স্পর্শ পর্ব-০৩

0
1073

#স্পর্শ
#পর্ব_৩
#writer_nahida_islam

ইফাজের কথা শুনে স্পষ্ট বুঝতে পারছে নেশা করে এসেছে। মুখ থেকে খুব বাজে গন্ধ আসছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেড়ে অতসী কোনো রকমে উঠিয়ে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দেয়।অতসী শুইয়ে দিয়ে আসতে নিলে ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যায়।
–থাকোনা আমার সাথে প্লিজ।
আমি গেলাম না, ইফাজের পাশে বসলাম। ইফাজের আমার হাতটা ওর বুকের মাঝে নিয়ে শুয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম এইরকম ছোট ছোট ভালোবাসার অধিকারী আমি হতাম যদি না আমার স্বামী ইফাজ না থাকতো। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করেতে ই রাজ্যের ঘুম চোখে ভর করলো।

দরজা কেউ ভেঙ্গে ফেলছে এমন শব্দে ঘুম থেকে উঠতে ই দেখলাম, ইফাজ আমার হাতটা আগের ন্যায় ধরে আছে। আমি আস্তে করে ছাড়িয়ে দ্রুত গিয়ে দরজা খুললাম। দরজা খুলতে ই দেখলাম ইফাজের মা।

–এতো বেলা করে ঘুম থেকে উঠলে এবাড়িতে নয় বাবার বাড়ি চলে যাও।
-মা কালকে রাতে আপনার ছেলে আসতে দেরি করেছিলো তো তাই।

–ব্যাস অনেক শুনেছি এসব। আমি বলেছিলাম না ইফাজ আসলে আমাকে ডাকবে।

–স্যরি মা মনে ছিলো না।

–কিচেনে আসো রান্না করবে।

–জ্বি মা আসছি।

বলে ই ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রাতে আমার মনে ছিলো মাকে ইফাজ এসেছে এই কথাটা বলার কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম না ইফাজকে ছেড়ে যেতে।
নিচে যেতে ই দেখলাম সবাই বসে গল্প করছে, আমি ওদিকে না গিয়ে সোজা কিচেনে ডুকলাম। আমাকে দেখে ই কাজের লোকটা মুখখানা মলিন করে বললো,
-আরে নতুন বউ তুমি কিচেনে এসেছেন কেনো।
–মা বলেছে তাই।
–তানিয়া খালাম্মা বলছে আপনাকে কিচেনে আসার জন্য। উনি তো কখনো কিচেনে আসেনে তাহলে আপনাকে বললো কেনো?

–আপনার নাম কি আপু।

–আপা মনি আমার নাম রানু।

–আমাকে আপনি করে কেনো সম্বোধন করছেন কেনো। আপনি আমার থেকে অনেক বড়। আমাকে তুই অথবা নাম নিয়ে ডাকতে পারেন।

–ঠিক আছে।

–তাহলে দেন আমি রান্না করি। আপনি সরে দাড়ান। আমাকে হেল্প করুন।

— তুমি দাড়াও, দেখো আমি কীভাবে নাস্তা বানাই।

আমি একটা হাসি দিয়ে রানুকে সরিয়ে দিয়ে নাস্তা বানানো শুরু করলাম। নাস্তা বানানো শেষ করে কিচেন থেকে বের হতে ই দেখলাম, ইফাজের ফুপ্পি আর মা বসে আছে। আমাকে দেখে ই ফুপ্পি বলে উঠলো,
–কী গো রান্নাবান্না কিছু পারো নাকি এমনি ই কিচেনে সং সেজে দাড়িয়ে থাকতে গেছো।
আমি মুখে হাসি টেনে বললাম,

-আপনার যেমন মনে হয় ফুপ্পি।

কথাটা বলে আর দাড়ালাম না সোজা রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখলাম ইফাজ এখনো ঘুমাচ্ছে। বেলা তো অনেক হয়েছে তাই ডাকতে গেলাম। কিন্তু কয়েকবার ডাকার পর ও যখন উঠছে না। তখন হাত ধরে হলকা করে টান দিয়ে ডাকলাম,

–এই যে শুনছেন। বেলা হয়েছে অনেক।

ইফাজ আমার হাতটা হ্যাচকা টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো,

–কী ব্যাপার তুমি আমাক স্পর্শ করেছো কেনো।

–অনেক্ষন ডাকলাম উঠেননি তাই।

–শোনো আমাকে ছোয়ার পর ঠোকনো অজুহাত দিবে না।

–কোনো ইন্টারেস্ট নাই আপনার প্রতি।

–অহ্ হ্যালো। নিজেকে আয়নায় দেখেছো।

–হে আমি দেখতে খারাপ, তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো। কোনো এক নাইকা দেখে বিয়ে করতে পারতেন।

–তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
ইফাজ টাওয়ালটা নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।
আমি আমার নিচে গেলাম। সবার নাস্তা টেবিলে রেডি করে টেবিলে রাখলাম। রুপা আর রিমি আপু এসেছে সাথে তাদের হাসবেন্ড ও। রুপা আপু চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,

–অতসী নাস্তা বানিয়েছো নাকি।

–হে আপু।

–যাক ভাইয়ের বউয়ের হাতে রান্না খাওয়ার ইচ্ছে টা আজ পূরণ হলো।তা আমার ভাইটাকে দেখছি না তো।

ইফাজ সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,

–এই আপু চলে এসেছি।

–আরেকটু লেইট করে উঠলে তো আমাদের দেখতে পেতি না।

–কেনো? আজকে ই চলে যাবি নাকি।

–হে তোর দুলা ভাইয়ের ছুটি শেষ। এখান থেকে গিয়ে অফিস জয়েন করতে হবে।

–ভাইয়া চলে যাক তুই থাক।

–নাহ্ তা হয় না। তুই অতসীকে নিয়ে আমাদের বাসায় কবে বেড়াতে যাচ্ছিস তা বল।

কথাট শুনে ই ইফাজ ফোন নিয়ে চলে গেলো। কথাট শোনার সাথে সাথে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ইফাজ। হয়তো চায়না সবার সামনে অতসীকে আবার একগাদা অপমান করুক।

সবাই খাওয়া শেষ করে চলে গেলো। কি অদ্ভুত অতসীকে কেউ একবার বললো ও না খাওয়ার কথা। বাবার কথা মনে পড়ে গেলো। অতসী বাবা তিন মেয়েকে রেখে একটা দানা ও মুখে তোলতো না। রোজ কলেজে যাওয়ার আগে বাবার সাথে বসে খেতো। অতসী যদি কখনো রাগ করে থাকতো তাহলে বাবা বাচ্চাদের মতো অনেক গল্প বলে রাগ ভাঙ্গাতো। আর আজ দুদিন হলো বাবার কন্ঠটা শুনতে পারিনি।
আমি একটা প্লেটে খাবার নিয়ে নিলাম। খাবারটুকু মুখে দিতে ই বাবার কথা মনে হলো কান্না পাচ্ছে খুব তাই ভয়ে ভয়ে গিয়ে ইফাজের মাকে বললাম,

–মা ফোনটা একটু দিবেন, বাবাকে কল দিবো।

উনি আমার দিকে না তাকিয়ে উওর দিলে,

–একটু পর তোমার বোনেরা আসবে তখন তো বাসায় ই যাবে। বাসায় গিয়ে না হয় বাবাকে দেখবে।

কথাটাতে স্পষ্ট বুঝলাম উনি ফোন দিবে না। তাই চলে আসলাম। মনে মনে কষ্টের পরিবর্তনে আনন্দ লাগছে কারণ আমি আজকে বাসায় যেতে পারবো।

দুপুরের আগে সব রান্না শেষ করে ফেললাম, গোসল সেরে নেভি ব্লু একটা শাড়ি পড়ে নিলাম।ইফাজ সকালে নাস্তা করে অফিসে গিয়েছে তারপর এখন ও ফেরেনি।
হাতে ফোন নাই বলে অপর সময়টা দীর্ঘ হলো। ফোন থাকলে তো জানতে পারতাম আমার বোনেরা কোথায় আছে। এই কদিন এই বাসায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আজকে বাসায় যেতে পারবো, এটা মনে হচ্ছে আমি জেলখানা থেকে ছাড়া পাচ্ছি। বাহিরে গিয়ে মন ভরে নিশ্বাস নিবো।

কিছুক্ষণের মধ্যে ই আমার বোনেরা চলে এসেছে। শিমু নীলু আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরেছে। সাথে আমার এক চাচা এসেছে। সাবার সাথে কৌশল বিনিময় করার পর ওদেরকে খাবার দিলাম। শিমু নীলুকে নিয়ে আমি উপরে এসে ব্যাগ গুছিয়ে নিচে নামলাম।

–আপু তুই ইফাজ ভাইয়ার কাপড় নিলি না কেন।

–উনি মনে হয় আমার সাথে যাবে না।

–কেনো যাবে না। আমরা দুজন আজকে ইফাজ ভাইয়াকে নিয়ে ই বাসায় যাবো।

–নীলু অযথা জেদ করিস না।

তানিয়া বেগম রুমে ডুকতে ডুকতে বললো,

–ইফাজকে কল দিলাম তার নাকি আসতে সাতটার মতো বেজে যাবে।এখন বাজে তিনটা তাই যেতে পারছে না। তোমরা তোমাদের বোনকে নিয়ে চলে যাও।

–আমরা একটু লেইট করে হলে ও ইফাজ ভাইয়াকে নিয়ে ই যাবো।

শিমু নীলুকে হাজার বলা শর্তে ও দুজন বসে বসে ওয়েট করছে। অতসী বসে আছে।অতসীকে কষ্ট দেয় ঐটা বিষয় না কিন্তু আজকে যদি ইফাজ না যায় তাহলে শিমু নীলু খুব কষ্ট পাবে।

চলবে,