হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-২৯

0
507

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২৯[বোনাস]
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

মিথিলা মুখ কাচুমাচু করে রক্তিমের দিকে আড়চোখে তাকায়। রক্তিম ছাদের ঠিক রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।পাশে দাঁড়িয়ে আছে মিথিলা। কিছুক্ষণ আগেই আরমান সাহেব আর বাকিরা রক্তিম এবং মিথিলাকে আলাদা কথা বলে সব মিটমাট করার জন্য ছাদে পাঠায়। রক্তিম দূর রৌদ্রজ্জ্বল আকাশের দিকে তাকিয়ে মিথিলাকে প্রশ্ন করে,
— “কেমন আছো?”
মিথিলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে প্রতিউত্তরে রক্তিমকে বলে,
— “সেটা জানার কি খুব বেশিই প্রয়োজন?”
রক্তিম মুচকি হেসে মিথিলাকে বলে,
— “এরকম করে কথা বলছো কেন?এতো চেন্জ ৩ মাসে! কিভাবে হলে মিথিলা?”
— “কেন আমি চেন্জ হতে পারিনা বুঝি?আর আমার কথা বলার ধরন পাল্টেছে তাই।”(মিথিলা)
রক্তিম চিন্তিত সুরে মিথিলাকে বলে,
— “তুমি আমার বাড়ির ঠিকানা কিভাবে জানলে?”
মিথিলা রক্তিমের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়।এক পর্যায়ে হাসতে হাসতে মিথিলার মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম হয়। রক্তিম অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মিথিলার হাসির দিকে।এতবছর পর মিথিলাকে হাসতে দেখে রক্তিমের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠে। মিথিলা একসময় হাসি থামিয়ে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দেখে, রক্তিম ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।তার ঠোটের কোণেও রয়েছে সেই চিরচেনা হাঁসি। মিথিলা রক্তিমের এরকম চাহনিতে কিছুটা লজ্জা পেল। রক্তিম এবার মুখটাকে আগের মতো বানিয়ে তারপর মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “তা আমার একটা কথায় এতো হাসির কারণ জানতে পারি?”
মিথিলা বিরক্তিকর সুরে রক্তিমকে বলে,
— “এটা এমন একটা কথা জিজ্ঞেস করেছিলে তুমি আমায়,যেটা শুনে হাসাটা স্বাভাবিক ছিল।এই যায়গাটা ভুলিনি আমি!তাই চিনতে পেরেছি।এবার বুঝেছো?”
রক্তিম বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
— “হুম বুঝলাম। কিন্তু আপনি এখানে কোন উদ্দেশ্যে এলেন শুনি?”
মিথিলা রক্তিমের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে,
— “জেনেও না জানার ভান কেন করছো?”
রক্তিম মিথিলার থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে তারপর বলতে থাকে,
— “কিছু জানি না আমি।সব তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই।”
মিথিলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
— “তুমি না লন্ডনে চলে গেছিলে?”
রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
— “না যায়নি! আমি গেলে বাবা একা হয়ে যাবে তাই যাওয়া হয়ে উঠেনি।”
মিথিলা আমতা আমতা করে রক্তিমকে বলতে থাকে,
— “সে যাইহোক এখানে কেন এসেছি জানতে চাইবে না?”
রক্তিম ভ্রু কুঁচকে মিথিলাকে জিজ্ঞেস করে,
— “বলো কেন এসেছো?”
মিথিলা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
— “ভালোবাসি তোমায় তাই!”
রক্তিম যে কথাটা শুনবার জন্য বারবার মিথিলার কাছে ছুটে গিয়েছে আজকে তার মুখেই এই কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রক্তিম মিথিলাকে বিপরীতে বলে,
— “কি বললে শুনতে পাইনি।আবার বলো তবে একটু জোড়ে।”
মিথিলা পুনরায় বলে,
— “বলছি যে আমি ভালোবাসি তোমায়।”
রক্তিম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— “কি বললে আবার বলো শুনতে পাইনি।”
মিথিলা এবার কপট রাগ দেখিয়ে রক্তিমকে বলতে থাকে,
— “আর কতবার বলবো তোমাকে? ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি!”
রক্তিমের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠলো। মিথিলা কথাটা বলে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দেখে রক্তিম আগের ন্যায় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মিথিলা নিজের চোখের কোণের পানি মুছে ফিরে যাচ্ছিলো তখনি,ডান হাতে টান অনুভব করে। মিথিলা পিছনে ফিরে দেখে রক্তিম ওর ডান হাত ধরে রেখেছে। মিথিলা রক্তিমের চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “হাত ধরলে যে?কিছু বলার ছিল বুঝি!”
রক্তিম কপট রাগ দেখিয়ে মিথিলাকে বলে,
— “চলে যাচ্ছিলে কেন হ্যা? ভালোবাসি বলে তারপর চলে যাচ্ছিলে কেন?”
মিথিলা রক্তিমের থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই পারছে না। রক্তিম মিথিলার অবস্থা দেখে তারপর বলে,
— “লাভ নেই!পারবে না নিজেকে ছাড়াতে।আজ থেকে আমার বাহুডোরেই বদ্ধ হতে হবে তোমায়।”
মিথিলা অস্পষ্ট সুরে বলে উঠে,
— “মানে?”
রক্তিম মিথিলাকে জড়িয়ে ধরে দুই হাতে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে। রক্তিম মিথিলার কানের কাছে মুখ এনে বলে,
— “মানে হলো এটাই।আর হ্যা ভালোবাসি। ভালোবাসি প্রিয়তমা! অনেক ভালোবাসি।”
মিথিলার চোখে আজ খুশির জল। যেনো নতুন করে শুরু হয় ওর পথচলা।
___________________________
মিথিলার আর রক্তিমের ব্যাপারটা শেষ করে উৎস নিজের বাড়িতে চলে আসে।কেন যেনো ওর মন বারবার অশান্ত হয়ে যাচ্ছে।উৎস বাড়িতে ঢোকার পরপরই দেখে ভেতরে কেউ নেই।উৎস সবাইকে ডাকতে ডাকতে ওপরে চলে আসে নিজের রুমে চলে আসে।বেড এ বসে জোড়ে জোড়ে হাঁপাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর উৎস নিজেকে শান্ত করে বলতে থাকে,
— “অদ্ভুত!সবাই কোথায় গেল?সামু,ইশু এরা সবাই কোথায়?”
হঠাৎ উৎস কিছু একটা ভেবে দ্রুত নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।উৎস সামুর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সামুর রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। অনেক অবাক হলো উৎস!যখন দেখলো ভেতরে কেউ নেই।উৎস সামুকে অনেক ডেকেও তার কোনো সাড়া পেল না।উৎস রুম থেকে বেড়িয়ে যাবে এমন সময় সামুর টেবিলের ওপরে একটি ডায়েরি দেখতে পেল।ডায়েরির ওপরে একটা চিঠি রাখা আছে।উৎস চিঠিটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো,
প্রিয় উৎস,
— “আচ্ছা তুমি যদি শোনো যে আমি চলে যাচ্ছি,তাহলে কি আমায় মিস করবে?আজ তুমি করেই না হয় বললাম।জানো আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কিন্তু তার কোনো প্রিয় মানুষ থাকে।সে হয়তবা তার বাবা,মা,ভাই,বোন, বন্ধু আবার ভালোও মানুষ ও হতে পারে। কিন্তু জানো কি?তুমিও আমার প্রিয় মানুষ!সেই ছোটবেলায় দেখা হয়েছিল আমাদের।সবাই বলে,তখন আমি ছোট ছিলাম বিধায় আমার নাকি এসব মনে নেই। আচ্ছা তুমিই বলো কেউ কি তার প্রিয় মানুষকে ভুলতে পারে?আমার মতে তো অবশ্যই না!আমার কিন্তু সব মনে আছে।আমার মনে আছে সেদিন তুমি এসেছিলে আমার আঙিনায়! আমার মনে ভালোবাসার সৃষ্টি করে পালিয়ে গেলে কেন তবে?উৎস এর শাস্তি তো তোমাকে দিতেই চেয়েছিলাম কিন্তু তা তোর আর হলো কোথায়!তার আগেই তো….।সে যাই হোক,আমি তোমাকে একটা কথা বলি। এতক্ষন নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছো যে আমি ঠিক কি বলতে চাইছি।হ্যা ভালোবাসি তোমায়!এই ৩ মাসে তো অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমি ব্যার্থ!হ্যা কিন্তু এই ব্যার্থতার ভিরেও একটা ক্ষেত্রে আমি সফল হতে পেরেছি!এইযে এখন আমার চিঠিটা পড়ছো,আমার ভালোবাসার কথাটা জানাতে পেরেছি তোমায়!এটাই আমার সফলতা।আর কিছু চাইনা আমার।আমরা হয়তো এক হবো না তবে আমি যেখানেই থাকি না কেন সবসময় তোমার ভালো চেয়েছি আর চাইবোও।সেই ছোটবেলায় পুতুল খেলতাম আমরা!মনে আছে তোমার?আর হ্যা তুমি একদিন আমাকে দেখে ফেলেছিলেন পুতুল খেলতে! নিশ্চয়ই মনে আছে তোমার।ঐ টা আমাদের ছোটবেলার মুহূর্ত মনে করায়।তাই আমি পুতুল গুলো যত্ন করে রেখেছিলাম। অনেক কথা বলে ফেলেছি, আর না। ভালো থেকো।”
ইতি,
সামু।
চলবে…….