সে আমার শরৎফুল পর্ব-৪+৫

0
131

#সে_আমার_শরৎফুল #পর্ব_৪

#আরশিয়া_জান্নাত

হ্যালো আব্বু, আস্সালামু আলাইকুম কেমন আছ?

ওয়ালাইকুমুস্সালাম, ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ তুই কেমন আছিস?

ভালো। বাসায় সবাই ভালো?

হ্যাঁ। খাওয়া দাওয়া করেছিস?

নাহ মাত্রই ক্লাস থেকে বের হয়েছি, দেখলাম কল করেছ।

আজ তোর ক্লাস ছিল? তোর না বুধবারে ক্লাস থাকেনা!

হ্যাঁ থাকেনা। আজকে নিলো।

ওহ, আচ্ছা। ঠিক আছে বাসায় গিয়ে খেয়ে দেয়ে নে। পরে কথা বলবো।

আচ্ছা আব্বু। রাখছি। আল্লাহ হাফেজ

আল্লাহ হাফেজ।

ফোন রেখে তৃণা মাঠের দিকে তাকালো। রুপা, তানজিনা, ঊর্মি সব ঐখানে জট পাকিয়ে কি নিয়ে যেন হাসছে। তৃণা সেদিকে এগোতেই তানজিনা বলল, তৃণা শুনেছিস রাতুল নাকি আজ এক জুনিয়র মেয়েকে প্রপোজ করেছিল।

পছন্দ হয়েছে করেছে। তো কি হয়েছে?

ওমা তুই জানিস না? রাতুল না কয়দিন আগে অর্ণির জন্য হাত কাটলো! এরই মধ্যে ভালোবাসার মানুষ চেইঞ্জ?

রুপা বলল, আরেহ ওর কাজ হচ্ছে টোপ ফেলে রাখা, যাকে পায় তাকেই চাই! হালা ছ্যাঁচর,,

একদম ঠিক বলছোস।

ঐ দেখ দেখ এদিকেই আসতেছে, আজকে ওরে দেখবি কি পচানিটা দেই।

তৃণা হাই তুলে বলল, তোরা এসব নিয়েই পড়ে থাক। আমি যাই।

আরেহ দাঁড়াস না, ওর আবার তোর সামনেই যা একটু লাজ হয়। আমাদের কে থোরাই পাত্তা দিবে। তুই থাক।

রাতুল হাসিহাসি মুখ করে এসে বলল, তৃণলতা কেমন আছ?

তৃণা নাক কুঁচকে বলল, তোকে কয়বার বলেছি তৃণলতা ডাকবি না? আমায় কি তোর ঘাস মনে হয়?

রুপা বলল, ও গরু তো তাই চোখে যেমন ঘাস ই দেখে মাথায়ও ঘাস সম্পর্কিত শব্দ ঘুরে।

সবাই হেহে করে হেসে উঠলো। রাতুল সেসব গায়ে না মেখে বলল, এক মহৎ ব্যক্তি বলেছেন রমণীদের কাজই হচ্ছে হেহেহে করে হাসা। এখন তার জন্য যাই করা হোক পুরুষদের ওসব গায়ে মাখতে নেই।

তানজিনা, ঐ মহাপুরুষের নাম কি রাতুল সর্বাকান্ত?

ধুর পাগলি সর্বাকান্ত বলে কিছু নেই। যাই হোক আমি কথা বলছিলাম কি তোরা নিয়ে গেলি কোথায়!

প্রান্ত এসে বলল, মাম্মা তোরা এখানে কি করিস? চটজলদি ক্যান্টিনে চল।

কেন রে ঐখানে কি তোর গফের মেজবান দিছে?

ধুর রুপা কিসব অলুক্ষণে কথা বলোস। আমার গফ মরবে কেন! আজকে নতুন একটা তেলেভাজা আইটেম করছে, সেই টেস্ট। চল গিয়ে খাই।

প্রান্ত খাদ্যরসিক ছেলে। খাবার নিয়ে তার এক্সট্রা কনসার্ন। কোথায় কি বেস্ট পাওয়া যায় তাই নিয়ে সে বিজি থাকে। প্রান্তের শরীরটাও জানান দেয় সে এই বিষয়ে কতোটা সিরিয়াস,,,

তানজিনা বলল, তৃণা চল তো, এদের চক্করে পড়লে আমার ডায়েট শেষ। তুই তো হলেই ফিরবি?

হুম চল।

ওদেরকে রেখে তৃণা আর তানজিনা হলের দিকে ফেরে। তখন তানজিনা বলে, শুনলাম তুই নাকি কার প্রেমে পড়েছিস? সত্যি নাকি?

ঐটা আমিও অনেকবার শুনেছি।

মজা না, সত্যি বল।

কার থেকে শুনেছিস তার উপর রিপ্লাই ডিপেন্ড করছে।

রুপা বলেছে,, তুই নাকি ওকে নিয়ে দেখাও করতে গিয়েছিস।

ওহ! রুপার থেকেই আশা করা যায় এটা। গিয়েছিলাম বই আনতে আর ও বানিয়ে দিলো প্রেমে পড়েছি!

ওর ধারণা বইটা জাস্ট ওকে দেখানোর বাহানা ছিল।তোদের মধ্যে আরো অনেক কিছু ঘটেছে।

হ্যাঁ অনেক কিছু ঘটেছে, কয়দিন পর দেখবি আমার কোলে বাচ্চাও আছে। রুপা তো পারলে এটাও দেখিয়ে দেবে তোদের!

রেগে যাচ্ছিস কেন? প্রেমে পড়া খারাপ না। আমরা সবাই এডাল্ট এখন।

দেখ তানজু ভুলবাল কথা ছড়ানো আমার পছন্দ না। রুপা সবসময় এটা করে। জাবেদ ভাইয়ের ব্যাপারেও ও অনেক কিছু রটিয়েছিল। ওর এই অভ্যাসটা আমি বুঝিনা। মিথ্যে বলে লাভ কি? শুধুমাত্র অনুমান করে কথা ছড়ানোর যৌক্তিকতা কি? আজ আসুক না রুমে ওর একদিন কি আমার একদিন।

তৃণা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমে চলে গেল।


ইরহামের দিন কাটছে চরম ব্যস্ততায়। শেষ বছরের ব্যস্ততার পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানীতে ইন্টারভিউ। ইন্টার্নির জন্য টপ ফার্মগুলো অলরেডি মেধাবী ছাত্রদের এপয়েন্ট করছে। ইরহাম প্রথম সারির ছাত্র হওয়ায় তার উপর সবারই বিশেষ নজর। ইরহামও প্রাণেপণে চাইছে একটা বেটার জব পেতে। মা আর ছোটবোনকে একটা ভালো জীবন দেওয়ার জন্য হলেও তাকে সেটেল হতে হবে।

কিরে মামা কি করিস একা বসে?

এমনি বসে আছি।

চল চত্বরে? সবাই আছে আড্ডা দিবি।

নাহ রে আড্ডা দিতে ইচ্ছে করছেনা।

ইরহাম, সবসময় এমন মনমরা থাকিস না। যন্ত্রমানব হয়ে যাচ্ছিস এখনি! সামনের বন্ধুর পথ তো বাকিই রয়ে গেছে,, ছেলে হয়ে যখন জন্মেছি পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ারই ছিল আজ নয়তো কাল। তুই তো তাও অনেকটা ম্যাচিওর হবার পর বাবা হারিয়েছিস।অনেক ছেলে আছে যারা কথা শিখবার আগেই বাবাকে হারিয়েছে। এই পৃথিবীতে তারাও সংগ্রাম করছে। হেসেখেলেই করছে।

মাহিন আমি তো চাইছি নিজেকে স্বাভাবিক করতে। তাই তো ব্যস্ততা বাড়িয়েছি।

ব্যস্ততা বাড়িয়ে নিজের কি হাল করেছিস দেখেছিস আয়নায়?

জানি না রে, ভালো লাগেনা কিছু।

এভাবে বসে থাকলে ভালো লাগবেও না। চল আমার সাথে।

একপ্রকার টেনেই তাকে নিয়ে গেল। ফাহিম গিটারে সুর তুলছে, পাশেই পলাশ গান গাইছে তার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে বাকিরা,

‘তবু এই দেয়ালের শরীরে
যত ছেঁড়া রঙ ধুয়ে যাওয়া মানুষ
পেশাদার প্রতিহিংসা তোমার চেতনার
যত উদ্ভাসিত আলো রঙ
আকাশের মতন অকস্মাৎ
নীল নীলে ডুবে থাকা তোমার প্রিয় কোনো মুখ
তার চোখের কাছাকাছি এসে
কেন পথ ভেঙে
দুটো মানচিত্র এঁকে, দুটো দেশের মাঝে
বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ……

২মাস পর,
বাণিজ্য মেলায় আগের মতো আমেজ না থাকলেও এই মেলাটা এখনো নারীদের আকর্ষণের মূলবিন্দু। বাণিজ্য মেলা বসেছে শুনতেই তৃণা ও তার বান্ধবীরা বেশ তোড়জোড় করেই পলোগ্রাউন্ডে উপস্থিত হয়। রুপার সাথে তৃণা ঝগড়া যত চরমই হোক না কেন দিনশেষে তারা আবার এক হয়ে যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। মেলায় ঘোরাফেরা শেষে সিআরবির শিরিষতলায় বসে ফুচকা খেতে খেতে রুপা বলল, দোস্ত আমি তো ভেবে রাখছি বিয়ের পর কিচেনের আইটেম সব মেলা থেইকা নিমু।

ঊর্মি বলল, তুই প্রতিবছর এই কথা বলোস। বেশি বলোস দেইখাই তোর বিয়ে হয়না। আমার মনে হয় যে এখন মেলায় আলাদা কিছুই উঠেনা। সব ঘুরেফিরে আগের জিনিস। খালি দাম বাড়াইছে এটাই তফাৎ!

ঠিক বলছোস। আগে এই মেলায় আসার জন্য কতবার যে ক্লাস বাঙ্ক করছি!

তৃণা বলল, তোদের উচিত আমাদের ওখানের মেলায় যাওয়া। একেক মেলায় একেক স্টাইল। ভাদুঘরে যে বৈশাখি মেলাটা বসে এখনো গেলে ছোটবেলার আমেজ পাই। আর বিজয়মেলায় তো এলাহী কান্ড।মোটরসাইকেলের সার্কাস আর পুতুলনাচের স্মৃতি এখনো চোখের সামনে ভাসে। আমিপ্রথম যখন মোটরসাইকেলের সার্কাস দেখছিলাম ভাইরে ভাই যে ভয় পাইছি!!

তোর থেকেই আমি প্রথম শুনছি এটা। এখনো হয় এমন?

কয়বছর ধরে তো হচ্ছেনা,, করোনার পর সব কেমন যেন নেতিয়ে গেছে। তার উপর ভার্সিটির জন্য এসব আর দেখার সময় আছে?

তাও কথা।

মামা আমারটায় মরিচ কম দিবেন, আমার এসিডিটির সমস্যা।

তৃণার কথায় রুপা বলল, ঝাল ছাড়া ফুচকা খেয়ে মজা আছে?

অতিরিক্ত ঝাল খেয়ে পরের দিন সকালে….

কথাটা শেষ করবার আগেই রুপা ওর মুখে হাত চেপে বলল, পাবলিক প্লেসে বেইজ্জতি করিস না।

তৃণা হাত সরিয়ে বলল, এহহ আসছে বড়। নিজে যখন আমার নামে কথা রটাস সেই বেলা?

কয়বার মাফ চাইছি এই পর্যন্ত এখনো খোঁটা দেস!

দিমুই তো। শেষ দম পর্যন্ত দিমু।

রুপা চোখ বড় বড় করে বলল, আমি বললেই দোষ আর তুই করলে দোষ না। তাকিয়ে দেখ পেছনে কে? আমরা এখানে আসবো খবর দেওয়া হয়ে গেছে!!

তৃণা ওর কথার আগামাথা না বুঝে পেছনে তাকাতেই দেখে ইরহাম দাঁড়িয়ে আছে। তার সাথে কিছু ছেলেও আছে। তৃণা চটজলদি সামনে ফিরে বলল, আমি কিছু বলিনাই কসম! এটা নেহাতই কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু সাথের কেউই সেটা তোয়াক্কা করলোনা। রুপা হাত নেড়ে ইরহামের মনোযোগ কাড়তেই সে হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললো, আরেহ আপনারা এখানে!

আস্সালামু আলাইকুম ভাইয়া কেমন আছেন?

ওয়ালাইকুমুস্সালাম। ভালো। আপনি ভালো তো?

হ্যাঁ অনেক ভালো।

তা এখানে হঠাৎ কি মনে করে?

মেলায় এসেছিলাম।

ইরহাম উঁকি দিয়ে বললো, তৃণা নাকি?

তৃণা এবার না পারতে হাসিমুখে পেছন ফিরে বলল, কেমন আছেন ভাইয়া?

জ্বি ভালো। আপনি?

আলহামদুলিল্লাহ।

রুপা বলল, ভাইয়া বসেন না আমাদের সাথে ফুচকা খান।

নাহ, ঠিকাছে। আপনারা ইনজয় করুন।

রুপা পা দিয়ে ধাক্কা দিতেই ঊর্মি বলল, প্লিজ ভাইয়া বসেন। দরকার হলে আপনার বন্ধুদের নিয়ে আসেন। তাও বসেন!

তৃণা চোখ গরম করে ঊর্মির দিকে তাকালো। ওরা যে ইরহামকে তৃণার বফ ভেবেই এমন করছে তা ভেবেই মেজাজটাই খারাপ হচ্ছে তার। এরা কি বলতে কি বলে ফেলবে ভরসা নাই। তাই তৃণা চাইছে ইরহাম কোনো বাহানায় সরে পড়ুক।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ইরহাম চেয়ার টেনে তৃণার পাশেই বসে পড়তেই ঝালবিহীন ফুচকা মুখে তুলে তার হিচকি উঠে গেল। পাশ থেকে ইরহাম পানির বোতল এগিয়ে দিলো।ঊর্মি আর রুপা একে অপরের দিকে চেয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো। তানজিনা ওর পিঠ চাপড়ে বলল, রিল্যাক্স দোস্ত রিল্যাক্স!!

তৃণা জানে এই অনাকাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎটা কি কঠিন প্রেমের গল্প হিসেবেই না ছড়াবে! ইয়া আল্লাহ!!!

চলবে,,,

#সে_আমার_শরৎফুল #পর্ব৫

#আরশিয়া_জান্নাত

তৃণা আর ইরহাম পাশাপাশি হাঁটছে টুকটাক কথাও বলছে। চত্বর থেকে টাইগার পাস মোড় অবধি এগিয়ে দিবে এমনটাই উদ্দেশ্য। পেছনে রুপারা সবাই, রূপা কয়েকটা ছবিও তুলে নিলো। পুরোনো বৃক্ষ আর পাহাড়ের পাশ ঘেষা এই প্রশস্ত রাস্তা প্রেমিক যুগলদের জন্য বিশেষ বলা চলে! এই পথে হাতে হাত রেখে বিকেলে পাশাপাশি হাঁটতে স্বর্গীয় অনুভব হয়। যদিও তৃণা বা ইরহাম কেউই ব্যাপারটাকে ওভাবে ভাবছেনা, কিন্তু পেছনের মৌমাছির দল ইতোমধ্যেই নানা কল্পনাজল্পনা করে ফেলছে।
তৃণা শুরুতে ডানদিকে থাকলেও ইরহাম একটু পিছিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করে তাকে বা’পাশে রাখে। তখন ঊর্মি ফিসফিস করে বলল, দায়িত্ববান পুরুষ!

রুপা বললো, এখানে তো কমই দেখছিস, সেবার তো আরো অনেককিছু ঘটেছে।

ঊর্মি আগ্রহী হয়ে বলল, কি কি বলিস নি তো!

শোন রুপার চোখ ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ না। মনে রাখবি যা রটে তা কিছুটা হলেও বটে!

তানজিনা বিরক্তস্বরে বলল, তিলকে তাল বানানো তোর স্বভাব। এমনি নাচুনি বুড়ি পাইছে আরো ঢোলের বাড়ি! ব্যাপারটাকে সাধারণ ভাবেও নিতে পারতি, তার দুইবোন আছে। যাদের বোন থাকে তারা এমনিতেই অনেক বেশি দায়িত্ববান হয়। এসব ছোটখাটো ব্যাপার তাদের শিখিয়ে দিতে হয় না।সবকিছুকে টেনে প্রেমের দিকে নিস না।

তৃণা বলল, আপনি এখানে প্রায়ই আসেন নাকি?

হুম, সুযোগ হলেই আসা হয়। আমার বেশির ভাগ টিউশন এদিকে তো তাই নিয়মিত আসতে হয়।

ওহ!

ছুটিতে বাড়ি যাবেন?

হ্যাঁ। আপনি?

হ্যাঁ।

আপনি চাইলে একসঙ্গে যাওয়া যায়। একা জার্নি করার চেয়ে সঙ্গী পেলে মন্দ হয় না!

আচ্ছা তবে টিকিট কনফার্ম করতে জানাবেন।

ওকে।

তাদেরকে গাড়িতে তুলে ইরহাম দাঁড়িয়ে রইলো। গাড়ি যাওয়ার পর সেখান থেকে সরলো। টেক্সট করলো, হলে ফিরে জানাবেন।

তৃণার অনেক ভালো লাগলো ব্যাপারটা।

হলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখে ওরা তিনজন জটলা পাকিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে। সবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি এড়িয়ে তৃণা মুখ মুছে চেয়ারে বসলো। ফোন হাতে নিয়ে টেক্সট করলো, I’m at home..

রূপা বলল, ইরহাম ভাইকে মেসেজ দিলি, না?

নাহ তো!

সত্যি করে বল তো, উনার সঙ্গে তোর কানেকশন নেই! এতো বড় শহরে এইদিনেই কেন সে আসতে হলো? এটাকে নেহাতই কাকতালীয় বললেই মেনে নিবো?

তোকে মানতে বলছে কে? যা মন চায় ভাব হু কেয়ার্স?

ঊর্মি উৎসাহ নিয়ে বলল, দোস্ত এমন কেন করিস? বললে কি হয়? প্রেম করা এখন সাধারণ তো।

সাধারণ মানিস তাহলে এতো হৈচৈ কেন? আমি যদি প্রেম করতাম তোদের বলতাম না? তার সঙ্গে এই নিয়ে আমার ৩দিন দেখা হয়েছে। হয়তো এক শহরের মানুষ বলে সহজেই আমরা আলাপ জমিয়েছি। তার মানে এই না প্রেম করছি। যদি করি তবে তোরা অবশ্যই জানবি। সম্পর্কের মোড় ঘুরতে কতক্ষণ?

তবে বলছিস পসিবিলিটি আছে?

সবকিছুতেই ফিফটি ফিফটি চান্স থাকে।

রুপা বলল, তোরা বুঝছিস না এই প্রেমের গল্পের সূচনা ঘটে গেছে। তৃণার স্বীকার করাই বাকি।

তৃণা আর কথা বাড়ালো না।ভাবতে লাগলো সুন্দরতম দিনটির কথা। একটা বয়স্ক মহিলা সাহায্য চাইতে এসেছিল। ওরা তখন সিড়িতে বসা, বৃদ্ধাকে টাকা দিতেই সে হাত দিয়ে ইরহামের মাথা পুছে বলল, আল্লাহ তোমারে সুখী করুক বাবা, সহীহ সালামত রাখুক।
ইরহাম হেসে বলল, উনাকে দোআ করে দিন খালা, দু’দিন পরপর ভয়ঙ্কর সব জায়গায় যায়। তার দোয়ার বেশি প্রয়োজন।

তৃণার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বৃদ্ধা হাসিমুখে চলে গেল। এটা তৃণার মনে বিশেষ অনুভূতি জাগিয়েছে বলা বাহুল্য। তবে মুখে বলল, এই কথা কেন বললেন?

আপনি এক্সপেরিমেন্টাল ট্যুরে সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন যান না? সুন্দরবনে যাওয়াটা অনেক এডভেঞ্চারিং হয়, আমার কিছু বন্ধু ঐ ডিপ্টে আছে। তাই আমি জানি কতোটা রিস্কি ঐসব,,,

তৃণা হেসে বলল, ইমপ্রেসিভ!

শীতের ছুটি পড়ে গেছে, তৃণার ভাইবা শেষ হলেই সেও বাড়ির দিকে রওয়ানা হবে। ইরহাম সে অনুযায়ী ডেট ফিক্সড করে দু’টো টিকিট কেটেছে। কোচিং শেষে ফেরার পথে জামালখান বাতিঘরে ঢুকলো, তৃণা বই পছন্দ করে। তাকে একটা বই গিফট করাই যায়। বই কিনে বের হবার পরই হিমাদ্রি কল করলো। ইরহাম কল রিসিভ করতেই সে বলল, কোথায় আছেন?

এই তো জামালখান। কেন?

আচ্ছা সেখানেই থাকেন, আমি আসছি।

আচ্ছা!

১৫মিনিটের মধ্যেই হিমাদ্রি আসলো। তার পড়নে ইয়েলো শেডের টপস আর জিন্স। কাঁধ অবধি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে। ইরহাম উঠে গিয়ে বললো, কি ব্যাপার এতো হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসার রহস্য কি?

হিমাদ্রি গলার স্কার্ফটা একটু ঢিলা করে হাত দিয়ে বাতাস করার ভঙ্গিতে বললো, কিসের উপর এসেছি আমিই ভালো জানি। একটু জিরিয়ে নিই তারপর বলছি।

ইরহাম মালাই চা অর্ডার করে পথের পাশের বাঁধাই করা বেঞ্চিতে বসলো। হিমাদ্রি ওর পাশে বসতে গিয়েও বসলোনা। ইরহামের পাশাপাশি বসা মানে যেচে যুদ্ধ বাঁধানো। মুখোমুখি বসে টিস্যু দিয়ে আলতো দিয়ে মুখ মুছে বলল, বাড়ি যাচ্ছেন কবে?

পরশু।

ওহ, কি বই কিনেছেন দেখি?

তেমন বিশেষ না। কি বলবে তা বলো, হলে ফিরতে হবে।

আপনাকে আমি কিছু একটা বলেছিলাম। উত্তর দিলেন না ।

উত্তর দেই নি?

যা বলেছেন ওতে আমি সন্তুষ্ট না। বলেছিলাম সময় নিন পরে জানাবেন।

সময় দিলেও কি উত্তর তো বদলাবেনা।

আমি কি দেখতে খারাপ? আপনার যোগ্য নই?

ব্যাপারটা যোগ্যতার বা সৌন্দর্যের না হিমাদ্রি। তোমাকে আমি ঐভাবে কোনোদিন ভাবিনি, না কখনো মনে হয়েছে এমন কোনো সম্পর্ক আমাদের হবে। মনের টান থাকলে আমি নিশ্চয়ই সম্মতি দিতাম।

দেখুন কেউই কাউকে শুরু থেকে ভালোবাসেনা। ধীরে ধীরে সেটা জন্মায়। আপনি এতোদিন ভাবেন ঐ নজরে দেখেননি, এখন দেখুন। এটলিস্ট ট্রায় তো করুন! হতে পারে ভালোবাসা জন্মাবে। বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি।

চায়ে চুমুক দিয়ে ইরহাম বলল, যেখানে আমার আগ্রহ বা টান নেই সেখানে আমি আগানোর চিন্তাও করিনা। তুমি এসব আশা ছেড়ে পড়ায় মন দাও। চোখে রঙিন চশমা পড়ে আছ, আরেকটু ম্যাচিওর হও। তখন নিজেই বুঝবে ভালোবাসা জোর করে হয়না।

হিমাদ্রি তেতে বলল, আমি ১৬ বছরের কিশোরি নই। আমার বয়স ২০ বছর। আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি চোখে রঙিন চশমা পড়ে আছি? এই বয়সে আমাদের দেশের মেয়েদের ২টা বাচ্চা থাকাও স্বাভাবিক।আপনি কি না আমাকে ইমম্যাচিওর বলছেন!

দেখো হিমাদ্রি বয়স দিয়ে ম্যাচিওরিটি মাপা যায় না। অনেকে অল্প বয়সেই এনাফ ম্যাচিওর হয়। আবার অনেকে পরিপক্ক বয়সেও ইমম্যাচিওর থাকে। আমি তোমাকে প্রশ্রয় দিতে ইচ্ছুক না, তোমার যে আবেগটা এসেছে দ্রুতই কেটে যাক। এই কামনা করি।

হিমাদ্রি ধরা গলায় বলল, স্যার আপনার পছন্দের কেউ আছে তাই না? সেজন্যই আপনি আমাকে রিজেক্ট করছেন?

ইরহাম মুচকি হেসে বলল, থাকাটা কি অস্বাভাবিক?

ঠিকাছে, আমি আপনাকে আর বিরক্ত করবো না। তবে যদি কখনো…

নিজেকে অপশন বানাবে না হিমাদ্রি।সবসময় চেষ্টা করবে কম্পোলসারি চয়েজ হতে। কারো জীবনে অপশনাল হবার ভুল করবেনা।নিজের ভ্যালু গ্রো করো।

হুম। স্যার আপনি আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না তাই না? আমি শুনেছি আপনি ঐ কোচিং এ আর পড়াবেন না।

ওটার সাথে তুমি সম্পৃক্ত নও। আর তোমার অনুভূতি জানার পরও যোগাযোগ রাখা মানেই তোমাকে ভুলতে না দেওয়া।আমি সেটা করবোনা। ভালো থেকো।

ইরহাম উঠে চলে গেল। পেছনে পড়ে থাকা হিমাদ্রির মনে হলো ইরহাম নির্দয় পুরুষ। সে একটাবার পিছন ফিরে চাইলো না পর্যন্ত।

হ্যালো তৃণা?

জ্বি,

রওয়ানা হয়েছেন?

এই তো চলে এসেছি প্রায়ই আপনি কোথায়?

আমি গেইটেই আছি। আপনি আসুন।

আচ্ছা।

ছোট্ট ব্যাগটা নিয়ে সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মেটাতেই দেখে ইরহাম এগিয়ে এসেছে তাকে দেখেই চমৎকার একটা হাসি দিলো। তৃণার মনে হলো ওর হার্টবিট মিস হয়ে গেল যেন। তৃণা সোয়েটার, শাল, টুপি হাতমোজা পড়ে একদম প্রস্তুত হয়ে এসেছে দেখে ইরহাম বললো, আপনি দেখি কম্বল বাদে সব নিয়ে এসেছেন! ঐটা বাদ রাখলেন কেন?

তৃণা হেসে বলল, পারলে ওটাও নিয়ে আসতাম। ব্যাগ বহন করতে হবে বলে আনিনি।

ইরহাম হাসতে লাগলো ওর কথা শুনে।
তৃণা বলল, জানালার পাশে কিন্তু আমি বসবো।

ও আপনাদের নির্ধারিত সিট জানা আছে আমার।

তাই না?

হুম।

নারীদের সম্পর্কে ভালোই জ্ঞান আছে দেখছি!

আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই ৩। তবে জ্ঞান না থাকা অবাঞ্চিত নয়?

সেটাও ঠিক।

চলুন তবে।

হুম চলুন।

দুজন ধীরে ধীরে এগোতে লাগলো তাদের নির্ধারিত বগীতে।

চলবে,,,