স্পর্শ পর্ব-০২

0
1172

#স্পর্শ
#পর্ব_২
#writer_nahida_islam

খাবার টেবেলি জোর করে ইফাজকে অতসীর পাশে বসিয়েছে। ইফাজ বোনের জামাইদের কিছু বলতে ও পড়ছে না। রিমির জামাই মাঝখান থেকে বলে উঠলো। নেও সালাবাবু এবার বউকে খাইয়ে দেও।

ইফাজ কিছুক্ষণ তাকিয়ে হাসি মুখে সবাইকে কথায় ব্যস্ত রেখে ডান পায়ে অতসীর চেয়ারে লাথি মারতে ই অতসী চেয়ার থেকে পড়ে যায়। অতসী পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে রিমি, রুপা দুই বোন অতসীকে উঠায়।
-আহ্ কী হয়েছে বউমা বলো তো। জীবনে বুঝি অমন ডাইনিং টেবিলে বসে খাওনি। তাই তারাহুরো করে বসতে গিয়ে পড়ে গিয়েছো।
রুপা একটু রাগ দেখিয়ে ই ফুপ্পিকে বললো,
-ফুপ্পি যেটা না বুঝো ঐটা নিয়ে কথা বলো না। অতসী চেয়ারে বসছে ঠিক ই। হয়তো শরির খারাপ তাই পড়ে গেছে।
-ওহ্ আমি তো এখন মাত্র আসলাম। এসে ই দেখলাম বউ নিচে পড়ে গেলো তাই ভাবলাম হয়তো বসতে পারেনি ভালো করে তাই পড়ে গেছে।
অতসী মুখে হাত দিয়ে কান্না করছে। রুপা অতসীর অবস্থা দেখে রুমে নিয়ে গেলো।
-অতসী কান্না করো না। ফুপ্পি একটু এমন ই। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখে নিও।
অতসীকে বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে রুপা চলে যায়।
অতসী ভালো করে ই বুঝেছে ইফাজ যে চেয়ারে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছে। হয়তো অন্য কারো চোখে পড়েনি এটা।
-আমার স্পর্শে আসলে এভাবে ই তোমাকে কষ্ট পেতে হবে। সো দূরে থাকো।
দরজার দিকে তাকাতে ই দেখলাম ইফাজ রুমে ডুকতে ডুকতে আমাকে এসব কথা শুনাচ্ছে। চোখ মুছে উওর দিলাম। আমি কখনো নিজের ইচ্ছেতে আপনার স্পর্শে আসতে চাইনি। আর কখনে চাবোও না আপনার স্পর্শে আসতে।ছিঃ এতো খারাপ একটা মানুষের সাথে প্রিয়ন্তি কী করে পারলো এতোদিন প্রেম করতে।
কথাটা বলার সাথে সাথে আমাকে উঠিয়ে আমার বাহু চেপে ধরে বললো,
–তুই জানতি সব তাহলে আমার ধারনা ই ঠিক ইচ্ছে করে ই তুই প্রিয়ন্তীকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছিস। তুই সব জানতি।
এতো শক্ত করে আমার বাহু চেপে ধরে আছে মনে হচ্ছে আমার হাতদুইটা কেউ ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাথায় আমি আহ্ করে শব্দ করে উঠতে ই ইফাজ আরো জোরে চেপে ধরে।

-ইফাজ।
রুপা আপুকে দেখে ইফাজ আমার থেকে সরে দাড়ায় ।
-মেয়েটাকে কী মেরে ফেলবি নাকি। যা হয়েছে ভুলে যা না। প্রিয়ন্তি কি এখন ও বাচ্চা নাকি যে কারো সাহায্য লাগবে ওর। এমন ও তো হতে পারে অতসী, প্রিয়ন্তি আর রাহুলের প্রেমের কথা কিছু ই জানতো না।
-এমন ও তো হতে পারে আপু এই মেয়েটা সব জানে। এর জন্য এই মেয়েটাকে কষ্ট পেতে হবে।
-তুই কী অতসীকে বিয়ে করেছিস কষ্ট দেওয়ার জন্য নাকি?

ইফাজ কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আপু আমাকে তার পাশে বসিয়ে বললো,

-ধৈর্য হারিয়ে না বোন। এখন একটু পাগলামি করবে কদিন পর দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। চলো তোমাকে দাদিমা ডাকছে দেখা করে আসবে।

অতসী চোখের পানি মুছে রুপার সাথে ইফাজের দাদিমার রুমে প্রবেশ করে। অতসী রুমে প্রবেশ করতে ই হাবিবা বেগম বললো,নতবৌকে নিয়ে এসেছিস। অতসীকে টেনে নিয়ে নিজের সাথে বসালো। মুখে বয়সের ভার স্পষ্ট থাকলে ও বেশ শক্তপোক্ত এখনো। সাদা প্লাস আকাশি সংমিশ্রণে একটা শাড়ি পড়েছে। হাতে রুপার চুড়ি। নাকে ফুল নেই। গলায় একটা চিকন চেন। অতসী বসে বসে হাবিবা বেগমকে দেখছে। হাবিবা বেগম হাতে থাকা তছবিটা রেখে আলমারি থেকে বিশাল বড় একটা বাক্স বের করলো। অতসীর সামনে এনে রেখে ই বললো,

-এখন এটা থেকে যা বের হবে সব তোর জন্য রেখেছি। ইফাজ আমার একমাত্র নাতি তাই বিয়ের কথা শোনে সব কিছু আগে থেকে ই গুছিয়ে রেখেছিলাম।

কথাগুলো বলতে বলতে বাক্সটা খুলতে লাগলো। বাক্স খুলতে ই দেখলাম সাইডে লাল টুকটুকে একটা শাড়ি আর কিছু গোল্ডের জুয়েলারি,আর একটা বোরকা নিকাব।

-এগুলো পড়ে আমার দাদু ভাইয়ের সামনে যাবি, দেখবো তোর সোহাগ আরো বেড়ে যাবে।রাতে কিন্তু অবশ্য ই শাড়িটা পড়ে আমার রুমে আসবি ই।

কথাটা শুনে বেশ লজ্জা পেলাম এটা দেখে দাদিমা হাসি দিয়ে আমাকে এগুলো নিয়ে রুমে চলে আসতে বলললো।

রাতের বেলা,
দাদিমার কথা মতো লাল শাড়ি পড়লাম,দাদিমার কথাতে শুধু এই শাড়ি পড়া নয়তো কখনো পড়তাম না। জুয়েলারি বাক্স থেকে চুড়িগুলো পড়ার পরে দেখলাম নুপুর ও আছে। নুপুর আমার বরাবরই প্রিয় নুপুগুলো পড়ে নিলাম। হলকা সাজগোজ করে দাদিমার রুমের দিকে গেলাম। দাদিমার রুমে ডুকতে ই দেখলাম ইফাজ বসে আছে। ইফাজকে দেখে ভয়ে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ইফাজ এখানে জানলে কখনো আমি আসতাম না।

আমাকে দেখে ই দাদিমা হাসি মুখে আমার সামনে এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে ইফাজের সাথে বসিয়ে দেয়। জোরে জোরে রিমি আপুকে ডেকে নিজের রুমে নিয়ে আসে।

–আহ্ দাদিমা আমি কী দিল্লি চলে গেলাম নাকি এতো জোরে ডাকছো যে।

-আরে দেখবি আয় আমার নাতিকে আর নতবৌকে কেমন লাগছে।
রিমি দুজনকে দেখে বলে, বেশ মানিয়েছে তো তোমাদের।
-মানিয়েছে তো দেরি করছিস কেন কয়টা ছবি তোলেনে।
-নেও দাদুভাই নাতবৌ একটু ভালো করে ধরে বসো তো,দুজনের মাঝে এতো ফাকা জায়গা থাকলে তো মাঝখানে আরেকজন ডুকে যাবে।
রিমির আর রুপার হাসবেন্ডরা ও এসে দাদিমার রুমে হাজির। সবাই ওদের বিভিন্ন স্টাইল দেখিয়ে দিচ্ছে ছবি তোলার জন্য। ইফাজ কিছু বলতে চেয়ে ও পারছে না আবার অতসীকে সহ্য ও করতে পারছে না।

ইফাজ অতসী দুজন ই বেডে বসা ছিলো। বেশ আগ্রহ দেখিয়ে রিমির হাসবেন্ড তাদের সাথে ছবি তোলতে গেলো। বেডের এক সাইডে অতসী তারপর ইফাজ তারপর রিমির হাসবেন্ড বসেছে। রিমির হাসবেন্ড বসার সাথে সাথে ইফাজকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে অতসীর দিকে দিচ্ছে। অতসীর একেবারে দেওয়ালের সাথে মিশে গেছে তারপর ও ইফাজ ধাক্কা খেয়ে খেয়ে অতসীর দিকে ই আসছে। দুজনে খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ইফাজ বিষয়টা বুঝতে পেরে ফোন কানে নিয়ে উঠে পড়তে ই রিমির হাসবেন্ড অতসীর দিকে অনেটা ঝুকে পড়ে। এটা দেখে সবাই হাসছে।

রাত প্রায় তিনটার মতো বাজে ইফাজ এখনো বাড়ি ফেরেনি। অতসী দরজার দিকে তাকিয়ে বসে আছে, আর কতো বসে থাকবে। তানিয়া বেগম এমনিতে ছেলে বাসায় ফিরেনি বলে অতসীকে বেশ কথা শোনিয়ে গিয়েছে। যাওয়ার সময় বলে গেছে, ছেলে বাসায় ফিরলে যেনো তাকে গিয়ে বলে আসে। কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দে অতসী বাহিরে গেলো। বাহিরে যেতে ই দেখলো ইফাজ এসেছে, ফুলদানি পড়ে ভেঙ্গেছে তাই শব্দ হয়েছে। ইফাজ ভাঙ্গা ফুলদানিটির কাছে ই বসে পড়ে। অতসী দৌড়ে গিয়ে ইফাজকে ধরতে ই বলতে শুরু করে,
-তুমি জানো এই ফুলদানি মতো ই যে আমার জীবনটা ও ভেঙ্গে গিয়েছে।আমি তো ঠিক ভালোবাসতাম কিন্তু আমাকে ভালোবাসেনি।সত্যি কাউকে ভালোবাসলে অবহেলা ছাড়া কিছু পাওয়া যায়না। আমাকে প্রিয়ন্তি তাই ই বুঝিয়েছে।
ইাফাজের কথা শুনে স্পষ্ট বুঝতে পারছে নেশা করে এসেছে। মুখ থেকে খুব বাজে গন্ধ আসছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেড়ে অতসী কোনো রকমে উঠিয়ে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দেয়।অতসী শুইয়ে দিয়ে আসতে নিলে ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যায়।

চলবে,