সে আমার মায়াবতী পর্ব-০৭

0
470

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_৭
“ভাবতে লাগলাম কিছু ঘন্টা আগের কথা,,
তুবা মায়া চলে যাওয়ার পরে যখন আমি বাড়ি ফিরছিলাম তখনি আমাকে ফোন করে সামিয়া আপু, ফোন রিসিভ করতেই বলে উঠলাম

” হ্যা আপু আসছি, আসলে আজকে মেলায় এসেছিলাম তুবা, মায়ার সাথে তাই একটু লেট হয়ে গিয়েছে, চিন্তা করো না, আমি আর কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবো,।

” ঈশা আমি রাইসা, সামিয়ার ফোন থেকে কল করেছি,

“হটাৎ করে কি হলো সেটাই ভাবছি, কারন রাইসা বা মা আমাকে কখনোই ফোন করে না, বাড়িতে সব ঠিক আছে তো? ভাবতেই জিজ্ঞাস করে ফেললাম!

” রাইসা বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো, আর মা তু!

” হ্যা হ্যা সবাই ঠিক আছে কিন্তু তুই বাড়িতে এলে কেউই ঠিক থাকবে না ”

” মানে?

” কারন রাহুল সহ সবাই এসেছে সন্ধায় এখন রাতের ডিনার করে যাবে, আমরাই ইনভাইট করেছি, তাই তুই এখন বাড়ি ফিরিস না, দেখ কোন বান্ধবির বাড়িতে থাক আমি ফোন করে দিবো তখন চলে আসিস,

” এর মধ্যেই সামিয়া আপুর গলা শুনলাম

” ও এই রাতের বেলা কোথায় থাকবে, আর পিছনের দড়জা দিয়ে ওকে আমি নিয়ে আসবো, তুই চিন্তা করিস না,এমনিতেও তুই আর তোর মা আমার বোন কে নিয়ে একটু বেশি পজেসিভ,

” না সামিয়া ও আসবে না, পাত্রের বাড়ির লোক বার বার বাড়িতে উঠা নামা করছে, এর মধ্যে যদি ওকে দেখে ফেলে ভাবতে পারছো কি হবে, আর এইসব কারনে আমি কোন মতেই রাজ্য আর রাজপুত্র হারাতে চাই না,

” দু- জন এক প্রকার ঝগড়া লেগে গিয়েছে, তাই আমি হুট করেই বলে উঠলাম

” আচ্ছা থামো তোমরা, আমি এখন আমার ফ্রেন্ডদের সাথে আছি তাই আমার সমস্যা হবে না, আমি ওদের সাথেই আছি, সামিয়া আপু ওরা চলে গেলে তুমি আমাকে ফোন করে বলো, আমি বাড়িতে চলে আসবো।

“এই কথা শুনে সামিয়া আপু রাইসার থেকে ফোন টেনে নিয়ে বললো,

” তুই কি পাগল,! সেই সকালে বের হয়েছিস কিছু না খাওয়া আর এই শিতের মধ্যে শাড়ি পরে আছি, দেখ ঈশা বাড়িতে চলে আয়,

” চিন্তা করো না আমি ওদের সাথে আছি, ঠিক সময় চলে আসবো, এখন রাখছি, ওরা ডাকছে

” এই ঈসা এই শোন, যাহ কেটে দিল,

“তোর আর তোর মায়ের জন্য যদি ওর কিছু হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়বো না,

” বলেই সামিয়া আপু রেগে ঘর ছেড়ে নিজের রুমে গিয়ে দড়জা দিয়ে দিলো,
রাইসা মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো,

” এ্য জন্ম পরিচয়হিন একটা মেয়ের জন্য কি দরদ, ঢং, যাই সুন্দর করে সেজে ফেলি, লা লালা লা, হুম হুম্মু

” গুন গুন করতে করতে চলে গেলো,
আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছি আমি এখন কোথায় যাবো, না না আমার জন্য আমার বোনের বিয়ে ভাংগুক আমি চাই না, মা কস্ট পাক! ভাবতে ভাবতে দেখলাম মাত্র ৮ টা বাজতে চললো, এখন কোথায় যাবো ভাবতে ভাবতেই মনে পরলো সামনেই তো একটা পার্ক আছে, তাই আপন মনে পার্কে চলে গেলাম, ভয় পেলেও দেখলাম হালকা লাইট এর মধ্যে দু-চার জন কাপল আছে, তাই শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বসে রইলাম, আস্তে আস্তে যে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম টের পেলাম না, শিত শিত অনূভতি হতেই লাফ দিয়ে উঠলাম, হায় আল্লাহ মোবাইল অন করে দেখি ১০টার কাছাকাছি, আমি দ্রুত ফোন নিয়ে সামিয়া আপুকে কল করলাম কল বিসি দেখাচ্ছে নিশ্চিত সায়ন ভাইয়ার সাথে কথা বলছে, একে একে রাইসা, বড় আম্মু সবাই কে কল করলাম, কেউ ফোন তুলে নি, আমি কি করবো ভাবতে ভাবতেই দেখলাম ৩ টা লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে, লাইটের আবছা আলোতে বুঝতে পারলাম মাতাল অবস্থায় আছে, আমি ভয় পেয়ে শাড়ি খামছে ধরলাম

” কি গো সুন্দরি এত রাতে এহানে কি করো,

আরেক জন বলে উঠলো।

” ওওও কাস্টমার পাও নাই বুঝি, সমস্যা নাই আমরা আছি, রেট বলো সবাই আলাদা করেই দিবো, এক রাত থাকলেই হইবো,

“এই কথা শুনে আমি কেঁদে দিলাম, এত জঘন্য কথা বলছে আমাকে, আমি কিছু না ভেবেই শাড়ি উচু করে পালাতে লাগলাম, এর মধ্যেই শুনতে পেলাম ওরা বলাবলি করছে,,

” মাইয়াডা খাশা আছে, আমরা এক রাইত রাইখা বসের কাছে দিয়া দিমু, বস খুশি হইবো

” হ, আর মেলা টাহাও দিবো

“আমি প্রান পনে ছুটে চলেছি প্রায় দশ মিনিটের মতো, কোন গলিতে এসেছি নিজেও জানি না, চারদিকে তাকিয়ে দেখি অন্ধকার, এর মধ্যেই সুনলাম

“আরে ওই তো মাইয়াডা, ধর ধর,

“ভয়ে আমার কলিজা কেপে উঠলো, দিক বেদিক ভুলে দৌরে মেইন রাস্তায় চলে এলাম হুট করেই একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে মাটিতে পরে গেলাম, উঠতে গিয়ে বুঝতে পারলাম হাতে বেশ ভালোই আঘাত পেয়েছি, তবুও নিজেকে বাচাঁতে হবে তাই ব্যথা ভুলে উঠে দাড়াতেই দেখলাম লোক গুলো এগিয়ে আসছে কোন কিছু না ভেবেই সামনের লোকটাকে জরিয়ে ধরে বলতে শুরু করলাম!

“আ আমা কে হে হেল্প করুন প্লিয, ওরা ওরা আমা কে

” বলেই কেঁদে উঠলাম, হটাৎ করেই তিনটি শব্দ শুনে চমকে উঠলাম, পেছন ফিরে দেখি তিন জন মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে, আমি ভয়ে মুখে হাত দিয়ে ফেললাম,মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না, আচ্ছা উনি কি আমাকেও মেরে ফেলবেন ভাবতেই সরে আসতে চাইলে লোকটা চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়, আমি চোখ তুলে তাকাতেই দেখি মি:চৌধুরি, আমি অবাক হয়ে কিছু ভাবার আগেই শুনতে পেলাম

“স্যার স্যার আর হইবো না, এবারের মতন মাফ কইরা দেন, আর আমরা এই কাম করমু না,

“এর মধ্যেই উনি রাশভারি কন্ঠে বলে উঠলেন,

” যা ছেড়ে দিলাম, আর যেন না দেখি,

” বলতে বলতেই আমি খেয়াল করলাম মোবাইলে কিছু টাইপ করে বাকা হাসছে, লোক গুলো কোন মতে উঠে দাঁড়িয়ে পালিয়েছে, আমাকে হুট করেই বলে উঠলেন

” এই মেয়ে এখন কয়টা বাজে, এত রাতে বাহিরে কি হ্যা,( চিল্লিয়ে)

” আ আমি

” বলতে বলতেই কেঁদে উঠলাম ওনার ধমকানিতে,

” এই তুমি কাদঁছো কেন, আমি কিছু বলেছি,?

“ধমকাচ্ছেন কেন, আমি কিছু করে নি তো

” আমার কথা শুনেই লোকটা ঠোট কামড়ে হাসলেন,
আমাকে বললেন।

” গাড়ি তে উঠো, বাড়ি পৌছে দিবো,

“আমি জানি এইখানে আমাকে কেউ সাহায্য করবে না, কারন কেউ নেই আশে পাশে তাই ভেবে চিনতে গাড়িতে ওঠার জন্য পা বাড়াতে,

” আহহ

“কি হয়েছে,ব্যথা পেয়েছো, কথা বলছোনা কেন?

“আপনি বলার সুযোগ দিলে তবে তো বলবো,।

“আচ্ছা এসো,

” কোন মতে হেটে গাড়িতে উঠলাম, হেটে বুঝতে পেরেছি পায়ে ও ব্যথা পেয়েছি, উনি আমার দিকে এক পলক তাকিয়েই আমার কাছে এগিয়ে এলেন।

“আমি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম, উনি বলে উঠলো,,

” এই মেয়ে তুমি এত বেশি ভাবো কেন, সিট বেল্ট বাধো নি কেন তাই আমি বেধে দিয়েছি, তোমরা মেয়েরা কি একটু বেশি ভাবো নাকি,,

“আমি ওনার কথায় হা হয়ে আছি, লোকটা কি বললো,, এর মধ্যেই টের পেলাম গাড়ি চলতে শুরু করেছে,,এক এক করে সন্ধার কথা গুলো ভেবে চলছিলাম,, এর মধ্যেই মনে হলো হাতে কেউ গরন খুন্তি লাগিয়ে দিয়েছে, হালকা চেচিয়ে কেঁদে দিলাম, চোখ পিট পিট করে দেখলাম লোকটা হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে, আমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম,উনি বেশ কাছে এসে গালে হাত দিয়ে বলতে শুরু করলো

“বেশি ব্যথা করছে জা!

” কিছু বলতে গিয়েই থেমে গেলেন, আমি সরে আসার আগেই হাত সরিয়ে নিলেন, তারপর বললেন,,

“বাড়ি যেতে পারবে? নাকি হেল্প করবো?

“আমি কাদো কাদো সুরে বললাম

” প্লিজ আপনি আমাকে এই মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিবেন না, আমি খুব ভয় পাবো, প্লিজ আমার বাড়িতে একটু লিফট দিন,

” লোকটা আমার দিকে কেমন করে তাকিয়েই যেনো হা হা করেই হেসে দিলেন, আমি তাকিয়ে দেখছি আসলেও মেয়েরা তার প্রতি কেন ফিদা,মানুষটা কি সুন্দর হাসে,এর মাঝেই ভাবলাম আমাকে কি সত্যি গাড়ি থেকে নামিয়ে দিবে?

“এই মেয়ে কি ভাবো এতো?
তাকিয়ে দেখো তোমার বাড়ির সামনেই আছি,

” ওহহ, হ্যা😯 আমি তো আপনাকে আমার বাড়ির ঠিকানা বলি নি, কিভাবে চিনলেন,

“এই আয়ান আরাভ চৌধুরীর পক্ষ্যে কিছুই অজানা নয়, এবার আসতে পারো,,

” কেমন লোক রে বাবা কিভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছে, আমি মুখ ভেংচি দিয়ে যেন না নামতে যাবো ওমনি দেখি সামিয়া আপু আর বড় মা দৌরে আসছে।

” ঈশা কি হয়েছে, কিভাবে ব্যথা পেলি, আমার কত টেনশন হচ্ছিল,

“মা রে তুই এত দেরি করলি কেন, ফোন ধরিসনি কেন ( কান্না করে দিয়ে)

” তাকিয়ে দেখলাম ফোন বন্ধ হয়ে আছে, তখন হাত থেকে পরেই এই অবস্থা হয়েছে বুঝতে পারলাম,

“আপু বড় আম্মু কিছু হয় নি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

” সামিয়া আপু আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিলেন,
বড়আম্মু মি:চৌধুরী কে বলে উঠলেন,

“বাবা আমার মেয়েটাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ,

“মেনশন নট আনটি, এটা আমার কাজ ছিলো, আ আই মিন দ্বায়িত্ব ,

“আচ্ছা বাবা ভালো থাকবে।

” বলেই আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি হালকা ঘুরে মুচকি হাসি দিয়ে বলি,

” ধন্যবাদ চৌধুরি সাহেব।

” বলেই বেড়িয়ে গেলাম আর ওনার ফোন এ একটা কল এলো, ফোন কানে দেয়ার সাথে সাথে একজন বলে উঠলো

” স্যার মেম এর বোন কে কল করে বলেছি, আপনি যা বলতে বলেছেন

” গুড,

” বলেই ফোন কেটে বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বলতে শুরু করলেন,

“কি জাদু করেছো শ্যামবতি,তোমার দহনে আমি বার বার পুড়ছি,বাচ্চামি,বোকা চাহনি,মুচকি হাসি উফফ এক দিনেই এই আরাভ চৌধুরী কে পাগল করেছো,তোমার নিস্তার নেই মায়াবতি, আমার ভালো থাকার জন্য চাই মায়াবতি, হ্যা আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমার মায়াবতি , চাই চাই তোমাকে আমার।

চলবে।