#সৎ_মা (১৫)
#সামসুজ্জামান_সিফাত
হোটেলে থেকে খাবার খেতে খেতে আমি রশিদ চাচাকে জিজ্ঞেস করলাম,”তা চাচা বাড়ির দিক টা কেমন আছে ?”
– আমার বাড়ির কথা বাদ দিয়ে আগে বল, তুই কোথায় থাকিস ?
– এই ত এই শহরে ই থাকি।
– বুঝলাম এই শহরে কিন্তু এই শহরের কোথায় ?
– থাক তোমার ওসব জানতে হবে না।
– ঠিক আছে। কিন্তু তোর বাড়িতে যে অনেক বড় একটা কান্ড ঘটে গেছে শুনেছিস ?
– কি হয়েছে ?
– তোর বাবা স্ট্রোক করেছিল।
মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এ আমি কি শুনলাম ? আমার বাবা স্ট্রোক করেছে ! আমি চাচাকে জিজ্ঞেস করলাম,”কি বলছো ?”
– হ্যাঁ বাবা। যা সত্যি তাই বললাম।
– কবে আর কীভাবে ?
– তোকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার মাস ছয়েক পর তোর বাবা তোর সৎ মা কে পরকিয়ায় হাতে নাতে ধরেছিল। তারপর জানতে পারে তুই নির্দোষ। তারপর এসব সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করে বসে।
– ওহ্ আচ্ছা।
আর যাই হোক না কেন এটা ভেবে খুশি লাগছে যে, সৎ মায়ের মুখোশ টা বাবার সামনে খুলে গেছে। আর বাবা জেনে গেছে আমি নির্দোষ। রশিদ চাচা আরও বলতে লাগলেন,”তোর বাবা সুস্থ হবার পর থেকে তোকে অনেক খুঁজে বেরিয়েছে। এমনকি এখনো খুঁজে ই চলছে।”
– আচ্ছা চাচা শোন, তুমি বাবাকে বলো না যে আমাকে পেয়েছো বা আমার সাথে দেখা হয়েছে।
– কিন্তু কেন ?
– এমনি চাচা। তবে কিছুদিনের মধ্যে আমি নিজে ই বাবার কাছে যাবো।
– আচ্ছা।
– হ্যাঁ। আচ্ছা খাওয়া শেষ করে চলো তোমাকে হাসপাতালে দিয়ে আসি।
– ঠিক আছে।
দুজনের ই খাওয়া শেষ হলে, খাবারের বিল মিটিয়ে চাচাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে এলাম। রিশিপশনে আমার কার্ড দিয়ে বলে এসেছি যে, চাচির চিকিৎসার যত খরচ লাগে চাচার কাছ থেকে না নিয়ে যেন আমাকে জানায়। তারপর বোন, মাম-মামী ও তানিয়াকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম।
কেটে গেল আরও দশ দিন। আজকে ব্যাংক থেকে বের হবার একটু আগে আমার ফোনে একটা ফোন আসে। ফোন টা নিয়ে দেখি, ঢাকার একজন কাছের বন্ধু ফোন করেছে। তার নাম আরিফ। ডাক্তারি পড়ার জন্য বাহিরের দেশে গিয়েছে। আজকে প্রায় অনেকদিন পর ই ফোন দিয়েছে। আমি ফোন রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলাম,”কি রে বন্ধু কেমন আছিস ?”
– এই ত ভালো ই আছি। তুই কেমন আছিস ?
– আমি ও ভালো আছি।
– আমাকে ত ভুলে ই গেলি দেখছি।
– আরে না রে।
সে একটু অভিমানি সুরে বলল,”না রে। ভুলে ই যদি না যেতি তাহলে একদিন খবর নিলি না কেন ?”
– খুব ব্যাস্ত আছি রে বন্ধু তাই খবর নিতে পারিনি।
– বুঝি রে বুঝি।
– না রে বন্ধু ভুল বুঝিস না আমায়। সত্যি ই আমি খুব ব্যস্ত আছি।
– কি এমন ব্যস্ততা তোর।
– আরে আমি আমার বোন, মামা-মামী আর মামাতো বোনকে খুঁজে চলেছি। খবর পেয়েছি ওরা ঢাকা এসেছে। তাই ব্যাংকের কাজ সেরে ই গাড়ি নিয়ে শহর টা ঘুরতে থাকি যদি তাদের দেখা পাই।
– ওহ্। আচ্ছা শোন, আমি কালকে বাংলাদেশ সময় সকাল দশটায় দেশে আসছি তুই কিন্তু বিমানবন্দরে আসবি ই।
– আচ্ছা যদি সুযোগ পাই তাহলে আসবো।
– যদি সুযোগ পাই মানে কি হ্যাঁ ? আসবি বলছি মানে আসবি ই।
– আচ্ছা ঠিক আছে আসবো।
– মনে থাকে যেন।
– হ্যাঁ মনে থাকবে।
– আচ্ছা তাহলে রাখছি। একটু গুছাগাছ বাকি আছে।
– আচ্ছা। সাবধানে আসিস তাহলে।
– ঠিক আছে তুই ও সাবধানে থাকিস।
আরিফ ফোন কেটে দিলে আমি ব্যাংকের কাজ সেরে বেরিয়ে গেলাম। যেহেতু আমি ম্যানেজার তাই আমি যখন খুশি তখন ই বের হয়ে যেতে পারি। সন্ধ্যা সাত টা পর্যন্ত খুঁজলাম। কিন্তু প্রতিদিনকার মত আজকে ও কোনো কাজ হলোনা। ব্যর্থ মন নিয়ে বাড়ি চলে এলাম।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে, খাওয়া দাওয়া করে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্য বের হবো এমন সময় মা এসে জিজ্ঞেস করল,”কিরে বাবা আজকে ব্যাংকে যাবি না নাকি ?”
– না মা। আজকে আরিফ আসবে ওকে আনতে এখন বিমানবন্দরে যাচ্ছি।
– আরিফ কে নিয়ে বাড়ি নিয়ে আসিস তাহলে।
– আচ্ছা।
– আর শোন, সাবধানে গাড়ি চালিয়ে যাস। ওই দিনের মত আবার কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে।
– তোমার দোয়া আছে না তেমন কিছু ই হবে না আমার।
আমার কথা শুনে মা একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। আমি মাকে জড়িয়ে ধরলাম তারপর মা আমাকে নুয়িয়ে কপালে একটা চুমু দিল। তারপর মা বিদায় জানিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। এর ই মধ্যে আকিবের ফোন। ফোন টা রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলাম,”কি রে কি খবর ?”
– আর বলিস না ভাই খবর একদম খারাপ।
– কেন কি হয়েছে ?
– ওই যে ওইদিন আমার বিয়ের দিন যাদের টাকার বদলে কাঁঠাল পাতা দিয়েছিলি ওরা ধরেছে আমায়।
– বলিস কি ?
বলে ই হা হা করে হাসতে লাগলাম। আকিব এবার ক্ষেপে গিয়ে বলল,”দেখ বন্ধু সেই যে বিয়ের পরদিন এসেছি এখানে, এখনো এই শশুর বাড়ি ই আছি। এর মধ্যে এতদিন আমার মোবাইল টা ও আমার হাতে দেয়নি। ঘর থেকে পর্যন্ত বের হতে দেয়নি। বাথরুমে গেলে ও আমার পেছন পেছন যায়। আজকে মোবাইল আমার হাতে দিয়ে বলতাছে তোকে ফোন করে আসতে বলতে, তা না হলে আমাকে শশুর বাড়ির চার দেয়ালে ই বন্দী থাকতে হবে।”
– তোর শশুর শাশুড়ি কি বলে ?
– শশুর-শাশুড়ি আর বৌ ও ওদের সাথে ই তাল মিলিয়েছে। এখন বন্ধু তুই যেভাবে পারিস এসে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যা।
– আরে বেটা, তোর তো ভালো ই হলো। কোনো কাজ কর্ম করতে হবে না। শুধু বসে বসে খাবি।
– বন্ধু আমি ক্ষেত খামারে রৌদ্রে পুড়ে কাজ করে খাবো তবুও এখানে থাকতে পারবো না। তুই আমাকে বাঁচা।
আকিব পুরো কান্না করে দিবে প্রায়। বুঝলাম বেটা ফেঁসে গেছে ঠিক মত। না বেটা কে ছুটিয়ে আনতে হবে। কিন্তু তার আগে আরিফ কে আনতে হবে। তারপর আমি আর আরিফ গিয়ে ই না হয় ওদের নিয়ে আসবো। দুই হারামী এক সাথে হয়ে আরেক হারামী কে উদ্ধার করবো।
প্রায় পনেরো মিনিট ধরে বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আরিফ এখনো আসছে না। বলেছে দশটায় আসবে আর এখন দশ টা হাত বাজে। যেই বিমানে আসার কথা ছিল সে বিমান ও ত এসে পড়েছে। তাহলে সে কি বিমানে বাথরুমে আটকা পড়ে আছে নাকি না আবার সিনেমার হিরোর মত সে তার নায়িকার সাক্ষাৎ পেয়েছে কে যানে। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছি হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে এসে মাথা একটা থাপ্পড় মারল। পেছনে ঘুরে ই কোনো কথা না বলে মারলাম নাক বরাবর এক ঘুষি। ঘুষি খেয়ে সে পড়ে গেল। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি আরে এ তো আরিফ। তারাতাড়ি উঠিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। সে আমায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,”মেরে আবার জড়িয়ে ধরতে এসেছিস ?”
– আমি কি শুধু একা ই মারছি নাকি তুই ও ত মেরেছিস আমায় ?
– আমি তো আস্তে একটা থাপ্পড় দিয়েছি আর তুই ত এক ঘুষিতে আমার নাক টা ই ভেঙে দিলি।
– আরে কি করবো বল ? এমনি তোকে খুঁজে পাচ্ছি না তার উপর তুই হঠাৎ করে পেছন থেকে এসে থাপ্পড় মারলি যার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ভেবেছিলাম কে না কে দিয়েছে তাই কিছু না ভেবেই ঘুষি মেরে বসি। কিন্তু তোর এত দেরি হলো কেন ?
– আরে আর বলিস না বিমান থেকে নামার পর ই আমার একটু ইয়ে পেয়েছে তাই একটু হালকা হতে গিয়েছিলাম।
– ওহ্ আচ্ছা আমি তো আরও কত কিছু ভেবে ফেলেছিলাম। যাই হোক তোর বাড়ির কেউ আসবে না নাকি ?
– আরে বেটা বাড়ির কাউকে তো জানাইনি যে আমি আসছি।
– কেন ?
– হঠাৎ বাড়ি গিয়ে বাড়ির সবাইকে চমকে দিব তাই।
– ওহ্ আচ্ছা।
– হ্যাঁ। আচ্ছা চল যাওয়া যাক।
– হ্যাঁ চল।
আমি আর আরিফ আরিফের আনা জিনিস পত্র গাড়িতে উঠিয়ে নিজেরা গাড়িতে উঠলাম। তারপর আরিফ কে বললাম,”শোন আরিফ, আমাদের একটু নরসিংদী যেতে হবে।”
– কেন রে ?
আমি আকিবের কাহিনী তাকে বললাম। সে হেঁসে বলল,”ওহ্ এই ব্যাপার ? আচ্ছা সমস্যা নেই কালকে তাহলে যাবো।”
– হ্যাঁ। তাছাড়া ও আরেকটা কারণ আছে রে।
– কি কারণ ?
– বাবাকে দেখতে যাবো।
– ওহ্ আচ্ছা ঠিক আছে।
– হ্যাঁ। আর মা মানে সাদ্দাম ভাইয়ের মা বলেছে তোকে বাসায় নিয়ে যেতে।
– ঠিক আছে আগে বাড়ি চলে তারপর বিকেলে যাবো।
– আচ্ছা।
দুজনে গল্প করছি আর আমি গাড়ি চালাচ্ছি। আজকে গাড়ি চালানো টা ও খুব ভালো লাগছে। তবে রাস্তা যেন অন্য দিনের চেয়ে অনেক তারাতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে।
[ বন্ধুরা গত পার্টে একটা ভুল করে ফেলেছিলাম। ভুল টা হলো, সৎ মায়ের ছেলের নাম, শিপন কিন্তু কালকে ভুলে আরিয়ান লিখে ফেলেছি। ভুলের জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত]