স্মৃতির দেয়াল পর্ব-৪৩ এবং শেষ পর্ব

0
4252

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_৪৩(শেষ পর্ব)
Writer -Afnan Lara
.
আমি ছোট বলে গাছে উঠতে পারি না,,তোরা দুজন হাত পাত,সেটাতে আমি পা রেখে তারপর গাছে পা রাখবো
.
কিন্তু আমরা কেন এই কষ্ট করতে যাব??তুই হাত পাত,আমাদের মধ্যে একজন উঠবে
.
আমি উঠবো,আর তোরা হাত পাতবি কারণ হলো আমার বাবা পুলিশ, আমার দাদু ও পুলিশ ছিলো
.
বাচ্চা দুটো মুখ বাঁকিয়ে হাত পাতলো
আর সেই ছেলেটি প্ল্যানমত গাছেও উঠে পড়লো,বয়স ছয় বছর তার,,গাছে ওঠা তার একমাত্র শখের কাজ
আর যারা হাত পেতে ধরেছিলো তারা হলো তার স্কুলের ফ্রেন্ড,,স্কুল থেকে ফেরার সময় তারা তিনজন মিলে ঠিক করলো আজ আম পাড়বে
যে গাছে উঠেছে সে লিডার,তার দাপট অনেক বেশি,কেউ তার কথা না শুনলেই সে এক ডায়ালগ মারে আর তা হলো তার বাবা পুলিশ আর তার দাদা পুলিশ ছিলো
তার এই ডায়ালগের তোয়াক্কা কেউ না করলেও তার ঐ ফ্রেন্ড দুটো এই ডায়ালগেই সব করতে রাজি হয়ে যায়
তারা ভীতূ টাইপের কিছুটা,ভাবে কথা না শুনলে যদি পুলিশে ধরে নিয়ে যায়
.
মুন হাতে শুকনো লাঠি নিয়ে নীলদের বাসার বাগানের একটা গাছের পিছনে লুকিয়ে আছে,,তার আর নীলের একমাত্র সন্তান ভোরের আসার অপেক্ষা করছে সে এখন
ভোরের স্কুল এসময়ে ছুটি হয়,,বাসার কারে করে তার বাসায় ফেরার কথা কিন্তু কার খালি এসেছে,ড্রাইভার জানিয়েছে আজকেও ভোর ফাঁকি দিয়ে তার দুই বিচ্ছু বন্ধুসহিত পালিয়েছে
মুন তাই লাঠি হাতে ওরই অপেক্ষা করছে,গেট দিয়ে ঢুকলেই পাকড়াও করবে,তবে মারবে না
হাতে লাঠি নেওয়ার কারণ হলো বাই চান্স নীল আসলে সে বুঝাবে সে ভোরকে শাসন করে
আসলে কিন্তু সে শাসন করে না,আদরে আদরে একেবারে বাঁদর বানিয়েছে
কিন্তু নীল সবসময় ভোরের গাছে ওঠা নিয়ে মুনকে দোষ দেয় কারণ মুনের অভ্যাস থেকেই হয়ত তার ছেলের ও এখন গাছে থাকতে ভাল্লাগে
শো অফের জন্য সে হাতে লাঠি নিয়েছে তবে তার চান্দুকে ফুলের টোকাও সে দেবে না,,দোয়া করছে যেন নীলের আগেই ভোর ফিরে আসে,এই ছেলের কারণে সবসময় বকা খায় মুন,নীল ভোরকে না বকে মুনকে বকে
ভোর পেটে থাকাকালীন ও মুন গাছে উঠেছিলো গুনে গুনে তিনবার,নীলের হাজার মানাও সে শোনে নি,,একবার তো হসপিটালে নিয়ে যেতে হয়েছিলো এমন গাছে ওঠায় বেবির স্থান পাল্টেছে কিনা তা জানার জন্য
এই কারণে আজও ভোরের এমন কাজ কর্ম দেখলে নীলের রাগ ওঠে মুনের উপর
যেটার ভয় পাচ্ছিলো মুন সেটাই হলো,নীলের জিপ ভেতরে ঢুকছে
মুন ঢোক গিলে গাছের ওপাশে লুকিয়ে পড়লো যাতে ওকে দেখা না যায়
তাও একটু উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো নীল কোথায় যায়
নীলকে জিপ থেকে নামতে দেখে মুন আরও অবাক হলো কারণ নীলের কোলে ভোর
ভোরকে দেখে মুনের গলা শুকিয়ে গেছে,তারপর ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুঁজে এক্টিং শুরু করলো,লাঠিটাকে নাড়াতে নাড়াতে মুন বললো”বেয়াদব ছেলে!!আজ আবারও গাছে উঠেছিস,তোকে আজ মেরেই দিব আমি”
.
নীল ভ্রু কুঁচকে বললো”ভোরকে তো আজ আমি ওর স্কুল থেকে আনলাম,,ওর স্কুলের প্রিন্সিপাল কল করে বললো আজ নাকি বাসা থেকে কার যায় নাই”
.
মুন চোখ বড় করে ভাবলো”কার তো গিয়েছিলো,ড্রাইভার তো ওকে পায়নি,তাহলে কথা ঘুরে গেলো কেন”
.
নীল ড্রাইভারকে ডাক দিলো,,ড্রাইভার জানালো সে কার নিয়ে গিয়েছিলো,,ভোরকে পায়নি বলে চলে এসেছে
আর ভোর তো এমন করে অনেকবার পালিয়েছে তাই সে চলে এসেছিলো আর এদিক ওদিক না খুঁজে
.
ভোর দাঁত কেলিয়ে মুনের দিকে চেয়ে আছে,কারণ সে আম চুরি করে খেয়ে দেয়ে আবার স্কুলে এসে বসে ছিলো,,কেউ জানলো না সে এক ঘন্টার মাঝে কি কূকীর্তি করে বসে আছে
মুন তো ভোরের দাঁত কেলানো দেখেই বুঝেছে তার ছেলে জট পাকিয়েছে
যাই হোক কথাটা ঘুরে গেলো,আজ নীলের মুড ভালো
মুন কোমড় থেকে শাড়ীর আঁচল বের করতে করতে বললো”সাহেব আজ এত খুশি ক্যান?”
.
বলা যাবে না,বললে সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যাবে
.
বুঝে গেছি
.
কি বলোতো?
.
নিপা আপু,সামির ভাইয়া আর মিফতু আসবে তাই না?
.
ভোর তো লাফ দিয়ে বললো”মিফতু আসবে?”
.
নীল ভোরের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো”না ওরা না”
.
তাহলে কে?আর কি সারপ্রাইজ হতে পারে?
.
নীল তোয়ালে হাতে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো,মুন তো ভাবনায় পড়ে গেছে এমন কিসের সারপ্রাইজ হতে পারে
ভাইয়া ভাবীরা আসবে নাকি?
নাহ তারা আসলে নীলের আম্মু আমাকে বলতেন,তাহলে?
.
নীল তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে চোখ খুলতেই দেখলো মুন আর ভোর একই লুকে ওর দিকে চেয়ে আছে
.
নীল না দেখার ভান করে দুপুরে খাবার খেতে চললো
মুন ওর সামনে এসে বললো”কি সারপ্রাইজ বলবেন নাকি আমি দুপুরের খাবার লুকিয়ে রাখবো?”
.
বলবো না,আমি হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসবো বরং
.
মুন তো রেগে রেগে গেলো নীলের জন্য খাবার বাড়তে
ভোর কোথা থেকে দৌড়ে এসে বললো”আম্মু দেখো নতুন গাড়ী”
.
মুন প্লেটে এক চামচ ভাত বেড়ে বাসার গেটের দিকে তাকালো,,একটা কার ঢুকছে,,মুন একটু এগিয়ে এসে দাঁড়ালো,নীল মনে হয় মায়ের রুমে গেছে
ভোর এক দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো কাছ থেকে দেখবে বলে
কার থেকে নামলো সাকিব,,ওকে দেখে মুনের মুখে হাসি ফুটলো সাথে সাথে
কারের ওপাশ থেকে আরেকজন নামলো,,পরনে কালো রঙের শাড়ী,,চুল ছোট ছোট,,চোখে চশমা,,ঠোঁটের কোণায় হাসি,,শাড়ীর কুচি এক টান দিয়ে সব গুলো এক সারিতে এনে ঠিক করে মেয়েটি এগিয়ে গেলো,মুন দেরি না করে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে,,ভোর ভাবছে এ আবার কে
মেয়েটি হলো হিয়া
জি ঠিক শুনেছেন,,হিয়া মারা যায়নি
কি করে মারা যাবে,তাকে দুটো মানুষ পাগলের মতন ভালোবাসে,,দুজন মিলে চিকিৎসার খরচ দিতে থাকলে তাকে কি আর মরতে দেওয়া যায়, অবশ্য ভাগ্য থাকা লাগে
মরণব্যাধীর সাথে বছরের পর বছর লড়াই করে বেঁচে থাকা সহজ কিছু নয়
আজও বলা যায় না সে বাঁচবে নাকি বাঁচবে না
টাকার প্রয়োজন অনেক বেশি ছিলো,,এতটা বছর ধরে সব খরচে নীল ৫০% দিতো,,তার ব্যাংক ব্যালেন্স যেন সে হিয়ার নামেই করে দিয়েছিলো
এখন যে সে একেবারে ভালো হয়ে গেছে তা কিন্তু না,তবে আগের চেয়েও ভালো আছে,,এখনও তার চিকিৎসা চলে
.
সারপ্রাইজ টা হলো তারা যে বিদেশ গিয়েছিলো,আজকেই ফিরেছে,এর আগে আসেনি তারা
ভোর তো হিয়াকে চেনেই না
নীল কখনও হিয়ার ছবি হাতে নিয়েও দেখতো না,ফোনে কথা হতো মাঝে মাঝে,মুন ও বলতো
তবে ছবি দেখা হয়নি তার
সে দূর থেকে কারটাকে ভালো মতন দেখছে আর মুন যে হিয়ার সাথে কথা বলছে তার আগামাথা বোঝার চেষ্টা করছে
কিছুই বুঝছে না সে,তার মাথায় আরেকটু বোঝা এনে যোগ করলো নীল
নীল ও ভেতর থেকে এসে সাকিব আর হিয়ার সাথে হেসে কথা শুরু করে দিলো
আচ্ছা এরা কারা!জীবনে তো দেখি নাই,কে হয় আমাদের?
.
হিয়ার চোখ ভোরের দিকে পড়লো,,ভোর লিচু গাছটাকে ধরে আগ্রহ নিয়ে এদিক পানেই চেয়ে আছে,তাকে ডাক দিলেই যেন সাথে সাথে দৌড়ে দিবে
হিয়া মুচকি হেসে বললো”ভোর?”
.
সাকিব উঁকি দিয়ে ভোরের দিকে তাকিয়ে বললো”এ দেখি মুনতাতার ডুপ্লিকেট, চেহারা একদমই এক”
.
ভোর এক দৌড়ে এসে বললো”আম্মু! আব্বু উনারা কারা?”
.
মুনতাহা বলতে যাওয়ার আগেই হিয়া হাঁটুগেড়ে বসে ওর হাতদুটো ধরে বললো”আমি তোমার ছোট আম্মু”
.
মানে আরেক মা?
.
হুম
.
ভোর হেসে দিয়ে বললো”তুমিও কি আমাকে মারার এক্টিং করবে কিন্তু মারবে না,ওরকম করবে?”
.
হিয়া হেসে দিয়ে মুনের দিকে তাকালো,মুন মাথা চুলকিয়ে নীলের দিকে না তাকিয়েই পালালো জায়গা ছেড়ে,যেতে যেতে বললো”ভেতরে আসো সবাই”
.
নীল মুনের চলে যাওয়া দেখছে আর হাসছে
হিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”খুশি হলাম জেনে যে মুনকে তুমি অনেক ভালোবাসো”
.
জানি না ওকে কতটুকু বাসি,ও ভালো বলতে পারবে,,
.
ছোট আম্মু জানো আমার ভাই অথবা বোন আসবে বাসায়..
.
হিয়া মুচকি হেসে নীলের দিকে এক নজর তাকিয়ে সাকিবের হাত মুঠো করে ধরে বাসার দিকে চললো,,নীল তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে,ভোরের কান টেনে বললো”তোকে বললাম না অপ্রয়োজনীয় কথা না বলতে?”
.
এটা শুনে দিদু এত এত মিষ্টির অর্ডার দিয়েছিলো এটা অপ্রয়োজনীয়?
.
তো তা নয়ত কি,ছোট ছোটর মতন থাকবি
.
শুনো আব্বু,আমি ছোট,,আর এই যে ভেতরে গেলেন,উনি আমার ছোট আম্মু
তো ছোটো তো আরেক ছোটকে সিক্রেট বলবে তাই না?
.
ওরে শেয়ানা!!এবার সত্যি সত্যি শুকনো লাঠি দিয়ে মারবো তোকে
.
আচ্ছা আমি চুপ

হিয়া এখন সাকিবের সাথে তার বড় বোনের বাসায় গেছে,,
এই অসুখের পিছনে দৌড়াতে গিয়ে তাদের বাচ্চা নেওয়া হলো না
এরকম রোগের মাঝে প্রেগন্যান্ট হওয়া একদমই রিস্কি,ডাক্তারের নিষেধ সাকিব শুনেছে
তবে হিয়ার মন মানছে না,,আর আজ ভোরকে দেখার পর থেকে তো তার মন সেখানেই রয়ে গেছে
বড় আপু বললেন এবার নেওয়া যায়,,রোগটা যেহেতু আল্লাহর রহমতে কন্ট্রলে চলে এসেছে

মুন ভোরের চুলে বিলি কাটতে কাটতে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে
আর নীল একটা টুল নিয়ে বসে মুনের পায়ে আলতা লাগাচ্ছে
যখন ওর মন চায় ও এমনটাই করে
মুনের এটা অনেক ভাল্লাগে,,ভোরকে ঘুম পাড়ানো শেষ করে মুন উঠে বসতেই নীল ওর পা মুঠো করে ধরে ফিসফিস করে বললো”নড়বা না”
.
হঠাৎ আজ আলতা কেন?মন এত ভালো আজ?
.
অনেক ভালো
.
কারণটা কি হিয়া আপু?
.
নীল মুনের পায়ে সুড়সুড়ি দিয়ে বললো”আজকেও এটা বলবে?”
.
মুন হেসে দিয়ে বললো”তাহলে কি কারণ?”
.
আমাকে আরেকটা উপহার দিতে যাচ্ছো সেটা মনে আসতেই মন ভালো হয়ে গেলো
.
কাজের ফাঁকে তো আপনার কিছুই মনে থাকে না,,তা হুট করে মনে আসলো কেন?আপনার তো এসব কথা একদম মাথা থেকে বেরিয়ে যায় কাজের চাপে
.
ভোর মুখ ফসকে হিয়া আর সাকিবের সামনে বলে দিয়েছিলো তখন মনে আসছে
.
হিয়া আপু কি বললো এটা শুনে?
.
শুধু হালকা হেসে চলে গেলো
.
আচ্ছা হিয়া আপুর বেবি হবে না?
.
হবে তো,,হিয়া তো নাকি চায়,কিন্তু সাকিব ভয় পায় যদি হিয়ার কিছু হয়ে যায়
তার উপর এরকম পেশেন্টকে ডাক্তার রাই মানা করে দেয়
.
মুন বালিশ একটা পেটের মাঝে রেখে বললো”হিয়া আপুকে এতদিন পর দেখে কেমন লাগলো শুনি একটু”
.
পেট বড় আলা একটা মেয়েকে দেখে আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেছি একদম
.
মুন রাগ করতে গিয়েও পারলো না,ওর মাথায় আসলো ওরই তো পেট বড়
নীল ফিক করে হেসে দিয়ে আলতা লাগানোয় মন দিলো আবার
কিছুক্ষণ বাদে বললো”এখন আর হিয়াকে দেখলো বুক কাঁপে না,,”
.
তো কখন কাঁপে?
.
যখন আমার ভোরকে গাছে দেখি তখন
.♣
কয়েক মাস কেটে গেছে,,ভোরের এখন বোন ও আছে,নাম হলো নীহারিকা
নীহারিকা আসার পর থেকে ভোরের গাছে ওঠা বন্ধ হয়েছে
তবে সে চিরদিনের জন্য এই স্বভাবকে মাটিচাপা দেয়নি
তার খেয়াল নীহারিকা বড় হলে তাকে নিয়ে গাছে উঠবে সে
ওদিকে হিয়া হাজারও মিনতি করে সাকিবের মন গলাতে পারলো,সাকিব রাজি হলো হিয়ার প্রস্তাবে,,হয়ত নানা ঝুঁকি পার হতে হবে তাও এবার ট্রাই করাই যায়
হিয়ার খুশি ধরে কোথায়
সে তো ভোর আর নীহারিকার ছবি টাঙিয়ে রেখেছে তার রুমে
নীলের চেয়ে এখন ওদের দেখানোর জন্য দিন গুনে সে
নীল এখনও মুগ্ধ হয়ে মুনতাহাকে দেখে
ঐ যে প্রতিদিন নতুন করে মুনতাহাতে মুগ্ধ হয় সে
মুনতাহা নিজ থেকে তেমন আহামরি কিছুই করে না
তার পরেও নীল ওর সব কিছুতে ভালোলাগা খুঁজে নেয়
হিয়া ওর মন আর জীবন থেকে চলে গিয়েছে ঠিক তবে
নিয়ম করে ওর অসুখের খবর সে নেয়
হিয়াকে ভুলতে পারার জার্নি সহজ ছিলো না তা আপনারা সবটাই জানেন
এখনও যে ভুলতে পেরেছে তা কড়া মুখ করে বলা যায় না
তবে তার চোখ এখন বিভোর হয় মুনতাহার মুগ্ধতায়,,তার উপর একটা বাঁদর আর আরেকটা বাঁদরনি উপহার দিয়েছে মুন
এদের মাথা থেকে থুরি গাছ থেকে নামানোর পিছনে নীলের দিনকাল বেশ যাচ্ছে
কিন্তু কথা হলো আরেকটা,ভোরের সেই ডায়ালগে ওর বন্ধুগুলা ইদানিং ভয় পায় না,সে এটা নিয়ে মহা টেনসনে আছে
এদিকে নীহারিকা বড় হলে ওকে গাছে ওঠানো ও শিখাতে হবে,নাকি মায়ের হেল্প নিব কোনটা করবো
এসব ভাবতে ভাবতে ভোরের গাছের প্রতি ইন্টারেস্ট উঠে গেছে,নীল এই খুশিতে মসজিদে টাকা দিয়ে এসেছে
কিন্তু এত ভালো হলে তো চলে না
এবার ভোরের মাথায় ভূত চেপেছে সে এবার মাছ ধরা শিখবে,,
হায়রে!! তাকে পুকুরের আশপাশ থেকে সরানোই মুশকিল হয়ে গেছে
কি ঝামেলা,এখন মনে হচ্ছে গাছে ওঠাটাই ভালো ছিলো
নীল ছুটি নিলো ভোরকে সাঁতার শেখাবে বলে
নীহারিকাকে বুকে ধরে রেখে হাসতে হাসতে মুনের কান্না এসে যাওয়ার উপক্রম,,ভোর নীলকে এত পরিমান জ্বালাচ্ছে যে নীল বাধ্য হয়ে একদিন বললো”তোর নাম ভোর না রেখে রাত রাখা উচিত ছিলো,অন্তত শান্ত থাকতি,আমি তোর নাম রাখার সময় ভুলে গিয়েছিলাম যে ভোর মানেই দিনের শুরু,,এরকম করে সারাটাজীবন জ্বালাবি তাহলে”
.
নীলের কললিস্ট মুনতাহা আগে অনেকবার চেক করতো,কিন্তু একদিন সে নীলকে হিয়ার সাথে ফোনে কথা বলতে শুনেছিলো,নীলের কথাগুলো ছিলো-
হিয়া জানো!ভেবেছিলাম এই জীবনে আর ভালোবাসা আমাকে দিয়ে হবে না,মেনেই নিয়েছিলাম পাথরের বুকে ফুল ফুটবে না
কিন্তু দেখো!তাহার দিকে একবার তাকালেই মুগ্ধতায় পড়ে যাই,চোখ সরালে মনে হয় কিছুক্ষন নেশায় ছিলাম
এটা কিরকম মাদকতা বুঝতে পারি না,,ওরে আমি বিয়ের দিন থেকে এভয়েড করে আসছিলাম,,কতই না কষ্ট দিয়েছি
তবে ওকে মেনে নেওয়ার পিছনে তোমার ও কিছু হাত আছে,তুমি নিজ থেকে সাকিবকে মেনে নেওয়ার কথা না বললে আমিও হয়ত মুনকে মেনে নেওয়ার কথা বলতাম না
আসলে জীবনে যা ঘটার তা তো ঘটেই গেছে,শুধু শুধু আমি মুনকে আর তুমি সাকিবকে কষ্ট দিয়ে আসছিলাম
এখন টের পাচ্ছি কতটা ভুল ছিলাম
স্মৃতির এলবাম রাখা শ্রেয় তবে দেয়াল নয়,,দেয়ালের কারণে সব বন্ধ হয়ে যায়,এপাশের সাথ ওপাশের সম্পর্ক থাকে না,মিলবন্ধন থাকে না
তার চেয়ে বরং এলবাম রাখলে ক্ষতি কি!
আমি তাই স্মৃতির দেয়াল ভেঙ্গে দিলাম,ঠিক তোমার দেখা দেখি!”
.
সেদিনের পর থেকে মুন আর নীলকে সন্দেহ করে না,,সে বুঝে গেছে নীল আর কোনোদিন হিয়াকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে না
শুধু তাকে নিয়েই,তাকে ভেবেই জীবন পার করবে,,
ভোর বলেছিলো আপনি হিয়াকে সেদিন কি বলেছিলেন,বলেছিলেন-আমাকে কতটা ভালেবাসেন তা আমি জানি??
তাহলে শুনুন,আপনি আমায় ততটা ভালোবাসেন যতটা পুরনো প্রেমের দেয়াল ভাঙ্গতে দরকার হয়
আপনি আমায় হিয়ার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন মিঃ নীল,,,
কারণ প্রথম প্রেম যদি এতই ভালোবাসার হতো তাহলে দ্বিতীয় বার অন্য কারোর প্রেমে পড়তেন না
স্মৃতি গুলো এখন এলবাম হয়েই থাকুক
আর আমি আপনার জীবনে ভোর হয়ে রাতের নীহারিকা হয়ে থাকি
♥♥♥♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥♥♥