হঠাৎ তুমি এলে পর্ব-০৩

0
686

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_৩
#Sorna_Talukder(বৃন্দা)

সকালে ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছে উৎস।তার ঠোঁটের কোনে লেগে আছে মিষ্টি হাসি। মিসেস সাহেরা চৌধুরী বলে উঠে,
— কীরে উৎস!কখন থেকেই দেখছি একা একা হাসছিস ব্যাপার কি বলতো?
উৎস কিছু বলবে তার আগেই ইশু বলে উঠে,
— আমার তো মনে হয় অন্য কিছু।মানে আমি বলতে চাইছি যে আমার মনে হয় ভাইয়া প্রেমে পড়েছে‌।
মিসেস সাহেরা চৌধুরী উৎসর দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
— কোন মেয়ে?নাম কী?কোথায় থাকে?বল আমায়।
উৎসর মুখে বিরক্তিকর আভা ফুটে উঠলো।উৎস বলে উঠে,
— তুমি ইশুর কথা বিশ্বাস করছো আম্মু সিরিয়াসলি!ও তো সবসময় এরকম মজা করেই থাকে।
মিসেস সাহেরা চৌধুরী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।তিনি ইশুকে বলে উঠলেন,
— সামু কোথায় রে ইশু?
ইশু খেতে খেতে বলে উঠে,
— ও তো ওর রুমেই আছে। ঘুমোচ্ছে মেবি।
উৎস হঠাৎ করেই বলে উঠে,
— বলছি যে আজকে তো ওর ফার্স্ট ডে ভার্সিটিতে।তাই ওকে গিয়ে ডেকে তোল নাহলে ভার্সিটিতে যেতে লেট হয়ে যাবে তো তাইনা।
ইশু সন্দিহান চোখে উৎসকে প্রশ্ন আরে উঠে,
— ১ মিনিট।ভাইয়া তুই তো সামুকে সহ্যই করতে পারিস না ।তাহলে ওর জন্য এতো ভাবছিস কেন?
উৎস আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
— কি জন্য আবার!ও তো ফুল আন্টির মেয়ে।ওর প্রতি তো আমাদের একটা দায়িত্ব আছে তাইনা? এজন্যই বললাম।
মিসেস সাহেরা চৌধুরী হেসে বলে উঠলেন,
— যাক বুঝেছিস তাহলে।
এরমধ্যেই ইশু বলে উঠে,
— ঐ তো সামু এসে গেছে।
ইশুর কথায় উৎস সিঁড়ির দিকে তাকালো।উৎসর চোখ আটকে গেছে সামুকে দেখে।সামু কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে।সাথে আছে হালকা সাজ।যা ওর সৌন্দর্যকে আরো নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।ইশু উৎসকে সামুর দিকে থাকতে দেখে কাশতে লাগলো।তখন উৎসর হুশ এলো যে ও করছিল।সামু চেয়ার টেনে বসে পড়লো।ওর হাতে রয়েছে ব্যাগ।
কিছুক্ষণ পর…
গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে উৎস।তার ঠোঁটের কোনে লেগে আছে শয়তানি হাসি‍‍। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো।বেরিয়ে এলো সামু,উৎসকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসে পড়লো সামু।অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেল উৎস।রেগে গিয়ে সামুকে বললো,
— এই মেয়ে তুমি পেছনে বসেছো কেন? সামনে এসে বসো।আমি কী তোমার ড্রাইভার নাকি।
সামু ভাব নিয়ে বললো,
— ওহ আচ্ছা।তাহলে আমি গাড়ি থেকে নেমে যাই।আমি একা একাই যেতে পারবো বাই।
সামু গাড়ি থেকে নেমে পড়বে এমন সময় উৎস দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
— না না।গাড়ি থেকে নেমে যেতে হবে না। যেরকম আছো সেরকম ঐ থাকো।
সামুর উৎসর ফেইস দেখে অনেক হাসি পাচ্ছে।তাই সামু মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো।উৎস ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে দেয়।উৎস গাড়ির লুকিং গ্লাসে আড়চোখে সামুর হাসি দেখতে লাগলো।সামুর হাসিটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে উৎস।একসময় সামু ব্যাপারটা খেয়াল করে বলে উঠে,
— কী ব্যাপার হুম?ড্রাইভ করায় মনোযোগ দিন। আমাকে বারবার আড়চোখে দেখছেন কেন?আমার প্রেমে পড়লেন নাকি?
বলেই খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো সামু।যা উৎসকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট।উৎস কোনোমতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে লুকিং গ্লাস থেকে চোখ সরালো।সামুকে উদ্দেশ্য করে উৎস বলে উঠে,
— প্রেমে পড়েছি তোমার!মানে লাইক সিরিয়াসলি!কি করে ভাবতে পারলে তুমি? তোমার প্রেমে আমি কোনোদিন ও পড়বো না। পৃথিবীতে মেয়ের অভাব আছে নাকি।
সামু স্মিত হেসে বলে উঠে,
— আরে আমি জাস্ট ফান করলাম।হুম সেটাই।
গাড়িতে কেউ আর কোনো কথা বলেনি। ভার্সিটি এসে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো সামু আর উৎস।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিল মিথিলা।উৎস আর সামুকে একসাথে গাড়ি থেকে নামতে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেল মিথিলা। মিথিলা পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে আর কেউ না প্রমা।
প্রমা স্মিত হেসে মিথিলাকে বলে উঠে,
— ওদেরকে অনেক ভালো মানিয়েছে তাইনা রে মিথিলা?
মিথিলা রাগী চোখে প্রমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
— তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস বল তো?আমার এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা ভালো লাগে না।
প্রমা নিজের চশমাটা ঠিক করে বলে উঠে,
— আর কতদিন এরকম করবি বল তো?উৎস তোকে পছন্দ করে না।তুই ভুলে যা ওকে।যে তোকে ভালোবাসে না তুই তার পেছনে কেন পড়ে আছিস বল তো? রক্তিম ভাইয়াকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখ।সে তো তোকে ভালোবাসে।
মিথিলা নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে বলে উঠে,
— যদি নিজের ভালো চাস তো আর এই কথাগুলো তুলবি না প্লিজ। রক্তিমের কথা তো কখনোই তুলবি না আমার সামনে।
প্রমা কিছু না বলে চলে গেল।
___________________________
— আরে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। ক্লাস কোনদিকে সেটা বলেন আমি নিজেই চলে যেতে পারবো।
সামু কথাটা উৎসকে বলে উঠে।উৎসর সেই দিকে কোনো ধ্যান নেই।ও সামুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভার্সিটির পেছনের দিকে। ভার্সিটির পেছনে পুকুরের কাছে নিয়ে এলো সামুকে।উৎস সামুতে বলে উঠে,
— তোমাকে আমার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে এসেছি।ওরা এসে যাবে অপেক্ষা করো।
সামু একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে চুপ করে রইল।
কিছুক্ষণ পর…..
শিহাব আর মিথিলা এলো।ওদেরকে দেখে উৎস বলে উঠে,
— আরিফ আর প্রমা কোথায়?
শিহাব‌ দাঁত কেলিয়ে বললো,
— ওরা আসে নাই।কী কাম আছে বললো তাই আসতে পারে নাই।
উৎস বেশ ভাব নিয়ে সামুকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
— সামু ও হচ্ছে শিহাব আর ও হচ্ছে মিথিলা।আমার ফ্রেন্ড।
সামু হাতঘড়ির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলে উঠে,
— তো!তাতে আমার কী।
কথাটা শুনে বেশ অপমানিত বোধ করলো শিহাব আর মিথিলা।উৎস রেগে বলে উঠে,
— তুমি ওদের সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না।ওরা তোমার সিনিয়র! সম্মান দিয়ে কথা বলো।
সামু স্মিত হেসে বলতে লাগলো,
— ওহ তাই নাকি তা কালকে কী আপনারা আমাকে সম্মান দিয়েছিলেন?কালকে তো আমাকে রেগ করতে চেয়েছিলেন।পুরো ক্যাম্পাসের মানুষের সামনে নাচতে বলেছিলেন।তাহলে আমি কেন আপনাদের সম্মান দেবো?
উৎস কিছু না বলে শিহাবকে ইশারা করলো। ওমনি শিহাব একটা বালতি নিয়ে এলো।উৎস মিথিলাকে ইশারা করতেই মিথিলা এসে সামুকে ধরলো।সামু হাসতে হাসতে বলে উঠে,
–ওহ আমাকে আজকে কাঁদা ছুঁড়বেন চাই না?বেশ ছুড়ুন তাহলে।
ওরা তিনজনই হাসতে লাগলো। শিহাব যেইনা কাঁদা ছুঁড়তে যাবে ওমনি সামু মিথিলার পায়ে জোরে লাথি মেরে দিয়ে দূরে সরে গেল।আর নিশানা অনুযায়ী সব কাঁদা এসে মিথিলার গায়ে পড়লো। মিথিলা রেগে শিহাবকে বলতে লাগলো,
— ইউ ফুল!তুই আমার গায়ে কাঁদা ফেললি কেন গাধা?
শিহাব ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠে,
— আরে আমি ইচ্ছে করে ফেলিনি।
তিনজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হতে লাগলো।এমন সময় সামু বলে উঠে,
— খেলা তো আরো বাকি আছে।
তিনজন অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সামুর দিকে। সামু ব্যাগ থেকে একটা পাথর বের করলো‌।একটু দূরেই একটা কুকুর ছিল।সামু পাথরটা কুকুরের উপর ফেললো আর সামুকে পায় কে।সে তো ভো দৌড়!কুকুরটা ভো ভো তিনজনের দিকে তেড়ে আসতে লাগলো।শিহাব উৎস আর মিথিলাকে বলে উঠে,
— নিজের জান বাঁচাতে চাইলে ভাগ।
_______________________________
পুরো ক্যাম্পাসে হাসির রোল পড়েছে।গত কয়েকমিনিট ধরে কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে হলরুমে এসে বসেছে তিনজন।
চলবে…..
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)