স্পর্শ পর্ব-০৯

0
999

#স্পর্শ
#পর্ব_৯
#writer_nahida_islam

-মা আমি আর তো বিয়ে করবো না, লেখাপড়া করবো, নিজের পায়ে দাড়াবো, চাকরি করবো তোমাদের অনেক সুখে রাখবো দেখো। আমি জীবনে কখনো বিয়ে করবো না। নিয়ে যাও না মা তোমার সাথে।

-অতসী বিয়েটা ছেলেখেলা না। নিজেকে ওদের সাথে মানিয়েনে।

-মা তুমি এমন ভাবে কী করে বলতে পারো। আমি এখানে ভালো নেই।

-আচ্ছা এভার ই শেষ, এরপর যদি ইফাজ কিছু করে তাহলে আমি নিজে তোকে বাসায় নিয়ে যাবো।

অতসী মায়ের সাথে আর কোনো কথা বললো না। দৌড়ে ছাদে চলে যায়। ছাদের এককোণে বসে বসে কাদছে। বেশ যন্ত্রনা করছে পোড়া যায়গায়টা তে। অতসী বসে বসে গাছের পাতা একটা একটা করে ছিড়ছে। সব রাগ যেনো এই গাছগুলোর উপর ঝাড়ছে। হঠাৎ বাতাস আসতে ই চুলগুলো খুলে উড়তে শুরু করলো, হাতখোপা করা ছিলো তাই সহজে চুলগুলো খুলে গেলো। আসতে আসতে বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে অবাধ্য চুলগুলো হুমড়ি খেয়ে এসে মুখের উপর পড়ছে। চুলগুলো সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা অতসী করছে না সরালে ই বা কী হবে আবার তো অবাধ্য হয়ে মুখের উপর ই এসে পড়বে। অবাধ্য চুলগুলোর মতো নিজের জীবনটা হয়ে গেছে, বার বার ইফাজ নামক কালো অধ্যায় থেকে বের হতে চাইলে ও বের হতে পারছে না।
বৃষ্টির ছোঁয়া কল্পনা সুতো ছেড়ে বেড়িয়ে আসলো অতসী। বৃষ্টি হচ্ছে। নিজের দেহের পোড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা, মনের বিশাল ক্ষত হওয়ার যন্ত্রনা, চোখের অবাধ পানি সব বৃষ্টি সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে।

অতসী উঠে নিচের দিকে তাকালো, মাটির ভেজা গন্ধে চারপাশ ভরে গেছে। অতসীর বেশ বৃষ্টি পছন্দ, যখন বাবার বাসায় ছিলো তখন বৃষ্টি আসলে ই রান্না করতে খুব ইচ্ছে করতো, যদিও অতো ভালো রান্না করতে পারতো না তাও তিন বোন মিলে মজা করে রান্না করতো। খেতে যেমন ই হক রান্না করতে ভালো লাগতে। কিন্তু এগুলো সব ই এখন স্মৃতি। নির্দিষ্ট একটা বয়সে মেয়েরা হয়তো বাবা মায়ের কাছে বোঝা হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে এমনটা মনে হওয়া কী কম্য নয়। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিচে বসে পড়ে। পাশে একটা চেয়ার ছিলো চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে অতসী চোখ বন্ধ করে আছে।

-বৃষ্টি ছেড়েছে প্রায় একঘন্টা হয়ে গেছে। এখন ও রান্না বসনো হয়নি। বাসায় এত মেহমান করো কী কোনো কান্ড জ্ঞান নেই।

রেনুকে ডেকে কথাগুলো শুনিয়ে দিলো তানিয়া বেগম।

-আপনি ই তে নিষেধ করছেন আমাকে রান্না না করার জন্য। নতুন বউকে বলেছেন রান্না করার জন্য।

–তাহলে মহারানী এখন কোথায়?

-আমি খুজেছি, পাই নাই কোথাও এখন আপনি খুজে দেখেন।

-ওর রুমে গিয়ে দেখ পরে ঘুমাচ্ছে হয়তো,মহারানী।

-গিয়েছিলাম, সুমি আপা আর ইফাজ দাদভাই ছাড়া আর কেউ নেই।

-কী বলিস মরে টরে গেলো নাকি। এই বাড়িতে মরলে আবার জমেলা, কেস টেস হবে পুলিশ এসে জেরা করবে। আপদ একটা আজকে মা নিয়ে গেলে ও শান্তি পেতাম।

এগুলো বলতে বলতে তানিয়া বেগম ইফাজের রুমের দিকে ছুটে গেলো।
রেনু চুপটি করে দাড়িয়ে আছে, এই মহিলার ভেতরে কী মনুষ্যত্ব আছে, বার বার প্রশ্ন জগছে মনে। মেয়েটা মেরে গেলে কিছু যায় আসে না কিন্তু থানার নিয়ে যত ভয়। এদের কী মৃত্যু হবে না নাকি কখনো।
রানু খুব ভয় পেয়ে গেলো মেয়েটা কোথায় গেলো। খুজে না পাওয়া অব্দি শান্তি হবে না তার।

তানিয়া বেগম রুমে ডুকেতে ই দেখে সুমি ইফাজের হাত ধরে বসে বসে মুভি দেখছে। তানিয়া বেগমকে দেখে সুমির রিয়াকশন ছিলো যাদি পারতো তাহলে তানিয়া বেগমকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতো। কতো নটক করে ইফাজকে নিজের করে পেয়েছিলো এই মহিলাটা এসে এখন দিবে সব মাটি করে।
তানিয়া বেগম সুমির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ইফাজকে বললো,

-তোর বউ কোথায় জানিস।

ইফাজ উওর দেওয়ার আগে সুমি উওর দিলো,

-তোর বউ কেমন শব্দ ফুপ্পি মেয়েটার একটা নাম তো আছে ঐটা বলে ডাকতে পারো।

ইফাজ খুব শান্ত ভাবে উওর দিলো,

-হবে হয়তো কোথাও।

-রানু তো খুজলো পায়নি কোথাও।

এবার ইফাজ সুমি হাত জোড়ে ছাড়িয়ে নিয়ে খুজতে চলে যায়। ইফাজ সব জায়গায় খুজে ছাদে যায়। কিন্তু ছাদে ও পায় না। না পেয়ে চলে আসতে যাবে ঠিক তখন ই চোখ যায় সাইডে চেয়ারের দিকে। ইফাজ দৌড়ে গিয়ে অতসীকে ধরতে ই অতসী নিচে পড়ে যায়।
ইফাজের সাথে সাথে তানিয়া বেগম ও ছাদে এসেছে। অতসীকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে তানিয়া বেগম বললো,

–ইফাজ মেয়েটা মরে গেলো নাকি। মরে গেলে লাশ বাগানে পুতে ফেল।

কথাটা শুনে ই ইফাজ জোরে চিৎকার করে বলে,

–স্টপিড মা। কী আবলতাবল বকছো।

ইফাজ অতসীকে কোলে তুলে নেয়। দ্রুত রুমে নিয়ে গিয়ে বেডে শুইয়ে দেয়।

-ইফাজ অতসীর শরীর ভেজা তো গায়ে ময়লা ও লেগে আছে। এই বেডে কাভারটা নষ্ট হয়ে যাবে ইফাজ।

এবার ইফাজ বেশ রেগে বললো,

–একটা মানুষ এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে আর তুমি ভাবছো বেড কাভার নষ্ট হয়ে যাবে।

ইফাজের এমন ব্যবহার দেখে তানিয়ে বেগম রেগে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

মুখে ভালো করে পানি ছিটাতে ই অতসীর জ্ঞান ফিরে আসলো। অতসীর জ্ঞান ফিরে আসতে ই উঠে বসার চেষ্টা করে। চোখ খুলে চারপাশে চোখ ভুলাতে দেখে কেউ নেই। একটু নড়েচড়ে শুতে ই শরীরে প্রচন্ড জ্বর অনুভব হলো। নিজের দিকে তাকাতে ই দেখলো, ড্রেস চেঞ্জ করা। ব্লু কালারের একটা শাড়ি শুধু শরিরে পেচিয়ে রেখে চলে গেছে কেউ।

–টেবিলের উপর ঔষুধগুলো রাখলাম ইচ্ছে হলে খেয়ে নিয়।

অতসী ইফাজের দিকে তাকিয়ে বললো,

-আমার ড্রেস চেঞ্জ করেছে কে।

ইফাজ কিছু একটা ভেবে উওর দিলো,

-বউ যেহেতু আমার মানুষকে তো আর ছোতে দিবো না।আর স্যরি আমি শাড়ি পড়াতে পারি না তাই শুধু পেচিয়ে দিলাম।

-আমাকে উঠিয়ে আনলেন কেনো। আর এতো কদর ই বা করছেন কেনো।

-সেই উওর তোমাকে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।অযথা কথা বলে ফালতু সময় নষ্ট করতে চাইনা।

-সেইম।

–অহ্ হ্যালো কী বললে তুমি।

-আপনি যেটা বলেছেন সেটা ই।

-আমি কী বলেছি।

-মনে করে দেখুন।

-বড্ড বেয়াদব মেয়ে তুমি।

-ছেড়ে দিন। আদবে ভরপুর কাউকে বিয়ে করেন।

-এই শোনো তোমার সাথে কথা বলার সময় আমার নেই।

-আমার ও কোনো ইন্টারেস্ট নেই।

-নিজেকে আয়নায় দেখেছো।

-আপনি এতোদিন বলেননি তো তাই দেখিনি।

ইফাজ আর কোনো কথা বললো না। কাপালে কয়েকটা ভাজ ফেলে অতসীর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে চলে গেলো।

-নতুন বউ

ডাকটা শোনে ই চোখ মেলে তাকালো অতসী। রানুকে দেখে মুখে হাসি ফুটলো তার।

-কেমন লাগছে এখন।

-এই তো ভালো। আমাকে একটা হেল্প করুন তো।

রানু বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-কী বলে ফেলো।

-ঐ আলমারিতে দেখো আমার একটা থ্রি-পিস আছে ওয়াইট কালার। একটু বের করে দিবা।

রানু ঝটপট গিয়ে আলমারি থেকে জামাটা বের করে আনলো। অতসী রানুর হেল্প নিয়ে জামাটা পড় ফেললো।
রানু অতসীকে বসিয়ে চুলগুলো ভালো করে মুছে দিয়ে চলে গেলো। উফফ শাড়িতে কেমন অস্তির লাগতো। কয়েকদিন শাড়ির মধ্যে পা লেগে পরে গেছিলাম। আগে কখনো শাড়ি পড়ে এতোটা টাইম থাকিনি তাই হয়তো এমন হয়েছে।
রানু হাতে একটি প্লেইট নিয়ে রুমে ডুকেছে। হাতে খাবারের প্লেট দেখে ই অতসী বললো,

-আমাকে ভর্তা করে দিতে পারবে রানু।

-কী ভর্তা খাবা বলে ফেলো। ভর্তা বানাতে আমি প্রস্তুত রানীমা।

কথাটা বলে ই রানু হাসি দেয়। অতসী ভ্রুকুচকে আর চোখে তাকিয়ে বললো,

-এটা কী বললে।

–দেখো না খালাম্মা তোমাকে মহারানী ডাকে রাগ করে আর আমি রানী বলে সম্বধন করলাম ভালোবেসে। তুমি তো আমার কাছে রানীর মতো ই।এ বাসায় কেউ আমারে যথার্থ সম্মান দিলে ঐটা তুমি।এখন বলে ফেলো কীসের ভর্তা খাবে।

–শুটকি মাছের ভর্তা আর কালোজিরা আর ফ্রিজে যে মাছের আছে তার ভর্তা করে নিয়ে আনো প্লিজ।

-তুমি দশটা মিনিট বসো আমি করে আনছি।

অতসী জ্বর হলে ই এই ভর্তাগুলো বানিয়ে খাওয়াতো মা।

বেশিক্ষন পর,

–ভাবি আসবো।

রোহানকে দেখে মনটা ভার হয়ে যায়। ইফাজ এখন রুমে ডুকে দেখতে পারলে তো আবার কোমো জামেলা পাকিয়ে বসে কে জানে। তাও মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বললো,

-আসুন।

-কেমন আছেন এখন।

-এই আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

-রাতে খেয়েছেন।

–এইতো খাবার চলে এসেছে। এখন খাবে।

রানু হাতে ভর্তা নিয়ে হাজির। ঝটপট ভর্তা দিয়ে ভাত মাখিয়ে অতসীকে খাইয়ে দিতে থাকে।

কী সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে ফর্সা মুখে নাকের উপর ফুলটা ঝলঝল করছে। চুলগুলো ছেড়ে রাখায় মুখের সৌন্দর্য়টা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এতো সুন্দর একটা মেয়েকে কীভাবে তার এতো অত্যাচার করে তাও মেয়েটা মুখ বুঝে সহ্য করে। রোহান কথা বলছে আর অতসীকে খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছে।

হঠাৎ ইফাজ রুমে ডুকলো। রোহান কথা বলছে অতসী হেসে হেসে উওর দিচ্ছে। ইফাজ বিদ্যুৎ গতিতে অতসী প্লেটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে অতসীর মুখ চেপে ধরে।

চলবে

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]