হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-০২

0
831

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

— ভাউউউউউউউউউউউউ
জোড়ে বলে উঠে সামু।সামনের মানুষটি রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে সামুর দিকে।সামু যেই না দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির দিকে তাকালো।সামনের মানুষটিকে দেখে সামুর হাঁটু কাঁপতে লাগলো।সামনের মানুষটি আর কেউ নয় উৎস।উৎস সামুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো,
— তা মিস সাইমা খান ওরফে সামু। কেমন আছো?ওহ তুমি তো সকালেই আমার গায়ে কাঁদা ছুড়ে মেরেছিলে। তুমি নিজেই এসে বাঘের খাঁচায় বন্দি হয়েছো তো কী শাস্তি দেওয়া যায় তোমাকে বলতো?
সামু ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠে,
— কীসের শাস্তি?
উৎস চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
— মনে পড়ছে না তাইনা?তাহলে আমিই মনে করিয়ে দিচ্ছি।সকালে আমারই ভার্সিটিতে এসে আমাকে কাঁদা ছুড়েছিলে,মনে পড়েছে তো এবার।
সামু কোমরে হাত রেখে বলতে লাগলো,
— বাহ রে!এখন বুঝি দোষ আমার।রেগিং করা বুঝি দোষের কিছু না।আর আমি কাঁদা ছুড়ে মারলাম বলেই সব দোষ আমার।আমাকে রেগিং করতে গিয়েছিলেন কেন? হোয়াই?আমার নাম ও সামু হু!আমি অন্যায়কারীদের এতো সহজে ছাড় দেয়না।বেশ করেছি কাঁদা ছুড়ে মেরেছি।এরপর থেকে আমার সঙ্গে এসব করতে আসলে আপনার আর আপনার ঐ বন্ধুদেরকে পাথর ছুড়বো হু।
উৎস রাগে জ্বলে উঠলো।উৎস চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
— তোমার সাহস দেখে আমি অবাক। তুমি আমার বাড়িতেই এসে আমাকে হুমকি দিচ্ছো।
উৎস আর কিছু বলতে যাবে তখন ঐ সেখানে উপস্থিত হলেন মিসেস সাহেরা চৌধুরী।সামু উৎসর দিকে তাকিয়ে একটা দাঁত কেলানো হাসি দিলো।সামু গিয়ে মিসেস সাহেরা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলো আর কান্না করে বলে উঠলো,
— মামনি দেখো এই লোকটা আমাকে বকেছে।বলেছে এখান থেকে চলে যেতে।এ্য্য্য্যা!
মিসেস সাহেরা চৌধুরী রাগী দৃষ্টিতে উৎসর দিকে তাকালো।উৎস ভেতরে ভেতরে ঠিকই সামুর উপরে রেগে আছে কিন্তু সে সেটা প্রকাশ করলো না।কারন উৎস ওর মাকে মেনে চলে।সামু অবাক চোখে উৎসর দিকে তাকালো। চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি সরিয়ে মিসেস সাহেরা চৌধুরীকে বলতে লাগলো,
— ইনি কী উৎস ভাইয়া?
মিসেস সাহেরা চৌধুরী বলে উঠে,
— হ্যা! তুই ওকে চিনতে পারিস নি?অবশ্য না চেনারই কথা। ছোটবেলায় দেখেছিলিস। কিন্তু ও তোকে বকেছে কেন সেটা তো বল?
সামু কিছু বলবে তার আগেই উৎস মিসেস সাহেরা চৌধুরীকে বলে উঠে,
— ও আর কী বলবে!আমিই বলছি।ঐ যে বলেছিলাম না সকালে একটা মেয়ে আমার গায়ে কাঁদা ছুড়ে মেরেছিল।এই মেয়েই সেই মেয়ে।এজন্যই।
উৎস কিছু বলার আগেই মিসেস সাহেরা চৌধুরী বলতে লাগলেন,
— তাই বলে তুই ওকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলবি। কিন্তু আমি এখানে দোষটা তোরা দেখতে পাচ্ছি।রেগিং করা তো ভালো জিনিস নয়।তুই অবশ্যই শাস্তি পাবি।
সামু কান্নার স্বরে বলে উঠে,
— এটাতো আমার মামণির বাড়ি।তাই আমি যতদিন খুশি ততদিন ই থাকবো হু।
মিসেস সাহেরা চৌধুরী বলে উঠে,
— আজ রাতে তোর খাওয়া বন্ধ।
চলে গেলেন মিসেস সাহেরা চৌধুরী।উৎস সামুর খুব কাছে এগোতে লাগলো।সামু ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠে,
— আআআআআআআপনি এগোচ্ছেন কেন?
উৎস জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে বলে উঠে,
— তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো কেন?
উৎস একেবারে সামুর কাছাকাছি চলে এসেছে।উৎস সামুর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে উঠে,
— শাস্তিটা ডাবল হয়ে গেল সামু। শাস্তিটা তোলা রইল।সঠিক সময়ে ফেরত দিয়ে দেবো।বাই!
উৎস চলে গেল রুম থেকে। সামু জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সামু আনমনে বলে উঠে,
— যাক বাবা বেঁচে গেলাম! কিন্তু সেটা তো ক্ষনিক সময়ের জন্য। ভার্সিটিতে গেলেই তো আমাকে তো ধরবে।ভাব সামু ভাব কি করা যায়।আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়া ওতো সহজ নয় উৎস ভাইয়া।আমাকে ফাঁসাতে চাইলে উল্টো আমিই আপনাকে ফাঁসিয়ে দেবো হু!
______________________
ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে উৎস। কিছুক্ষণ পর উৎস কাওকে ফোন করে।ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হওয়ার পর উৎস বলতে থাকে,
— শোন যা বলছি মন দিয়ে শোন।
উৎস বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিল। হঠাৎ করে দরজায় টোকা পড়লো।উৎস বলে উঠে,
— এসো।
খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে প্রবেশ করলো সামু।উৎস রাগী দৃষ্টিতে সামুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— হেই উ!আমার রুমে কেন এসেছো তুমি?
সামু খাবারের প্লেট টা যথাস্থানে রেখে বলে উঠে,
— দেখতেই তো পারছেন খাবার নিয়ে এসেছি তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?
উৎস দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বলে উঠে,
— আমি আমি কার সঙ্গে কথা বলছি!ভুলেই গেছিলাম ড্রামাকুইন একটা।
শেষের কথাটা আস্তেই বললো উৎস।সামু ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
— শেষের কথাটা যেন কী বললেন? শুনতে পাইনি। আচ্ছা যাইহোক আমি বুঝেছি আপনার খিদে পেয়েছে।তাই তর্ক না করে খেয়ে নিন।এতে আপনারই ভালো।আমি অনেক ভালো মেয়ে হু তাই তো খাবার নিয়ে এসেছি। আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাই কেমন,বাই।
সামু চলে যেতেই উৎস বলে উঠে,
— কালকেই বুঝতে পারবে আমি কী জিনিস।আমার গায়ে কাঁদা ছুড়ে মারার ফল+আজকে যা হলো আজকে যা করলে তার পুরো শাস্তি তোমাকে দেবো জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। কিন্তু আমার তো খিদে ও পেয়েছে।হুম খাবারের ওপর রাগ করে থাকার মানেই হয়না।
বলে হেসে উঠে উৎস।
____________________
— এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ইশু?
ইশু বলে উঠে,
— আমি জানি তুই ভাইয়াকে গিয়ে খাবার দিয়ে এসেছিস।
সামু আমতা আমতা করে বলে উঠে,
— তুই দেখেছিস ইশু?
ইশু দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলে উঠে,
— আমি দেখেছি। আচ্ছা একটা কথা বল তো কী হয়েছিল ভার্সিটিতে?
সামু স্মিত হেসে বলে উঠে,
— শোন তাহলে।
ফ্ল্যাসব্যাক……..
ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলাম।তখন আমার পথ আটকালো ৪ জন ছেলে মেয়ে।একটা মেয়ে বলে উঠে,
— হুম পেয়েছি। শিহাব আজকে এই মেয়েটাকে রেগ করবো।
শিহাব নামের ছেলেটি বলে উঠে,
— হে কিন্তু উৎসকে তো লাগবেই।ওকে ছাড়া চলবেনা।
আমি শুধু ওদের কথপোকথন শুনছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝে গেলাম যে আমি রেগিং এর শিকার হতে চলেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে এলেন উৎস ভাইয়া।উনি চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে বললেন,
— নেচে দেখাও।
বাকিরা হাসতে লাগলো।আমার রাগে শরীর জ্বলে উঠলো।আমি বলতে লাগলাম,
— আমি কমপ্লেন করবো আপনাদের নামে।
এই কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।উৎস ভাইয়া বলে উঠলেন,
— রিয়েলি!ওকে ফাইন যাও করো।আমি সব টিচার দের প্রিয় স্টুডেন্ট।দেখো গিয়ে ওনারা কী বলে।
আমি বুঝে গেলাম যে কিছুই হওয়ার নয়।তাই আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম কোনো কিছু পাই কিনা।তারপর দেখলাম একপাশে কাঁদা আছে।ব্যাস আমাকে আর পায় কে।আমি দৌড়ে গিয়ে কাঁদা হাতে নিলাম আর ফিরে এলাম।উৎস ভাইয়া অবাক হয়ে বললেন,
— এই মেয়ে কাঁদা দিয়ে কী করবে তুমি?ওয়েট তুমি কী কাঁদা দিয়ে খেলতে চাও নাকি?
বলেই সবাই হাসতে লাগলো।শিহাব নামের ছেলেটি বলে উঠলো,
— দোস্ত আমার মনে হয় এই মেয়েকে ভূতে ধরেছে।
উৎস ভাইয়া হেসে বলে উঠলো,
— হয়তো।
পুরো ভার্সিটির স্টুডেন্টরা উৎসক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি উৎস ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
— এখন হবে আসল খেলা।
ঠিক নিশানা করে উৎস ভাইয়ার মুখ বরাবর কাঁদা ছুড়লাম।পুরো কাঁদা ওনার মুখ আর শার্টে লেপ্টে গেল।এমন কিছু হবে কেউ আশা করেনি।সবাই তখন উৎস ভাইয়াকে নিয়ে ব্যাস্ত সেই সুযোগে আমিও এক দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বাইরে চলে আসলাম।
_______________
বর্তমান..
ইশু দমফাটা হাসিতে ফেটে পড়লো। হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
— সিরিয়াসলি! ভাইকে তুই সোজা করতে পারবি।
সামু বলে উঠলো,
— দেখ না আর কী কী করি।
চলবে…..