স্পর্শ পর্ব-০৫

0
971

#স্পর্শ
#পর্ব_৫
#writer_nahida_islam

কলেজের সামনে আসতে ই দেখলাম দূরে প্রিয়ন্তি দাড়িয়ে আছে। আমি রোড ক্রস করে যাওয়ার সময় হঠাৎ সামনে একটা গাড়ি এসে দাড়ালো। আমি গাড়িটা দেখে থেমে গেলাম। গাড়ির দিকে তাকাতে ই দেখলাম গাড়ি থেকে ইফাজ নেমে আসছে। ভয়ে আমার জ্ঞান হারানোর অবস্থা।

-এখানে কী করছো?

-এমনি একটু কলেজে আসছিলাম?

ইফাজ চারপাশে চোখবুলিয়ে বললো,

-চলো বাসায় যাবে।

আমি একটা বড় করে নিশ্বাস ফেললাম, বিলম্ব না করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।ইফাজ গাড়ি চালাতে চালাতে জিজ্ঞেস করে,

-প্রিয়ন্তি সাথে আবার কী প্ল্যান করতে আছিস। আমাকল মারার নাকি।

-কী বলছে এসব।

-বাংলায় বলছি তাও বুঝতে পারছিস না।আমি সব জানি প্রিয়ন্তি তোকে কালকে কল দিয়ে বলেনি আজ দেখা করার জন্য।

আমি সোজা উওর দিলাম,

-হে প্রিয়ন্তী আমাকে কল করেছিলো, দেখা করতে বলেছে ওর সাথে ও নাকি আপনার সম্বন্ধে কিছু বলতে চায়।

ইফাজ গাড়ির স্পিড টা দ্বীগুন করে দিয়েছে। এতো স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে বিধায় আমি ঠিক ভাবে বসে থাকতে পারছি না।

-আরে করছেন টা কী এভাবে কেউ গাড়ি চালায় নাকি। এক্সিডেন হতে পারে কিন্তু।

ইফাজ বাসার সামনে গাড়ি থামাতে ই বললাম,
-আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো। আমি তো আমার বাবার বাসায় যাবো।

ইফাজ মুখে দিয়ে টু শব্দেটি ও বের না করে অতসীর হাত টানতো টানতে বাসার ভিতরে নিয়ে যায়। বাসার ভেতরে যেতে ই অতসীকে সামনে দাড় করিয়ে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। অতসী ছিটকে গিয়ে সোফায় ভারি খায়। ইফাজ আবার উঠিয়ে এনে মারার জন্য হাত উচু করতে যাবে তখন ই অতসী জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। রানু দৌড়ে এসে অতসী রুমে নিয়ে যায়।

তানিয়া বেগম দূর থেকে দাড়িয়ে দেখে কিন্তু ছেলেকে কিছু ই বলে না। উল্টো রানুকে বলেছে রুমে শুইয়ে রেখে চলে আসার জন্য।

রানু অতসীকে বিছানা শুইয়ে দেয়। অতসী শুয়ে শুয়ে কাঁদতেছে। জীবনটা এমন না হলে ও পারতো। দিন কয়েকের ব্যাবধানে জীবনটা জাহান্নাম হয়ে গেলো।

অতসী ঘুমিয়ে আছে। ইফাজ রুমে ডুকে ই অতসীর পাশে গিয়ে অতসীর হাত ধরতে ই অতসীর ঘুম ভেঙ্গে যায়।
–আমাকে এভাবে স্পর্শ করছেন কেনো?
-আমার বউকে আমি কী করবো তা তো জিজ্ঞেস করবো। তোর বাবাকে অনেক টাকা দিয়ে তোকে বিয়ে করেছি। সো কোনো কথা বলবি।
–আপনি তো বলেছিলেন আপনার কাছে স্ত্রী অধিকার না চাইতে তো এখন আপনি নিজেকে সংযত করুন।

–তখন বলেছিলাম এখন মত পাল্টাচ্ছি।

অতসী অসুস্থ শরির নিয়ে এতো কথা বলতে চায়নি বলে উঠে চলে যেতে চাইলো। কিন্তু ইফাজ সাথে সাথে হাত ধরে ফেললো। অতসী অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ও ইফাজের সাথে পেড়ে উঠলো না। অবশ্য ই ইফাজ তার স্বামী,অতসীর উপর সব অধিকার ই তার আছে। কিন্তু ভালোবেসে তো কাছে টেনে নেয়নি একগাদা ঘৃণা বুকে ধারণ করে ইফাজ কাছে টেনে নিয়েছে।

রাত প্রায় তিনটা বাজে, অতসী ফ্লোরে শুয়ে আছে। ইফাজ বেডের উপর বসে সিগারেট খাচ্ছে আর ফোনে কারো সাথে চেটিং করছে হয়তো। অতসী সিগারেট এর গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না। অসহ্য যন্ত্রনা আর গন্ধে মনে হচ্ছে মরে ই যাবে। তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

কারো চিৎকার চেচামেচিতে অতসীর ঘুম থেকে উঠে।

– নবানের মেয়ে হলে রাজপ্রাসাদে ই থাকতি বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি আাসার কী দরকার ছিলো। খাবি আর ঘুমাবি আর সংসারে অশান্তি করবি এটা ছাড়া তো আর কেনো কাজ নেই।

অতসী মিট মিট করে চোখ খুলে দেখে তানিয়া বেগম।

-মা আমার শরির টা খুব খারাপ, নয়তো অনেক্ষন আগে ই ঘুম থেকে উঠে পড়তাম।

-ঐসব বুঝি না। রান্না শেষ করে দ্রুত রুমগুলল মুছে ফেলো। বাসায় মেহমান আসবে।

প্রচন্ড শরির খারাপ নিয়ে ই উঠে বসলাম। কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। কিচেনে ডুকে ই নাস্তা বানাতে যাবো ঠিক তখন ই রানু বললো,
–নতুন বউ তোমার শরিরটা মনে হচ্ছে ভালো না। তুমি বসো আমি নাস্তা বানাই দেই।

রানু আমাকে সরিয়ে নাস্তা বানতে যাবে ঠিক তখন ই ইফাজের মা এসে বললো,
-রানু চল আমার সাথে কাজ করবি।
-কিন্তু খালাম্মা.
-কিন্তু কিসের, আমি তোর মালিক নাকি তুই আমার মালিক।

–মাফ করবেন খালাম্মা।

এটা বলে তানিয়ে বেগমের সাথে রানু চলে যায়। অতসী খুব ভালো করে বুঝতে পারলো এখন যদি মরে ও যায় তাহলে ও কাজগুলো করতে করতে ই মরে যেতে হবে।
অতসী রান্না শেষ করে টেবিলে নাস্তা দিলো।

ইফাজ রেডি হয়ে নিচে এসে নাস্ত করতে বসে পড়লে। ইফাজ নাস্তা করে সোজা অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়লো। একবারের জন্য ও অতসীর দিকে তাকায়নি। অতসী খেয়েছে কিনা তাও জানতে চায়নি। সবাই নাস্তা করে চলে যাওয়ার পর রানু আর অতসী এক সাথে নাস্তা করতে বসে। খাবার খেতে গিয়ে দেখে একজন খেতে পারবে এমন খাবার বেচে আছে। বাকিটা তানিয়া বেগম ফ্রিজে রেখে দিয়েছে। রানু খাবারের দিকে তাকিয়ে বললো,

-নতুন বউ তুমি একদম চিন্তা করবা না। এইটুকু খাবার আমরা দুজন মিলে খেয়ে ফেলতে পারবো।

আমি রানুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম। মনে মনে ভাবলাম সবাই মানুষ হতে পারে না। কেউ শিক্ষা ধন সম্পদ থেকে ও মানুষ হতে পারে না। আবার কেউ শিক্ষা ধন সম্পদ না থেকে ও সৎ মানুষ।

ক্ষুধা পেয়েছে খুব তাই আর না করলাম না। দুজন মিলে খাবারটুকু শেষ করে আমি উঠে চলে আসলাম। শাশুড়ী কথা মতো পুরো বাড়ি ধোয়া মুছার কাজে লেগে পড়লাম।

বাসাটা মুছা প্রায় শেষ পর্যায় মেইড ডোরের সামনের অংশটুকু মুছতে পারলে ই কাজ শেষ। আমি সামনের অংশটুকু মুছতেছিলাম ঠিক সেই সময় তানিয়ে বেগম বাহির থেকে ময়লা জুতা নিয়ে ই প্রবেশ করে। আমি কিছু বলার আগে ই উনি উনার রুমে চলে যায়।
এমন অবস্থা দেখে আমার কান্না পাচ্ছে খুব এতো কষ্ট করে এইটুকু মুছলাম এটা আবার কী করলো। চোখের পানি মুছে আবার শাশুড়ী রুম থেকে মুছে আনলাম।

গোসল সেড়ে আমি শুয়ে পড়লাম। উফফ এতো কাজ বাসায় কখনো করেনি। বড্ড কষ্ট হচ্ছে বসে থাকতে। চোখ বন্ধ করতে ই দুচোখে ঘুম ভর করলো।

ঘুম থেকে উঠতে উঠতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ইফাজ কফির মগে চুমু দিয়ে ল্যাপটবে কাজ করছে। আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলাম,

–আজকে কতো তারিখ।

আমার দিকে না তাকিয়ে ই ইফাজ উওর দিলো,

–২৪

–আমাকে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে দিবেন।

চলবে