#স্পর্শ
#পর্ব_৬
#writer_nahida_islam
ঘুম থেকে উঠতে উঠতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ইফাজ কফির মগে চুমু দিয়ে ল্যাপটবে কাজ করছে। আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলাম,
–আজকে কতো তারিখ।
আমার দিকে না তাকিয়ে ই ইফাজ উওর দিলো,
–২৪
–আমাকে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে দিবেন।
-আবার অনার্স ভর্তি হয়ে কী করবি আমাকে ছেড়ে অন্য ছেলের কাছে যাবি।
–এগুলো কী বলেন আপনি।
-চিল্লাস কেনো। আর কখনো এসব কথা মুখে ও আনবি না।
আমি চুপ করে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে আবার কিচের দিকে গেলাম।
–তা মহারানী ঘুম থেকে উঠেছে, দেখছি। ঘুম ভেঙ্গে রানী সাহেবা।আপনি উনি উঠলেন কেনো আমাকে অর্ডার করতেন আপনার জন্য চা কফি নিয়ে যেতাম।
-মা আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছিলো তাই..
-আপনার মুখ থেকে আমি রচনা শুনতে চাইনা। হয়তো কাজে হাত দিন নয়তো আবার গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
উনার এমন কথায় না চাইতে ও আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি কিচেনে আসার সাথে সাথে তানিয়া বেগম কিচেন থেকে চলে যায়।
তানিয়া বেগম কিচেন থেকে চলে যাওয়ার সাথে সাথে রানু এসে বললো,
-নতুন বউ দেরি করুনা কাজে লেগে পড়ো। তোমার শাশুড়ীর বাবার বাড়ি থেকে মেহমান আসছে। রান্না ভালো না হলে আবার তোমাকে ই কথা শুনতে হবে।
অতসী আচলটা কোমরে গুজে কাজে লেগে পড়ে। রান্না করতে করতে ভাবতেছে কিছু কিছু মানুষের কথা আগুনের ন্যায়,আগুনের মতো শরির টাকে জ্বালিয়ে দেয়। সত্যি ই বিয়ে হলে মানুষ পরিবর্তন হতে হয়। হয়তো নিজের ইচ্ছেয় নয়তো পরিস্থিতির শিকার হয়ে। অতসী রান্না শেষ করে, বের হবে ঠিক তখন ই তানিয়ে বেগম সামনে এসে দাড়ালো,
-এই যে শোন এই শাড়িটা খুলে ভালো একটা শাড়ি পড়ো দেখি। আমার বাবার বাড়ির মানুষের সামনে অমন রুপ নিয়ে গেলে তোমাকে কাজের মেয়ে বলে ও গন্য করবে না।
চুপ করে শুধু শোনলাম আমার বলার ভাষা যে নেই বললে ই চলে। বিয়ে হলো তো আবার শ্বাশুড়ি মুখে মুখে কথা বলা যায় না। সামজের কতো নিয়ম। সমাজের এতো এতো নিয়ম আছে কিন্তু আমার মতো অসহায় নারীদের জন্য কোনো নিময় তৈরি হয়নি।
-এই বিরবির করে কী এতো বকছো।
–মা আমি আপনাকে বকতে যাবো কেনো।
–বলা তো যায়না বাপু, ভালো কথা হলে তো জোরে ই বলতে।
পরের বার থেকে কথা বলার সময় মাইক লাগিয়ে নিবো নে। মনে মনে কথাটা বলে কিচেন থেকে বের হয়ে সোজা রুমে গেলাম।
রুমে গিয়ে শাড়িটা চেঞ্জ করে নিলাম। শাড়িটা চেঞ্জ করে আয়নার সামনে আসতে ই দেখলাম ইফাজ রেডি হচ্ছে। ইফাজকে রেডে হতে দেখে প্রশ্ন করলাম,
–কোথাও যাচ্ছেন আপনি।
-সব কৈফিয়ত কী তোকে দিতে হবে।
কথার কী ধরন এর থেকে নিমপাতার ও সাধ ভালো মনে হয়। আমি বিনাবাক্যে রুম ত্যাগ করলাম। দাদিমার রুমে গিয়ে ডুকতে ই দাদিমা আমাকে কাছে টেনে নিলো।
-লক্ষি একটা মেয়ে। ইফাজ খুব ভাগ্যবান যে তোর মতো মিষ্টি একটা বউ পেয়েছে। কিন্তু তোর সুভাগ্য নাকি দূরভাগ্য তা জানি না।
আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,
–আল্লাহ আমার ভাগ্য যা লিখেছে তা ই হবে দাদিমা। তুমি শুধু দোয়া করো আমি যেনো সব সমস্যায় নিজেকে ঠিক রাখতে পারি।
দাদিমাকে ছেড়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলো খোপা করে নিলাম। মুখে স্নো আর চোখে কাজল দিয়ে দিয়ে নিলাম। সাজ বলতে এটুকু ই সব সময় আমার সাজগোজ। দাদিমার সাথে আরো কিছুক্ষন বসে থেকে নিজের রুমে চলে গেলাম। ইফাজ আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
-এভাবে এগোচ্ছেন কেনো?
আমার কথার কোনো উওর না দিয়ে ড্রেসিং টেবিল থেকে পিন নিয়ে শাড়িটা এমন ভাবে আটকে দেয় যেনো কেনো সাইড দিয়ে শরিরে কোনো অংশ বের না হয়ে যায়।
-আপনি আমাকে দিন আমি বাকিটুকু ঠিক করে নিই।
-বেশি কথা বলো না। আর বাসায় যারা আসবে তাদের সাথে বেশি কথা বলবা না।
আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি। এ আবার কেমন রুপ একেক সময় একের রুপ ধারণ করে।
-হঠাৎ এতো ভালো ব্যবহার কেনো জানতে পারি।
-বেশি কথা পছন্দ করি না।তোমাকে যেটা নিষেধ করেছি ঐটা করো না।
ইফাজ আমাকে আবার ও অবাক করে দিয়ে একটা লিপস্টিক এনে আমার ঠোঁটে লাগিয়ে দিলো।
–নেও এবার পারফেক্ট। চলে নিচে যাবে।
ইফাজ অতসীকে নিয়ে নিচে গেলো। অতসী নিচে নামতে ই দেখে মেহমানরা চলে এসেছে। অতসী সবাইকে সালাম দেয়।
–আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। ইফাজ তো দেখি বেশ বউ পাগল বউকে ছাড়া এতোক্ষণ নিচে নামেনি।
ইফাজ মুখে হাসি টেনে বললো,
-মামা আপনি ও তো মামিকে ছাড়া কোথাও যান না তাহলে তো আপনি ও বউ পাগল। আমরা তো মামা ভাগ্নে ই দুজনের মধ্যে মিল থাকাটা ই তো স্বাভাবিক।
ইফাজ সবার সামনে অমন কথা বলেছে তাই ইমায়েত সাহেব একটু নড়েচড়ে বসেছে।
–ইফাজ বাচ্চারা আছে এখানে।
-সে প্রথম থেকে ই ছিলো।
কথার মধ্যে ই একটা মেয়ে আর ছেলে আসলো, মেয়েটা দৌড়ে এসে ইফাজকে জড়িয়ে ধরে। এমন ভাবে ধরেছে মনে হয় সুপার গ্লু লাগিয়েছে।
-কেমন আছো ইফাজ।
-হে ভালো, তুই আছিস সুমি।
-এতোক্ষণ ভালো ছিলাম না তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেলাম।
অতসী মাঝখান থেকে বলে উঠলো,
-উনি কী ভালো হওয়ার ঔষধ নাকি।
সুমি ইফাজকে ছেড়ে বামপাশে তাকাতে ই দেখলো একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। বুঝতে তার একটু ও অসুবিধে হলো না এটা যে ইফাজের বউ।
-ইফাজ সব সময় ই আমার ভালো লাগার ঔষধ ছিলে থাকবে ও।
-ইফাজ এটা কে।
ইফাজ কথা ঘুরিয়ে বললো,
-টেবিলে খাবার দেওয়া আছে, চল। আমার বড্ড ক্ষুধা পেয়েছে।
সবাই খাবার খাওয়া জন্য বসে পড়লো।
ইমায়েত সাহেব হেসে বললো,
–বউমা ও আমাদের সাথে খেতে বসো।
-না মামা আমি পরে খেয়ে নিবো।
-আরে বসো না।
সুমির ভাই অতসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
–ভাবি আপনি আমাদের সাথে বসে প্লিজ।এতে আমাদের ভালো লাগবে
অতসীকে বার বার বলছে তাই অতসী ইফাজের পাশের চেয়ারটা দেখলো খালি। অতসী বসতে যাওয়ার আগেই সুমি ইফাজের পাশের বসে পড়লো।এতোক্ষণ অন্য চেয়ারে ছিলো অতসী যখন ই বসতে যাবে তখনই উঠে ইফাজের পাশে বসলো। অতসী মন খারাপ হলে ও মানিয়ে নিয়ে পাশে থাকা চেয়ারটায় বসে পড়লো। তানিয়া বেগম কিচেন থেকে এসে যখন দেখলো অতসী সবার সাথে বসেছে খাবার খাওয়ার জন্য তখন ই তেলে বেগুনে জ্বলল উঠে,
-মহারনী দেখছি খেতে বসেছেন তাহলে খাবার কী আমি সার্ভ করবো।
কথাটা শোনা মাত্র অতসী উঠে দ্রুত খাবার সার্ভ করতে থাকে। সবাই খাওয়ায় ব্যস্ত অতসী লুকিয়ে চোখের জল মুছতেছে। এভাবে লোকের সামনে অপমান না করলে ও তো পারতো। একটু ভালোবেসে কথাগুলো বললে কী হয়। রুপা রিমিকে কী কখনো উনি এভাবে বলতে পারতো।
-তোমার এই চেহারা দেখতে কেউ এখানে বসেনি। কার কী লাগবে দেখো।
অতসী চোখ মুছে সবাইকে জিজ্ঞেস করলো কিছু লাগবে কিনা।
সবার খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্লেট গুলো ধুয়ে নিলো। কিচেনে সব কিছু ঘুছিয়ে রেখলো। রানুকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। রানু কালকে সকালে আবার আসবে হয়তো। একটা প্লেট নিয়ে খাবার খেতে গেলো অতসী।খাবার খেতে গিয়ে দেখলো অল্প ভাত আর একটু মাংস আরেক বাটিতে একটু ডাল অবশিষ্ট আছে। অতসী তো দেখেছিলো অনেকগুলো খাবার ই আছে হয়তো তানিয়া বেগম খাবার ফ্রিজে রেখে চলে গেছে। অতসী এই খাবার টুকু নিয়ে ই খেয়ে নিলো। খাবার খেয়ে ক্লান্ত শরির নিয়ে রুমে ডুকতে ই দেখে ইফাজ আর সুমি ও তার ভাই বসে বসে গল্প করছে। অতসীকে দরজায় দাড়াতে ইফাজ বললো,
-তুমি অন্যকোথাও গিয়ে ঘুমাও।
চলবে,