হঠাৎ বর্ষনের রাতে পর্ব-০৯

0
472

#হঠাৎ_বর্ষনের_রাতে💖
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💖
— পর্বঃ০৯

“আচমকা দৌড়াতে গিয়ে অন্ধকার রুমের মধ্যে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে বসে পড়ে ইরা!’সাথে ভয়ে আরো ঘাবড়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে বলে সেঃ

—“ও মা বাঁচাও আমায় ভূত ভূত!’

“বলেই চোখ মুখ চেপে ধরে নিচে বসে রইলো ইরা!’

“অন্যদিকে,,

“হুট করে ইরার এমন আহামরি কথা শুনে কি রিয়েকশন দিবে অর্নব ভুলে গেছে!’অর্নব ইরার পাশে বসে ইরাকে ধরে বললোঃ

—“কিসব বলছো ইরা এখানে কোনো ভূত নেই,জাস্ট লোডশেডিং হয়েছে…

“হঠাৎই অর্নবের কন্ঠ কানে আসতেই ইরা পাঁচ দশ কিছু না ভেবে অর্নবকে জড়িয়ে ধরে প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়ে বললোঃ

—“বিলিভ মি, ওখানে ভূত আছে আমি দেখেছি!’

“ইরার কথা শুনে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না অর্নব!’আশেপাশে তার হাতের মোবাইলের লাইট অন করে দেখে সে কিন্তু না আশেপাশে কিছুই নেই!’কিন্তু ইরা যেভাবে ভয়ে কাঁপছে মনে হচ্ছে ভয়ংকর কিছু দেখেছে সে!’অর্নব ইরাকে ধরে বললোঃ

—“এখানে তো কিছু নেই…

“অর্নবের কথা শুনে ইরা তার চোখ বন্ধ করেই হাতের ইশারায় ওদিক দেখিয়ে বললোঃ

—“আমি সত্যি বলছি ওই খানে কিছু একটা নড়তে দেখেছি আমি…

—“আচ্ছা চল আমরা গিয়ে দেখি ওখানে কি আছে?’

—“না না আমি যাবো না আমার ভিষণ ভয় করছে?’

—“কিছু হবে না ইরা আমি তো আছি…!”

—“না না আমি যাবো না…

—“আরে বললাম তো কিছু হবে না…

“কিন্তু অর্নবের কথা শুনতে মানতে নারাজ ইরা!’ইরাকে এত ভয় পেতে দেখে অর্নবেরও কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে!’কিন্তু ওদিকে না গেলে অর্নব বুঝবে কি করে ইরা কি দেখে ভয় পেয়েছে!’অর্নব ইরাকে ধরে উঠে দাঁড়ালো তারপর ওর গাল চেপে ধরে বললোঃ

—“ডোন্ট ওয়ারি ইরা,আমি তো আছি এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই চলো আমার সাথে…

“এই বলে ইরাকে ধরে অর্নব এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে!’যতই সামনে এগোচ্ছে ইরা যেন ততই ঘাবড়ে যাচ্ছে আর অর্নবের হাত শক্ত করে চেপে ধরছে সে!’অর্নব সামনে এগিয়ে বললো ইরাকেঃ

—“কোথায় কি দেখেছো ইরা?’

“ইরা হাত দিয়ে জানালার দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বললো ওখানে কিছু একটা উড়তে দেখেছি আমি!’ইরার কথা শুনে অর্নব আশেপাশে লাইট দিয়ে দেখতে লাগলো!’হঠাৎই তার চোখ গেল জানালার সাদা পর্দার দিকে যেটা বাতাসে কিছুক্ষন পর পর উড়ছে!’এটা দেখে অর্নবের আর বুঝতে বাকি নেই ইরা কি দেখে ভয় পেয়েছে!’অর্নব ছোট্ট শ্বাস ফেলে বললোঃ

—“এটা দেখে ভয় পেয়েছো ইরা?এটা তো একটা জাস্ট…

“বলেই ইরার দিকে তাকালো অর্নব!’সাথে সাথে ভেসে আসলো তার সামনে ইরার ভয়ার্ত চেহারা!’প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে অর্নবকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে ইরা!’বিষয়টা বেশ লেগেছে অর্নবের!’অর্নব হাল্কা শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে নিজের মেবাইলের লাইট অফ করে ইরাকে জড়িয়ে ধরে হাল্কা চেঁচানোর একটিং করে বললোঃ

—“তুমি সত্যি বলছো ইরা ওখানে সত্যি ভূত আছে, আমিও কিছু নড়তে দেখেছি…

“অর্নবের কথা শুনে ইরার ঘাবড়ানো মুখ আরো ঘাবড়ে যায়!’চোখ মুখ দিয়ে ঘাম বেরিয়ে আসে তার!’সাথে অস্থিরতা ফিল হয়!’ইরা অর্নবকে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা কন্ঠে বলেঃ

—“প্লিজ প্লিজ এখান থেকে চলুন স্যার আমার ভিষন ভয় করছে…

—“হুম চ…

“আর কিছু বলার আগেই ইরার হাত ঢিলে হয়ে যায়!’সাথে তার শরীরের সমস্ত ভার গিয়ে পড়ে অর্নবের উপর!’ইরাকে এমন হতে দেখে ঘাবড়ে যায় অর্নব!’বিস্ময় ভরা কন্ঠেই বলে সেঃ

—“ইরা,ইরা আমার কথা শুনতে পারছো?’

উওরে ইরা কোনো জবাব দেয় না অর্নবকে!’অর্নব তাড়াতাড়ি ইরাকে ছাড়িয়ে নিচে বসিয়ে নেয়!’তারপর ওর গাল ধরে ডাকে ইরাকে কিন্তু না ইরার কোনো হুস নেই!’

এরই মাঝে অফিসের পুরো রুম আলোতে ভরে যায়!’অর্নব তাড়াতাড়ি ইরাকে ছেড়ে এগিয়ে যায় সামনে!’তারপর টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাস এনে আবার বসে পড়ে ইরার কাছে!’অতিরিক্ত ভয় পাওয়ার ফলে ইরা অজ্ঞান হয়ে গেছে!’এমন কিছু হবে এটা ভাবে নি অর্নব!’তাহলে ইরার সাথে এমন মজা করতো না সে!’অর্নব কিছুটা চিন্তিত মুখ নিয়ে আবারো ডাক দেয় ইরাকে কিন্তু না ইরা এবারও কোনো সাড়া দিল না!’চটজলদি অর্নব ইরার মুখে পানির ছিঁটে দিতে থাকে!’তিনবার পানির ছিঁটে দিতেই চোখ খুলে তাকায় ইরা!’ইরাকে চোখ খুলতে দেখে অর্নব জড়িয়ে ধরে ইরাকে তারপর হতভম্ব কন্ঠে বলেঃ

—“আই এম সরি ইরা, আমি ভাবিনি তুমি এতটা ভয় পেয়ে যাবে,আরে ওটা কোনো ভূত ছিল না ওই দেখো ওটা জাস্ট জানালার পর্দা ছিল!’অন্ধকার রুমে উড়তে দেখেছো তাই ঘাবড়ে গিয়েছিলে তুমি!’

“অর্নবের কথা বুঝতে ইরার দু’মিনিট সময় লাগলো!’কিন্তু কিছু বললো না!’অনেকটাই ভয় পেয়েছে ইরা!’

______

“গাড়ি করে যাচ্ছে অর্নব আর ইরা!বাহিরে তাদের থেকে বেশ খানিকরা দূরত্বে রাতের আকাশে থাকা চাঁদটাও চলছে তাদের সাথে!’সাথে বাহির থেকে বয়ে আসছে ঠান্ডা বাতাস!’এসবের মাঝেই অর্নব ড্রাইভ করছে আর ইরা চুপচাপ বসে আছে তার পাশে!’বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছে খুব!’কিন্তু সেদিকে তার তেমন কোনো হুস নেই!’যেন কিছুক্ষন আগের ঘটনা এখনো যাচ্ছে না তার মাথা থেকে!’সচরাচর ইরা খুব একটা ভিতু নয় কিন্তু আজ যেন একটু বেশি ভয় পেয়েছে সে!’

“অন্যদিকে অর্নবের এখন বেশ খারাপ লাগছে হয়তো সে একটু বেশি বারাবারি করে ফেলেছে!’কি দরকার ছিল ইরার ভয়ের মধ্যে আরো ভয় দেখানোর!’অর্নব মনে মনে ভেবে নিয়েছে জীবনে আর কখনোই কারো সাথে এমন মজা করবে না সে!’অর্নব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ইরার দিকে একপলক তাকিয়ে বললোঃ

—“আর ইউ অলরাইট ইরা…

“এতক্ষণ পর অর্নবের কথা শুনে ইরা তার শকট থেকে বেরিয়ে আসলো তারপর বললোঃ

—“হুম আমি একটু বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই না স্যার…

—“হুম তা একটু গিয়েছিলে,এত ভয় পেলে চলে নাকি…

—“আসলে কি বলুন তো স্যার, হুট করে এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি,আচমকা অন্ধকার রুমে কিছু নড়তে খুব ভয় পেয়েছিলাম তারওপর আপনি?’

—“আই এক্সট্রিমলি সরি ইরা,আমি বুঝতে পারি নি তুমি ওতোটা ভয় পেয়ে যাবে সরি..

—“ইট’স ওকে স্যার, আমিও না পর্দা দেখে ভয় পেলাম…

“ভেবেই হাল্কা হেঁসে নিজের মাথায় নিজেই একটা চাটি মারলো!’

“কিছুক্ষনের মধ্যে ইরা আবার আগের মতো হয়ে গেলো যা দেখে অর্নব সস্থির নিশ্বাস ফেললো!’

“তারপর আর বেশি কিছু না ভেবে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো অর্নব!’হঠাৎই কিছুদূর যেতেই ইরা বলে উঠলঃ

—“এখানে রাখুন স্যার…?’

“মাঝরাস্তায় এভাবে ইরাকে গাড়ি থামাতে বলতে শুনে বেশ অবাক হয়ে বলে অর্নবঃ

—“এখানে কেন?’

—“ওই যে দেখুন হাওয়াই মিঠাই,,,

“ইরার মুখে অদ্ভুত কিছুর নাম শুনে অবাক হয়ে গাড়ি থামিয়ে বললো অর্নবঃ

—“কি…?’

—“ওই দেখুন হাওয়াই মিঠাই খাবেন স্যার,খুব মজা,এটা আমার আর আমার ছোট ভাইয়ের খুব ফেভারিট আপনি বসুন আমি তিনটে কিনে আনছি…

”এতটুকু বলে তাড়াতাড়ি গাড়ির সিট ব্লেট খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ইরা!’তারপর দৌড়ে চলে যায় সে হাওয়াই মিঠাইর বিক্রেতার কাছে!তারপর তিনটে ওয়াইট কালারের হাওয়াই মিঠাই কিনে আবার চলে আসে সে অর্নবের কাছে!তারপর গাড়িতে বসেই একটা হাওয়াই মিঠাই অর্নবের দিকে এগিয়ে দিয়ে খুশি মনে বললোঃ

—“এটা আপনার জন্য স্যার,খেয়ে দেখবেন খুব মজা!’

“ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ইরার মুখের হাসি দেখে না করতে পারলো বা অর্নব!’খুশি মনে তার হাত এগিয়ে দিয়ে হাওয়াই মিঠাই হাতে নিয়ে বললোঃ

—“এটা কি এখনই খেতে হবে ইরা,না মানে আমি এখনো ডিনার করি নি…?’

—“মটেও না স্যার আপনার যখন খুশি তখন খাবেন!’

—“ওকে….

“এতটুকু বলে গাড়ির সামনেই হাওয়াই মিঠাই রাখলো অর্নব!’আর ইরা সে তো পেকেট খুলেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে!’অর্নব আর বেশি কিছু না ভেবে গাড়ি চালাতে শুরু করলো!’হঠাৎই বলে উঠল অর্নবঃ

—“উইল ইউ গো টু ডিনার উইথ মি,ইরা?

“আচমকা অর্নবের কথা শুনে কিছুটা ভিষম খায় ইরাকে!’ইরাকে কাঁশতে দেখে অর্নব তাড়াতাড়ি গাড়িতে থাকা পানির বোতলটা হাতে দেয় ইরার!’তারপর বলেঃ

—“এটা খেয়ে নেও…

“ইরা তাড়াতাড়ি অর্নবের হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে পানি খেতে শুরু করলো!’তারপর অবাক হয়ে বললো অর্নবকেঃ

—“আপনি একটু আগে কি বললেন স্যার…?’

—“না মানে তুমি তো আমায় কি জানি নাম বললে হ্যাঁ হাওয়াই মিঠাই ট্রিট দিলে,সো আমিও তোমায় একটা ট্রিট দিতে চাই যাবে আমার সাথে ডিনার করতে,রাত তো কম হয় নি খিদে নিশ্চয়ই পেয়েছে তাই নাঃ

—“তা একটু পেয়েছে কিন্তু স্যার…

—“আবার কিন্তু কিসের এখানেই সামনে একটা ভালো রেস্টুরেন্টে আছে যাবে কি?’

—“না মানে স্যার মাত্র ১৫ টাকার হাওয়াই মিঠাইর জন্য ট্রিট…

—“আসলে বিষয়টা তেমন নয় আমার ভুলের জন্য তুমি ভিষন ভয় পেয়েছো,ধরে নেও ছোট্ট ডিনার সেই ভুলের জন্য…

“এই মুহূর্তে ইরার কি বলা যায় উচিত বুঝতে পারছে না ইরা!’ইরাকে চুপ থাকতে দেখে অর্নব আবারো বলে উঠলঃ

—“কি হলো ইরা কথা বলছো না কেন?’

—“না মানে..

—“ভয় পাচ্ছো নাকি আমার সাথে যেতে….

—“আরে না কিসব বলছেন স্যার ভয় কেন পাবো অন্তত এটা আমায় বলবেন না যেদিন রাতে আপনি না থাকলে,আর আজও ধরতে গেলে আপনিই ভয় পাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন!’

—“তাহলে….

“অর্নবের এবারের কথা শুনে ইরা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললোঃ

—“ঠিক আছে চলুন স্যার….

“ইরার কথা শুনে খুশি হয় অর্নব তারপর বললোঃ

—“তাহলে যাওয়া যাক…

“এই বলে গাড়ির স্পিড একটু বারিয়ে দেয় অর্নব…
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..