িয়ে সামনে হেটে গেলো আবির নামের ছেলেটাও ও গেলো আর আমি যে এদিকে ছিলাম এরা কেউই আমাকে খেয়াল করে নি, তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছি কোন ঘাবলা তো অবস্যই আছে, ইশ আমি কি ভেবেই চলবো এদিকে তুবা ফোন কানে দিয়ে কোথায় চলে গেলো আর এখন এই মেয়েটা যাই দুজন কেই খুজি,বলেই বেরিয়ে যেতে নিতেই পিঠের দিকটায় টান খেলো, আমি হাত দিয়ে দেখি আমার ব্লাউজের ফিতা খুলে গিয়েছে, হায় আল্লাহ আমি এখন কি করবো, এটা তো পুরোপুরি হালকা হয়ে গিয়েছে,গাল গরিয়ে গরম অশ্রুকনা টপটপ করে অবিরাম পরছে, কি করবো আমি ভেবেই ভাবলাম লাইব্রেরি রুমে তো কেউ নেই এখন ওইখানে যাওয়াই আমার আসল কাজ, আস্তে করে পিঠে হাত দিয়ে উঠে এলাম দ্বিতীয় তলার লাইব্রেরি রুমে কিন্তু এখানে অনেক অন্ধকার এক এ তো এই ঝামেলা তার ওপর অন্ধকারকে আমি ভয় পাই, এখন ভয় এক সাইডে রেখে আমি দড়জা হালকা চাপিয়ে ফিতা বাধাতে মনোযোগ দিলাম, কিন্তু না পেরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম, আমি তো ফোনটাও আনি নি কিভাবে কাউকে বলবো আমাকে হেল্প করতে, ভাবনার মাঝেই কেউ আমার হাত ধরে টান দিলো ভয়ে যেই না চিৎকার করবো ওমনি কেউ মুখ চেপে ধরলো
“” হুসসসস কোন কথা নেই, আমি যা করবো তুমি চুপচাপ সহ্য করবে কারন তুমি আমাকে এলোমেলো করে দিয়েছো
“”” আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি শেষের কথাটা শুনে চোখ খুলে সরে আসতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না, মানুষটা তার বুকের সাথে আমার পিঠ দেয়া, আমাকে চেপে ধরে আছে, আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে বললো,,
— উফফ জান মোচরামুচরি করবে না, যা করতে এসেছি করতে দাও
— ক কি করবেন প্লিজ আমার ক্ষতি করবেন না, আমাকে যেতে দ দিন
— ক্ষতি আর আমি আমি তোমার ক্ষতি করবো না জান বি কেয়ারফুল আর এই কথাটা যেন না শুনি,
— বলেই আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ব্লাউজের ফিতে তে হাত দিয়ে বেধে দিচ্ছে, তার ছোয়ায় আমি বার বার কেপে উঠছি, তার মাঝেই বলে উঠলেন,
— আর কোন দিন যেনো শাড়ি পরতে না দেখি,, শাড়ি সামলাতে পারো না, পেট বের হয়ে থাকে আর এখন তো এই প্রবলেম,
— তার কথা শুনে আমি এতটুকু বুঝতে পেরেছি এই সেই লোক যে আমাকে চিরকুট দিয়েছিলো,,,
— আমি নিঃশব্দে কাঁদতে থাকলাম হুট করেই আমাকে ঘুরিয়ে কপালে ভালোবাসার পরস দিয়ে দিলো আমি চমকে তাকাতেই দেখি ক্লাসরুম ফাঁকা,গেলো কোথায় লোকটা, তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছি, আমাকে খারাপ ভাবে সে স্পর্শ করেনি সে, কে উনি কেন এই একা ক্লাসরুমে পেয়েও আমাকে ছেড়ে দিলো, আর কি ছিলো তার কথায়, অধিকার নাকি ভালোবাসা কি ছিলো??

চলবে।