হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-৪+৫

0
602

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_৪
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

ক্লাসে বসে আছে সামু। মনোযোগ সহকারে ক্লাস করছে সে।পাশে বসে আছে ওর নতুন ফ্রেন্ড রুহি। ক্লাসে এসেই রুহি আর সামুর পরিচয় হয়েছে।রুহি সামুকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
— সামু তোর যে কী হবে সেটাই ভাবছি।
সামু আনমনে বলে উঠে,
— আমিও ভাবছি।
রুহি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে উঠে,
— কী?
সামু বোর্ডের দিকে তাকিয়েই বলে উঠে,
— ভাবছি কিভাবে এই ম্যাথটা সলভ করা যায়।তুই দেখতো পারিস কিনা।
রুহি বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলে উঠে,
— ধুর!আমি কি বলতাছি আর তুই আমাকে কী বলোস!
সামু স্মিত হেসে ক্লাস করায় মনোযোগ দিল।
_______________________________________
— ইয়াক ছি!তোর গা থেকে এখনো কাদার গন্ধ বেরোচ্ছে।যা ভাগ!
নাক ছিটকে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে প্রমা।এতে মিথিলা আরো ক্ষেপে যায়।প্রমার চুল জোড়ে টান দিয়ে বলে উঠে,
— তুই চুপ কর বিলাই। এমনিতেই আমি রেগে আছি
তার ওপর আরো রাগিয়ে দিচ্ছিস আমায়।
প্রমা নিজের চুল ছাড়িয়ে বলে উঠে,
— জানি তো তুই ক্ষেপা। এজন্যই তো তোকে এরকম ডাকলাম।
এরমধ্যেই আসে শিহাব,আরিফ আর উৎস।ওরা একপাশে বসে পড়ে। শিহাব পানি খেয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে সবাইকে বলে উঠে,
— মামা আমি জীবনেও ঐ মাইয়ার পিছনে লাগমু না।মোর বহুত শিক্ষা হয়েছে।আর না!
এরকম প্রলাপ করতে করতে একসময় কান্না করতে থাকে।যাতে প্রচুর বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায় উৎস আর মিথিলা।ওদিকে শিহাবের কান্না দেখে আরিফ আর প্রমা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাবে এমন অবস্থা।উৎস শিহাবকে বলে উঠে,
— তুই আমার হাতের মাইর না খেতে চাইলে থাম বলদ।
শিহাব কান্না কিছুটা হলেও থামিয়ে উৎসকে বলে উঠে,
— আমি আর জীবনেও তোর বোনের পিছু লাগমু না।
উৎস ভ্রু কুঁচকে শিহাবকে বলে উঠে,
— বোন!কার বোন?তুই ইশুর পিছনে কোনদিন থেকে লাগলি?
শিহাব বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠে,
— আমি ইশুর কথা কইতাছি না ভাই।আমি তো তোর সেই বোনের কথা কইতাছি যে কিছুক্ষণ আগে আমাদের তিনজনকে কুকুরের দৌড়ানি খাওয়ালো।
শিহাবের কথা শুনে প্রমা আবারো হাসিতে ফেটে পড়ে।
উৎস রেগে শিহাবকে বলে উঠে,
— বলদ!ও আমার বোন কেন হতে যাবে?ও আমার এক আন্টির মেয়ে।
শিহাব মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠে,
— সেই হিসেবে তো ঐ মাইয়া তোর বইন ঐ হইল তাইনা?আমি ভুল কি কইলাম।
উৎস রেগে শিহাবকে বলতে লাগলো,
— ও আমার বোন না ব্যাস!
মিথিলা উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— শিহাব তো ভুল কিছু বলে নি উৎস।ও তো ইশুর বয়সেরই।তাহলে তোর বোন হতে সমস্যা কোথায়?
প্রমা নিজের চশমাটা ঠিক করে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— ওকে স্টপ গাইস! চেন্জ দ্যা টপিক।
প্রমার কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়।
_________________________________
হঠাৎ করেই ক্লাসে প্রবেশ করলো উৎস আর তার দলবলেরা।এতে সব মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে উৎস। ভার্সিটির সবার ক্রাশ তাই এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সামুর কেন জানি না এসব সহ্য হচ্ছে না।সামুর কানের মেয়েদের ফিসফিসিয়ে কথাগুলো এলো।যেমন একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে বলছে,
— দেখেছিস উৎসকে আজ কতো সুন্দর লাগছে।আমি তো প্রতিদিন ওর নতুন নতুন লুকের ওপর ক্রাশ খাই।
পাশের মেয়েটা বলে উঠে,
— উৎস শুধুই আমার।ওর সঙ্গে শুধুমাত্র আমাকেই মানায়।
পাশের মেয়েটা বলে উঠে,
— না ও আমার।
সামু আর ওদের কথা শুনলো না।সামু বিরক্তিকর ভঙ্গিতে নিজে নিজেই বলে উঠলো,
— তোগো উৎস হু!উৎস তো শুধু ওর ভবিষ্যৎ এর বউ এর।
— এটেনশন এবরিওয়ান!
উৎসর কথায় সবাই উৎসর দিকে তাকায়। শুধু সামু বাদে।এতে উৎসর কোনো ভাবান্তর দেখা যায় না।উৎস সবার উদ্দেশ্যেই বলে উঠে,
— আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছো।তো যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হলো সামনেই নবীনবরণ উৎসব পালন করা হবে।আর ১৫ দিন পর।হো সবাই সময়মতো চলে এসো।বাই!
উৎস যাওয়ার আগে একবার সামুর দিকে একনজর তাকিয়ে চলে যায়।
রাতে…….
গালে হাত দিয়ে বসে আছে সামু। আর সোফায় বসে আছে ইশু।তার ও গালে হাত! বেশকিছুক্ষন নিরবতা কাটিয়ে ইশু হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
— এগুলো কি সত্যি নাকি স্বপ্ন রে সামু?
সামু ভাব নিয়ে বলে উঠে,
— অবশ্যই সত্যি!
ইশু সন্দিহান চোখে সামুকে প্রশ্ন করে উঠে,
— বাই দ্যা ওয়ে তুই জানতি কিভাবে যে ভাইয়া আর ওর দলবলেরা তোকে ফাঁসাতে চাইবে?
সামু গিয়ে দরজা লাগালো।তারপর ইশুর পাশে বসে ওকে বলতে লাগলো,
— শোন তাহলে গতকাল যখন তোর ভাইয়াকে খাবার দিতে গিয়েছিলাম তখনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আমি তোর ভাইয়ার সব ফোনালাপ শুনে ফেলি।
ইশু দাঁত কেলিয়ে বললো,
— একদম ঠিক হয়েছে।ভাইয়া যে কেন তোকে বারবার রেগিং করতে চায় কি জানি?তবে ঐ মিথিলা আপুকে আমার একদম ভালো লাগে না।
সামু ইশুকে বলে উঠে,
— কেন?
ইশু সামুকে বলে উঠে,
— আজ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড় গুড নাইট।
ইশু সামুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়।সামু আনমনে বলে উঠে,
— আশ্চর্য! ও বিষয়টা কে এড়িয়ে গেল কেন? নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে জানতে হবে।
চলবে…..

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_৫
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

লাইব্রেরীতে বর্তমানে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে উৎস। আশেপাশে আছে আরিফ, শিহাব, মিথিলা আর প্রমা।উৎসর সামনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে।মেয়েটির পাশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সামু। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উৎসর দিকে। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে উৎস মেয়েটাকে বলে উঠে,
— পুরো ঘটনাটা খুলে বলো সিমি?
সিমি কান্না কিছুটা হলেও থামিয়ে বলতে লাগে,
— ভাইয়া আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। অনেক কষ্ট করে এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। আজকে এইতো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা!আমি একটা ইমপোর্টেন্ট বই নিতে এসেছিলাম তখন ঐ ছেলেটা আসে আর আমার সঙ্গে….
এতটুকু বলেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকে সিমি।তারপর আবার বলতে থাকে,
— তখন যদি সেই সময়ে সামু এসে ঐ ছেলেটাকে ধরে না মারতো তাহলে আমি শেষ হয়ে যেতাম।
এরমধ্যেই উৎস মিথিলাকে ইশারা করে সিমিকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। মিথিলা উৎসর ইশারা পেয়ে দ্রুত সিমিকে লাইব্রেরী থেকে নিয়ে যায়।তখনি কিছু ছেলে একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে এসে উৎসকে বলে উঠে,
— বস এইযে নিয়ে এসেছি ছেলেটাকে।
উৎস ইশারা করতেই ছেলেগুলো চলে যায়।উৎসর চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে।উৎস উঠে গিয়ে ছেলেটার নাক বরাবর ঘুসি দিল।এতে ছেলেটা মাটিতে পড়ে গেল। উৎস ছেলেটিকে উঠিয়ে চড় মেরে বলতে লাগলো,
— কেন করেছিস এমন জিসান?মেয়েটার সর্বনাশ কেন করতে চেয়েছিলি?আজকে ফার্স্ট টাইম ভার্সিটিতে এরকম হলো শুধুমাত্র তোর জন্যে।
উৎস মারতে লাগলো জিসানকে।শিহাব আর আরিফ এসে উৎসকে কোনোমতে থামালো। জিসান নিজের ঠোঁটের কোণের রক্ত মুছে মুছে দিয়ে উৎসকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
— এই মেয়েটা আর তুই!কাওকেই আমি ছাড়বো না দেখে নিস।
জিসান কোনোমতে সেখান থেকে চলে যায়।সামু একপাশে দাঁড়িয়ে এতক্ষন এগুলো দেখছিল।উৎস সবাইকে বলে উঠে,
— আরিফ,প্রমা আর শিহাব তোরা এখন এখান থেকে যা। প্রাইভেসি চাই!
_______________________
লাইব্রেরীতে বর্তমানে উৎস আর সামু ছাড়া কেউ নেই। বেশ কিছুক্ষন ধরে উৎস শুধু জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।সামু বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলে উঠে,
— কীসের জন্য আমাকে এভাবে দাড় করিয়ে রেখেছেন জানতে পারি?কেনো বলার থাকলে বলে ফেলুন নয়তো ভার্সিটি টাইম শেষ আমাকে যেতে হবে।
উৎস উঠে গিয়ে সামুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। সামু নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না।উৎস ধমক দিয়ে বলে উঠে,
— এই কি শুরু করেছো তুমি হ্যা? একদম হাত ছাড়াতে চাইবে না বলে দিলাম।আগে আমার কথা মন দিয়ে শোনো।
সামু নিজেকে শান্ত করে বলে উঠে,
— হুম বলুন কী বলবেন?তার আগে হাতটা ছাড়ুন প্লিজ! অনেক ব্যাথা পাচ্ছি।আর আমাদের এভাবে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।
উৎস নিজের রাগ কিছুটা কমিয়ে সামুকে ছেড়ে দিল। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সামু আর উৎস। নিরবতা ভেঙ্গে উৎস বলে উঠে,
— তখন তুমি ওকে মারতে গেলে কেন?রুহি যদি ঠিক সময় আমাকে এসে খবর না দিতো তাহলে কি হতো ভাবতে পারছো?আমাকে ডাকলেই পারতে!
সামু উৎসর চোখে চোখ রেখে বলতে লাগলো,
— তখন সময় অনেকটা কম ছিল।আর আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে কোথায় ছিলেনামি কি করে জানবো?
প্রথমত আমি একা ছিলাম না!আমার সাথে রুহি ছিল। দ্বিতীয়ত আমি একজন মেয়ে সেখানে আমি একজন মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সর্বনাশ কি করে সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পারি?এন্ড তৃতীয়ত আমি ক্যারাটে জানি!তাই জিসান নামক পশুটাকে তখন মেরেছিলাম।নাহলে মেয়েটা শেষ হয়ে যেতো।
উৎস এতক্ষন মনযোগ সহকারে সামুর কথাগুলো
শুনলো। সত্যিই তো তখন সময় খুবই কম ছিল।সামু যা করেছে সেটা তো ঠিকই করেছে। কিন্তু এখন সামুর যে এখানে শত্রু তৈরি হলো।ওর তো অনেক বড় বিপদ যেকোনো মুহূর্তে চলে আসতে পারে!
এগুলোই ভাবাচ্ছে উৎসকে।খুব বেশিই ভাবাচ্ছে!সামু নিজের হাতঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে উৎসকে বলে উঠলো,
— শুনুন এখন যাওয়ার টাইম হয়ে গেছে। আপনি নিয়ে যাবেন নাকি আমি নিজেই……
উৎস ধমক দিয়ে সামুকে বলে উঠে,
— চুপ!এতো বকবক করো কেন?এতো পাকনামি করতে কে বলেছে?আমি নিজেই নিয়ে যাবো তোমায়।
_______________________________
একটা পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎস আর সামু।দুজনেই বাক্যহীন!কারোর মুখে কোনো কথা নেই। নিরবতা ভেঙ্গে সামু উৎসকে প্রশ্ন করে উঠে,
— আচ্ছা আমরা এতো চুপচাপ আছি কেন?এটা কি আদৌ আমাদের মানায়!‌ আমাদের তো সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকে তাহলে আজ আমাদের মন এতো বিষন্ন কেন?
উৎস আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— আমি তো নিজের মনের খবর নিজেই জানি না সামু! আজকে সকালে যখন শুনেছিলাম,মানে যখন রুহি এসে বলেছিল যে তুমি ওর সাথে মারপিট করছো তখন আমার মনে হচ্ছিল যেনো আমি আমার কিছু হারিয়ে ফেলেছি।
সামু মৃদু হাসলো।এই হাসিতে লুকিয়ে আছে শত না বলা কথা।সামু স্মিত হেসে বলে উঠে,
— আমার জন্য তো আপনার এতো চিন্তা হওয়ার কথা নয়।তাহলে?আমি ক্ষনিকের অতিথি মাত্র।যেভাবে এসেছি ঠিক সেভাবেই চলে যাবো।তাহলে এতো চিন্তা করার তো কোনো কারনই দেখছি না।
উৎস চোখ-মুখ শক্ত করে বলে উঠে,
— কারন তুমি ফুল আন্টির মেয়ে।উনি অনেক বিশ্বাস করে তোমাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন
তাই।সেই বিশ্বাস রক্ষা করার আমার দায়িত্ব তো আমারো আছে তাইনা?তুমি আমার রেসপন্সিবিলিটি।
সামু উৎসর চোখে চোখ রেখে বলে উঠে,
— হুম আমি তো শুধুই সবার রেসপন্সিবিলিটি!
উৎস অবাক হয়ে সামুকে বলে উঠে,
— কী বললে তুমি?
সামু সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দেয়,
— কিছুনা!
রাস্তায় কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।বাড়িতে এসেই কাউকে না বলে যে তার রুমে চলে যায়।এতে অনেক অবাক হয় মিসেস সাহেরা চৌধুরী।তিনি ইশুকে বলে উঠেন,
— ওদের মধ্যে আবার নতুন করে ঝামেলা বাঁধল নাকি?
ইশু আনমনে বলে উঠলো,
— হয়তো!দাঁড়াও আমি গিয়ে সামুকে জিগ্যেস করে আসি । তুমি বরং ভাইয়ার কাছে যাও।
মিসেস সাহেরা চৌধুরী মাথা নাড়িয়ে উৎসর কাছে চলে গেলেন।আর ইশু চললো সামুর কাছে।
দরজায় কড়াঘাতের শব্দ পেয়ে আতকে উঠে সামু।গিয়ে দরজা খুলে দেখলো ইশু দাঁড়িয়ে আছে।ইশুকে দেখা মাত্রই সামু মিষ্টি একটা হাসি দিল।
চলবে…..