স্পর্শ পর্ব-০১

0
1582

#স্পর্শ
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১

বাসর ঘরে বসে আছি। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড প্রিয়ন্তীর সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো সদ্য বিয়ে করা স্বামী ইফাজ চৌধুরী ।একটু আগে একটা আন্টি আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে ছিলো, এই মেয়েকে ইফাজ তো ইফাজের পছন্দ করে বিয়ে করেনি, ইফাজের তো আমাদের প্রিয়ন্তীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রিয়ন্তীর অন্য জায়গায় বিয়ে করে নিলো। তাই ইফাজ ও এই মেয়েকে বিয়ে করে নিলো জেদ করে পছন্দ করে না। শুনলাম প্রিয়ন্তী নাকি আবার নতুন বউ এর বান্ধবী ছিলো।

প্রিয়ন্তী বিয়ে করে নিলো বললে ভুল হবে আমি ও জানতাম প্রিয়ন্তীর ইফাজকে খুব ভালোবাসে। ইফাজের ফুপাতো বোন ছিলো প্রিয়ন্তী।কিন্তু দুদিন আগে ই অন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে নিলো। ইফাজ সহ্য করতে পারেনি। হয়তো ভেবেছিলো আমি সবটা জানি তাই তো আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এতোগুলো টাকা দিয়ে আমাকে বিয়ে করেনি আমার পরিবার এর কাছ থেকে কিনে এনেছে।

এতো ভারি লেহেঙ্গা এতো সাজ গহনা সব কিছু মিলিয়ে আমার অসস্থি লাগছে।নয়টা দিকে আমাকে সুন্দর ফুলে সজ্জিত বিছানায় বসিয়ে দিয়ে গেছে। এখন বাজে একটা ঊনিশ। এই চার ঘন্টা যাবৎ বসে থাকতে থাকতে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেছে। হঠাৎ হাসির আওয়াজ আর কথা শুনে মনে হলো কেউ রুমে আসতেছে।

ইফাজের দুই দুলাভাই টেনে ইফাজ কে নিয়ে আসছে। এসে ই দরজা বাহির থেকে লক করে দেয়। আমি খুব ভয় পাচ্ছি।

ইফাজ এসে টেনে হিঁচড়ে নিচে ফেলে দিলো,আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।ইফাজের এমন অগ্নি রুপ দেখে আমার কিছু বলার সাহস হচ্ছে না।আমি কোনো দোষ করেছি বলে মনে হচ্ছে না। দোষ তো একটা ই আমি প্রিয়ন্তীর বেস্ট ফ্রেন্ড।

–তোদের মেয়ে জাতকে ই আমি ঘৃনা করি।

আমি উওর দিতে দেরি করিনি,

–আপনি সেই নারীর সন্তান।

থাপ্পড় টা আমার উপর পরতে ও দেরি করেনি।
–আমার মাকে নিয়ে কথা বলার সাহস পাস কোথায়। তোর এই নষ্ট ফ্রেন্ড যেমন ছিলো তুই তো এমন ই হবি। সব জানতি তুই তাও আমাকে বলিসনি কেনো বল।

–আমি কিছু ই জানতাম না।

এবার ইফাজ আমার আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,

–তুই তো এমন ই তোর মুখ দিয়ে সত্যি বের হবে নাকি। কষ্ট কাকে বলে এখন থেকে বুঝতে পারবি। তোরা দুজন মিলে আমার বুকে যে আগুন জ্বালিয়েছিস। সেই আগুনে তোকে পুরতে হবে। আর স্বামীর অধিকার নিয়ে কখনো আমার৷আশে পাশে আসবি না।

বলার অনেক কিছু ছিলো কিন্তু কিছু ই বলতে পারিনি। তার আগে ই রুমের জিনিস পত্র ভাঙ্গা শুরু হয়ে গেলো।

আমি ফ্লোরে পরে আছি। সারা রুমে ছড়িয়ে আছে কাচ ভাঙ্গা ভয়ে উঠতেছি ও না। ইফাজ সিগারেট হাতে নিয়ে বেলকনিতে দাড়ায়। হয়তো কষ্টগুলো সিগারেট এর ধোয়ায় উড়িয়ে দিতে চাচ্ছে কিন্তু আধ্য কী সম্ভব। কষ্টগুলো উড়িয়ে দেওয়া।

আমি অতসী রহমান। বাবা স্কুল শিক্ষক। কয়েক বছর ধরে বিছানায় পড়া। আমরা তিনবোন। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর আমাদের সংসার চালানোটা কষ্ট করে হয়ে উঠে অনেক। খুব কষ্ট এই বার উচ্চ মাধ্যমিক এর গন্ডি পেরিয়েছে অতসী। ছোট দুই বোন শিমু নিলু দুবোন ক্লাস নাইনে পড়ে। অভাবের সংসার তাই তো টাকার গরম দেখিয়ে ইফাজ খুব আয়েশ করে ই কিনে বিয়ে করতে পরেছে অতসীকে।

অতসী দেখতে অনেক সুন্দর। গায়ের রং দুধে-আলতা। গোলাপী আভা ছাড়িয়ে আছে গায়ের রং এ। ঘন কালো চুলগুলো কোমর ছুয়ে আছে। যে কেউ ই দেখলে বিষন পছন্দ করবে।
প্রিয়ন্তী ও দেখতে অতসীর মতো ই সুন্দর ছিলো। দুজনকে তো সবাই বোন ই ভাবতো। খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো দুজনের কিন্তু হঠাৎ কী হলো এখন যেনো বুঝে উঠতে পারেনি অতসী।

অসতী দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। প্রেমের প্রস্তাব অনেক পেয়েছে কিন্তু বিয়ের পর স্বামীকে ভালোবাসবে বলে ই তো এখনো পর্যন্ত কোনো প্রেমের অবিজ্ঞতা নেই। ক্লাস ওয়ান থেকে ই প্রিয়ন্তী আর অতসী এক সাথে পড়ে, যদি কোনো সমস্যা হতো দুজন মিলে সব সামলে নিতো। প্রিয়ন্তী অতটা চঞ্চল না। অতসী অনেক চঞ্চল সভাবের। প্রথম প্রথম প্রিয়ন্তী খুব ভয় পেতো ইফাজ মামাতো ভাই হলো ও যখন ইফাজ এর সাথে কথা বলতে ভয় পেতো বার বার অতসীর জামার কোনায় ধরে রাখতো। আস্তে আস্তে প্রিয়ন্তী ও চঞ্চল সভাবের হয়ে গেলো। কত বার বকুল তলায় প্রিয়ন্তী ইফাজের সাথে কথা বলেছে। অতসী পাহারাদার হিসেবে তো সব সময় ই ছিলো।ভাবতে ই কেমন লাগে একসময় নিজের স্বামীকে প্রেম করতে সাহায্য করেছি।

.
.

এসব ভাবতে ই কখন ঘুমিয়ে পড়লাম তা মনে নেই। কারো কোলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। ইফাজ কোলে তুলে বিছানয় নিয়ে জোরে ফেলে দিলো। ঘটনা বুঝতে মিনিট পাঁচেক সময় লেগেছে। এতো জোরে ফেলেছে মনে হচ্ছে কোমরটা ভেঙে গেছে।

বাহির থেকে দরজা নক করতেছে বুঝতে পারলাম এ জন্য ই ইফাজ এভাবে আমাকে এনে বেডের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ইফাজ মনে হয় আমাকে অনেক বার ডেকেছে আমি উঠি নাই তাই এমনটা করলো। আমি বড্ড ঘুম পাগলি।

ইফাজ বাহির থেকে কথা বলে এসে আমাকে ঝাঁজালো কন্ঠে বললো,
–ফ্লোরের এইগুলো পরিষ্কার করে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও। কাউকে কিছু বললে বুঝবি তোর সাথে কী হয়।

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম। বাধ্য মেয়ের মতো উঠে সব কিছু পরিষ্কার করলাম। হাতের মধ্যে অনেক জায়গায় কেটে ও গেছে। ভাঙ্গা কাচের টুকরা তুলতে গিয়ে। হঠাৎ দেখতে পেলাম কতগুলো ছবি। ছবিগুলো হাতে নিতে ই দেখলাম প্রিয়ন্তী আর ইফাজের ছবি। ইফাজ মনে হয় মাঝখান থেকে ছিড়ে ফেলেছে ছবিগুলো আমাকে টুকরো গুলো একসাথে করে দেখতে হলো।
সব কিছু ফেলে দিলাম কিন্তু ছবিগুলো নিজের কাছে ই রেখে দিলাম।

লাগেজ থেকে রেড কালার একটা শাড়ি বের করে ওয়াশরুম চলে গেলাম। গোসল শেষ করে শাড়ি পড়বো কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়তে পারিনা। কোনোমতে পেচিয়ে ওয়াশরুমের থেকে বের হয়ে আসলাম।
ইফাজের বড় বোন রিমি আপু। এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে। সাথে সাথে ইফাজ ও রুমে ডুকেছে। আমাকে এ অবস্থায় দেখে আপু হাসতে হাসতে শেষ। কিন্তু ইফাজ একবার ও ফিরে ও দেখলো না। যাক বাঁচা গেলো আপু এখন শাড়ি পরিয়ে দিবে।

আপু আমাকে নিয়ে নিচে গেলো। কারো মুখে তেমন হাসি নাই। যেতে ই ইফাজের ফুপি বললো টাকা দিয়ে কিনে ছেলে আমাদের বিয়ে করছে।

ইফাজের মা তো বিয়ের নাম শুনার পর থেকে ই ঘর থেকো বের হয় না। আবার ছেলের কথা ভেবে বিয়েতে না ও করতে পারেনি। ছেলের এমন অবস্থায় বিয়ে করাটা আবশ্যক বলে মনে করেন উনি। নতুন বউ এর মুখ খানা ও এখনো দেখেনি ইফাজের মা তানিয়া। প্রিয়ন্তীকে বেশ মনে ধরেছিলো ইফাজে
জন্য। কিন্তু বিয়ের আগে ই এমন করে অন্য কারো সাথে পালিয়ে যাবে তা মোটে ও কাম্য ছিলো না। প্রিয়ন্তিকে ছোট থেকে ই খুব পছন্দ ছিলো তানিয়া বেগমের।
অতসী সামনে এসে বসতে ই মুখ বাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে তানিয়া বেগম। রিমি এটা বুঝতে পেরে অতসীকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।

খাবার টেবেলি জোর করে ইফাজকে অতসীর পাশে বসিয়েছে। ইফাজ বোনের জামাইদের কিছু বলতে ও পড়ছে না। রিমির জামাই মাঝখান থেকে বলে উঠলো। নেও সালাবাবু এবার বউকে খাইয়ে দেও।

চলবে।