হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
631

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_৩০[অন্তিম পর্ব]
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

চিঠিটা পড়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে উৎস।চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে উৎসর।উৎস চিৎকার করে বলতে থাকে,
— “সামু এতবার বোঝাতে চেয়েছে অথচো আমি বুঝতেই পারেনি।ওর অনেক কথায় রহস্য ছিল।যেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।তোমার কথাটাই সত্যি হয়ে গেল সামু।প্রেমে পড়ে গেছি আমি তোমার! তুমি যখন ছিলে তখন বুঝতে পারলাম না।অথচো দূরে যাওয়ার পরই কেন বোঝালাম।১ মিনিট সামু চলে গেছে মানে?কোথায় গেছে ও?”
উৎস উঠে দাঁড়িয়ে চিঠিটা নিয়ে তারপর কিছু একটা ভেবে আনমনে বলতে থাকে,
— “ওয়েট ইশুকে একটা ফোন করি।ওর কাছ থেকেই জানতে পারবো মেবি যে কি হয়েছে।”
উৎস ইশুকে ফোনে অনেকবার ট্রাই করে বাট পায়না।উৎস রেগে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারে।তারপর বলতে থাকে,
— “দরকারের সময় ওকে ফোনে পাওয়া যায় না।”
উৎস কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়।এতে অনেকটা অবাক হয় উৎস,এটা ভেবে যে ফাঁকা বাড়িতে এই মুহূর্তে কেউ আসতে পারে বলে।উৎস বাইরে বের হয়ে দেখে ইশু যাচ্ছে নিজের রুমের দিকে।ইশুর রুম সামুর রুমের পাশে হওয়ায় সহজেই ইশুর হেঁটে যাওয়ার শব্দ উৎস শুনে ফেলে।এতে ইশু বিরক্তিকর সুরে উৎসকে বলতে থাকে,
— “কিরে ভাইয়া!পথ আটকেছিস কেন? কিছু বলার ছিল বুঝি..?”
উৎস রেগে ইশুকে বলতে থাকে,
— “কোথায় ছিলিস এতক্ষণ? কতবার তোকে ফোনে ট্রাই করেছি ধারণা আছে তোর?”
ইশু উৎসর রাগ দেখে একটা ঢোক গিলে বলতে থাকে,
— “আসলে ছিলাম একটু বাগানে।”
উৎস ইশুর দিকে সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— “কিছু লুকোচ্ছিস মনে হয়। সত্যি করে বল কোথায় ছিলিস?”
ইশু এবার আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
— “সত্যি বলবো?”
উৎস বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলে,
— “তা নয়তো কি তাকে মিথ্যে বলার জন্য বলেছি আমি?”
ইশু সিরিয়াস মুড নিয়ে বলা শুরু করে,
— “সামুর কি হয়েছে জানি না।ফুল আন্টি এসেছিল সামুকে নিতে।এখন আম্মু অনেক বলে আজকের দিনটা থাকতে রাজি করিয়েছে। আজকে ওরা থাকবে আর কালকেই চলে যাবে।তুইতো এবার খুশি রাইট?”
সামুর চলে যাওয়ার কথা শুনে উৎস এমনিতেই রেগে ছিল তারপর ইশুর লাস্ট কথাটা শুনে ও আরো রেগে যায়।ইশুকে স্পষ্টভাবে জবাব দেয় উৎস,
— “কি বললি তুই?আমি খুশি হয়েছি রাইট!কেন এরকম বললি?বলার কারণটা জানতে পারি?আন্স মি ড্যাম ইট!”
শেষের কথাটা কিছুটা ধমকেই ইশুকে বলে উৎস।এতে ইশু কেঁপে উঠে।ইশু ভয়ার্ত কন্ঠে উৎসকে বলতে থাকে,
— “কারণ তো একটাই। এতক্ষণে হয়তো সামুর রেখে দেওয়া চিঠি টাও পড়েছিস।সামু ভেবেছিল ও আজকে চলে যাবে তাই চিঠিটা রেখে গেছিল।হয়তো ও ভুলে গেছে যে তুই এটা আজকেই পড়তে পারিস নয়তো ওর মনে থাকলে ও চিঠিটা সরিয়ে রাখতো। আচ্ছা এসব বাদ দে।”
উৎস সামুর থেকে যাওয়ার বিষয়টা শুনে খুশি হয়।ইশুকে বলতে থাকে,
— “সামু কোথায় আছে বল?”
ইশু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
— “কেন জেনে কি করবি?তুই কি ওকে ভালোবাসিস নাকি?”
উৎস কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলে,
— “তোর কি মনে হয়?”
ইশু নিজের চশমাটা ঠিক করে তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে থাকে,
— “আমার মনে হয় তুই ওকে ভালোবাসিস!যদিও আমি সিউর না।মনে হলো তাই বললাম।”
উৎস ভ্রু কুঁচকে ইশুকে জিজ্ঞেস করে,
— “মনে হওয়ার কারণ?”
ইশু মুচকি হেসে বলতে শুরু করে,
— “মনে হওয়ার কারণ হলো তুই যদি ওকে ভালোই না বাসতিস তাহলে ওর কথা আমাকে জিজ্ঞেস করতিস না আর ওর চিঠি পেয়ে এতো বিচলিত ও হতি না।সে যাই হোক সামু বাগানে আছে।মনমরা হয়ে বসে আছে।যা ওর কাছে! আপাতত আমি গেলাম।তার আগে তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবি?সিউর হয়ে বল।”
উৎস মুচকি হেসে বলে,
— “বল কি চাই তোর?”
ইশু খুশি হয়ে উৎসকে বলে,
— “সামুকে আমি ভাবী হিসেবে চাই।দিবি তো?”
উৎস বাঁকা হাসি দিয়ে ইশুর মাথায় আস্তে করে টুকি দিয়ে বলে,
— “সামু চাইলেও আর না চাইলেও আমারই হবে।আর তাহলে তোর ভাবী ও হবে বুঝেছিস?”
ইশু দাঁত কেলিয়ে উৎসকে বলতে থাকে,
— “বুঝেছি মানে পুরোপুরি ভাবে বুঝেছি।বাই দা ওয়ে বেস্ট অফ লাক!”
উৎস ইশুকে বিদায় জানিয়ে বাগানে চলে আসে।এসে দেখে একপাশে সামু দাঁড়িয়ে আছে।উৎস গিয়ে সামুর পাশে দাঁড়ায়।সামুকে বলে,
— “চলে যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো কেন?”
সামু হঠাৎ করেই উৎসকে দেখে ঘাবড়ে যায়।সামু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
— “আআআআআপনননি কখন এলললললেন?”
উৎসর স্পষ্ট জবাব,
— “কেন দেখতে পাওনি বুঝি?”
সামু আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে তারপর উৎসকে বলতে থাকে,
— “দেখতে পাইনি বলতে তো বলেছি। আচ্ছা যাইহোক আমি এখন রুমে যাচ্ছি।”
সামু উৎসকে আর কিছু য়না বলতে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো ওমনি উৎস সামুর হাত ধরে টান দিয়ে ওকে ওর সামনে নিয়ে এসে দাড় করায়।সামু উৎসর থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে অনেক কিন্তু পারেনা।উৎস সামুর কানের কাছে মুখ এনে সামু কে বলতে থাকে,
— “লাভ নেই প্রিয়তমা।হাত ছাড়াতে পারবে না চাইলেও না।”
সামু উৎসর মুখ থেকে প্রিয়তমা শব্দটি শুনে অনেক অবাক হয়।উৎস এবার সামুকে ছেড়ে দেয়। সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে উৎস আর সামু।সামু উৎসকে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
— “এই নামে ডাকার মানে কি?কেন ডেকেছেন আমায় এই নামে।”
উৎস মুচকি হেসে বলতে থাকে,
— “তুমি আমার যা হও সে নামেই ডেকেছি তোমায়।আর কিছু বোঝা বা জানার আছে?”
সামু আমতা আমতা করে বলে,
— “মানে?চিঠিটা পড়ে নিয়েছেন?”
উৎস বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
— “কি মনে হয়?”
সামু কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলে,
— “আই থিংক পড়ে নিয়েছেন।”
উৎস মাথা নাড়িয়ে”হ্যা”জানায়।সামু এবার একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
— “লাভ নেই।আমি বিয়ে করবো খুব তাড়াতাড়ি।ছেলে দেখা চলছে।”
উৎসর মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠে। সামুর দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায় উৎস।সামু উৎসর চোখ দেখে ঘাবড়ে যায়। এবং একটা ঢোক গিলে বলে,
— “এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
উৎস রেগে সামুকে বলতে থাকে,
— “আমি রেগে গেলে ঠিক কি কি করতে পারি তা জানো?এখন আরেকবার এই কথা বললে আজকেই তুলে নিয়ে বিয়ে করবো তোমায়!মাইন্ড ইট।আমার মনে ভালোবাসার সৃষ্টি করে এখন পালিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাইনা?”
সামু কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে উৎসকে বলে,
— “আপনি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন? আচ্ছা ভালোবাসেন আমায়?”
উৎস নিজের রাগ যথা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করে তারপর সামু কে বলতে থাকে,
— “হ্যা ভালোবাসি তোমায়।আজ বলতে কোনো দ্বিধা বোধ এবং বাধা নেই আমার।এখন এটা অস্বীকার করো না যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না!”
সামু কান্নার মাঝেও মুচকি হেসে বলতে থাকে,
— “বাসি তো।সেই ছোট থেকেই। কিন্তু আজকে আমি জিতে গেলাম জানো?আমি একদিন বলে ছিলাম না তোমায়?প্রেমে পড়েছো কি আমার? তখন বলেছিলে যে আমার প্রেমে নাকি কোনোদিন ও পড়বেই না।এখন তো ভালোবাসো বলছো।”
উৎস আমতা আমতা করে বলতে লাগে,
— “আমি কি জানতাম নাকি এরকম হবে।আমি তো আর ভবিষ্যতের কথা আগে থেকে জানতাম না তাইনা?”
সামু মুচকি হেসে বলে,
— “হুম সেটাই। কিন্তু এক জোড়া জুটির ভালোবাসা এখনো প্রকাশ হলোনা?”
উৎস ভ্রু কুঁচকে বলে,
— “কার?”
সামুর স্পষ্ট জবাব,
— “শিহাব ভাইয়া আর মিহুর।ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা একে অপরকে বলতে তারা নারাজ।”
উৎস ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
— “এই ব্যাপারটার সমাধান কালকেই করবো আমি।কজ শিহাব নিজেই শিকার করেছে যে ও মিহুকে ভালোবাসে।ঐ যে একদিন আমাকে আলাদা করে নিয়ে কথা বলেছিল সেদিনই।”
সামু অস্পষ্ট সুরে বলে উঠে,
— “ওহ।”
উৎস বিকেলের আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “জানো এই জীবনে বন্ধু, পরিবার এর সাথেই হাসি খুশিই জীবন কাটাচ্ছিলাম তখন #হঠাৎ_তুমি_এলে আমার এই জীবনে।তোমার জন্য নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি আমি। তোমার সঙ্গে যে ছোটবেলায় পুতুল খেলতাম,সেটা মনে আছে আমার।”
সামু মুচকি হেসে বলতে থাকে,
— “হ্যা জানি তো আমি।”
_____________________________
ভার্সিটির পিছনে পুকুর পাড়ের কাছেই মিহু আর শিহাব দাঁড়িয়ে আছে। শিহাব কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।কারণ উৎস আর সামু ওকে জোড় করেই এখানে পাঠিয়েছে ওদের সাথে যোগ দিয়েছিল মিথিলা,প্রমা আর আরিফ। শিহাব কে এভাবে চুপ থাকতে দেখে মিহুই বলা শুরু করে,
— “কিছু বলবেন কি?কেন ডেকেছেন আমাকে?”
শিহাব এবার মনে অনেক সাহস জুগিয়ে মিহুকে বলে,
— “এককককটা কথা বলার ছিল।”
মিহু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়েই বলে,
— “বলুন।”
— “ভালোবাসি তোমায়।আর তোমাকে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে শাড়ি আমিই পাঠিয়েছিলাম।এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো আমি কে?”(শিহাব)
এক দমে কথা গুলো বলে শিহাব।মিহু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শিহাবের দিকে।মিহুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।তা কিসের কান্না সেটা শিহাবের অজানা।শিহাব উত্তেজিত হয়ে মিহুকে বলে,
— “প্লিজ তুমি কেঁদো না মিহু। আচ্ছা আমি চলে যাবো তোমার জীবন থেকে।আর আসবো না!তাও তুমি কেঁদো না প্লিজ।”
মিহু কান্না থামিয়ে শিহাবকে বলতে থাকে,
— “চলে যাবেন তাইনা?বাহ!এটাই আপনার ভালোবাসা।এই ভালোবাসেন আপনি আমায়?”
শিহাব পুরো বোকা বনে গেলো মিহুর কথা শুনে। শিহাব আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
— “মানে?”
মিহু টিস্যু দিয়ে নিজের চোখ মুছে তারপর শিহাবকে বলতে থাকে,
— “আমি এটাই বলতে চাইছি যে একটু আগেই তুমি বললে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো!সো ভালোবাসলে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছো কেন?”
শিহাব অবাক হয়ে মিহুকে জিজ্ঞেস করে,
— “তারমানে তুমিও আমাকে…….?”
মিহু মুচকি হেসে বলে,
— “হ্যা ভালোবাসি। তোমার চিঠি গুলো তে অনেক আবেগ মেশানো থাকতো তোমার চিঠি গুলো পড়েই তো তোমায় ভালোবেসেছি।এখন বলছো ছেড়ে যাবে হু!”
শিহাব মুচকি হেসে মিহুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
— “আচ্ছা আর বলবো না। আর জানো আমি তোমার মতোই একা।বাবা মা মারা গেছে ছোটবেলায়।তখন থেকেই দাদির কাছে বড় হয়েছি।দাদিকে তোমার কথা বলেছি ও।উৎসকে একটা থ্যাংকস জানাতেই হবে কজ ওর জন্য ই আজকে সাহস করে তোমাকে ভালোবাসি বলতে পেরেছি।উৎস আর সামু দুজন দুজনকে ভালোবাসে!শুনেছো নিউজটা?”
মিহু খুশি হয়ে বলে,
— “তাহলে আমরা সেম সেম। কিন্তু উৎস আর সামুর ব্যাপারটা কি সত্যি?”
শিহাব কিছু বলবে তার আগেই সামু সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে ফেলে,
— “হ্যা।”
মিহু সামুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— “কনগ্রাচুলেশন দোস্ত।”
সামু ও বলে উঠে,
— “তোকেও।”
কিছুক্ষণ পর সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়।উৎস,সামু, শিহাব,আরিফ,প্রমা,মিহু,রুহি, মিথিলা সবাই আজকে অনেক খুশি।কারণ সবার ভালোবাসাই পূর্নতা পেয়েছে আজ।এভাবেই বেঁচে থাকুক এরকম হাজারো ভালোবাসা।
~সমাপ্ত~