হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-০১

0
1184

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#সূচনা_পর্ব
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

চৌধুরী বাড়ির গেট এর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে শাড়ি পরিহীতা এক মেয়ে।হাতে তার রয়েছে একটি ছোট চীরকুট।বার বার উকি-ঝুকি করছে মেয়েটি। দারোয়ান এর সামনে গিয়ে মেয়েটি বলতে লাগলো,
–চাচা শুনুন আমি সাইমা খান।সবাই সামু বলেই ডাকে।আমি রাজশাহী থেকে এসেছি।সাহেরা আন্টির বান্ধবীর মেয়ে আমি।
দারোয়ান বলতে লাগলো,
— হুম মামনি।ম্যাডাম আমায় বলেছিল যে তুমি আসবে,ভেতরে এসো।
সামু ভেতরে প্রবেশ করলো।বাড়িটা কোনো রাজপ্রাসাদের থেকে কম নয়।সামুতে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলেন সাহেরা চৌধুরী।এসে জড়িয়ে ধরলো সামুকে।মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,
–বাহ!বড় হয়ে গিয়েছিস।কেমন আছিস মামনিটা?
সামু স্মিত হেসে বলতে লাগলো,
–অনেক ভালো আছি।বাকিরা কই?
সাহেরা চৌধুরী বলতে বলতে লাগলো,
–ইশিতা আছে ওপরে আর উৎস আছে ভার্সিটিতে।এখন ইশিতার রুমে মা ফ্রেশ হয়ে নে।
সামু ব্যাগ হাতে নিয়ে বলে উঠে,
— আচ্ছা মামনি।
_____________________
–ঐ কেউ ওরে থামা।
জোড়ে কথাটা বলে উঠে শিহাব। হলরুমে ৪ জন ছেলে মেয়ে একপাশে ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে।২ জন ছেলে এবং ২ জন মেয়ে। শিহাব, প্রমা, মিথিলা আর আরিফ। সজোরে দেয়ালে ঘুসি মারে উৎস।কেঁপে উঠে বাকি ৪ জন।উৎস রাগে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে উঠে,
–ওর সাহস কী করে হয় আমার মুখে কাদা ছুঁড়ে মারার।শিহাব এদিকে আয়।
শিহাব ভয়ে ঢোক গিলে এগিয়ে এল উৎসর দিকে। শিহাব উৎসর সামনে এসে বলে উঠে,
–বল।
উৎস সামনের চেয়ার টেনে এসে বসে পড়ে।দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বলে উঠে,
–ঐ মেয়েটার ফুল ডিটেলস আমার চাই।কি করে, কোথায় থাকে,কীসে পড়ে….
তখনি প্রমা বলে উঠে,
–উৎস শোন।মেয়েটা যেহেতু এই ভার্সিটিতে এসেছিল সো ও নিশ্চয়ই এই ভার্সিটিতেই পড়ে তাইনা।
উৎসর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। শিহাব দাঁত কেলিয়ে বলতে লাগলো,
–এই না হলে আমাদের ছাগলি।বাহ!টেলেন্ট আছে বলতে হবে।
কথাটা শুনে ফুঁসে উঠে প্রমা।আরিফ আর মিথিলা মুখ চেপে হাসতে থাকে।প্রমা রাগে জ্বলতে জ্বলতে শিহাবের পিঠে কয়েকটা কিল মেরে বলে,
–সয়তান তুই একটা ছাগল,পাগল,দুনিয়ার যতো নিকৃষ্ট তম বকা আছে সব তুই।
উৎস গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
— স্টপ!
সবাই মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।উৎস শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,
— শিহাব,আরিফ ইমেডিয়েটলি মেয়েটার খোঁজ লাগা।আই নিড হার এট এনি কস্ট।
শেষের কথাটা শুনে সবাই চমকে উঠে। এরমধ্যেই উৎস চোখে সানগ্লাস পড়ে।গাড়ির চাবি আঙুলের ডগায় ঘুরাতে ঘুরাতে চলে গেল।উৎস চলে যেতেই মিথিলা বলে উঠে,
— উৎসর একটা মেয়েকে প্রয়োজন।হাউ ইজ দিজ পসিবিল!আই কান্ট বিলিভ দিজ।
আরিফ বলে উঠে,
— তুই বিশ্বাস করোস আর না করোস এটাই সত্যি যে ওর মেয়েটাকে প্রয়োজন শুধু শাস্তির জন্য। প্রেম, ভালোবাসা ওগুলো কিছুই না। একটা মেয়ে ভার্সিটিতে এসেই উৎসর গায়ে কাঁদা ছুড়ে মারলো,ভাবা যায়!
শিহাব চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
— মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে।
মিথিলা রাগে ফোঁস করে উঠে।বলতে লাগলো,
— ঐ তোরা চুপ কর প্লিজ,কখন থেকে ঐ মেয়েটার কথা বলে যাচ্ছিস।এখন তো থামে প্লিজ।
প্রমা নিজের কালো রঙের মোটা ফ্রেমের চশমা ঠিক করে বলে উঠে,
–তোর এতো জ্বলে কেন?
মিথিলা রাগী দৃষ্টিতে প্রমার দিকে তাকাতেই প্রমা চুপ হয়ে গেল।আরিফ ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।
———————
আরিফ, শিহাব,প্রমা, মিথিলা এরা হচ্ছে একটা গ্যাং।এদের লিডার উৎস চৌধুরী।হাইট ৬.০ ফুট।জিম করা বডি,সকল মেয়েদের ক্রাশ। মিথিলা শুরু থেকেই উৎসকে পছন্দ করে। উৎস ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি কোনোদিন ও নেয়নি।সকল জুনিয়ররা ওদেরকে ভয় পায়।
_______________________
বারান্দার দোলনায় বসে আছে সামু আর ইশু (ইশিতা)সামু ইশুকে বলে উঠে,
— তোর হিটলার ভাই কি রে?তারে দেখি নাই তো,চিনতেও পারবোনা সেই ছোট বেলায় দেখেছিলাম।
ইশু চিপস খেতে খেতে বলে উঠে,
— ভাইয়া চলে আসবে এখনই,আসার সময় হয়ে গেছে।তখন দেখা করে নিস।
সামু মাথা নাড়িয়ে “হ্যা” বুঝালো।
___________________________
তীব্র বিরক্তিকর আভা ফুটে উঠেছে মিথিলার মুখে। বারবার হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।একটু পরেই কফি শপের ভেতরে মিথিলা দেখতে পেল সেই চিরচেনা মুখ।সেই ছেলেটি তার সামনে এসে বসে পড়লো।দুইটা কফি ওর্ডার করে মিথিলাকে বলে উঠে,
— কেমন আছো?
মিথিলা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— আমাকে এখানে কেন ডেকেছো রক্তিম?
রক্তিম ঠোটে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে,
— তোমার সাথে অনেক কথা হয় না তো তাই।বললেনা তো কেমন আছো?
মিথিলা জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে বলে,
— তোমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা বা আগ্রহ কোনোটাই নেই আমার।আর হে এতক্ষন ভালো ছিলাম বাট তুমি আসার পরেই খারাপ হয়ে গেছি। তোমার সাথে প্রেমালাপ করতে আসিনি এখানে।
কীসের জন্য ডেকেছো সেটা বলো।আমার বাসায় ফিরতে হবে।
রক্তিম ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে,
— সব কিছু কী আবার আগের মতো স্বাভাবিক করা যায়না।আই মিন প্রথম থেকে শুরু করা যায়না?
মিথিলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।বলতে লাগলো,
— ইউ ফুল!সাহস কী করে হয় তোমার এই কথা বলার।শুনে রাখো আমি এখন আর সেই আগের মিথিলা নেই।সময়ের সাথে সাথে সেই আমিও পরবির্তন হয়ে গেছি।আর আমি একজন কে….
তার আগেই ওয়েটার কফি নিয়ে হাজির।ওয়েটার কফি রেখে চলে যাওয়ার পর রক্তিম বলে উঠে,
— উৎসকে পছন্দ করো রাইট?
মিথিলা চুপ হয়ে যায়। রক্তিম বাঁকা হেসে কফিতে চুমুক দিয়ে বলে উঠে,
— একবারো জানার চেষ্টা করেছো কী যে ও তোমাকে পছন্দ করে কি না।আর তুমি কী ওকে ভালোবাসো নাকি শুধুই পছন্দ করো?
মিথিলা বলে উঠে,
— আমি ওকে পছন্দ করি আর এটাই তো ভালোবাসা।
রক্তিম বলে উঠে,
— আগে কফিটা খাওয়া শুরু করো।
মিথিলা কফি খাওয়া শুরু করে দেয়। রক্তিম বলে উঠে,
— তোমার ধারনা ভুল মিথিলা। পছন্দ আর ভালোবাসা এক নয়। পছন্দের ক্ষেত্রে বলি,ধরো তোমার একটা গান খুব বেশিই পছন্দ হলো সেটা তুমি ১ বার,২ বার,৩ বার এমনকি আরো অনেকবার শুনলে। কিন্তু একসময় সেই গানটাই তোমার অপছন্দের লিস্টে উঠে আসবে।এখন ভালোবাসার ক্ষেত্রে বলি, ভালোবাসা হলো দুটি আত্মার মিল,মনের মিল,এতে যেমন বিশ্বাস থাকে তেমন ঐ সন্দেহ থাকে অর্থাৎ তোমার মনকে ভালোবেসে থাকে তাহলে অবশ্যই সে তোমার জন্য ভাবে।তাই তোমাকে সন্দেহ করে,কফি সে তোমাকে ভালোবেসে না থেকে থাকে তাহলে তার তোমার কোনো কিছুতেই সন্দেহ থাকবেনা।বুঝেছো?
মিথিলা চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয়।চোখ খুলে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— ওহ আচ্ছা।এখন তোমার থেকে এডভাইস নিতে হবে আমায়।ডিসগাস্টিং!
রক্তিম নিজের চশমাটা ঠিক করে বলে উঠে,
— তুমি অনেক পাল্টে গেছো মিথিলা।আগের মিথিলাকে তোমার মধ্যে খুঁজে পাচ্ছিনা আমি।
মিথিলা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
— সেই মিথিলাকে হারানোর পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান তোমারই।বাই দ্যা ওয়ে, অলরেডি ৪.১৫ বাজে। অনেক লেখক হয়ে গিয়েছে।আই হ্যাভ টু গো নাও বাই।আর হে আরেকটা কথা বিবাহিত জীবনে সুখী হও।দোয়া রইল।
কথাটুকু শুনেই রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মিথিলা ব্যাগ হাতে নিয়ে চলে যায়। রক্তিম আনমনে হেসে বলতে থাকে,
— তুমি কখনো পুরোটা সত্যি জানতেই চাও নি।তুমিও যেদিন জানতে পারবে তখন হয়তো তোমার দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছু থাকবেনা।
_____________________
মিসেস সাহেরা চৌধুরী বারবার বোঝাতে লাগলেন। কিন্তু উৎস মানতে নারাজ।ড্রয়িংরুমে এলো ইশু।গিয়ে তার মাকে বলে উঠে,
— ভাইয়ার কী হয়েছে আম্মু?
মিসেস সাহেরা চৌধুরী সোফায় বসা অবস্থাতেই বলে উঠে,
— কী আর হবে,উৎসর গায়ে নাকি আজকে একটা মেয়ে কাঁদা ছুঁড়েছে।এতে ওর প্রিয় শার্টটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।সে এখন রাগে জ্বলছে।মেয়েটাকে নাকি ভার্সিটি থেকে তাড়িয়ে দেবে।আমি এখানে দোষটা কিন্তু উৎসর ঐ দেখতে পাচ্ছি।মেয়েটাকে রেগ করতে গিয়েছিল বিধিয় এখন এই অবস্থা।
ইশু দাঁত কেলিয়ে সোফায় বসে পড়লো।ইশু বলতে লাগলো,
— যা হয় ভালোর জন্য হয়।আর তুই ও বা কেন ঐ মেয়েটাকে রেগ করতে গিয়েছিলিস।যাক বাবা এটা ভেবে শান্তি লাগছে যে তোকে শিক্ষা দেওয়ার লোক এসে গেছে।
উৎস রাগী স্বরে ইশুকে বলে উঠে,
— আর একটাও কথা বলবি না তুই।
ইশু ধমক খেয়ে চুপ করে রইল। কিছু একটা ভেবে মিসেস সাহেরা চৌধুরী বলে উঠে,
— তোকে একটা কথা বলাই হয়নি।সামু মানে সাইমা এসেছে।তোর ফুল আন্টির মেয়ে।তোর ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।ঢাকা শহরে নতুন ও।যা ওর সাথে দেখা করে আয়।
উৎস কিছু একটা ভেবে উপরে চলে গেল।
চলবে….