সে আমার মায়াবতী পর্ব-১০

0
485

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১০
আজ আপুর বিয়ের শপিং করার জন্য আমরা সকলে একসাথে বের হয়েছি। আমি সামিয়া আপু, রাইসা, তুবা, তুহিন ভাইয়া, মায়া, আবির ভাইয়া, সায়ন ভাইয়া আর
মিঃ চৌধুরী, যেহুত আপুর এক্সাম আর ভাইয়ার বিসন্যাস ট্রিপ শেষ তাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি করিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু এর মধ্যে একটা জিনিস আমি খেয়েল করেছি, আমি যখনি বাড়ির বাহিরে বের হই তখনি আমার মনে হয় আমার পেছনে কেউ আছে,। এমনটা গত এক সপ্তাহ ধরে হচ্ছে। আচ্ছা কেউ কি আমাকে ফলো করে?

” এই মেয়ে সারাদিন কি ভাবো হ্যা লিফট চলে গেলো তোমার জন্য, সবাই চলে গিয়েছে এতক্ষনে,। এই সারাদিন কি এত ভাবো তুমি,

” হটাৎ করেই মিঃ চৌধুরীর কথায় ভয় পেয়ে গেলাম, সত্যি তো আমি এত ভাবনার তলিয়ে ছিলাম যে আমাকে ছেড়েই সবাই চলে গিয়েছে, আশা পাশে তাকিয়ে দেখি গার্ড এ ভর্তি, আমিও তাই কিছু না বলে আস্তে করে বললাম!

— সরি

এর মাঝেই রাইসা বলে উঠে এই তুই সরি ছাড়া আর কি বলতে পারিস হ্যা, দেখলি তো তোর জন্য পিছিয়ে গেলাম। এখন দাড়িয়ে না থেকে চল।

— রাইসা এই লোকটার সামনেও আমাকে এভাবে বললো?

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে লিফটে ওঠার সাথে সাথে উনি বাটন প্রেস করে দিলো, আর রাইসা বাহিরে থেকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমার ও সেম অবস্থা কিছু বলবো তার আগেই হটাৎ লিফট অন অফ হতে শুরু করলো আমি ভয়ে এক কোনায় চলে গেলাম, হটাৎ একেবারেই অফ হয়ে গেলো। আমি ভয় পেয়ে নিচে বসে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম, আচমকা কেউ আমাকে টেনে তার বুকে জড়িয়ে নিলো। উস্ম আলিংগনে আমিও শক্ত করে ধরে কেঁদে উঠলাম,শুনতে পেলাম লোকটা কিছু বলছে।

— সসস চুপ চুপ করো ঈশু পাখি, এই তো দেখ জান আমি এখেনে, ডোন্ট পেনিক, কিচ্ছু হবে না, জান প্লিজ কেঁদো না, এক্ষুনি খুলে যাবে, জাস্ট ওয়েট পাখি, সস এই যে তাকাও

এর মধ্যেই লাইট চলে এলো, আমি অজান্তেই লোকটার দিকে তাকালাম আচ্ছা ইনি কি কথা গুলো আমাকে বলছিলো, শুভ্র সার্টের, সিল্কি চুল আর ঘন চোখের পাপড়ির লোকটা কি সত্যি মিঃ চৌধুরী নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি ,
ভাবনার মাঝেই লিফট খুলে গিয়েছে আমি কোন মতে সামনে তাকাতেই দেখলাম অনেক লোক আর মিঃ চৌধুরী গার্ড দাড়িয়ে আছে, তাড়া লোক গুলোকে সরানোর চেস্টা করছে। এর ভিতর আপু সহ সবাই দৌরে এলো আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিচ্ছে, তুবা মায়া ও এলো, আপু মিঃ চৌধুরী কে বলে উঠলো,

— অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, আসলে ও অন্ধকারে অনেক ভয় পায়, আজ আপনি না থাকলে জানতাম না আমার বোনটার কি অবস্থা হতো,

— ইটস ওকে ভাবি, এটা আমার দায়িত্ব ছিলো,এবার চলুন আমরা শপিং করি,।

আমি ভাবছি সব কিছুই কি লোকটার দায়িত্ব থাকে?কিন্তু লিফটে কি বলছিলো উনি। লিফট থেকে বের হতেই মেয়েরা সেলফি তোলার জন্য ভির করতে লাগলো গার্ডরা কোনমতে আটকে রেখেছে আমি এসব দেখে একটা মুখ ভেংচি দিলাম।
একে একে শাড়ি, গহনা, কসমিটিক্সস, জুতা সব কেনা হচ্ছে, সবাই মেহেদি,হলুদ এর জন্য মেচিং কিনলেও বিয়ে বউ ভাতের জন্য আলাদা , আর সবাই যেহুত কাপল তাই তাদের গুলো সেম, আমিও নিয়েছি কিন্তু খুব কম, রাইসা যা পাচ্ছে তাই নিয়ে নিচ্ছে। আর যাই হোক এত বড় সুযোগ হাতছাড়া করলে ওরি লস, সব কেনা শেষ হতেই সবাই খাওয়ার জন্য ফুড জোন এ যেতেই আমার চোখে একটা মিস্টি কালার সাদার মিক্সিং পাথরের শাড়ি চোখে পরলো,মুগ্ধতার চোখ আটকে গেলো শাড়িটির মাঝে, তবুও ভাবলাম এই শাড়িটা আমার চাই, আমি যেই না আগাতে যাবো ওমনি সবাই ডাকাডাকি করলো,তাই ভাবলাম যাওয়ার সময় নিয়ে নিবো।
একে একে যে যা খাবে সব অর্ডার করার পর খাবার চলে এলো, সবাই খাচ্চে কিন্তু এত স্পাইসি আমি খেতে পারি না কিন্তু কিছু বলতেও পারছি না কারন আপু ভাইয়ার সাথে কথা বলছে কিছু না ভেবে এক চামচ স্যুপ মুখে দেয়ার আগেই কেউ চামচ টেনে নিয়ে গেলো, সামনে তাকাতেই দেখলাম মিঃ চৌধুরী রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি কি করেছি?

— এই মেয়ে তুমি স্পাইসি খেতে পারোনা তবুও কেন খাচ্চো। তোমাকে কি কেউ জোর করেছে, কি হলো এখন কথা বলছো না কেন?
আপনি সব সময় এমন এই মেয়ে এই মেয়ে কেন করেন?
এই আমার কি নাম নেই? শুনুন মিঃ চৌধুরী আমার একটা সুন্দর নাম আছে আর তা হলো!

— ঈশু পাখি আমার ঈশু পাখি, আমার মনে আর রাজ্যে শুধু তারই বিচরন ( বিরবির করে)

— এই যে আপনাকে বলছি কি এত বিরবির করছেন? এই আপনাকে ভুতে ধরেছে নাকি? প্লিজ আমাকে কিছু করবেন না। আমি কিছু করি নি মিঃ চৌধুরী।

— মিঃ চৌধুরী? বাহ খুব সুন্দর নাম তো, আই লাইক ইউর এংরি ফেস। যে আরাভের সামনে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারে না। তুমি মেয়ে দেখি তাকেই বস করে নিচ্ছো।( বাকা হেসে)

— আমি আসলে!

কথার মাঝেই হুট করে ওয়েটার কেসোনাট সালাদ, চকলেট হট আইস-ক্রিম, মেক্সিকান পাস্তা নিয়ে হাজির। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে এতক্ষনে সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো ভাবতেই লজ্জায় গাল গরম হয়ে এলো, কিন্তু আমি তো এগুলো অর্ডার করি নি আর সবচেয়ে বড় কথা এগুলো তো আমার ফেভরেট খাবার। এগুলো কি আপু অর্ডার করেছে নাকি উনি? ভাবতে পারছিনা কিছু সব তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে। হটাৎ ভাবনায় ছেদ পরে আপুর কথায়।

— ঈশা আম সো সরি বোন আমার আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম তুই স্পাইসি খেতেই পারিস না, প্লিজ বোন আমার রাগ করিস না।

— আব না না আপু রাগ করি নি, আর এইগুলো কি তুমি অর্ডার করেছিলে?

— না আমি তো করি নি। ইভেন এখানের সব তো স্পাইসি, তুই খাস না এগুলো।

— নো ভাবি এগুলো আলাদা রান্না করা , ঝাল নেই এতে, আর তোমরা খাওয়া শেষ করো আমি একটু আর্জেন্ট কল করে আসছি,।

— উনি ফোন নিয়ে চলে যাওয়ার পর যে যার মতো খেতে বসে পরে, এর মধ্যে আমি খেয়াল করেছি লোকটা আসলেই অদ্ভুত,

খাওয়ার পালা শেষ করে একে একে আবার সব ঘুরে নেয়ার সময় আমার মনে পরলো শাড়িটার কথা, আমি তাড়াতাড়ি করে দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বলে!

— আপু শাড়ি টা মাত্র সেল হয়ে গিয়েছে।

— আচ্ছা এটার কি আর হবে না, মানে আর আছে?

— না আপু। উই আর সো সরি, আসলে যে ভদ্রলোক শাড়িটা নিয়েছে উনি নিশ্চিত তার প্রেয়সিকে ভালোবাসে,। কত যত্ন কিনেছে। আর ফুল প্রাইসে নিয়েছে, সরি ম্যম।

— ওহ আসলেই মেয়েটা ভাগ্যবতি। শাড়ি আর মনের মানুষ দু-জনই আছে৷ ( মুচকি হেসে)

— ম্যম অন্য শাড়ি দেখাচ্ছি?

— নো নো কস্ট করতে হবে না। আমি আর নিবো না।

বলেই মন খারাপ করে চলে আসলাম আপুর কাছে।

— কিরে কোথায় ছিলি? খুজছিলাম তো।

— আপু এইখানেই ছিলাম।

— ঈশা মন খারাপ নাকি? কেউ কিছু বলেছে? বলো ভাইয়া কে?

— না আবির ভাইয়া কিছু হয় নি।

— গাইস উই আর টু লেট, পরসু থেকে রিচোয়েলস শুরু তাই চলো আজকে আর কালকের দিনটাই আছে,

মিঃ চৌধুরীর কথায় সবাই সায় জানিয়ে চলে গেলে আমিও মন খারাপ করে হাটতে লাগলাম। একে একে গাড়িতে সবাই এলেও এখন জায়গা নেই শুধু আমার বেলায় কারন সবার শপিং বাড়ির শপিং সব মিলিয়ে এক গাড়ি বুকিং হয়ে গিয়েছে। আমরা যেহুত ভাইয়ার গাড়িতে এসেছি তাই যেতে পারছি না, কস্টে রাইসা চেপে বসেছে কারন এত খেয়ে ওর পক্ষ্যে গাড়ির জন্য ওয়েট করা পসেবল না। মিঃ চৌধুরী আর আমি বাদে যে যার যার গাড়িতে চলে গিয়েছে। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম

— শুনছেন?

— হুম বলো। ( মোবাইলে স্ক্রল করতে করতে)

— আপ আপনার গাড়ি কখন আসবে? আমার না ঘুম পাচ্ছে। ( হাই তুলে)

ওনি হুট করেই আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— তোমার এই সন্ধ্যা বেলা ঘুম পাচ্ছে লাইক সিরিয়াসলি?

— আজব তো ঘুম কি দিন আর রাত দেখে আসে নাকি? মিঃ চৌধুরী আপনি না বেশি বোঝেন।

কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বলতে পারলাম না, অন্য কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই গাড়ি চলে এসেছে।
কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসলাম, এত প্রেশার এ মাথা ব্যথা ও প্রচুর করছে।
গাড়িতে ওঠার সাথে সাথেই সিট বেল্ট লাগিয়ে নিলাম এক ভুল দ্বিতীয় বার করি না হু,। জল্পনা কল্পনার মাঝেই যে গভির ঘুম এ তলিয়ে যাবো কে জানতো?
মিঃ চৌধুরী ফোনে কথা বলা শেষ করেই গাড়িতে উঠে দেখে আমি ঘুমোচ্ছি। তাই ঠোট কামরে হেসে ড্রাইভ করা শুরু করলো।প্রায় আধ ঘন্টা গাড়ি চলার পর রাস্তার এক সাইডে গাড়ি থামিয়ে লোকটা তার প্রেয়সিকে দেখতে ব্যস্ত।

— ঈশু পাখি তুমি কি জানো তুমি কি বাচ্চা? এই যে কথায় কথায় ঠোট ফুলাও, রাগি চোখে তাকাও, মুখ ভেংচি দাও এগুলো কেন করো বলো তো? আমি যে কত কস্টে নিজেকে সামলাই সেটা তুমি বুঝতে পারবে না জান। দেখো আমাকে পাগল করে দিয়ে কি সুন্দর নিশ্চিত হয়ে ঘুমাচ্ছো। আচ্ছা জান আমি তো খুব কস্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছি। কবে পাবো আমার ছোট পরিটাকে আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে তো।

উনি নিজের মত বক বক করতে করতে দেখলেন আমার ওরনা এক সাইড থেকে সরে গিয়ে জামার হাতা সরে ফর্সা কাধ দেখা যাচ্ছে,

— উফ জান আমাকে সিডিউস করতে চাইছো? ঘুমের মাঝেই? নট গুড জান।

বলেই এক হাতে টেনে নিয়ে আমার জামা ঠিক করে ওরনা দিয়ে দিলেন। কপালে গভির চুম্বন করে জড়িয়ে রেখে ড্রাইভ করতে করতেই বললেন।

— আমার স্লিপিং বিউটি। অনলি মাই। দিস প্রিটি গার্ল ইস মাই, কুইন। লাভ ইউ জান, আই রিয়েলি লাভ উইথ ইউ।

চলবে।